ভোট,গনতন্ত্র এবং শির্ক
শিরোনাম দেখে অনেকেই অবাক হতে পারেন। শুধু অবাক নয় আমাকে বাতিলের দলে ফেলতেও দ্বিধা করবেন না। তবে যে যাই চিন্তা করুন। আপনারা যদি সঠিক ঈমানের দাবিদার হোন। তাহলে এই বক্তব্য আপনার জন্য।
আমরা কালেমা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ " পড়ে ঈমানদার হই, তারা অনেকেই জানি না যে ঈমানের সাতটি শর্ত রয়েছে। এগুলো হলোঃ
১) ইলম বা জ্ঞানঃ
এই কালেমায়" না" এবং "হ্যাঁ" দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে তা জানা। যে কালেমা পড়ে সাক্ষী দিবে তাকে কালেমার মধ্যে থাকা হ্যাঁ এবং না কী জিনিস তা বুঝত হবে।
২) ইয়াকীন বা দৃঢ় প্রত্যয়ঃ
কালেমার মধ্য দিয়ে যা যা বলা হচ্ছে তা শক্তভাবে স্বীকার করা এবং এর শর্তে অটল থাকা। এই কালেমা পড়ে ঈমানদার হতে হলে কালেমা সম্পর্কিত সকল বিষয়ের উপর দৃঢ়তা থাকতে হবে।
৩) ইখলাস বা নিষ্ঠাঃ
যারা ঈমানের দাবি করবে তাদের এই কালেমা তথা ইসলামের প্রতিটি বিধিবিধান নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। যদি ইসলামের বিধানসমূহ পালনে নিষ্ঠা না থাকে তবে তার কালেমার শর্ত পূরণ হবে না।
৪) সত্যবাদিতাঃ
ঈমানদার হতে হলে তাকে সর্বদা সত্যবাদী হতে হবে । সেই সাথে ইসলামের প্রতিটি বিষয়কে সত্য বলে স্বীকার করে নিতে হবে।
৫) ভালোবাসাঃ
যারা ঈমানদার তাদেরকে এই কালেমা সম্পর্কিত সকল বিষয়বস্তুকে ভালোবাসতে হবে। দুনিয়ার সবকিছু বাদ দিয়ে ইসলামের প্রতিটি বিধানকে পরিপূর্ণ ভাবে ভালবাসতে হবে।
৬) আত্মসমর্পণ বা আনুগত্য করাঃ
ঈমানদারদের কালেমা দাবির প্রতি আনুগত্যশীল হতে হবে। জীবনের সর্বাবস্থায় কখনোই কোনোকিছুতেই পিছপা হওয়া যাবে না। যদি কখনো কোনো কারনে কালেমার দাবির থেকে অর্থাৎ ইসলামী বিধি-বিধান থেকে পিছপা হয় তাহলে সে শর্ত ভঙ্গ করলো।আর শর্ত ভঙ্গ করে কখনোই কালেমার দাবিদার হওয়া যায় না।
৭) আন্তরিকতাঃ
কালেমা পড়ে ঈমান আনলে কালেমার দাবি সমূহ আন্তরিকতার সাথে পরিপূর্ণ করতে হবে। এই কালেমা যা দাবি করে অর্থাৎ ইসলামী বিধি-বিধানের প্রতি পূর্ণ আন্তরিকতা। কোনো কাজের ক্ষেত্রেই শীতিলতা প্রদর্শন করা যাবেনা।
আমরা যারা কালেমা " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ "পড়ে মুসলিম। তাদের অধিকাংশই এই "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর " প্রকৃত অর্থ জানি না। আমরা যা মনে করি তা হচ্ছে -" আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই "। অর্থাৎ আমরা আল্লাহর ইবাদত ছাড়া কারো ইবাদত করবো না। যেমন ঈমানের পর সালাত, সিয়াম, হজ্জে, কুরবানী, যাকাত ইত্যাদিকেই শুধুমাত্র ইবাদত বলে মনে করি। এখানে মাবুদ এবং মাবুদের জন্য ইবাদত দুটি শব্দই আরবি। এই শব্দ গুলোর যথেষ্ট ব্যাখ্যা দরকার। তবে খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে বললে যা দাঁড়ায় - মাবুদ মানে আল্লাহ। আর ইবাদত অর্থ আনুগত্য। অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য।
এখন আনুগত্য কী জিনিস? আনুগত্য হলো যে যার অনুগত। অর্থাৎ যে যার অনুসরণ করে সেই তার আনুগত্যশীল। সোজা ভাবে দাঁড়ায় যে ব্যক্তি যার মতো করে চলে সে ব্যক্তি তার আনুগত্য করে বা তার আনুগত্যশীল।
সুতরাং কালেমার প্রকৃত অর্থ হলো - আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন বিষয় বা ব্যক্তির আনুগত্য করা বা মেনে নেওয়া যাবেনা। অর্থাৎ যিনি নিজেকে মুসলিম দাবি করবেন তিনি তার জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো কোনো আনুগত্য করবে না। আরো সহজ কথা হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া আর কোন সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক নেই। আল্লাহই একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক।
আল্লাহর এই সার্বভৌম ক্ষমতা কয়েকটি বিষয় নিয়ে গঠিতঃ
ক) সৃষ্টির ক্ষমতাঃ
মহাবিশ্বে যত কিছু সৃষ্টি আছে তার একমাত্র মালিক আল্লাহ। তিনি বলেন-
" আল্লাহ তোমাদের রব। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি প্রতিটি বস্তুর স্রষ্টা (অর্থাৎ সৃষ্টি কর্তা) " (সূরা আনআম: ১০২)। এই আয়াতে স্পষ্ট যে আল্লাহ্ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।
খ) বিধি-বিধান আল্লাহরঃ
পৃথিবীর সকল বিষয়ে বিধি-বিধান আইন প্রণয়ন ইত্যাদির মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ। তিনি বলেন -
"জেনে রেখো সৃষ্টি যেহেতু তার সুতরাং সমগ্র সৃষ্টির উপর ক্ষমতা ও একমাত্র তার"( সূরা আরাফ ৫৪")।
সুতরাং যেহেতু আল্লাহ্ ই সমগ্র সৃষ্টি জগতের মালিক সেহেতু আল্লাহই হচ্ছেন একমাত্র বিধানদাতা।
গ) বিচার ও শাসন ক্ষমতাঃ
এই জগতের সবকিছুর বিচার এবং শাসন করার মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহ বলেন -
"আল্লাহ ব্যতীত বিচার ফায়সালা ও শাসন করার ক্ষমতা কারো নেই"। (সূরা নাম আনাম ৫৭)
পৃথিবীতে আল্লাহ্ এবং আল্লাহর আইন ছাড়া কোনো বিচার বা শাসন ব্যবস্থা নেই।
ঘ) নির্বাহী ক্ষমতাঃ
সৃষ্টি জগতে সমগ্র কিছুর উপর নির্বাহী ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। তিনি ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই। আল্লাহ বলেন-
" তিনি যখন কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন তখন শুধু বলেন হও! তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়"(আল ইমরান : ৪৭ )
সুতরাং এই মহাবিশ্বে নির্বাহী ক্ষমতার মালিকও একমাত্র আল্লাহ এবং তাঁর বিধান মোতাবেক সমর্থিত প্রতিনিধিগণ।
আল্লাহর সিফাত বা বিভিন্ন গুণ সমূহঃ
আল্লাহ বিভিন্ন গুণ রয়েছে যা শুধুমাত্র আল্লাহই এর দাবিদার। যেমন কারো জন্ম মৃত্যু রিজিক আপদ-বিপদ ইত্যাদি শুধুমাত্র আল্লাহ ক্ষমতায় হয়। আল্লাহ বলেন -
" আকাশ ও পৃথিবীর চাবি তাঁর কাছে। তিনি যার জন্যে ইচ্ছা রিযিক বৃদ্ধি করেন এবং পরিমিত করেন। তিনি সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী। [ সুরা শূরা ৪২:১২ ]"
তিনি আরও বলেন -
"এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। " [ সুরা বাকারা ২:১৫৫ ]
সুতরাং উপরোক্ত আয়াতে স্পষ্ট যে মানুষের সকল বিপদ-আপদ রোগ-শোক রিজিক হায়াত মৃত্যু ইত্যাদি সবকিছুই আল্লাহর হাতে। এই বিশ্বাস সকল মুসলমান ঈমানদারদের রাখতে হবে।
গনতন্ত্র শির্ক কেনঃ
এখন কথা হচ্ছে এতো কিছুর মধ্যে ভোট বা গনতন্ত্র কীভাবে শির্ক হলো? তা বুঝতে হলে আমাদের একটু ব্যাখার প্রয়োজন আছে।
আগেই কোরআনের আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে পৃথিবীতে যত প্রকার বিধি-বিধান রয়েছে যা মানুষের সৃষ্টি করেছে তা সব বাতিল। পৃথিবীতে একমাত্র আল্লাহই বিধি-বিধান দেওয়ার মালিক। আল্লাহ্ ই সকল শাসনব্যবস্থার মালিক। আল্লাহ্ একমাত্র বিচার করার মালিক এবং আল্লাহ্ ই সকল নির্বাহী ক্ষমতার একচ্ছত্র অধিপতি। সুতরাং আল্লাহর যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে শুধুমাত্র তাই বিশ্ববাসীকে মানতে হবে। যে নিজেকে মুসলিম দাবী করে অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্যশীল দাবি করে। তাকে এটা মেনে নিতে হবে যে পৃথিবীর কোনো বিধান নয় বরং আল্লাহ প্রদত্ত কোরআনের বিধানই তাকে মানতে হবে।
শুধু তাই নয় আল্লাহর বিধান যেখানে নেই সেখানে তাঁর বিধান প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যতরকম সম্ভব চেষ্টা চালাতে হবে। যতরকম ক্ষমতা আছে তার সবটুকু দিয়ে আল্লাহর বিধান দুনিয়ায় প্রতিটি জায়গায় কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেননা দুনিয়ার কোনো সংবিধান, রাষ্ট্রব্যবস্থা বা বিচারব্যবস্থা কখনোই আল্লাহ্ সমর্থন করেন না। " লা ইলাহা ইল্লাল্লা " দ্বারা আল্লাহ্ এটাই দাবি করছেন যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো উপাস্য বা শক্তি নেই। সবকিছুই একমাত্র আল্লাহ্ কেন্দ্রীক। অর্থাৎ দুনিয়ায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজনের মানুষের যাবতীয় কর্মকান্ড আল্লাহর বিধান অনুসারেই হতে হবে। পৃথিবীতে মানুষ শুধুমাত্র ইসলাম দিয়েই সবকিছু পরিচালনা করবে। যে এটা করতে পারবে সে ই মুসলিম।
সুতরাং মুসলিম দাবি করলে তাকে আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে। এখন আমরা দেখি যে আমাদের ৯৫ ভাগ মুসলিমের দেশে আল্লাহর বিধান নেই। অর্থাৎ আল্লাহ যে বিধি নিষেধ দিয়েছেন তা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। সেইসাথে রাষ্ট্রীয় ভাবে বিচারব্যবস্থাও ইসলামের নেই। যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে আল্লাহর সংবিধান প্রতিষ্ঠিত না হয়ে থাকে। তবে আমরা কিভাবে নিজেদের মুসলিম দাবী করছি?
শুধু মুখে বললাম আমরা আল্লাহকেই একমাত্র উপাস্য হিসাবে মানি। কিন্তু আল্লাহর বিধি বিধানকে মানিনা। আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করি না। তাহলে কিভাবে আল্লাহকে মেনে নেওয়া হলো? মুখে মেনে নিলাম কিন্তু কাজে মানলাম না। তাহলে কি কালেমার শর্ত ও দাবি পূর্ণ হলো? কালেমার যে সাতটি শর্ত আছে তা বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্ট হবে যে, কালেমা মুখে নয় বরং প্রতিদিনের জীবনযাপনে মেনে নেওয়া এবং বাস্তবায়নের বিষয়।
এখন আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। যেখানে আল্লাহর বিধি-বিধান নেই। মানুষের তৈরি আইন ও বিধি-বিধান পালন করে মানুষের আইনের ইবাদত করছি। অর্থাৎ মানুষের আনুগত্য করছি। অথচ" লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ " হচ্ছে একমাত্র আল্লাহকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মনে করা। সেখানে আমরা আল্লাহকে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করে তাঁর সমকক্ষ তৈরি করে তার সাথে অংশীদার স্থাপন করছি।
যদি নিজেদের মুসলিম দাবী করি তবে এইসব আইন মানা যাবে না। যদি বাধ্য হই তবে এসব আইন সৃষ্টিতে সাহায্য করা যাবেনা। বর্তমানে আমরা বাধ্য হয়ে আইন বিধি বিধান ইত্যাদি মেনে নিয়েছি। কিন্তু এক প্রকারে আমাদের সাহায্য নিয়েই কিন্তু এসব আল্লাহ বিরোধী আইন তৈরি হচ্ছে।
এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, শয়তান মানুষকে সিজদা করে না করে আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছে। কিন্তু এই আদেশ অমান্য করে নতুন কোনো আদেশ বা আইন তৈরি করেনি। যেমন সেজদা না করে প্রণাম বা নমস্কার এই জাতীয় কিছু তৈরী করেনি। কিন্তু আমরা গণতন্ত্রের মাধ্যমে প্রথমে আল্লাহর আদেশ বাতিল করছি। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর আইন অমান্য করে তার পরিবর্তে নতুন আইন সৃষ্টি করেছি। যে কাজ শয়তান করেনি সেই কাজ আমরা করছি। তাহলে আমরা এক্ষেত্রে শয়তানের চেয়েও নিকৃষ্ট।
যেহেতু আমরা কালেমা পড়ে মুসলিম দাবি করি। তাই কালেমার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। এটা ছাড়া কালেমা কখনোই পূর্ণ হবে না। কালেমা বলছে আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য করা যাবে না। তাহলে আল্লাহর আইন বাদ দিয়ে মানুষের আইন দিয়ে চলছি। তাহলে কিভাবে কালেমার দাবি পূরণ হলো ?
তৎকালীন মক্কার আবু জাহেল এবং তার অনুসারীরা আল্লাহকে মানতো। কিন্তু তারা আল্লাহর আইনকে মানতে পারেনি। আল্লাহর আইনকে মানতে না পারার কারণে তারা কাফির। ঠিক একইভাবে আমরাও আল্লাহর আইন না মেনে কিভাবে মুসলিম থাকতে পারি? দ্বিতীয় কথা হল পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে মুনাফেকী মুসলিমের কারণে আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মানুষের আইন মানতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু আমাদের নিজেদের অজ্ঞতার কারণেও আমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে আইন তৈরিতে সহযোগী হচ্ছি। এবং নিজেরাও মুনাফিক হচ্ছি।
আমরা যে কত সহজে শির্ক করছি আর মুনাফিক হচ্ছি তা নিজেরাও জানিনা। যদি প্রশ্ন করা হয় কিভাবে আমরা শির্ক করছি বা মুনাফিক হচ্ছি? তার সহজ উত্তর হচ্ছে গণতন্ত্রে ভোট দেওয়ার মাধ্যমে। ভোটে আমরা এমপি নির্বাচন করি। সেই এমপিরা সংসদে গিয়ে আইন তৈরি করে। যেমন ইসলামে আছে চুরি করলে হাত কাটতে হবে। যে চুরি করে সে যদি স্বভাবের কারণে চুরি করে তাহলে তার হাত কেটে দিতে হবে। কিন্তু যে পেটের দায়ে চুরি করে তাহলে তাকে রাষ্ট্র পরিপূর্ণভাবে খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে। এবং এটাই আল্লাহর আইন।
বর্তমানে অভাবের চোর নেই বরং স্বভাবে চোরই বেশী। যাদের পয়সা আছে তাদের আরো পয়সার লোভের কারণে বিভিন্ন দুর্নীতি করে। যদি ইসলামী আইন হয় তবে এইসব স্বভাব-চরিত্রের চোরদের হাত কাটা যাবে। আর গরিব কেউ চুরি করলে তাকে রাষ্ট্র খাবারের ব্যবস্থা করে দিবে। কিন্তু গণতন্ত্রের দুটোই অসম্ভব। গরীবকে চাকরি দেওয়া যাবে না আর পয়সাওয়ালার হাত কাটা যাবে না। তাই নতুন আইন করতে হবে।
আইন কারা করবে? এই আইন সকল এমপিরা মিলে সংসদে পাস করবে। তারা হাত কথার বদলে ছয় মাসের জেল-জরিমানা ইত্যাদি ব্যবস্থা করল। যাতে গরিবের গরিবি আরো বাড়ে আর পয়সাওয়ালা কিছুই না হয়। কেননা সে জরিমানা দিয়ে চলে আসবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে তৈরি করল এসব আইন? উত্তর এমপিরাই তৈরি করল? আর তাদের এমপি বানালো কে? উত্তর আমার আপনার মত নামধারী মুসলিমরাই ভোট দিয়ে এমপি বানিয়েছি। আর এই এমপিরা আল্লাহর আইনের বিরুদ্ধে নিজেদের সুবিধামতো আইন করল।
আমরা যদি কেউ ভোট না দিতাম তাহলে এইসব এমপি তৈরি হত না। আরএমপি না হলে আইন তৈরী হতোনা। এখানে কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট। ভোট দেওয়ার সাথে সাথে আমরা এমপির সকল কাজের অংশীদার হলাম। অর্থাৎ এমপিরা যা করবে তার সব ভাগ আমাদের উপর বর্তাবে। তিনি ভাল কিছু করলে বা খারাপ কিছু করলে তার সবকিছুই আমাদের ওপর থাকবে। যদি দুনিয়াবী চুরি-চামারি খুন ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ এমপিরা করে তাহলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তাকে আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন।
কিন্তু আল্লাহর বিরুদ্ধে আইন করে তার সাথে অংশীদার করে শিরিক করার অপরাধ করলে আল্লাহ কখনোই ক্ষমা করবেন না। কেননা শির্ক বা আল্লাহর অংশীদার খুবই মারাত্মক অপরাধ। জেনে না জেনে না যে শির্কের অপরাধ আমরা করছি তা আল্লাহ কেয়ামতে কখোনই ক্ষমা করবেন না। সুতরাং ইসলাম প্রতিটি ভালো কাজের সওয়াব যেমন আছে ঠিক তেমনি প্রতিটি খারাপ কাজেরও ভাগ রয়েছে। সুতরাং কোন খারাপ কাজের অংশীদার হলে তার ভাগও আমাদের নিতে হবে।
যেহেতু শক্তি দিয়ে গণতন্ত্র বন্ধ করা যাচ্ছে না। তখন আমাদের কী করনীয়? যদি আমরা কালেমা মেনে নিজেদের ঈমানদার দাবি করতে চাই । তাহলে এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? এর সহজ উত্তর হলো। যেহেতু শক্তি দিয়ে (একত্রিত হতে না পারার কারণে) আমরা দুর্বল সেহেতু শক্তি দিয়ে সম্ভব নয়। আমাদের চেষ্টা হবে এই কাজে সহযোগী না হওয়া। আমরা কারো দায়িত্ব নেব না অর্থাৎ আমরা কাউকে ভোট দিব না। সোজা কথায় ভোট না দিয়ে আমরা গণতন্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করলাম। এটাই আমরা শক্তি দিয়ে পেরেছি। সুতরাং যতটুকু আমাদের সামর্থ্য পারব ততটুকই আল্লাহ কবুল করবেন ইনশাআল্লাহ। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে না পারার কারণে যে যেই অবস্থানে আছি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। যদি এটাও সম্ভব না হয় তবে নিজেদের কিভাবে মুসলিম দাবি করবেন? তাদের ভেবে দেখা দরকার যারা আল্লাহর কালেমা পরেও ভোট দিয়ে এখনো আল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন!
উপরের বিষয়গুলো খুব গভীরভাবে খেয়াল করলে আমরা সত্য উপলব্ধি করতে পারবো। আমাদের সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ এবং আল্লাহর আইনকেই মানতে হবে। আল্লাহর আইনকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যেই রাসুল (সাঃ) কে মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় যেতে হয়েছিল। ঠিক তেমনি আমাদেরও উচিত যেকোনো ভাবে আল্লাহর আইন সমুন্নত করার। যদি সম্ভব না তবে আল্লাহর বিরুদ্ধে কেউ কিছু করলে তা সহযোগিতা না করা।
এখন আমরা যদি ভোট দেই তাহলে আমরা গনতন্ত্রকে আল্লাহর পরিবর্তে মেনে নিলাম। অর্থাৎ আল্লাহর আইনের ছেড়ে মানুষের আইন প্রতিষ্ঠিত করলাম। যদি গনতন্ত্রকে সাপোর্ট না করে ভোট না দেই তাহলে আমরা যতটুকু সম্ভব আল্লাহর আযাব থেকে নিরাপদ হলাম। (যদি সম্ভব হয় মানুষের আইনের পরিবর্তে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করতে হবে)। সুতরাং ভোট দিলেন তো আল্লাহর অংশীদার করলেন। আর অংশীদার মানেই শির্ক।
ভুল ত্রুটি গুলো কমেন্টে জানালে সঠিক হিদায়াত প্রাপ্ত হতাম। যে কাজে আল্লাহ্ আপনাকে সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ্।
অন্যান্য শির্ক সমূহঃ
ইবাদতের শির্ক
আল্লাহর সিফাতের সাথে শির্ক
রাষ্ট্রীয় শির্ক
ভোট গনতন্ত্র এবং শির্ক