কবর নিয়ে তামাশা!
কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও আজ এটাই বাস্তবতা। আমাদের উপমহাদেশে কবর নিয়ে যেসব রীতিনীতি চালু আছে তার অধিকাংশই ইসলাম বহির্ভূত। আমরা অনেকেই জানি না কবর পাকা করা, উঁচু করা (এক হাতের চাইতে বেশী), কবরের উপর ঘর তৈরি করা, কবরকে সিজদার জায়গায় পরিনত করা সম্পূর্ণ হারাম। সহীহ্ হাদীস দ্বারা এইসব বিষয় সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত। আসুন দেখি হাদীসে কী আছে?
কবর পাকা ও চুনকাম না করা প্রসঙ্গেঃ
সহীহ্ মুসলিম জানাযা অধ্যায়, ২১৩৭
وَحَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ ابْنُ عُلَيَّةَ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ نُهِيَ عَنْ تَقْصِيصِ الْقُبُورِ، .
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। (ই.ফা. ২১১৬, ই.সে. ২১১৯)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সুনানে আবু দাউদ জানাযা অধ্যায়, ৩২২৫
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، أَخْبَرَنِي أَبُو الزُّبَيْرِ، أَنَّهُ سَمِعَ جَابِرًا، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى أَنْ يُقْعَدَ عَلَى الْقَبْرِ وَأَنْ يُقَصَّصَ وَيُبْنَى عَلَيْهِ .
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ক্ববরের উপর বসতে, তাতে চুনকাম করতে এবং তার উপর কিছু নির্মাণ করতে নিষেধ করতে শুনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
অনুরূপ হাদীস এসেছে জামে আত তিরমিযী জানাযা অধ্যায়, হাদীস নং ১০৫২, সহীহ, আহকামুল জানা-য়িয (২০৪), তাহযীরস সাজিদ (৪০), ইরওয়া (৭৫৭), লিখতে নিষেধ করেছেন ব্যতীত, মুসলিম।সুনানে আন-নাসায়ী জানাযা পর্ব ২০২৮, বুলুগুল মারাম জানাযা ৫৮০, মুসলিম ৯৭০ তিরমিযী ১০৫২, নাসায়ী ২০২৭, ২০২৮, ২০২৯, আবূ দাঊদ ৩২২৫, ইবনু মাজাহ ২৫৬২, ১৫৬৩, আহমাদ ১৩৭২৫, ১৪২২২৭, ১৪২২৭, সুনানে আন-নাসায়ী জানাযা পর্ব ২০২৭।
উপরোক্ত এতগুলো হাদীসে সুস্পষ্টভাবে এসেছে যে, কোনো মতেই কবরকে পাকা করা, চুনকাম করা এবং কবরের উপর কিছু নির্মাণ করা যাবে না। এইসব হাদিসের সব গুলো হাদীসই সহীহ্। শুধু তাইনয় প্রসিদ্ধ সকল হাদীস গ্রন্থেই এইসব হাদীস স্থান পেয়েছে।
কবরকে মসজিদ না বানানো প্রসঙ্গেঃ
সহিহ বুখারী মাগাযী ৪৪৪৩
و أَخْبَرَنِيْ عُبَيْدُ اللهِ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُتْبَةَ أَنَّ عَائِشَةَ وَعَبْدَ اللهِ بْنَ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ قَالَا لَمَّا نَزَلَ بِرَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم طَفِقَ يَطْرَحُ خَمِيْصَةً لَهُ عَلَى وَجْهِهِ فَإِذَا اغْتَمَّ كَشَفَهَا عَنْ وَجْهِهِ وَهُوَ كَذَلِكَ يَقُوْلُ لَعْنَةُ اللهِ عَلَى الْيَهُوْدِ وَالنَّصَارَى اتَّخَذُوْا قُبُوْرَ أَنْبِيَائِهِمْ مَسَاجِدَ يُحَذِّرُ مَا صَنَعُوْا.
‘আয়িশাহ ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
‘উবাইদুল্লাহ ইবনু ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উতবাহ (রহ.) আমাকে জানালেন যে, ‘আয়িশাহ ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস (রাঃ) উভয়ে বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোগ-যাতনায় অস্থির হতেন তখন তিনি তাঁর কালো চাদর দিয়ে নিজ মুখমন্ডল ঢেকে রাখতেন। আবার যখন জ্বরের উষ্ণতা কমত তখন মুখমন্ডল থেকে চাদর সরিয়ে ফেলতেন। রাবী বলেন, এরূপ অবস্থায়ও তিনি বলতেন, ইয়াহূদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর লা‘নত, তারা তাদের নাবীদের (নবীদের) কবরকে মাসজিদ বানিয়ে নিয়েছে। তাদের কৃতকর্ম থেকে সতর্ক করা হয়েছে। [৪৩৫, ৪৩৬] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৯২, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪০৯৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
জামে' আত-তিরমিজি জানাযা ১০৫০
حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ يَزِيدَ بْنِ جَابِرٍ، عَنْ بُسْرِ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِي إِدْرِيسَ الْخَوْلاَنِيِّ، عَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الأَسْقَعِ، عَنْ أَبِي مَرْثَدٍ الْغَنَوِيِّ، قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَجْلِسُوا عَلَى الْقُبُورِ وَلاَ تُصَلُّوا إِلَيْهَا " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ وَبَشِيرِ ابْنِ الْخَصَاصِيَةِ .
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْمُبَارَكِ، بِهَذَا الإِسْنَادِ نَحْوَهُ .
আবূ মারসাদ আল-গানাবী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কবরের উপর তোমরা বসবে না এবং কবরকে সামনে রেখে নামায আদায় করবে না।
-সহীহ, আল আহকাম (২০৯, ২১০), তাহযীরুস সাজিদ (৩৩), মুসলিম।
আবূ হুরাইরা, আমর ইবনু হাযম ও বাশীর ইবনুল খাসাসিয়া (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। উপরের হাদীসের মত আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারাক হতেও একটি সনদ সূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
অনুরূপ হাদীস বিভিন্ন রাবী দ্বারা অসংখ্য প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থে এসেছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সহিহ বুখারী মাগাযী ৪৪৪১, ৪৪৪৪, ৪৩৭ ,সালাত ৪৩৫, ৪৩৬, জানাযা ১৩৩০, ১৩৯০ নং হাদীস।
সহীহ্ মুসলিম জানাযা অধ্যায়, ২১৩২, ৯৭২, ৫৩০ নং হাদীস।
সুনানে আবু দাউদ জানাযা অধ্যায় ৩২২৭।
বুলুগুল মারাম, সলাত ২১৭, ২৫২।
নাসায়ী ২০৪৭, আহমাদ ৯৫৪০।
আল লু'লু ওয়াল মারজান মসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহের বর্ণনা ৩০৭, ৩০৮।
মুয়াত্তা ইমাম মালিক সফরে নামায কসর আদায় করা ৪০২, বিভিন্ন প্রকারের মাস‘আলা সম্বলিত অধ্যায় ১৫৯২।
উপরোক্ত সকল হাদীসেই ইহুদী খ্রিস্টানদের প্রতি আল্লাহর রাসুল (সাঃ) লানত দিয়েছেন। তার কারণ তারা তাদের নবী রাসুলদের কবরকে মসজিদ বানাতো। শুধু তাইনয় তারা এইসব কবরকে সিজদার জায়গায় বানিয়ে নিয়েছে। যা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। এইসব কারণে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তাদের প্রতি মৃত্যু যন্ত্রনার সময়ও অভিশাপ দিয়েছেন। সুতরাং এটা খুবই স্পষ্ট যে কোনো নবী রাসুল, পীর, আউলিয়া ইত্যাদির কবরকে কখনোই এমন করা যাবে না যাতে সেখানে কেউ মসজিদের মতো সম্মান করে, সিজদা দেয় ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের উপমহাদেশে এইসবের কোনো তোয়াক্কাই নেই। আমাদের দেশে বড় বড় ইসলামী ব্যক্তিত্বদের কবর এমনভাবে তৈরি হচ্ছে যাতে সেখানে সালাত আদায় করা যায়, সিজদা দেওয়া যায়, উৎসব করা যায়।
প্রিয় রাসুল (সাঃ) যেখানে মৃত্যুর অন্তিম শয্যায়ও কবরের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন সেখানে আমাদের দেশসহ উপমহাদেশে এইসব কোনো কিছুই মানা হচ্ছে না। শুধু তাইনয় এমনভাবে কবর তৈরি করা হচ্ছে তা দেখে বোঝার উপায় নেই এটা কোনো মুসলিমের কবর। আজ আমরা সত্যিকারের ইসলাম থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছি নিজেদের অজ্ঞতার কারণে।
কবর উঁচু না করা প্রসঙ্গেঃ
সহীহ্ মুসলিম জানাযা অধ্যায়, ২১৩২
وَحَدَّثَنِي أَبُو الطَّاهِرِ، أَحْمَدُ بْنُ عَمْرٍو حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ، ح وَحَدَّثَنِي هَارُونُ بْنُ سَعِيدٍ الأَيْلِيُّ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، حَدَّثَنِي عَمْرُو بْنُ الْحَارِثِ، - فِي رِوَايَةِ أَبِي الطَّاهِرِ - أَنَّ أَبَا عَلِيٍّ الْهَمْدَانِيَّ، حَدَّثَهُ - وَفِي، رِوَايَةِ هَارُونَ - أَنَّ ثُمَامَةَ بْنَ، شُفَىٍّ حَدَّثَهُ قَالَ كُنَّا مَعَ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ بِأَرْضِ الرُّومِ بِرُودِسَ فَتُوُفِّيَ صَاحِبٌ لَنَا فَأَمَرَ فَضَالَةُ بْنُ عُبَيْدٍ بِقَبْرِهِ فَسُوِّيَ ثُمَّ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَأْمُرُ بِتَسْوِيَتِهَا .
সুমামাহ ইবনু শুফাই (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা একবার রোম সাম্রাজ্যের রূদিস নামক উপদ্বীপে ফুযালাহ ইবনু ‘উবায়দ-এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের একজন সঙ্গী মারা গেলে ফুযালাহ তাকে ক্ববরস্থ করতে আদেশ দিলেন। অতঃপর তাঁর ক্ববরকে সমান করে তৈরি করা হল। অতঃপর তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে শুনেছি, তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ক্ববরকে সমতল করে তৈরি করতে আদেশ করেছেন। (ই.ফা. ২১১১, ই.সে. ২১১৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
জামে আত তিরমিযী জানাযা অধ্যায়, ১০৪৯
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ مَهْدِيٍّ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ حَبِيبِ بْنِ أَبِي ثَابِتٍ، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، أَنَّ عَلِيًّا، قَالَ لأَبِي الْهَيَّاجِ الأَسَدِيِّ أَبْعَثُكَ عَلَى مَا بَعَثَنِي بِهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " أَنْ لاَ تَدَعَ قَبْرًا مُشْرِفًا إِلاَّ سَوَّيْتَهُ وَلاَ تِمْثَالاً إِلاَّ طَمَسْتَهُ " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ جَابِرٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ عَلِيٍّ حَدِيثٌ حَسَنٌ . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ بَعْضِ أَهْلِ الْعِلْمِ يَكْرَهُونَ أَنْ يُرْفَعَ الْقَبْرُ فَوْقَ الأَرْضِ . قَالَ الشَّافِعِيُّ أَكْرَهُ أَنْ يُرْفَعَ الْقَبْرُ إِلاَّ بِقَدْرِ مَا يُعْرَفُ أَنَّهُ قَبْرٌ لِكَيْلاَ يُوطَأَ وَلاَ يُجْلَسَ عَلَيْهِ .
আবূ ওয়াইল (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবূল হাইয়ায আলা-আসাদীকে আলী (রাঃ) বললেন, আমি এমন এক কাজের দায়িত্ব দিয়ে তোমাকে পাঠাব যে কাজ করতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে পাঠিয়ে ছিলেন। কোন ধরণের উঁচু কবরকে সমান না করে ছাড়বে না এবং কোন প্রতিকৃতি না ভেঙ্গে রাখবে না।
-সহীহ্, আল আহকাম (২০৭), ইরওয়া (৭৫৯), তাহযীরুস্ সাজিদ (১৩০), মুসলিম৷
জাবির (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান বলেছেন। এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করেন। ভূমি হতে কবর অধিক উঁচু করাকে তার মাকরূহ্ মনে করেন। ইমাম শাফিঈ বলেন, কবর উঁচু করাকে আমি মাকরূহ বলে মনে করি। তবে এটুকু উঁচু তো অবশ্য করতে হবে যাতে করে লোকেরা বুঝে এটা কবর। এর ফলে কবরের উপর দিয়ে তারা চলাফিরা করবে না এবং এর উপর বসবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহীহ্ মুসলিম জানাযা অধ্যায়, ২১৩৬, সুনানে আবু দাউদ জানাযা অধ্যায়, ৩২১৮, ৩২১৯, জামে' আত-তিরমিজি জানাযা ১০৪৯, সুনানে আন-নাসায়ী জানাযা পর্ব ২০৩০, ২০৩১।
উপরে উল্লেখিত সকল হাদীসে এটা খুবই সুস্পষ্টভাবে এসেছে যে, কোনো অবস্থাতেই কবর উঁচু করা যাবে না (শুধুমাত্র কবরের চিহ্ন থাকা যাবে)। কিন্তু আমাদের সমাজে সঠিক ইসলামের জ্ঞান না থাকার কারণে আমরা কবরকে উঁচু করে চলেছি। এটা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যাথাই নেই। ইসলাম বলছে কবর উঁচু করিও না, আর আমরা বিভিন্ন পীর আউলিয়ার নাম দিয়ে তাঁদের কবরকে এত উঁচু করে তৈরি করছি যেন তাঁদের কবর তীর্থস্থান! শুধু তাইনয় যে আশঙ্কার কথা রাসুল (সাঃ) চিন্তা করেছিলেন আজ তাই হচ্ছে এই দেশে। আমরা কখনোই সঠিক ইসলামের পথে ছিলাম না এবং এখনো নেই। তার মূল কারণ ইসলাম সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা। আজ অনেকে জেনেও এইসব বাঁধা দিচ্ছে না। তার কারণ এইসব কবর দিয়ে একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ী মহল ব্যবসায় নিয়োজিত।
কবরকে কেন্দ্র করে উৎসব না করা প্রসঙ্গেঃ
সুনানে আবু দাউদ, হজ্জ্ব অধ্যায় -২০৪২
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ، قَرَأْتُ عَلَى عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نَافِعٍ أَخْبَرَنِي ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قُبُورًا وَلاَ تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا وَصَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُمْ " .
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে ক্ববরস্থানে পরিণত করো না এবং আমার ক্ববরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করো না। (যেমন কবর-পূজারীরা উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে ক’রে থাকে)।তোমরা আমার উপর দরূদ পাঠ করো। তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌছানো হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
হাদিস সম্ভার হক ও অধিকার অধ্যায় ১৬৯৬ ১৬৯৮, আবূ দাঊদ ২০৪৪ নং, বিশুদ্ধ সূত্রে, সহীহুল জামে’ ৭২২৬ নং, মিশকাতুল মাসাবিহ পর্ব-৪ঃ সলাত ৯২৬,রিয়াদুস সলেহিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ ও সালাম প্রসঙ্গে ১৪০৯, মুসনাদে আহমাদ ৭৭৬২, ৮২৩৮, ৮৫৮৬, ৮৬৯৮, ৮৮০৯ নং হাদীস।
এখানে অসংখ্য হাদীস রয়েছে, যেখানে রাসুল (সাঃ) তাঁর কবর নিয়ে ওসিয়ত করছেন। যেন তাঁর কবরকে ঘিরে ইহুদী খ্রিস্টানদের নবীদের মতো কোনো কিছু তৈরি করা না হয় (মসজিদ, মাজার ইত্যাদি যেখানে সিজদা দেওয়া হয়)। যেখানে রাসুল (সাঃ) নিজের কবরকে উৎসবের স্থান করতে নিষেধ করেছেন, সেখানে আমাদের সমাজে আজ এতো বেশী উৎসব চলছে শুধুমাত্র মাজারকে ঘিরে। বিভিন্ন আল্লাহর অলিদের কবর নিয়ে যে মাজার পূজার মতো উৎসব চলছে তা কি সত্যিই ইসলামে আছে? এখানে শতশত হাদিসের দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে কবরকে উঁচু করা যাবে না, পাকা করা যাবেনা, চুনকাম করা যাবেনা, কবরকে ঘিরে কোনো উৎসব করা যাবে না। অথচ আজ এই উপমহাদেশে এইসবই অবলীলায় চলছে।
কবরে কারুকার্য করা নিকৃষ্ট কাজঃ
সহীহ্ বুখারী জানাযা অধ্যায় ১৩৪১
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ هِشَامٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ لَمَّا اشْتَكَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ذَكَرَتْ بَعْضُ نِسَائِهِ كَنِيسَةً رَأَيْنَهَا بِأَرْضِ الْحَبَشَةِ، يُقَالُ لَهَا مَارِيَةُ، وَكَانَتْ أُمُّ سَلَمَةَ وَأُمُّ حَبِيبَةَ ـ رضى الله عنهما ـ أَتَتَا أَرْضَ الْحَبَشَةِ، فَذَكَرَتَا مِنْ حُسْنِهَا وَتَصَاوِيرَ فِيهَا، فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ " أُولَئِكَ إِذَا مَاتَ مِنْهُمُ الرَّجُلُ الصَّالِحُ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا، ثُمَّ صَوَّرُوا فِيهِ تِلْكَ الصُّورَةَ، أُولَئِكَ شِرَارُ الْخَلْقِ عِنْدَ اللَّهِ ".
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসুস্থতার সময় তাঁর এক সহধর্মিণী হাবাশা দেশে তাঁর দেখা ‘মারিয়া’ নামক একটি গীর্জার কথা বললেন। উম্মু সালামা এবং উম্মু হাবীবা (রাঃ) হাবাশায় গিয়েছিলেন। তাঁরা দু’জন ঐ গীর্জার সৌন্দর্য এবং তার ভিতরের চিত্রকর্মের বিবরণ দিলেন। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথা তুলে বললেনঃ সে সব দেশের লোকেরা তাদের কোন নেককার ব্যক্তি মারা গেলে তাঁর কবরে মসজিদ নির্মাণ করত এবং তাতে ঐ সব চিত্রকর্ম অংকণ করত। তারা হলো, আল্লাহর নিকৃষ্ট সৃষ্টি।
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
এই সহীহ্ হাদীসে স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে যে কারো কবরকে কারুকার্য করা খুবই নিকৃষ্ট কাজ। আর এই নিকৃষ্ট কাজই চলছে আমাদের দেশে আল্লাহর অলিদের নিয়ে। যারা সত্যিকারের আল্লাহর অলি তাঁরা কখনোই এইসব অনুমতি দেয়নি। কিন্তু যারা আজ এইসব করছে তারা সুস্পষ্ট ভাবে নিজেদের স্বার্থেই এইসব করে চলেছে।
উপরোক্ত এইসব সহীহ্ হাদীস থেকে প্রমাণিত যে কোন অবস্থায় কবরকে কখনোই পাকা করা, চুনকাম করা, কবরকে মসজিদ নির্মাণ করা, কবরকে সিজদা করা, কবরকে উচুঁ করা, কবরবাসীকে কেন্দ্র করে উৎসব করা ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু তারপরও একশ্রেণীর আলেম ওলামা কীভাবে পীর আউলিয়ার কবরকে মাজারে পরিনত করে ব্যবসার স্থান করেছে? কবরকে ততটুকু সম্মান দেওয়া যাবে যতটুকু দেওয়া উচিত। কবরকে চিহ্নিত করা যাবে। কিন্তু কখনোই এমন উঁচু করা যাবেনা যাতে তা এক মুষ্টি হাতের চাইতে উঁচু হয়। কবরকে চিহ্নিত করার জন্য পাথর দেওয়া যেতে পারে। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কবর যিয়ারত করার অনুমতি পরে দিয়েছিলেন (প্রথম দিক তা বন্ধ ছিল) যাতে কবরকে দেখে মানুষের মনে আখিরাতের কথা স্বরণ হয়। যাতে করে মানুষ দুনিয়ার চিন্তা কম করে পরকালের চিন্তা বেশী করতে পারে।
আর আজ কবর যিয়ারতের নামে নারী পুরুষদের অবাধ মেলামেশা চলছে বিভিন্ন পীর আউলিয়াদের মাজারের কবরে। এইসব কি কখনো ইসলাম সমর্থিত? যেখানে রাসুল (সাঃ) বলছেন এককথা, সেখানে আমাদের ইসলাম সম্পূর্ণ বিপরীতমুখে অবস্থান করছে। মাজারে উৎসবের নামে চলে বেহায়াপনা। শুধু তাইনয় নাচগানের আসর নিয়ে গাঁজার উৎসব চলে। যা ইসলামের জন্য খুবই ভয়ংকর। আজ আমাদের সমাজে সঠিক ইসলামের কোনো চর্চা নেই। যারকারণে দিনদিন সাধারণ মুসলমানগণ সঠিক ধর্ম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এইসব কবরকে ঘিরে মাজার পূজার কারণে সমাজে শির্ক বিদআতের আখড়া তৈরি হচ্ছে। আমরা অধিকাংশ মুসলমানই জানি না এইসব আসলেই ইসলামে নেই। তাই আমাদের উচিত সঠিক ইসলাম জেনে তারপর তা মেনে চলার। আল্লাহ আমাদের সঠিক ইসলাম জানার বুঝার এবং তা মেনে চলার তৌফিক দিন, আমিন।