কুরআন (বুঝে) পড়ার ফজিলত
আমরা যারা নিজেদের মুসলিম দাবি করি তাদের অবশ্যই কুরআন পড়া ফরজ। এখন এই পড়া কি শুধু আরবি না কি নিজের ভাষায় বুঝে? এটা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন কথা বলে থাকেন। আমি নিজের কিছু চিন্তা ভাবনা দিয়ে নিজেই বুঝার চেষ্টা করছি আসলেই কোনটি বেশি সঠিক?
আমরা সকলেই জানি যে পবিত্র কুরআন কেউ এক অক্ষর পড়লে ১০টি নেকী লেখা হয়। সেই হিসাবে পবিত্র কুরআনে প্রসিদ্ধ মতে ৩,২০,২৬৭ টি (মারেফুল কুরআন) অক্ষর আছে। এখন যদি কেউ একবার কুরআন আরবিতে পড়ে তাহলে তার নেকীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩২,০২,৬৭০। প্রায় ৩২ লাখের বেশী। আমি মনে করি শুধু বাংলায় কুরআনের অনুবাদ পড়ে কখনোই এতো নেকী পাওয়া যাবে না (যদিও এর পক্ষে কোনো দলিল আছে কিনা জানি না) আসুন এবার আমরা কিছু হিসাব করি।
যৌক্তিকতায় কুরআন (বুঝে)পড়াঃ
আল্লাহর বিধানে সবচেয়ে বড় পাপ কোনটি? এর উত্তর হলো কুফুরি (যারা ঈমানদার নয়) । ঈমান আনার পরে সবচেয়ে বড় পাপ হলো শির্ক। এখন যদি সওয়াবের কাজকে নেকী ধরি, তা সংখ্যা দিয়ে আমরা চাইলে গণনা করতে পারি। যেমন কোনো কাজে এক নেকী হয়। কোনো কাজ এক থেকে দশ হয়। আবার কোনো কাজ আল্লাহর পছন্দ হলে এক থেকে সাতশতও হয়। আবার কোনো কাজের জন্য আল্লাহ চাইলে অগণিত নেকী দিতে পারেন। যদি একজন ব্যক্তি অসংখ্য অগণিত নেকীর মালিক। যদি সে কোনো কারণে শির্ক করে কিয়ামতে আল্লাহর সামনে দাঁড়ায়, তবে কি আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন?
জানি না আপনারা এই বিষয়ে জানেন কিনা। তবে দুনিয়ায় তওবা ছাড়া শির্কের গুনাহ কখনোই আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ বলেন-
আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির করবেন না। তাহলে অভিযুক্ত ও আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবেন। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৩৯ ]
সুতরাং কেউ যদি (না জেনে) শির্ক করে অগণিত নেকী নিয়ে কিয়ামতে দাঁড়ায় তবে কি সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে? যদিও তার অগণিত নেকী থাকে।
এই প্রশ্নের উত্তর যদি হয়, না ক্ষমাপ্রাপ্ত হবেনা । তবে আপনার জন্য বাকি লেখা পড়া দরকার। যদি বলেন হ্যাঁ সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। তবে আপনার আগে জানা দরকার শির্ক কী এবং এর পরিনতি।
এখন আসুন আমরা আরো কিছু হিসাব দেখি। একজন সাধারণ মুসলিম পবিত্র কুরআন আরবি পড়তে পারে। তিনি প্রতি মাসে কয়েকবার কুরআন খতম করেন। এই কুরআন খতমের জন্য তিনি যথেষ্ট নেকীর ভাগিদার। এই কুরআন পড়ে আর দশজন যেভাবে জীবন যাপন করে তিনিও সেইভাবে জীবন পরিচালিত করে মৃত্যুবরণ করলেন। আমরা তার জীবনের নেকীর হিসাব করতে গিয়ে অসংখ্য নেকী দেখলাম শুধু কুরআন পড়ার কারণে। কিন্তু তার জীবনে অসংখ্য পাপের অংশও দেখা গেলো যেগুলো তিনি না জেনেই করলেন। যে পাপগুলো তিনি করেছেন তা একেবারেই তিনি কখনও চিন্তাও করেননি। কেননা এই সমাজে এইসব নিয়ে কথা হয়না।
যখন পরিপূর্ণ হিসাব করা হলো তখন দেখা যাচ্ছে তার নেকীর চাইতে গুনাহের অংশ বেশী। অথচ তিনি খুব সাধারণ জীবনযাপনই করেছেন। তারপরও আল্লাহ চাইলেন তাঁর বান্দাকে ক্ষমা করবেন। যখন তার গুনাহের হিসাব দেওয়া হলো তখন সেগুলো সব আল্লাহ ক্ষমা করে দিলেন। কিন্তু একটি গুনাহ তিনি ক্ষমা করলেন না কারণ তিনি আগেই বলে রেখেছেন যে এই গুনাহ কখনোই ক্ষমা করা হবে না। আর এই গুনাহ না করার জন্যই বান্দাদের দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে।
সেই গুনাহটা কী? সেটা হলো শির্ক! যার অর্থ আল্লাহর সাথে অংশীদার। আল্লাহ বলেন-
" আল্লাহর সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরীক করা মহা অন্যায়।" [ সুরা লুকমান ৩১:১৩ ]
ঐ ব্যক্তি কখনোই কল্পনা করেননি তিনি শির্ক করছেন। তিনি শির্ক কী জিনিস সেটাই বুঝতে পারেননি। অথচ অনেক কুরআন পড়েছেন যতটুকু সম্ভব আর দশজন যেভাবে ইবাদত বন্দেগী করে সেভাবেই সব করেছেন। কিন্তু এতো বড় গুনাহ যে হয়ে গেলো সেটা তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। অথচ আল্লাহ তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দিলেন। একটার জন্য তিনি আজ জাহান্নামী।
সেখানে বিচারের পাশে তিনি তার প্রতিবেশীকে দেখতে পেলেন। যিনি তেমন অতিরিক্ত ইবাদত বন্দেগী করেনি। আরবিও কোনদিন শিখেননি। কুরআন পড়তেও জানতেন না। অথচ তিনি তার গুনাহ মাফ করিয়ে চলে যাচ্ছেন! তা কীভাবে?
আসুন এবার আমরা সেই হিসাবটা করি। যিনি শুধু আরবি কুরআন পড়েছেন তিনি আরবিই পড়েছেন। আল্লাহ কুরআনে কী কী বিধি নিষেধ দিয়েছেন তা কখনোই জানতে পারেননি। কখনো কুরআন নিয়ে চিন্তা করেননি। শুধু সালাত সিয়াম কুরবানী ইত্যাদি সবাই যা যা করে তাই তাই করে দিন পার করেছেন। জানাশোনা আলেমগণ যা বলেছেন তাই বিশ্বাস করে ইবাদত করেছেন। বিপদে পড়লে যাদুটোনা তাবিজ ইত্যাদি করেছেন। বিপদে না পড়ার জন্য মাজারে গিয়েছেন। সন্তান হচ্ছে না মাজারে মানত করেছেন। দুনিয়াবী আইনকানুন মেনে চলেছেন। বিপদে গাউসুল আজমকে ডেকেছেন। কোনো কিছু চাইতে খাজা গরীবে নেওয়াজের কাছে চেয়েছেন।
উনার হিসাবে উনিতো ঠিক আছেন। কিছু ভুল ত্রুটি তো মানুষের জীবনে হয়। সেটাতো আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তারপরও শির্ক কোথায় হলো আর তিনি জাহান্নামে কেন?
ঐ ব্যক্তি এখন হিসাব করলো, তার প্রতিবেশীতো কোনদিন কুরআন খতম দেয়নি। তাহলে কীভাবে তিনি পার পেয়ে গেলেন? সেই উত্তরটা হচ্ছে - প্রতিবেশী লোকটি কুরআন আরবি পড়তে পারেনি বিভিন্ন কারণে। কিন্তু যখনই আল্লাহ তাকে হিদায়াত দিয়েছেন তিনি চেষ্টা করেছেন কুরআনে কী আছে তা জানার জন্য। তাই তিনি কুরআনের অনুবাদ পড়তে লাগলেন। যখনই কুরআনের অনুবাদ পড়তে লাগলেন তখনই বুঝতে পারলেন, আমাদের সমাজে ইসলাম নিয়ে যা চলছে তা মোটেই ঠিক নয়(অর্থাৎ বাপ দাদার অনুসরণ সূরা মায়েদা ৫:১০৪)। কুরআন বলছে শির্ক করা যাবে না(সূরা লোকমান ৩১:১৩) । যে শির্ক করবে তার সব ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে। এই পৃথিবীর সবকিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ। সমস্ত কিছু দেওয়ার মালিক আল্লাহ। মানুষের জন্ম মৃত্যু থেকে শুরু করে আপদ বিপদ ধন দৌলত রিজিক ইত্যাদি সবকিছুই একমাত্র আল্লাহর হাতে(সূরা শুয়ারা ৪২:১২ ক্বাফ ৫০:৪৩)। তিনি যাকে ইচ্ছা দেন যাকে ইচ্ছা দেন না। ঐ প্রতিবেশী আরও বুঝতে পারলো আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন(সূরা বাকার ২:১৫৫)। সুতরাং এই পৃথিবী দুইদিনের। দুনিয়ার কোন কিছুই স্থায়ী নয়। আল্লাহ যদি কাউকে বিপদ দেন, সে যদি সবর করে ধৈর্য্য ধরে তাহলে আল্লাহ তাকে এর বিনিময় দুনিয়া এবং আখিরাতে দিবেন। বিপদে ও কখনোই এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে পীর মাজার দরবার তাবিজ জাদুটোনা করেনি। সেজন্য অনেক সময় তার ক্ষতিও হয়েছে। কিন্তু সে একমাত্র আল্লাহর উপর ভরাসা করেছে কারণ আল্লাহ বলছেন তাঁর উপর ভরসা করতে (সূরা আযহাব ৩৩:৪৮)
শুধু তাই নয় এই প্রতিবেশী তেমন বেশী নফল ইবাদতও করেনি। যেখানে ঐ লোক শবেবরাত শবেকদর শবেমিরাজে সারারাত ধরে ইবাদত করতো, সেখানে এই প্রতিবেশী মসজিদের চাইতে ঘরেই এইসব দিনে ইবাদত করতো(যেভাবে হাদীসে এসেছে সেভাবে) যা কেউ জানতো না। শুধু তাইনয় এই প্রতিবেশী তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করতো যা কেউ জানতো না। প্রতিবেশী কুরআন পড়ে যা জানতে পেরেছে তা হলো তাহাজ্জুদ ই সবচেয়ে বেশী প্রিয় নফল ইবাদত আল্লাহর কাছে।
ঐ ব্যক্তি মসজিদ মাজারে প্রচুর দান করতো। ওরসের সময় গরু মহিষ দিতো দরবারে। অথচ এই প্রতিবেশী শুধু নিজের আত্মীয়স্বজনে দান করতো যা কেউ জানতো না। প্রতিবেশি নিজের মা বাবাকে খুবই সম্মান এবং খুব যত্ন করতো। কিন্তু ঐ ব্যক্তি মা বাবার জন্য প্রচুর খানাপিনার ব্যবস্থা করতো। মা বাবার খবর তেমন নিতো না এবং ব্যবহারও তেমন ভালো ছিলো না। স্ত্রীর সাথে মাবাবার ঝগড়া হলেও তেমন প্রতিবাদ ইত্যাদি করতো না।
কিন্তু প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে বাবা মার কিছু হলে উনি স্ত্রীকে বুঝাতেন এটা অন্যায় এবং এবং কৌশলে মা বাবাকেও আদরে বুঝানোর চেষ্টা করতেন। যাতে মা বাবা কষ্ট না পান। এই প্রতিবেশীকে মানুষ তেমন পছন্দ করতো না। কারণ তিনি দুনিয়ার রীতিনীতি বিরুধী ছিলো। গান বাজনা পছন্দ করতেন না। যাবতীয় বির্ধমী আচার গুলোর বিরুদ্ধে কথা বলতেন। তাই মানুষেরা তাকে পছন্দ করতো না।
এখন কথা হচ্ছে এই ব্যক্তি যিনি আর দশজনের মতো চলেছেন তার চলায় তো ভুল নেই। কেননা তিনি অনেক কুরআন খতম দিয়েছেন। এই কুরআন খতমের তো অনেক নেকী। যা তার প্রতিবেশী পাইনি। তারপরও কীভাবে সম্ভব প্রতিবেশী ক্ষমা পেলো। তার উত্তর হচ্ছে - ঐ ব্যক্তি কুরআন খতম দিয়ে মাসে ১০ লক্ষ নেকী আদায় করল।আর অন্যান্য ভালো কাজ করে আদায় করল ৩০ লক্ষ। কিন্তু কুরআন না জানার কারণে সেখানে যা যা নিষেধ করতে বলা হয়েছে তা তা করে ৫০ লক্ষ গুনাহ কামাই করলো। তাহলে তার নেকীর চাইতে গুনাহ আরও ১০ লক্ষ বেশী থেকে গেল।
প্রতিবেশী বাংলা কুরআন পড়ে ধরে নিলাম কোনো লাভ হলো না (যদিও এই বিষয়ে জানি না কেননা সওয়াব দেওয়ার মালিক আল্লাহ)। কিন্তু তিনি বাংলা পড়ে বুঝতে পারলেন কোন কাজটা করা যাবে আর কোন কাজটা করা যাবে না। কী করলে সওয়াব কী করলে পাপ। কোন কোন পাপ আল্লাহ ক্ষমা করবেন আর কোন কোন পাপে শাস্তি। কার কার সেবা করলে আল্লাহ সওয়াব দেন আর কাকে কাকে দান করলে সওয়াব হবে।
এই হিসাবে প্রতিবেশী কুরআন খতমের নেকী পেলো না। কিন্তু যা যা মানা করেছে আল্লাহ তা তা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে গুনাহ হলো ২০ লক্ষ। কিন্তু যা যা করতে হবে তা তা করে সওয়াব পেলো ৫০ লক্ষ। তার জমা হতে লাগলো মাসে ৩০ লক্ষ নেকী। সেই সাথে তার আমলনামায় শির্ক (আল্লাহর অংশীদার) বিদআত (যে ইবাদত রাসুল (সাঃ) করেন নি) এমন নিকৃষ্ট পাপ নেই যা ক্ষমার অযোগ্য। এই হিসাব করলে যেকোনো কেউ বুঝতে পারবেন কুরআন শুধু আরবি পড়ার বিষয় নয়। কুরআন অবশ্যই বুঝে পড়ার বিষয়। কুরআন জীবিত মানুষের জন্য এসেছে। কুরআন মৃত মানুষের লাশের সামনে রেখে পড়ার জিনিস নয়।
আমার লেখার অর্থ কখনোই এটা ধরে নিবেন না যে, আমি আরবি কুরআন পড়তে নিষেধ করেছি। না এটা কখনোই নয়। কিন্তু আপনি শুধু আরবি পড়েই যাবেন আর তার ভিতরে কী আছে জানবেন না তা কী করে হয়? আল্লাহ কি রিডিং পড়ার জন্য কুরআন দিয়েছেন? রাসুল (সাঃ) কি শুধু কুরআন রিডিং পড়ানোর জন্য এই দুনিয়ায় এসেছিলেন। রাসুল (সাঃ) কুরআন পড়তে বলেছেন সবাইকে। তখন তাঁরা কারা ছিলো? তাঁরা সবাই ছিলো আরবি ভাষী তাদেরকে বলেছেন তোমার বেশী বেশী কুরআন পড়ো যাতে ঈমান তাজা হয়। আল্লাহ কি বলেছেন, কী করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকার জন্য ই কুরআন পড়া। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন যখন ঈমানদারদের সামনে কুরআন পড়া হয় তখন তাদের ঈমান বাড়ে।
এই ঈমান বৃদ্ধি কি আরবি পড়লে কখনোই সম্ভব ? যদি আমরা না বুঝি? কুরআনে অনেক জাতিকে পাপের কারণে ধ্বংস করার কাহিনী আছে। সেইসব পাপ এখনো হচ্ছে। অথচ আপনি জানেন না পাপ কী আর আল্লাহর শাস্তিও কী। তাহলে কুরআন কি শুধু আরবি খতম করার বিষয়? আপনারা নিজের বিবেক দিয়েই চিন্তা করুন আপনারা কী করবেন? আর আল্লাহ আসলেই কেন কুরআন নাযিল করেছেন? পড়ার জন্য নাকি বুঝার জন্য?
কুরআন কী বলেঃ
আমরা একটু করে দেখি আল্লাহ কুরআন কেন পাঠিয়েছেন বিশ্ববাসীর জন্য।
"আমি কোরআনকে বোঝার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?" [ সুরা ক্বামার ৫৪:৩২ ]
"তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?" [ সুরা মুহাম্মাদ ৪৭:২৪ ]
আল্লাহ বলছেন তোমরা চিন্তা করছো না কেন? আরবি পড়ে কীভাবে আপনি চিন্তা করবেন? যদি এর অর্থ না জানেন।
"এটা(কুরআন) খোদাভীরুদের জন্যে অবশ্যই একটি উপদেশ।"[ সুরা হাক্বকাহ ৬৯:৪৮ ]
আল্লাহ বলছেন এটা(কুরআন) উপদেশ কিন্তু আরবি পড়ে কেউ কি উপদেশ গ্রহণ করতে পারবে? যদি তার অর্থ না বুঝে?
"যারা আল্লাহর কথায় বিশ্বাস করে না, তাদেরকে আল্লাহ পথ প্রদর্শন করেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।" [ সুরা নাহল ১৬:১০৪ ]
আল্লাহ বলেন যারা আয়াতের উপদেশ গ্রহণ করে না তাদের সৎপথ তিনি দেখান না। এবং তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি। এই উপদেশ এবং শাস্তির কথা শুধু আরবি রিডিং পড়ে কখনো কি জানা সম্ভব?
"তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে যখনই কোন নতুন উপদেশ আসে, তারা তা খেলার ছলে শ্রবণ করে।" [ সুরা আম্বিয়া ২১:২ ]
আল্লাহর উপদেশ সমূহ না বুঝার কারণে শুধুই ঢিলেঢালা ভাবে শুনে যায় আরবি পড়ে।
"যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব।" [ সুরা সাজদা ৩২:২২ ]
আল্লাহ আপনাকে উপদেশ দিচ্ছে, কিন্তু আপনি যা বুঝার কারণে কুরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আল্লাহ আপনাকেই জালিম বলছেন এবং শাস্তিও রয়েছে।
"এমনিভাবে আমি সুস্পষ্ট আয়াত রূপে কোরআন নাযিল করেছি এবং আল্লাহ-ই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন।" [ সুরা হাজ্জ্ব ২২:১৬ ]
অতএব কুরআন পড়ে বুঝতে হবে। আল্লাহ চাইলে তবেই আপনি হিদায়াত পাবেন। না বুঝলে কীভাবে আল্লাহ আপনাকে হিদায়াত দিবেন?
"আপনি কেবল তাদেরই শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। কারন তারা মুসলমান।" [ সুরা রূম ৩০:৫৩ ]
সুতরাং মুসলিম হতে হলে কুরআন জেনে বুঝে এর উপদেশ গ্রহণ করতে হবে।
এইসব আয়াত খুব ভালোভাবে ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাবো - কুরআন আল্লাহ সহজ করে দিয়েছেন যাতে সবাই বুঝতে পারে। পৃথিবীতে হাজার ভাষা আছে তাহলে তারা কি আরবি পড়ে কখনো কুরআন বুঝতে পারবে? যদি না পারে তবে কি তারা সৎপথ পাবে? সুতরাং কুরআন নিজের ভাষায় জানতে হবে।