আল্লাহ্ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য। কীসের উপর ভিত্তি করে আল্লাহ্ এই পরীক্ষা নিবেন, তার জন্য নির্দেশনা স্বরুপ পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন সর্বশেষ কুরআনসহ আরো অসংখ্য আসমানী কিতাব। বিশ্ববাসীর জন্য বর্তমানে কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা দিয়ে আল্লাহ্ উপদেশ সহকারে তাঁর নির্দেশনা সমূহ বিবৃত করেছেন।
পৃথিবীবাসীর জন্য কুরআনের এই নির্দেশনা মানা আবশ্যক। যারাই এই নির্দেশনা মেনে চলে জীবনযাপন করবে, তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার তথা জান্নাত। আর যারাই কুরআনের উপদেশ মেনে চলবে না তাদের জন্য রয়েছে তাঁর পক্ষ থেকে কঠিন আযাব তথা জাহান্নামের শাস্তি। আজ আমরা দেখব কারা কারা আল্লাহর এই উপদেশ গ্রন্থ কুরআনের উপদেশসমূহ গ্রহণ করতে ইচ্ছুক বা কারা কারা এই উপদেশ গ্রহণ করে।
যারা জ্ঞানীঃ
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত উপদেশসমূহ একমাত্র তারাই গ্রহণ করে যারা সত্যিকারের জ্ঞানী। আল্লাহ্ যাদের প্রকৃত জ্ঞান দিয়েছেন তারাই আল্লাহর এই উপদেশ গ্রহণ করে। আল্লাহ্ বলেন,
" তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন এবং যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভুত কল্যাণকর বস্তু প্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানবান "। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২৬৯)
অর্থাৎ আল্লাহ্ই যাকে ইচ্ছা সেই মানুষকে জ্ঞান দান করেন। আর যাকে জ্ঞান দান করা হয় সে সর্বপ্রকারের কল্যাণ লাভ করতে সমর্থ হয়। আর তারাই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করতে পারে, যারা হন প্রকৃত জ্ঞানবান।
যারা সরল পথে চলতে চায়ঃ
পৃথিবীতে অসংখ্য পথ এবং মত রয়েছে। যারা সত্যিকারের প্রকৃত বিবেকসম্পন্ন মানুষ তারা সর্বদা চেষ্টা করে সরল সোজা পথে চলার জন্য। আর আল্লাহ্ বলেন,
" তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর। নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও "।(সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১৫৩)
অর্থাৎ পৃথিবীতে যত পথ ও মত রয়েছে তাদের চেয়ে আল্লাহর পথই একমাত্র সরল পথ। অতএব যারা সরল পথের অনুসারী তারা একমাত্র কুরআনের পথকেই গ্রহণ করবে। যাতে তারা সাফল্য লাভ করতে পারে।
অল্পসংখ্যক মানুষই উপদেশ গ্রহণ করেঃ
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে এটা নিশ্চিত করেছেন যে, অধিকাংশ মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে না, সরল পথে চলে না, পথভ্রষ্ট, গাফেল, ঈমান আনে না, অকৃতজ্ঞ ইত্যাদি। অর্থাৎ খুব কম মানুষই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে। আল্লাহ্ বলেন,
" আর তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর"। (সূরাঃ আল আ'রাফ, আয়াতঃ ৪)
সুতরাং যারা প্রকৃত ঈমানদার তারা কমসংখ্যক মানুষের অধিকারী হবেন। কেননা অল্পসংখ্যক মানুষই আল্লাহর নির্দেশ উপদেশ গ্রহণ করে এবং সেইমতো চলে। অতএব অধিকাংশ মানুষের অনুসরণ নয়, বরং কম সংখ্যক মানুষের অনুসরণ করতে হবে।
যারা তওবা করেঃ
দুনিয়ায় চলার পথে মানুষ নানান ভুলত্রুটির মুখোমুখি হয়। যারা এইসব ভুলত্রুটিকে নির্নয় এবং সংশোধন করে তওবা করে, তারাই হচ্ছেন প্রকৃত উপদেশ গ্রহনকারী। আল্লাহ্ বলেন,
" তারা কি লক্ষ্য করে না, প্রতি বছর তারা দু’একবার বিপর্যস্ত হচ্ছে, অথচ, তারা এরপরও তওবা করে না কিংবা উপদেশ গ্রহণ করে না "। (সূরাঃ আত তাওবাহ, আয়াতঃ ১২৬)
অর্থাৎ আল্লাহ্ মানুষকে নানান দুঃখ দুর্দশা এবং বিপর্যয় দিয়ে বিপর্যস্ত করে। যারা সত্যিকারের মুমিন তারা এইসব দুঃখ দুর্দশা দেখার সাথে সাথে আল্লাহর কাছে তওবা করে সঠিক রাস্তায় তথা কুরআনের পথে ফিরে আসে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই উপদেশ গ্রহণ না করার কারণে তওবাও করে না দুনিয়া ও আখিরাতে মুক্তিও লাভ করে না।
যারা ভয় করেঃ
যারা প্রকৃত মুমিন একমাত্র তারাই আল্লাহ্কে ভয় করে। আর যারাই আল্লাহ্কে ভয় একমাত্র তারাই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে। আল্লাহ্ বলেন,
" কিন্তু তাদেরই উপদেশের জন্য যারা (আল্লাহ্কে) ভয় করে "। (সূরাঃ ত্বোয়া-হা, আয়াতঃ ৩)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ্কে সত্যিকারভাবে ভয় করে তারাই শুধুমাত্র কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করে। সুতরাং যারা আল্লাহ্কে ভয় করে না তারা কখনোই কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করে না।
যারা গুরুত্ব দেয়ঃ
যারা আল্লাহ্র নির্দেশগুলোকে গুরুত্ব দেয় কেবলমাত্র তারাই আল্লাহ্র উপদেশ গ্রহণ করে। যারা আল্লাহর আদেশ নির্দেশকে গুরুত্ব দেয়না তারা কখনোই আল্লাহর আদেশ উপদেশগুলো গুরুত্বসহকারে শ্রবণ করে না। আল্লাহ্ বলেন,
" তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে যখনই কোন নতুন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শ্রবণ করে "। (সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ২)
সুতরাং যারা আল্লাহ্কে পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করে না এবং আল্লাহ্কে গুরুত্ব দেয়না তারা আল্লাহর বাণী কুরআনের উপদেশসমূহ হাসি খেলা তামাশার সাথে গ্রহণ করে। যা পরিপূর্ণ ঈমানের বিপরীত কাজ।
যারা বুঝেঃ
পবিত্র কুরআনের আল্লাহর উপদেশসমূহ তারাই গ্রহণ করতে পারে, যাদের সঠিক বুঝার জ্ঞান আছে। অর্থাৎ যারা বুঝে কেবলমাত্র তারাই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে। আল্লাহ্ বলেন,
" আমি তোমাদের প্রতি একটি কিতাব অবর্তীর্ণ করেছি; এতে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে। তোমরা কি বোঝ না "? (সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ১০)
অন্য আয়াতে বলেন,
" এমনিভাবে আমি আয়াতসমূহ (উপদেশের জন্য) বিস্তারিত বর্ণনা করি তাদের জন্যে যারা বুঝে "। (সূরাঃ আল আ'রাফ, আয়াতঃ ৩২)
অর্থাৎ কুরআনের উপদেশসমূহ আল্লাহ্ তাদের জন্যই বর্ণনা করেছেন, যারা উপদেশ গ্রহণ করে এবং করবে। সুতরাং যারা বুঝে না বা বুঝার জ্ঞান নেই তারা কুরআনের উপদেশ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না এবং পারবে না।
যারা আল্লাহ্ভীরুঃ
আল্লাহর উপদেশসমূহ তারাই গ্রহণ করে এবং করবে যারা সত্যিকারের আল্লাহ্ভীরু বা আল্লাহ্কে ভয় করে। আল্লাহ্ বলেন,
আমি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছি (কুরআনের) সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ, তোমাদের পূর্ববর্তীদের কিছু দৃষ্টান্ত এবং আল্লাহ ভীরুদের জন্যে দিয়েছি (কুরআনের মাধ্যমে) উপদেশ"। (সূরাঃ আন-নূর, আয়াতঃ ৩৪)
অন্য আয়াতে বলেন,
" যে ভয় করে, সে উপদেশ গ্রহণ করবে "।(সূরাঃ আল আ'লা, আয়াতঃ ১০)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ স্পষ্টকরে বলে দিয়েছেন, যারা আল্লাহ্কে সত্যিকারে ভয় করে এবং করবে তাদের জন্যই তিনি কুরআনের উপদেশ নাযিল করেছেন। আর যারা আল্লাহ্কে ভয় করে তারাই আল্লাহর উপদেশ আদেশসমূহ গ্রহণ করবে। সুতরাং যারা আল্লাহ্কে ভয় করে না তারা উপদেশও গ্রহণ করে না এবং করবেও না।
যারা আবেদীঃ
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনকে তাদের জন্যই উপদেশ হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যারা আল্লাহর ইবাদতগুজারী আবেদী বান্দা। আল্লাহ্ বলেন,
" অতঃপর আমি তাঁর (আইয়ুব আঃ) আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁর দুঃখকষ্ট দূর করে দিলাম এবং তাঁর পরিবরাবর্গ ফিরিয়ে দিলাম, আর তাদের সাথে তাদের সমপরিমাণ আরও দিলাম আমার পক্ষ থেকে কৃপাবশতঃ আর এটা এবাদত কারীদের জন্যে উপদেশ স্বরূপ "। (সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ৮৪)
অর্থাৎ যারা বিপদে আপদে দুঃখ দুর্দশায়ও আল্লাহর ইবাদত থেকে বিরত হোন না তাদের জন্যই রয়েছে আল্লাহর উপদেশ। অতএব যারা ইবাদতগুজারী বান্দা তারাই কেবল আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে। যারা দুঃখ দুর্দশায় আল্লাহ্কে ভুলে যায় তারা কখনোই উপদেশ গ্রহণ করে না।
যারা মুখ ফিরিয়ে নেয় নাঃ
যারা আল্লাহর আদেশ নির্দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে তারা কখনোই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে না। আর যারা আল্লাহর উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় না তারাই হচ্ছে উপদেশ গ্রহনকারী ঈমানদার। তাই আল্লাহ্ বলেন,
" যখনই তাদের (কাফের, মুশরিক, মুনাফিক) কাছে রহমান এর কোন নতুন উপদেশ আসে, তখনই তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় " (সূরাঃ আশ-শো'আরা, আয়াতঃ ৫)
সুতরাং আল্লাহর আদেশ নির্দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে কাফির মুনাফিক মুশরিকের কাজ। তাই তারাই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে যারা প্রকৃত ঈমানদার।
যারা বিশ্বাস করেঃ
পবিত্র কুরআনের আদেশ উপদেশ তারাই গ্রহণ করবে যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী তথা মুমিন ঈমানদার। যারা আল্লাহর প্রতি সত্যিকারের বিশ্বাসী নয়, তারা কখনোই কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করে না। আল্লাহ্ বলেন,
"এটাকি তাদের জন্যে যথেষ্ট নয় যে, আমি আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে পাঠ করা হয়। এতে অবশ্যই বিশ্বাসী লোকদের জন্যে রহমত ও উপদেশ আছে "। (সূরাঃ আল আনকাবুত, আয়াতঃ ৫১)
অর্থাৎ পবিত্র কুরআনের আদেশ উপদেশসমূহ হচ্ছে বিশ্বাসীদের জন্য রহমত স্বরুপ। তাই যারা প্রকৃত ঈমানদার তারাই কেবল কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করে।
বিনয়ীরাঃ
বিনয়ী এবং নিরহংকারকারীরাই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে। আল্লাহ্ বলেন,
" কেবল তারাই আমার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে, যারা আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশপ্রাপ্ত হয়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং অহংকারমুক্ত হয়ে তাদের পালনকর্তার প্রশংসাসহকারে পবিত্রতা বর্ণনা করে "। (সূরাঃ সেজদাহ, আয়াতঃ ১৫)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ্ এবং তাঁর আয়াতের প্রতি ঈমান আনে। সেইসাথে বিনয়ী এবং অহংকারমুক্ত হয়ে আল্লাহর প্রতি সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারাই হচ্ছে আল্লাহর প্রকৃত উপদেশ গ্রহনকারী।
যারা উপদেশ অনুসরণ করেঃ
আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে তারাই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে, যারা তাঁর আদেশ উপদেশসমূহকে অনুসরণ করে। আল্লাহ্ বলেন,
"আপনি কেবল তাদেরকেই সতর্ক করতে পারেন, যারা উপদেশ অনুসরণ করে এবং দয়াময় আল্লাহকে না দেখে ভয় করে "। (সূরাঃ ইয়াসীন, আয়াতঃ ১১)
অর্থাৎ পবিত্র কুরআন দ্বারা তারাই আল্লাহর উপদেশসমূহ গ্রহণ করবে, যারা প্রকৃতভাবে আল্লাহর উপদেশের অনুসরণ আনুগত্য করে। যারা আল্লাহর উপদেশের অনুসরণ করেনা, তারা কখনোই আল্লাহর উপদেশকে গ্রহণ করে না।
বুদ্ধিমানরাঃ
আল্লাহর দুনিয়ায় তারাই প্রকৃত বুদ্ধিমান, যারা বিপদে আপদে সুখে দুঃখে আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে এবং তা থেকে দুনিয়া এবং আখিরাতের ফায়দা হাসিল করে। আল্লাহ্ বলেন,
" আমি তাকে ( পরীক্ষা করার পর আইয়ুব আঃকে) দিলাম তার পরিজনবর্গ ও তাদের মত আরও অনেক আমার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ এবং বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশস্বরূপ "। (সূরাঃ ছোয়াদ, আয়াতঃ ৪৩)
অর্থাৎ যারাই আইয়ুব আঃ এর মতো দুঃখ দুর্দশায় ধৈর্য্য ধারণ করে আল্লাহর উপদেশ মেনে চলে তারাই হচ্ছে বুদ্ধিমান। কেননা আল্লাহ্ প্রতিটি মানুষকেই বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করবে। যে এই পরীক্ষা ধৈর্য্য ধারণ করে আল্লাহর আদেশ পালন করবে, সে ই হবে সফলকাম। সুতরাং বুদ্ধিমানরাই আল্লাহর আদেশ নির্দেশ মেনে চলে। যাতে দুনিয়া এবং আখিরাতে সফল হতে পারে। আল্লাহ্ আরো বলেন,
" (আল্লাহর কিতাবসমূহ) বুদ্ধিমানদের জন্যে উপদেশ ও হেদায়েত স্বরূপ। (সূরাঃ আল-মু'মিন, আয়াতঃ ৫৪)
যারা অন্তর দিয়ে শোনেঃ
আল্লাহর আদেশ উপদেশসমূহ শুধু তারাই শুনবে, মানবে এবং গ্রহণ করবে, যারা তাদের প্রকৃত অন্তর দিয়ে কুরআনের উপদেশসমূহ শুনবে এবং পালন করবে। আল্লাহ্ বলেন,
" এতে (কুরআনে) উপদেশ রয়েছে তার জন্যে, যার অনুধাবন করার মত অন্তর রয়েছে। অথবা সে নিবিষ্ট মনে শ্রবণ করে "। (সূরাঃ ক্বাফ, আয়াতঃ ৩৭)
অর্থাৎ যারা তাদের বিবেকের জ্ঞান দিয়ে কুরআনের উপদেশসমূহ শুনে বিচার বিবেচনা করে, কেবল তারাই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে।
যারা শাস্তিকে ভয় করেঃ
যারা বেপরোয়া এবং উদ্ধত স্বভাবের লোক তারা কখনোই কোনো প্রকার আদেশ উপদেশ শাস্তি ইত্যাদির ধার ধারে না। তাই তাদের উপদেশ দিলেও তারা গ্রহণ করে না। কিন্তু যারা আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে শুধু তারাই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে। আল্লাহ্ বলেন "
" তারা (অবিশ্বাসীরা) যা বলে, তা আমি (আল্লাহ্) সম্যক অবগত আছি। আপনি তাদের উপর জোরজবরকারী নন। অতএব, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে, তাকে কোরআনের মাধ্যমে উপদেশ দান করুন "। (সূরাঃ ক্বাফ, আয়াতঃ ৪৫)
আল্লাহ্ এখানে তাঁর রাসুলকে তাদেরকেই উপদেশ দিতে বলেছেন, যারা আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করে।
যারা পরকালে বিশ্বাসীঃ
পৃথিবীতে যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে পরকালকে বিশ্বাস করে এবং সেই অনুযায়ী আমল করে তারাই কেবল আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে। আল্লাহ্ বলেন,
" অতঃপর তারা যখন তাদের ইদ্দতকালে পৌঁছে, তখন তাদেরকে যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্ত পন্থায় ছেড়ে দেবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন নির্ভরযোগ্য লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাক্ষ্য দিবে। এতদ্দ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন"। (সূরাঃ আত্ব-ত্বালাক্ব, আয়াতঃ ২)
সুতরাং যারা আল্লাহ্ এবং পরকালে বিশ্বাসী তারাই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে এবং সেইমতো চলে।
উপদেশ গ্রহণকারীরাই ঈমানদারঃ
যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে তাদের প্রধান কাজই হচ্ছে আল্লাহ্কে ভালোবাসা এবং ভয় করা। যারাই আল্লাহর আদেশ উপদেশ গ্রহণ করবে তারাই হবে প্রকৃত ঈমানদার। আল্লাহ্ বলেন,
" আল্লাহ (যারা তাঁর আদেশ উপদেশ মানে না) তাদের জন্যে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তত রেখেছেন অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, যারা ঈমান এনেছ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তোমাদের প্রতি উপদেশ নাযিল করেছেন"। (সূরাঃ আত্ব-ত্বালাক্ব, আয়াতঃ ১০)
অতএব যারা ঈমান এনে আল্লাহ্কে ভয় করে, তাদের জন্যই তিনি কুরআনের উপদেশ নাযিল করেছেন। সুতরাং উপদেশ তারাই গ্রহণ করবে যারা প্রকৃত ঈমানদার।
যারা আল্লাহর পথের পথিকঃ
পৃথিবীতে অনেক পথ এবং মত রয়েছে। কিন্তু আল্লাহর পথ হচ্ছে একটি। আর তা হচ্ছে ইসলাম। সুতরাং যে আল্লাহর রাস্তায় চলতে চাইবে তাকে অবশ্যই ইসলামের পথে চলতে হবে। আল্লাহ্ বলেন,
" এটা (পবিত্র কুরআন হচ্ছে) উপদেশ। অতএব, যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার দিকে পথ অবলম্বন করুক "। (সূরাঃ মুযযামমিল, আয়াতঃ ১৯)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ্কে চাইবে তারাই তাঁর সঠিক পথ তথা কুরআনের উপদেশের অনুসরণে আল্লাহর পথে চলবে। আর তারাই হচ্ছে আল্লাহর পথের পথিক।
যারা নিজেদের ভালো চায়ঃ
পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহর কিতাব ও রাসুলের জীবনাদর্শের মধ্যে দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ নিহিত। সুতরাং যারা আল্লাহর নিদর্শন কুরআন এবং হাদিসের আদেশ উপদেশ গ্রহণ করে কেবল তারাই নিজেদের কল্যাণ করতে সক্ষম। আল্লাহ্ বলেন,
" তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে নিদর্শনাবলী (কুরআনের আদেশ, উপদেশ ও অন্যান্য নিদর্শন) এসে গেছে। অতএব, যে প্রত্যক্ষ করবে (তথা মেনে চলবে) সে নিজেরই উপকার করবে এবং যে অন্ধ হবে (অর্থাৎ তা মেনে চলবে না), সে নিজেরই ক্ষতি করবে। আমি তোমাদের পর্যবেক্ষক নই"। (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১০৪)
সুতরাং যারা নিজেদের ভালো চায় তারা কুরআনের নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে নিজেদের কল্যাণের জন্যই আল্লাহর উপদেশ মেনে জীবনযাপন করবে।
যারা তাকওয়া অবলম্বন করে
[৬:৬৯] আল আনআম
তাদের কোন কাজের হিসেব দেয়ার দায়-দায়িত্ব মুত্তাকীদের উপর নেই। কিন্তু উপদেশ দেয়া কর্তব্য যাতে ওরাও তাকওয়া অবলম্বন করে।
যারা চিন্তাশীলঃ
পৃথিবীতে চিন্তাশীল ব্যক্তিরাই আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে। আল্লাহ্ বলেন,
" আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে"। (সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ৪২)
অর্থাৎ আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে যা কিছু বর্ণনা করেছেন বা বিভিন্ন আদেশ উপদেশ দিয়েছেন, তারমধ্যে রয়েছে কল্যাণ। যা চিন্তাশীল ব্যক্তিরাই অনুধাবন করতে পারে। আর যারাই এইসব অনুধাবন করতে পারে কেবল তারাই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে।
উত্তম অনুসরণকারীঃ
যারা সত্যিকারের মুমিন বা সৎব্যক্তি তারা সর্বদা ভালো বা উত্তম অনুসরণ করেন। আর যারাই উত্তম পথের অনুসারী শুধু তারাই সৎপথ প্রাপ্ত হয়। আল্লাহ্ বলেন,
"যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই বুদ্ধিমান"। (সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ১৮)
সুতরাং যারা উত্তম পথের অনুসন্ধান করে সেই পথ অনুসরণ করে তারাই আল্লাহর আদেশ উপদেশ গ্রহণ করে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান যে, যারাই সৎপথের অনুসারী ও আল্লাহ্ভীরু কেবল তারাই তাঁর উপদেশ গ্রহণ করে। এবং যারা পবিত্র কুরআনের আদেশ উপদেশ নিদর্শন ইত্যাদি প্রত্যক্ষ করে এবং তা গ্রহণ করার মানসিকতা রাখে, শুধু তারাই আল্লাহর উপদেশ গ্রহণে আগ্রহী হয়। আর যারাই তাঁর উপদেশ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন করতে পারে কেবল তারাই দুনিয়া এবং আখিরাতে সফল।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
১৫ ডিসেম্বর, ২০২১
অলংকার, চট্টগ্রাম।