সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহ্ মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য অসংখ্য নবী রাসুল পাঠিয়েছেন। তাঁরা প্রতিটি জাতিকে আল্লাহর দিকে আহবান করেছিলেন। প্রতিটি জাতির অধিকাংশ মানুষই আল্লাহ্তে বিশ্বাস স্থাপন করেনি। যারা আল্লাহ্তে বিশ্বাস করেনি তারাই ছিলো পথভ্রষ্ট। পথভ্রষ্ট এইসব জাতি পরবর্তীতে ধ্বংসের মুখে পতিত হয়ে বিনাশ হয়ে গিয়েছিল।
পথভ্রষ্ট কারাঃ
ইসলামের দৃষ্টিতে যারা আল্লাহর হিদায়েতের পরিবর্তে গোমরাহীকে পছন্দ করে। কুরআন সুন্নাহর পরিবর্তে ধর্মীয় নিজস্ব পদ্ধতি ও আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্যের উপাসনা করে, তারাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট। সোজা কথায় যারা আল্লাহ্কে ছেড়ে অন্যান্য ইলাহার উপাসনা করে। অথবা আল্লাহ্কে স্বীকার করে তাঁর পাশাপাশি অন্যান্যকেও আল্লাহর মর্যাদায় আসীন করে, তারাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট।
সেইসাথে যারা ঈমান আনার পরও অধিকাংশ মুসলমান শয়তানের প্ররোচনায় নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আল্লাহ্ বিমুখ হয়ে যায়। যারাই আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুলের শিক্ষা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে আল্লাহ্ বিমুখ হয়ে যায় তারাই প্রকৃতভাবে পথভ্রষ্ট। আজ আমরা জানবো কীভাবে এবং কারা ঈমান আনার পরও অধিকাংশ মানুষ পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।
ঈমান না আনা পথভ্রষ্টতাঃ
যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে না তারা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় পতিত। অর্থাৎ যাদের ঈমান আনা নসিবে নেই তারা অবশ্যই পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ বলেন,
" হে ঈমানদারগণ, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রসূলও তাঁর কিতাবের উপর, যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রসূলের উপর এবং সেসমস্ত কিতাবের উপর, যেগুলো নাযিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। যে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামতদিনের উপর বিশ্বাস করবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে " (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১৩৬)
উপরোক্ত আয়াত থেকে এটাও প্রমাণিত যে, যারা ঈমানের দাবি করেও আল্লাহর কিতাবে পরিপূর্ণ বিশ্বাস নেই তারাও পথভ্রষ্ট। এইজাতীয় মুসলমান হচ্ছে সুফিবাদীরা। তারা পবিত্র কুরআনের কিছু অংশ মানে কিছু অংশ মানে না। সুফিরা তাদের সুবিধার আয়াত গুলো প্রকাশ্যে স্বীকার করে। কিন্তু যেসব আয়াত তাদের বিরুদ্ধে যায় তা স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়। এরাও সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট।
মুনাফিকেরা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টঃ
যারা ঈমান আনার পরও সত্যিকারভাবে ইসলামে প্রবেশ করতে পারেনি তারা হচ্ছে মুনাফিক শ্রেণীভুক্ত। মুনাফিক কারা ও তাদের পরিচয় কী, এই বিষয়ে বিস্তারিত জানার দরকার আছে। যা এখানে সম্ভব নয়। তবে তাদের সম্পর্কে কুরআন সুন্নাহর সিদ্ধান্ত হলো তারা পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ বলেন,
" আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবর্তীর্ণ হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে শয়তানের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, যাতে তারা ওকে মান্য না করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায় "। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৬০)
উপরোক্ত আয়াতে বর্ণিত মুসলিম নামধারীরা মুখে নিজেদের মুমিন দাবি করে এবং সমাজে সেইমতো নিজেদের উপস্থাপন করে। কিন্তু অন্তরে আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস এবং ভালোবাসা পোষণ করে না। তারা প্রবৃত্তির এবং তাগুতের অনুসারী হয়। অর্থাৎ আল্লাহর আইন কানুনের পরিবর্তে মানবসৃষ্ট আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং বিশ্বাস বেশী।
তারা নিজেদের যেকোনো বিচার ফয়সালা নিয়ে ইসলামের দিকে না এসে ইসলাম বিদ্বেসীদের দিকে নিয়ে যেতে পছন্দ করে। যেমন বর্তমান গনতন্ত্রের যুগে ইসলামী আইন তারা অচল করে দিয়েছে। সুতরাং যারা ইসলামের পরিবর্তে গনতন্ত্রকে পছন্দের জায়গায় স্থান দেয় তারা। সুতরাং আল্লাহর বিধানে তারা পথভ্রষ্ট। অতএব তারা শাস্তি প্রাপ্তদের তালিকাভুক্ত।
মুনাফিকদের সাহায্যকারীও পথভ্রষ্টঃ
মুনাফিকদের সাহায্যকারীরাও পথভ্রষ্ট বলে আল্লাহ্ ঘোষণা দিয়েছেন। যারা মুনাফিক তারা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে। সুতরাং তাদের ব্যাপারে কখনোই দোদুল্যমনা মানসিকতা রাখা যাবে না। আল্লাহ্ নিজেই যখন তাদের পথভ্রষ্ট আখ্যা দিয়েছেন। তখন তাদের ব্যাপরে সন্দিহান হওয়ার অবকাশ নেই। আমরা যদি মুনাফিকদের ব্যাপারে নম্রতা ভাব প্রকাশ তাহলে তারা আমাদেরও পথভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যাবে। আল্লাহ্ বলেন,
" অতঃপর তোমাদের কি হল যে, মুনাফিকদের সম্পর্কে তোমরা দু’দল হয়ে গেলে? অথচ আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ঘুরিয়ে দিয়েছেন তাদের মন্দ কাজের কারনে! তোমরা কি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে চাও, যাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেছেন? আল্লাহ যাকে পথভ্রান্ত করেন, তুমি তার জন্য কোন পথ পাবে না"। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৮৮)
শয়তানের অনুসারীরা পথভ্রষ্টঃ
শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু। সুতরাং যারাই শয়তানের প্ররোচনায় তার অনুসারী ও বন্ধুতে পরিনত হবে। তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর শাস্তি। এবং তারাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট বিপদগামী। আল্লাহ্ বলেন,
"(শয়তান বলে) তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়"। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১১৯)
অর্থাৎ শয়তান বিভিন্ন রূপে মানুষের কাছে এসে তাকে দিয়ে বিভিন্ন আল্লাহ্ বিরোধী অপকর্ম করাতে চেষ্টা করবে। সুতরাং শয়তান যাদের বন্ধু হবে কিংবা শয়তানকে যারা বন্ধু বানাবে তাদের উভয়ই পথভ্রষ্ট এবং উভয়েরই শাস্তি প্রযোজ্য। আল্লাহ্ বলেন,
" আমি তোমাকে (শয়তানকে) আর তাদের (অর্থাৎ মানুষদের) মধ্যে যারা তোমাকে (শয়তানকে অনুসরণ করবে তাদের সব্বাইকে দিয়ে অবশ্যই জাহান্নাম পূর্ণ করব"। ( সূরা ছোয়াদ ৩৮:৮৫)
সুতরাং শয়তানের সাথে যাদেরই সম্পর্ক থাকবে তারাই প্রকাশ্যে ক্ষতিতে নিমজ্জিত হয়ে পথভ্রষ্ট হবে। আল্লাহ্ বলেন,
" পক্ষান্তরে যারা শয়তানের ভাই, তাদেরকে সে ক্রমাগত পথভ্রষ্ট তার দিকে নিয়ে যায় অতঃপর তাতে কোন কমতি করে না"। (সূরাঃ আল আ'রাফ, আয়াতঃ ২০২)
আল্লাহ্ থেকে নিরাশকারীরা পথভ্রষ্টঃ
ঈমান আনার পরও অনেকে পরিপূর্ণ ঈমানদার না হওয়ার কারণে বিপদে আপদে দুঃখ দূর্দশায় আল্লাহ্ থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে। যারাই আল্লাহ্ থেকে নিরাশ হয় তারা কখনোই সঠিক পথে থাকে না। বরং তারাই পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ বলেন,
" তিনি বললেনঃ পালনকর্তার রহমত থেকে পথভ্রষ্টরা ছাড়া কে নিরাশ হয় "? (সূরাঃ হিজর, আয়াতঃ ৫৬)
সুতরাং কখনোই কোনো অবস্থাতেই নিরাশ হওয়া যাবে না। কেননা কাফিররাই আল্লাহ্ থেকে নিরাশ হয়। আল্লাহ্ বলেন,
" বৎসগণ! যাও, ইউসুফ ও তার ভাইকে তালাশ কর এবং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত থেকে কাফের সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য কেউ নিরাশ হয় না"। (সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ৮৭)
উপরোক্ত আয়াতের বিশ্লেষণ দ্বারা উপমহাদেশের সুফিবাদীরা পথভ্রষ্ট একটি দল। কেননা তাদের শিক্ষা হচ্ছে কোনো মানুষ যদি পাপ করতে করতে পাপী হয়ে যায়। তাহলে আল্লাহ্ আর তাদের ক্ষমা করেন না। (নাঊজুবিল্লাহ) আর আল্লাহর শিক্ষা হচ্ছে যেকেউ তাঁর নিজের উপর জুলুম তথা পাপ করেছে, সে যেন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়। আল্লাহ্ বলেন,
" বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"। (সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ৫৩)
সুতরাং এ থেকে প্রমাণিত হয় যে সুফিরা তাদের অনুসারীদের পাপের ক্ষমা চাওয়ার জন্য পীরের কাছে যাওয়ার যে ত্বরিকা আবিষ্কার করেছে, তা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী আকিদা।
কুকর্মে উচ্ছ্বসিতরা পথভ্রষ্টঃ
কিছু মানুষ আছে যারা আল্লাহর ধার ধারে না। হোক তারা কাফির কিংবা ঈমানের দাবিদার। তারা তাদের দুনিয়াবী কাজকর্ম ভোগ বিলাস নিয়েই মত্ত থাকে। আর এইজাতীয় লোক যে নিজের ইচ্ছায় এমন করছে তা নয়। যারাই নিজেদের কুকর্মে উৎফুল্ল উচ্ছ্বসিত, তাদের আল্লাহ্ আরো কুকর্ম করার সুযোগ সুবিধা বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ্ বলেন,
" আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন। তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। আর আল্লাহ তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে মত্ত অবস্তায় ছেড়ে দিয়ে রাখেন"। (সূরাঃ আল আ'রাফ, আয়াতঃ ১৮৬)
অর্থাৎ আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের মতোই চলতে সাহায্য করেন। যারা আল্লাহ্কেই মানে না বা যাদের আল্লাহ্ এবং তাঁর বিধান নিয়ে চিন্তা চেতনা নেই তাদের জন্য আল্লাহ্ নিজেই একটি শয়তান নিয়োগ করে দেন। আল্লাহ্ বলেন,
" যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে এক শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী"। (সূরাঃ যুখরুফ, আয়াতঃ ৩৬)
অতএব যারা আল্লাহ্ বিমুখ তাদের পিছনে আল্লাহ্ নিজেই একটি শয়তান নিয়োজিত করে। যে শয়তান তাকে আর ভালো হওয়ার সুযোগ দেয়না যতক্ষণ আল্লাহ্ চান। সেই শয়তানই হয় তার জীবনের একান্ত সঙ্গী।
নিজের অমঙ্গলকারীরা পথভ্রষ্টঃ
যারা ঈমান আনে তারা নিজের কল্যাণের জন্যই ঈমান আনে। অর্থাৎ তাদের ঈমান তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্তিতে পৌঁছে দিবে। কিন্তু যারা নিজেদের অমঙ্গল করবে অর্থাৎ ঈমান না এনে বা ঈমান আনার পরও মুনাফিকিতে লিপ্ত থেকে অন্যকেও পাপে উৎসাহিত করলে তাদেরকে পেতে হবে আযাব। এবং তারা নিজেরাসহ যাদেরই তাদের দলে টেনেছিলো তাদের পাপও সাথে যুক্ত হবে। আল্লাহ্ বলেন,
"যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথ ভ্রষ্ট হয়"। (সূরাঃ বনী ইসরাঈল, আয়াতঃ ১৫)
সুতরাং যে নিজের অমঙ্গল চাইবে সে নিজ থেকেই পাপের পথে পরিচালিত হয়ে পথভ্রষ্ট হবে। আল্লাহ্ বলেন,
" আমি আপনার প্রতি সত্য ধর্মসহ কিতাব নাযিল করেছি মানুষের কল্যাণকল্পে। অতঃপর যে সৎপথে আসে, সে নিজের কল্যাণের জন্যেই আসে, আর যে পথভ্রষ্ট হয়, সে নিজেরই অনিষ্টের জন্যে পথভ্রষ্ট হয়। আপনি তাদের জন্যে দায়ী নন"। (সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ৪১)
অতএব যারা নিজেদের কল্যাণ কামনা করে না তারাই আল্লাহ্ বিমুখ হয়ে তাঁর রোষানলে পড়ে নিজেদের ক্ষতি সাধন করে।
সালাত বিনষ্ট ও কুপ্রবৃত্তিকারীরা পথভ্রষ্টঃ
বহু ঈমানের দাবিদার রয়েছে যারা মুখে বলে তারা ঈমান এনেছে। কিন্তু তারা কখনোই সালাতের নিকটবর্তী নয়। অথবা লোকদেখানো সালাত আদায়কারী। কিংবা সালাতে অলসতাকারী। যাদের সুস্পষ্ট ভাষায় বলা হয় মুনাফিক। এরা সরাসরি পথভ্রষ্ট দলের অন্তর্ভূক্ত। শুধু তাইনয় যারা কুপ্রবৃত্তির বা প্রবৃত্তিকে প্রাধান্য দিয়ে জীবনযাপন করে তারাও পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ বলেন,
" অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে"। (সূরাঃ মারইয়াম, আয়াতঃ ৫৯)
আল্লাহ্ অন্য আয়াতে বলেন,
"অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর, যারা তাদের নামায সম্বন্ধে বে-খবর; "(সূরাঃ মাঊন, আয়াতঃ ৪, ৫)
অর্থাৎ যারাই সালাতকে অস্বীকার করেছে বিনষ্ট করেছে কিংবা গাফিলতি করেছে, তারা সকলেই পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিতভাবে। আর আমাদের উপমহাদেশের যারা সুফিবাদী রয়েছেন। তারা সরাসরি সালাতকে অস্বীকার। তাদের মতো যার ইয়াকীন এসে যায় তার সালাত নেই। সালাত মানেই সিজদা। সুতরাং তারা তাদের পীরকে সিজদা করেই সালাত আদায় করে। সাধারণের সালাত পাঁচ ওয়াক্ত। সুফিদের সালাত প্রতিনিয়ত চব্বিশ ঘন্টা চলমান ইত্যাদি আরো নানান কুফরি আকিদা।
সুফিদের এমন আকিদা সুস্পষ্ট গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা এইসব কুফুরি আকিদা পোষণ করার পরও নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দেয় এবং দাবি করে।
কুরআন অস্বীকারকারীরা পথভ্রষ্টঃ
যারা কুরআনকে অস্বীকার করে তারা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। শুধু তাইনয় ঈমান আনার পরও যারা গোমরাহী, অজ্ঞাতা ও মুনাফিকিতে লিপ্ত থেকে কুরআনকে স্বীকার করে না তারাও পথভ্রষ্ট। অর্থাৎ মুখে বা জন্মগতভাবে ঈমান আনলেও কুরআনকে বা কুরআনের আইনকানুন বিচার বিশ্লেষণ কিছুই মানে না তারা পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ বলেন,
"আপনি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে সৎপথে আনতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। অতএব, তারাই আজ্ঞাবহ"। (সূরাঃ নমল, আয়াতঃ ৮১)
যারা সংকীর্ণতা অজ্ঞাতা বা অন্ধবিশ্বাসের কারণে কুরআনকে স্বীকার করে না তারা হচ্ছে প্রকৃত অর্থে অন্ধ। যেমন উপমহাদেশের সুফিবাদীরা। তাদের কুরআন হাদিস থেকে হাজারো দলিল নিদর্শন দিলেও তারা কখনোই তা মানতে নারাজ। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের অনুসরণেই ইসলাম পালন করে। সুফিদের আকিদা সমূহ সরাসরি ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। সুতরাং তারও পথভ্রষ্টতায় পর্যবসিত।
প্রবৃত্তির অনুসারীরা পথভ্রষ্টঃ
যারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণে দ্বীন দুনিয়া পালন করে তারা পথভ্রষ্টতায় পতিত। অর্থাৎ যারা কুরআন সুন্নাহর বাইরে কিংবা কুরআন সুন্নাহকে জেনেও তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো জীবনযাপন করে তারা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ প্রবৃত্তির অনুসারীদের অন্তরে মোহর এঁটে দেন। তারা চোখে দেখেও দেখে না কানে শুনেও শোনে না। আল্লাহ্ বলেন,
" আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশীকে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না?" (সূরাঃ আল জাসিয়া, আয়াতঃ ২৩)
অর্থাৎ যাদের সামনে কুরআন সুন্নাহর সুস্পষ্ট প্রমাণাদি থাকার পরও নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণে যেটা ভালো লাগে সেটা পালন করে তারা পথভ্রষ্টতায় পতিত। আল্লাহ্ নিজেই এদের সুপথ দেখান না। ফলে তাদের জ্ঞানে আর সঠিক বিষয় অনুধাবন করতে পারে না।
এমনও অনেকে আছে যারা মৌখিক ঈমানদার। কিন্তু তারা কখনোই সঠিক ইসলামের পথে চলে না। তারা তাদের মতো করেই জীবনযাপন এবং ধর্ম পালন করে। বিশেষকরে সুফি শ্রেণীরা, যারা তাদের পূর্বপুরুষদের অনুসরণে ধর্ম পালন করে প্রবৃত্তিপরায়ণ হয়েছে। তারা আল্লাহর হিদায়াত কখনোই পাবে না। কেননা তারা কুরআনের আয়াত স্বীকার করে না। সুস্পষ্ট দলিল মেনে না নেওয়াও একপ্রকারের প্রবৃত্তির অনুসরণ। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন,
" অতঃপর তারা যদি (হে রাসুল) আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? " (সূরাঃ আল কাসাস, আয়াতঃ ৫০)
জ্ঞানহীনরা পথভ্রষ্টঃ
যারা জ্ঞানহীন তারা তাদের অজ্ঞতার কারণে পথভ্রষ্ট। অর্থাৎ এই অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতার কারণে তারা নিজেদের বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে সক্ষম হয় না এবং নিজেদের প্রবৃত্তি ও বাতিল মতের অনুসারী হয়ে থাকে। এই জ্ঞানহীনতা তাদের পথভ্রষ্টতার শেষ সীমান্তে পৌঁছে দেয়। আল্লাহ্ বলেন,
" বরং যারা বে-ইনসাফ, তারা অজ্ঞানতাবশতঃ তাদের খেয়াল-খূশীর অনুসরণ করে থাকে। অতএব, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কে বোঝাবে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই"। (সূরাঃ আর-রূম, আয়াতঃ ২৯)
জেনে রাখা দরকার যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে হিদায়াত তাদেরই ভাগ্যে জোটে যারা হিদায়াত অনুসন্ধানী ও তার আকাঙ্ক্ষী হয়। পক্ষান্তরে যারা তার সত্য অনুসন্ধিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়, তাকে ভ্রষ্টতার মাঝে ছেড়ে দেওয়া হয়।
যেমন উপমহাদেশে যারা সুফিবাদের অনুসারী, তারা তাদের পীর আউলিয়াদের কথা ছাড়া আর কোনো কথাই শুনতে চায় না। তারা নিজেদের নূন্যতম জ্ঞান বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে জানার চেষ্টা করে না যে, কোনটা সঠিক কোনটি ভুল। তাদের হাজারো কুরআন হাদিসের দলিল দেওয়া হলেও তারা তা মানতে চায় না। এরাই সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত। আল্লাহ্ বলেন,
"আপনি অন্ধদেরও তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে পথ দেখাতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরই শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। কারন তারা মুসলমান"। (সূরাঃ আর-রূম, আয়াতঃ ৫৩)
অতএব যারা কুরআন হাদিসের জ্ঞান দ্বারা ইসলামকে জানতে চাইবে না তারা হচ্ছে অন্ধ। কেননা ইসলামের মূল ভিত্তিই হচ্ছে কুরআন এবং সুন্নাহ। সুতরাং যেকেউ নিজেকে মুমিন দাবি করলে তাকে অবশ্যই কুরআন হাদিসের নির্দেশ মেনে চলতে হবে। এইক্ষেত্রে সুফি অনুসারীরা কখনোই কুরআন হাদীস মানতে চায় না। যা তাদের পথভ্রষ্টতার লক্ষণ।
কুরআন সুন্নাহর বিরোধীরা পথভ্রষ্টঃ
যারা আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুলের বিরোধী তারা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট। অর্থাৎ আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুলের আদেশ নিষেধ নির্দেশের বিরুদ্ধে যাওয়া মানেই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা। আল্লাহ্ বলেন,
" আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্ট তায় পতিত হয়"। (সূরাঃ আল আহযাব, আয়াতঃ ৩৬)
উপরোক্ত আয়াতের আলোকে সুফিবাদ স্পষ্টতই পথভ্রষ্ট একটি দল বা মতবাদ। কেননা তাদের প্রতিটি ঈমান আকিদা সুস্পষ্ট কুরআন সুন্নাহ তথা আল্লাহ্ এবং রাসুল বিরোধী। যদি তারা নিজেদের ঈমানদার দাবি করে তাহলে তাদের আগে আল্লাহ্ এবং রাসুলের উপর সহীহ্ আকিদার ঈমান আনতে হবে।তা না হলে তারা পথভ্রষ্ট হিসাবে বিবেচিত হবে।
অন্ধ অনুসারীরা পথভ্রষ্টঃ
যারা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল ব্যতীত অন্যদের অন্ধ অনুসরণ করবে তারা নিশ্চিতভাবেই পথভ্রষ্ট হবে। আল্লাহ্ বলেন,
" (যারা নেতাদের অন্ধ অনুসরণ করে জাহান্নামে পতিত) তারা আরও বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের (পীর আউলিয়াদের) নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল"। (সূরাঃ আল আহযাব, আয়াতঃ ৬৭)
অর্থাৎ যারা নেতাদের কথা শুনে ঈমান আনে না। কিংবা যারা ঈমান আনলেও সঠিক কুরআন হাদিসের অনুসরণ না করে তাদের পীর আউলিয়াদের কথাকেই ইসলাম মনে করে দ্বীন দুনিয়া পালন করে তারা স্পষ্টতই পথভ্রষ্ট। আমাদের উপমহাদেশে অধিকাংশেরও বেশী লোক আজ অন্ধ অনুসরণে ধর্মকর্ম পালন করে। তাদের যতই সঠিক ইসলামের কথা বলা হোক না কেন। তারা কখনোই তাদের বড় নেতা বা বুজুর্গের দেখানো পথ ছাড়া অন্য কোনো কিছুই মানতে চায় না। এরাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট।
মিথ্যাবাদীরা পথভ্রষ্টঃ
যারা মিথ্যাবাদী তারা কখনোই সুপথ প্রাপ্ত হয় না। বিশেষকরে যারা আল্লাহ্ সম্পর্কে মিথ্যা বলে তারা সুনিশ্চিতভাবে পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ বলেন,
" সে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে, না হয় সে উম্মাদ এবং যারা পরকালে অবিশ্বাসী, তারা আযাবে ও ঘোর পথভ্রষ্টতায় পতিত আছে "। (সূরাঃ সাবা, আয়াতঃ ৮)
সুফিদের আল্লাহ্ সম্পর্কিত বিভিন্ন (ফানাফিল্লাহ, বাকিবিল্লাহ, ওয়াহদাতুল ওজুদ, আল্লাহ্ নিরাকার, মুমিনের কলবে আল্লাহর আরশ ইত্যাদি) মিথ্যা আকিদা রয়েছে। যা কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। সুতরাং তারা মিথ্যাবাদী হওয়ার কারণে উপরোক্ত আয়াতের আলোকে তারা পথভ্রষ্ট। এই পথভ্রষ্টতা তাদের জাহান্নামের আগুনের দিকে ধাবিত করে।
মন্দকে মন্দ না বলাও পথভ্রষ্টতাঃ
যারা মন্দকে মন্দ মনে করে তারা তাদের সমান নয়। যারা মন্দকে মন্দ মনে করে না। অর্থাৎ যারা স্পষ্ট প্রমাণাদি দেখা এবং পাওয়ার পরও খারাপকে খারাপ বলে না। কিংবা মন্দ জানার পরও সেটা আসলেই মন্দ কিনা তা জানার চেষ্টাও করে না তারা কখনোই সুপথ পায় না। সুতরাং তারা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ বলেন,
" যাকে মন্দকর্ম শোভনীয় করে দেখানো হয়, সে তাকে উত্তম মনে করে, সে কি সমান যে মন্দকে মন্দ মনে করে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচছা সৎপথ প্রদর্শন করেন"। (সূরাঃ ফাতির, আয়াতঃ ৮)
উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে বর্তমান সুফিবাদের অনুসারীও পথভ্রষ্ট। কেননা তাদের শির্কি কুফরি আকিদা সম্পর্কে হাজার দলিল দেওয়ার পরও তারা তাদের ঐসব অশ্লীলতাকে (নারী পুরুষদের অবাধ মেলামেশায় নাচ গান, মহিলাদের মাজার জিয়ারত, ওরসের নামে বেহেল্লাপনা, করব সিজদা ইত্যাদিকে) মেনে নেয়। তারা জানে যে এইসব ইসলামী সংস্কৃতি নয় এবং এইসব ইসলামে জায়েজও নয়। তবুও তারা তাদের অনুসারীদের এই ব্যাপারে ছাড় দেয় এবং উৎসাহ দেয়। এইসব কারণে তারাও পথভ্রষ্ট।
সত্য আহবানে সাড়া না দেওয়াঃ
পৃথিবীতে যুগে যুগে আল্লাহ্ নবী রাসুল পাঠিয়েছেন তাঁর বান্দাদের সঠিক পথে চলার জন্য। সেইসব সকল জাতি গোষ্ঠীর কিছু অংশ ছাড়া অধিকাংশই কখনো নবী রাসুলদের আহবানে সাড়া দেয়নি। যারাই আল্লাহর আহবানে সাড়া দেয়নি তারাই হয়েছে পথভ্রষ্ট এবং সেইসাথে নিশ্চিহ্ন।
ঠিক একইভাবে আখেরী নবীর উম্মতদের মাঝেও এমন কিছু দ্বাঈ আছেন এবং থাকবেন যারা মানুষকে সত্যের দিকে তথা কুরআন সুন্নাহর দিকে আহবান করবে। তারপরও অধিকাংশ মানুষ সঠিক ঈমান আনে না এবং আনবে না। যারাই সত্যের পথে তথা আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর কথায় সাড়া দিবে না, তারাই হবে পথভ্রষ্ট দলের অধিকারী। আল্লাহ্ বলেন,
" আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে আহবানকারীর কথা মানবে না, সে পৃথিবীতে আল্লাহকে অপারক করতে পারবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত তার কোন সাহায্যকারী থাকবে না। এ ধরনের লোকই প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত"। (সূরাঃ আল আহক্বাফ, আয়াতঃ ৩২)
উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে আমাদের উপমহাদেশে অধিকাংশ মানুষই আজ পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত। উপমহাদেশের সুফিবাদীদের জঘন্য আকিদা থেকে তাদের যতই আল্লাহ্ এবং রাসুলের দিকে আহ্বান করা হয়না কেন, তারা কখনোই সত্য জানতে এবং মানতে চায় না। যা আল্লাহর আয়াতের ভিত্তিতে পথভ্রষ্টতার শামিল।
যারা উপদেশ শোনে নাঃ
যারাই আল্লাহর উপদেশ শুনে মানার চেষ্টা করে না তারাই পথভ্রষ্ট। উপদেশ সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন,
" যখনই তাদের কাছে রহমান এর কোন নতুন উপদেশ আসে, তখনই তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়"। (সূরাঃ আশ-শো'আরা, আয়াতঃ ৫)
অর্থাৎ যারা পথভ্রষ্ট তারা আল্লাহর কোনো উপদেশই না শুনে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অথবা তারা তা এমনভাবে শোনে যেন শোনা আর না শোনা একই। এই বিষয়ে আল্লাহ্ বলেন,
" তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে যখনই কোন নতুন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শ্রবণ করে"। (সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ২)
একইভাবে অধিকাংশ মানুষের কাছে উপদেশ আসলেও তারা শয়তানের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে উপদেশ গ্রহণ করে না। আল্লাহ্ বলেন,
" আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছিল। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়"। (সূরাঃ আল-ফুরকান, আয়াতঃ ২৯)
সুনিশ্চিতভাবে শয়তান মানুষের শত্রু। তারা মানুষকে উপদেশ গ্রহণ নিরুৎসাহিত এবং বাঁধা দেয় বিভিন্ন প্রলোভনে। কিন্তু অধিকাংশ জাতিই উপদেশ গ্রহণ না করার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। আল্লাহ্ বলেন,
" আর তোমরা অল্পই উপদেশ গ্রহণ কর। অনেক জনপদকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি"। (সূরাঃ আল আ'রাফ, আয়াতঃ ৪)
সুতরাং সঠিক পথে চলে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করতে চাইলে অবশ্যই আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের উপদেশ মেনে চলতে হবে। যারাই উপদেশ মানবে না তারাই পথভ্রষ্টতায় পর্যবসিত হবে।
যেমন সুফিবাদীরা কখনোই কুরআন হাদিসের উপদেশ মানতে চায় না। তারা সর্বদা তাদের পূর্বপুরুষদের অনুসরণেই ধর্মকর্ম করে। এটাকেই তারা সফলতা মনে করে। কিন্তু আল্লাহর বিধানের হিসাবে তারা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট।
কবিদের অনুসারীরা পথভ্রষ্টঃ
দুনিয়ায় এমন এমন কবি আছেন যাদের কথার মাধুর্য্যে সুরের মূর্ছনায় তারা সত্যকে মিথ্যায় পরিনত করতে পারে। আবার মিথ্যাকে সত্য বলে উপস্থাপন করে বিশ্বাসযোগ্য বলে প্রমাণিত করে। আল্লাহ্ এইজাতীয় কবির অনুসারীদের পথভ্রষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা এইসব কবিদের অনুসারীরা কখনোই সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই তাদের উপর বিশ্বাস রাখে। তাই আল্লাহ্ বলেন,
" বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের অনুসরণ করে"। (সূরাঃ আশ-শো'আরা, আয়াতঃ ২২৪)
অর্থাৎ যারা সত্য মিথ্যা নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকে তারাই কবিদের অনুসরণ করে। আমাদের উপমহাদেশে যারা সুফিবাদের অনুসারী আছে, তারাও এইজাতীয় কবিদের কথা ও গানে বিভ্রান্ত হয়ে ধর্মীয় ঈমান আকিদা পালন করে।
সুফি কবি গায়কেরা তাদের পীর অলি আউলিয়াদের নিয়ে কুরআন হাদিসের বিপরীতে অলৌকিক অযৌক্তিক ঘটনা ও কাহিনী বর্ণানা করলেও, তাদের অনুসারীরা কখনোই তা যাচাই বাছাই করে না। তারা জানতে চেষ্টা করে না যে, এই শ্রুতিমধুর গান গল্প কাহিনী কতটুকু সত্য। তারা সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই তাদের উপর ঈমান নিয়ে আসে। আর এভাবেই সুফিরা গান বাদ্য বাজানার মাধ্যমে একশ্রেণির মূর্খ লোকদের পথভ্রষ্ট করে।
নাফরমানরা পথভ্রষ্টঃ
যারা আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে তারা তাদের আল্লাহ্ সঠিক পথ দেখান। কিন্তু যারা যারা দুঃখে কষ্ট থেকে উদ্ধার পাওয়ার পরও আল্লাহর নিয়ামতকে অস্বীকার করে নাফরমানী করে তারা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ বলেন,
" যখন মানুষকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে একাগ্রচিত্তে তার পালনকর্তাকে ডাকে, অতঃপর তিনি যখন তাকে নেয়ামত দান করেন, তখন সে কষ্টের কথা বিস্মৃত হয়ে যায়, যার জন্যে পূর্বে ডেকেছিল এবং আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করে; যাতে করে অপরকে আল্লাহর পথ থেকে বিভ্রান্ত করে। বলুন, তুমি তোমার কুফর সহকারে কিছুকাল জীবনোপভোগ করে নাও। নিশ্চয় তুমি জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত"। (সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ৮)
অর্থাৎ মানুষ যখন বিপদে আল্লাহ্কে ডাকে তখন আল্লাহ্ তাদের সাহায্য করে। কিন্তু যখন তারা উদ্ধার পেয়ে যায় তখন তারা আর আল্লাহ্কে স্বরণ না করে অন্য কাউকে এর কৃতিত্ব দিয়ে আল্লাহর সাথে শির্ক করে। এভাবেই অধিকাংশ লোকেরা আল্লাহর নিয়ামতকে অস্বীকার করার মাধ্যমে নিজেদেরকে পথভ্রষ্টদের দলে যোগ করে।
যেমনিভাবে সুফিরা তাদের অলি আউলিয়াদের কৃতিত্ব দিয়ে থাকে। অর্থাৎ সুফিরা যখন বিপদে আপদে দুঃখ দূর্দশায় সন্তান কামনায় আল্লাহর কাছ থেকে সাহায্য চায়। তখন আল্লাহ্ তাদের বিপদ থেকে উদ্ধার এবং তাদের মনোকামনা পূরণ করে থাকেন। কিন্তু যখনই তারা আল্লাহর নিয়ামত পেয়ে যায়, তখনই তারা বলে বেড়ায় যে, তাদের সাহায্য করেছেন তাদের পীর অলি আউলিয়ারা।
অথচ তাদের পীর অলি আউলিয়াদের সেই ক্ষমতা নেই যে ক্ষমতা তারা দাবি করে ও বিশ্বাস করে। তবুও তারা তাদের পীর অলি আউলিয়াদের কৃতিত্ব দিয়ে আল্লাহর নাফরমানী করা শুরু করে। এইজাতীয় মানুষেরাই হচ্ছে সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট।
বিভ্রান্তকারীরা পথভ্রষ্টঃ
যারা দুনিয়াবী মোহে শয়তানের প্ররোচনায় অলীক আশার পেছনে সত্য মিথ্যা যাচাই না করেই ছুটে তারা কখনোই সুপথ প্রাপ্ত হয় না। যারা আল্লাহর পরীক্ষায় ধৈর্যশীল নয়। যারা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের অনুসরণে দুনিয়াদারী করতে ইচ্ছুক নয়। তারাই সত্যকে নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে। আর তারাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ বলেন,
" তারা মুমিনদেরকে ডেকে বলবেঃ আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? তারা বলবেঃ হ্যাঁ কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। প্রতীক্ষা করেছ, সন্দেহ পোষণ করেছ এবং অলীক আশার পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে। এই সবই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছে"। (সূরাঃ আল হাদীদ, আয়াতঃ ১৪)
এরা তো তারাই যারা ঈমান এনে মুনাফিকিতে লিপ্ত হয়েছিল। যারা আল্লাহর প্রতি সত্যিকারের ঈমান আনতে পারে নাই। তারা দুনিয়াবী দুঃখ দূর্দশায় আল্লাহর কাছে না চেয়ে পীর অলি আউলিয়াদের দরবারে গিয়ে মানত করেছে শির্ক করেছে। তাদের ধারণা ছিলো আল্লাহ্ নিজে কিছুই দিতে পারেন না এই অলি আউলিয়ারাই আমাদের দিতে পারেন।
তাই তারা তাদের আনুগত্য করেছিল। সেইসাথে তাদের থেকে কিছু পাওয়ার আশায় আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের পথে না চলে সন্দেহ পোষণ করে পীর আউলিয়াদের কথায় জীবনযাপন করেছিল। অবশেষে কিয়ামতে তাদের সামনে সকল সত্য উপস্থাপিত হলে তারা সত্যিকারের মুমিনদের বলবে আমরাও তো আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিলাম।
তারাও ঈমান এনেছিল এটা সত্য। কিন্তু তাদের ঈমান ছিলো পীর আউলিয়াদের উপর বিশ্বাসী শির্কি ঈমান। যে ঈমানের কথা আল্লাহ্ অন্য আয়াতে বলছেন এভাবে,
" অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে"। (সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ১০৬)
সুতরাং এই শির্কযুক্ত ঈমানদাররা পথভ্রষ্ট।
মিথ্যারোপকারীরা পথভ্রষ্টঃ
যারা জেনে শুনে সত্যকে মানবে না কিংবা তাদের সামনে সত্য উপস্থাপন করা হলেও তারা সেই সত্যকে মিথ্যা দাবি করে এড়িয়ে যায় তারা কখনোই সুপথ পায় না। বরং তারাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ বলেন,
" তারা বলবেঃ হ্যাঁ আমাদের কাছে সতর্ককারী আগমন করেছিল, অতঃপর আমরা মিথ্যারোপ করেছিলাম এবং বলেছিলামঃ আল্লাহ তা’আলা কোন কিছু নাজিল করেননি। তোমরা মহাবিভ্রান্তিতে পড়ে রয়েছ"। (সূরাঃ আল মুলক, আয়াতঃ ৯)
উপরোক্ত আয়াতের আলোকে সুফিবাদীরা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্ট একটি মতবাদ। তাদেরকে যতই কুরআন হাদিসের দৃষ্টান্ত দলিল দেখানো হোক না কেন, তারা কখনোই তা গ্রহণ করে না। বরং তারা তাদের আকিদা দিয়ে সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে। এবং তারা যে মহা বিভ্রান্তিতে আছে তা তারা শেষ দিবসে জানতে পারবে।
শির্ককারীরা পথভ্রষ্টঃ
শির্ক একটি জঘন্যতম এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। আল্লাহ্ শির্কের পাপ কখনোই ক্ষমা করবেন না যতক্ষণ না দুনিয়ায় তওবা করে ক্ষমা চাওয়া না হয়। এছাড়া যেকোনো পাপ আল্লাহ্ চাইলেই পরকালে ক্ষমা করতে পারেন। আল্লাহ্ বলেন,
" নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না, এছাড়া অন্য সব যাকে ইচ্ছে মাফ করেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে, সে চরমভাবে গোমরাহীতে পতিত হল"। (আন নিসা ৪:১১৬)
সুতরাং যারা জেনে না জেনে শির্কে জড়িয়ে পড়ে তারা কখনোই ক্ষমা পাবে না। তাই মুশরিকরা চরম পথভ্রষ্ট। আমাদের উপমহাদেশের সুফিবাদী আকিদাও একটি চরম শির্কি যুক্ত আকিদা। যেখানে প্রতিটি পদে পদে আল্লাহর সাথে শির্ক করা হয়। অতএব তারাও পথভ্রষ্টতার অন্তর্ভূক্ত।
দুনিয়ামুখীরা পথভ্রষ্টঃ
পৃথিবীতে আল্লাহ্ মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। কিন্তু যারা আল্লাহর ইবাদতকে পিছনে ফেলে ইসলামকে পিছ দিয়ে, দুনিয়ামুখী জীবনযাপন করে তারা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় পতিত। আল্লাহ্ বলেন,
" যারা পরকালের চাইতে পার্থিব জীবনকে পছন্দ করে; আল্লাহর পথে বাধা দান করে এবং তাতে বক্রতা অন্বেষণ করে, তারা পথ ভুলে দূরে পড়ে আছে"। (সূরাঃ ইব্রাহীম, আয়াতঃ ৩)
উপরোক্ত আয়াতের মতে যারা আল্লাহর পথে চলতে চায় তাদের বাঁধা দেয় কিংবা সত্য গোপন করে অন্যদের আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে বাঁধার সৃষ্টি করে। কিংবা আল্লাহর এবং তাঁর রাসুলের নির্দেশিত পথে বক্রতার অনুসন্ধান করে অন্যদের সেই পথে চলতে অসহযোগিতা করা কিংবা নিরুৎসাহিত করাও হচ্ছে পথভ্রষ্টতার লক্ষণ।
এই পথভ্রষ্টতা সুস্পষ্ট লক্ষণ করা যায় যারা সুফিবাদের ইসলাম পালন করে। তারা তাদের পীর আউলিয়াদের কাছ থেকে যে জ্ঞান লাভ করে, সেই জ্ঞানের ভিত্তিতেই ইসলাম পালন করে। কিন্তু সঠিক ইসলাম পেতে এবং জানতে হলে অবশ্যই কুরআন সুন্নাহর সহীহ্ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। যা তাদের অধিকাংশ পরী আউলিয়াদের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।
এইসব সুফিরা তাদের অনুসারীদের কুরআন সুন্নাহর জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে বাঁধা প্রদান করে। তারা তাদের অনুসারীদের শুধু তাদের দিকেই আহবান করে। কিন্তু কখনোই আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের নির্দেশিত পথে চলতে দেয় না বা সেইপথের নানান বক্রতা উপস্থাপন করে তাদের কুরআন সুন্নাহর বিমুখ করে দেয়। এরাই হচ্ছে সত্যিকারের পথভ্রষ্ট জাতি।
পথভ্রষ্টতার পরিনতিঃ
যারা জেনেশুনে নিজেদের জ্ঞান গরিমা দিয়ে পথভ্রষ্ট হয়। কিংবা যারা না জেনেশুনে কারো অন্ধ অনুসরণের দ্বারা পথভ্রষ্ট হয়। অথবা নিজেদের প্রবৃত্তির খেয়াল খুশীতে গা ভাসিয়ে জীবনযাপন করে পথভ্রষ্ট হয়, তাদের প্রত্যেককের জন্যই রয়েছে দুনিয়া এবং আখিরাতের শাস্তি। নিম্নে তাদের বিস্তারিত দেওয়া হলো।
পথভ্রষ্টকারীদের অবকাশ দেওয়া হয়ঃ
যারা সত্যের বিপররীতে মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত হবে তাদের আল্লাহ্ যথেষ্ট অবকাশ তথা ছাড় দিবেন। তাদের হাজারো অপরাধে আল্লাহ্ তাদেরকে দুনিয়াবী শাস্তি প্রদান করেন না। যাতে করে তারা তাদের ভুলের মধ্যে হাবুডুবু খেতে পারে। এই ভুল তাদের শেষ পর্যন্ত জাহান্নামের আগুন পর্যন্ত নিয়ে যায়। আল্লাহ্ বলেন,
" বলুন, যারা পথভ্রষ্টতায় আছে, দয়াময় আল্লাহ তাদেরকে যথেষ্ট অবকাশ দেবেন; এমনকি অবশেষে তারা প্রত্যক্ষ করবে যে বিষয়ে তাদেরকে ওয়াদা দেয়া হচ্ছে, তা আযাব হোক অথবা কেয়ামতই হোক। সুতরাং তখন তারা জানতে পারবে কে মর্তবায় নিকৃষ্ট ও দলবলে দূর্বল"। (সূরাঃ মারইয়াম, আয়াতঃ ৭৫)
অতএব এটা সত্য যে, যারা পথভ্রষ্ট তারা বুঝতে পারে না তারা ভুল পথে আছে। কেননা তাদেরকে আল্লাহ্ যথেষ্ট ছাড় দিয়ে রেখেছেন। তারা মনে করছে তারা যা আমল করছে তা অবশ্যই ভালো। যদি ভালো না হত নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাদের ধ্বংস করতেন বা এর ফল খারাপ দিতেন । কিন্তু না, তারা তাদের জ্ঞান দিয়ে বুঝতে পারেনা যে, এটা আল্লাহর সন্তুষ্টি নয় বরং একপ্রকার আযাব। আল্লাহ্ বলেন,
" আমি তাদের পেছনে সঙ্গী লাগিয়ে দিয়েছিলাম, অতঃপর সঙ্গীরা তাদের অগ্র-পশ্চাতের আমল তাদের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে দিয়েছিল। তাদের ব্যাপারেও শাস্তির আদেশ বাস্তবায়িত হল, যা বাস্তবায়িত হয়েছিল তাদের পূর্ববতী জিন ও মানুষের ব্যাপারে। নিশ্চয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত"। (সূরাঃ হা-মীম সেজদাহ, আয়াতঃ ২৫)
অর্থাৎ তারা যা করছে তা তাদের চোখে ভালো লাগছে। সেইসাথে এর দ্বারা লাভও হচ্ছে ক্ষতিও হচ্ছে না। নিশ্চয়ই এইসব ভালো। যেমন সুফিদের ঈমান আকিদা ইসলামের বিরোধী হলেও তাদের তো কোনো ক্ষতি আল্লাহ্ করছে না। বরং তারা যা ভালো মনে করছে তাতে আরো সহযোগিতা করছেন তাদের উদ্দেশ্য সফল করে। আল্লাহ্ বলেন,
" যদি আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভুপৃষ্ঠে চলমানকাউকে ছেড়ে দিতেন না। কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেন"। (সূরাঃ ফাতির, আয়াতঃ ৪৫)
পথভ্রষ্ট ইমামরা দায়মুক্তি চাইবেঃ
দুনিয়ায় অনেকেই না বুঝে নেতাদের ইমামদের বড় বড় বুজুগর্দের অন্ধ অনুসরণ করে পথভ্রষ্ট হয়েছে হচ্ছে। । কিন্তু কিয়ামতের ময়দানে এইসব নেতারাই নিজেদের দায়মুক্তি নিয়ে নেবে। তারা সেখানে কারো কোনো দায় নিবে না। আল্লাহ্ বলেন,
" যাদের জন্যে শাস্তির আদেশ অবধারিত হয়েছে, তারা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা। এদেরকেই আমরা পথভ্রষ্ট করেছিলাম। আমরা তাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম, যেমন আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছিলাম। আমরা আপনার সামনে দায়মুক্ত হচ্ছি। তারা কেবল আমাদেরই এবাদত করত না"। (সূরাঃ আল কাসাস, আয়াতঃ ৬৩)
অর্থাৎ যারা কুরআনের সুস্পষ্ট প্রমাণাদি পাওয়ার পরও নেতাদের ইমামদের অনুসরণ করে দুনিয়া পার করে দিবে, তাদের নেতারা সেইদিন আর তাদের অনুসারীদের দায়িত্ব নিবে না। বরং তারা নিজেরাই দায়মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করবে। সুতরাং যেসব মুসলমান কুরআন হাদিসের অনুসরণ না করে বড় পীর অলি আউলিয়াদের কথায় ইসালাম পালন করছে। তারা সেদিন কোথায় যাবে?
নেতাদের আক্ষেপঃ
কিয়ামতে যখন সকল সত্য উম্মোচিত হবে, তখন বিপথগামী নেতা, পীর অলি আউলিয়ারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে। তারা তাদের দোষ স্বীকার করতে বাধ্য হবে। আল্লাহ্ বলেন,
" আমরা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিলাম। কারণ আমরা নিজেরাই পথভ্রষ্ট ছিলাম "। (সূরাঃ আস-সাফফাত, আয়াতঃ ৩২)
সুতরাং প্রতিটি মানুষকে চিন্তা ভাবনা করে তবেই নেতা বা ইমাম পীর বুজুর্গদের অনুসরণ করা উচিত। কেননা কাউকে অন্ধ অনুসরণ করে ভুল পথে পরিচালিত হলে তার দায়িত্ব কেউ নিবে না। এমনকি যাদের অনুসরণ করা হবে তারাও নিবে না। বরং উপরোক্ত আয়াতের মতো তারা নিজেরাই স্বীকারোক্তি দিবে তারা পথভ্রষ্ট ছিলো।
নেতৃত্বদানকারীরা লাঞ্চিত হবেঃ
যারা দুনিয়ায় নেতৃত্ব দিতো কিংবা যাদেরকে সরল মানুষেরা অন্ধ অনুসরণ করেছিলো কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে। তাদেরকে কিয়ামতের ময়দানে সেইসব অনুসারীরাই খোঁজ করবে লাঞ্চিত করার জন্য। আল্লাহ্ বলেন,
" কাফেররা বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা! যেসব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদেরকে দেখিয়ে দাও, আমরা তাদেরকে পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপমানিত হয়।" (সূরাঃ হা-মীম সেজদাহ, আয়াতঃ ২৯)
সুতরাং অন্ধ অনুসরণ করা কখনোই উচিত নয়। নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি বিবেক দিয়ে কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলাম পালন করাই হচ্ছে সুপথ প্রাপ্ত হওয়া এবং হিদায়েতের পথে থাকা। এর বিপরীতে যাওয়াই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা।
অন্যের পাপভারও নিতে হবেঃ
যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট তাদের শাস্তি হবে দ্বিগুণের চেয়ে বেশী। পথভ্রষ্টকারীরা তাদের নিজেদের শাস্তি তো পাবেই, সেইসাথে যাদের তারা পথভ্রষ্ট করেছিল তাদের শান্তিও পেতে হবে। যদিও অনুসারীদের শান্তির কোনো কমতি হবেনা। আল্লাহ্ বলেন,
" কিয়ামতের দিন তারা নিজেদের বোঝা পুরোপুরি উঠাবে আবার সাথে সাথে তাদের বোঝাও কিছু কিছু উঠাবে যাদেরকে তারা অজ্ঞতার কারণে পথভ্রষ্ট করছে । দেখো কেমন কঠিন দ্বায়িত্ব যা তারা নিজেদের মাথায় নিয়ে নিচ্ছে "। (সূরা নাহল : আয়াত ২৫)
অতএব যারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয়ে অন্যদেরও তাদের ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করে তাদের শাস্তির অবস্থা হবে ভয়াবহ।
পথভ্রষ্টদের পথপ্রদর্শক নেইঃ
হিদায়েতের মালিক যেমন আল্লাহ্, ঠিক তেমনটি পথভ্রষ্টতার মালিকও আল্লাহ্। তিনি যাকে তার জ্ঞানের কারণে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে একমাত্র তিনি ছাড়া আর কেউ পথপ্রদর্শন করাতে পারবে না। আল্লাহ্ বলেন,
" আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন। তার কোন পথপ্রদর্শক নেই। আর আল্লাহ তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে মত্ত অবস্তায় ছেড়ে দিয়ে রাখেন"। (সূরাঃ আল আ'রাফ, আয়াতঃ ১৮৬)
আল্লাহ্ অন্য আয়াতে বলেন,
" তিনি (আল্লাহ্) যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না"। (সূরাঃ কাহফ, আয়াতঃ ১৭)
সুতরাং যারা পথভ্রষ্টতায় পতিত আছে তাদের একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ নেই যে, তাদের পথপ্রদর্শন করবে। অতএব যারা পথভ্রষ্ট তাদের কোনো পথপ্রদর্শক নেই।
পথভ্রষ্টদের স্থান জাহান্নামেঃ
যারা দুনিয়ামুখী জীবনযাপন করে কুরআন সুন্নাহর তোয়াক্কা না করে পথভ্রষ্টতাকে বেছে নেয়। আল্লাহর নিদর্শন না দেখে না মেনে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসারী হয়। সেইসাথে রাসুলের নির্দেশিত পথে না চলে নিজ প্রবৃত্তি এবং পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণে মত্ত ছিলো, সেইসব পথভ্রষ্টদের শেষ ঠিকানা হলো জাহান্নামের আগুন। আল্লাহ্ বলেন,
" অতঃপর তাদেরকে এবং পথভ্রষ্টদেরকে আধোমুখি করে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে"। (সূরাঃ আশ-শো'আরা, আয়াতঃ ৯৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,
" যাদেরকে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা অবস্থায় জাহান্নামের দিকে একত্রিত করা হবে, তাদেরই স্থান হবে নিকৃষ্ট এবং তারাই পথভ্রষ্ট"। (সূরাঃ আল-ফুরকান, আয়াতঃ ৩৪)
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম ঈমান থাকার পরও কে এবং কারা পথভ্রষ্ট। সেইসাথে জানতে পারলাম একজন মুমিন কী কী কাজ করলে সে পথভ্রষ্টতায় পর্যবসিত হবে। আরও জানতে পারলাম দিনশেষে এই পথভ্রষ্টতার পরিনতি কী।
সুতরাং আমরা যারা নিজেদের ঈমানদার দাবি করি তারা যেন ভ্রষ্ট পথে চলে পথভ্রষ্ট না হয়ে যায়। আমাদের উচিত হবে সত্যিকারের ইসলাম জেনে তবেই যেন ইসলাম পালন করি।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২৮ নভেম্বর, ২০২১ ইংরেজী
অলংকার, চট্টগ্রাম।