ইসলামে রাসূলুল্লাহ সাঃ এর আদর্শ এবং তাঁর অনুসরণ করাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিনের কাজ। আল্লাহ্ বলেন,
" রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। "(আল হাশর- ৭)
অতএব সর্বাবস্থায় একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাঃ এর অনুসরণ এবং অনুকরণ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, যারাই তাঁর সঠিক অনুসরণ করবে একমাত্র তারাই নাজাত পাবে। সেই হিসাবে উপমহাদেশের অধিকাংশ মুসলমান নিজেদের সর্বোচ্চ সুন্নাহর অনুসারী মনে করে।
তাই তারা নিজেদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত নামে পরিচয় দেয়। অথচ তাদের ঈমান আকিদায় শিরক বিদআতে ভরপুর। আজ আমরা দেখব নিজেদের সুন্নি দাবি করা এই দল কীভাবে সুন্নাত ছেড়ে বিদআতী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে আহলে বিদআত ওয়াল জামাতে রূপান্তরিত হয়েছে।
সুন্নাত কী
সুন্নাহ হলো রাসূল সাঃ এর সকল কর্মকান্ড বা ত্বরিকা। অর্থাৎ তিনি তাঁর নবুওয়তের জীবনে যেসকল (ধর্মীয় ও ব্যক্তিগত) কাজ যেভাবে পরিচালিত করেছেন নির্দেশ দিয়েছেন বা অনুমতি বা সম্মতি দিয়েছেন সেইসব কর্মকাণ্ডকে বলা হচ্ছে সুন্নাহ।
প্রতিটি মুসলিমের জীবনের আদর্শ হচ্ছে রাসূল সাঃ। অর্থাৎ একজন মুসলিম দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত যাওয়ার আগে তার জীবনকে শুধুমাত্র রাসূল সাঃ এর জীবনাদর্শ দিয়ে পরিচালিত করবে। আর এটাই হচ্ছে সুন্নাতী জীবন।
বিদআত কী
বিদআত শব্দটি আরবি। যার সহজ অর্থ হলো নব বা নতুন কিছু সৃষ্টি বা আবিষ্কার। এই শব্দটি যখন ইসলামের সাথে জড়িত হবে। তখন এর অর্থ হবে ইসলামে নতুন কোনো কিছু সৃষ্টি করা। অর্থাৎ ঈমান এবং আমলের ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি বা নতুন কোনো আমল সৃষ্টি করাকেই ইসলামের দৃষ্টিতে বলা হয় বিদআত।
আরও খোলাসা করে বলা যায় , যে ঈমান এবং আমল রাসূল সাঃ দ্বারা স্বীকৃত নয়। অর্থাৎ যে ঈমান এবং আমল রাসূল সাঃ করেননি, নির্দেশ দেননি বা অনুমতিও দেননি। সেইসব ঈমান এবং আমলই হচ্ছে ইসলামের দৃষ্টিতে "বিদআত"।
মোটকথা হলো ইসলাম একটি সর্বেসর্বা পরিপূর্ণ একটি জীবনবিধান। আল্লাহ্ তাঁর রাসূল সাঃ এর মাধ্যমে ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। যাতে ভবিষ্যতে কোনো প্রকার নতুন কিছু তৈরি করতে না হয়।
আল্লাহ বলেন,
তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষথেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ কর। তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য সাথিদের অনুসরণ করনা।তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। (সূরা আ’রাফঃ৩)
এখানে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, তিনি আমাদের অর্থাৎ মুসলিমদের যা দিয়েছেন তারই শুধুমাত্র অনুসরণ করা যাবে। তা বাদ দিয়ে নিজস্ব নতুন কোনো ইবাদত বা ইবাদতের পদ্ধতি তৈরি করা যাবে না।
আল্লাহ আরো উল্লেখ করেন,
" এরপর আমি (হে রাসূল ) আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ বিধানের উপরঃ সুতরাং আপনি এর অনুসরণ করুন, মূর্খদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করবেননা "।(সূরা যাসিয়াঃ১৮)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ আমাদের সেই শিক্ষা দিচ্ছেন যে, তিনি যা বিধি বিধান হিসাবে তাঁর রাসূলের মাধ্যমে দিয়েছেন তা ই আমাদের অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ আরো বলেন,
" আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম " ।(সূরা মায়েদা :৩ এর অংশবিশেষ)
এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ ধর্ম ব্যবস্থা। সুতরাং ভবিষ্যতে ইসলামে (ঈমান এবং আমলে) তথা ইসলামী শরিয়তে নতুন কিছু যোগ করার আর কোনো অবকাশ নাই।
বিদআত সম্পর্কিত হাদীস
আল্লাহ্র রাসূল সাঃ জানতেন তাঁর পরবর্তীতে নতুন নতুন মত পথ ও বিভিন্ন ত্বরিকা সৃষ্টি হবে। তাই তিনি আগে থেকেই ইসলামে নব নব আবিষ্কৃত বিষয়ের ব্যাপারে সাবধান করে গেছেন।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০)।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, "যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশনা নেই, তা পরিত্যাজ্য"। (মুসলিম হা/১৭১৮)।
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও ছালাতের পর বলেন, ‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হ’ল দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হ’ল ভ্রষ্টতা’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)। আর নাসাঈতে রয়েছে, ‘প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম’ (নাসাঈ হা/১৫৭৮)।
উপরোক্ত প্রসিদ্ধ সহীহ্ হাদীস গুলো থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ইসলামে এমন আমল (সওয়াবের উদ্দেশ্যে ইবাদত) করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় যা রাসূল (সাঃ) এবং তাঁর খোলাফায়ে রাশেদ্বীন (রাঃ) করেননি বা শিক্ষা দেননি। সুতরাং এমন ইবাদত (বা নেকীর উদ্দেশ্যে আমল) করা যা আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এবং তাঁর খোলাফায়ে রাশেদ্বীন করেননি তা স্পষ্টত বিদআত। আর বিদআত মানেই পথভ্রষ্টতা। আর পথভ্রষ্টতা মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়।
রাসূল(সাঃ)এর অদর্শই সর্বোত্তম
যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনে ইসলামকে কবুল করে। তাদের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে,
"রাসূল তোমাদের যা দেন তা গ্রহন কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক"। (সুরা হাশর - ৭)
অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর জীবনে যা যা তাঁর সাহাবীদের (রাঃ) করতে বলেছেন এবং যা যা করতে নিষেধ করেছেন তা আমাদের মেনে চলতে হবে। আর রাসূল কে মেনে চলাটাই হচ্ছে সম্পূর্ণ ইসলাম। যারা রাসূলকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে পারবে তারাই হচ্ছে আল্লাহর পরীক্ষায় কৃতকার্য। আল্লাহ বলেন,
"আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য"। (সুরা নুর - ৫২)
এই আয়াতে সুন্দরভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহ এবং রাসূলের (সাঃ) আনুগত্য তথা অনুসরণ যারা করবে তারাই আল্লাহর কাছে কৃতকার্য।
রাসূল্লাহ সাঃএর আদর্শ এবং অনুসরণই হচ্ছে ইসলাম
আহলে সুন্নাত কিভাবে আহলে বিদআত হলো
যেসব বিষয়ে সুস্পষ্ট সুন্নাত রয়েছে। সেইসব বিষয়ে আজ নতুন নতুন আমল সৃষ্টির মাধ্যমে জঘন্য বিদআতের জন্ম দিয়েছেন একদল তথাকথিত সুফিবাদী সুন্নী।
যেমন রাসূল সাঃ এর জন্মবার্ষিকী পালন করা একটি বিদআত। রাসূল সাঃ থেকে এমন কোনো শিক্ষা পাওয়া যায় না, যেখানে তিনি তাঁর জন্মবার্ষিকী পালন করেছেন। জন্মবার্ষিকী পালন তো দূরের কথা। তখন তো হিজরি ক্যালেন্ডারই ছিলো না যে বছর হিসাব করে জন্মবার্ষিকী পালন করার রীতি চালু হবে!
শুধু তাই নয় রাসূলের জন্মবার্ষিকীর তারিখ নিয়ে এখনো যথেষ্ট মতভাদ রয়েছে। সুতরাং কেউ যদি এখন নতুন করে জাকজমকপূর্ণভাবে রাসূলসাঃ এর জন্মবার্ষিকী পালন করে নেকীর আশায়। তাহলে ঐ ব্যক্তি সুস্পষ্ট বিদআতে লিপ্ত। অথচ জন্ম "দিন" নিয়ে রাসূল সাঃ এর সুস্পষ্ট আমল রয়েছে।
হজরত আবু কাতাদা আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সোমবার রোজা রাখার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এদিনে আমি জন্ম নিয়েছি এবং এদিনেই আমার ওপর কুরআন নাজিল হয়েছে।’ (মুসলিম, আবু দাউদ)
সুস্পষ্ট প্রসিদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রাসূল সাঃ প্রতি সোমবার সাওম (রোজা) পালন করতেন। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া স্বরুপ তিনি সাওম পালন করতেন।
শুধু তাইনয় যেখানে রাসূলের সাঃ ওফাতের দিন নির্দিষ্ট। সেই ওফাতের দিনকে তথাকথিত সুফিবাদী সুন্নিরা জন্মবার্ষিকী পালন করছে খাওয়া দাওয়া হই হুল্লোড় করে। রাসূল সাঃ যেখানে নিজের জন্ম "দিনে" না খেয়ে থেকে তাঁর উম্মতকে সিয়াম সাধনার শিক্ষা দিয়েছেন। সেখানে আমরা তাঁর মৃত্যুর দিনে জন্মবার্ষিকী পালন করছি মিষ্টি মন্ডা বিরিয়ানী খেয়ে।
এইসব বিদআতী আমল করে কি আমরা রাসূল সাঃ এর সুন্নাহর ত্বরিকায় আছি? নাকি বিদআতী ত্বরিকায় আছি তা আমাদের বিবেককেই প্রশ্ন করা উচিত।
জন্মদিন পালন করা কি ইসলাম সম্মত?
ঈদ নিয়ে বিদআত
ইসলামে প্রসিদ্ধ ঈদ হচ্ছে দুটি। যা সুস্পষ্ট সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। অথচ সুফিবাদী সুন্নি দাবিদার তথাকথিত সুন্নীরা নতুন একটি ঈদের প্রচলন করেছে। যা "ঈদে মিলাদুন্নবী" নামে প্রচার হচ্ছে। শুধু তাই নয় রাসূল সাঃ এর তোষামোদ করতে গিয়ে তারা এই দিনকে সকল ঈদের সেরা ঈদ হিসাবে প্রচারিত করছে।
যেখানে রাসূল সাঃ নিজে দুই ঈদের প্রচলন করে গেছেন। সেখানে তাঁর আশেক প্রেমিক দাবিদারগণ তাঁর-ই (অলিখিত) জন্মবার্ষিকীকে শ্রেষ্ঠ ঈদ হিসাবে প্রচার করছে। যা ইসলামের মূলনীতিতে সুস্পষ্ট বিদআত।
মিলাদ কিয়াম
মিলাদ কিয়ামও তেমন একটি নব্য ইবাদত যা রাসূল সাঃ এবং সাহাবীদের থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত নয়। শুধুমাত্র যুক্তি দিয়ে কিছু কিছু বড় আলেম রাসূল সাঃ এর প্রতি অকাট্য ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে এমন আমল তথা বিদআতের জন্ম দিয়েছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ সবসময়ই সরাসরি বলেছেন তাঁকে নিয়ে যেন বাড়াবাড়ি করা না হয়।
এমনকি তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন রাজা ও শাসকগোষ্ঠীকে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক দাঁড়িয়ে যাওয়াকে রাসূলুল্লাহ সাঃ প্রত্যাখ্যান করেন। এবং নিজের জন্য কাউকে দাঁড়িয়ে যাওয়াকে অপছন্দ করতেন। রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
‘যে ব্যক্তি এতে আনন্দ পায় যে, লোকজন তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যাক, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নিল’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৯৯ সনদ ছহীহ, ‘ক্বিয়াম’ অনুচ্ছেদ)।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীদের নিকট রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর চাইতে বেশি প্রিয় ব্যক্তি আর কেউ ছিলেন না। অথচ তারা তাঁকে দেখে দাঁড়াতেন না। কেননা তারা জানতেন যে, তিনি এটা পছন্দ করেন না। [ সহীহঃ মুখতাসার শামা-য়িল (২৮৯), যঈফা ৩৪৬ নং হাদীসের অধীনে, মিশকাত (৪৬৯৮), নাকদুল কাত্তানী পৃষ্ঠা (৫১)। জামে' আত-তিরমিজি- ২৭৫৪, সহিহ হাদিস] Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
সুতরাং যেখানে রাসূলুল্লাহ সাঃ নিজেই তাঁর সম্মানে পছন্দ করছেন না, সেখানে আশেকে রাসূল দাবিদারেরা তাঁর সম্মানে মিলাদ কিয়ামের নামে নব্য ইবাদত সৃষ্টি করে! যার ইতিহাস সম্পর্কে বলা যায়,
"মিলাদ মূলত হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দীর পরবর্তী সময়ের উদ্ভাবন। সর্বপ্রথম হিজরী ৬ষ্ঠ শতাব্দীর পর সম্পূর্ণ আমোদ-প্রমোদের উদ্দেশ্যে বাদশা মুজাফফররুদ্দীন আবু সাঈদ কৌকরী বিন আরবাল এর উদ্বোধন করেন। (সূত্র: আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া- ১৩/১৫৯)
মিলাদ কিয়ামের ইতিহাস (নূরুল্লাহ মারূফ, আলেম ও প্রাবন্ধিক)
সুতরাং ইশকে রাসূল দাবি করে সুস্পষ্ট বিদআত করে কীভাবে আশেকে রাসূল হওয়া যায়?
শবেবরাত উদযাপন
পবিত্র কুরআন এবং সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত লাইলাতুল কদরকে ভিন্ন ভাবে দূর্বল হাদীস দ্বারা ফার্সি শবেবরাত নামে নতুন একটি দিবস ব্যাপকভাবে পালন করা হচ্ছে। যেসব আয়াতে লাইলাতুল কদরের কথা বলা হয়েছে, সেইসব আয়াত দিয়েই শবেবরাতের দলিল দেওয়া হচ্ছে। যা সুস্পষ্ট গোমরাহী।
এই দিবসটি শুধুমাত্র আমাদের উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে পরিচিত। এই দিবসটি নিয়ে সাহাবী তাবেয়ীদের থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায় না। শুধু তাইনয় এই দিবসকে ঘিরে উপমহাদেশে যেসব আচার অনুষ্ঠান পালিত হয় তা সন্দেহাতীতভাবে বিদআত। ঐসব আমলের কোনো ভিত্তি রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত নয়।
তবে শবেবরাত নামে কিছু না থাকলেও "মধ্য শাবানের রাত্রির " কিছু ফজিলত সহীহ্ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এছাড়াও অসংখ্য দুর্বল এবং জাল হাদিসেও বিভিন্ন আমল ও ফজিলতের কথা এসেছে। যা আবার অন্যান্য সহীহ্ হাদিসের বিরোধী।
তারপরও, দূর্বল হাদীস দ্বারা যেসব আমলের কথা বলা হয়েছে, তার ধারেকাছেও নেই এইসব বিদআতী সুন্নীরা। নতুন নতুন ইবাদত সৃষ্টি মাধ্যমে তারা নতুন নতুন বিদআতী আমল প্রচলন করছে।
শবেবরাতঃ আমাদের করণীয় ও বর্জনীয়
ইসালে সওয়াবের নামে চল্লিশা
ইসলামে চল্লিশা নামে কোনো অনুষ্ঠান নেই। মৃত ব্যক্তির কবরে নেকী পাঠানোর জন্য সুফিবাদী সুন্নীরা সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে ব্যাপক খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করে। যার উদ্দেশ্য হলো মৃত ব্যক্তির কবরে নেকী পৌঁছানো। তাদের বিশ্বাস মানুষকে এই ভোজন না করালে তাদের মৃতের আত্মা দুনিয়ায় ঘুরপাক খেতে থাকে। যা সুস্পষ্ট হিন্দু সনাতনী ধর্মের শ্রাদ্ধের মতো।
অথচ ইসলামে রাসূল সাঃ বা সাহাবীদের থেকে এমন কোনো দলিল পাওয়া যায় না যে, মৃত ব্যক্তির কবরে দোয়া পৌঁছানোর জন্য সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঠিক করে মানুষকে খাওয়ানো হয়েছে। যদিও তখন দরিদ্র এবং ক্ষুধার্তের সংখ্যা বেশী ছিলো।
সাধারণ মুসলমানগন প্রশ্ন করে থাকেন মানুষ খাওয়ানো তো খারাপ কাজ নয়। তাহলে এটা কেন বিদআতের নাম দিয়ে খারাপ বলবেন? তাদের জন্য সহজ উত্তর হলো, কোনো বিদআতই দৃষ্টিগতভাবে খারাপ নয়। খারাপ হলে কখনোই মানুষ এইসব করতো না।
কিন্তু যখনই কোনো আমল করা হবে ইবাদতের উদ্দেশ্যে অর্থাৎ সওয়াবের জন্য। তখনই আমাদের দেখতে হবে এই ইবাদত রাসূল সাঃ করেছেন কিনা। তাঁর সাহাবীদের থেকে প্রমাণিত কিনা। যদি তাই না হয় তাহলে এটা সুস্পষ্ট বিদআত।
এখন কথা হচ্ছে আমরা মৃতের নেকীর জন্য মানুষ খাওয়াবো কেন? আমাদের আগে দেখতে হবে রাসূল সাঃ মৃত ব্যক্তির জন্য কী করেছেন বা করতে বলেছেন। সুন্নাহ ত্বরিকায় দোয়া না চেয়ে বিদআতী ত্বরিকায় কেন আল্লাহর কাছে চাইবো? এতে করে কীভাবে আমরা আহলে সুন্নী হলাম?
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, "রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সমস্ত আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমলের দরজা বন্ধ হয় না।
ক. সদকায়ে জারিয়া বা আল্লাহর রাস্তায় দান সাদকা।
খ. যদি কেউ এমন সন্তান রেখে যায়, যে সন্তান বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবে অর্থাৎ নেককার সন্তান।
গ. এমন দীনি শিক্ষা রেখে যায়, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হতে থাকে। (মুসলিম শরিফ)
রাসূল সাঃ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারলাম প্রতিটি মৃত কীভাবে মৃত্যুর পর তার কবরে নেকী পৌঁছাবে তার নমুনা।
এখানে দুটি কাজ মৃত ব্যক্তিকে জীবিত থাকা অবস্থায় করে যেতে হবে। বাকি হচ্ছে তার সন্তানসন্ততিরা। এখন এরা চাইলেই তাদের মৃত পূর্বপুরুষদের জন্য নিজেরা আমল করে পাঠাতে পারে। সেইসাথে সাদকা করেও তারা তাদের পূর্বপুরুষদের জন্য নেকী ব্যবস্থা করতে পারে।
এই বিষয়ে হাদীসে এসেছে,
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত,
সাদ ইবনে উবাদা (রা.)-এর অনুপস্থিতিতে তার মা ইন্তেকাল করেন। তিনি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, আমার অনুপস্থিতিতে আমার মা মারা গেছেন। আমি যদি তাঁর পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তাঁর কোনো উপকারে আসবে? তিনি বলেন, হ্যাঁ। সাদ (রা.) বলেন, “আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমার ‘মিখরাফ’ নামক বাগানটি আমার মায়ের জন্য সদকা করে দিলাম। ”(বুখারি, হাদিস : ২৭৫৬)
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,
একব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করে, আমার পিতা ইন্তেকাল করেছেন এবং ধন-সম্পদ রেখে গেছেন কিন্তু অসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তবে কি তার (গোনাহের) কাফফারা হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (মুসলিম, হাদিস নং : ১৬৩০)
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, মৃত ব্যক্তির জন্য সাদকা করাটা সবচেয়ে বেশী জরুরী। এমন কোনো জাল যইফ হাদীসও সরাসরি পাওয়া যায় না যে মৃত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট নির্ধারিত দিনক্ষণ ঠিক করে সমাজের লোকজনকে খাওয়ালে তা মৃতের কবরে পৌঁছাবে?
তবে হ্যাঁ, কেউ চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো দিনে গরিব দুঃখীকে খাওয়াতে পারে। এতো অবশ্যই নেকী আছে। কিন্তু আমাদের সমাজে যা যেভাবে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর পর সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ বা বার্ষিক হিসাব করে যে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন প্রচলন আছে তা কখনোই ইসলাম সম্মত নয়।
মৃত ব্যক্তির চল্লিশার আয়োজন এখন ফরজ হয়ে গেছে। কারো সামর্থ্য না থাকলেও ধার কর্জ করে হলেও চল্লিশার আয়োজন করছে। যে ব্যক্তিটি মারা গেছে তার চিকিৎসা খরচ কেউ দিতে এগিয়ে আসে না। অথচ মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তির চার বা পাঁচ দিনে খাবার আয়োজন বা চল্লিশ দিনে চল্লিশার আয়োজন করতে সামর্থবানেরা একপ্রকার প্রতিযোগিতা শুরু করে।
সুতরাং বিধর্মীদের মতো সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণে মানুষকে কখনোই রাসূল সাঃ এর সুন্নাত নয়। মানুষ খাওয়ানো অবশ্যই নেকীর কাজ। ইসলাম ইয়াতীম মিসকিন অসহায়দের খাওয়ানোর ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।
কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে হচ্ছেটা কী? এখানে গরিব দুঃখীদের নয় বরং যাদের খাওয়ার সামর্থ্য আছে তাদেরই খাওয়ানো হচ্ছে। শুধু তাইনয়, এইসব খাওয়ার অনুষ্ঠানে কোনো গরিব মিসকিন গেলে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। নাহলে অনুষ্ঠানের সবার শেষে যেসব খাবার উদৃত থাকে কিংবা এঁটো খাবার যা থাকে তা ঐসব গরিবদের দেওয়া হয়।
যদি ইসলামে সত্যিই এমন কোনো আমল থাকতো তাহলে হযরত উসমান রাঃ প্রতি নিজের মা বাবা অথবা রাসূল ভসাঃ এর প্রাণপ্রিয় দুই মেয়ের জন্য বেশী বেশী ইছালে সওয়াব পাঠাতেন।
শুধু তাই নয়। আমাদের বর্তমান সমাজে না খেয়ে আছে এমন কেউ নেই। অথচ তৎকালীন আরব সমাজে গরিব দুঃখী অসহায় ভুরিভুরি মিসকিন লোকের অভাব ছিলো না। রাসূল সাঃ জীবনী থেকে আমরা জানতে পারি যে তিনি নিজেও অভাবের কারণে কতশতবার ক্ষুধার্ত ছিলেন।
সুতরাং এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, মৃত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট দিনক্ষণে মানুষকে খাওয়ানো সুস্পষ্ট বিদআত। এতে করে যিনি খাওয়াবেন তার সওয়াব অবশ্যই হবে। কিন্তু তিনি যে উদ্দেশ্যে খাওয়াবেন যেটা কখনোই পূর্ণ হওয়ার নয়। অতএব, এইসব বিদআতী কর্মকান্ড করে কীভাবে আমরা নিজেদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত দাবি করতে পারি?
রমাদানের বিদআত
সুন্নীরা মুখে সাওমের (রোজার) নিয়ত আরবিতে পড়ে যা সুন্নাহ সম্মত নয়। তার উপর যেখানে সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করা সুন্নাত। সেখানে সুন্নীরা ইফতার করে সূর্যাস্তের আরও পরে। একইসাথে রমাদানের তারাবি মধ্য রাতে আদায় করা সুন্নাহ। সেখানে ১৮০ মাইল বেগে কুরআনের খতম দিয়ে তারাবি আদায় কখনোই সুন্নাহ সম্মত নয়। এইসব সুন্নাহ বর্জিত বিদআত করেও তারা সুন্নী!
ওরস পালন
কোনো বুজুর্গ ব্যক্তির ওফাত দিবসকে বার্ষিকভাবে পালন করাও বিদআত। আমাদের উপমহাদেশে প্রতিটি পীর আউলিয়ার দরবারে সারাবছর দু চারটি ওরস লেগে থাকে। যা কখনোই রাসূল সাঃ এর সুন্নাতী ত্বরিকা নয়। আজ সুফিবাদী সুন্নীরা নবীর জন্মদিন পালন এইজন্যই করছে যাতে করে তারা তাদের পীর আউলিয়াদের জন্মদিন তথা ওরস পালন করতে পারে।
শুধু তাইনয়, আমাদের উপমহাদেশে যে সুফীবাদী ইসলাম চালু আছে। সেটাও রাসূল সাঃ কতৃক স্বীকৃত নয়। ইসলামে আমাদের উপমহাদেশের মতো পীর মুরিদ সিস্টেম নেই। অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হচ্ছে সম্পূর্ণ সুফীবাদী একটি মতবাদ। যার গভীরে রয়েছে শতশত শির্কি আকিদা।
যদি কোনো বুজুর্গ কামেল ব্যক্তির জন্য তার জন্ম ও মৃত্যুর দিন উপলক্ষে ওরস পালন করা ইসলাম সম্মত হতো, প্রথমত রাসূল সাঃ এর জন্ম ও মৃত্যুর দিন উপলক্ষে সাহাবীরা ওরস পালন করতেন। তাঁর পরবর্তীতে খোলাফায়ে রাশেদীনদের জন্ম মৃত্যু দিনে সাহাবী ও তাবেয়ীরা রাঃ তাঁদের নামে ওরস পালন করতো। এভাবে সাহাবীদের মৃত্যু হলে তাদের পরবর্তীতে তাবেয়ীরা সাহাবীদের নামে ওরস পালন করতেন। আর এভাবেই তা ইসলামে প্রচলিত হয়ে ইসলামের শরিয়ত বলে গন্য হতো।
অথচ ইসলামী ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যে, রাসূল্লাহ সাঃ সহ সাহাবী, তাবেয়ী ও তবে -তাবেয়ীদের রাঃ নামে কোনো প্রকার ওরস, সেই থেকে আজ অবধি চালু আছে। বা কখনো ইসলামের ইতিহাসে ছিলো। সুতরাং যে ওরস রাসূল্লাহ সাঃ সহ সাহাবী, তাবেয়ী, তবেতাবেয়ী রাঃগণ পালন করে আসেননি। সেই ওরস কীভাবে একজন কথিত ওলীর নামে পালন করা ইসলামী শরিয়ত হবে? অতএব, সুফি সুন্নীদের ওরসের মতো বিদআতী একটি অনুষ্ঠান পালন করে কীভাবে আহলে সুন্নাত দাবি করতে পারে?
শবেমেরাজ পালন
ইসলামে ফার্সি শব্দের শবেমেরাজ নামে ইবাদতের কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ এই রাতকে ঘিরে আমাদের উপমহাদেশে সুন্নীদের মধ্যে ব্যাপক ইবাদত বন্দেগীর প্রচলন রয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, রজবের ২৭ তারিখ শবেমেরাজ পালন করা হলেও, এর সঠিক তারিখ আজ পর্যন্ত উদ্ঘাটন হয়নি। এই তারিখ নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে।
এই মতভেদের কারণ হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাঃসহ সাহাবীগণ, তাবেয়ীগণ কখনোই এই মেরাজ দিবস পালন করেননি। যদি এটা পালন করা ইসলামের অংশ হতো, তাহলে তা ইসলামের ইতিহাসে শুরু থেকেই প্রচলিত থাকতো।
অথচ এই শবেমেরাজ পালন করার ইতিহাসও হিজরী চার /পাঁচশ বছর পর থেকে। বিশেষকরে সুফিবাদী সুফিরা এই জাতীয় অসংখ্য বিদআতের জন্ম দিয়েছেন। যার সত্যিকারের ইতিহাস প্রকৃত ইসলামে পাওয়া যায় না। আজকে যারা আশেকে রাসূল দাবিদার, তারা রাসূলের সাঃ প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে এইসব বিদআতের জন্ম দিচ্ছেন।
অথচ তারা জেনেও না জানার ভান করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানকে বিভ্রান্ত করছে। যা সুস্পষ্ট গোমরাহী। এইসব বিদআতের পরিনাম হবে খুবই ভয়াবহ। সুতরাং এইসব প্রতিষ্ঠিত বিদআত করেও কীভাবে তারা নিজেদের সুন্নী দাবি করতে পারে?
আখেরী চাহার শোম্বাপালন
আখেরী চাহার শোম্বা হচ্ছে সফর মাসের শেষ বুধবার। যার নামেই রয়েছে আরবি ফার্সি মিশ্রিত শব্দ। এই আখেরি চাহার শোম্বা যদি ইসলামের কোনো হুকুম আহকাম হতো তাহলে তা ইসলামের শুরু থেকেই আরবি নামেই প্রসিদ্ধ ও প্রচলিত হতো। যেমন অন্যান্য প্রসিদ্ধ ইবাদত সমূহের মতো।
অথচ সফর মাসের শেষ বুধবার, যেদিন রাসূলুল্লাহ সাঃ তাঁর অন্তিম সময়ে সামান্য সুস্থতা বোধ করেছিলেন। সেইদিনকে শিয়া সুফি এবং বর্তমান সুন্নীরা ইবাদত হিসাবে পালন করছে। যার কোনো ইসলামী ইতিহাস নেই। যা পালন করার ইতিহাস সাহাবী, তাবেয়ী, তবেতাবেয়ী রাঃ গণ থেকে পাওয়া যায় না।
অথচ শিয়া সুফি সমর্থিত এইসব বিদআতী ইবাদত আজ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নিজস্ব ইবাদতে পরিনত হয়েছে। এইসব বিদআতী আমল করেও তারা নিজেদের এখনো সুন্নী দাবি করে। যা খুবই লজ্জ্বাজনক ব্যাপার।
কবর সম্পর্কিত বিদআত
কবর নিয়ে অসংখ্য বিদআতের জন্ম দিয়েছে সুন্নীরা। প্রথমত তারা কবর পাকা করাকে বেশী গুরুত্ব দেয়। কবরের উপর ঘর নির্মাণ, কবরকে সিজদা করা, কবরের উপর চাদর বিছানো, কবরে ফুল দেওয়া, সদ্য মৃতের কবরে হিন্দুদের মতো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া থেকে শুরু করে কবরবাসী নিকট সাহায্য প্রার্থনা করাকেও জায়েজ মনে করে।
অথচ উপরোক্ত কাজগুলোর কোনটিই রাসূল্লাহ সাঃ তাঁর জীবদ্দশায় করেননি। বরং তা না করার জন্য বারংবার নিষেধ এবং নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। সুতরাং এইসব করা হচ্ছে বিদআত। আর সুন্নীরা নিজেদের সুন্নী দাবি করলেও রাসূলের সুন্নাহর আশেপাশে নেই।
তারা তাদের বড় বড় পীর বুজুর্গের কবরকে পাকা করে তার উপর ঘর নির্মাণ করছে। সেইসাথে সেই ঘরে ঐ কবরকে ঘিরে চালু করেছে নানাবিধ বিদআত। কবর পূজা তথা কবর সিজদা থেকে শুরু করে, কবর তাওয়াফ, কবরবাসীর নিকট মানত, কবরবাসীর কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি যাবতীয় শিরক বিদআত কুফরিসহ নানান কর্মকান্ড শুরু করেছে।
কবরকে ঘিরে এইসব বিদআতী কর্মকান্ড আজ তাদের ঈমান আকিদার অংশে পরিনত হয়েছে। আর এইসব বিদআত করার পরও তারা নিজেদের সুন্নী তথা রাসূলের সাঃ এর প্রকৃত অনুসারী দাবি করে। ভুরিভুরি বিদআত করাও তারা কীভাবে নিজেদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত দাবি করতে পারে?
মুখে আরবীতে নিয়ত করা
সুন্নীদের আরেকটি বিদআত হচ্ছে মুখে নিয়ত পড়া। অথচ নিয়ত হচ্ছে অন্তরের বিষয়। নিয়ত করতে হয়। পড়তে হয় না। কেউ যদি মনে মনে নিয়ত করে আমি এই কাজটা এখন করবো। এটা করার জন্য কখনোই সে মুখে মুখে উচ্চারণ করবে না যে, আমি এই কাজটা করবো।
এটা কেন বিদআত? কারণ রাসূল সাঃ থেকে সাহাবীদের থেকে কোনো প্রমাণ নেই যে তাঁরা মুখে নিয়ত করেছেন বা করতে শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং ইসলামের নামে কোনো আমল করতে হলে অবশ্যই তা সুন্নাহ মোতাবেক হতে হবে। এর ব্যতিক্রম মানেই হলো বিদআত।
ফরজ সালাতের পর হাত তুলে সম্মিলিত মোনাজাত
রাসূল সাঃ এবং সাহাবীদের থেকে প্রমাণিত যে, ফরজ সালাতের পর রাসূল সাঃ শতশত দোয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। যা প্রতিটি মুসলিমকে নিয়মিত ফরজ সালাতের পর পাঠ করার জন্য তাগিদও দেওয়া হয়েছে।
অথচ রাসূল্লাহ সাঃ এর শিক্ষা গ্রহণ না করে সাধারণ মুসলমানদের দোয়া কালাম না শিখিয়ে বড় বড় আলেমগণ নিজেরাই দোয়া করে। যাতে করে হাদিয়া তোফা পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন হাদিসকে জোড়াতালি লাগিয়ে ফরজ সালাতের পর ইমাম মুসল্লীদের নিয়ে একত্রে হাত তুলে নিয়মিত মোনাজাত করা তাদের কাছে ফরজের মতো।
এটা এই জন্যই বিদআত কারণ, রাসূল সাঃ কখনোই ফরজ সালাতের পর সবাইকে নিয়ে হাত তুলে মোনাজাত করেননি। অথচ তেইশ বছরের নবুওয়তী জীবনে তিনি কি কম সালাত আদায় করেছেন?
যদি আমাদের সমাজের মতো প্রতিনিয়ত ফরজ সালাতের পর ফরজ আহকামের মতো হাত তুলে মুনাজাত সুন্নাহ হতো, তাহলে রাসূল সাঃ এর জীবনে তা তিনি কতবার করতেন? অথচ একটা হাদিসও পাওয়া যায় না তিনি ফরজ সালাতের পর হাত তুলে সবাইকে নিয়ে দোয়া করেছেন।
অথচ তিনি শিক্ষা দিয়ে গেছেন ফরজ সালাতের পর একাকী শতশত দোয়া পড়ার। হোক তা হাত তুলে বা হাত তোলা ছাড়া। অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে দোয়া কালামের শিক্ষা তিনি শিখিয়ে গেছেন। তবে এটা সত্য যে, হাত তুলে সবাইকে নিয়ে অবশ্যই দোয়া করা যাবে। রাসূলুল্লাহ সাঃ থেকে এটা প্রমাণিত যে, তিনি সালাতের বাইরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে সবাইকে নিয়ে দোয়া করেছেন।
তবে তা কখনোই সালাতের সালাম ফেরানোর পর পর নয়। রাসূলুল্লাহ সাঃ সহ সাহাবী, তাবেয়ী, তবেতাবেয়ী রাঃ থেকে কখনোই এটা প্রমাণিত নয় যে তারা সালাতের পর ইমাম মোক্তাদিসহ হাত তুলে দোয়া মুনাযাত করেছেন। অথচ সুন্নাতের দাবিদার সুন্নীরা ফরজ সালাতের পর হাত তুলে মোনাযাত করে একপ্রকার ফরজ করে নিয়েছে। যা সুস্পষ্ট বিদআত।
এভাবে এমন হাজারো কাজ সুন্নীরা করছে নেকীর আশায় যা কখনোই রাসূল সাঃ এর সুন্নাহ নয়। যেমনঃ
মুদ্দারের সামনে কুরআন পড়া
আমাদের সুন্নী সমাজে প্রচলিত একটি বিদআত হচ্ছে মৃত ব্যক্তিকে সামনে রেখে কুরআন পড়া। অথচ আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন জীবিত মানুষের জন্য। আমাদের সমাজে সুন্নীরা জীবিত থাকা অবস্থায় কখনো কুরআন পড়ে দেখে না। কুরআনে আল্লাহ্ কী কী আদেশ উপদেশ দিয়েছেন বলেছেন তা কখনোই তারা খতিয়ে দেখে না।
যদিও আল্লাহ্ কুরআন নাযিল করেছেন মানুষকে সতর্ক করার জন্য। তাঁর আদেশ উপদেশ মানার জন্য। অথচ আমরা সুন্নীরা জীবিত থাকতে কুরআন পড়ি না আর মৃত্যুর পর মুর্দারের সামনে কুরআন পড়ি। যে কুরআন তার জীবিত থাকা অবস্থায় পড়া দরকার ছিলো। সেই কুরআন তার মৃত্যুর পর পড়ে তার কী লাভ হবে?
লাভ অবশ্যই হতো যদি এই শিক্ষা আমাদেরকে রাসূল সাঃ এবং তাঁর সাহাবী রাঃ দিয়ে যেতেন। যেহেতু রাসূল সাঃ জীবনী থেকে এমন কোনো নজির নেই সেহেতু এইসব আমল কখনোই করা যাবে না। করলেই আমরা বিদআতে জড়িত হয়ে গেলাম।
তবে হ্যাঁ মুর্দারকে সামনে রেখে নয়, ঘরের অন্য যেকোনো জায়গায় মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ বা আত্মীয়স্বজনরা কুরআন তেলাওাত করতে পারেন। এতে ঐ ব্যক্তি সওয়াব পাবেন। তবে তা কখনোই ভাড়া করা হুজুরদের দিয়ে নয়। কেননা আত্মীয় ছাড়া টাকার বিনিময়ে কোনো নেকী কেনা যায় না। সুতরাং সুন্নী নাম দিয়ে আমরা সুন্নীরা অহরহ বিদআত করছি প্রতিনিয়ত।
মহরম
মহরম নিয়ে সুফিবাদী সুন্নীদের মধ্যে শুধুমাত্র কারবালা কেন্দ্রিক আলোচনাই প্রাধান্য পায়। অথচ কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬০ বছর পরের ঘটনা। কারবালার ঘটনায় প্রতিটি মুসলমান মর্মাহত। এর ইতিহাস আমাদের জানা উচিত এবং সেখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
তবে আমরা যদি কারবালার ঘটনাকেই ইবাদত মনে করি। এবং মহরমের ইবাদতের মূল কারবালাকে মনে করি তাহলে তা বিদআত। কেননা ইসলামে মহরমের গুরুত্ব সুপ্রাচীন। প্রতিটি নবী রাসূলের আঃ সাথে মহরমের ১০ তারিখ জড়িত। সেই হিসাবেই রাসূল সাঃ এই মহরমের দিনে সাওম পালন করতে নির্দেশ দিয়ে গেছেন। তাও একটি নয় দুটি বা তিনটি।
মহরম নিয়ে আমাদের সুন্নী সমাজে একটি জঘন্য প্রথা চালু আছে। তা হলো প্রতিটি মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে জাঁকজমকপূর্ণ করে কোরমা পোলাও ইত্যাদি রেঁধে পাঠানো। যা এখন ইসলামের ফরজ আহকামের মতো হয়ে গেছে। সেইসাথে প্রতিটি ঘরে ঘরে মুরগী জবাই করে হালুয়া রুটি সহ নিজেরা ভালো খাওয়া যেন ফরজ সুন্নাত। অথচ এই সম্পর্কে রাসূল সাঃ বা তাঁর সাহাবীদের থেকে এমন কোনো আমল পাওয়া যায় না।
বিয়ে নিয়ে বিদআত
আমাদের তথাকথিত সুফিবাদী সুন্নী সমাজে বিয়ের মোহরানা নিয়ে যে জঘন্য সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তা সত্যিই লজ্জ্বাজনক। একজন মেয়ের মোহরানা কখনোই তার স্বামীর আয়ের আয়ত্তের বাইরে হতে পারে না। সেইসাথে কোনো মেয়ে আকাশচুম্বী মোহরানা দাবিও করতে পারে না। অথচ আমাদের সমাজে মোহরানা সংস্কৃতি খুবই হতাশ পর্যায়ে চলে গেছে।
মোহরানার জন্য আজ হাজার ছেলে সঠিক সময়ে বিয়ে করতে পারছে না। এটা নিয়ে সুন্নী আলেমদের কোনো উদ্যোগ নেই। ছেলেমেয়েদের সঠিক সময়ে বিয়ে দেওয়া যেখানে রাসূল সাঃ এর সুন্নাহ এবং নির্দেশ। সেখানে সুন্নী সমাজে ছেলেমেয়েদের সঠিক সময়ে বিয়ে নিয়ে কোনো কথা নেই।
মোহরানা নিয়ে জঘন্য বিদআত হচ্ছে মোহরানা আদায় না করা। অথচ সুন্নাহ হচ্ছে মোহরানা আদায় করে তবেই বিয়ে করা। কিন্তু আমাদের সমাজে কখনোই মোহরানা আগে আদায় করা হয় না। কীভাবে করবে? লাখ লাখ টাকা মোহরানা আদায় করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। যারফলে মোহরানা আদায় না করে বাকিতে রেখে বিয়ে করে। যা কখনোই সুন্নাহ সম্মত নয় বরং এটা হারাম পর্যায়ে চলে গেছে। নিজেদের সুন্নী দাবি করা আমরা কীভাবে জঘন্য বিদআত গুলো এখনো করে যাচ্ছি।
শুধু তাইনয় সবচেয়ে বেশী জঘন্য অপরাধ হচ্ছে, বিয়ের ওলীমা বা খাওয়া দাওয়া নিয়ে। রাসূল সাঃ এর নির্দেশ এবং সুন্নাহ হচ্ছে ছেলে বিয়ে করে তার ঘরেই ওলীমা করা। অর্থাৎ ছেলে নিজেই খানা পিনার আয়োজন করবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী। অথচ আমরা সুন্নী দাবিদারেরা কখনোই সেই সুন্নাহর অনুসারী নই। এব্যাপারে কোনো আলেমও কিছু বলে না।
এই জঘন্য বিদআতের জন্য আজ আমাদের সমাজে হাজার হাজার কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার আহাজারি। হাজার হাজার মেয়ের আজ বিয়ে হচ্ছে না শুধুমাত্র টাকার অভাবে। অথচ ইসলাম এসেছে মানুষকে উদ্ধার করতে। কুসংস্কার থেকে মুক্ত করতে। সেখানে সুন্নী দাবিদারেরা প্রতিনিয়তই সুন্নাতের খেলাফ বিদআতী কাজ করে ভন্ডামী করে যাচ্ছে।
যৌতুক
বিয়েতে যৌতুক নেওয়া এবং দেওয়াটা এখন ফরজ হয়ে গেছে। এই যৌতুক প্রথাটা এসেছে সরাসরি হিন্দু সনাতন ধর্ম থেকে। আর আমরা সুন্নীরা সেই হিন্দুয়ানী প্রথাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি। যৌতুকের বিরুদ্ধে সুন্নি প্লাটফর্ম থেকে কখনোই জোরালো প্রতিবাদ হয়নি। এবং গুটিকয়েক ছাড়া কোনো আলেমই এইসব নিয়ে কথা বলে না। কেননা সত্য বললে বর্তমান দুনিয়ায় ভাত পাওয়া যাবে না এমনই বিশ্বাস সুন্নীদের। এমন বিশ্বাস নিয়ে কীভাবে তারা নিজেদের সুন্নি জামাত দাবি করে?
মেহেদী অনুষ্ঠান
সুন্নী সমাজে বিয়ের আগে বর কনের হাতে মেহীদ লাগানো নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করে। যাতে রয়েছে বেহাল্লাপনার ছড়াছড়ি। হিন্দুদের রীতিনীতি অনুযায়ী এইসব অনুষ্ঠান করা হয়। যেখানে অগ্নি পূজার মতো ঘটনাও থাকে। রাসূল সাঃ বিয়েকে প্রচার করতে বলেছেন। কিন্তু বিধর্মীদের অনুসরণ নিষেধ করেছেন। সুতরাং আজ সুন্নি সমাজে যা চলে আসছে তা কখনোই সুন্নাতের অনুসরণ নয়।
জন্মদিন পালন
রাসূল সাঃ এবং সাহাবীদের থেকে জন্মদিন পালনের কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। ইসলামে কোনো বার্ষিকী অনুষ্ঠান নেই। সেখানে সুন্নীরা তাদের পীর মাশায়েকদের ওরসের নামে জন্মদিন মৃত্যুদিন পালন করে থাকেন। এই সংস্কৃতি এখন সাধারণ সুন্নীদের মধ্যে প্রবেশ করেছে পশ্চিমাদের অনুসরণে।
আজ প্রতিটি ঘরে ঘরে কেক কেটে ঘটা করে জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। যা সরাসরি বিধর্মীদের সংস্কৃতি। এটা নিয়ে সুন্নী আলেমদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। কারণ তারা যেখানে নিজেরাই ওরসের নামে জঘন্য বিদআত করে যাচ্ছে। সেখানে সাধারণ মুসলমানদের কীভাবে সুন্নাহ শেখাবে?
নাচে গানে ভরপুর
সুফিবাদী সুন্নীরা আজ নাচে গানে খুবই পারদর্শী। কেননা প্রতিটি পীর আউলিয়ার দরবারে নাচ গানে উন্মাদনায় ভরপুর। নাচ গান বেহাল্লাপনা কোনো কিছুই সুন্নীদের জন্য হারাম নয়। নাচ গান সুন্নীরা জায়েজ মনে করে।
যেখানে কুরআন এবং হাদিস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে নাচ গান হারাম করা হয়েছে। সেখানে সুন্নীদের প্রতিটি দরবারে এইসব চলে নির্দিধায়। সুন্নীরা নাচ গান এবং মাজারে মাদক সেবনকে জায়েজ মনে করেন। যারফলে আজ প্রতিটি সুন্নীদের ঘরে ঘরে নাচ গানের মহাউৎসব হচ্ছে। যা থেকে বিরত থাকার কোনো তাগিদ সুন্নীদের মাঝে নেই।
তাবিজ
বর্তমানে সুফিদের সুন্নি আলেমদের আয়ের প্রধান উৎস হলো তাবিজ কবজ। সুন্নীরা তাবিজ কবজ জায়েজ মনে করে। অথচ রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত সত্য যে তাবিজ কবজ জায়েজ নয়। কেননা তিনি তাবিজ কাউকে দেননি এবং তিনি নিজেও কখনো তাবিজ ব্যবহার করেননি। তবে পানি পড়া ঝাঁড়ফুক জায়েজ।
আজ তাবিজ কবজের কারণে সমাজে কুফুরি কর্মকাণ্ডের ছড়াছড়ি। বর্তমান সমাজে যে তাবিজ নিয়ে যে অসুস্থ কার্যকলাপ চলছে তা যেকোনো মুমিনের জন্য ক্ষতিকর। তাবিজ কবজের দ্বারা মানুষ আজ নিজের অজান্তেই শির্ক কুফুরিতে নিমজ্জিত।
সাধারণ মানুষ জানতেই পারছে না তার ঈমান ইতিমধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাবিজ তামীমা কোনো ভাবেই শরীয়ত সম্মত নয়। তারপরও সুন্নীরা এইসবে অন্ধের মতো বিশ্বাস করে। যারা তাবিজকে জায়েজ বলে তারা এর কিছু শর্ত দিয়ে জায়েজ করে।
এইসব শর্তের অন্যতম হলো কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবিজ করতে হবে। এবং তাবিজে কী লেখা আছে তা, যিনি তাবিজ নিচ্ছেন তাকে জানতে হবে। যার কোনটাই সুন্নীদের মাঝে নেই। আজ আমরা নিজেদের সুন্নি দাবি করেও শির্ক কুফুরিতে লিপ্ত। এইসব আকিদা কীভাবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের হতে পারে?
যাকাত
আল্লাহর বিধানের অন্যতম একটি বিধান হচ্ছে যাকাত প্রদান করা। এই যাকাত পদ্ধতিটি ইসলামে এসেছে দারিদ্রতা দূর করার জন্য। এর আদায়ের বিধান রাসূল সাঃ শিক্ষা দিয়ে গেছেন। কিন্তু সুন্নি দাবিদার সুন্নীরা রাসূল সাঃ এর সুন্নাতের উপর আমল না করে নিজস্ব ধ্যানধারণা মতো লোক দেখানো পদ্ধতিতে যাকাত আদায় নয় বরং দিচ্ছে।
সুন্নীদের প্রধান অজ্ঞাতা হচ্ছে, তারা জানেই না কত টাকা হলে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। সুন্নীদের ধারণা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা তার সমপরিমাণ টাকা হলে তবেই যাকাত দিতে হয়। অথচ সাড়ে বাহান্ন তোলা রূপার হিসাব তাদের নেই!
বর্তমান সময়ে স্বর্ণের মূল্য অনেক বেশী। অথচ সেই তুলনায় রূপার দাম একেবারেই কম। বর্তমান বাজারে সাড়ে বাহান্ন তোলা রূপার দাম সর্বোচ্চ ৩০ / ৪০ হাজার টাকার মতো হবে। সুতরাং এই টাকা পরিমাণ স্বর্ণ অথবা অর্থ যা -ই থাকুক না কেন একবছর মেয়াদে তাকে যাকাত দিতে হবে।
আর আমরা সুন্নীরা স্বর্ণের দাম হিসাব করে লাখ টাকা জমা থাকার পরও যাকাতের ধারেকাছেও নেই! শুধু তাইনয় যারা যাকাত দেয় তারা তাদের সম্পদের মোট হিসাব না করে, আন্দাজের উপর টাকা হিসাব করে। অনেকক্ষেত্রে টাকা দেওয়ার পরিবর্তে কম দামে যাকাতের কাপড়ের নামে শাড়ি লুঙ্গি কিনে গরিবদের বিতরন করে। যা মোটেই শরিয়ত সম্মত নয়।
যাকাত দেওয়ার বিষয় নয় বরং আদায় করার বিষয়। গরিব মানুষদের এভাবে নিজের ঘরের সামনে গরিবদের দাঁড় করিয়ে মানুষকে দেখিয়ে দেখিয়ে যাকাত দেওয়ার কথা রাসূল সাঃ শিক্ষা দিয়ে যাননি। বরং যাকাত আদায়ের মূল উদ্দেশ্য হলোঃ গরিবের উপকার করা। যাতে সে আর গরিব না থাকে। যাকে যাকাত দেওয়া হবে সে যেন যাকাতের টাকা নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারে। ইসলামের শিক্ষা সুন্দর এবং যুগোপযোগী। যদি ধনীরা তাদের নিজেদের আত্মীয়স্বজনকে উপযুক্ত যাকাত দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেয়। তাহলে ধীরে ধীরে দারিদ্রতা কমে আসবে। আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় হবে।
কিন্তু সুন্নীদের মাঝে এমন কোনো কিছুরই প্রচলন নেই। তারা লোক দেখিয়ে টাকা দান করে। যেখানে হাজার হাজার অসহায় নারী পুরুষ আবাল বৃদ্ধ ধাক্কাধাক্কি করে টাকা নেয়। যারফলে প্রায়শই বহু লোকের হতাহতের ঘটনা ঘটে। রাসূল সাঃ এর আদেশ নির্দেশের বিপরীত বিদআতী আমল করেও সুন্নীরা কীভাবে রাসূল সাঃ এর আশেক তা ভাবার বিষয়।
কুরবানী
পবিত্র কুরবানী নিয়ে সুন্নীদের মাঝে এমন সব বিদআত রয়েছে যা খুবই দুঃখজনক। সুন্নীদের অধিকাংশই সালাতে অনুপস্থিত। সেখানে কুরবানীর ব্যাপারে তারা খুবই কঠোর। কুরবানী করাটা একটা স্ট্যাটাস হিসাবে দেখে। কারো সামর্থ্যে কুরবানী করতে না পারলেও কুরবানি করে। যাতে সমাজে মুখ দেখাতে পারে। অথচ যেখানে সালাত আদায় করা সবচেয়ে বড় ফরজ। সেখানে কুরবানীর ব্যাপারে যথেষ্ট ছাড় আল্লাহ দিয়েছেন। যার সামর্থ্য আছে শুধু সে ই কুরবানি করবে। অনর্থক সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কুরবানি করা জায়েজ নয়।
অথচ সুন্নীদের নীতি হলো প্রয়োজনে ধার, কর্জ কিংবা সুদে টাকা নিয়ে হলেও কুরবানি করতে হবে। দেখুন আমাদের সুন্নীদের অবস্থা! কুরবানীর জন্য হারাম পথের টাকা লাগাতে পর্যন্ত তাদের বিবেকে বাধে না। আর এরাই যাবতীয় বিদআত করে সুন্নি দাবিদার।
ফিতরা
ফিতরা আদায়ে সুন্নাহ ত্বরিকা ছেড়ে আমাদের উপমহাদেশে বিদআতী পদ্ধতিতে ফিতরা দেয়। রাসূল সাঃ এর সুন্নাহ হলো নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ফিতরা আদায় করা যা তৎকালীন "সা " নামের পরিমাপক দ্বারা পরিচিত ছিলো। আর আমাদের উপমহাদেশে খাদ্যদ্রব্যের কম মূল্য নির্ধারন করে কম টাকায় ফিতরা আদায় করে। যা সুস্পষ্ট রাসূল সাঃ এর সুন্নাত বিরোধী কাজ। এবং এটাও সুস্পষ্ট বিদআত।
শুধু তাইনয়, আমাদের অধিকাংশেরও বেশী সুন্নীরা জানেই না ফিতরা কী এবং কেন ও কীভাবে দিতে হয়। ফিতরার ক্ষেত্র আল্লাহ্র রাসূল সাঃ বিভিন্ন স্থরে ভাগ করে দিয়েছেন। যেমন যে গরিব সে দিবে সর্বনিম্ন ফিতরা। আর যে সামর্থ্যবান সে দিবে তার সামর্থ্য অনুযায়ী।
আর আমাদের উপমহাদেশে সুন্নীরা চালু করেছে ধনী গরিব সবার জন্য এক নিয়মের ফিতরার টাকা। তাও আবার রাসূলের সুন্নাহ মোতাবেক এক সা পরিমাণ নয় । উপমহাদেশে ফিতরার হিসাব হয় মুয়াবিয়াহ রাঃ এর সুন্নাহ অনুযায়ী অর্ধ সা পরিমাণ। যেই মুয়াবিয়াহ রাঃকে উপমহাদেশে ইসলামের খলনায়ক হিসাবে চিনে এবং মানে। সুতরাং সুন্নীরা নিজের স্বার্থের কারণে সুন্নাহ জলাঞ্জলি দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
শাবিনা খতম
হুজুরদের টাকা দিয়ে একদিনের মধ্যে কুরআন খতম দেওয়াকে বলা হয় শাবিনা খতম। যা সুস্পষ্ট বিদআত। কেননা রাসূল্লাহ সাঃসহ সাহাবী, তাবেয়ী, তবেতাবেয়ী (রাঃ)গণ কখনোই এই কাজ করেননি এবং নির্দেশও দেননি। অথচ সুন্নীরা টাকার লোভে নিজ দায়িত্বে এমন এমন সব বিদআত সৃষ্টি করছে যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। আর এইসব বিদআত করার পরও তারা নিজেদের সুন্নী দাবি করতে লজ্জ্বাবোধ করে না।
টাকা দিয়ে কারো জন্য কুরআন খতম দেওয়া
আমাদের সুন্নীদের মাঝে বহুল প্রচলিত একটি বিদআত হচ্ছে অন্যকে টাকা দিয়ে কুরআন খতম করা। কুরআন এসেছে মানুষকে সতর্ক করতে আল্লাহকে চিনতে এবং জানতে। যে ব্যক্তি যতবেশী কুরআন পড়বে বুঝবে। সে ততই আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে। কুরআন তিলাওয়াতের যথেষ্ট নেকী রয়েছে। অর্থাৎ কেউ কুরআন পড়লে বুঝলে অবশ্যই তার আমলনামায় নেকী যোগ হবে। এটা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত।
কিন্তু আমাদের সমাজে প্রচলিত হলো হুজুরকে টাকা দিয়ে নিজের মৃত মা বাবার জন্য কুরআন পড়ানো। যা কখনোই সুন্নাহ সম্মত নয়। কেউ কুরআন পড়লে তার নেকী হবে। তার নেকী হলে সেই নেকী তার মা বাবার জন্য পৌঁছাবে। এটাই সত্য। এখন কেউ টাকা দিলো আর অন্য কেউ পড়ে দিলো। এভাবে কি নেকী পাওয়া সম্ভব? যদি এমন সিস্টেম ইসলামে চালু থাকতো তাহলে মানুষ আর নিজে আমল না করে টাকা দিয়ে সব ইবাদত হুজুরকে দিয়ে করিয়ে নিতো। তাহলে আর তাকওয়ার প্রয়োজন হতো না। টাকা থাকলেই জান্নাত কিনে নেওয়া যেত।
ঠিক একইভাবে খতমে জালালী, খতমে ইউনুস, কুরআন খানি, ফাতিহা খানি, শবীনা খতম, দরুদে তাজ, দরুদে লাক্ষী, দু‘আয়ে গাঞ্জুল আরশ, কুম কুম ইয়া হাবীবা ওযীফা, উরস, কবরে চাদর দেয়া, কবর পাকা করা, কবর পূজা করা, কবরের উপর লেখা, তাতে ফ্যানের ব্যবস্থা রাখা, সেখানে আগর বাতি-মোমবাতি জ্বালানো, সেখানে নযরানা পেশ করা ইত্যাদি আমলের কোনো নজির রাসূল সাঃ বা তাঁর সাহাবীদের থেকে প্রমাণিত নয়। যদি এইসব আমলের কোনো প্রমাণ পাওয়া যেত তাহলে তা আমরা অবশ্যই পালন করতে পারতাম।
একইভাবে সালাতের আযানের আগে মাইকে রাসূল সাঃ কে সালাম দেওয়া। যার কোনো সুস্পষ্ট এবং নিয়মিত আমলের হাদিস পাওয়া যায় না।
আযানের জবাব এবং দোয়া পড়ার ফজিলত অনেক। কিন্তু আমাদের সুন্নীরা আযানের জবাব এবং দোয়ার চাইতে যখন রাসূল সাঃ এর নাম নেওয়া হয় তখন আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখে মোছাটাই বেশী সওয়াবের মনে করে। অথচ রাসূল সাঃ বা সাহাবীদের থেকে এমন কোনো আমল প্রমাণিত নয়। যেটা প্রমাণিত সত্য সেটার আমল আমাদের সুন্নীদের মাঝে নেই। এমনকি এই ব্যাপারে তারা জানেও না।
ফরজ জামাতের আগে লাল বাতি
ফরজ সালাতের আগে সুন্নাত আদায় না করার জন্য মসজিদে লাল বাতি জ্বালানো একটি জঘন্য বিদআত। রাসূলের সুন্নাহ হচ্ছে মসজিদে প্রবেশ করেই বসার আগে দু রাকাত মসজিদের সালাত আদায় করা। হোক তা জুমার দিনে খুতবা চলার সময়েও। সেখানে জামাত হওয়ার আগে আর কোনো সালাত আদায় না করার জন্য সরাসরি নিষিদ্ধ ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে তথাকথিত সুফিবাদী সুন্নীরা।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, আমরা সুন্নী নামধারীরা সুন্নী দাবি করলেও আমাদের কাজে কর্মে সুন্নাহর ছিটেফোঁটাও নেই। আমরা স্পষ্ট প্রমাণিত সুন্নাহকে পিছনে ফেলে নিজেদের মনগড়া ইবাদত আমলে ব্যস্ত। আমরা পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণেই ইসলাম পালন করে আসছি। অতএব, আমরা নিজেদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত দাবি করলেও উপরোক্ত বিষয়ের দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে আমরা আহলে বিদআত ওয়াল জামাত।
অথচ আমাদের উচিত সবকিছু গভীরভাবে অনুধাবন করে জানা ও যাচাই করা। জানার চেষ্টা এইজন্যই করতে হবে যে, হিদায়াতের প্রথম শর্ত-ই হলো ইলম বা জ্ঞান। যার জ্ঞান আছে সে-ই হিদায়াতের পথে থাকবে। অর্থাৎ নিজেদের জ্ঞান বিচার বুদ্ধি দিয়ে বিবেচনা করতে হবে যে, আমরা যা পালন করছি তা কতটুকু সঠিক? তবে কখনোই কারো অন্ধ অনুসরণ কিংবা অধিকাংশের অনুসরণ কিংবা পূর্বপুরুষদের বাধ্যতামূলক অনুসরণ করা যাবে না। কেননা ইসলামে কুরআন হাদিসের বিপরীতে এইসবের অনুসরণ নিষিদ্ধ।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২৭ এপ্রিল, ২০২২ ইংরেজি
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।