ইমান কী? ইমানের দাবি সমূহ কী কী? |
ইমান কী? ইমানের দাবি সমূহ কী কী?
ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর পরিপূর্ণ বিধানে আনুগত্য করা। এই পরিপূর্ণ বিধানকে মুখে স্বীকৃতি, অন্তরে বিশ্বাস এবং কাজে পূর্ণ করাই হচ্ছে ইমান। যার সহজ অর্থ হলো ইসলামের বিধানকে মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং সেইমতে কাজ (আমল) করাই হচ্ছে ইমান। যে এই কাজ অর্থাৎ ইমান এনে ইসলামের প্রতি আনুগত্যশীল হয় তাকে বলা হয় মুসলিম।
সুতরাং ইমানের অর্থ হলো আল্লাহ এবং আল্লাহ সম্পর্কিত সকল বিষয়ের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস। এই বিশ্বাস মূলত তিন প্রকার তথা বিশ্বাসগত, কর্মগত এবং উক্তিগত। পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের আলোকে ইমানের অনেক গুলো দাবি রয়েছে। যে দাবি গুলো কোনো ইমানদার পালন না করলে তার ইমান নষ্ট হয় যায়। আর যার ইমান নষ্ট হয়ে যায়, সে পরিনত হয় মুনাফিক মুরতাদে।
যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রেখে ইসলামের সামগ্রিক বিষয়ের উপর ইমান আনে, তখন তার উপর আল্লাহর কিছু দাবি জুড়ে যায়। অর্থাৎ কেউ ইমান আনার সাথে সাথে আল্লাহ তার ইমানের সাথে কিছু শর্তযুক্ত দাবি দেয়। যে দাবি গুলো যেকোনো ইমানদার পালন করতে বাধ্য। যদি কেউ ইমানের দাবি করে এইসব দাবি পালনে ব্যর্থ হয়। তাহলে সে আর ইমানদার থাকে না। নিম্নে এইসব দাবির বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ
আরও পড়ুন মাজারে দান সদকা করার ইসলামী বিধান
১) শিরক না করা
ইমানের প্রথম দাবি হলো, যে আল্লাহর উপর ইমান আনে সে কখনোই শিরকে লিপ্ত হতে পারে না। আল্লাহর সাথে শিরক করার কারণে যেকোনো ইমানদার তার ইমান হারিয়ে ফেলে। শিরক অর্থ হলো আল্লাহর সাথে অন্যান্য ইলাহ বা উপাস্য সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ আল্লাহর সমকক্ষ অন্য কাউকে মনে করা বা স্বীকার করা। এখন যে নিজেকে ইমানদার দাবি করবে তাকে অবশ্যই শিরক থেকে বেঁচে থাকতে হবে। বিভিন্নভাবে মানুষ শিরকে লিপ্ত হয়ে থাকে। আর যে নিজেকে ইমানদার দাবি করবে তাকে অবশ্যই নিম্মোক্ত কাজ গুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।
ক) ইবাদতের শিরক
আল্লাহর সাথে সাথে অন্য কাউকে উপাস্য মনে করে তার ইবাদত করা মানেই আল্লাহর সাথে শিরক করা। অর্থাৎ আল্লাহর জন্য যেমন সিজদা, সিয়াম, কুরবানি, তাওয়াফ ইত্যাদি করা হয়। ঠিক তেমনি আল্লাহর কোনো বান্দার (পীর) জন্য বা অন্য কারো (অলি, আউলিয়ার) উদ্দেশ্যে একইভাবে ভাবে জীবিত বা কবরের ব্যক্তির জন্য সিজদা, সিয়াম, মান্নত, কুরবানি, তাওয়াফ ইত্যাদি করা হচ্ছে সুস্পষ্ট শিরক। আল্লাহ বলেন,
"আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর না। তাহ’লে নিন্দিত ও (আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে) বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে " (বানী ইসরাঈল ৩৯)।
অন্য আয়াতে রাসুল (সা:) কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন,
"(হে নবি!) আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকবেন না। তাহ’লে আপনি শাস্তিতে নিপতিত হবেন " (শু‘আরা ২১৩)।
আল্লাহ নিজেই তাঁর রাসুলের মাধ্যমে আমাদের স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন আল্লাহর সাথে শরিক করা যাবে না। এমনকি তিনি শাস্তির কথাও উল্লেখ করেছেন। অথচ সকল নবি রাসুলগন হচ্ছেন নিষ্পাপ। আর আল্লাহ এটা এইজন্যই বললেন যাতে মানুষ শিরকের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে। অথচ অনেকে শিরকের সম্পর্কে না জানার কারণে বিভিন্ন পীর অলি আউলিয়াদের দরবারে গিয়ে সিজদা, মান্নত, তাওয়াফ, কুরবানি ইত্যাদি করছে। যদিও এইসব ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। অতএব কোনো ইমানদার ব্যক্তি কখনোই এইজাতীয় কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিরক করলে তার ইমান অবশিষ্ট থাকবে না। কেননা আল্লাহ বলেন,
"নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।" (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৪৮)
খ) আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক
আল্লাহর যেসব নিজস্ব গুণাবলী রয়েছে, তা অন্য কারো আছে এমন ধারণা করাই হচ্ছে আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক করা। অর্থাৎ আল্লাহর যা করার ক্ষমতা আছে তা তাঁর অন্য কোনো বান্দা বা অন্য কেউ করতে পারে এমন বিশ্বাস রাখা হচ্ছে আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক।
অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতা হচ্ছে কাউকে জীবন দেওয়া, নেওয়া, সুখ দুঃখ , সন্তান, বিপদে উদ্ধার ইত্যাদি। এখন কেউ যদি আল্লাহর কোনো বান্দার বা অন্য কারো এমন ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে তাহলে তা হবে শিরক। আল্লাহ বলেন,
"আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন।
অথবা দান করেন পুত্র-কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।"( আশ শূরা ৪২:৪৯, ৫০)
"আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোন দুর্দশা (দুঃখ কষ্ট) দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। আর যদি কোন কল্যাণ (সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য) দ্বারা স্পর্শ করেন তবে তিনিই তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।" (আল আনআম ৬:১৭)
উপরোক্ত আয়াত গুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সবকিছুর উপরই আল্লাহর ক্ষমতা। তিনিই একক এবং একমাত্র ক্ষমতাবান। তিনিই মানুষকে দুঃখ, দূর্দশা, সুখ, শান্তি, সন্তান ইত্যাদি প্রদান করেন।
এখন যদি কেউ আল্লাহর কাছে না চেয়ে কোনো বান্দা অলি আউলিয়ার কাছে সন্তান, পুত্র সন্তান, সুখ শান্তি, হায়াৎ রিজিক ইত্যাদি চায় তাহলে তা হবে আল্লাহর সিফাত তথা গুণাবলীর সাথে শিরক। আর ইমানের অন্যতম দাবি হচ্ছে শিরক না করা।
গ) আল্লাহর রাজত্বের সাথে শিরক
আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির সাথে তাদের জীবনযাপন করার জন্য বিভিন্ন বিধিবিধানও তৈরি করে দিয়েছেন। ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। যে বিধান বা সংবিধান দিয়ে মুসলমানগণ তাদের সকল সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কাজ কর্ম পরিচালনা করবে।
"জেনে রেখো সৃষ্টি যেহেতু তার (আল্লাহর) সুতরাং সমগ্র সৃষ্টির উপর ক্ষমতা ও একমাত্র (আল্লাহর) তার।" (সুরা আরাফ ৫৪)
অন্য আয়াতে বলেন,
"আল্লাহ ব্যতীত বিচার ফায়সালা ও শাসন করার ক্ষমতা কারো নেই।" (সুরা নাম আনাম ৫৭)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য এহ ঘোষণা দিচ্ছেন যে, সবকিছুর মালিক হচ্ছেন আল্লাহ। এবং তাঁর সৃষ্টির উপর তাঁর বিধিবিধানেরই ক্ষমতা চলবে। দুনিয়ার কারো কোনো বিধান বা সংবিধান এখানে প্রযোজ্য নয়। যদি আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করে তবে তা হবে শিরক। সুতরাং ইমানের দাবি অনুযায়ী ইমানদার ব্যক্তি কখনোই শিরক জাতীয় কাজে লিপ্ত হতে পারবে না।
২) কারো মাধ্যমে আল্লাহর কাছে না চাওয়া
ইমানের আরেকটি অন্যতম দাবি হলো, কারো মাধ্যম দিয়ে আল্লাহর কাছে না চাওয়া। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দেন যে তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি তাঁর বান্দাদের শোনেন এবং দেখেন। তাঁর বান্দাদের যেকোনো প্রয়োজনে তিনি সাড়া দেন। তারপরও কেউ যদি আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে বা বিপদে উদ্ধার হতে আল্লাহর কোনো বান্দাকে মাধ্যম ধরে বা উছিলা মনে করে, তবে তা হবে শিরক। যা কখনোই করা যাবেনা। আল্লাহ বলেন,
"যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তবে আল্লাহর উপর ভরসা কর’ (মায়েদাহ ২৩)।
"বলুন, (হে নবি!) আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে।" (যুমার ৩৮)
অর্থাৎ যারা ইমানদার তারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করবে এটাই ইমানের দাবি। যারা সরাসরি আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর কাছে মাধ্যম বানাবে তারা গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে ইমানহারা হয়ে যাবে। সুতরাং ইমানের দাবি হলো আল্লাহর কাছে কখনোই অন্যকে মাধ্যম বানিয়ে বা অন্য কারো নাম দিয়ে কোনো কিছু চাওয়া বা পাওয়ার আশা করা যাবে না। আল্লাহ বলেন,
"তারা আল্লাহকে ব্যতিত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না,উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, ‘এইগুলি আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।’ বল, ‘তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যা তিনি জানেন না?তিনি মহান, পবিত্র’ এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি উর্দ্ধে।” (সুরা ইউনুস ১০: আয়াত ১৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
"জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের ‘ইবাদাত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে।’ যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে আল্লাহ নিশ্চয় সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী কাফির, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না।" (সুরা যুমার : ৩)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, যারা আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া বা পাওয়ার জন্য অন্য কাউকে মিডিয়া বা মাধ্যম লাগাবে বা প্রয়োজন মনে করবে। তাহলে তা হবে আল্লাহর সাথে শিরক। অর্থাৎ যিনি আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী হিসাবে কাউকে মাধ্যম মানবেন তার ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ আল্লাহর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশায় তথাকথিত পীর অলি আউলিয়া ইত্যাদির দরবারে গিয়ে তাদের নাম করে সিজদা মান্নাত কুরবানি করা হচ্ছে শিরক। যা ইমানদারের ইমান নষ্ট করে শিরকে লিপ্ত করে।
আরও পড়ুন কবর পাকা করার দলিল খন্ডন
৩) মুশরিক কাফিরদের সাথে হৃদ্যতা না করা
যে নিজেকে ইমানদার মনে করবে সে কখনোই মুশরিক কাফের বিধর্মীদের সাথে আন্তরিক হৃদ্যতা (দুনিয়াবী যতটুকু প্রয়োজন তার বেশী) রাখতে পারবে না। শুধু তাইনয় কেউ যদি স্বীকৃত মুশরিক কাফিরদের কাফির মনে না করে তাদের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে তাদের খারাপ মনে না করে, তাহলে ঐ ব্যক্তির ইমান চলে যাবে। আল্লাহ সুস্পষ্ট বলেন,
‘নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র’। (তওবা ২৮)
"নিশ্চয়ই আহলে কিতাবদের (ইহুদী, খ্রিস্টানদের) মধ্যে যারা কুফরী করেছে এবং শিরক করে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং এরাই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট সৃষ্টি।" (বায়্যিনাহ ৬)
অতএব আল্লাহর ঘোষণা চূড়ান্ত যে, ইহুদী, নাসারা, মুশরিক (যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে) তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। তাদের ব্যাপারে কখনোই কাফির নয় (তারাও আল্লাহর বান্দা তারাও ভালো কাজে নাজাত পাবে) এমন সন্দেহ করা যাবে না। কেউ এমন করলে তার ইমান থাকবে না।
সুতরাং ইমানের দাবি হলো যিনি ইমানদার তিনি কখনোই বিধর্মীদের সাথে দুনিয়াবী যতটুকু প্রয়োজন তার অতিরিক্ত আন্তরিকতা রাখতে পারবেন না। যদি দাওআতের নিয়তে হয়ে থাকলে তা ভিন্ন। এছাড়া তাদের সাথে সম্পর্ক না রাখাই উত্তম।
৪) ইসলামের বিধানকে অচল মনে করা
আল্লাহর দেওয়া বিধিবিধানকে প্রাগৈতিহাসিক পুরোনো অচল ইত্যাদি মনে করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। অর্থাৎ আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের দেওয়া বিধিবিধান না মেনে অন্য কোনো দুনিয়াবী বিধি বিধান সংবিধান মেনে চলা এবং ঐটাকেই যথার্থ মনে করা।
সোজা কথায় বর্তমান দুনিয়ায় ইসলামি শাসনতন্ত্রের পরিবর্তে মানব সৃষ্ট গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি মেনে চলা হচ্ছে ইমান বিধ্বংসী কাজ। যারা আপোষে কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই ইসলামি বিধি বিধান মানবে না এবং দুনিয়াবী বিধি বিধান প্রতিষ্ঠায় করবে এবং মানবে তাদের ইমান নষ্ট হয়ে যাবে।
অতএব কেউ ইমানের দাবি করলে এমন মনোভাব রাখা যাবে না। আর কেউ এমন মনোভাব রাখার পর নিজেকে ইমানদার দাবি করতে পারবে না। তার ইমান আল্লাহর কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ বলেন,
"আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ইমানদার নারী-পুরুষের সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে।" (আহযাব ৩৬)।
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
"আর যে ব্যক্তি তার নিকট সৎপথ (ইসলাম) প্রকাশ হওয়ার পর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং বিশ্বাসীদের পথ ভিন্ন অন্য (দুনিয়াবী অন্যান্য যেকোনো মতবাদ) পথ অনুসরণ করবে, তাকে আমি সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা কত মন্দ আবাস!" (সুরা: আন নিসা, আয়াত: ১১৫)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর কাছে ইসলাম ব্যতীত কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কেউ যদি ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছু মানে, ভালো লাগে বা মানানোর জন্য অন্যকে উৎসাহিত বা চাপ দেয়, তাহলে তার ইমান বাতিল হয়ে যাবে। যেমন বর্তমান যুগের গনতন্ত্রের রাজনীতি। যেখানে প্রতিনিয়ত ইসলামি আইন বাতিল করে ইসলাম বিরোধী আইন হচ্ছে।
আরও পড়ুন সুফি সুন্নিদের পীর আউলিয়া সম্পর্কিত আকিদার জবাব
৫) ইসলামের বিধি বিধানকে অপছন্দ না করা
যেকোনো ইমানদারের প্রতি তার ইমানের দাবি হলো তাকে অবশ্যই ইসলামের সকল বিধি বিধান মানতে হবে। যদি কোনো ইমানদার ইসলামের কোনো একটি বিধান অপছন্দ করলে সাথে সাথে তার ইমান চলে যাবে। কোনো অবস্থাতেই কেউ ই ইসলামের কোনো বিধানকে অপছন্দ করতে পারবে না। আল্লাহ বলেন,
"আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ইমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়।" ( আল বাকারা ২ :৮)
"আর যারা কাফির তাদের জন্য রয়েছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন। এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পসন্দ করে না। অতএব তাদের কর্মসমূহ আল্লাহ ব্যর্থ করে দিবেন’ (মুহাম্মাদ ৮-৯)।
এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, ইমান এনে বা না এনে আমল সমূহ বাতিল হওয়ার অন্যতম কারণ আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় অপছন্দ করা। উক্ত বিষয়ে ইমানদার হয়ে আমল করলেও অপছন্দ করার কারণে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।
অর্থাৎ কারো পর্দার বিধান ভালো লাগে না যদিও সে পর্দা করে। অথবা কারো জিহাদের কথা ভালো লাগে না অথবা পুরুষদের একাধিক বিয়ের অনুমতিও ভালো লাগে না। যদি কারো বিশ্বাস এমন হয় তাহলে তার ইমান চলে যাবে। সুতরাং ইমানের দাবি হলো ইসলামের সকল বিধি বিধান আন্তরিকতার সহিত মানতে হবে। যে এটা করতে পারবে না তার ইমান থাকবে না।
আরও পড়ুন প্রবৃত্তির অনুসরণ ও তার পরিনতি
৬) দ্বীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ না করা
ইমান আনার পর কোনো ইমানদার ইসলামকে নিয়ে বা ইসলামের কোনো বিধি বিধান কাজ আমল নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করলে তার ইমান চলে যাবে। আল্লাহ বলেন,
"আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসুলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে? " ( আত তাওবাহ্ ৯:৬৫)
"তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ইমানের পর অবশ্যই কুফরী করেছ। যদি আমি তোমাদের থেকে একটি দলকে ক্ষমা করে দেই, তবে অপর দলকে আযাব দেব। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী"।( আত তাওবাহ্ ৯:৬৬ )
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ স্পষ্ট করে দিলেন যে, আল্লাহ, আল্লাহর রাসুল ও তাঁর আয়াত নিয়ে কেউ যদি খেল, তামাশা, বিদ্রুপ, মজা ইত্যাদি করে তাহলে তার ইমান চলে যাবে। যেমনঃ অনেকে দাড়ি রাখা, টাকনুর উপর প্যান্ট পড়া, বিভিন্ন বিদআতী কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়া নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। যা কখনোই উচিত। আল্লাহ আরো বলেন,
"সুতরাং যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখি" (ইউনুস ১১)।
তারা আল্লাহ না চাইলেই হিদায়াত পাবে না। দুষ্টুমিতেই জীবন পার হবে। সুতরাং তাদের সাথে চলাফেরা যোগাযোগ রাখা যাবে না। এব্যাপারে আল্লাহ বলেন,
"আর (আল্লাহ) কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারী করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন"। (নিসা ১৪০)।
তাদের বন্ধু রূপেও গ্রহণ করা যাবেনা। তাদের থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আল্লাহ বলেন,
‘হে মুমিনগণ! আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। আর যখন তোমরা ছালাতের জন্য আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা মনে করে। কারণ তারা নির্বোধ।" (মায়েদাহ ৫৭-৫৮)
সুতরাং ইমানের দাবি হলো দ্বীন নিয়ে যারাই হাসি ঠাট্টা করবে তাদের থেকে তৎক্ষণাৎ দূরত্ব সৃষ্টি করতে হবে। কেননা দ্বীন নিয়ে তামাশাকারীরা হচ্ছে মুনাফিক। আর মুনাফিকদের জায়গা হচ্ছে জাহান্নামে।
আরও পড়ুন সুফিবাদ কী? কীভাবে উৎপত্তি এবং বর্তমান অবস্থা
৭) জাদু টোনা বা কুফরী কালাম না করা
ইমানের অন্যতম দাবি হচ্ছে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে মানা এবং বিশ্বাস ও ভরসা রাখা। আল্লাহর উপর বিশ্বাসের পরিবর্তে কেউ যদি জাদু টোনা বা শয়তানী কুফরি কাজের মাধ্যমে কিছু পেতে চায় বা কারো ক্ষতি করতে চায় তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ ঈামান খারিজের কাজ। কুফরি কাজের দ্বারা যত ভালো কাজই হোক না কেন ইসলামে সকল প্রকার জাদু টোনা ইত্যাদি হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ সুরা বাকারার ১০২ নং আয়াতে বলেন, "
আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরী করেনি; বরং শয়তানরা কুফরী করেছে। তারা মানুষকে যাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর। আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফরী করো না। এরপরও তারা এদের কাছ থেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা তার মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত যা তাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা অবশ্যই জানত যে, যে ব্যক্তি তা ক্রয় করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই-না মন্দ, যার বিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে। যদি তারা জানত"।
অতএব ইমানের দাবি হচ্ছে কোনো অবস্তাতেই কুফরি কালাম কালো জাদু ইত্যাদি করা যাবে না। যারাই এইসব করে তাদের আর ইমানের অস্তিত্ব থাকেনা। আজ উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষই কুফরি কালামে লিপ্ত যদিও তারা ইমানের দাবি করে। কিন্তু সঠিক ইমানের দাবি তারা পূরণ করে না।
আরও পড়ুন কুরআনের আলোকে মানুষ সৃষ্টির কারণ
৮) ইসলামের বিপক্ষে কাফিরদের সাহায্য না করা
ইমানের গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো কোনো অবস্থার প্রেক্ষিতেই কখনোই কাফির মুশরিক বা বিধর্মীদের ইসালামের বিপক্ষে সাহায্য করা যাবে না। কোনো ঈমানের দাবিদার যদি ইসলামের বিপক্ষে কাফির মুশরিকদের সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে তার ইমান চলে যাবে। আল্লাহ সুরা আত তাওবাহ্ ২৩ নং আয়াতে বলেন,
"হে ইমানদারগণ, তোমরা নিজদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ইমান অপেক্ষা কুফরীকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই যালিম। "
অন্য আয়াতে বলেন,
"তোমাদের মধ্যে যে তাদের (বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা যালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।" (মায়েদাহ ৫১)
অতএব কখনোই বিধর্মীদের আন্তরিকভাবে বন্ধু করা যাবে না যতটুকু দুনিয়ায় প্রয়োজন। সেইসাথে যারা ইসলামের বিপক্ষে বা কোনো মুসলিমের বিপক্ষে বিধর্মীদের সাহায্য সহযোগিতা করবে তাদের ইমান নষ্ট হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন ইবাদত কবুল হওয়ার শর্তসমূহ
৯) কাউকে দ্বীন ইসলাম এবং শরীয়তের ঊর্ধ্বে মনে না করা
ইমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হলো আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল। ছাড়া আর কাউকে দ্বীন ইসলামের উর্ধ্বে মনে করা যাবেনা। অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের হুকুম আহকামের পরিবর্তে দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে অন্য কারো হুকুম মানা যাবে না। কেউ যদি রাসুলুল্লাহ সা. এর আনীত শরীয়তের বিধি বিধান মানার চাইতে অন্য কোনো পীর বুজুর্গের দেওয়া (শরীয়ত বহির্ভূত) কাজ করে বা করাকে জায়েজ মনে করে তাহলে তাঁর ইমান থাকবে না। কেননা শরীয়তের ঊর্ধ্বে কেউ নেই। ইসলামে যা কিছু চলবে সবই রাসুলুল্লাহর নির্দেশ এবং সম্মতিতে।
এখন কেউ যদি পীর অলি আউলিয়াকে শরীয়তের উৎস ধরে (স্বপ্নের বার্তা, কাশফ) সেইমতো বিভিন্ন বিধি বিধান চালু এবং পালন করে তাহলে তার ইমান থাকবে না। কেননা ইসলামে একমাত্র অনুসরণ হচ্ছে রাসুলুল্লাহ। আল্লাহ বলেন, "(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা
আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।" (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ আরো বলেন,
"তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের (শরীয়ত বহির্ভূত কারোর) অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর।" (আল আরাফ : ৩)
অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাইলে একমাত্র রাসুলের অনুসরণ করতে হবে। রাসুলের প্রদর্শিত পথ ছাড়া অন্য কারো অনুসরণ করা যাবে না।
আরও পড়ুন কুরআন ই হিদায়াত প্রকৃত মাধ্যম
১০) শরীয়তের বিধিবিধানে কম বেশী বা নতুনত্ব সৃষ্টি না করা
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। যে ইমান আনবে তার উপর ইমানের দাবি হলো দ্বীন ইসলামে নতুন করে কোনো কিছু সৃষ্টি করা বা বাদ দেওয়া যাবে না। কেউ যদি মনে করে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল কতৃক আনীত ইসলামের বিধানে নতুন করে কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করলে ভালো হবে। অথবা কেউ যদি রাসুলুল্লাহর দেওয়া শরীয়তের নির্ধারিত বিধি বিধানে (ইমান, আকিদা, আমলে) কম বেশী বা নতুনত্ব (বিদআত) সৃষ্টি করে বা জায়েজ মনে করে এবং সেইমতো আমলেও করে তাহলে তার ইমান চলে যাবে।
নতুনত্ব আনা বা বাদ দেওয়ার মধ্যে তারা রাসুলুল্লাহ রিসালাতকে অস্বীকার করে। এর দ্বারা আল্লাহ যে তাঁর রাসুল সাঃ দ্বারা ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেটা মিথ্যা হয়ে যাওয়া। অথচ আল্লাহ বলেন,
‘যে কেউ রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিকে সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।" (নিসা ১১৫)।
এটা দ্বারা সুস্পষ্ট যে কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি মানুষকে একমাত্র রাসুলুল্লাহ সা. এর অনুসরণে দ্বীন ইসলামে জীবনযাপন করতে হবে। কেননা আল্লাহ বলেন,
"আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।" (সুরা মায়িদা ৫ : ৩)।
১১) ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম তালাশ না করা
কাউকে আল্লাহর উপর ইমান আনতে হলে অন্যান্য সকল ধর্ম এবং মতবাদকে ছুড়ে ফেলেই ইমান আনতে হবে। সুতরাং ইমানের আরেকটি দাবি হলো অন্যান্য সকল ধর্মকে ত্যাগ করা। কেউ যদি আল্লাহর দ্বীন ইসলামকে ছেড়ে অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে তাহলে তাদের ইমান নষ্ট হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন,
"যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মকে গ্রহণ করবে তার কোন আমল গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।" (আলে ইমরান ৮৫)
সুতরাং কেউ অন্যান্য ধর্মের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে বা সহানুভূতি পোষণ করে ইমানের দাবিদার হতে পারবে না।
আরও পড়ুন উছিলা কী? উছিলার বিস্তারিত ব্যাখ্যা
১২) দ্বীন থেকে মুখ না ফেরানো
যিনি আল্লাহর উপর ইমান আনবেন তিনি শরীয়তের নির্দেশ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই দ্বীন থেকে মুখ ফেরাতে পারবে না। কেউ যদি দ্বীন ইসলামের বিধি বিধান বা আমল সমূহকে বোঝা মনে করে তা থেকে বিরত থাকে তাহলে তার ইমান থাকবে না। আল্লাহ বলেন,
"আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে, যাকে স্বীয় রবের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেয়ার পর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।" (আস সেজদাহ্ :২২)
অর্থাৎ যেসব ঈমাদারদের আল্লাহর বিভিন্ন বিষয়ের উপর ইমান এবং আমল করতে বলা হয় তখন তাদের দ্বীনের হুকুম আহকামকে বোঝা মনে হয়। তখন তারা দ্বীনের বিভিন্ন বিধি নিষেধ এবং আমল থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে। এইসব ব্যক্তিদের ইমান আর অবশিষ্ট থাকে না। আল্লাহ আরো বলেন,
"যে আমার স্মরণ (ইমান, আমল, জিকির ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ (কষ্টে পতিত) হবে এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? আমিতো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াত সমূহ এসেছিল। অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব।" (ত্ব-হা ১২৪-১২৬)
অতএব দ্বীন ইসলাম থেকে আল্লাহ থেকে কেউ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তার ইমান বিনষ্ট হবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, শুধু মুখে ইমান আনলেই ইমানদার হওয়া যায় না। ইমান আনার সাথে সাথে তার দাবি সমূহও পূরণ করা একজন ইমানদারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেইসাথে কেউ ইসলামি আকিদাহ ও তাওহিদ গ্রহণের পর যদি উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব না দেয় তাহলে সে ইমান হারা হবে বা মুরতাদ হয়ে যাবে। তার উপর মুরতাদের হুকুম (মৃত্যুদন্ড) ওয়াজিব হবে। যা কার্যকর করার মালিক হচ্ছেন দেশের সরকার। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই দন্ড কার্যকর করার অধিকার রাখে না। অথবা সে মুনাফিকে পরিনত হবে। আর যে মুনাফিক হয়ে মৃত্যুবরণ করে তার স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২৩ নভেম্বর, ২০২১
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।