আসমাও সিফাত কী? মানুষ কীভাবে আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক করে |
আসমাও সিফাত কী? মানুষ কীভাবে আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক করে
শিরক এমন একটি অপরাধ, যা আল্লাহ তওবা ছাড়া ক্ষমা করেন না। অথচ আমাদের উপমহাদেশে সালাত, সিয়াম, হজ্জ্ব, যাকাত ইত্যাদি ইবাদতকে যতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয় শিরক সম্পর্কে ততটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এমনকি অধিকাংশ মুসলমান জানেই না শিরক কী। আজ আমরা আল্লাহর আসমাও সিফাত তথা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর সাথে মানুষ কীভাবে শিরক করে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।
শিরক কী
সহজ ভাষায় শিরক অর্থ অংশীদার, শরিকদার কিংবা ভাগিদার। যেমন দুজনে মিলে কোনো একটি ব্যবসা করলাম সমান শরিকদারে। অর্থাৎ ঐ ব্যবসায় দুজনের সমান ভাগ। ঠিক তেমনি কোনো বিষয়ে, কাজে বা ক্ষমতায় আল্লাহর সাথে অন্য একজনকে সমান বা কম বেশী ভাগ বা অংশ দেওয়াকে বলা হচ্ছে শিরক বা আল্লাহর অংশীদার। এই ভাগ দেওয়া হতে পারে আল্লাহ যা পারেন তা অন্য কেউ তার সমান বা কম, বেশি পারেন। হতে পারে আল্লাহর জন্য যা করলাম তার সমান বা কম বেশি অন্য কারো জন্য করলাম। এটাও হতে পারে আল্লাহরটা মানলাম আবার অন্যের তৈরি আল্লাহর বিরুদ্ধেরটাও মানলাম। অর্থাৎ যেসব বিষয় শুধুমাত্র আল্লাহর, সেখানে তাঁর সাথে অন্য কারো তুলনা করা, মানা বা সম্মান করাই হচ্ছে শিরক বা আল্লাহর সাথে অংশীদার করা।
যেমনঃ সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে, তাঁর বিধান মানতে হবে এবং তাঁর সিফাতের সাথে কারো তুলনা করা যাবে না। এখানে তিনটি বিষয় রয়েছে। আজ আমরা আল্লাহর আসমাও সিফাতের বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করব। অর্থাৎ আল্লাহর যেসব নাম ও গুণাবলী রয়েছে তাঁর সেইসব গুণ যদি অন্যের আছে বলে মনে করি তাহলে সেটা হবে আল্লাহর গুণের সাথে শিরক। জেনে না জেনে কীভাবে আমরা শিরকে জড়িয়ে পড়ছি সেটাই আজ আমরা জানার চেষ্টা করব।
আরও পড়ুন শিরক কী? মানুষ কীভাবে শিরক করে
আল্লাহর সিফাত সমূহ কী
আল্লাহর ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে। এইসব গুণসমূহের অধিকারী শুধুমাত্র আল্লাহ। যদি কেউ এইসব গুণ অন্য কারো আছে বলে মনে করে তাহলে সেটা হবে শিরক। যেসব গুণ আল্লাহর আছে তা আর কারো থাকতে পারে না। আল্লাহর গুণসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- তিনি সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, জীবন-মৃত্যু দানকারী, সন্তান দানকারী, ফসলদাতা, সুপারিশকারী, ক্ষমাকারী, শাস্তিদাতা, সমস্ত ধনভান্ডারের মালিক, তিনি গায়েবের মালিক, তাঁর জ্ঞান সর্বত্র বিরাজমান, ভরসার মালিক, গোলামীর মালিক ইত্যাদিসহ আরো অনেক সিফাত রয়েছে। এইসব গুণসমূহ শুধুমাত্র আল্লাহর। তিনি ব্যতীত কেউ এইসব গুণের অধিকারী নয়।
আল্লাহর সিফাতের শিরক
আমাদের উপমহাদেশে আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ গুণসমূহ নিয়ে মারাত্মক শিরক চলছে। এই পৃথিবীতে আল্লাহ মানুষকে পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য। আল্লাহ বলেন -
"এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।" (সুরা বাকারা ২:১৫৫ )
আল্লাহ স্পষ্ট বলছেন তিনি আমাদের বিভিন্ন বিষয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করবেন। অথচ মানুষ আল্লাহর এইসব পরীক্ষার ধারেকাছেও নেই। তারা বিভিন্নভাবে আল্লাহর সকল গুণাবলীগুলো তাঁর বান্দাদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছে। আর এভাবেই মানুষ আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক করে। এখন আমরা দেখব মানুষ কীভাবে আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক করে।
আরও পড়ুন সুফি সুন্নিদের পীর আউলিয়া সম্পর্কিত আকিদার জবাব
সন্তান দেওয়ার ক্ষমতা
আমরা জানি সন্তান দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর। অথচ আমাদের উপমহাদেশে যারা সুফি সুন্নি আকিদায় বিশ্বাসী, তারা বিশ্বাস করে তাদের পীর অলি আউলিয়ারাও সন্তান দিয়ে থাকেন। অথচ আল্লাহ বলেন,
"নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের রাজত্ব আল্লাহর। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান" (শূরা ৪২/৪৯-৫০)
এখানে আল্লাহ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে সন্তান দিবেন এবং যাকে ইচ্ছা দিবেন না। যাকে ইচ্ছা ছেলে মেয়ে উভয়ই দিবেন। মোটকথা সন্তান দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ। সুতরাং যাদের সন্তান হচ্ছে না বা যাদের পুত্র সন্তান দরকার তাদের উচিত শুধু আল্লাহর কাছে চাওয়া। অথচ সুফি সুন্নিরা আল্লাহর কাছে না চেয়ে না গিয়ে পীর অলি আউলিয়ার মাজারে মানত করে। আর এভাবেই যে ক্ষমতা আল্লাহর সেই ক্ষমতা তাঁর বান্দার আছে বলে মনে করার কারণে আল্লাহর সাথে শিরক করা হয়। যা ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। (মাজারে দান)
আরও পড়ুন প্রবৃত্তির অনুসরণ ও তার পরিনতি
রিজিক বৃদ্ধি
অধিকাংশ জন্মগত মুসলমানদের ধারণা চাকরি, ব্যবসা বাণিজ্য, সংসারে আয়-উন্নতি ইত্যাদির জন্য মাজারে মানত করা প্রয়োজন। কেননা মাজারে মানত করলেই বুঝি রিজিক বাড়বে। অথচ আল্লাহ বলেন,
"আকাশ ও পৃথিবীর (সমস্ত কিছুর) চাবি তাঁর কাছে। তিনি যার জন্যে ইচ্ছা রিজিক বৃদ্ধি করেন এবং পরিমিত করেন। তিনি সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী।" (সুরা শূরা ৪২:১২)
এইরকম অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন রিজিক দেওয়া, বাড়ানো, কমানো ইত্যাদি সবকিছুই তাঁর হাতে। তিনিই একমাত্র এইসবের মালিক। এমনকি তিনি কাউকে এইসব করার জন্য নিযুক্ত কিংবা সাবকন্ট্রাক্টও দেননি। তারপরও কীভাবে পীর অলি আউলিয়া মাজারবাসীরা মানুষের রিজিক বৃদ্ধি কবরে? যারা এটা বিশ্বাস করবে যে মাজারবাসীরাও রিজিক দিয়ে থাকেন, তাহলে সাথে সাথেই আল্লাহর সাথে শিরক হবে।
জাদুটোনা করা
মানুষের লাভ ক্ষতির উদ্দেশ্যে একশ্রেণির লোকেরা জাদুটোনা করে। যা স্পষ্টত শিরক। কেননা আল্লাহ ব্যতীত কেউ লাভ ক্ষতি করতে পারে না। যদি কেউ কোনো সমস্যায় পতিত হলে চাইতে আল্লাহর কাছে। আল্লাহ বলেন-
"তোমাদের কাছে যে সমস্ত নেয়ামত আছে, তা আল্লাহরই পক্ষ থেকে। অতঃপর তোমরা যখন দুঃখে-কষ্টে পতিত হও তখন তাঁরই নিকট কান্নাকাটি কর।" (সুরা নাহল ১৬:৫৩)
অতএব যেকোনো বিপদে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। যদিও জাদুটোনা সত্য। কিন্তু জাদুটোনা করা নিষিদ্ধ। জীবনের যেকোনো বিপদ আপদে শুধুমাত্র আল্লাহর সাহায্যই নিতে হবে। প্রয়োজনে ইসলামি যেসব রুকাইয়া আছে তা অবলম্বন করতে হবে।
আরও পড়ুন বর্তমান সমাজের মুনাফিকের পরিচয় ও পরিনতি
ভরসা মাজারের
আল্লাহ আমাদের নানান বিপদ আপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। এইসব বিপদে আমাদের ভরসা রাখতে হবে সবসময় আল্লাহর উপর। কিন্তু আমরা ভরসা করি বিভিন্ন আল্লাহর বান্দার উপর। যেমন "হে গাউসুল আযম আবদুল কাদের জিলানী। অর্থাৎ "হে বড় উদ্ধারকারী আবদুল কাদের জিলানী। খাজা গরীবে নেওয়াজ (গরিবরা যার মুখাপেক্ষী), মুশকিল কোশা (যার মাধ্যমে বিপদ আপদ দূর হয়), কাইয়ূমে যামান (যামানা কায়েম করেছেন যিনি) ইত্যাদি।
অথচ এই পৃথিবীতে যেকোনো সময় সবচেয়ে বড় উদ্ধারকারী হচ্ছেন আল্লাহ। তিনিই বিপদ আপদ দূর করেন তিনিই যামানা সৃষ্টি করেন, আর তাঁর কাছেই ধনী, গরীব দুঃখী সবাই মুখাপেক্ষী। যে গুণ গুলো শুধুমাত্র আল্লাহর সেই গুণ গুলো আমরা দিয়ে দেই তাঁর বান্দাদের। এর মাধ্যমে খুবই সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর সাথে শিরক হচ্ছে। যারা এইসব বলা জায়েজ মনে করেন তারা কি এর স্বপক্ষে কিংবা কুরআনের বিপক্ষে আয়াত দেখাতে পারবেন? যেখানে আল্লাহ বলেন,
"আল্লাহকে ভয় কর এবং মুমিনদের আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত।" (সুরা মায়েদা ৫:১১)
এই আয়াতসহ আরও অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ সর্বাবস্থায় তাঁর উপরই বান্দাদের ভরসা করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। সেখানে আল্লাহর উপর ভরসা না করে তাঁর বান্দার উপর ভরসা করার সাথে সাথে আমরা আল্লাহর শিরকে জড়িত হই।
বান্দার গোলামী
আমরা অনেকেই না বুঝে রাসুল (সা.) কে আল্লাহর সমকক্ষ তৈরি করি। অথচ রাসুল (সা.) অনুসরণ করতে হবে এবং ভালোবাসতে হবে। কিন্তু তাঁর বা অন্যান্য কোনো আল্লাহর বান্দার বন্দেগী বা গোলামী করা যাবে না। আমরা গোলাম হচ্ছি একমাত্র আল্লাহর। রাসুল (সা.) বা আল্লাহর কোনো বান্দার নয়। তবুও না জেনে নাম রাখি আব্দুন্নবি, গোলামে রাসুল (নবির গোলাম), গোলাম মুছত্বফা (মুছত্বফার গোলাম), আলী বখশ (আলী রা.-এর দান), হোসেন বখশ (হুসাইন রা. এর দান), পীর বখশ (পীরের দান) ইত্যাদি। অথচ আল্লাহ বলেন,
"তিনি (আল্লাহ) নভোমন্ডল, ভূমন্ডলে এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সবার পালনকর্তা। সুতরাং তাঁরই বন্দেগী (গোলামী) করুন এবং তাতে দৃঢ় থাকুন আপনি কি তাঁর (সম গুণসম্পন্ন এমন) নামে কাউকে জানেন (যে তার বন্দেগী করবেন)?" (সুরা মারঈয়াম ১৯:৬৫)
সুতরাং সর্বাবস্থায় আমাদের বন্দেগী বা গোলামী করতে হবে আল্লাহর। সেখানে অন্য কারো গোলামী করে আল্লাহর সাথে শিরক করা যাবে না।
আরও পড়ুন সুফিবাদ কী? কীভাবে উৎপত্তি এবং বর্তমান অবস্থা
ফসলের জন্য মাজারে মানত
"তাঁর একটি (উল্লেখযোগ্য) নিদর্শন এই যে, আপনি ভূমিকে দেখবেন অনুর্বর পড়ে আছে। অতঃপর আমি যখন তার উপর বৃষ্টি বর্ষণ করি, তখন সে শস্য-শ্যামল ও উর্বর হয়। নিশ্চয়ই তিনি একে জীবিত করেন, তিনি জীবিত করবেন মৃতদেরকেও। নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু করতে সক্ষম।" (হা-মীম সাজদা ৪১/৩৯)
গায়েবের মালিক
আল্লাহ ছাড়া কোনো নবি বা অলি গায়েবের খবর জানেন না। নবি রাসুল (সা.)গণ ততটুকু জানতে যতটুকু আল্লাহ তাঁদের জানিয়েছেন। যা জানাননি তা তাঁরা জানেন না। আল্লাহর অলিরা কখনোই গায়েব জানেন না। আল্লাহ বলেন -
"বলুন, আল্লাহ ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ গায়বের খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে।" (সুরা নাম’ল ২৭:৬৫)
কেউ যদি মনে করেন এই মহাবিশ্বে আল্লাহ ছাড়াও অন্যরাও তাঁর বিষয়াদির খবর জানেন তবে তা স্পষ্ট শিরক।
আরও পড়ুন উছিলা কী? উছিলার বিস্তারিত ব্যাখ্যা
নবি অলিরা সর্বত্র বিরাজমান
অনেকেরই বদ্ধমূল ধারণা যে নবি অলিরা তাদের উম্মত মুরিদদের সবসময় দেখেন। তাদের যেকোনো ফরিয়াদ শুনেন। অথচ আল্লাহ বলেন-
"তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, আমি শুনি ও দেখি।" (সুরা ত্বা-হা ২০:৪৬)
আল্লাহ নিজেই যে গুণে গুণান্বিত সেই গুণ কী করে অন্যেরা পেতে পারেন। একমাত্র আল্লাহর জ্ঞানই সর্বত্র বিরাজমান। তিনি ছাড়া আর কারো জ্ঞানই সর্বত্র বিরাজমান হতে পারে না। সুতরাং নবি অলিদের সর্বত্র বিরাজমান মনে করলেই তা আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক হবে।
সুপারিশকারী
প্রকৃত সুপারিশকারী একমাত্র আল্লাহ। নবি (আঃ) রাসুল (সা.) সহ বিভিন্ন নেককার বান্দার অবশ্যই সুপারিশ করতে পারবেন। তবে তা আল্লাহর অনুমতির পর। আল্লাহর অনুমতি নিয়ে এবং নির্ধারিত সীমার মধ্যেই নবি রাসুল ও নেককার বান্দারা সুপারিশ করবেন। আল্লাহ বলেন-
"কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া?" (সুরা বাকারা ২: ২৫৫)
আল্লাহ আরো বলেন-
"তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমাপ্রার্থনা কর, তথাপি কখনোই তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তা এজন্য যে, তারা আল্লাহকে এবং তাঁর রাসুলকে অস্বীকার করেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ না-ফারমানদেরকে পথ দেখান না।" (সুরা তাওবা ৯:৮০)
সুতরাং আল্লাহর অনুমতি না থাকলে কেউ কারো জন্য সুপারিশ বা ক্ষমাপ্রার্থনাও করতে পারবে না। যে আল্লাহর নির্দেশিত রাসুলের (সা.) রাস্তায় চলার চেষ্টা করবে সেই শুধুমাত্র সুপারিশকারী পাবে। কেউ আল্লাহর পরিবর্তে পীর আউলিয়াদের সুপারিশকারী মনে করলে তা আল্লাহর সাথে শিরক হবে।
আরও পড়ুন ইবাদত কবুল হওয়ার শর্তসমূহ
হিদায়াতের মালিক পীর
অধিকাংশ মানুষের ধারণা এবং সুফি সুন্নিদের পীরের দরবারে গেলেই তারা হিদায়াত প্রাপ্ত হয়ে যাবেন। অথচ আল্লাহ বলেন,
"আল্লাহ্যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা সঠিক পথে রাখেন।" (সুরা আনআম, ৬:৩৯)
অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ নিজেই তাঁর বান্দাদের হেদায়েত দিয়ে থাকেন। আল্লাহ বলেন,
"হেদায়েত ও রহমত সৎকর্মপরায়ণদের জন্য।" (সুরা লুকমান ৩১:৩)
সুতরাং যারা সৎকর্ম করে তারাই আল্লাহর হেদায়েত পাবে। আল্লাহ আরও বলেন,
"এমনিভাবে আমি সুস্পষ্ট আয়াত রূপে কোরআন নাযিল করেছি এবং আল্লাহ-ই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন।" (সুরা: হাজ্জ্ব, আয়াত: ১৬) "
অর্থাৎ আল্লাহ কুরআনের মাধ্যমেই মানুষকে হেদায়েত দিয়ে থাকেন। যারা কুরআন পড়ে জানে বুঝে এবং আমল করে তারাই আল্লাহর হেদায়েত পেয়ে থাকে। সুতরাং যারা কুরআনকে মেনে ইসলামের বিধিবিধান পালন করবে তাদের হিদায়াত দেওয়ার মালিক আল্লাহ। অতএব আল্লাহ না চাইলে কোনো পীর আউলিয়া চাইলেই কাউকে হেদায়েত দিতে পারে না। যদি কেউ এমন মনে করে তাহলে তা হবে শিরক।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম কীভাবে এবং কী কী উপায়ে আল্লাহর সিফাতের সাথে শিরক করা হয়। সুতরাং আমাদের উচিত হবে আল্লাহর সিফাত সম্পর্কিত যেকোনো শিরক থেকে বেঁচে থাকা। কেননা শিরক হলো এমন একটি পাপ, যে পাপের কোনো ক্ষমা নেই তওবা ছাড়া।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম