মহান সৃষ্টিকর্তা " আল্লাহ্ " আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন পরীক্ষা করার জন্য। এই পরীক্ষায় আল্লাহর কিছু নির্দিষ্ট সিলেবাস রয়েছে। এই সিলেবাসভুক্ত কর্মকান্ড গুলো হচ্ছে ইবাদত। এই ইবাদত বন্দেগীসহ সম্পূর্ণ জীবনযাপন আল্লাহর নির্দিষ্ট সীমারেখায় করতে হয়। যদি কেউ এই সীমারেখা অতিক্রম করে নিজের ইচ্ছানুযায়ী বা খেয়াল খুশির অনুসরণ করে, তবে তা হবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আল্লাহ্ কখনোই খেয়াল খুশির অনুসরণ বা প্রবৃত্তির অনুসরণ পছন্দ করেন না।
প্রবৃত্তির অর্থ কীঃ
প্রবৃত্তি বা খেয়াল-খুশির আভিধানিক অর্থঃ
আরবী " হাওয়া " শব্দের অর্থ হলো, কোন কিছুকে ভালবাসা, কাম্য বস্তু পাওয়ার প্রবল বাসনা। "হাওয়ার " বাংলা প্রতিশব্দ হিসাবে পাওয়া যায় খেয়ালখুশি, নিয়ম ছাড়া ব্যাপার, স্বেচ্ছাচারিতা, খামখেয়ালি, অযৌক্তিক ইচ্ছা, কামনা, বাসনা, প্রবৃত্তি, কুপ্রবৃত্তি, ভোগের পথ ইত্যাদি। সাধারণত আমরা এই শব্দের বাংলা হিসাবে খেয়াল খুশি বা প্রবৃত্তি বেশি ব্যবহার করি।
প্রবৃত্তির পারিভাষিক অর্থ হলো, উপভোগ্য জিনিসের প্রতি শরী‘আতের কোন অনুমোদন ছাড়াই মনের যে ঝোঁক তৈরী হয় তাকে খেয়ালখুশি বা প্রবৃত্তি বলে। আরো সহজ করে বললে বলতে হয়, যেকোনো মানুষ চাইলেই ধর্মকর্ম না করে নিজের ইচ্ছামত চলতে পারে। আল্লাহর হাজারো নিদর্শন দেখেও আল্লাহ্কে বিশ্বাস না করে নিজের মনের মতো চলাই হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ বা খেয়াল খুশির অনুসরণ। অথবা আপনি আল্লাহ্কে বিশ্বাস করার পরও আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্মকান্ড গুলো মানলেন না। নিজের ইচ্ছামতো জীবনযাপন করলেন।
যেমনঃ মন চাইলেই একটুখানি মদ খেলেন। মন চাইলেই প্রতিহিংসামূলক অন্যের সম্পদ জোরপূর্বক দখল করে নিলেন। মন চাইলেই মনের কুপ্রবৃত্তির লালসায় ব্যভিচারের মতো পাপ কাজে জড়িয়ে গেলেন। মন চাইলেই আরো বেশী আয়ের আশায় , ঘুষ নিলেন। টাকা সম্পদ বৃদ্ধির আশায় সুদ নিলেন। মন চাইলেই সালাত আদায় করলেন না। যখনকার সালাত তখন আদায় করলেন না। কোনো কারণ ছাড়াই জামাতে সালাত আদায় করলেন না। মন চাইলেই আপনার ইচ্ছা এবং সুবিধামতো ধর্মকর্ম করলেন।
এছাড়াও সত্য জানার পরও পূর্বপুরুষদের দেখানো ভুল পথে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ইবাদত ইত্যাদি পালন করলেন। আপনি জানেন আপনি ইসলামের ভুল পথে আছেন। তারপরও সঠিক পথে না গিয়ে না চলে অতীতের ভুল পথেই চলা হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ।
মোটকথা মনে যা চায় তা ই করে মনের চাওয়াকে প্রাধান্য দিলেন। আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের নিয়ম পদ্ধতি কিছুই তোয়াক্কা করলেন না। এটাই হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ। প্রবৃত্তির অনুসরণ করাই হচ্ছে ইহকাল পরকাল উভয়ই ধ্বংস হওয়া।
দলিল ছাড়া প্রবৃত্তির অনুসরণঃ
এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যারা কোনো কিছুর দলিল নিদর্শন বা প্রমাণ ছাড়াই ধর্মীয় অনুসরণ করে। তারা যা করছে তার স্বপক্ষে না তাদের কোনো নিদর্শন আছে, না তাদের কোনো প্রমাণ আছে। শুধু পূর্বপুরুষরা করে গেছে বলেই তারা করে যাচ্ছে। এটা ইসলাম ব্যতীত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য। ঠিক তেমনি মুসলমানদের মধ্যেও এমন এমন লোক আছে যারা কুরআন হাদিসের দলিল ছাড়াই এমন সব ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ইবাদত বন্দেগীর চর্চা করে যার কোনো প্রমাণই তাদের কাছে নেই। তাদের বিষয়ে আল্লাহ্ বলেন,
" এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে"। (সূরাঃ আন-নাজম, আয়াতঃ ২৩)
উপরোক্ত আয়াত মক্কার মুশরিকদের জন্য নাযিল হলেও, বর্তমান উপমহাদেশের সুফিবাদীদের জন্য খুবই প্রযোজ্য। কেননা তারা তাদের পীর আউলিয়াদের থেকে এমন এমন ঈমান আকিদার চর্চা করে এবং বিশ্বাস করে। যার কোনো প্রমাণ কুরআন হাদীসে নেই। কিন্তু তারা নিজেদের মনমতো এইসব তৈরি করে তাদের অনুসারীদের মধ্যে প্রচার প্রসার করেছে।। যা সুস্পষ্ট প্রবৃত্তির অনুসরণ ছাড়া কিছুই নয়।
প্রবৃত্তির অনুসরণ নিষিদ্ধঃ
আল্লাহ্ তালাআলা কখনোই প্রবৃত্তির অনুসরণকে পছন্দ করে না। ইসলাম সুস্পষ্ট ভাবে প্রবৃত্তির অনুসরণ নিষিদ্ধ করেছে। কেননা ইসলামে রয়েছে সুস্পষ্ট এবং সুশৃঙ্খল জীবনবিধান। যা প্রতিটি মানুষের জন্য খুবই সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ। আল্লাহ্ বলেন,
"হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্নীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১৩৫)
অতএব ইহকাল পরকাল উভয় ক্ষেত্রের জন্যই কখনোই প্রবৃত্তির অনুসরণ কাম্য নয়। আজ পৃথিবীর চারদিকে মিথ্যার ছড়াছড়ি। কে কার কাছ থেকে কত অন্যায়ভাবে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করবে সেটা নিয়েই ব্যস্ত। কেউ ই ইসলামের অনুসরণে জীবনযাপনে আগ্রহী নয়। সকলেরই একটাই উদ্দেশ্য, দুনিয়াবী জীবনকে প্রাধান্য দেওয়া। অথচ সর্বাবস্থায় এবং সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের উপর অটল থাকাই হচ্ছে প্রকৃত মুমিনের কাজ।
কুরআন ছেড়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ নিষিদ্ধঃ
পবিত্র কুরআনের আইনকানুন বিধি নিষেধ ছাড়া কখনোই নিজেদের খেয়াল খুশি মতো ধর্মকর্ম বিচার ফায়সালা কোনো কিছুই করা যাবে না। আল্লাহ্ বলেন,
" (হে রাসুল) আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না "। (সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ৪৮)
সুতরাং যারাই কুরআন সুন্নাহর অনুসরণ না করে নিজেদের উদ্ভাবিত পথে ধর্মকর্ম ইত্যাদি পালন করে তারা কখনোই সুপথ প্রাপ্ত হবেনা। আমাদের উপমহাদেশের ইসলামের নামে কুরআন সুন্নাহর বাইরে অসংখ্য আচার অনুষ্ঠান পালিত হয়। যা কখনোই আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল প্রতিষ্ঠিত করে যাননি। এসবই কিছু মানুষের উদ্ভাবন। যার অনুসরণ করছে প্রবৃত্তির অনুসারীরা।
প্রবৃত্তির অনুসরণ হচ্ছে পথভ্রষ্টতাঃ
যারাই কুরআন সুন্নাহর বাইরে গিয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে তারাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট। আর পথভ্রষ্টরা কখনোই সুপথ প্রাপ্ত হয় না। আল্লাহ্ বলেন,
" অতঃপর(হে রাসুল) তারা যদি আপনার কথায় সাড়া না দেয়, তবে জানবেন, তারা শুধু নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। আল্লাহর হেদায়েতের পরিবর্তে যে ব্যক্তি নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, তার চাইতে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না"। (সূরাঃ আল কাসাস, আয়াতঃ ৫০)
অতএব কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে অবস্থান করার অর্থই হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ। আজ বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমানই ইসলামের গন্ডির বাইরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। তারা মুখে ও আনুসাঙ্গিকভাবে মুসলিম দাবি করলেও মূলত তারা তাদের মনমতোন খেয়াল খুশির অনুসরণেই জীবনযাপন করে। আর যারাই প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে তারাই হচ্ছে পথভ্রষ্ট জালেম। সুতরাং ইসলামে কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে কখনোই কোনো কিছু পালন করা যাবে না।
প্রবৃত্তিপরায়ণরা মন্দ কাজে আকৃষ্টঃ
প্রবৃত্তির অনুসরণ নিষিদ্ধ হওয়ার পরও অধিকাংশ মানুষ তাদের খেয়াল খুশির অনুসরণে জীবনযাপন এবং ধর্মকর্ম পালন করে। তাদেরকে তাদের এই মন্দ কর্মগুলো খুবই শোভনীয় করে দেখানো হয়। যাতে তারা তাদের এই প্রবৃত্তির কর্মগুলোকে অপছন্দ না করে। সেইসাথে তারা যেন এইসব কুকর্মের মধ্যে সন্তুষ্টি নিয়ে ঘুরপাক খায়। আল্লাহ্ বলেন,
" যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত নিদর্শন অনুসরণ করে, সে কি তার সমান, যার কাছে তার মন্দ কর্ম শোভনীয় করা হয়েছে এবং যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে"। (সূরাঃ মুহাম্মদ, আয়াতঃ ১৪)
উপরোক্ত আয়াতের অনুসারে যারাই স্বাভাবিক জীবনযাপনে ইসলামের বাইরে গিয়ে আধুনিকতাকে প্রাধান্য দিয়ে পাশ্চাত্যের অনুসরণ করবে তারা হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসারী। শয়তান তাদের ইসলাম বিমুখী প্ররোচনা দিয়ে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে। যাতে তারা ইসলামকে পশ্চাৎপদ মনে করে আধুনিকতাকে আঁকড়ে ধরে। শয়তানের এইসব মরিচিকার ভেলকিবাজি সেইসব মানুষের চোখে শোভনীয় মনে হয়। এবং তারা ইসলাম বিসর্জন দিয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
এছাড়াও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে
যারা সহীহ্ ইসলামের পরিবর্তে নিজস্ব মনগড়া রীতিনীতিতে ইসলাম পালন করছে, তারা মনে করছে তারা যা করছে তা সবই সঠিক। কেননা তাদের চোখে তা খুবই চমৎকার এবং ভালো বলে হচ্ছে। আসলে তারা বুঝতে পারছে না যে, শয়তান তাদের চোখে এইসব চমৎকার এবং শোভনীয় করে উপস্থাপন করছে। যাতে তারা মনে করে এইসব আসলেই বুঝি সওয়াবের কাজ। কিন্তু না তা কখনোই নয়। কেননা তারা যা করছে তা কখনোই কুরআন হাদিসের আলোকে নয়।
প্রবৃত্তিপরায়ণরা আল্লাহ্ থেকে বিচ্যুতঃ
প্রবৃত্তির অনুসরণ কখনোই মানুষকে সৎপথ দেখায় না। যেকোনো প্রবৃত্তিই মানুষকে ধ্বংস করে। এই ধ্বংস তাকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দেয়। যারাই প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারাই নিশ্চিতভাবে আল্লাহ্ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। আল্লাহ্ বলেন,
" হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি, এ কারণে যে, তারা হিসাবদিবসকে ভুলে "। (সূরাঃ ছোয়াদ, আয়াতঃ ২৬)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ হযরত দাউদ আঃকে উদ্দেশ্য করে কথা বললেও, মূলত কোনো নবী রাসুলই পাপী নয় এবং তাদের দ্বারা কখনোই পাপ সংঘটিত হয়নি হওয়া সম্ভব নয় যতটুকু আল্লাহ্ চান। এখানে আল্লাহ্ দাউদ আঃকে উপরোক্ত আদেশ দিলেও মূলত এইসব আদেশ আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদেরই দিচ্ছেন। সুতরাং আল্লাহ্ যেখানে নবী রাসুলদেরই প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। সেখানে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হবে পারে?
অবাধ্য দলের অন্তর্ভূক্তঃ
যারাই আল্লাহর কিতাব আইনকানুন আদেশ নিষেধ মানবে না তারাই হবে যালিম। সুতরাং যারা আল্লাহর জ্ঞান আসার পরও খেয়াল খুশি তথা প্রবৃত্তির অনুসারী হবে । তারা সবাই আল্লাহর অবাধ্য দলের অন্তর্ভূক্ত হবে যালিম হিসাবে। আল্লাহ্ বলেন,
" যদি আপনি তাদের বাসনার অনুসরণ করেন, সে জ্ঞানলাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে নিশ্চয় আপনি অবিচারকারীদের (জালিমদের) অন্তর্ভুক্ত হবেন"। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৪৫)
এথেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, যারাই সঠিক জ্ঞানের অনুসরণ না করে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তারাই হচ্ছে জালিম। যেমনঃ সুফিবাদীরা কুরআন সুন্নাহর অনুসরণ না করে নিজেরাই নিত্যনতুন ঈমান আকিদার সৃষ্টি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এভাবেই তারা প্রবৃত্তি তথা নিজেদের খেয়াল খুশিকে শরিয়ত বানিয়ে নিয়ে ইসলাম পালন করে। যা কখনোই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
হিদায়াত পাবে নাঃ
পৃথিবীতে যারাই আল্লাহর নির্দেশনার পরিবর্তে নিজেদের প্রবৃত্তি তথা খেয়াল খুশিকে নিজেদের ধর্ম বানিয়ে নিয়েছে তারা কখনোই হিদায়াত তথা সৎপথ প্রাপ্ত হবে না। আল্লাহ্ বলেন,
" (হে রাসুল) আপনি বলে দিনঃ আমাকে তাদের এবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের এবাদত কর। আপনি বলে দিনঃ আমি তোমাদের খুশীমত চলবো না। কেননা, তাহলে আমি পথভ্রান্ত হয়ে যাব এবং সুপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হব না"। (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ৫৬)
উপরোক্ত আয়াতটি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর স্বীকারোক্তি মূলক আয়াত হলেও, এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, রাসুল সাঃ কখনোই প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে পারেন না। কেননা তাঁকে পরিচালিত করছেন স্বয়ং আল্লাহ্। তারপরও তাঁকে দিয়ে পুরো বিশ্ববাসীকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এই আয়াতটি নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং যেখানে রাসুল সাঃ নিজে বলতে পারেন যে, তিনি যদি আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো কথায় খেয়াল খুশির অনুসরণ করেন তবে তিনিও পথভ্রান্ত হয়ে যাবেন এবং সুপথ প্রাপ্ত হবেননা।
অতএব, কোন অবস্থাতেই কারো কোনো সুযোগ নেই প্রবৃত্তির অনুসরণ করা যদি কেউ আল্লাহ্কে পেতে চায়। আল্লাহ্ প্রবৃত্তির অনুসরণ নিয়ে এতো কঠোরতা অবলম্বন করলেও সুফিবাদীরা কখনোই তা গ্রাহ্য করে না। তারপরও তারা ধর্মের নামে নানান রীতিনীতি নিত্যনতুন আচার অনুষ্ঠান তৈরি করে ইসলামের চালিয়ে যাচ্ছে।
সাহায্যকারী নেইঃ
যারাই প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে তাদের কোনপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা আল্লাহর পক্ষ থেকে করা হবেনা। এমনকি তা খোদ রাসুলুল্লাহ সাঃ করলেও! আল্লাহ্ বলেন,
" ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই"। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১২০)
উপরোক্ত আয়াতে বলা হচ্ছে, ইহুদী খ্রিস্টানরা চায় রাসুল সাঃ তাদের অনুসরণ করুক। কিন্তু আল্লাহ্ কখনোই তাদের অনুসরণ সমর্থন করেননা। সেজন্য এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ এটাই নির্দেশ দিচ্ছেন যে, রাসুল সাঃ যদি ইহুদী খ্রিস্টানদের অনুসরণে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তবে তাঁকেও কেউ আল্লাহর হাত থেকে রক্ষা করতে কিংবা উদ্ধার করতে পারবে না। যদিও সমস্ত নবী রাসুলরা হচ্ছেন নিষ্পাপ। এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ সকল মুসলমানদের জন্য সতর্কীকরণ দিয়েছেন।
আজ ইহুদী খ্রিস্টানরা মুসলমানদের উপর খুবই সন্তুষ্ট! কেননা বিশ্বের অধিকাংশেরও বেশী মুসলমানরা তাদের অনুসরণে জীবনযাপন করছে। ইহুদী নাসারা মুসলমানদের জীবনযাপনে তাদের এমন সব কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিয়েছে, যা কখনোই ইসলামের সংস্কৃতি নয়। সাধারণ মুসলমানরা খেয়াল খুশির অনুসরণে জ্ঞাত এবং অজ্ঞাতাবসত ইহুদী খ্রিস্টানদের সেইসব শয়তানী সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ছে।
উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে ইহুদী খ্রিস্টানরা ততক্ষন পর্যন্ত মুসলমানদের উপর সন্তুষ্ট হবেনা যতক্ষণ না মুসলমারা তাদের অনুসরণ করে। অথচ আজ মুসলমানরা তাদেরই অনুসরণে দুনিয়াদারী করছে। যেখানে খোদ রাসুল সাঃকে ইহুদী খ্রিস্টানদের অনুসরণ থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে যেখানে অধিকাংশেরও বেশীরভাগ মুসলমান প্রতিটি ক্ষেত্রে ইহুদী খ্রিস্টানদের অনুকরণে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।
কুরআনের বিপরীতে ইহুদী খ্রিস্টানদের অনুসরণ হচ্ছে প্রকৃতার্থে প্রবৃত্তির অনুসরণ। আল্লাহর এতো কঠোর নির্দেশের পরও যদি কেউ প্রবৃত্তির অনুসারী হয়, তাহলে তাকে কে সাহায্য করবে সেটাই আজ আমাদের ভাবা উচিত।
প্রবৃত্তিপরায়ণদের আল্লাহ্ই পথভ্রষ্ট করেনঃ
যারা নিজেরাই নিজেদের খেয়াল খুশির অনুসরণে জীবনযাপন এবং ধর্মীয় জীবন পালন করে তাহলে তাদের আল্লাহ্ নিজ দায়িত্বে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ্ বলেন,
" বরং যারা বে-ইনসাফ, তারা অজ্ঞানতাবশতঃ তাদের খেয়াল-খূশীর অনুসরণ করে থাকে। অতএব, আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তাকে কে বোঝাবে? তাদের কোন সাহায্যকারী নেই"। (সূরাঃ আর-রূম, আয়াতঃ ২৯)
সুতরাং যারাই বে ইনসাফী এবং জ্ঞানহীন জীবনযাপন করবে, তারাই তাদের অজ্ঞানতার জন্য প্রবৃত্তির অনুসারী হয়ে পড়বে। আর এদেরই আল্লাহ্ নিজে পথভ্রষ্ট করে ছেড়ে দেন।
এর প্রমাণস্বরুপ দেখা যায়, যারা প্রবৃত্তির অনুসরণে জীবনযাপন করে তারা তাদের খামখেয়ালি জীবনযাপনে খুবই মত্ত এবং আসক্ত। তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র এই চেতনা কাজ করে না যে, আমরা যা করছি তা কতটুকু ইসলামসম্মত?
এই চেতনাবোধ না থাকার কারণে প্রবৃত্তিপরায়ণরা দিনদিন তাদের বেহিসাবী অনৈসলামিক কর্মকান্ডে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। সেইসাথে শয়তান তাদের এটা বলে আশ্বস্ত করে যে, যদি আল্লাহ্ না চাইতেন তাহলে কি তোমরা এইসব করতে পারতে? অর্থাৎ তোমরা যা করছো তা অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টি আছে। সুতরাং তোমরা তোমাদের মতোই চলতে থাকো।
এভাবেই চলার কারণে তারা আল্লাহর হিদায়াতের দেখা পায় না। আর এটাই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা যা আল্লাহ্ নিজে তাদেরকে ধ্বংসের মুখোমুখি করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ্ ছাড়া তাদের আর উদ্ধার করার কেউ আর নেই।
একইভাবে যারা বিশেষকরে সুফিবাদীরা ইসলামের নামে কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে ধর্মীয় বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান ঈমান আকিদা ইত্যাদি পোষণ করে, তারা মনে করে তারা যা করছে তা অবশ্যই সঠিক। যদি ভুল হতো তাহলে তারা সফলতা পেতো না। এইসব বলেই শয়তান তাদের কুরআন সুন্নাহ থেকে দূরে সরিয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণে ব্যতিব্যস্ত রেখেছে। আর এভাবেই আল্লাহ্ তাদের পথভ্রান্ত করে।
সত্য দ্বীন প্রবৃত্তির অনুসারী নয়ঃ
আল্লাহর প্রেরিত দ্বীন ইসলাম কখনোই প্রবৃত্তির অনুসরণে চলে না। যদি মানুষের প্রবৃত্তির অনুসরণে ইসলামের বিধি নিষেধ নাযিল হতো, তাহলে এই পৃথিবী অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে যেতো। কেননা মানুষের প্রবৃত্তি খুবই খারাপ একটি রোগ। আল্লাহ্ বলেন,
" সত্য (দ্বীন ইসলাম) যদি তাদের কাছে কামনা-বাসনার অনুসারী হত(অর্থাৎ তাদের মনমতো), তবে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল এবং এগুলোর মধ্যবর্ত সবকিছুই বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত। বরং আমি তাদেরকে দান করেছি উপদেশ(কুরআন), কিন্তু তারা তাদের উপদেশ অনুধাবন করে না?। (সূরাঃ আল মু'মিনূন, আয়াতঃ ৭১)
উপরোক্ত আয়াতে মক্কার মুরিকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণে ধর্মকর্ম পালন করাকে পছন্দ করে। তারা সুনির্দিষ্ট কোনো কিছুর অনুসরণকে পছন্দ করে না। যখন যা বা যাকে ভালো লাগে তখন তা কিংবা তার উপাসনা করতে পছন্দ করতো।
এখানে সত্য বলতে দ্বীন ও শরীয়তকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, দ্বীন বা ধর্ম যদি তাদের ইচ্ছানুসারে অবতীর্ণ হত, তাহলে এ কথা স্পষ্ট যে, পৃথিবী ও আকাশের সমস্ত নিয়ম-শৃঙ্খলা ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত। যেমন তাদের ইচ্ছা এক উপাস্যের পরিবর্তে অনেক উপাস্য হোক। যদি সত্যই এ রকম হত, তাহলে কি বিশ্ব-জাহানের নিয়ম-শৃঙ্খলা ঠিক থাকত? অনুরূপ তাদের নিত্যনতুন অন্যান্য ইচ্ছা ও বাসনাও রয়েছে।
উল্লিখিত আয়াতের ভিত্তিতে উপমহাদেশের সুফিরাও তাদের মনমতো দ্বীন ইসলাম পালন করে। তাদের ঈমান আকিদা গুলো সরাসরি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কুরআন সুন্নাহর বিরোধী। তারা ইলহাম, স্বপ্ন ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ্ থেকে দ্বীন ইসলামের নতুন নতুন ঈমান আকিদা আমল ইত্যাদি পেয়ে থাকে বলে দাবি করে।
যদিও দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণ। তবুও সেখানে বিভিন্ন উৎস থেকে নিত্যনতুন ঈমান আকিদার সন্নিবেশ ঘটায় সুফিবাদীরা। যা তাদের কামনা বাসনার প্রতিফলন। তাদের এহেন কর্মকান্ডে সুফিরা ইসলামের নামে জগাখিচুড়ির ধর্ম পালনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাদের সম্পর্কে জানতে সুফিদের ঈমান আকিদা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
প্রবৃত্তি থেকে নিবৃত্তরাই জান্নাতীঃ
পৃথিবীতে যারা শয়তানের প্ররোচনা থেকে নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে তারাই হচ্ছে জান্নাতের অধিকারী। আল্লাহ্ বলেন,
"পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করেছে এবং খেয়াল-খুশী থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত"। (সূরাঃ আন-নযিআ'ত, আয়াতঃ ৪০, ৪১)
আল্লাহর সুস্পষ্ট ঘোষণা যে, দ্বীন ইসলামের বিধান ব্যতিরেকে যে ব্যক্তি নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে না, তার স্থান হবে জান্নাত। অর্থাৎ যে মুমিন ব্যক্তিজীবনে প্রবৃত্তির অনুসরণ (খানাপিনা, চাল চলন,আয় ব্যয়, কামনা বাসনা ইত্যাদি) থেকে বিরত থেকে নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, সে ই হবে জান্নাতের উত্তরাধিকারী। সেইসাথে ধর্মীয় ঈমান আকিদার ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র কুরআন এবং সুন্নাহর অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া যদি অন্যান্য কোনো বুজুর্গ পীর আউলিয়াদের অনুসরণ করা হয় যা কুরআন সুন্নাহর বিরোধী, তাহলে তা হবে প্রবৃত্তির অনুসরণ। যা কখনোই মুমিনকে জান্নাতের পথ দেখায় না।
প্রবৃত্তিপরায়ণরা পশুর মতোঃ
যারাই প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তাদের জ্ঞানবোধ নষ্ট হয়ে যায়। তারা সত্য অনুধাবনে জাগতিক জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। যারফলে প্রকৃতার্থে নির্বোধ সম্পন্ন প্রাণী তথা পশুর মতো আচরণ করে। পশুরা যেমন কোনো কিছু বুঝার বা করার জ্ঞান নেই। ঠিক তেমনি তাদের অবস্থাও একই। আল্লাহ্ বলেন,
"আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা বোঝে ? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং আরও পথভ্রান্ত "। (সূরাঃ আল-ফুরকান, আয়াতঃ ৪৪)
যারা নিজের নফসের অনুসারী হয়ে যায়, তাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তখন তারা তাদের খেয়াল খুশি মতোই পশুতুল্য জীবনযাপন করে। অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট শৃঙ্খলায় তারা চলার চেষ্টা করে না। মন যা চাই তা ই করতে থাকে। তারা তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগায় না। ফলে তারা পশুতে পরিনত হয়।
একইভাবে ধর্মীয় জীবনে যারাই প্রমাণিত নিদর্শন দেখে ইসলাম গ্রহণ করে না। অথবা ইসলাম গ্রহণ করলেও সহীহ্ কুরআন সুন্নাহর আলোকে জীবনযাপন না করে নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ দ্বীন দুনিয়া পালন করে। তারা কখনোই মানুষ হতে পারে না। বরং তাদের অবস্থা হচ্ছে জীব জন্তুর মতো। কেননা তারা সঠিক ইসলাম যাচাই না করে নিজেদের মন মতো সুবিধাবাদী ধর্ম পালন করে। অতএব তারা পথভ্রান্ত। তারা কখনোই সঠিক পথ পাবে না।
উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে সুফিবাদীরা হচ্ছে পশুর মতো। কেননা তারা কুরআন সুন্নাহর বিপরীতে বিভিন্ন ঈমান আমলের চর্চা করে। তাদের এবং তাদের অনুসারীদের যতই কুরআন হাদিসের নিদর্শন দেখানো হোক না কেন, তা তারা মানতে নারাজ। তাদের দাবি পূর্বপুরুষ পীর আউলিয়াদের থেকে যা তারা পেয়েছে তা ই সঠিক। সুতরাং তারা জ্ঞানার্জনের ধার ধারে না। ফলে তারা পশুর চাইতেও অধমে পরিনত হয়।
বিদআতীদের অনুসরণ নিষিদ্ধঃ
আল্লাহ্ তাঁর রাসুলকে সতর্ক করেছেন যে, যা আল্লাহ্ নাযিল করেননি তা কখনোই পালন যোগ্য নয়। যদিও আল্লাহ্ বিরোধীরা সাক্ষ্য দেয় তবুও। কেননা যারাই আল্লাহ্ বিরোধী, পরকালে অবিশ্বাসী এবং শির্ককারী তারাই হচ্ছে কুপ্রবৃত্তির অনুসারী। আল্লাহ্ বলেন,
"আপনি বলুনঃ তোমাদের সাক্ষীদেরকে আন, যারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তা’আলা এগুলো হারাম করেছেন। যদি তারা সাক্ষ্য দেয়, তবে আপনি এ সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন না এবং তাদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না, যারা আমার নির্দেশাবলীকে মিথ্যা বলে, যারা পরকালে বিশ্বাস করে না এবং যারা স্বীয় প্রতিপালকের সমতুল্য অংশীদার করে"। (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১৫০)
উপরোক্ত আয়াত থেকে বুঝা গেলো, যা আল্লাহ্ নাযিল করেননি তা করা, পরকালে বিশ্বাস না করা, আল্লাহর সাথে শির্ক করা ইত্যাদি যারা করে তারা মূলত প্রবৃত্তিপরায়ণ। তাদের সাথে কখনোই কোনো সংস্রব রাখা যাবে না। এই হিসাবে যারা ইসলামের নামে নতুন ইবাদতের আকিদা ও আমল সৃষ্টির মাধ্যমে বিদআত সৃষ্টি করে। তারাও মূলত প্রবৃত্তিরই অনুসারী। কেননা এইসব বিদআত আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল সৃষ্টি করেননি। এইসব বিদআত পরবর্তীতে বিভিন্ন পথভ্রষ্ট বুজুর্গরা তৈরী করে গেছেন।
বেনামাজীরা কুপ্রবৃত্তিপরায়ণঃ
যারা ঈমান আনার পর সালাত নিয়ে অলসতা করে তারা হচ্ছে মুনাফিক। আর যারাই নিজেদের সালাত নষ্ট করে বা নিয়মিত সালাত আদায় করে না তারা হচ্ছে কুপ্রবৃত্তিপরায়ণ। এইসব মানুষ সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেন,
" অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে"। (সূরাঃ মারইয়াম, আয়াতঃ ৫৯)
ইসলামে সালাত একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং ঈমানের পরিচায়ক। সুতরাং যারা সালাত নিয়ে খামখেয়ালিপনায় লিপ্ত থাকে তারা কুপ্রবৃত্তির অনুসারী। আর তারাই হলো পথভ্রান্ত যা তারা অচিরেই জানতে পারবে।
ইসলাম যেখানে সালাত বা নামাজকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে, সেখানে সুফিবাদে সালাত বা নামাজের কোনো গুরুত্বই নেই। সুফিবাদের অনুসারীরা সালাতকে খামখেয়ালিপনায় পরিনত করেছে। তাদের আকিদা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবো।
জ্ঞানহীনরা প্রবৃত্তির অনুসারীঃ
যাদের কোনো বিষয়ে জ্ঞান থাকে না তখন তারা ঐ বিষয়ে খেয়াল খুশির অনুসরণ করে। অর্থাৎ যারা জ্ঞানহীন তারাই স্বাভাবিকভাবেই প্রবৃত্তির অনুসারী। আল্লাহ্ বলেন,
" অতঃপর (হে নবী সা.!) আমি তোমাকে দ্বীনের (সঠিক) পথের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি, কাজেই তুমি তারই অনুসরণ কর, আর যারা (দ্বীনের বিধি-বিধান) জানেনা তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না। (সূরাঃ আল জাসিয়া, আয়াতঃ ১৮)
উপরোক্ত আয়াতে কয়েকটি বিষয় আল্লাহ্ স্পষ্ট করে দিয়েছেন। একটি হচ্ছে, আল্লাহ্ মানবজাতির জন্য দ্বীনের একটি সুনির্দিষ্ট পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। এবং প্রতিটি মুমিনকে সেই পথেই চলতে হবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, যারা দ্বীনের পথ সম্পর্কে অবগত নয় অর্থাৎ দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞানহীন কিংবা দ্বীন জানার সম্পর্কেও আগ্রহী নয় তাদের অনুসরণ কখনোই করা যাবে না।
অথচ আমাদের উপমহাদেশে ইসলামের নামে সুফিবাদী যে ধর্ম চালু আছে, তার মূলেই রয়েছে অজ্ঞতা। তারা এবং তাদের অনুসারীরা কখনোই কুরআন সুন্নাহকে দ্বীনের মাপকাঠি হিসাবে মেনে চলে না। তারা তাদের পীর আউলিয়া বুজুর্গদের দ্বীনের উৎস এবং মাপকাঠি হিসাবে ধরে নেয়। যা জ্ঞানহীনতার পরিচায়ক। দ্বীন সম্পর্কে এইজাতীয় মনমানসিকতাই প্রবৃত্তির বা খেয়াল খুশির অনুসরণ। আল্লাহ্ প্রদত্ত দ্বীনের পরিবর্তে এই খেয়াল অনুসরণই ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। যা আল্লাহ্ নিজেই তাঁর রাসুল সাঃকে অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
সত্য অস্বীকারকারীরা প্রবৃত্তির অনুসারীরাঃ
সত্য অস্বীকারকারীরাই প্রবৃত্তির অনুসারী। অধিকাংশ মানুষই সত্য গ্রহণে আগ্রহী নয়। কেননা সত্য মেনে নিতে হলে কখনোই খেয়াল খুশীর অনুসরণ করা যায় না। আল্লাহ্ বলেন,
" তারা সত্যকে অস্বীকার করে, নিজেদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করছে।প্রতিটি বিষয়েরই একটা নির্দিষ্ট সময় আছে (সময় আসলেই বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে)"। (সূরাঃ আল ক্বামার, আয়াতঃ ৩)
উপরোক্ত আয়াতের ভিত্তিতে আমরা আমাদের সমাজের অধিকাংশ সুফিবাদী মুসলমানদের দেখি, যারা পীর আউলিয়াদের দেখানো পথকেই ইসলাম ধরে বসে আছে। তারা কখনোই তাদের ধর্মীয় কর্মকান্ডকে কুরআন সুন্নাহর মাপকাঠি দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে না। তাদের যতই কুরআন সুন্নাহর সত্যর দিকে আহবান করা হোক না কেন, তারা তাদের খেয়াল খুশি মতো পূর্বপুরুষদের অনুসরণ নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সুতরাং তারা সত্যকে গ্রহণ না করার কারণে প্রবৃত্তির অনুসারীতে রূপান্তরিত হয়েছে।
আল্লাহ্ ছেড়ে অন্য উপাস্য গ্রহণঃ
এক আল্লাহ্ ছেড়ে অন্য উপাস্য গ্রহণ করাই হচ্ছে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। যেকোনো সকল ইবাদতের মালিক হচ্ছে আল্লাহ্। যারাই প্রবৃত্তির তাড়নায় আল্লাহ্কে ছেড়ে অন্যদের আল্লাহর সমকক্ষ মনে করে ইবাদত করে তারা সুস্পষ্ট পথভ্রান্ত। আল্লাহ্ বলেন,
" (হে রাসুল সাঃ) আপনি বলে দিনঃ আমাকে তাদের এবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে, তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে যাদের এবাদত কর। আপনি বলে দিনঃ আমি তোমাদের খুশীমত চলবো না। কেননা, তাহলে আমি পথভ্রান্ত হয়ে যাব এবং সুপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হব না"। (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ৫৬)
সুতরাং যারাই খেয়াল খুশীর অনুসরণে চলে পথভ্রষ্ট হয়, তাদের পথ কখনোই সুপথ নয়। উপমহাদেশের সুফিরা তাদের পীর আউলিয়াদের এমনভাবে মান্য করে যেন তারা ওহীপ্রাপ্ত নবী রাসুল। যেখানে তাদের আকিদা গুলো সরাসরি কুরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক সেখানে তাদের অনুসারীরা এইসব পীর আউলিয়াদেরই একপ্রকার ইবাদতে ব্যস্ত।
সুফিরা এমন এমন সব আকিদা পোষণ করে যা আল্লাহর ইবাদতের সমতুল্য। এইসব আকিদা একজন মুসলমানকে শির্ক কুফর এবং বিদআতের দিকে ঠেলে দেয়। যা একজন প্রকৃত মুমিনের ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক।
উপসংহারঃ
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট হলো যে, ব্যক্তিজীবন এবং ধর্মীয় জীবনে কখনোই নিজের মন মতোন বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করা যাবে না। যদিও শয়তানের প্ররোচনায় প্রবৃত্তির অনুসরণে মনে হবে এটাই সঠিক। তাই প্রকৃত মুমিনের উচিত হবে সর্বাবস্থায় প্রতিটি ক্ষেত্রে কুরআন সুন্নাহর সহীহ্ অনুসরণ করা।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী,
১ ডিসেম্বর ২০২১,
অলংকার, চট্টগ্রাম।