সর্বজন স্বীকৃত যে, ইসলামী শরীয়তের মুল উৎস হলঃ কুরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস। আর সুফিগণের কাছে ইসলামের এইসব উৎসের গুরুত্ব খুবই কম। সুফিদের এইসবের পাশাপাশি আলদা শরীয়তের উৎস রয়েছে। যেহেতু তারা ইসলামের অনুসারী বলে দাবি করে, তাই তারা ইসলামের মুল উৎস কুরআন, হাদিস, ইজমা, কিয়াস এর পাশাপাশি ইলহাম, কাশফ, স্বপ্ন এবং মৃত কল্পিত অলী-আওলীয়াদের থেকে প্রত্যাদেশকে দলীল হিসাবে পেশ করে।
ইলহামঃ
সুফিদের আকিদা হচ্ছে কোনো বুজুর্গ যদি ইলহামের মাধ্যমে কোনো কিছুর আদেশ প্রাপ্ত হয় তাহলে তা শরীয়তের অংশ বলে মনে করে। এবং ঐ স্বপ্নের প্রত্যাদেশ অনুযায়ী আমল করে। ইলহাম হচ্ছে মনের মধ্যে কোন কথা সৃষ্টি করে দেয়া কিংবা স্বপ্নে কিছু দেখিয়ে দেয়া। মহান আল্লাহ অনেক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অন্তরে অনেক কথা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। হাদিসে কুদসি যার প্রকৃষ্ট উদাহরন রয়েছে ।
অপর পক্ষে তাঁর স্বপ্ন যে ওহী এর স্বপক্ষে শত শত সহিহ হাদিস বিদ্যমান। স্বপ্নে কিছু দেখিয়ে দেয়া, যেমন হযরত ইবরাহীম ও ইউসুফকে দেখানো হয়েছিল (সুরা ইউসুফ ১২:৪ ও ১০০ এবং সূরা সাফ্ফাত ৩৭:১০২)। অর্থাৎ যে কথা নবীর মনের ভাবনা আল্লাহ কতৃর্ক উদভাসিত হত অথবা স্বপ্ন যোগে নবীকে জানিয়ে দিতেন তাই ইলহাম।
এখানে মাধ্যম হিসাবে ফিরিশতা ছিল না। সাধারণ কোন শব্দ বা বাক্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়না। কেবল বিষয়বস্তু অন্তরে জাগ্রত হয়, যা পয়গম্বরগণ নিজের ভাষায় ব্যক্ত করেন।
সুফিগন এই ইলহামের দাবি করে থাকে। যেমনঃ সুফি জালালুদ্দিন রুমি তার লিখিত ‘মছনবী শরীফ’ যা মীনা বুক হাউস থেকে ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছে তার ৩৯৭ পৃষ্টায় একটা অধ্যয়ের নাম দিয়েছেন, “আল্লাহর তরফ থেকে রুমির প্রতি এলহামী বর্তা” তিনি সেখানে লিখেন,
“কাফিয়া আন্দেসামও দেলদারে মান। গোয়াদাম মন্দেশ জুয দীদারে মান”।
অর্থঃ " ছন্দ গাথায় চিন্তা কল্পনা করি কিন্তু আমার প্রেমাম্পদ (আল্লাহ) আমাকে বলেন, আমাকে দেখা ভিন্ন অন্য কোন চিন্তা কর না।"
এর ব্যাখ্যায় বলা হয়, ইলহামের মাধ্যমে অলিদের কাছে আল্লাহর বার্তা আসে। কিন্তু ইলহাম অকাট্য নয়। এর পর ৪০০ পৃষ্ঠায় বলেন “তোমার সাথে ঐ সব কথা হবে যা আমি আদম থেকেও গোপন রেখেছি। তোমার সাথে সে কথাই বলল হে বিশ্বজোড়া অসংখ্য রহস্যের আকর”। রুমীকে ইলহামের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বলেন, তিনি অক্ষর, শব্দ ও আওয়াজবিহীন বার্তা তার কাছে পৌছাবেন এবং সে বার্তা এমন হবে যা আদম আলাইহিস সালাম, ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এমনটি কি জিব্রাইল আলাইহিস সালামের নিকট ও গোপন ছিল। (মসনবী রুমী পুষ্ঠা ৪০০)।
সুফিবাদীরা ইলাহামের দাবি করে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলেন, আদেশ, নিষেধ দান ইত্যাদি করেন। কিন্তু নবী রাসুলদের নিকট অহি আসত এটা নবীদের বৈশিষ্ট্য। অলিদের মনে মনেও ইলহাম হতে পারে। শুধু অলি কেন? যেকোনো মানুষেরই মনে মনে বিভিন্ন ধরনের কথা চিন্তা চেতনা জাগ্রত হতে পারে। এটা মানুষের একটি মানবিক দিক।
কিন্তু তিনি কখনোই একথা বলতে পারবেন না যে, এটা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ইলহাম আর এটা তার মনের প্রবৃত্তির ফসল নয়। মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেনঃ
" কোন মানুষই এ মর্যাদার অধিকারী নয় যে, আল্লাহ তার সাথে সরাসরি কথা বলবেন৷ তিনি কথা বলেন হয় অহীর (ইংগিত) মাধ্যমে, অথবা পর্দার আড়াল থেকে, কিংবা তিনি কোন বার্তাবাহক (ফেরেশতা) পাঠান এবং সে তার হুকুমে তিনি যা চান অহী হিসেবে দেয়। তিনি সুমহান ও সুবিজ্ঞ৷" (সুরা শুরা ৪২:৫১)।
এই আয়াতে কারিমায় বলা হয়েছে তিনটি উৎস থেকে ওহী আসতে পারে।
১) জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে।
২) ইলহাম এর মাধ্যমে।
৩) পর্দার অন্তরাল থেকে সরাসরি কথার মাধ্যমে।
সুতরাং কোন নবী রাসুল ছাড়া কেউই বলতে পারবেন না আমার মনের এই চিন্তাধানা আল্লাহ ইলহাম করেছেন। অকাঠ্য ইলহামের দাবি করলে তাকে নবী হতে হবে। অথচ সুফিগন তাদের কিতাবাদিতে এই সকল ইলহামের দাবি করে যা অহীর সমতুল্য।
অতএব সুফিগণ ইলহামের ভিত্তি যেসব বিভিন্ন ঈমান আকিদা আমলের চর্চা করে তা কখনোই ইসলামী শরীয়তের সমর্থনযোগ্য নয়। আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুল এমন কোনো দিকনির্দেশনা দেননি যে, রাসুল পরবর্তীতে আল্লাহ্ বিভিন্ন অলি আউলিয়াদের দিয়ে নতুন নতুন ঈমান আমল আকিদা বিশ্ববাসীর জন্য প্রেরণ করবেন। যদি এমন কোনো কিছুর দলিল সুফিরা দেখাতে পারেন যে, রাসুল পরবর্তীতেও ইসলামে নতুন করে কিছু যোগ বিয়োগ করা যেতে পারে, তাহলে তাদের কথা সত্য বলে প্রমাণিত হবে। অন্যথায় তারা ইসলামের নামে সাধারণ মুসলমানদের অজ্ঞতার সুযোগে প্রতারণা করছে।
কাশফঃ
সুফিদের মতে মানুষ আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে তার হৃদয়ের পর্দা উঠে যায় এবং তাদের সামনে সৃষ্টি জগতের সকল রহস্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। তার অন্তর আত্মা খুলে যায়। এবং এই অন্তর আত্মা খুলে যাওয়া কে তাদের পরিভাষায় কাশফ বলা হয়।
কাশফ হাসিল হয়ে গেলে আল্লাহ এবং সুফী সাধকের মাঝে কোন অন্তরায় থাকে না। তখন তারা জান্নাত, জাহান্নাম, সাত আসমান, জমিন আল্লাহর আরশ, লাওহে মাহফুজ পর্যন্ত ঘুরে আসতে পারেন। তারা গায়েবের সকল খবর, মানুষের অন্তরের অবস্থা এবং সাত আসমানে, জমিনে যা আছে তার সবই জানতে পারেন। তাদের স্বীকৃত যত অলী আওলীয়া আছে তাদের সকলেরেই কাশফ হত। মনে করতে হবে এটা তাদের অলী হওয়ার একটি শর্ত।
ইসলামে কাশফের ব্যাখ্যা কী?
‘কাশফ’ অর্থ প্রকাশিত হওয়া বা অজানা কোন বিষয় নিজের কাছে প্রকাশিত হওয়া। অর্থাৎ আল্লাহ কর্তৃক তাঁর কোন বান্দার নিকট অজানা এমন কিছুর জ্ঞান প্রকাশ করে যা অন্যের নিকট অপ্রকাশিত। এমনিভাবে কাশফ ইচ্ছাধীন কোন বিষয় নয় যে, তা অর্জন করা শরীয়তে কাম্য হবে বা সওয়াবের কাজ হবে। তবে অহী হলে তা কেবলমাত্র নবী-রাসূলগণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যেমন আল্লাহ বলেন,
" তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী। তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারু নিকট প্রকাশ করেন না’। ‘তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তিনি তার (অহীর) সম্মুখে ও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন"। (সুরা জিন ৭২:২৬-২৭)
তবে কখনও কখনও রীতি বহির্ভূতভাবে অন্য কারু নিকট থেকে অলৈাকিক কিছু ঘটতে পারে বা প্রকাশিত হতে পারে। যেমন ছাহাবী ও তাবেঈগণ থেকে হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এই ‘কাশফ’ কোন নবীর রাসুলেরও ইচ্ছাধীন নয়। এমনকি আমাদের রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামে ও ইচ্ছাধীন ছিল না।
যেমন, সহিহ বুখারী, খন্ড ৬, অধ্যায় ৬০, হাদিস ৪৩৪। এর একটি ঘটনা সহীহ বুখারীর “তাফসির” অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে এইভাবে, আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাঃ) যয়নাব বিনতে জাহশ (রাঃ), রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর একজন স্ত্রী, এর কাছে মধু পান করতেন এবং সেখানে কিছুক্ষণ থাকতেন।
তাই আমি (আয়েশাহ) ও হাফসা একমত হলাম যে, আমাদের যার ঘরেই আল্লাহর রসূল (সাঃ) আসবেন, সে তাঁকে বলবে, আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? আপনার মুখ থেকে মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। (আমরা তাই করলাম) এবং তিনি বললেন, না, বরং আমি যয়নাব বিনতে জাহশ এর ঘরে মধু পান করেছি। তবে আমি কসম করলাম, আর কখনো মধু পান করব না। তুমি এ বিষয়টি আর কাউকে জানাবে না।
আল্লাহ বলেন,
" যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন, অতঃপর স্ত্রী যখন তা বলে দিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সে বিষয়ে স্ত্রীকে কিছু বললেন এবং কিছু বললেন না। নবী যখন তা স্ত্রীকে বললেন। তখন স্ত্রী বললেনঃ কে আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করল? নবী বললেনঃ যিনি সর্বজ্ঞ, ওয়াকিফহাল, তিনি আমাকে অবহিত করেছেন।" (সুরা আত-তাহরীমের আয়াত -৩)।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগন গোপনে আলাপ করল অথচ তিনি কিছুই জানলেন না। তার কাশফের ক্ষমতা ইচ্ছাধীন হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি জানতে পারতেন।
কোন এক সফরে ‘আয়িশা (রা) হার হারিয়ে গেল। সাহাবিদের পথে আটকিয়ে রেখে হার খোজ করা হল। এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেরেসানিতে ফেললেন। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামক যে উটে তিনি ছিলেন, হার খানা তার নীচে পরে ছিল। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাশফ ইচ্ছাধীন হলে সঙ্গে সঙ্গে হার খানা পেয়ে যেতেন।
হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম দীর্ঘদিন পর্যন্ত ছেলে ইউসুফ আলাইহিস সালামে খবর না পাওয়ার কারণে কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। যদি কাশফ ইচ্ছেধীন কোন কিছু হতো, তাহলে ইয়াকুব আলাইহিস সালাম কাশফের মাধ্যমে খবর পেয়ে যেতেন নিশ্চয়ই।
অনুরূপ কাশফ হওয়ার জন্য বুযুর্গ হওয়াও শর্ত নয়। বুযুর্গ তো দূরের কথা, মুমিন হওয়াও শর্ত নয়। কাশফ তো অমুসলিমদের ও হতে পারে। অতএব এরূপ যদি কোন মুমিন থেকে হয়, তবে সেটা হবে ‘কারামত’। অর্থাৎ আল্লাহ্ তাকে এর দ্বারা সম্মানিত করেন। আর যদি কাফির থেকে ঘটে, তবে সেটা হবে ফিৎনা। অর্থাৎ আল্লাহ এর দ্বারা তার পরীক্ষা নিচ্ছেন যে, সে এর মাধ্যমে তার কুফরী বৃদ্ধি করবে, না তওবা করে ফিরে আসবে।
কাজেই কাশফকে অলিদের নিজস্ব ক্ষমতা মনে করা কুফরি। আল্লাহ তার বান্দদের মাঝে যাকে ইচ্ছা তাকে অদৃশ্যের খবর জানাবেন এটাই স্বাভাবিক। আর এই কাশফ কখনোই ইসলামের শরীয়ত নয়। অর্থাৎ এর মাধ্যমে যদি কেউ কোনো দ্বীনি প্রত্যাদেশ প্রাপ্ত হয়, তাহলে তা কখনোই ইসলামী শরীয়তের অংশ বলে বিবেচিত হবেনা।
কেননা ইসলামের শরীয়ত রাসুলুল্লাহ নিজেই প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সবকিছুই পৌঁছে দিয়েছেন (বিদায়ী হজ্জ) । সেইসাথে আল্লাহ্ও দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন।(কুরআনের আয়াত) সুতরাং শরীয়তে নতুন করে কারো মাধ্যমে নতুন কোনো হুকুম আহকাম তৈরি হতে পারে না। যদি কেউ এমন দাবি করে তাহলে তা প্রত্যাখ্যাত। (হাদীস যে এমন আমল করো)
অতএব সুফিদের এই ইলহামের দ্বারা কোনো কিছু আদেশপ্রাপ্ত হয়ে কোনো বুজু্র্গ যদি শরীয়তে নতুন কোনো ইবাদত বা ইবাদতের পদ্ধতি তৈরি করে তবে তা কখনোই ইসলামে গ্রহণযোগ্য হবেনা। কেননা ইসলামে ইবাদত ও আকিদার ক্ষেত্রে নতুন কিছু উদ্ভাবন মানেই হচ্ছে বিদআত। যা ইসলামে সরাসরি নিষিদ্ধ। সুতরাং নিষিদ্ধ কোনো মাধ্যম দ্বারা নিষিদ্ধ কিছু প্রতিষ্ঠিত করা ইসলামে কখনোই জায়েজ নয়।
স্বপ্নঃ
স্বপ্ন হচ্ছে সুফীদের আমল ও আকিদার অন্যতম একটি উৎস। এই মূলনীতির উপর নির্ভর করে তারা বহু বিদআতি আমল সমাজে চালু করেছে এবং করছে। তারা দাবি করে স্বপ্নের মাধ্যমে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে অথবা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে কিংবা তাদের কোন মৃত বা জীবিত অলী বা আউলিয়াদের কাছ থেকে শরীয়তের হুকুম-আহকাম প্রাপ্ত হয়ে থাকে।
যেমনঃ চিশতীয় পন্থী সুফিদের দাবি তাদের পীর মইনুদ্দিন চিশতী মহানবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট হতে স্বপ্নযোগে দেখলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার শিয়রে উপবিষ্ট। তিনি তাকে আজমীর শহরের দৃশ্য দেখিয়ে দিলেন। এবং তাকে প্রয়োজনীয় পথ নির্দেশনা দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাতে দিলেন একটি সুমিষ্ট আনার। তারপর তার জন্য দোয়ায়ে খায়ের করে যাত্রা শুরু করার নির্দেশ দিলেন।
তিনি স্বপ্ন দেখে খুবই চিন্তিত হলেন। বিশাল হিন্দুস্থানের কোথায় রাসুলুল্লাহ সাঃ এর নির্দেশিত আজমীর? চিন্তিত অবস্থায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। যখন মইনুদ্দিন চিশ্তীর হুশ অর্থাৎ জ্ঞান ফিরল তখন হুকুম হল, “হে, মঈনুদ্দিন, তুমি আমার দ্বীনের মঈন (সাহায্যকারী)। আজ আমি তোমাকে হিন্দের বেলায়েত দান করলাম। তুমি হিন্দুস্থানে যাও এবং আজমির নামক স্থানে দ্বীনের প্রচার কর। খোদা তোমাকে বরকত দান করবেন”।
স্বপ্নের ব্যাপারে ইসলামের দিকনির্দেশনা হচ্ছে, নবীগণের স্বপ্নই কেবল অহী এবং তার মাধ্যমে প্রাপ্ত বিধান অনুসরণযোগ্য। যেমন ইব্রাহীম আঃ তাঁর সন্তানকে কুরবানি দিতে স্বপ্নে আদিষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ মুমিনদের স্বপ্নের ব্যাপারে কথা হচ্ছে, তা দ্বারা শরীয়তের কোন বিধান সাব্যস্ত হবে না। নবী রাসুল ছাড়া সাধারণ মানুষের স্বপ্নকে দ্বীনের কোনো মাসায়েলই দলীলের মর্যাদা দেয় নি। ইসলামি শরিয়তের প্রধান উৎস হল কুরাআন ও হাদিস এবং এরই আলোকে ইজমা ও কিয়াস।
রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘’ভাল স্বপ্ন আল্লাহ্র পক্ষ হতে। আর মন্দ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ হতে। কেউ খারাপ স্বপ্ন দেখলে বামদিকে থুথু দিবে, আর আল্লাহ্র নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় কামনা করবে। তাহলে এ স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। দুঃস্বপ্নের কথা কাউকে বলবে না। আর ভাল স্বপ্ন দেখলে সুসংবাদ গ্রহন করবে এবং স্বপ্নের কথা বর্ণনা করতে হলে একান্ত প্রিয়জনের নিকট বর্ণনা করবে’’।( মুসলিম ৫৮৫৬)।
অন্য হাদীসে আছে,
‘’স্বপ্ন তিন প্রকার। এক, ভাল স্বপ্ন- এটি আল্লাহ্র পক্ষ হতে সুসংবাদ স্বরূপ। দুই, শয়তানের পক্ষ হতে উদ্বেগ সৃষ্টিকারী স্বপ্ন। তিন, কল্পনাপ্রসুত স্বপ্ন। তোমাদের কেউ যদি স্বপ্নে অপ্রীতিকর কিছু দেখে তাহলে সে যেন উঠে সলাত আদায় করে এবং মানুষের কাছে তা বর্ণনা না করে’’। (মুসলিম ৫৮৫৯; তিরমিযি ২২৭০)
এ দুটি হাদীসের আলোকে স্বপ্নের বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, ভাল স্বপ্ন শুধুমাত্র সুসংবাদের একটি অংশ । শরীয়তের কোনো দলিল নয়। সে যতবড়ই বুজুর্গ হোক না কেন। আর এ কথাও পরিস্কার হয়ে গেছে যে, স্বপ্ন কোন দলীল হওয়া সম্ভব না। কেননা, যদি কোন প্রকারের স্বপ্ন দলীল হতে পারত, তাহলে শুধুমাত্র প্রথম প্রকারটিই হত যা আল্লার পক্ষ হতে হয়ে থাকে।
রাসুল (সাঃ)-কে স্বপ্নে দেখা নিয়ে বিভ্রান্তিঃ
অনেকেই দাবী করে থাকেন স্বপ্নে তিনি অথবা অন্য কেউ রাসুল (সাঃ)-কে দেখেছেন। এবং উক্ত স্বপ্নের মাধ্যমে তিনি বিশেষ কিছু নির্দেশনা পেয়েছেন। তারা দলীল হিসাবে নিম্নোক্ত হাদীস পেশ করে থাকেন।
‘’যে ব্যাক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে সত্যই আমাকে দেখল। কেননা, শয়তান আমার রুপ ধারন করতে পারে না’’ (বুখারী ৬৯৯৪; মুসলিম ৫৮৭৩)।
এই হাদীসের মধ্যে যদিও দেখার সত্যতার কথা বলা হয়েছে; কিন্তু কথা ঠিকভাবে শোনা, সঠিকভাবে বুঝা এবং জাগ্রত হওয়ার পর তাতে শয়তানের কোন প্রকার প্রভাব না থাকার নিশ্চয়তা এ হাদীসে দেয়া হয় নি। সেইসাথে এই হাদীসে এটা প্রমাণিত নয় যে, কেউ রাসুল সাঃকে দেখে তাঁর থেকে কোনো কিছু আদিষ্ট হলে তা শরীয়তের জন্য আমলযোগ্য। উক্ত হাদীসে রাসুল সাঃকে দেখার বিষয়টি ব্যক্তি একক পর্যায়ের অন্তর্ভূক্ত। শুধু তাইনয়, এই হাদীসে এটাও প্রমাণিত নয় যে শুধুমাত্র কথিত পীরেরাই শুধু রাসুল সাঃকে স্বপ্নে দেখবে।
সুতরাং শুধু ধোঁকা দেওয়ার জন্য এই হাদিসের দলিল এনে ইসলামী শরীয়তে নতুন করে কোনো ঈমান আমল আকিদা যোগ করার কোনো অবকাশ নেই। সুফিবাদীরা যেভাবে তাদের বুজুর্গদের স্বপ্নেকে আল্লাহর ওহী মনে করে দ্বীন পালন করছে, তা স্পষ্টতই গোমরাহী।
আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি (রহঃ) উল্লেখ করেনঃ ‘’এক ব্যাক্তি স্বপ্নে দেখে যে, রাসুল (সাঃ) তাঁকে সম্বোধন করে বলছেন ‘’তুমি মদ পান কর।’’ তখন আলী আল-মুত্তাকি (রহ)-এর নিকট এই স্বপ্নের তা’বীর জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন, ‘’অবশ্যই রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘’তুমি মদপান কর না।’’ আর শয়তান তোমার নিকট ব্যাপারটি পাল্টে দিয়েছে। ফয়যুল বারী ১/২০৩
যাই হোক, রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়ে গেছেনঃ
‘’আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি বস্তু রেখে গেলাম, যতদিন তা আঁকড়ে ধরে থাকো, ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। এক- আল্লাহ্র কিতাব, দুই- তাঁর নাবীর সুন্নাত’’ (মুওয়াত্তা মালিক)
তিনি একথা বলেননি যে, তোমরা স্বপ্নযোগে আমার পক্ষ থেকে যা লাভ করবে সে মোতাবেক আমল করবে। তিনি একথাও বলেননি যে, স্বপ্নের দ্বারা কুরআন-হাদীস গ্রহন বা বর্জন করবে। তিনি একথাও বলেননি যে, স্বপ্নের ভিত্তিতে নতুন নতুন কথা বা আমল দ্বীন ইসলামে দাখিল করবে। (নাউযুবিল্লাহ)।
তাছাড়া আল্লাহ কুরআন ও হাদিসকে বিনা শর্তে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু আমির /আলেম / শাইখদের শর্তসাপেক্ষে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
" হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা আমির/বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।" [ সুরা নিসা ৪:৫৯ ]
এ আয়াতে আল্লাহ কুরআন হাদিসকে বিনা শর্তে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। আর আমির / আলেম / পীর / শাইখদের শর্তসাপেক্ষে অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছেন। কারন তাদের মাঝে মতবিরোধের সৃষ্টি হতে পারে। আর যদি তাদের কোনো বিষয়ে মতানৈক্য হবে, তখন তারা আবার কুরআন হাদিস এর দিকে ফিরে আসবে। এটাই শরিয়তের বিধান।
আর কারো স্বপ্নকে শরিয়তের দলীল মনে করলে প্রতিদিন শরীয়ত পরিবর্তন হবে। অথচ ইসলামি শরীয়তে আর কখনও কোন পরিবর্তন, সংযোজন, বিয়োজন হবেনা। এটাই একমাত্র চূড়ান্ত ও সর্বশেষ জীবন বিধান। সুতরাং সুফিদের বিভিন্ন পীর আউলিয়াদের স্বপ্নে প্রাপ্ত হুকুম আহকাম নিয়ে সুফিরা যেসব নতুন নতুন ঈমান, আমল,আকিদা ইত্যাদি সৃষ্টি করেছে এবং করছে তা কখনোই আল্লাহ্ স্বীকৃতি দিবেন না। কেননা এইসব নতুন নতুন ঈমান আকিদা ইসলামে বিভাজনের সৃষ্টি করবে এবং করছে। যা কখনোই ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়।
অলী-আওলীয়াদের থেকে প্রত্যাদেশঃ
সুফিদের আকিদা অনুযায়ী তাদের মৃত অলি আউলিয়ারা স্বপ্নযোগে বা সরাসরি তাদেরকে বিভিন্ন প্রত্যাদেশ দান করেন। তারা তাদের এ আদেশ নিষেধ মান্য করে থাকে। সুফিদের কিতাব থেকে এই মর্মে কয়েকটি ঘটনা পাওয়া যায়।
বর্তমান চরমোনাই পীরের পিতা মৃত মাওলানা ইসহাক তার ভেদে মারেফত বইয়ে লিখেছেন, হযরত থানবী লিখিয়াছেন,
"জনৈক দরবেশ সাহেবের মৃত্যুর পর এক কাফন চোর কবর খুড়িয়া দরবেশের কাফন খুলিতে লাগিল। দরবেশ সাহেব চোরের হাত ধরিয়া বসিলেন। তা দেখে চোর ভয়ের চোটে চিৎকার মারিয়া বেহুঁশ হইয়া মরিয়া গেল। দরবেশ তার এক খলীফাকে আদেশ করিলেন চোরকে তার পার্শ্বে দাফন করিতে। খলীফা এতে আপত্তি করিলে দরবেশ বলিলেন, কাফন চোরের হাত আমার হাতের সঙ্গে লাগিয়াছে, এখন কেয়ামত দিবসে ওকে ছাড়িয়া আমি কেমনে পুলছেরাত পার হইয়া যাইব"? (ভেদে মারেফতঃ ২৭-২৮ পৃঃ) ।
দেওবন্দ মাদ্রাসায় এক সময় মাওলানা আহমাদ হাসান আমরুহী এবং ফখরুল হাসান গাঙ্গোহীর মাঝে মনোমালিন্য হয়। কিন্তু মাওলানা মাহমূদুল হাসান (১২৩৮-১৩৩৮ হিঃ) নিরপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও এক পক্ষের দিকে ঝুঁকে যান। তখন মাওলানা রফীউদ্দীন মাওলানা মাহমূদুল হাসানকে ডেকে পাঠান। দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতেই তিনি বলছেন, আগে তুমি আমার কাপড় দেখো। শীতকাল হওয়া সত্ত্বেও তার সমস্ত কাপড় ভিজে গেছে।
রফীউদ্দীন বললেন, মাওলানা নানোতুবী জাসাদে আনছারীতে এখনই আমার নিকট এসেছিলেন (নানুতুবির মৃত্যেু পরের ঘটনা)। তাই ঘামে আমার কাপড় ভিজে গেছে। তিনি আমাকে বলে গেলেন, তুমি মাহমূদুল হাসানকে বলে দাও, সে যেন ঝগড়ায় লিপ্ত না হয়। আমি শুধু এটা বলার জন্যই এসেছি। (মাওঃ আশরাফ আলী থানভী, আরোহায়ে ছালাছা, হিকায়েতে আওলিয়া; প্রকাশনায় দেওবন্দ : কুতুবখানা নঈমীয়া, পৃঃ ২৬১; হিকায়েত নং-২৪৭)।
উপরের ঘটনা ছাড়াও আরও অনেক এমন ঘটনার বর্নণা পাওয়া যায়। যার দ্বারা প্রমান করা যায় অলি আওলিয়ারা কবরে জীবিত এবং কবর থেকে স্বপ্নে বা সরাসরি আদেশ দান করেন। এটা কোনো স্বপ্ন নয়, কোনো কিরামতিও নয়। কারন কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোন কথা বা কাজ করা অলি আওলিয়ারা কিরামতির নিদর্শন হতে পারে না। সব চেয়ে ভয়ংকর কথা হল, সুফিরা এ ঘটনা তাদের অলীদের অলীত্ব প্রমানে অজ্ঞদের নিকট পেশ করে ধোকা দেয়।
তাবলীগী-নিসাবের ফাযায়েলে সদাকাতের ২৪নং শিরোনামে শাইখুল হাদিস জাকারিয়া (রহঃ) লিখেছেন,
‘‘মিশরে একজন নেক বখত লোক ছিলেন। অভাব গ্রস্থ হইয়া লোক লোক তাহার নিকট আসিলে তিনি চাঁদা উসুল করিয়া তাহাকে দিয়া দিতেন। একদা জনৈক ফকীর আসিয়া বলিল আমার একটা ছেলে হইয়াছে। তাহার এছলাহের ব্যবস্থার জন্য আমার নিকট কিছুই নাই।
এই ব্যক্তি উঠিল ও ফকীরকে অনেক লোকের নিকট লইয়া গিয়াও ব্যর্থ হইয়া ফিরিল। অবশেষে নৈরাশ হইয়া একজন দানবীর ব্যক্তির কবরের নিকট গিয়া সমস্ত কথা তাহাকে শুনাইল। অতঃপর সেখান হইতে ফিরিয়া নিজের পকেট হইতে একটা দ্বীনার বাহির করিয়া উহাকে ভাঙ্গাইয়া অর্ধেক নিজে রাখিল ও বাকী অর্ধেক ফকীরকে কর্জ দিয়া বলিল ইহা দ্বারা প্রয়োজন মিটাও। আবার তোমার হাতে পয়সা আসিলে আমার পয়সা আমাকে দিয়া দিও।
রাত্রি বেলায় সেই লোকটি কবরওয়াকে স্বপ্নে দেখিল যে সে বলিতেছে আমি তোমার যাবতীয় অভিযোগ শুনিয়াছি কিন্তু বলিবার অনুমতি দেওয়া হয় নাই। তুমি আমার ঘরে গিয়া পরিবারস্থ লোকদিগকে বল ঘরের অমুক অংশে যেখানে চুলা রহিয়াছে, উহার নীচ একটা চীনা বরতনে পাঁচ শত আশরাফী রহিয়াছে তাহারা যেন উহা উঠাইয়া সেই ফকীরকে দিয়া দেয়।
ভোর বেলায় ঐ লোকটি সেই কবরওয়ালার বাড়ীতে গেল এবং তাহাদিগকে তাহার স্বপ্নের কথা শুনাইল। তাহারা বাস্তবিকই সেখান হইতে পাঁচশত আশরাফী উঠাইয়া ফকীরকে দিয়া দিল। লোকটি বলিল ইহা একটি স্বপ্ন মাত্র। শরীয়ত মতে ইহাতে আমল জরুরী নয়। তোমরা ওয়ারিশ হিসাবে ইহা তোমাদের হক্ব। তারা বলিল, বড়ই লজ্জার ব্যাপার, তিনি মৃত হইয়া দান করিতেছেন আর আমরা জীবিত হইয়াও দান করিব না?
অতএব সে টাকা লইয়া ফকীরকে দিয়া দিল ফকীর সেখান হইতে একটা দ্বীনারের অর্ধেক নিজে রাখিল ও অর্ধেক তাহার ঋণ পরিশোধ করিল, তারপর বলিল আমার জন্য এক দিনার যথেষ্ট বাকীগুলি দিয়া আমি কি করিব? সে ঐ গুলি ফকীরদের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিল। ছাহেবে এতহাফ বলেন, এখানে চিন্তা করিবার বিষয় এই যে সবচেয়ে বড় দাতা হইল কে? কবর ওয়ালা না তার ওয়ারিশান? না ফকীর? আমাদের নিকটতো ফকীরই সবচেয়ে বড় দাতা, সে যেহেতু নিজে ভীষন অভাব গ্রস্থ হওয়া সত্ত্বেও অর্ধেক দ্বীনারের বেশী নিল না।’’ (ফাজায়েলে সাদাকাত ২য় খন্ড-৩২২ পৃঃ)।
এইসব কাহিনি কতটুকু অযৌক্তিক তা একটু দেখুন। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ না করে একজন দানবীর ব্যক্তির কবরের কাছে গিয়ে সমস্ত কথা তাকে শুনিয়ে তার কাছেই সাহায্য চাইলো! অথচ মৃত্যকে শোনানো কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ্ বলেন,
" নিশ্চয় তুমি মৃতকে তোমার কথা শোনাতে পারবে না " সূরা রুম ৩০:৫২)
অন্য আয়াতে বলেন,
" মৃতকে তুমি শোনাতে পারবে না " ( সূরা নমল ২৭ :৮০)
ঐ মৃত ব্যক্তিও ফরিয়াদ শুনে দানও করল। যা কখনোই সম্ভব নয়। যদি সম্ভবও হয় তাহলেও এইসবের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। কেননা এইসব সবই কুরআন বিরোধী কথা। যা সুফিদের বিভিন্ন কিতাবে পাওয়া যায়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, সুফিবাদীরা তাদের ঈমান আকিদার পক্ষে যেসব প্রমাণাদি পেশ করে তা খুবই অযৌক্তিক এবং অগ্রহণযোগ্য। সুফিদের শরীয়ত কখনোই ইসলাম সম্মত নয়। সুফিরা নিজেদের মুসলিম দাবি করলে অবশ্যই তাদের ইসলামী শরীয়তের অনুসরণেই চলতে হবে। ইসলামকে বাদ দিয়ে ইসলামী শরীয়তকে পিছনে ফেলে কখনোই নিজের মুসলিম প্রমাণ করা যাবে না। তারা শুধু দাবি করতে পারবে। কেননা দাবি করলেই কেউ মুসলিম হয়ে যায় না। মুসলিম হতে হলে অবশ্যই ঈমানের প্রয়োজন। যা একমাত্র আল্লাহ্ই বিচার করবেন।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
১৫ নভেম্বর, ২০২১
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।