রাসুল (সাঃ) আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি
আমাদের মধ্যে এমন ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ) হচ্ছেন আল্লাহর নিজস্ব জাতি নূরে সৃষ্ট। তারা সূরা মায়েদার ১৫নং আয়াতকে এর দলিল দিয়ে থাকেন।
(যার খন্ডন এখানে করা হয়েছে রাসুল(সাঃ) হচ্ছে নূর
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_75.html?m=1)
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_75.html?m=1)
আমরা এখন পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াত দেখবো যে আল্লাহর নবী (আঃ) এবং রাসুল (সাঃ) গণ মানুষ হওয়ার কারণে তাঁদের সম্প্রদায়ের নেতাগণ ইসলাম কবুল করেনি।
১ ) "তখন তাঁর কওমের কাফের প্রধানরা বলল আমরা তো আপনাকে আমাদের মত একজন মানুষ ব্যতীত আর কিছু মনে করি না; আর আমাদের মধ্যে যারা ইতর ও স্থুল-বুদ্ধিসম্পন্ন তারা ব্যতীত কাউকে তো আপনার আনুগত্য করতে দেখি না এবং আমাদের উপর আপনাদের কেন প্রাধান্য দেখি না, বরং আপনারা সবাই মিথ্যাবাদী বলে আমারা মনে করি। [ সুরা হুদ ১১:২৭ ]
২) এটা এ কারণে যে, তাদের কাছে তাদের রসূলগণ প্রকাশ্য নিদর্শনাবলীসহ আগমন করলে তারা বলতঃ মানুষই কি আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করবে? অতঃপর তারা কাফের হয়ে গেল এবং মুখ ফিরিয়ে নিল। এতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী প্রশংসিত। [ সুরা তাগাবুন ৬৪:৬ ]
৩) "তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল আগমন করেছিলেন। অনন্তর ওরা তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করল। তখন আযাব এসে তাদরকে পাকড়াও করল এবং নিশ্চিতই ওরা ছিল পাপাচারী। [ সুরা নাহল ১৬:১১৩ ]
৪) তাদের অন্তর থাকে খেলায় মত্ত। জালেমরা গোপনে পরামর্শ করে, সে তো তোমাদেরই মত একজন মানুষ; এমতাবস্থায় দেখে শুনে তোমরা তার যাদুর কবলে কেন পড়? [ সুরা আম্বিয়া ২১:৩ ]
৫) তুমি তো আমাদের মতই একজন মানুষ বৈ নও। সুতরাং যদি তুমি সত্যবাদী হও, তবে কোন নিদর্শন উপস্থিত কর। [ সুরা শু’য়ারা ২৬:১৫৪ ]
৬) (হে রাসুল সাঃ) আপনার পূর্বে আমি মানুষই প্রেরণ করেছি, যাদের কাছে আমি ওহী পাঠাতাম। অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। [ সুরা আম্বিয়া ২১:৭ ]
৭) তখন তার সম্প্রদায়ের কাফের-প্রধা নরা বলেছিলঃ এ তো তোমাদের মতই একজন মানুষ বৈ নয়। সে তোমাদের উপর নেতৃত্ব করতে চায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে ফেরেশতাই নাযিল করতেন। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে এরূপ কথা শুনিনি। [ সুরা মু’মিনুন ২৩:২৪ ]
৮) তারা বলল, তোমরা তো আমাদের মতই মানুষ, রহমান আল্লাহ কিছুই নাযিল করেননি। তোমরা কেবল মিথ্যাই বলে যাচ্ছ। [ সুরা ইয়া-সীন ৩৬:১৫ ]
এইসব আয়াত ছাড়াও আরও অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ্ আমাদের জানান যে পূর্ববর্তী বিভিন্ন জাতিসহ মক্কার মুশরিকরাও নবী (আঃ) এবং রাসুল (সাঃ) গণ মানুষ হওয়ার কারণে তারা তাঁদেরকে বিশ্বাসও আল্লাহর উপর ঈমানও আনেনি। সুতরাং মানুষ হওয়ার কারণেই নবী (আঃ) এবং রাসুল (সাঃ) প্রতি ঈমানদারগণ ঈমান এনেছিল।
অনেকে বলেন রাসুল (সাঃ) হচ্ছেন আল্লাহর জাতি নূর। এই আশাও তৎকালীন কাফেরদের ছিল। তাদের দাবি ছিলো আল্লাহ্ তাদের জন্য নূরের তৈরি ফিরিশতা কেন পাঠালো না। কুরআনে এসেছে -
"বলুনঃ যদি পৃথিবীতে ফেরেশতারা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করত, তবে আমি আকাশ থেকে কোন ফেরেশতাকেই তাদের নিকট পয়গাম্বর করে প্রেরণ করতাম।" [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৯৫ ]
অর্থাৎ এই পৃথিবীতে যেহেতু মানুষের বিচরণ সেহেতু আল্লাহ্ নবী রাসুল করে মানুষই পাঠিয়েছেন।
কাফেরদের কথা হচ্ছে রাসুল হতে হলে মানুষ থেকে আলাদা হতে হবে। তাদের কথা কুরআনে এভাবে এসেছে -
"তারা বলে, এ কেমন রসূল যে, খাদ্য আহার করে এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করে? তাঁর কাছে কেন কোন ফেরেশতা নাযিল করা হল না যে, তাঁর সাথে সতর্ককারী হয়ে থাকত? [ সুরা ফুরকান ২৫:৭ ]
অর্থাৎ ইনি রাসুল (সাঃ) হলে তিনি মানুষের মতো করে কেন সবকিছু করছে? সুতরাং আমরা মানুষের কাছে ঈমান আনবো না। এই মানুষের প্রতি ঈমান না আনা হচ্ছে কাফেরদের লক্ষণ।
এখন আমরা দেখি রাসুল (সাঃ) কে দিয়ে আল্লাহ্ কী বলছেন -
"(হে রাসুল সাঃ)বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে। [ সুরা কা’হফ ১৮:১১০ ]
কুরআনে আরো আছে -
"কিংবা থাকবে আপনার কোনো স্বর্ণ নির্মিত ঘর অথবা আপনি আরোহণ করবেন আসমানে ;কিন্তু আমরা আপনার (আকাশে) আরোহণকে কখনও বিশ্বাস করবনা, যতক্ষণ না আপনি (সেখান থেকে) আমাদের জন্য কিতাব নিয়ে আসবেন যা আমরা পড়তে পারবো। (হে রাসুল) আপনি (এদের শুধু এটুকু) বলুন, মহান পবিত্র (আমার) আল্লাহ্ তাআলা, আমি তো কেবল (তাঁর পক্ষ থেকে) একজন মানুষ, (একজন), রসূল বৈ কিছুই নই। [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৯৩ ]
তৎকালীন কাফেরদের অভিপ্রায়ের জবাব আল্লাহ্ এভাবেই দিয়েছেন যে - হে রাসুল (সাঃ) আপনি বলুন যে আপনি একজন মানুষ। সুতরাং যেখানে আল্লাহ্ রাসুল (সাঃ) কে দিয়ে বিশ্ববাসীকে শোনাচ্ছেন যে, রাসুল (সাঃ) একজন মানুষ সেখানে আমরা তাঁকে অন্ধ ভালোবাসা দিতে গিয়ে কুরআনের বিরুদ্ধে কথা বলছি। অথচ আল্লাহ্ সরাসরি বলছেন -
"যখনই মানুষদের কাছে (আল্লাহ্ তাআলার কাছ থেকে) হেদায়েত এসেছে তখন তাদের ঈমান আনা থেকে এ ছাড়া অন্য কোনো জিনিসই বিরত রাখেনি যে, তারা বলতো, আল্লাহ্ তাআলা (আমাদের মতো) একজন মানুষকেই কি নবী করে পাঠালেন! [ সুরা বনী-ইসরাঈল ১৭:৯৪ ]
এখানে আল্লাহ্ খুবই স্পষ্ট করে বলছেন যে নবী রাসুল (সাঃ) গণ মানুষ হওয়ার কারণেই পূর্ববর্তী কাফেরদের সম্প্রদায় ঈমান আনতে পারে নি। সুতরাং এখনো যারা রাসুল (সাঃ) কে মানুষ বলে স্বীকার করতে পারছেন না। তাদের জন্য অবশ্যই আল্লাহর মানুষ ছাড়া অন্যকিছু পাঠানোর দরকার ছিলো। কেননা মানুষের প্রতি ঈমান আনাই হচ্ছে প্রকৃত ঈমানদার। যদি মানুষ ছাড়া নূরের তৈরি ফিরিশতা হোক বা অন্য কিছুর প্রতি ঈমান আনলে তার ঈমান কবুল হবে না।
আমরা এখন কিছু সহীহ্ হাদীস দেখবো। বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে অসংখ্য সহীহ্ হাদীস আছে। যেখানে রাসুল (সাঃ) নিজে বলছেন তিনি মানুষ। আমি সহীহ্ বোখারী, মুসলিমের হাদীস উল্লেখ করছি।
১) হযরত উম্মে সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ নিজের দরজার কাছে বিবাদ-বিতর্ক শুনতে পেয়ে তাদের নিকট এসে বললেন-আমিতো একজন মানুষ মাত্র। আমার কাছে বাদী বিবাদীরা এসে থাকে। কেউ হয়ত অধিক বাকপটু হয়, ফলে আমি তাকে সত্য মনে করে তার পক্ষে রায় দিয়ে দেই। যদি আমি কারো পক্ষে অন্য কোন মুসলমানের হকের ব্যাপারে ফয়সালা দিয়ে থাকি, তাহলে তা জাহান্নামের টুকরো হিসেবে বিবেচিত হবে। সে তা গ্রহণ করতেও পারে, অথবা বর্জনও করতে পারে। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৭৬২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৭২,)
২) অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন- আমিতো তোমাদের মতই একজন মানুষ। তোমরা যেমন ভুলে যাও, আমিও তেমনি ভুলে যাই। তাই আমি ভুলে গেলে তোমরা আমাকে স্বরণ করিয়ে দিও। {সহীহ বুখারী হাদীসনং-৩৯২, সহীহ ইবনে হিব্বান হাদীস নং-২৬৬২}
৩) হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল সাঃ কে বলতে শুনেছি যে, তিনি ইরশাদ করেছেন-আমি তো একজন মানুষমাত্র। আমি আপন প্রতিপালকের নিকট বলে রেখেছি যে, আমি যদি কোন মুসলমানকে মন্দ বলি, তাহলে সেটি যেন তার জন্যে পবিত্রতা ও সওয়াবের কারণ হয়। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৭৯০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীসনং-১২১২৬}
উপরোক্ত হাদীস ছাড়াও আরো অসংখ্য হাদীস আছে যা সময় এবং ব্যপ্তির কারণে সংক্ষিপ্ত করেছি। এইসব হাদীসেও রাসুল (সাঃ) নিজেকে খুবই বিনয়ী হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। সুতরাং আমাদের ততটুকু ধারণা করবো যতটুকু তিনি প্রকাশ করেছেন।
এখন এখানে একটা কথা থেকে যাচ্ছে যে, রাসুল (সাঃ) মানুষ হলে কি আমাদের মতোই কি সাধারণ মানুষ? না, এটা কখনোই নয়। রাসুল (সাঃ) পৃথিবীর আর দশজনের মতো মানুষ বাহিয্যক ভাবেই। পৃথিবীর কোনো মানুষের তাঁর মতো জ্ঞান, প্রজ্ঞা আর ক্ষমতা নেই । বরং আল্লাহর যা সৃষ্টি আছে তাঁর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হচ্ছেন আমাদের প্রিয় রাসুল (সাঃ)। শুধু তাই নয় এই মহাবিশ্বে আল্লাহর পর যার ক্ষমতা প্রতিপত্তি তিনি হচ্ছেন আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। সুতরাং রাসুল (সাঃ) কে আল্লাহ্ যে সম্মান দিয়েছেন সেটাই আমরা তাঁকে জানাই। এর বেশী কিছু করে তাঁকে অসম্মান করে আল্লাহ্ এবং রাসুলের (সাঃ) এর কাছে প্রিয় হওয়া যাবে না। আল্লাহ্ আমাদের সঠিক বুঝে ঈমান আনার তৌফিক দান করুন আমিন।
আরও পড়ুনঃ
ইলমে গায়েব
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_4.html?m=1
রাসুল(সাঃ) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_88.html?m=1
রাসুল(সাঃ) হচ্ছে নূর
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_75.html?m=1
ইলমে গায়েব
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_4.html?m=1
রাসুল(সাঃ) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_88.html?m=1
রাসুল(সাঃ) হচ্ছে নূর
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_75.html?m=1