রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হচ্ছেন নূর
"হে আহলে-কিতাবীগণ! তোমাদের কাছে আমার রাসূল আগমন করেছেন! কিতাবের যেসব বিষয় তোমরা গোপন করতে, তিনি তার মধ্য থেকে অনেক বিষয় প্রকাশ করেন এবং অনেক বিষয় মার্জনা করেন। তোমাদের কাছে একটি উজ্জল আলো এসেছে এবং একটি সমুজ্জল গ্রন্থ।" [ সুরা মায়েদা ৫:১৫ ]
প্রথম কথা হচ্ছে এই আয়াত নাযিল হয়েছিল ইহুদী ও খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্যে। তাফসীরে ইবনে কাছীরে এসেছে - আল্লাহ্ স্বীয় উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন রাসুল সাঃকে হিদায়াত ও দ্বীনে হকসহ আরব অনারব, শিক্ষিত - মূর্খ সমস্ত মাখলুকের কাছে পাঠিয়েছেন। মুজিযা এবং উজ্জ্বল নিদর্শন তাঁকে দিয়েছেন। যে কথা গুলো ইহুদী ও নাসারা বদলে দিয়েছিল, ভুল ব্যাখ্যা করে অন্য অর্থ বানিয়েছিল, আল্লাহর সত্তার উপর অপবাদ দিয়েছিল, কিতাবের যে অংশ মানতে কষ্ট হয়েছিল তা গোপন করেছিল ঐ সবকিছুই আল্লাহ্ তাঁর রাসুল (সাঃ) কে প্রকাশ করে দেন। বিশেষ করে জেনাকারীকে রজম বা পাথর মেরে হত্যা করা।
সুতরাং আল্লাহ্ রাসুল (সাঃ) এর উপর পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, যা সত্য সন্ধানীদের শান্তির পথ দেখিয়ে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে যায়। এবং তাকে সরল ও সঠিক পথ প্রদর্শন করে।
এই আয়াত দ্বারা সুস্পষ্ট যে আল্লাহ্ তাঁর রাসুল (সাঃ) কে নূর হিসাবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যিনি পবিত্র উজ্জ্বল কিতাব "কুরআন" দ্বারা পৃথিবীবাসীকে কুফুরির অন্ধকার থেকে আল্লাহর পথ ইসলামে নিয়ে আসেন।
তাফসীরে কানজুল ঈমানেও একই কথা এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে -বিশ্বকুল সর্দার রাসুল (সাঃ) কে নূর বলা হয়েছে। কেননা তাঁর দ্বারা কুফরের অন্ধকার দূরীভূত হয়েছে এবং সত্যের পথ স্পষ্ট হয়েছে।
রঈসুল তাফসীরকারক ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও একই কথা উল্লেখ করেছেন।
বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও তাফসীরকারক ইবনে জারীর তাবারী (রহ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন- "নূর" দ্বারা, হে তাওরাত ও ইঞ্জীলধারী সম্প্রদায়! তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট হতে এসেছে আলো অর্থাৎ মুহাম্মদ (সাঃ), যার মাধ্যমে আল্লাহ্ সত্যকে সমুজ্জ্বল করেছেন, দ্বীনকে শক্তিশালী করেছেন এবং শির্ক দূরীভূত করেছেন। কাজেই যে তাঁর দ্বারা আলো পেতে চায়, তিনি তার জন্য আলোকবর্তিকা। আর "উজ্জ্বল কিতাব" অর্থাৎ আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে আলো, যা দ্বারা তিনি সত্যের নিদর্শনাবলী সমুজ্জ্বল করেছেন এবং এসেছে স্পষ্ট কিতাব, যাতে তাদের মধ্যকার বিতর্কিত বিষয়সমূহের পরিষ্কার বর্ণনা রয়েছে। যথা আল্লাহর তাওহীদ তাঁর হালাল - হারামের বিধান ও তাঁর দ্বীনের আইন কানুন। এ স্পষ্ট কিতাব হচ্ছে কুরআন মজীদ যা রাসুল (সাঃ) এর প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। এ কিতাবে আল্লাহর বিধিবিধানসহ দ্বীনের যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিষয়াদি পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হয়েছে। যাতে তারা সত্য ও মিথ্যাকে পৃথকভাবে চিনতে পারে।
উপরোক্ত বিখ্যাত তাফসীরের ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে এই আয়াতে "নূর" দ্বারা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এবং "কিতাবুন মুবীন" দ্বারা পবিত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। এই আয়াতের ব্যাখ্যা যা তাফসীরকারকগণ দিয়েছেন তার সমর্থন রয়েছে পরের আয়াতে।
"এর দ্বারা আল্লাহ যারা তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করে, তাদেরকে নিরাপত্তার পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদেরকে স্বীয় নির্দেশ দ্বারা অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে আনয়ন করেন এবং সরল পথে পরিচালনা করেন। [ সুরা মায়েদা ৫:১৬ ]
সুতরাং ১৫ নং আয়াতে যে "নূরের" কথা বলা হয়েছে তা রাসুলের (সাঃ) আদর্শিক আলোকবর্তিকা। এবং তার স্বরুপও ১৬নং আয়াতে আল্লাহ্ স্পষ্ট করেছেন। অতএব "নূর" দ্বারা রাসুল(সাঃ) কে আল্লাহর স্বত্তাগত নূরের সৃষ্টি বলা হয়নি। যদি কেউ এমন মনে করেন তবে তা স্পষ্টত শির্ক।
যদি কেউ মনে করেন নূর দ্বারা আল্লাহর জাতী নূর। তাহলে তার জন্য প্রশ্ন হলো সূরা ইখলাসের এই আয়াত কী বলছে?
"তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি "[ সুরা ইখলাস ১১২:৩ ]
অর্থাৎ আল্লাহ্ কাউকে জন্ম দেন নি। এটা দ্বারা যদি খ্রিস্টানদের ইসা(আঃ)কে ইংঙ্গিত করা হয়। যিনি একটা মাধ্যম তথা মা মারিয়ম(আঃ) এর গর্ভের দ্বারা দুনিয়া এসেছেন। সেটা যদি আল্লাহর সাথে শির্ক হয়। আর কোনো মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহ্ থেকে একটা অংশ নিয়ে রাসুল (সাঃ) এর সৃষ্টি হয়েছে এমন মনে করা কেন শির্ক নয়। অথচ আল্লাহ্ পরের আয়াতে বলে-
"এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।" [ সুরা ইখলাস ১১২:৪ ]
যদি আল্লাহর নূর দিয়ে রাসুল (সাঃ) সৃষ্টি হন তবে তিনিও আল্লাহর সমতুল্য হয়ে গেল! সুতরাং আমাদের জ্ঞান দিয়ে ইসলাম বুঝতে হবে। আবেগ দিয়ে নয়।
পবিত্র কুরআনের এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) হচ্ছেন পুরো বিশ্ববাসীর জন্য নূর বা আলো। স্পষ্ট ভাষায় হচ্ছে আলোকবর্তিকা বা আলোর মশাল। যা দ্বারা অন্ধকার দূর হয় আলো দেয়। এটা একটি রুপক শব্দ। এখানে অন্ধকার দ্বারা আল্লাহ্ বলেন শির্ক কুফরি। আর আলো হচ্ছে পূর্নাঙ্গ ইসলাম।
সুতরাং যারা ইসলাম মানবে তাদের অবশ্যই রাসুল (সাঃ) কে ভালোবেসেই ইসলামকে গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ তিনি যে ইসলাম নিয়ে এসেছেন তাকে তাঁর মতো করেই অনুসরণের নাম হচ্ছে রাসুলের (সাঃ) প্রতি ভালোবাসা। যদি কেউ মনে করেন রাসুলের (সাঃ) এর অনুসরণ ছাড়া শুধুমাত্র ব্যক্তি রাসুলের (সাঃ)কে ভালোবাসলেই আপনি সফল। তাহলে আপনি ভুল করেছেন। কেননা আল্লাহ্ তাঁর রাসুল (সাঃ) কে শুধু ভালোবাসার জন্য নয়, বরং ভালোবেসে অনুসরণ করার জন্যই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।
যদি শুধু ভালোবাসার কথা আসে, তাহলে কাফের আবু তালেবের চেয়ে বেশী ভালোবাসা রাসুল (সাঃ) কে কেউ কিয়ামত পর্যন্ত দিতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহর চোখে আবু তালিব কাফের। কেননা সে আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) এর অনুসরণ ছাড়াই ভালোবেসেছিল। আমরা আজ রাসুল (সাঃ) কে অনুসরণ ছাড়া ভালোবাসার দাবি করি। এই ভালোবাসার দাবি নিয়ে তিনি যা নয় তাঁকে তাই বানিয়ে মনে করছি আমরা রাসুল (সাঃ) এর অনেক বড় প্রেমিক। অথচ সহীহ্ হাদীস অনুযায়ী রাসুল (সাঃ) বলে গেছেন - আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। ইসা নবীকে নিয়ে যেমন খ্রিস্টানরা বাড়াবাড়ি করেছে----------।
সুতরাং রাসুল (সাঃ) যা করতে নিষেধ করেছেন আমরা কেন অতি ভালোবাসার মায়া দেখিয়ে তা করতে যাবো? আর আমরা হাজার করেও আবু তালিবের মতো কখনোই পারবো না।
সুতরাং নূর হচ্ছে ইসলাম। কাল কিয়ামতে এই নূর, কে কে গ্রহণ করেছেন এবং কে কে এই নূরকে প্রত্যাখ্যান করেছেন সেই হিসাব হবে। আমার প্রিয় রাসুল (সাঃ) হচ্ছেন সেই প্রকৃত নূর, যার দ্বারা আল্লাহ্ এই পৃথিবীর মানুষকে সঠিক আলো দেখাচ্ছেন। যে এই নূর গ্রহণ করতে পেরেছে সেই প্রকৃত সফলকাম। কিয়ামতে আমাদের এই নূরের কথাই আমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।বলা হবে কে কে রাসুলের (সাঃ) এর নূরে আলোকিত হয়েছ? একথা কখনোই জিজ্ঞাসা করা হবেনা, ইসলাম গ্রহণ করোনি কোনো সমস্যা নেই। আমার রাসুল (সাঃ) কে আল্লাহর জাতি নূর বলো নি কে কে? অতএব অবান্তর চিন্তা দূর করে আমাদের সত্য এবং সঠিক পথে আসা দরকার। আমাদেরকে রাসুলের (সাঃ) এর অনুসরণে এবং ভালোবেসে সত্যিকারের নূর তথা ইসলামকেই আঁকড়ে ধরতে হবে। ইনশাআল্লাহ হিদায়াত আমাদের নসিব হবেই।
আরও পড়ুনঃ
ইলমে গায়েব
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_4.html?m=1
রাসুল(সাঃ) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_88.html?m=1
রাসুল(সাঃ) হচ্ছে নূর
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_75.html?m=1
ইলমে গায়েব
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_4.html?m=1
রাসুল(সাঃ) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_88.html?m=1
রাসুল(সাঃ) হচ্ছে নূর
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_75.html?m=1