দলিল ছাড়া পীরতন্ত্রের ভিত্তি- ১ (পর্ব -২)
দলিল ছাড়া পীরতন্ত্রের ভিত্তিঃ
এখন আমরা বাস্তবতার নিরিখে কিছু বিষয় আলোচনা করব। কুরআন - হাদিসের দলিল নয়। আসুন দেখি সাধারণ কিছু বিষয় নিয়ে এইসব পীরের দরবারকে পরীক্ষা করি তারা আসলেই কতটুকু যুক্তিযুক্ত।
সালাতঃ
যারা নিজেদের মুসলিম দাবি করবে তাদের প্রতি প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় ফরজ। অর্থাৎ অবশ্যই পালনীয়। যারা কাফির তারা সালাত আদায় করে না। হাদীসে এসেছে - কাফির আর মুসলিমের পার্থক্য হলো সালাত। অর্থাৎ যে এই সালাত আদায় করে না সে কাফির সমতুল্য পরিগণিত হয়। তাহলে এটাই ইসলামের মূল নির্দশন একজন ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম দাবি করার।
অথচ আমরা কী দেখি? যদি এইসব পীরের দরবারে সঠিক ভাবে কুরআন এবং হাদীসের চর্চা হতো তাহলে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মসজিদ কেন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় খালি থাকে? সপ্তাহে একদিন মসজিদে জায়গা হয় না, নফল ইবাদতের দিন জায়গা নিয়ে মারামারি লাগে। অথচ দৈনিক পাঁচ টি ফরজ কোটি কোটি মুসলমানের উপর ফরজ তা অনাদায়ি থেকে যাচ্ছে। তাহলে কীভাবে এইসব দরবার তথা পীরকে মেনে নেওয়া যায় যেখানে তারা আল্লাহর ফরজ প্রতিষ্ঠিত করতে নির্দেশ দেয় না। অথচ পীর মানতে হচ্ছে ইসলামের আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। শুধু তাই নয় আমার জানা মতে শতশত পীরের দরবার আছে যেখানে সালাত আদায় করা হয় না। তাদের কাছে শরীয়তের সালাত নেই। এইসব মেনে নিয়ে কীভাবে পীর নামক অবাঞ্ছিত বিষয়কে স্বীকৃতি দেওয়া যায়।
যদি ইসলামে এই তথাকথিত "পীরকে " সমর্থন দিতো তাহলে মসজিদ কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকতো। অথচ আমাদের রাসুল (সাঃ) মৃত্যু রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরও সালাত ত্যাগ করেননি। অথচ পীরের দরবারে শিক্ষা দেওয়া সালাত ছেড়ে দেওয়ার!!!
জিহাদের ময়দানেও সালাত আদায়ের নির্দেশ এসেছে আল্লাহ্ থেকে। কিয়ামতের ময়দানে সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব আগে নেওয়া হবে। অথচ এই সালাত ই সংখ্যাগরিষ্ঠ পীরের দরবারে নেই। তাহলে পীরতন্ত্রকে সমর্থন করবেন কীভাবে? এই বিষয় থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে পীর - মুরিদ নিয়ে এই উপমহাদেশে যা চলছে তা কুরআন হাদীসের বিপরীত।
অনেকেই বলতে পারেন যে, প্রতিটি দরবার থেকে সালাত আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু তা বিভিন্ন কারণে পালন করতে পারে না। এতে দরবারের কী দোষ? আপনার কাছে দোষ নেই। কিন্তু যিনি উপরে আছেন তাকে কি পীরেরা অজুহাত দিয়ে পার পাবেন?
কিছু সংখ্যক দরবার ছাড়া প্রতিটি দরবারেই বলা হয় - যতটুকু পারেন আমল করেন। বাকিটুকু কাল কিয়ামতের ময়দানে "বাবার " সুপারিশে পার পেয়ে যাবেন। এইযে এখানে "সুপারিশ " নামক শুভংকরের ফাঁকি রয়েছে তা সাধারণ জনতা বুঝতে পারে না। তারা এই " সুপারিশ " নামক অমূল্য রতনের আশায় ফরজ আমল ছেড়ে দেয়। তাদের কথা হলো - সালাত আদায় করিনা তো কী হয়েছে? আমার ঈমান অনেক পাক্কা। আমার জানতে ইচ্ছে করে -যে ঈমান একজন মানুষকে সালাতে নিতে পারে না, সেই ঈমান কীভাবে মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে? সালাত ত্যাগকারী সুস্পষ্ট কুরআন এবং হাদীস বিরোধী। এটা বুঝার জন্য মুফতি হওয়া লাগে না।
নৈতিকতা, সুদ, জুয়া, মাদক, জেনাঃ
যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় এই দেশে কি সৎ লোক পাওয়া যায়? তার সহজ উত্তরে আমরা সবাই বলবো বর্তমানে সৎ পাওয়া খুবই দুঃসাধ্য একটি ব্যপার। কেননা আজ আমরা পরিস্থিতির কারণে অসৎ হয়ে গেছি বা হচ্ছি। কেউ চাইলেও সৎ থাকতে পারছে না ক্ষেত্র বিশেষে। সমাজের অধঃপতনের মুখে আজ খুব কম মানুষই সৎ থাকতে চায়। যে যেদিকে সুযোগ পাচ্ছে সেদিকে অবৈধ ফায়দা লুটার চেষ্টায় আছে।
এই পরিস্থিতিতে আমরা পবিত্র কুরআনকে যদি জিজ্ঞাসা করি, প্রকৃত মুমিনের কাজ কী? তবে কুরআন আমাদের বলবে, "সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ। "এই ৪৮ হাজার পীরের দরবার যদি সত্যিকার মুমিনের দরবার হতো - তাহলে সেখান থেকে "সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ।" এই স্লোগান ভেসে আসতো। যদি এটা হতো তাহলে বাংলাদেশ দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হতো না। আজ রাষ্ট্র, সমাজ, পরিবার প্রতিটি পর্যায়ে দূর্নীতির কালো থাবা লেগে আছে। যদি পীরের দরবার হতে তাদের কোটি কোটি মুরিদদের সঠিক ইসলামের শিক্ষা দেওয়া হতো। যে শিক্ষা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর সাহাবীদের দিয়েছেন। তাহলে আমাদের দেশে এতো সুদ, জুয়া, মাদক, ঘুষ, স্বজনপ্রীতি, দূর্নীতিতে ভরে যেতো না।
আজ আমাদের সমাজে সুদ, মাদক, জুয়া, জিনা এই বিষয় গুলো যে কত ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তা একজন স্বাভাবিক মানুষ মাত্রই অনুধাবন করতে পারেন। যদি আমরা মুনাফেক না হয়ে থাকি তাহলে এই সুদ, মাদক, জুয়া, জিনাকে ঘৃণা ভরে বর্জন করা উচিত। অথচ আজ এই বিষয় গুলো কত সহজেই আমাদেরকে গ্রাস করেছে। ৯০ ভাগ মুসলমানদের দেশে কীভাবে এইসব অনুমতি পেয়েছে। আর কেনইবা পীর নামক প্রকৃত মুমিনরা এইসবের বিরোধিতা করেনি এবং করছে না। প্রতিটি দরবার থেকে যদি ইসলামের সঠিক শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে সুদের বিরুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে, জুয়া এবং জেনার বিরুদ্ধে বলা হতো তাহলে আজ এই দেশের পরিস্থিতি এমন হতো না। যদি পীরের মুরিদরা শিখতো। তারা তাদের পরিবারে সেই শিক্ষা দিতো। তাহলে তাদের সন্তানরা মাদক জুয়ায় ডুবে যেতো না। যদি বজ্র কন্ঠে প্রতিটি দরবার থেকে সুদের বিরুদ্ধে তথা ক্ষুদ্রঋণ এনজিও গুলোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হতো তবে এই দেশের মেয়েরা রাস্তায় নেমে যেতো না। সুদের ভারে হাজার হাজার পরিবার ধ্বংস হয়ে যেতো না।
যদি প্রতিটি দরবার থেকে সঠিক ভাবে যাকাত আদায়ের আদেশ দেওয়া হতো তাহলে এই দেশের মানুষ গরীব থাকতো না। যদি প্রতিটি স্বচ্ছল মানুষকে কর্জে হাসানা দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হতো। তাহলে পয়সা অলা ব্যক্তির ভাই সুদে টাকা নিয়ে ব্যবসা করতো না। সুদের টাকায় মেয়ে দিতো না। সুদের টাকা না দিতে পেরে ফাঁসিতে ঝুলতো না। আমি নিশ্চিত হাজার হাজার দরবারে এই কর্জে হাসানা কী জিনিস সেটাও জানে না। অথচ আল্লাহ্ বলেন - তোমরা আল্লাহ্ কে উত্তম ঋণ দাও। আর আমরা পড়ে আছি সুদের সাগরে। কীভাবে ব্যাংকে কোটি টাকা রেখে বসে বসে সুদের টাকায় চলবো সেই চিন্তা করি। কিন্তু সাধারণ মুসলমানদের এইসব শিক্ষা কে দিবে? এই শিক্ষা দেওয়ার কথা দরবারের। এই শিক্ষার নাম দিয়েই পীরতন্ত্র চালু হয়েছিল। যখন সুফীরা উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার করেন তখন এইসব দরবার দিয়েই ইসলামী শিক্ষা দেওয়া হতো। উপমহাদেশে পীরের প্রয়োজন ছিলো এইসব কাজে। আজ সেই পীরের দরবারকে করা হয়েছে বিনা পুঁজিতে ব্যবসার কাজে।
অনেকেরই আমার কথা পছন্দ হবেনা। কারণ প্রতিটি দরবার বসে থাকে কখন কোন মুরিদ কত টাকা নজরানা, হাদিয়া তোফা দিবে সেই আশায়। যদি মুরিদদের সৎ পথে চলতে বলা হয়, বা তারা সৎ হয়ে গেলে এইসব দরবারে পয়সা আসবে কোথা থেকে? দুহাতে অবৈধ পয়সা আয় করতে পারে বলেই তো দরবারে এতো হাদিয়া তোফা দিয়ে ভরপুর করতে পারে। যদি প্রতিটি দরবার থেকে ঘোষণা করা হতো - যারা মুরিদ হবেন তারা অবৈধ কোনো কাজে জড়িত থাকতে পারবেন না। কোনো প্রকার সুদ, ঘুষ, মাদকাসক্ত, মাদক কারবারী, দূর্নীতিগ্রস্থ ইত্যাদি অনৈতিক কাজে জড়িত হলে তারা পীরের মুরিদ থাকবে না। কিন্তু সত্যি এই যে আজ পর্যন্ত কোন দরবার থেকে এই ধরনের ঘোষণা দেওয়া হয়নি। অতএব এইসব পীরের দরবার বাস্তবতার আলোকে যে প্রশ্নবিদ্ধ তা সহজেই অনুমেয়।
পীরের ত্বরিকাঃ
উপমহাদেশে পীর ধরতে গেলে প্রথমেই করা "বাইয়াত "। অর্থাৎ পীরের প্রতি আনুগত্য। (এই বাইয়াতের সত্যতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে) । একজন মানুষ বাইয়াত নিয়ে মুরিদ হওয়ার সাথে সাথে তাকে দেওয়া বিভিন্ন জিকির আজগার ও অজিফা। যতবেশী জিকির ততবেশী অন্তর পরিষ্কার। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যেসব জিকির, অজিফা দেওয়া হয় তা কতটুকু কুরআন এবং হাদীস সম্মত। যারা ঐসব দরবারের মুরিদ তারা শতভাগ কেউ ই এইসব নিয়ে মাথা ঘামায় না এবং এইসব সম্পর্কে জানেও না। কারণ তারা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ। যদি ইসলামে পীর ধরার সত্যিই কোন সিস্টেম চালু থাকতো তবে তা সবার চোখে প্রশ্নবিদ্ধ! কেননা একজন সাধারণ মুসলিম যে কিছুই জানে না তাকে যা দেওয়া হচ্ছে তাই গ্রহণ করছে। এখন যেসব পীরের ইসলাম সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান নেই, তাদের পাল্লায় পড়ে লক্ষ হাজার লোক জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। আল্লাহ্ কি সত্যি ই এমন? যে একজন তথাকথিত পীরের কাছে (যে কিনা বংশপরম্পরায় পীর) ইসলামের ঠিকাদারি দিয়ে রাখবেন?
অসুস্থ প্রতিযোগিতাঃ
যেকোনো পীরের দরবারে গেলেই শুনতে পারবেন অন্য পীর বা দরবারের কুৎসা বা গীবত। কে কার থেকে কত ভালো, কার দরবারে কত মুরিদ, কার ওরসে কত গরু, কার দরবার কত জাকজমকপূর্ণ ইত্যাদি নিয়েই রেষারেষি চলছে। এইসব দেখে যেকোন সাধারণ মানুষ মাত্রই বুঝতে পারবে এখানে আল্লাহর দেখা নয় বরং শয়তানের কাজের দেখা মিলবে।
মাজার ভিত্তিক দরবারঃ
বর্তমান সময়ে উপমহাদেশে যত দরবার আছে তার প্রতিটি দরবারের মূল উৎস হলো মাজার। একসময়ের আল্লাহর অলির কবরকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে বংশপরম্পরায় পীরের ব্যবসা। যে আল্লাহর অলি দুনিয়া থেকে গত হয়েছেন তার বংশের ই একজনকে গদ্দীনসিন পীর বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে তিনি ও আল্লাহর অলি হয়ে যান। আসলেই কি আল্লাহর অলি হওয়া এতো সহজ। এভাবে কি বংশপরম্পরায় আল্লাহ অলি, জ্ঞানী, উস্তাদ, শিক্ষক,পীর দিয়ে থাকেন? যদি দুনিয়ায় আল্লাহ্ এভাবেই বংশপরম্পরায় অলি পয়দা করেন তাহলে কি তিনি ন্যায় বিচার করছেন? (নাউযুবিল্লাহ)
যেখানে নবীর (আঃ) এর ছেলে, বউ, পিতা, চাচা ইত্যাদি জাহান্নামী হচ্ছে, তাদের বংশ পরিচয় তাদের জান্নাতে নিবে না। সেখানে অলির বংশে জন্ম নেওয়ার কারণে অলি বা পীর হয়ে যাচ্ছেন। ব্যপারটা কি এতোটাই সহজ? একজন আল্লাহর বান্দা তাঁর ইবাদত আমল দিয়ে আল্লাহর প্রিয়ভাজন হতেই পারেন। কিন্তু তার বংশ দিয়ে ক্রমান্বয়ে আল্লাহর অলি দুনিয়ায় চলে আসবেন, এটা কি হাস্যকর নয়?
বর্তমান পীরদের ধর্মীয় শিক্ষাঃ
আগেই বলেছি উপমহাদেশে বংশপারম্পরিক ভাবে পীর নির্বাচন করা হয়। তাই হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া প্রায় সকল নামাধারীর পীরদেরই সত্যিকারের ইসলামী কোনো জ্ঞান নেই। তারা ইসলামের সঠিক রীতিনীতি, মাসালা মাসায়েল, ফিকাহ শাস্ত্র, শরীয়তের খুটিনাটি ইত্যাদি বিষয়ের উপর কোনো জ্ঞান রাখে না। অথচ তারাই হয়ে যাচ্ছেন পীর। যাদের কাছে মানুষ মুরিদ হচ্ছে কিয়ামতে উদ্ধার পাওয়ার জন্য। যদি লক্ষ্য করা হয় বিভিন্ন পীরের দরবারে আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্ত কিছু বান্দা থাকে। যারা আল্লাহর কাছে প্রিয় হলেও তারা কখনোই পীর হতে পারে না শুধুমাত্র বংশের কারণে। অথচ পীর হওয়ার সকল যোগ্যতাই তাদের থাকে। অতএব বর্তমানে পীরের নামে যা চলছে তা কখনোই ইসলাম সম্মত নয় এটা খুবই স্পষ্ট। আপনারা নিজের জ্ঞান দিয়েই বিবেচনা করুন।
ইসলামের পূণ্যভূমিতে পীরতন্ত্রঃ
ইসলামের পূণ্যভূমি যেখানে ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে সেখানে কি এই পীর বা পীরতন্ত্র আছে? আমাদের উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার করেছেন বিভিন্ন সময়ে আল্লাহর অলিরা। তাঁরা ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে বিভিন্ন দরবার বা দরসগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। যাতে করে সাধারণ নওমুসলিমরা ইসলামী সঠিক জ্ঞান অর্জন করে পারে। এভাবেই দরবার বা দরসগাহ প্রতিষ্ঠিত হয়। যা বর্তমানে আল্লাহর অলির মৃত্যুর পর দরগাহ নামে পরিচিতি। এখন কথা হচ্ছে যেখানে আসল ইসলামের উৎপত্তি সেখানে কি এমন পীরের দরবার আছে?
যদি ইসলামে সত্যিকারে এই পীরতন্ত্র যা উপমহাদেশে চালু আছে সেটা থাকতো - তবে আরব ভূমির পুরো মধ্যপ্রাচ্যে লক্ষ লক্ষ পীর থাকার কথা। শুধু কি পীর? পীরের সাথে লক্ষ কোটি মুরিদ এবং সেইসাথে থাকতো অলি আল্লাহর মাজার। কিন্তু বাস্তবে কী দেখা যাচ্ছে? সমগ্র আরব বিশ্বে, যেখানে অরিজিনাল ইসলামের উৎপত্তি, যাদের ইসলাম থেকে এই উপমহাদেশে ইসলাম এসেছে সেখানে এইসব পীরতন্ত্র নেই। অথচ তাদের ধার করা ধর্ম আমরা পালন করছি কিন্তু অরিজিনাল না! বিষয়টা কি গোলমেলে নয়?
যদি ইসলামে সত্যিই এই পীরতন্ত্র থাকতো তাহলে তা সেখানে কোনো না কোনো ভাবে চালু থাকতো। কেননা আল্লাহর প্রেরিত ইসলাম ধর্মের মূল গোড়া সেখানে। এখন দেখা যাচ্ছে যেখানে আল্লাহ্ ইসলাম প্রেরণ করেছেন সেখানে আল্লাহর কোনো অলি নেই। যেখানে ২০০/৩০০ বছর পরে ইসলাম এসেছে সেখানেই আল্লাহর অলিতে ঠাসা। (এখানে নামধারী অলির কথা বলা হচ্ছে যারা বংশপারম্পরিক ভাবে অলি বনে যাচ্ছে )। অতএব এই বিষয়টি একটু খোঁজ নিলেই তো সবকিছু স্পষ্ট হয়ে যায় আসলেই ইসলামে কী আছে?
অনেকে না সবাই একবাক্যে বলেন যে, পীরের আরবি "শায়খ "।আমিও বলি পীরের আরবি "শায়খ "অর্থাৎ শিক্ষক বা উস্তাদ। এখন যারা বলেন পীর মানে আরবের শায়খ তাদের কাছে প্রশ্ন -এই শায়খরা আরব দেশে আমাদের উপমহাদেশের মতো কয়টা দরবার খুলে বসে আছেন? কতজনে বাইয়াত দিচ্ছে? কতজন মুরিদ আছে? কয়টি আল্লাহর অলির নামে মাজার আছে?
যে জায়গায় আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় রাসুল (সাঃ) কে দ্বীন ইসলাম প্রচার করার জন্য পাঠিয়েছেন, যেখানে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলে গেছেন ইসলামে প্রথম তিন প্রজন্ম হচ্ছে সবচাইতে শ্রেষ্ঠ ক্রমানুসারে। যে ভূমিতে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) সোয়া লক্ষ জান্নাতি সাহাবী রেখে গেছেন। যে পূণ্যভূমিতে তাবেয়ী, তবেতাবেয়ীরা শুয়ে আছেন। সেই ভূমি এখন "বন্ধ্যা (অর্থাৎ সন্তান দানে অক্ষম) "হয়ে গেছে। সেখানে আর আল্লাহর অলি পয়দা হচ্ছে না। বিষয়টা কি এমন? আল্লাহ্ আমাদের জ্ঞান দিয়েছেন আসুন একটু হলেও সেটাকে কাজে লাগায়।
বাকি পর্ব গুলো এখানেঃ