হেদায়েত হচ্ছে সৎপথ। যে পথে চললে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আর এই হেদায়েত সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন,
" আল্লাহ-ই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত (দান) করেন।" (সূরাঃ হাজ্জ্ব, আয়াতঃ ১৬)
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, হেদায়েত তথা সৎপথ প্রাপ্ত হওয়া একমাত্র আল্লাহ্র হাতে। তিনি যাকে হেদায়েত দিবেন একমাত্র সে - ই হেদায়েত বা সৎপথ প্রাপ্ত হবে। অন্য আয়াতে বলেন,
"এবং নিশ্চিতই এটা (কুরআন) মুমিনদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত"। (সূরাঃ নমল, আয়াতঃ ৭৭)
অর্থাৎ আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমেই মানবজাতিসহ সকল মুমিনকে হেদায়েত তথা সৎপথ প্রদর্শন বা দান করে থাকেন। আজ আমরা হেদায়েত কী এবং কুরআনই হেদায়েতের প্রকৃত মাধ্যম সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
হেদায়েত কী?
হেদায়েত হচ্ছে আল্লাহ্র একটি নিয়ামত। যার অপর নাম হচ্ছে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি। একজন মুমিন যে পথে ও মতে চললে আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে সেই সৎপথই হচ্ছে হেদায়েত। সুতরাং হেদায়েত হচ্ছে আল্লাহ্র সৎপথ, যে পথ দিয়ে একজন মুমিন সরাসরি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন করে আল্লাহ্ পর্যন্ত তথা জান্নাতে পৌঁছাতে পারে।
হেদায়েত কত প্রকার?
হেদায়েত মূলত দুই স্তরের। প্রথম স্তর হচ্ছে ঈমান আনা। অপরটি হচ্ছে ঈমান এনে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো।
আল্লাহ্ বলেন,
" আর কারো ঈমান আনা হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর। (সূরাঃ ইউনুস, আয়াতঃ ১০০)
অর্থাৎ তিনি যাকে ঈমান দিতে চান কেবল সে-ই ঈমান আনতে পারে। তাহলে কে ঈমান আনতে পারে? আল্লাহ্ বলছেন, তারাই ঈমান আনতে পারে, যারা আল্লাহ্ প্রদত্ত জ্ঞান বুদ্ধি দ্বারা যাচাই বাছাই করে। সুতরাং যেকোনো মানুষ নিজের জ্ঞান দ্বারা যাচাই বাছাই করলে আল্লাহ্ তাকে সঠিক জ্ঞানের দ্বারা ঈমান আনতে সাহায্য করবেন।
হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তর হলো ঈমান এনে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি নিয়ে জান্নাতে যাওয়া। আল্লাহ্ বলেন,
" আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই তো সঠিক পথ প্রাপ্ত (হয়)। " (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ৯৭)
অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ্ যাকে নিজ হাতে সঠিক রাস্তা দেখিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবেন কেবলমাত্র সে-ই হচ্ছে সঠিক হেদায়েত বা সৎপথ প্রাপ্ত। সুতরাং এই হেদায়েত সরাসরি আল্লাহ্র হাতে।
হেদায়েতের মাধ্যম গুলো কী?
আল্লাহ্র ঘোষণা হচ্ছে হেদায়েত তিনিই দিয়ে থাকেন। তবে প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন মাধ্যম যেমনঃ নবী রাসুল, কুরআন, হাদীস, আলেম, ওলামা এবং ইসলামের দাঈদের দ্বারা দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর কাছে নবী রাসুল গিয়ে হেদায়েতের বাণী পৌঁছে দিয়েছিল। সেই বাণী শ্রবণ করে যাদের অন্তরে আল্লাহ্ নিজেই হেদায়েত দিয়েছিলেন কেবল তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েছিল।
বর্তমান সময়ে যেহেতু নবী রাসুল নেই সেহেতু অন্যান্য মাধ্যম যেমনঃ কুরআন, হাদিস, আলেম, ওলামা এবং ইসলামের দাঈদের দ্বারা আল্লাহ্ হিদায়েতের কাজ জারি রেখেছেন। এই মাধ্যম গুলো থেকে সেই ব্যক্তিই প্রকৃত হেদায়েত পাবেন, যাকে আল্লাহ্ নিজে সঠিক জ্ঞান দ্বারা হেদায়েতের পথে নিয়ে আসবেন।
এখন আমরা জানার চেষ্টা করবো উপরোক্ত মাধ্যম গুলো থেকে সর্বোচ্চ সঠিক মাধ্যম কোনটি? যার দ্বারা হেদায়েত পাওয়ার চেষ্টা করলে একজন মানুষ আল্লাহ্র সঠিক হেদায়েত পেতে পারে।
আরও পড়ুন কুরআনের আলোকে মানুষ সৃষ্টির কারণ
আলেম ওলামা এবং দাঈ ইলাল্লাহঃ
বর্তমান যুগে যেহেতু নবী রাসুল নেই সেহেতু নবী রাসুল আঃ থেকে সরাসরি হেদায়েতের রাস্তা পাওয়া অসম্ভব। তবে কুরআন হাদিসের অধ্যায়ের মাধ্যমে অসংখ্য আলেম ওমামা এবং দাঈ ইলাল্লাহ তৈরী হয়। যারা রাসুলের প্রদর্শিত পথে কুরআন সুন্নাহর আলোকে মানুষকে সঠিক পথে আহবান করেন। এবং এদের দ্বারা আল্লাহ্ মানুষকে হেদায়েত দান করেন।
কুরআন হাদিসের জ্ঞানঃ
আল্লাহ্ কুরআনকে নাযিল করেছেন একমাত্র মানুষের হেদায়েতের জন্য। আল্লাহ্ বলেন,
" আর আমি (হে মুহাম্মদ) আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।" (সূরা আন-নাহল- ৮৯)
সুতরাং আল্লাহ্র ঘোষণা অনুযায়ী কুরআন হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যা দ্বারা আল্লাহ্ হেদায়েত দিয়ে থাকেন। সেইসাথে আল্লাহ্ আরও বলেন,
"তিনিই (আল্লাহ্) তাঁর রসূলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন " (সূরাঃ আল ফাতহ, আয়াতঃ ২৮)
অর্থাৎ আল্লাহ্ রাসুলুল্লাহ সাঃকে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন সত্য ধর্ম তথা ইসলামের পথে হেদায়েতের জন্য। আল্লাহ্ আরও বলেন,
" রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। "(সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ৭)
অন্য আয়াতে বলেন,
" নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সাঃ এর জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১]
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ স্পষ্ট করে দিলেন যে, হেদায়েত পাওয়ার জন্য একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাঃকেই আদর্শরূপে গ্রহণ করে তাঁকে অনুসরণ এবং অনুকরণ করতে হবে। আর রাসুলুল্লাহ সাঃকে অনুসরণ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে তাঁর হাদীস এবং সুন্নাহ। সুতরাং যারা হাদিসের জ্ঞানার্জন করার চেষ্টা করবে তাদেরকে আল্লাহ্ নিজে হেদায়েতের রাস্তা দেখাবেন।
কোন মাধ্যমটি সর্বোচ্চ সঠিক?
আমরা বুঝতে পারলাম যে, আল্লাহ্ কুরআন - হাদীস, আলেম - ওলামা এবং ইসলামের দাঈদের দ্বারা তাঁর বান্দাদের হেদায়েত দিয়ে থাকেন। এখন এইসব মাধ্যম গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সঠিক মাধ্যম কোনটি? যা দ্বারা একজন ব্যক্তি সঠিক হেদায়েতের রাস্তা পাবে।
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে ঘোষণা করেছেন, হেদায়েতের মালিক একমাত্র আল্লাহ্। তার পাশাপাশি এও ঘোষণা করেছেন, তিনি রাসুল এবং কুরআন পাঠিয়েছেন মানুষের হেদায়েতের জন্য। সুতরাং আল্লাহ্র অনুমতিতে রাসুল এবং কুরআন হলো মানুষের সরাসরি হেদায়েতের উপায় বা মাধ্যম।
যেহেতু রাসুল আমাদের মাঝে দৃশ্যমান নেই, সেহেতু তাঁর হাদীসই হচ্ছে তাঁর পক্ষে হেদায়েতের উপায়। সুতরাং কুরআন এবং হাদীসই হচ্ছে বর্তমান সময়ের হেদায়েতের প্রকৃত মাধ্যম। অর্থাৎ যে ব্যক্তি কুরআন এবং হাদিসের জ্ঞান অনুধাবন করবে আল্লাহ্ চাইলে সেই ব্যক্তিই প্রকৃতভাবে হেদায়েত প্রাপ্ত হবে।
কেন কুরআনই হেদায়েতের প্রকৃত মাধ্যমঃ
পবিত্র কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী কুরআন এবং রাসুল হচ্ছেন হেদায়েত মাধ্যম। আল্লাহ্ বলেন,
"এবং নিশ্চিতই এটা (কুরআন) মুমিনদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত"। (সূরাঃ নমল, আয়াতঃ ৭৭)
অন্য আয়াতে বলেন,
"এমনিভাবে আমি সুস্পষ্ট আয়াত রূপে কোরআন নাযিল করেছি এবং আল্লাহ-ই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন"।(সূরাঃ হাজ্জ্ব, আয়াতঃ ১৬) "
অর্থাৎ, কুরআন হচ্ছে মানব জাতির জন্য হেদায়েত স্বরূপ। যারাই কুরআন অনুধাবনের চেষ্টা করবে এবং যাদের তাকদীরে হেদায়েত থাকবে আল্লাহ্ তাদেরকে হেদায়েত দান করবেন। আর কুরআন বুঝতে হলে হাদিসের জ্ঞান প্রয়োজন। তাই যারাই হেদায়েত পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরআন হাদিসের চর্চা করবেন আল্লাহ্ তাদের হেদায়েত দান করবেন ইনশা-আল্লাহ্।
ব্যক্তি কেন নয়?
আমরা আগেই জেনেছি আলেম- ওলামা এবং ইসলামের দাঈরাও হেদায়েত একটি মাধ্যম। তাহলে তারা কেন হেদায়েত প্রকৃত মাধ্যম নয়? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা সরাসরি কুরআনের কাছ থেকে পাওয়ার চেষ্টা করব। আল্লাহ্ বলেন,
"হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক (নেতা, পীর -আউলিয়া, আলেম-ওলামা, উস্তাদ, দাঈ ইত্যাদি) তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক।" (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৫৯)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলেন যে, নির্দেশ মানতে হবে আল্লাহ্র তথা কুরআনের, আর মানতে হবে রাসুলকে তথা সহীহ্ হাদীসকে। সেইসাথে মানতে হবে নেতৃত্বদানকারীদের তথা নেতা, পীর -আউলিয়া, আলেম-ওলামা, উস্তাদ, দাঈ ইত্যাদির। যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ্ ও রাসুলের দিকে তথা কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে দাও।
অর্থাৎ দুনিয়ার সকল আলেম ওলামাদের ততক্ষণ পর্যন্ত মানা যাবে, যতক্ষণ তারা কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক চলবে। তারমানে শুধুমাত্র আলেম - ওলামাদের নিঃশর্ত ভাবে মানা যাবে না। শুধুমাত্র আলেমদের বা দাঈদের অনুসরণ করলেই আল্লাহ্ প্রকৃত হেদায়েত দিবেন না। কেননা পৃথিবীতে আজ ইসলামের অসংখ্য ধারা উপধারা বিদ্যমান। সকল ধারা কখনোই সঠিক নয়। এখন কোন ধারা সঠিক ও নির্ভুল তা জানতে হলে কুরআন হাদিসের সাহায্য নিতে হবে।
সুতরাং কোনো মানুষ যখন হেদায়েতের অন্যান্য মাধ্যম (আলেম-ওলামা, দাঈ ইত্যাদি) দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে সঠিক পথ পাওয়ার চেষ্টা করে, তখন তাকে কুরআনের দিকে ফিরে আসতে হবে। আর আল্লাহ্ তাকে তখনই প্রকৃত হেদায়েত দিবেন যখন সে কুরআনের দ্বারা প্রকৃত হেদায়েত তথা সঠিক পথ পাওয়ার চেষ্টা করবে। আল্লাহ্ কুরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা দেন,
"আমি কোরআনকে বোঝার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?" [ সুরা ক্বামার ৫৪:৩২ ]
অর্থাৎ পৃথিবীতে অসংখ্য পথ থাকলেও সঠিক পথ কোনটা তা বোঝার জন্য কুরআনকে সহজ করে নাযিল করা হয়েছে। যাতে যেকেউ যেকোনো কিছু বুঝতে চাইলে আল্লাহ্ অবশ্যই তাঁর প্রকৃত হেদায়েত দ্বারা তাকে সঠিক জ্ঞান দিবেন। কুরআন চর্চার মাধ্যমে একজন সাধারণ মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারবে, কোন আলেম ওলামা সঠিক এবং কোন আলেম ওলামা ভুল।
আরও পড়ুন সুফিবাদী সুন্নীদের আকিদা সমূহ
যেমন কুরআনে অসংখ্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে সকল নবী রাসুলরা (আঃ) হচ্ছেন মানুষ। তিনি মানুষের জন্য মানুষকে নবী রাসুল করে পাঠিয়েছেন। সেইভাবে আমাদের রাসুলুল্লাহ সাঃ ও একজন মানুষ। অথচ অধিকাংশ আলেম ওলামা প্রচার করেন রাসুল আল্লাহ্র নিজস্ব নূরে তৈরী। এখন যে ব্যক্তি সঠিক হেদায়েত চায় তাকে অবশ্যই কুরআনের দিকে ফিরে আসতে হবে। এবং যাচাই করতে হবে আসলেই কুরআনে কী লেখা আছে?
যখন সে হেদায়েতের উদ্দেশ্যে কুরআনের কাছে আসবে, তখন আল্লাহ্ তাঁর প্রকৃত হেদায়েত দ্বারা তার জন্য কুরআনকে সহজ করে দিবেন। এবং সে যখন চেষ্টা করে কোথাও রাসুল আল্লাহ্র নূরের তৈরি লেখা পাবে না। তখন আল্লাহ্ই তাকে হেদায়েত দিবেন যদি তাকদীরে থাকে। এবং সে সত্য মেনে নিতে পারবে যে, রাসুল একজন মানুষ।
আরও পড়ুন শুধু অলি আউলিয়ারাই আল্লাহর অলি নয়
এখন তার তাকদীরে হেদায়েত না থাকলে, তাকে যতই বোঝানো হোক না কেন সে কখনোই কুরআনের কাছে ফিরে এসে সত্য যাচাই করবে না। ফলে সে রাসুলকে আল্লাহ্র নূর ভেবে শিরক করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে। তার ঈমান থাকার পরও শিরক করার কারণে কিয়ামতে সে ক্ষমা পাবে না। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
" নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৪৮)
সুতরাং যে বা যারা শিরক করে তার কোনো ক্ষমা নেই দুনিয়ায় তাওবা করা ছাড়া। যারা যাচাই বাছাই ছাড়া শুধুমাত্র এক পক্ষ আলেম ওলামাদের কথা শুনে ধর্ম পালন করে। তারা কখনোই প্রকৃত হেদায়েত পাবে না যদি ঐ আলেম ওলামারা গোমরাহী হয়।
অতএব ব্যক্তি কখনোই ইসলামের প্রকৃত মানদন্ড নয়। ইসলামের প্রকৃত মানদন্ড হলো কুরআন হাদীস। এছাড়াও ব্যক্তি আলেম ওলামারা যেকোনো সময় শয়তানের প্ররোচনায় ঈমান আকিদা নষ্ট করে ফেলতে পারে। সেই সময় তাদের কথা অন্ধভাবে মেনে নেওয়া যাবে না। যখনই কোনো আলেম ওলামার কথায় সন্দেহ পাওয়া যাবে তখনই সঠিকটা জানার জন্য প্রকৃত হেদায়েত তথা কুরআন হাদিসের দিকে ফিরে যেতে হবে। তখনই আল্লাহ্ তার প্রকৃত হেদায়েত দ্বারা তাকে উদ্ধার করবেন।
বিবেক বুদ্ধিই আসল হেদায়েতঃ
একজন বান্দার জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি যা সরাসরি আল্লাহ্ তাকে দিয়ে থাকেন। সেই বিবেক বুদ্ধিই তার জন্য বড় হেদায়েতের উপায়। আল্লাহ্ বলেন,
" অতঃপর আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন।"(সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১২৫)
অর্থাৎ যাকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন তার অন্তরকে ইসলামের জন্য উপযুক্ত করে দেন। তখন সে সত্য মিথ্যা যাচাই করে সঠিক পথে নিজেকে পরিচালিত করতে পারে। আর যাকে আল্লাহ্ পরিপূর্ণ হেদায়েত দেন না তার অন্তর তথা বিবেক বুদ্ধিকে সংকীর্ণ করেন। ফলে সে যা শুনে বা বুঝে বা দেখে তাকেই সত্য মনে করে। কেউ তার ভুল ধরিয়ে দিলেও সে তা অগ্রাহ্য করে। ফলে সে আল্লাহ্র প্রকৃত হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হয়।
একটি ভ্রান্তির অবসানঃ
যারা সুফিবাদী সুন্নী রয়েছেন, তারা দাবি করেন হেদায়েতের মালিক আল্লাহ্ হলেও প্রকৃত হেদায়েতকারী হচ্ছেন তাদের পীর, অলি - আউলিয়ারা। তারা দলিল হিসাবে কুরআনের একটি আয়াত দেন। যেখানে আল্লাহ্ বলেন,
"আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।" (সূরাঃ কাহফ, আয়াতঃ ১৭)
এই আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে সুফিরা দাবি করে, আল্লাহ্ যাকে হেদায়েত দেন তার জন্য পীর ধরার ব্যবস্থা করেন। অথচ এই আয়াতের কোথাও আকার ইঙ্গিতেও এমন কথা বলা হয়নি।
এখানে আল্লাহ্ এটাই স্পষ্ট করতে চেয়েছেন যে, হেদায়েত একমাত্র আল্লাহ্র হাতে। যাকে তিনি হেদায়েত দেন নাই সে যতই পীর আউলিয়া ধরুক না কেন, যদি আল্লাহ্ তার বিবেক বুদ্ধি ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে না দেন; তাহলে সেই পীর আউলিয়ারাও তাকে হিদায়াত দিতে পারবে না।
সুফিদের দাবি সত্য মেনে নিলেও তাদের দাবি ভুল। কেননা সুফিদের মধ্যেই লক্ষ হাজার পীর আউলিয়া। যারা একে অপরের বিপরীত। সুতরাং তাদের হেদায়েতের মাধ্যম মনে করা অনর্থক। এছাড়াও তাদের পীরতন্ত্রের বিষয়টি কুরআন হাদিসের বিরোধী। শুধু তাইনয় তাদের ঈমান আকিদাও কুরআন এবং সুন্নাহর সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা আগেই জেনেছি ব্যক্তি কেন হিদায়েতের মাধ্যম নয়। আর এটা তখনই একজন মানুষ জানতে পারবে যখন আল্লাহ্র প্রকৃত হেদায়েতের মাধ্যম কুরআন দ্বারা পীর আউলিয়াদের পরীক্ষা করা হবে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হেদায়েতের অসংখ্য মাধ্যম থাকলেও প্রকৃত হেদায়েতকারী হচ্ছেন আল্লাহ্। একমাত্র তিনি-ই যাকে হেদায়েত দিবেন কেবলমাত্র সে-ই সঠিক হেদায়েত তথা সৎপথ প্রাপ্ত হবে। আর দুনিয়ায় আল্লাহ্র হেদায়েত পাওয়ার সবচেয়ে প্রকৃত মাধ্যম হলো কুরআন। সুতরাং যারা কুরআনের জ্ঞান সঠিকভাবে অর্জন করতে পারবে (তাকদীরে থাকলে) কেবল তারাই আল্লাহ্র হেদায়েত পাবে।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
৩ এপ্রিল, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।