শুধু অলি আউলিয়ারাই আল্লাহর অলি নয়
শুধু অলি আউলিয়ারাই আল্লাহর অলি নয় |
আমাদের উপমহাদেশে অলি আউলিয়ারা সবার কাছে খুবই পরিচিত। সাধারণত সুফিবাদ ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতে বিশ্বাসীরা, অলি আউলিয়াদের অন্যরকম চোখে দেখে। তাদের প্রতি এমন বিশ্বাস ও ভালোবাসা দেখায় যা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। তাই আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো শুধু পীর অলি আউলিয়া, মাজারবাসীরাই কি আল্লাহর অলি? নাকি যেকোনো মুমিন বান্দাও আল্লাহর অলি হতে পারে।
অলি আউলিয়া কাকে বলে
অলি আরবি শব্দ। যার অর্থ হলো অভিভাবক বা মুরুব্বি, বন্ধু। আরবি ভাষায় “আউলিয়া” শব্দটি অলির বহুবচন। 'অলি' অর্থ বন্ধু, বা অনুসারী। কখনো শব্দটির অর্থ হয় শাসক, অভিভাবক বা কর্তা। (তথ্যসূত্র- আরবি-বাংলা অভিধান, প্রকাশনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহর অলি বা বন্ধু হলো তারা, যারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান এনে পরিপূর্ণ তাকওয়ার ভিত্তিতে নিজেদের প্রকৃত মুমিন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে তারা হচ্ছে আল্লাহর অলি।
যাদের অলি বলে দাবি করা হয়
কুরআন এবং হাদিসে অলি আউলিয়া নিয়ে নির্দেশনা থাকলেও, আমরা সাধারণত বিভিন্ন মাজারবাসীকেই অলি আউলিয়া বলে চিনি বা জানি। একইসাথে আমাদের দেশে সুফিবাদী বিভিন্ন দরবারের পীর মাশায়খদেরও আল্লাহর অলি বলা হয়। সেইসাথে প্রতিটি কবরবাসী অলি আউলিয়াদের সন্তানও পরবর্তীতে অলি হয়ে যায়। তাছাড়াও যেসব কবরবাসী থেকে কথিত কারামত প্রকাশিত হয়, তাদেরও আল্লাহর অলি হিসাবে মানা হয়। শুধু তাইনয়, তাদের মতে আল্লাহ নয়, বরং তাদের স্বীকৃত অলি আউলিয়ারাই আল্লাহর অলি তৈরি করেন বা খেলাফত দেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ ফুটবল এবং আমাদের ঈমান আকিদা।
যেকারণে শুধু পীর আউলিয়ারাই আল্লাহর অলি নয়
এখন আমরা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত বিশ্লেষণ করে জানার চেষ্টা করব পবিত্র কুরআনে আল্লাহ কাদের আল্লাহর অলি বলেছেন এবং কী কী গুণ থাকলে একজন মুমিন আল্লাহর অলি হতে পারেন। একইসাথে কেন কথিত অলি আউলিয়ারাই শুধুমাত্র আল্লাহর অলি নয় তাও খতিয়ে দেখব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ বলেন,
" মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে। যারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে "। (সূরা: ইউনুস, আয়াত: ৬২, ৬৩)
উপর্যুক্ত আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিচ্ছেন যে, যারাই (পরিপূর্ণ) ঈমান আনবে এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে তারাই হবে আল্লাহর অলি বা বন্ধু। এই আয়াতে কোথাও কোনো কবর বা মাজারবাসী বা কোনো কথিত পীরকে আল্লাহর অলি বা বন্ধু বলা হয়নি। বরং আল্লাহর বন্ধু হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে, যারাই পরিপূর্ণ ঈমান তথা শিরক মুক্ত বিশ্বাস এবং বিদআত মুক্ত আমল করবে। সেইসাথে তাকওয়া তথা সার্বক্ষণিক আল্লাহর ভয় যাদের অন্তরে বিরাজ করবে তাঁরাই হবে প্রকৃত আল্লাহর অলি বা বন্ধু।
এমতাবস্থায় যেসব মুমিন এই দুটি গুণ অর্জন করতে পারবেন একমাত্র তাঁরাই হবেন আল্লাহর অলি। সুতরাং কুরআনের আলোকে ঈমান ও আমল ছাড়া আল্লাহর অলি হওয়া কখনোই জন্মগত বা বংশগত নয়। শুধু তাইনয় কে আল্লাহর বন্ধু তা কাউকে দেখেও জানা যাবে না। কেননা কে আল্লাহর বন্ধু তা একমাত্র তিনিই জানেন। যা জানার সাধ্য কারো নেই। অতএব সুফি সুন্নিরা তাদের পীর আউলিয়াদেরই শুধুমাত্র আল্লাহর অলি বলে যে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন তা এই আয়াত দ্বারা ভুল প্রমাণিত হলো। একইভাবে সূরা আল মায়িদাহর ৫৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
"(হে ঈমানদারগণ) তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র।
উপর্যুক্ত আয়াতও একই কথা বলা হচ্ছে, যাঁরাই প্রকৃত ঈমানদার তাদের বন্ধু হলেন আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং সেইসব মুমিন বা মুসলমানগণ, যাঁরা পরিপূর্ণ সালাত কায়েম করে এবং পরিপূর্ণভাবে যাকাত দেয় এবং যারা হচ্ছেন বিনয়ী ও বিনম্র। সুতরাং যাঁরাই এইসব গুণের অধিকারী হবেন তাঁরাই হবেন আল্লাহর অলি।
এখন আমরা পবিত্র কুরআনের আরও কিছু আয়াত দেখবো। যেখানে আল্লাহ যারা মুমিন, ঈমানদার, পরহেযগার, ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত তাদের তিনি তাঁর বন্ধু, অভিভাবক ইত্যাদি স্বীকৃতি দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
"যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক।" (সূরা বাকারা : ২৫৭), "আল্লাহ হচ্ছেন মুমিনদের বন্ধু।" (সূরা: আল ইমরান, আয়াত: ৬৮), "আর আল্লাহ পরহেযগারদের বন্ধু"। (সূরা: আল জাসিয়া, আয়াত: ১৯), "আল্লাহ মুমিনদের হিতৈষী বন্ধু"। (সূরা: মুহাম্মদ, আয়াত: ১১)
উপর্যুক্ত আয়াত গুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহ তাদেরই তাঁর অলি বা বন্ধু বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন, যারা ঈমানদার, মুমিন, মুত্তাকী, পরহেযগার ইত্যাদি গুণাবলীতে গুণান্বিত। সুতরাং ঈমান আমল ছাড়া আল্লাহর বন্ধু হওয়া কখনোই বংশগত বা জন্মগত বা অধিকাংশ মানুষের দ্বারা স্বীকৃত কোনো বিষয় নয়। বরং এটা ঈমান আকিদা এবং আমল দ্বারা অর্জনের বিষয়।
সুফি সুন্নিরা শুধুমাত্র তাদের পীর বা মাজারবাসীকেই আল্লাহর অলি বলে দাবি করেন। অথচ সুফি সুন্নিদের সালাত সিয়ামের বালাই নেই। বরং তাদের আকিদা হলো শিরক বিদআত করা। যারা জন্ম থেকে শিরক বিদআত করে জীবন পার করে, তারা কীভাবে আল্লাহর অলি বা বন্ধু হতে পারেন?
তাছাড়া উপর্যুক্ত আয়াত গুলোতে স্পষ্টই উল্লেখ আছে কী কী গুণে আল্লাহর বন্ধু হওয়া যায়। পবিত্র কুরআনে একটি আয়াতও সুফি সুন্নিরা দেখাতে পারবে না, যেখানে শুধুমাত্র বংশগত কারণে কেউ আল্লাহর অলি বা বন্ধু হয়েছেন। অথচ সুফি সুন্নিদের দাবিকৃত সকল পীর অলি আউলিয়াই হলো বংশগত!
একইসাথে যারা আল্লাহর বন্ধু হবেন তারা অবশ্যই আল্লাহর প্রিয় হবেন। আল্লাহ বলেন,
"তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী।'' (সূরা হুজুরাত ৪৯ : ১৩) "নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।’’ (সূরা আল ইমরান:৭৬)
উপর্যুক্ত আয়াত গুলোতে আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান এবং ভালোবাসার পাত্র হলেন তারা, যারা মুত্তাকী অর্থাৎ তাকওয়াবান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কোনো মানুষের তাকওয়া কি কখনো বাইরে থেকে বুঝা যায়? তাকওয়া হচ্ছে মানুষের অন্তরের বিষয়। এই তাকওয়ার খবর একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। তাহলে বিভিন্ন পীর বা কবরবাসীকে আমরা কীভাবে অধিক তাকওয়াবান মনে করে তাদের আল্লাহর অলি বা বন্ধুর স্বীকৃতি দিচ্ছি?
আরও পড়ুন: কুরআন না জানার পরিনতি
এছাড়াও আল্লাহ তাঁর প্রকৃত ঈমানদার বন্ধুকে (দুনিয়া এবং আখিরাতের) সুসংবাদ দিয়ে থাকেন। আল্লাহ বলেন,
"তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুত: সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে"। (সূরা: আত তাওবাহ, আয়াত: ১১২)
এই আয়াত দ্বারা যাদের উপরের উল্লিখিত গুণাবলী গুলো থাকবে তারাই হবেন সুসংবাদের অধিকারী। অর্থাৎ এরাই জান্নাতের অধিকারী আল্লাহর প্রিয় বান্দা। অথচ সুফি সুন্নিদের পীরেরা এইসব গুণে গুণান্বিত নয়। তাদের আকিদায় সালাত নেই, সৎকাজের আদেশ কিংবা অসৎ কাজের নিষেধ নেই। থাকলে তাদের মাজার গুলো ঘিরে শিরক বিদআতের চর্চা হতো না। তারা যদি শোকরগোজারী এবং দুনিয়া বিমুখী হতেন, তাহলে তাদের ওরস গুলোতে লাখ লাখ টাকার চাঁদা উঠানো হতে না। নজরানার নামে চাঁদাবাজি চলতো না বিরানীরও বেচাকেনা হতো না। তাদের বিলাসী জীবনযাপন দেখলে যেকোনো কারোরই চোখ কপালে উঠে যাবে! তাহলে এরা কীভাবে দুনিয়া বিমুখী হতে পারে?
একইসাথে তারা যদি আল্লাহর সীমার হেফাজতকারী হতো, তাহলে তারা ইলমে গায়েব, হাজির নাজির, বান্দার রিজিক, হায়াৎ, সন্তান দান, মানত করা ইত্যাদিসহ ওয়াহেদাতুল ওজুদ, হুলুল, ফানাফিল্লাহ, বাকিবিল্লাহ নামে বিদআতী ঈমান আকিদা তৈরি করতো না। প্রতিটি ভক্ত মুরিদের বিশ্বাস, আল্লাহ নয় বরং তাদের পীর অলি আউলিয়ারাই সবকিছু দিয়ে থাকেন সুতরাং চাইতে হলে তাদের কাছে চাও (নাঊজুবিল্লাহ)। অতএব তথাকথিত পীর মাজারবাসীরা এই আয়াতের দাবিদার হতে পারে না। সুতরাং এই আয়াত আল্লাহ সেইসব মুমিনদেরই ইঙ্গিত করেছেন, যারা সত্যিকারে এইসব গুণের অধিকারী। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন,
"এবং (যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা) তারা যখন ব্যয় করে, তখন অযথা ব্যয় করে না কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী"। (সূরা: আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৭) "নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই"। (সূরা: বনী ইসরাঈল, আয়াত: ২৭)
এখানে স্পষ্ট যে, যারা মিতব্যয়ী তারা আল্লাহর প্রিয়। আর অপব্যয়কারী হচ্ছেন শয়তানের ভাই। এখন সুফি সুন্নিদের পীর আউলিয়াদের কবর, দরবার এবং ওরসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে অপচয় আর জৌলুসের ছড়াছড়ি। সেইসাথে ব্যক্তিজীবনেও রয়েছে বিলাসিতা। এছাড়াও আল্লাহ বলেন,
"এবং (তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা) যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়"। (সূরা: আল-ফুরকান, আয়াত: ৭২)
অর্থাৎ আল্লাহর প্রিয় বান্দারা কখনোই অনর্থক বেহুদা কাজে জড়িত হন না। একইসাথে কোথাও এমন হলে সেখান থেকে ভদ্রভাবে চলে যায়। অথচ সুফি সুন্নিরা যেসব ওরস বা জন্মবার্ষিকী মৃত্যুবার্ষিকীর পালন করে তা কখনোই কোনো ইসলামী আচার অনুষ্ঠান নয়। বিধর্মীদের অনুসরণে পালিত এইসব ওরসে অশ্লীল নাচ গান, মাদক সেবনসহ বিদআতী বিভিন্ন অনুষ্ঠান করা হয়। আর এইসব গুনাহের কাজ করেও কীভাবে তারা আল্লাহর অলি বা বন্ধু হতে পারেন?
আমরা জানি শিরক হচ্ছে এমন পাপ কিয়ামতে যার ক্ষমা নেই। আর আল্লাহ বলেন,
"এবং (তারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা) যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত করে না"। (সূরা: আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৮)
অর্থাৎ যারা আল্লাহর সত্যিকারের বন্ধু এবং প্রিয়পাত্র তারা কখনোই শিরক করে না। অথচ সুফি সুন্নিদের পীর আউলিয়ার মাজার ওরসে যে পরিমাণ শিরক হয় সেই পরিমাণ শিরক হিন্দুদের পূজা মন্ডপেও হয় কিনা সন্দেহ। এইসব করার পরও তারা কীভাবে আল্লাহর অলি বা বন্ধু হতে পারে?
ইসলামে পবিত্র কুরআনে রয়েছে পরিপূর্ণ জীবনবিধান। আল্লাহ বলেন,
"এবং (তারাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা) যাদেরকে তাদের পালনকর্তার আয়াতসমূহ বোঝানো হলে তাতে অন্ধ ও বধির সদৃশ আচরণ করে না"। (সূরা: আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৩)
অর্থাৎ আল্লাহর প্রিয় বন্দাদের যখনই কুরআন হাদিস দ্বারা দ্বীন ইসলামের কোনো বিধি বিধানের কথা বলা হয় তখন তাঁরা তা সাথে সাথে নি:সংকোচে মেনে নেয়। তারা এমন ভাব দেখায় না যে, বধিরের মতো শোনেনি বা অন্ধের মতো দেখি। যখনই তাদের কুরআনের আয়াত দ্বারা ইসলাম সম্পর্কে যাবতীয় নসিহত করা হলে তারা তা ততক্ষণাৎ স্বীকার করে সেইমতো চলার এবং মানার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: কবর পাকা করার দলিল খন্ডন
অথচ সুফি সুন্নিদের পীর আউলিয়াদের আল্লাহর অলি দাবি করলেও, তারা কুরআনের অনুসরণে জীবনযাপন এবং দ্বীন ইসলাম পালন করে না। তাদের ঈমান আমল আকিদা ও ইবাদত সবই হচ্ছে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী। তাদের কুরআনের দিকে আহবান করলে সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। যেন তারা বধিরের মতো কিছু শোনেনি এবং অন্ধের মতো কিছু দেখেনি। যা আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার নমুনা নয়। সুতরাং তারা কখনোই আল্লাহর অলি হতে পারে না।আল্লাহ বলেন,
"তারা (যারা জান্নাতের অধিকারী) ধৈর্য্যধারণকারী, সত্যবাদী, বিনয়ের সাথে নির্দেশ সম্পাদনকারী, খরচকারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।" (১৭: আলে ইমরান)
অর্থাৎ যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা তথা অলি বা বন্ধু তারা নিয়মিত সালাত আদায়ের পাশাপাশি রাতের শেষাংশে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। অথচ সুফি সুন্নিদের আকিদায় সালাতের কোনো স্থান নেই! তাদের পীর অলি আউলিয়াদের ইয়াকীন এসে গেলে আর তাদের ইবাদত করার প্রয়োজন হয় না। এমনকি তাদের কথিত অধিকাংশের বেশী (লেংটা বাবা, বদনা বাবা, বিড়ি বাবা ইত্যাদি) পীরেরাও সালাত আদায়কারী নয়। সুতরাং যারা আল্লাহর ইবাদতই করে না তারা কীভাবে আল্লাহর অলি হতে পারেন?
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, যাঁরাই আল্লাহর প্রিয় বান্দা এবং তাঁর বন্ধু হবেন, তাদেরকে তা তাঁদের ঈমান আমল আকিদা দ্বারা এই খেতাব অর্জন করতে হবে। সেইসাথে যারাই আল্লাহর অলি হবেন বা যাকেই আল্লাহর অলি বলা হবে তাঁর এবং তাদের কুরআনের আলোকে উপর্যুক্ত গুণাবলী গুলো থাকতে হবে।
অথচ উপমহাদেশের সুফি সুন্নিরা কুরআন না জানা এবং না বুঝার কারণে তাদের কথিত পীর আউলিয়াদেরকে বংশগতভাবে এবং আনুমানিকভাবে আল্লাহর অলি বলে সম্বোধন এবং দাবি করে। সেইসাথে তারা এটাও দাবি করে যে, তারাই আল্লাহর অলি সৃষ্টি করে। অথচ তাদের ঈমান আকিদা সম্পূর্ণ কুরআন এবং সুন্নাহ বিরোধী। সুতরাং তারা আল্লাহর অলি হতে পারে না। শুধু তাইনয় কুরআনের আলোকে যেকোনো মুমিন মুত্তাকী পরহেজগার বান্দা, যাদের কুরআনের উল্লিখিত সকল ভালো গুণ রয়েছে তারা অবশ্যই আল্লাহর অলি বা বন্ধু হতে পারেন। অতএব সুফি সুন্নিদের পীর অলি আউলিয়ারাই শুধু আল্লাহর অলি নয়।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।