মুনাফিক শব্দটি এসেছে নিফাক থেকে। ইসলামে মুমিন মুত্তাকী যেমন আল্লাহ্ বিশ্বাসীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। ঠিক তেমনি কাফের মুনাফিক শব্দ গুলো আল্লাহ্ অবিশ্বাসীদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
মুনাফিক কে?
মুনাফিক শব্দটি এসেছে আরবি "নিফাক" শব্দ থেকে। আরবি শব্দ নিফাকের অর্থ হলো কপটতা, প্রতারণা, ভন্ডামী, বা অন্তরে এক রকম ধারণা পোষণ করা এবং বাইরে অন্য রকম প্রকাশ করা। ইসলামী পরিভাষায় এর অর্থ হলো, অন্তরে কুফরি গোপন রেখে মুখে ঈমানের কথা বলা বা স্বীকার করা এবং লোক দেখানোর জন্য বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠানাদি বা ইবাদত পালন করা। অর্থাৎ কেউ নিজেকে সবার কাছে মুমিন পরিচয় দিয়ে ভিতরে ভিতরে অন্তরে আল্লাহ্ বিরোধী চিন্তা চেতনা লালন করাই হচ্ছে মুনাফিকের কাজ। যে ব্যক্তি এরূপ করে তাকে ইসলামী পরিভাষায় ‘মুনাফিক’ বলা হয়।
এছাড়াও এমন অনেকে আছে যাদের ইসলামের প্রতি আগ্রহ নেই। বরং ব্যাপকরকম অনীহার কারণে ইসলাম সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করে না। যারফলে মুখে ও অন্তরে আল্লাহ্ আছে বিশ্বাস করে। কিন্তু তারা এমন এমন কাজ করে, যে কাজের কারণে তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। এবং ঈমানের দূর্বলতার কারণে তারা মুনাফিকিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অথচ তারা জানতেই পারে না তাদের কর্মকান্ড মুনাফিকিতে পরিনত হয়েছে।
অতএব মুনাফিকের সংজ্ঞা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে মুনাফিক দুই ধরনের।
১) বিশ্বাসগত মুনাফিক।
২) কর্ম বা আমলগত মুনাফিক।
১) বিশ্বাসগত মুনাফিকঃ
যে মুনাফিক প্রকাশ্যে ঈমানের ঘোষণা দিয়ে মনে মনে আল্লাহ এবং রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে বিরুপ ধারণা পোষণ করে। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্ধে গোপনে ঘৃণা প্রকাশ করে এবং রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্ধাচরণ করে তারা হচ্ছে বিশ্বাসগত মুনাফিক। এই জাতীয় মুনাফিক রাসুল (সাঃ) জীবদ্দশায় ছিলো। তারা ঈমানের দাবি করে সুযোগ সুবিধা নিয়ে সময়ে অসময়ে রাসুলের বিরুদ্ধে অপবাদ এবং তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করতো। সেইসাথে কাফিরদের সাথে মিলিত হয়ে রাসুল (সাঃ) হত্যার পরিকল্পনায়ও করেছিল। এইজাতীয় মুনাফিক হচ্ছে কাফেরের সমতুল্য। এদের অবস্থান জাহান্নামে। বর্তমানে কিছু এজেন্টধারী মুনাফিক ছাড়া এমন মুনাফিক সচারচর নেই।
২) কর্ম বা আমলগত মুনাফিকঃ
কর্ম বা আমলগত মুনাফিক হলো, যে মুখে ঈমানের দাবি করে অন্তরে ঈমানের পরিপন্থী ধারণা পোষণ করে কাজে কর্মে তা প্রকাশ করে। সেইসাথে অলসতা ও বিরুপ মনোভাব নিয়ে ইসলামী জ্ঞানার্জন না করা। ইসলামী আইনকানুনের প্রতি বিদ্বেসসহ আমলের ব্যাপারে গাফিলতি করা ব্যক্তিই হচ্ছে আমলগত মুনাফিক। অর্থাৎ এইজাতীয় ব্যক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে নয় বরং ইসলামের বিধিনিষেধ মেনে চলে না। যেসব আমল করা দরকার তা পরিত্যাগ করে এবং যা নিষেধকৃত তা বাস্তবায়ন করে। মোটকথা ইসলামের প্রতি উদাসীন ব্যক্তি এই শ্রেণীতে পড়ে। বর্তমান বিশ্বে এইজাতীয় মুনাফিকের সংখ্যাই বেশী। এই শ্রেণীর মুনাফিক জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে ধীরে ধীরে কুফরি কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। যা তাদেরকে কুরআনের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে দেয়।
বর্তমান সমাজের মুনাফিকের পরিচয়ঃ
পবিত্র কুরআন এবং হাদীসে মুনাফিক চেনার জন্য অসংখ্য আয়াত এবং হাদীস এসেছে। আমরা এইসব আয়াত এবং হাদীস পর্যালোচনা করলে খুব সহজেই বুঝতে পারবো কাদের কাদের মুনাফিকের আলামত রয়েছে এবং কেন তারা কী কী কারণে মুনাফিকে পরিনত হচ্ছে।
আল্লাহর বিধান বিদ্বেষী মুনাফিকঃ
আমাদের সমাজে আজ এমন কিছু জন্মগত মুসলমান আছে যারা দুনিয়াদারী করার জন্য আল্লাহর বিভিন্ন আইনকানুনকে কটাক্ষ করে। যেসব আইনকানুন তাদের বিরুদ্ধে যায় তারা সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলে। যদিও তারা নিজেদের মুসলিম বলে দাবি করে। আল্লাহ্ তাদের সম্পর্কে কুরআনে বলেন,
" আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়।" [ সুরা বাকারা ২:৮ ]
এই আয়াতে আল্লাহ্ স্পষ্ট করে বলে দিচ্ছেন, এমন কিছু মুসলমান আছে যারা মুখে ঈমানের দাবি করে কিন্তু কখনোই ঈমানদার হতে পারে না তাদের কর্মগুণে। অর্থাৎ তাদের কর্মকান্ডই বলে দেয় যে এরা ঈমানদার নয়। সুতরাং এরা মুনাফিক। যেমন আল্লাহ বলেন -
" আর যখন তাদের বলা হয় — ”আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার দিকে এবং রসূলের দিকে এসো’’, তুমি দেখতে পাবে মুনাফিকরা তোমার কাছ থেকে ফিরে যাচ্ছে বিতৃষ্ণার সাথে। "( সূরা নিসা : ৬১)
অর্থাৎ ঐসব মুনাফিককে যখন আল্লাহ এবং রাসুলের পথে চলার জন্য আহবান করা হয় তারা সেদিকে না এসে অবজ্ঞার সহিত অন্যদিকে ফিরে যায় তারাই হচ্ছে মুনাফিক। এখন আমাদের সমাজে এমন মুসলমান ভুড়িভুড়ি। যারা শুধুমাত্র জন্মগত মুসলমান। ইসলামের আইনকানুন বিধিনিষেধের প্রতি তাদের কোনো তোয়াক্কা নেই। কোনপ্রকার আমলের ধারেকাছে নেই।
এরা দুনিয়াবী ক্ষমতার লোভে আখিরাতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে। তাদেরকে ইসলামের কথা বললেই নানান ছলছুতোয় পার পাওয়ার চেষ্টা করে। ক্ষেত্রবিশেষে কুরআনের পাল্টা দুনিয়াবী যুক্তি দিয়ে নিজের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। দুনিয়াদারীই হচ্ছে তাদের কাছে গুরত্বপূর্ণ। আখিরাতের বিশ্বাস নেই বলে আখিরাতের চিন্তাও নেই। এরাই হচ্ছে প্রকৃত মুনাফিক।
আচরণগত মুনাফিকঃ
পবিত্র হাদীস শরীফে মুনাফিকদের নিয়ে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হাদিসটি হচ্ছে -আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ‘স (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকবে সে খাঁটি মুনাফিকগণ্য হবে। আর যে ব্যক্তির মাঝে তার মধ্য হতে একটি স্বভাব থাকবে, তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকদের একটি স্বভাব থেকে যাবে। (সে স্বভাবগুলি হল,) ১। তার কাছে আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে। ২। কথা বললে মিথ্যা বলে। ৩। ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং ৪। ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল ভাষা বলে।’’
(সহীহুল বুখারী ৩৪, ২৪৫৯, ৩১৭৮, মুসলিম ৫৮, তিরমিযী ২৬৩২, নাসায়ী ৫০২০ আবূ দাউদ ৪৫৮৮, আহমাদ ৬৭২৯, ৬৮২৫, ৬৮৪০)
এই হাদিসটি আমরা সবাই জানি। এই হাদীস অনুসারে উপমহাদেশে ৮০ শতাংশের উপরে মুসলমান মুনাফিকী নিয়ে বাস করছে। কেননা বর্তমান সময়ে মিথ্যা বলে না এমন একজন মানুষ পাওয়া দুষ্কর হবে। আর ওায়াদা ভঙ্গ এবং আমানত খিয়ানতও স্বাভাবিক না হলেও পাওয়া কষ্টকর। আর অশ্লীল ভাষাতো এধরনের রেওয়াজে পরিনত হয়েছে। আমরা কেউ এরথেকে বেঁচে নেই গুটিকয়েক বাদে।
সালাত পরিত্যাগকারী মুনাফিকঃ
যারা জামাতের সহিত সালাত বা নামাজ আদায় করে না তাদেরকে মুনাফিকের সাথে তুলনা করা হয়েছে। পবিত্র হাদীসে এসেছে,
‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তোমরা সঠিকভাবে আযানের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত সলাতের প্রতি সবিশেষ নযর রাখবে। কেননা এই পাঁচ ওয়াক্ত সলাতই হচ্ছে হিদায়াতের পথ। মহান আল্লাহ তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর জন্য হিদায়াতের এ পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের (সাধারণ) ধারণা, স্পষ্ট মুনাফিক্ব ব্যতীত কেউ জামা’আত থেকে অনুপস্থিত থাকতে পারে না। আমরা তো আমাদের মধ্যে এমন লোকও দেখেছি, যারা (দুর্বলতা ও অসুস্থতার কারণে) দু’জনের উপর ভর করে (মসজিদে) যেত এবং তাকে (সলাতের) কাতারে দাঁড় করিয়ে দেয়া হত। তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যার ঘরে তার মসজিদ (সলাতের স্থান) নেই। তোমরা যদি মসজিদে আসা বাদ দিয়ে ঘরেই (ফরয) সলাত আদায় কর তাহলে তোমরা তোমাদের নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাতকেই বর্জন করলে। আর তোমরা তোমাদের নাবীর সুন্নাত ত্যাগ করলে অবশ্যই কুফরীতে জড়িয়ে পড়বে। (সহীহ্ মুসলিমে এসেছে ‘তোমরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হবে’ শব্দে। আর এটাই মাহফূয।
সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫৫০, ইবনে মাজাহ হাদীস শরীফে ৭৭৭ নং এবং মুসলিম ৬৫৪, আহমাদ ৩৫৫৪, দারিমী ১২৭৭। তাহক্বীক্ব আলবানী: সহীহ। তাখরীজ আলবানী: ইরওয়াহ ৩৮৮, সহীহ আবূ দাউদ ৫৫৯।
একটি হাদীস এসেছে, যেখানে বলা হচ্ছে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামায়াতের সহিত আদায় না করা মুনাফিকের লক্ষণ। অর্থাৎ শুধুমাত্র মুনাফিকরাই জামায়াতে সালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকত।
আর বর্তমান সমাজে সালাত জামায়াতে পড়া তো দূরের কথা, সালাতই আদায় করে না সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান। যদি জামায়াতে সালাত আদায় না করা মুনাফিকের লক্ষণ হয়, তাহলে যারা সালাত বা নামাজই আদায় না করে না তাদের কী বলা হবে? হাদিস স্পষ্ট এসেছে মুনাফিকরাই জামাতে অংশ নিতো না। আর আমাদের দেশে শতকরা ৯০ জন জন্মগত মুসলমানই নামাজ কালাম আদায় করে না। সুতরাং আমাদের চিন্তা করা উচিত আমরা আসলেই মুমিন তথা আল্লাহর উপর বিশ্বাসী আছি? নাকি মুখে আল্লাহ্ আছে বলে স্বীকার করে অন্তরে আল্লাহ্কেই পাত্তা দিচ্ছি না। (নাঊজুবিল্লাহ) আর আমাদের দেশে এমন মুনাফিকী মুসলমানের কোনো অভাব নেই।
সালাতে অলসতাকারীরা মুনাফিকঃ
যারা সরাসরি সালাত আদায় করে না তারা তো স্পষ্ট মুনাফিকিতে আছে এটা তো জানা গেলো। সেইসাথে যারা সালাত আদায় করেও মুনাফিকের খাতায় নাম লিখিয়ে আছে। আল্লাহ্ বলেন,
" অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুতঃ তারা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন দাঁড়ায়, একান্ত শিথিল ভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে।" [ সুরা নিসা ৪:১৪২ ]
এই আয়াত দ্বারা স্পষ্ট যে, সালাত খুযু খুশুর সহিত আদায় না করা মুনাফিকের লক্ষণ। সেইসাথে লোক দেখানোর জন্য সালাতে অংশ নেওয়া হলেও মুনাফিক বলে গন্য হবে। আমাদের সমাজে মানুষ বৃদ্ধ হলে তবেই সালাতে অংশ নেয়। শক্তি সমর্থ থাকা অবস্থায় কখনো মসজিদমুখী হয়না। যখন শক্তি সামর্থ্য দিয়ে টাকাপয়সা উপার্জন করতো তখন কখনোই আল্লাহ্কে সময় দেওয়ার সময় তাদের ছিলো না। এখান ছেলে সন্তানরা বড় হয়ে রোজগার করছে বলে বাবা ঘরে বেকার। অর্থাৎ ঘরে কোনো কাজ করার থাকে না বলেই মসজিদে সালাতে অংশ নেয়। আর কিছু লোক আছে ছেলে মেয়ে বড় হয়ে বিয়ের উপযুক্ত হলে তবেই মসজিদে নামাজ কালাম পড়ে।
সেইসাথে এমন কিছু বিত্ত শ্রেণীর মুসলমান আছে। যাদের টাকাপয়সার অভাব নেই। সমাজে প্রচুর নাম ডাক। তখন তারা মানুষের সম্মান এবং খ্যাতি পাওয়ার জন্য নিয়মিত মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করে। সেইসাথে টাকাপয়সার জোরে মসজিদ মাদ্রাসার বিভিন্ন পদ পদবী কমিটিতে জড়িত হয়। এইসব পদ পদবী পাওয়ার পর এবং পাওয়ার জন্যও অসংখ্য বিত্তশালী নিয়মিত সালাতে অংশগ্রহণ করে। যাদের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করা নয়। বরং বান্দাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই আসল উদ্দেশ্য। এইসব সকল প্রকৃতির লোকই হচ্ছে মুনাফিকের শ্রেণীভুক্ত।
কুরআন অস্বীকারকারীরা মুনাফিকঃ
কুরআন অস্বীকারকারী সরাসরি কাফির। কিন্তু এমন এক প্রকার কুরআন অস্বীকারকারী আছে যারা ঈমানের পাশাপাশি কুরআনকে কৌশলে অস্বীকার করে। তারা নানান ফন্দি ফিকির করে কুরআনকে অস্বীকার করার চেষ্টা করে মুনাফিকিতে পরিনত হয়েছে।
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে (সূরা মারইয়্যামের ৫৯ আয়াত পাঠ করার পর) বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,
“ষাট বছর পর কিছু অপদার্থ পরবর্তীগণ আসবে, তারা নামায নষ্ট করবে ও প্রবৃত্তিপরায়ণ হবে; সুতরাং তারা অচিরেই অমঙ্গল প্রত্যক্ষ করবে। অতঃপর এক জাতি আসবে, যারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠের অক্ষকাস্থি পার হবে না। (হৃদয়ে জায়গা পাবে না।) কুরআন তিন ব্যক্তি পাঠ করে; মু’মিন, মুনাফিক ও ফাজের।” বর্ণনাকারী বাশীর বলেন, আমি অলীদকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ওরা তিন ব্যক্তি কে কে?’ তিনি বললেন, ‘মুনাফিক তা অস্বীকার করে, ফাজের তার অসীলায় পেট চালায় এবং মু’মিন তার প্রতি ঈমান রাখে।’
(আহমাদ ১১৩৬০, হাকেম ৩৪১৬, ৮৬৪৩, সিলসিলাহ সহীহাহ ১/২৫৭)
অর্থাৎ একশ্রেণির মুসলমান কুরআন পড়বে কিন্তু তারা কুরআন পড়েও তা অস্বীকার করবে। অর্থাৎ তাদের কুরআন পড়াটা শুধু তিলাওয়াতই হবে। এর অন্তর্নিহিত অর্থ তারা জানে না এবং জানার চেষ্টাও করবে না। তাই কুরআনের অর্থ না জানার কারণে আল্লাহ্ কুরআনে কী দিয়েছেন কী বলেছেন কী নিষেধ করেছেন ইত্যাদি তার কিছুই তারা অবগত হতে পারে না। ফলে তারা না জেনে কুরআন বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে কুরআনকে অস্বীকার করে ফেলে। এবং তারা মুনাফিকিতে পরিনত হয়।
আবার আরেকটি শ্রেণী হচ্ছে, তারা কুরআন পড়ে এবং তার মধ্যে কী আছে তাও জানে। কিন্তু সেই অনুযায়ী আমল করে না এবং চেষ্টাও করে না। বরং ক্ষেত্রবিশেষে কুরআনের বিরুদ্ধে কাজ করে কুরআন বিরোধী হয়ে মুনাফিকিতে লিপ্ত হয়।
অতএব শুধু কুরআন তিলাওয়াত করলেই সমস্ত নেকী হবেনা। যতক্ষন না সেই অনুযায়ী আমল করা না হচ্ছে। যদি কুরআন পড়েও কুরআনের আমল না করে এর বিপরীতে চলে তাহলে ঐসব ব্যক্তি এখনো মুনাফিকিতে রয়েছে।
ইসলামের জ্ঞান না থাকলেও মুনাফিকঃ
প্রতিটি মুসলমানের ইসলামের জ্ঞানার্জন করা ফরজ। অর্থাৎ প্রতিটি মুমিনকেই শরীয়তের নূন্যতম হুকুম আহকাম সম্পর্কে অবগত হতে হবে এবং জানার চেষ্টা থাকতে হবে।
পবিত্র হাদীসে এসেছে,
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "ইলম বা জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরয " (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ২১৮, ইবনে মাজাহ ২২৪)
তাছাড়া আল্লাহ্ নিজেই বলেন,
" যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান। "[ সুরা যুমার ৩৯:৯ ]
" যে ব্যক্তি জানে যে, যা কিছু পালনকর্তার পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে তা সত্য, সে কি ঐ ব্যক্তির সমান, যে অন্ধ? তারাই বোঝে, যারা বোধশক্তি সম্পন্ন।" [ সুরা রা’দ ১৩:১৯ ]
উপরোক্ত হাদীস ও কুরআনের আয়াত থেকে বুঝা যাচ্ছে প্রতিটি মুমিনের দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কেননা দ্বীন সম্পর্কে না জানা বা জানার চেষ্টা না করাই হচ্ছে দ্বীন পালন না করা বা দ্বীনের ব্যাপারে উদাসীনতা। যা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না।
পবিত্র হাদীসে এসেছে,
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অমুক অমুক ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের ব্যাপারে কিছু জানে বলে আমি ধারণা করি না। রাবী লায়স বর্ণনা করেন যে, লোক দু‘টি মুনাফিক ছিল। ( সহিহ বুখারী আচার-ব্যবহার ৬০৬৭ নং হাদীস আধুনিক প্রকাশনী- ৫৬৩২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৫২৮)
এই হাদীস থেকে আমরা এই শিক্ষা পায় যে, দ্বীনের ব্যাপারে কিছু না জানা হচ্ছে মুনাফিকী। অর্থাৎ যে নিজেকে ঈমানদার দাবি করবে তাকে অবশ্যই দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখতে হবে। শুধু মুসলিম ঘরে জন্মেছি বলেই মুসলমান হয়ে যাবো ব্যাপারটা কখনোই এমন নয়। মুসলিম হতে হলে কালেমা বুঝে তবেই ঈমান আনতে হবে। শুধু তাইনয় ইসলামের সাধারণ খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানও রাখতে হবে। বিশেষ করে তাওহীদ, শির্ক, বিদআত ইত্যাদি। যা না জানার কারণে ঈমান ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
আমরা দুনিয়াবী জীবনযাপনের জন্য সন্তানদের ছোট থেকেই দুনিয়াবী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য জীবনমরণ চেষ্টা করি। অথচ এই দুনিয়া আল্লাহ্ এবং পরকালের কাছে কিছুই নয়। যে ঈমান এনে নিজেকে ঈমানদার দাবি করে, তাকে অবশ্যই দুনিয়ার চাইতে আখিরাতকে বেশী প্রাধান্য দিতে হবে। আর এই জন্যই দ্বীনের পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই এই বিষয়ে বেমালুম ভুলে থাকে।
আমাদের উপমহাদেশে সুফিবাদী ইসলামের কারণে অধিকাংশ মুসলমানই দ্বীন সম্পর্কে মাথা ঘামায় না। তারা শুধুমাত্র বছরে একবার দুবার ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার মাধ্যমে দ্বীন জানার চেষ্টা করে। তাও আবার তবারুক দেওয়ার আগে মাহফিলে বসে। এতে করে দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে সিংহভাগ মানুষ গাফেল থাকে। এছাড়াও প্রতি সপ্তাহে জুমার খুতবাও অধিকাংশ মানুষ শোনে না। যারফলে তারাও দ্বীনের জ্ঞানার্জন করতে পারে না।
সুফিবাদী মুসলমানদের প্রপাগান্ডায় শতকরা ৯৫ শতাংশ মুসলমান কুরআন পড়ে বুঝার চেষ্টা করে না। যেকারণে আল্লাহ্ কুরআনে কী আদেশ দিয়েছেন এবং নিষেধ করেছেন তা কেউ ই জানতে পারে না। এই না জানার কারণে অধিকাংশ মুসলমান সঠিক দ্বীন ইসলাম পালন করতে পারে না বা করে না। যারফলে তারা মৌলিকঅর্থে মুনাফিকিতে পরিনত হয়।
আল্লাহ ভুলে দুনিয়ামুখী হওয়াঃ
দুনিয়াবী প্রভাব প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার লোভে একশ্রেণির ক্ষমতাশালী মুসলমান সৎ কাজের পরিবর্তে অসৎ কাজের আদেশ দেয়। সেইসাথে কেউ সৎ কাজে উদ্বুদ্ধ হলে তাকেও থামিয়ে দেয়। এছাড়াও তারা এমনভাবে দুনিয়াদারী করে যেন পরকাল বলে কিছুই নেই। অর্থাৎ আল্লাহ্কে ভুলে এবং ইসলামের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন হয়ে তারা শুধুমাত্র দুনিয়াবী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এই দুনিয়াদারীই তাদেরকে পরিনত করে আল্লাহর অবাধ্য মুনাফিকিতে। আল্লাহ্ বলেন,
" মুনাফিক পুরুষ এবং মুনাফিক নারী, এরা (স্বভাব চরিত্রে) একেঅপরের মতোই। তারা ( উভয়েই মানুষদের) অসৎ কাজের আদেশ দেয় ও সৎকাজ থেকে বিরত রাখে এবং (আল্লাহর পথে খরচ করা থেকে) উভয়েই নিজেদের হাত বন্ধ করে রাখে ; তারা (যেমনি এই দুনিয়ায়) আল্লাহকে ভুলে গেছে, আল্লাহ তাআলাও (তেমনি আখিরাতে) তাদের ভুলে যাবেন ; নিঃসন্দেহে মুনাফিকরা সবাই পাপিষ্ঠ। " (সূরা তাওবা :৬৭)
অর্থাৎ যারাই অসৎ কাজের আদেশ দিয়ে সৎকাজ সমূহ বন্ধের নির্দেশ দেয় সেইসাথে আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না তারা স্পষ্টত মুনাফিক। আর এইজাতীয় মানুষ আমাদের সমাজে অহরহ। একটি শ্রেণী আছে যারা ইসলামের বিভিন্ন দাওয়াতী কার্যক্রম পছন্দ করে না। বরং এইসব বাদ দিয়ে নাচগানে সময় দেয় এবং আয়োজনে নিয়োজিত থাকে। আর তারাই হচ্ছে বর্তমানে সময়ের খুবই খারাপ প্রকৃতির মুনাফিক। অথচ তারা মুখে ঈমানের দাবি করে। তারা কখনোই আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে তো দূরের কথা, কেউ তা করতে চাইলে সেখানেও বাঁধা দেয়।
মুনাফিকদের পরিনামঃ
পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে মুনাফিকদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। সেইসব আয়াতে আল্লাহ্ মুনাফিকদের বিভিন্নভাবে তিরস্কার করেছেন। সেইসাথে তাদের জন্য দুনিয়াবী এবং পরকালের শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন।
জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে অবস্থানঃ
আল্লাহ্ মুনাফিকদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন জাহান্নামের আগুন। আর তাদের জন্য বরাদ্দকৃত স্থান হচ্ছে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। আল্লাহ্ বলেন,
" মুনাফিকরা থাকবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে, তুমি তাদের জন্য কক্ষনো কোন সাহায্যকারী পাবে না। " ( আন নিসা ৪:১৪৫)
আল্লাহর এই ঘোষণা দ্বারা সুস্পষ্ট যে মুনাফিকদের অবশ্যই জাহান্নামে যেতে হবে এবং তা হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। সুতরাং মুনাফিকরা সেখান থেকে আর ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। কেননা মুনাফিক এবং কাফিরদের একই সাথে জাহান্নামে পাঠানোর ওয়াদা আল্লাহ্ নিজেই করেছেন। যেমন আল্লাহ্ বলেন,
" আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী ও কাফিরদের জন্য জাহান্নামের আগুনের ওয়া‘দা দিয়েছেন, তাতে তারা চিরদিন থাকবে, তা-ই তাদের জন্য যথেষ্ট। তাদের উপর আছে আল্লাহর অভিশাপ, আর আছে তাদের জন্য স্থায়ী ‘আযাব।" ( আত তাওবাহ্ ৯:৬৮)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ মুনাফিক এবং কাফিরদের একই শ্রেণীভুক্ত করেছেন। অর্থাৎ ঈমান না আনার কারণে কাফেররা যেমন জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। ঠিক তেমনি ঈমান এনেও মুনাফিকী আচরণের কারণেও অধিকাংশ মুসলমান জাহান্নামে কাফিরদের সাথে অবস্থান করবে।
এথেকে বুঝা যায় ঈমান খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেনতেন ভাবে ঈমান আনলেই মুসলমান হওয়া যায় না। বা মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেই মুসলমান হওয়া যায় না। মুনাফিকরা ঈমান আনার পরও জাহান্নামে যাবে। কারণ তারা তাদের ঈমানের শর্ত পূরণ করেনি। আর আমাদের উপমহাদেশে সুফিবাদী মুসলমানরা জানেই না ঈমান কী এবং ঈমান কী কারণে ভেঙে যায়?
মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাঃ
আল্লাহ্ তালাআলা মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেন,
" হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তাদের প্রতি কঠোরতা অবলম্বন কর, তাদের বাসস্থান হল জাহান্নাম, আর তা কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল! " (আত তাওবাহ্ ৯:৭৩)
উপরোক্ত আয়াতের সারমর্ম হলো যারা মুনাফিক তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু আমাদের সমাজে মুনাফিকরাই বড় বড় পদে বসে আছে। তাদের বিরুদ্ধে যাওয়া তো দূরের কথা, তাদের ছাড়া অনেকেরই চলে না। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস দূর্বল হওয়ার কারণে আজ আমাদের সমাজ একধরনের মুনাফিকী সমাজে পরিনত হয়েছে।
তবুও প্রতিটি ঈমানদারের দায়িত্ব হলো মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলমান রাখা। এই যুদ্ধ হতে পারে দুই ধরনের। প্রথমত সরাসরি তাদের প্রতিহত করা। দুই জ্ঞান এবং কৌশলের মাধ্যমে তাদের নসিহত করা। যাতে তারা ঈমানের দিকে ফিরে আসে।
কুরআন অবহেলার শাস্তিঃ
আল্লাহ্ মুনাফিকদের আরো একটি কারণে শাস্তি দিবেন। আর তা হচ্ছে কুরআনের অবহেলার কারণে। আল্লাহ্ কুরআন পাঠিয়েছেন সেইমতো জীবনযাপন করার জন্য। সেখানে মুনাফিকরা ঈমান আনার পরও ঈমানের শর্তসমূহ পূরণ করে না। যে কারণে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আল্লাহ্ বলেন,
" আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এই আমানত পেশ করেছিলাম, অতঃপর তারা একে বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল; কিন্তু মানুষ তা বহণ করল। নিশ্চয় সে জালেম-অজ্ঞ। " (সূরাঃ আল আহযাব, আয়াতঃ ৭২)
উপরোক্ত আয়াতে বুঝা যাচ্ছে যে, আকাশ পৃথিবী পাহাড় ইত্যাদিকে আল্লাহ্ পবিত্র কুরআন আমানত হিসাবে ধারণ করার জন্য বলেছিলেন। কিন্তু কুরআনের দায় দায়িত্বের কথা চিন্তা করে তারা এই কুরআন গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। কিন্তু যখন মানুষের উপর তা পেশ করা হল, তখন তারা আল্লাহর আমানতের (আনুগত্যের) নেকী ও ফযীলত (প্রতিদান ও মাহাত্ম্য) দেখে সেই কঠিন গুরুভার বহন করতে উদ্বুদ্ধ হয়ে গেল।
তাই যেহেতু মানুষ কুরআনকে গ্রহণ করেছে সেহেতু তাদের দায়িত্বও হলো এই কুরআনের আমানত সঠিকভাবে পালন করা। কিন্তু যারা ঈমান এনে মুনাফিকি করলো, তারা এই আমানত রক্ষা করলো না। যারফলে তাদের শাস্তি দেওয়ার কথা আল্লাহ্ পরের আয়াতে উল্লেখ করছেন এভাবে,
" যাতে আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ, মুনাফিক নারী, মুশরিক পুরুষ, মুশরিক নারীদেরকে শাস্তি দেন এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদেরকে ক্ষমা করেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"(সূরাঃ আল আহযাব, আয়াতঃ ৭৩)
সুতরাং কুরআনকে অবহেলা করা মানেই হচ্ছে নিজেকে মুনাফিকিতে পরিনত করা। আল্লাহ্ মানুফিকদের শাস্তি এইজন্যই দিচ্ছেন, কারণ তারা ঈমান এনে কুরআনকে অস্বীকার করছে। অর্থাৎ তারা ঈমানের শর্ত পূরণ না করে ঈমানের বিপরীতে কাজ করে যাচ্ছে।
অতএব আমরা যারা উপমহাদেশের সুফিবাদী মুসলমান আছি তাদের একবার হলেও চিন্তা করা দরকার, আমরা কতটুকু ঈমানের দাবি পূরণ করতে পারছি? ঈমানের দাবি পূরণ না করার কারণে আমরা নিজেদের অজান্তেই মুনাফিকে পরিনত হয়ে যাচ্ছি। এবং আমাদের স্থান আমরা নিজেরাই জাহান্নামে করে নিচ্ছি।
সর্বোপরি কথা হচ্ছে, ঈমানের দাবি করলে অবশ্যই ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা পোষণ করতে হবে। সেইজন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। ইসলামের যত হুকুম আহকাম আছে তা পরিপূর্ণ পালনে সচেষ্ট হতে হবে। ঈমান এনে আমলের ঘাটতি হওয়া মানেই মুনাফিকীতে রুপান্তর হওয়া।
আজ আমাদের সমাজে এমন মানুষের অভাব নেই যাদের এইসব নিফাকী গুণাবলী আছে। আমরা নিজেরাই জানি না যে আমাদের কী কী কর্মকাণ্ডে আমরা মুনাফিক হয়ে যাচ্ছি। সুতরাং আমাদের চেষ্টা থাকতে হবে যাতে এইসব নিফাকী আমাদের অন্তরে জায়গায় নিতে না পারে। কেননা মুনাফিকের স্থান হবে সরাসরি জাহান্নামের নিম্নস্তরে।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২৩ নভেম্বর, ২০২১
অলংকার, চট্টগ্রাম।