রাসুল সম্পর্কিত সুন্নি আকিদার হাজির ও নাজির জবাব
সুফি সুন্নীরা আল্লাহর রাসুল সাঃকে বিভিন্ন বিশেষণে বিশেষায়িত করে থাকেন। সুন্নীরা রাসুল সম্পর্কে এমন এমন সব আকিদা পোষণ করে যা কখনোই ইসলাম স্বীকৃত নয়। এইসব ভ্রান্ত আকিদা সমূহ এমন যে, তা একজন ঈমানদারকে মুশরিকে পরিনত করে ঈমান হারা করে দেয়। এখন আমরা কুরআন এবং সহীহ্ হাদিসের আলোকে সুফি সুন্নীদের রাসুল ও পীর আউলিয়ারা হাজির ও নাজির আকিদার জবাব পাওয়ার চেষ্টা করবো।
হাজির ও নাজির
তথাকথিত সুফি সুন্নীদের বিশ্বাস রাসুলুল্লাহ সাঃ সহ সকল পীর আউলিয়ারা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় যেকোনো সময় হাজির এবং নাজির। অর্থাৎ তিনি পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় যেকোনো মূহুর্তে যেতে পারেন এবং দেখতে পারেন।
সর্বত্র হাজির ও নাজির গুণটি একমাত্র আল্লাহর। শুধুমাত্র আল্লাহ্ই পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের যেকোনো সময়ের যেকোনো ঘটনা অবলোকন করতে পারেন এবং তিনি তাঁর সর্বময় ক্ষমতা দ্বারা উপস্থিতও থাকেন। সুতরাং আল্লাহর নিজস্ব কোনো গুণকে তাঁর কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনা করলে তা হবে সরাসরি শির্ক।
মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাজির নাযির বিশ্বাস করলে তাঁর দ্বারা মিরাজ সংঘটিত হওয়া মিথ্যা হয়ে যায়।আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, "পবিত্র তিনি যিনি নিয়ে গেছেন এক রাতে নিজের বান্দাকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্সা পর্যন্ত, যার পরিবেশকে তিনি বরকতময় করেছেন, যাতে তাকে নিজের কিছু নিদর্শন দেখান৷আসলে তিনিই সবকিছুর শ্রোতা ও দ্রষ্টা"৷ (বনী ইসরাইল ১৭:১)।
মিরাজ হল রাসুলুল্লাহ সাঃ মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্সা অতপর সপ্ত আকাশ পাড়ি দিয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আরশে আজিমে পৌঁছানোর ঘটনা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সদা সর্বদা সব জায়গায় হাজির নাযির থাকলে তো আর আরশে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। তিনি তো সেখানেই হাজিরই ছিলেন। তাহলে মিরাজ আর হলো কোথায়?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে হাজির নাযির বলাটা বাহ্যিকভাবে সম্মানজনক মনে করা হলেও আসলে তা শির্ক, যা একজন মুসলিম কে ইসলাম থেকে বাহির করে দেয়। এর দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজকে অস্বীকার করা হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে হিজরতের প্রয়োজন ছিল না। কারন মূহুর্তেই মক্কা থেকে মদিনা আবার মদিনা থেকে মক্কা যাওয়া আসা করতে পারতেন। অথবা শত্রু পক্ষের যেকোনো গোপন সংবাদ বা যেকোনো বিপদের আশংকা তিনি আগেই জেনে নিতে পারতেন সেখানে উপস্থিত হয়। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, "তোমরা যদি নবীকে সাহায্য না কর, তাহলে কোন পরোয়া নেই৷ আল্লাহ তাকে এমন সময় সাহায্য করেছেন যখন কাফেররা তাকে বের করে দিয়েছিল, যখন সে ছিল মাত্র দু’জনের মধ্যে দ্বিতীয় জন, যখন তারা দু’জন গুহার মধ্যে ছিল, তখন সে তার সাথীকে বলেছিল, চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন৷ সে সময় আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তার ওপর মানসিক প্রশান্তি নাযিল করেন এবং এমন সেনাদল পাঠিয়ে তাকে সাহায্য করেন, যা তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফেরদের বক্তব্যকে নীচু করে দেন৷ আর আল্লাহর কথা তো সমুন্নত আছেই৷ আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়৷ "(তাওবা ৯:৪০)
উপরোক্ত আয়াতটি রাসুলুল্লাহ সাঃএর হিজরতের সাথে সম্পর্কিত। তিনি যদি সবখানেই যেতে পারতেন তাহলে হিজরতের প্রয়োজন ছিলো কেন?
আরও পড়ুন পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ
কুরায়শরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার মিরাজের ঘটনা কেন্দ্র করে বায়তুল মুকাদ্দাসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল যা তিনি দেখেন নি। ফলে তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে তিনি চিন্তিত হতেন না। কেননা মূহুর্তেই তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়ে সব দেখে আসতে পারতেন।
এই সম্পর্কিত হাদীসে এসেছে, যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আমি হাজরে আসোয়াদের কাছে ছিলাম। এ সময় কুরায়শরা আমাকে আমার মিরাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তারা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল, তা আমি ভালভাবে দেখিনি। ফলে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তারপর আল্লাহ তাআলা আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন এবং আমি তা দেখছিলাম। তারা আমাকে যে প্রশ্ন করছিল, তার জবাব দিতে লাগলাম। এরপর নবীদের এক জামাতেও আমি নিজেকে উদ্ভাসিত দেখলাম। মুসা (আঃ)-কে নামাযে দণ্ডায়মান দেখলাম, তিনি শানূয়া গোত্রের লোকদের মত মধ্যমাকৃতির। তাঁর চুল ছিল কোঁকড়ানো। হযরত ঈসা (আঃ)-কেও নামাযে দাঁড়ানো দেখলাম। উরওয়া ইবন মাসঊদ আবু সাকাফী হচ্ছেন তাঁর নিকটতম সদৃশ। ইবরাহীম (আঃ) কেও নামাযে দাঁড়ান দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীরই সদৃশ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তারপর নামাযের সময় হলো, আমি তাঁদের ইমামত করলাম। নামায শেষে এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ (সাঃ)! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ‘মালিক’, ওকে সালাম করুন। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন (আঃ)-কেও নামাযে দাঁড়ান দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীরই সদৃশ। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তারপর নামাযের সময় হলো, আমি তাঁদের ইমামত করলাম। নামায শেষে এক ব্যক্তি আমাকে বললেন, হে মুহাম্মাদ (সাঃ)! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক ‘মালিক’, ওকে সালাম করুন। আমি তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করলেন। (সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, হাদিস ৩২৮)।
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহর রাসুল সাঃ যেকোনো স্থানে হাজির নাজির নন। যেখানে আল্লাহ্ ঘোষিত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ আল্লাহর বন্ধু মুহাম্মদ সাঃ পৃথিবীর যেকোনো স্থানে হাজির নাজির নয়। সুফি সুন্নীদের এ ধরনের বিশ্বাস হচ্ছে সুস্পষ্ট শির্ক। যা তাদের ইসলাম থেকে খারিজ করে দিয়েছে।
আরও পড়ুন সুফিবাদ কী, কীভাবে উৎপত্তি এবং বর্তমান অবস্থা
অতএব সুফি আকিদা থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত যে, সুফি সুন্নীদের আকিদা সম্পূর্ণ কুরআন এবং সুন্নাহ বিরোধী। সুফিরা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল সাঃকে মুখে মুখে প্রেম করে। কিন্তু কাজের বেলায় অনুসরণ করে না। আর দাবি করে আশেকে রাসুল। এভাবে আল্লাহ্ এবং রাসুলের সাথে প্রেম করে কখনোই আল্লাহ্ এবং রাসুলের ভালোবাসা পাওয়া যাবে না। কেননা আল্লাহ্ এবং রাসুলকে ভালোবাসতে হয়। তাঁদের সাথে প্রেম করা শালীনতা বিরোধী। আল্লাহ্ আমাদের হেদায়েত দান করুন। আমিন।
কৃতজ্ঞতাঃ
মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২২ জানুয়ারি, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।