ইবাদত কবুল হওয়ার শর্তসমূহ |
ইবাদত কবুল হওয়ার শর্তসমূহ
মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ্ মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের উদ্দেশ্যে। একজন মানুষ পরিপূর্ণ ঈমান আনার পরে তার ইবাদত কবুল করা হয়। একজন মুমিন চাইলেই পুরোটা জীবনকে ইবাদতে পরিপূর্ণ করতে পারেন। ঈমান আনার পরবর্তীতে আরও বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা পূর্ণ করা ছাড়া আল্লাহ্ কারো ইবাদতই গ্রহণ করেন না। আসুন আমরা জানার চেষ্টা করি কী কী শর্ত পূরণে আল্লাহ্ ইবাদত কবুল করেন।
ঈমানঃ
আল্লাহর কাছে যেকোনো মানুষের আমল কবুল হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত হলো ঈমান।ঈমানদার হওয়া ছাড়া কারো কোনো আমলই কবুল হওয়ার নয়। যারা বেঈমান তারা যত ভালো কাজই বা আমল করুক না কেন তাদের আমল কখনোই আল্লাহর দরবারে কবুল হবেনা। আল্লাহ্ বলেন,
" যারা তাদের প্রতিপালককে অস্বীকার করে তাদের ‘আমালের দৃষ্টান্ত হল সেই ছাইয়ের মত যা ঝড়ের দিনে বাতাস প্রচন্ড বেগে উড়িয়ে নিয়ে যায়। নিজেদের উপার্জনের কিছুই তারা কাজে লাগাতে পারে না "। ইব্রাহীম [১৪:১৮]
অর্থাৎ কাফের মুরতাদ নাস্তিকের ইবাদত বা ভালো কাজের আমল কখনোই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু তাইনয় যারা মুখে ঈমান এনে পরিপূর্ণভাবে ঈমানদার হতে পারেনি তাদের আমলও কবুল হবে না। কেননা আল্লাহ্ বলেন,
" হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও "(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২০৮)
পরিপূর্ণভাবে ইসলামে অন্তর্ভূক্ত হওয়া মানে শির্ক বিদআত থেকে মুক্ত হওয়া। যারা ঈমান আনার পাশাপাশি শির্কে লিপ্ত হয় তাদের আমল কখনোই কবুল হওয়ার নয়। কেননা আল্লাহ্ তাদের ক্ষমা করেন না। আল্লাহ্ বলেন,
" নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে।" (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৪৮)
সুতরাং শির্ক করে কখনোই আল্লাহর কাছে ক্ষমাও পাওয়া যাবে না আমলও কবুল হবেনা।
আরও পড়ুন কুরআনের আলোকে মানুষ সৃষ্টির কারণ
ইলম বা জ্ঞানঃ
যেকোনো আমল কবুল হওয়ার জন্য ঐ আমলের সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। জ্ঞান ছাড়া কোনো আমল কবুল হওয়ার নয়। কেননা কেউ আল্লাহর কাছে দোয়া করলো, কিন্তু সে জানেই না সে কী সম্পর্কে দোয়া করছে। তাহলে কীভাবে সে ঐ দোয়ার থেকে ফজিলত লাভ করবে?
শুধু তাইনয় যেকোনো আমল করার আগে সেই আমল বা ইবাদতের ইসলামী গ্রহনযোগ্যতা কতটুকু তা জানা আবশ্যক। যে ইবাদতের স্বীকৃতি ইসলামে নেই সেই ইবাদতের কোনো বিনিময় পাওয়া যাবে না। বরং অস্বীকৃত ইবাদত করার কারণে গুনাহর ভাগিদার হবে। সুতরাং যেকোনো আমল করার আগে অবশ্যই সেই আমল সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অবশ্যক।
আরও পড়ুন শিরক কী? মানুষ কীভাবে শিরক করে
নিয়তঃ
যেকোনো আমলকে ইবাদতে রূপান্তর করতে হলে অবশ্যই সেই আমলের জন্য পরিশুদ্ধ নিয়ত করতে হবে। নিয়ত ছাড়া কোনো আমলের জন্যই আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়া যাবে না। যেকোনো ভালো কাজের জন্য আল্লাহর কাছে প্রতিদান চাইতে হলে অবশ্যই সেই কাজের জন্য নিয়ত থাকা আবশ্যক। পবিত্র হাদীসে এসেছে।
‘আলক্বামাহ ইব্নু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আমি ‘উমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। (৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩; মুসলিম ২৩/৪৫ হাঃ ১৯০৭, আহমাদ ১৬৮) ( আধুনিক প্রকাশনী- ১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১)সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১
সুতরাং আমলের নিয়ত ছাড়া কখনোই কারো আমল আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার যোগ্য নয়।
আরও পড়ুন সুফিবাদী সুন্নীদের আকিদা সমূহ
ইখলাসঃ
ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো ইখলাসের সহিত ইবাদত করা । ইখলাস অর্থ হলো একমাত্র আল্লাহকে খুশি ও সন্তুষ্ট করার জন্যে ইবাদত করা। ইখলাস হলো, ইবাদতের প্রাণ। প্রাণহীন দেহের যেমন মূল্য নেই, তেমনি ইখলাস ছাড়া ইবাদতেরও কোনো মূল্য নেই। । ইবাদত যদি মনের খেয়াল খুশি বা প্রবৃত্তির অনুসরণে হয় তাহলে তা ইখলাস পরিপন্থী।
আল্লাহ্ বলেন,
" তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।" (সূরাঃ বাইয়্যিনাহ, আয়াতঃ ৫)
ইখলাসের কিছু ভাগ রয়েছে।
ক) রিয়াঃ
ইবাদতের মধ্যে ইখলাসের প্রথম পদক্ষেপ হলো রিয়ামুক্ত হওয়া। অর্থাৎ লোক দেখানো ইবাদত ইখলাসের পরিপন্থী। রিয়াযুক্ত ইবাদতের প্রতিদান আল্লাহ্ কিয়ামতে দিবেন না। হাদীসে এসেছে,
মাহমুদ ইব্ন লাবিদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি তোমাদের ওপর যা ভয় করি তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে শির্কে আসগর (ছোট শির্ক)। তারা বললঃ হে আল্লাহর রাসূল শির্কে আসগর কি? তিনি বললেনঃ “রিয়া (লোক দেখানো আমল), আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তাদেরকে (রিয়াকারীদের) বলবেন, যখন মানুষকে তাদের আমলের বিনিময় দেয়া হবেঃ তোমরা তাদের কাছে যাও যাদেরকে তোমরা দুনিয়াতে দেখাতে, দেখ তাদের কাছে কোন প্রতিদান পাও কিনা”। [আহমদ, সহিহ হাদিসে কুদসি, হাদিস নং ৭ ]
সুতরাং ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য আমল রিয়ামুক্ত হওয়া একটি শর্ত।
খ) ধৈর্য্য বা সবরঃ
ইবাদত কবুল হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি শর্ত হলো ইবাদতে এবং ইবাদত পরবর্তীতে ধৈর্য্য ধারণ করা। যেকোনো আমল করার সময় অবশ্যই বান্দাকে ধৈর্য্য ধরে বিনয় চিত্তে ইবাদত পালন করতে হবে। সেইসাথে ইবাদত পরবর্তীতে (যা দুনিয়ার কোনো প্রয়োজনে করা হয়) তা কবুল হওয়ার জন্য ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ কোনো দোয়া করে তা কবুল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া বা অস্থিরতা প্রকাশ করা যাবে না। সম্পূর্ণ আল্লাহর উপর ভরসা রেখেই ইবাদত করতে হবে। আল্লাহ্ বলেন,
"হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।" (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৫৩)
সুতরাং ইবাদতে ধৈর্য্য ধরা তা কবুল হওয়ার একটি শর্ত।
আরও পড়ুন শুধু অলি আউলিয়ারাই আল্লাহর অলি নয়
গ) সুমআঃ
সুমআ অর্থ হলো বলে বেড়ানো। অর্থাৎ কোনো ইবাদত করে তা মানুষকে বলে বেড়ানো হচ্ছে ইখলাসের পরিপন্থী কাজ। যে ইবাদত গোপনে করা হয় শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য তা কখনোই কাউকে বলে বেড়ানো উচিত নয়। এতে ঐ ইবাদত কবুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। হাদীসে এসেছে,
রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি লোক-শোনানো ইবাদত করে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক-শোনানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৯৯)
সুতরাং কোনো ইবাদত বা আমল করে তা মানুষদের জানানো হলে তা কখনোই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না।
ঘ) পার্থিব উদ্দেশ্যে ইবাদতঃ
যে ইবাদত দুনিয়াবী লোভ লালসা বা দুনিয়াবী উপকার বা দুনিয়াবী স্বার্থের কারণে করা হবে তার বিনিময় কখনোই আল্লাহ্ কিয়ামতে দিবেন না। আল্লাহ্ বলেন,
"যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্যে সেই ফসল বাড়িয়ে দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে তার কিছু দিয়ে দেই এবং পরকালে তার কোন অংশ থাকবে না। "(সূরাঃ আশ-শুরা, আয়াতঃ ২০)
সুতরাং ইবাদত করা উচিত আখিরাতের উদ্দেশ্যে। যারা দুনিয়ার উদ্দেশ্যে ইবাদত করবে এবং এর বিনিময় কামনা করবে। তাদের আল্লাহ্ তার বিনিময় দুনিয়াতেই দিয়ে দিবেন। তারজন্য আখিরাতে আর কোনো প্রতিদান থাকবে না।
হালাল রিজিকঃ
ইবাদত কবুল হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো হালাল রিজিক। অর্থাৎ হালাল খাওয়া এবং হালাল উপার্জন করা। হারাম ভক্ষণকারীর কোনো ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।
রিজিক হালাল বা পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত, ব্যবহার্য, ভোগ্য বা উপভোগ্য বস্তু বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তা প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ বা মাধ্যম হালাল বা বৈধ হতে হবে। এ দুটির মধ্যে যেকোনো একটির কম হলে ওই রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে না।
হারাম বস্তু হালাল পন্থায় অর্জন করলেও তা যেমন হালাল হবে না, অনুরূপভাবে হালাল বস্তু হারাম পন্থায় লাভ করলে তাও হালাল বা বৈধ হবে না।
পবিত্র হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
দীর্ঘ সফরে ক্লান্ত, এলোমেলোকেশি এক লোক আকাশ পানে হাত দারাজ করে দোয়া করে হে প্রভু!হে প্রতিপালক!অথচ তার পানাহার হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবিকা ও হারাম। এমতাবস্থায় কিভাবে তার দোয়া কবুল হবে। (জামে আত তিরমিজি:২৯৮৯)
সুতরাং হালাল উপার্জন করা ইবাদতের অন্যতম একটি অংশ।
আরও পড়ুন বিশ্বকাপ ফুটবল এবং আমাদের ঈমান আকিদা
মা বাবার অবাধ্য না হওয়াঃ
ইবাদত কবুল হওয়ার আরেকটি অন্যতম শর্ত হলো মা বাবার বাধ্য সন্তান হওয়া। যে সন্তান তার পিতামাতার অবাধ্য হয়, সেই সন্তানের কোনো ইবাদত আল্লাহ্ কবুল করেন না। পিতা-মাতার মর্যাদা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা নির্দেশ প্রদান করে বলেছেন,
‘আমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় করো।’ (সূরা লোকমান: ১৪)
পবিত্র হাদীসে পিতা-মাতার ব্যাপারে অসংখ্য হাদীস এসেছে।
হজরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন,
‘তিন ব্যক্তি এমন রয়েছে, যাদের ফরজ ও নফল কোনো ইবাদতই আল্লাহতায়ালা কবুল করেন না। তারা হলো- পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি, উপকার করে খোঁটা দানকারী এবং তাকদিরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী"। -কিতাবুস সুন্নাহ
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত,
" চার ব্যক্তি এমন রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহতায়ালা জান্নাত দান না করলেও তা সঙ্গত হবে। তারা হলো- মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি, সুদখোর, এতিমের সম্পদ গ্রাসকারী এবং পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি"। -মুসতাদরাকে হাকেম
হজরত সাওবান (রা.) বর্ণনা করেন,
‘তিনটি বিষয় এমন- বর্তমানে যেগুলোর কোনো আমলই ফলদায়ক নয়। আর তাহলো- আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও জিহাদ চলাকালে যুদ্ধক্ষেত্রে পৃষ্ঠপ্রদর্শন"। -তাবারানি
সুতরাং ইবাদত করার আগে অবশ্যই পিতামাতার বাধ্যতা করতে হবে। পিতামাতার অবাধ্য হলে সেই সন্তানের ইবাদত কখনোই আল্লাহ্ কবুল করেন না।
রাসুলের ত্বরিকায় ইবাদতঃ
ইবাদত কবুলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, বান্দা যে ইবাদত বা আমল করবে তা যেন রাসুলের ত্বরিকায় করা হয়। অর্থাৎ রাসুল যে ইবাদত যেভাবে করতে বলেছেন সেই ইবাদত সেইভাবে করাই হচ্ছে রাসুলের ত্বরিকা। মোটকথা সুন্নত পদ্ধতিতে ইবাদত করা। ইবাদত বা আমল কবুল হওয়ার জন্য প্রিয়নবি (সাঃ) এর অনুসরণ ও অনুকরণ জরুরি। কোনো প্রকর মনগড়া পদ্ধতিতে ইবাদত করলে তা আল্লাহ্ কবুল করবেন না।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ বলেন,
" রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো আর যা থেকে তিনি তোমাদের নিষেধ করেছেন তা হতে বিরত থাকো"। (সূরা হাশর :৭)
হাদিস এসেছে রাসুলুল্লাহ বলেন,
" যে ব্যাক্তি এমন আমল করলো যার মধ্যে আমাদের নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত বলে গণ্য হবে। (সহিহ মুসলিম: ৪৩৮৫)
নবিজি (সাঃ) প্রতিটি আমলের শুধু ত্বরিকাই বলে দেননি বরং প্র্যাক্টিক্যালী শিক্ষা ও দিয়ে গেছেন। রাসূল (সা.)একটা ইবাদত করতেন আর বলতেন আমি যেভাবে করি তোমরা ও সেভাবে করো। যেমন সালাত সম্পর্কে তাঁর বাণী,
" তোমরা আমাকে যেভাবে নামাজ পড়তে দেখো সেভাবে নামাজ পড়ো"। (সহিহ বুখারি:৭২৪৬)
রাসুলের ত্বরিকা ব্যতীত বিদআতের অনুসরণে ইবাদত করলে তা কখনোই আল্লাহ্ কবুল করবে না। শুধু তাইনয় বিদআতের অনুসরণের ব্যাপারে রাসুল জাহান্নামের হুশিয়ারি দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে,
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও ছালাতের পর বলেন, ‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হ’ল দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি (বিদআত) এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হ’ল ভ্রষ্টতা’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)। আর নাসাঈতে রয়েছে, ‘প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম’ (নাসাঈ হা/১৫৭৮)।
সুতরাং বিদআতের অনুসরণ করা যাবে না। কেননা বিদআতের অনুসারীরা জাহান্নামে পতিত। শুধু তাইনয় যারা বিদআত করে তারা রাসুলের সুপারিশ থেকেও বঞ্চিত হবে। হাদীসে এসেছে,
আবু হাসেম(রাঃ) হতে বর্ণিত-
" তিনি বলেন, আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, “আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে, আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন: তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো: দূর হয়ে যা, দূর হয়ে যা” (সহীহ মুসলিম-৪২৪৩)
অতএব রাসুলের সুন্নাহর অনুসরণে ইবাদত না করে বিদআতের অনুসরণে ইবাদত করলে তা কখনোই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, ঈমান আনলেই কারো ইবাদত কবুল হওয়ার গ্যারান্টি নেই, যদি ঈমানের সাথে আমল করার অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়াদি ঠিক না থাকে। সুতরাং ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য সকল শর্ত পূরণ করা আবশ্যক।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
অলংকার, চট্টগ্রাম।