আমাদের উপমহাদেশে সুফিদের মাধ্যমেই ইসলাম প্রচারের প্রসার লাভ করে। সুফিদের দ্বারা ইসলাম প্রচার হওয়ার কারণে এখানকার ঈমান আকিদায় সুফিদের প্রবল প্রভাব বিদ্যমান। তৎকালীন সময়ে শিক্ষার প্রসার না থাকার কারণে কুরআন হাদিসের চর্চা ছিলো না। যারফলে ব্যক্তি সুফিদের দ্বারা সুফিবাদের বিভিন্ন ঈমান আকিদা উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সেইসব আকিদা এখনো সুন্নীদের বিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে। সেই হিসাবে আজ আমরা জানার চেষ্টা করবো সুফি সুন্নীদের "রাসুল" সম্পর্কিত ঈমান এবং আকিদা কী।
রাসুল আল্লাহ্র জাতি নূরের তৈরিঃ
রাসুল সম্পর্কে সুফি সুন্নীদের আকিদা খুবই উঁচুতে। তারা রাসুলকে এমন এমন বিশেষণে বিশেষায়িত করে যা ইসলামের মূল আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক। রাসুল সম্পর্কে তাদের গুরুত্বপূর্ণ আকিদা হচ্ছে আল্লাহ্ তাঁর নিজের শরীরের নূর থেকে রাসুল সাঃকে সৃষ্টি করেছেন। সুফিরা এটাই বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর নিজস্ব জাতি নূর থেকে রাসুল সাঃকে তৈরি করেছেন। সুতরাং তিনি হচ্ছেন নূরের তৈরি। সুফিদের এই বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি কুরআন হাদীসে পাওয়া যায় না।
আল্লাহ্ ও রাসুল একাকারঃ
সুফি সুন্নীদের বিশ্বাস হচ্ছে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই শুধুমাত্র একটি "মীম" ছাড়া। তাই তারা বলে, আহমদ তথা রাসুল আহাদ মানে আল্লাহ্। এখন আহমদের "মীম " সরিয়ে নিয়ে নিলে হয়ে যায় আহাদ। সুতরাং আল্লাহ্ এবং রাসুল এক। আল্লাহর যেসব ক্ষমতা আছে তার সবই রাসুলের মধ্যে বিদ্যমান। যেমনঃ- রাসুল আল্লাহর নিজস্ব নূরে তৈরি, তিনি হাজির নাজির, তিনি গায়েব জানেন, তিনি উম্মতের ভালো মন্দ করতে পারেন ইত্যাদি। সেইসাথে তাদের বিশ্বাস যে, আল্লাহ্ নিজেই রাসুলের ভিতর দিয়ে দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশ করেছেন। তাদের মাহফিল গুলোতে রাসুল সাঃ নিজে উপস্থিত হন। তাই তারা দাঁড়িয়ে রাসুল সাঃকে সালাম পেশ করেন। তিনি তাদের সালাম নেন এবং জবাব দেন ইত্যাদি।
রাসুল আল্লাহ্র মতোই গায়েব জানেনঃ
সুফিদের ঈমান হচ্ছে রাসুল আল্লাহর মতোই গায়েব জানেন। অর্থাৎ আল্লাহ্ যেসমস্ত গায়েবের বিষয় সবার থেকে আড়ালে রেখেছেন বা গায়েবের যেসমস্ত বিষয় রয়েছে তার সবই কিছু সম্পর্কে রাসুল অবগত আছেন। তিনি ইচ্ছা করলেই যেকোনো সময় যেকোনো কাউকে গায়েবের খবর দিতে পারেন। মোটকথা আল্লাহ্ যা যা জানেন তাঁর সবই রাসুল সেই একই পরিমাণে জানেন। এবং এই গায়েবের সম্পূর্ণ বিষয় রাসুলের ইচ্ছাধীন। যদিও কুরআন হাদিসের আলোকে ইসলামে আল্লাহ্ ছাড়া কেউ গায়েবের খবর জানেন না বলে বিশ্বাস করা হয়। অথচ সুফিরা বিশ্বাস করে রাসুল গায়েবের সমস্ত খবর জানেন।
রাসুল আল্লাহ্র মতোই হাজির ও নাজিরঃ
সুফি সুন্নীদের ইসলাম বহির্ভূত আরেকটি আকিদা হচ্ছে, রাসুল আল্লাহর মতোই পৃথিবীসহ আল্লাহর সকল সৃষ্টিজগতের মধ্যে বিচরণশীল। অর্থাৎ আল্লাহর আসমান জমিন লৌহ কলব আরশ কুর্ছি সমস্ত জায়গাতে রাসুল সর্বাবস্থায় যেকোনো সময়ে বিদ্যমান হতেন পারেন। রাসুল যেকোনো সময়ে যেকোনো ভাবে যেকোনো জায়গায় উপস্থিত হতে পারেন এবং উপস্থিত হন। আল্লাহর রাসুলের এই উপস্থিত হওয়ার কারণে সুফি সুন্নীরা তাদের মাহফিল মজলিসে রাসুলের জন্য চেয়ার বরাদ্দ রাখেন। সেইসাথে রাসুলের উপস্থিতির কারণে তাঁকে দাঁড়িয়ে সালামও পেশ করা হয়। আল্লাহর সমতুল্য এই আকিদা পোষণ করার কারণে সুফিরা সরাসরি আল্লাহর সাথে শির্কে লিপ্ত হচ্ছে।
রাসুলুল্লাহ কবরেও জীবিতঃ
সুফি সুন্নীদের গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ মৃত্যুর পর কবরে সাধারণ মানুষের মতোই জীবিত। তিনি সাধারণ মানুষের মতো সবকিছু দেখেন বুঝেন এবং উপকার অপকার করতে পারেন। সুতরাং তাঁর কাছে যেকোনো জীবিত ব্যক্তির মতোই চাওয়া যাবে এবং পাওয়া যাবে। তাদের মতে রাসুল তাঁর কবরে তাদের যেকোনো ডাকে সরাসরি সাড়া দেয়। তিনি কবর থেকে দুনিয়ার সমস্ত খবরাখবর রাখেন। তিনি একজন জীবিত মানুষের মতোই তাঁর সকল উম্মতের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে থাকেন। এই জন্য তাঁকে সুন্নীরা হায়াতুন্নবীও বলে থাকেন।
রাসুলুল্লাহ সাঃ সম্পর্কে সুফি সুন্নীরা উপরোক্ত যেসব আকিদা পোষণ করে থাকে তা কখনোই কুরআন ও সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বীকৃত নয়। সুফিবাদীরা তাদের নিজেদের স্বার্থে রাসুলুল্লাহ সম্পর্কে অতিরিক্ত বিভিন্ন বিশ্বাস ও ভক্তি করে থাকে। যা রাসুলুল্লাহর শান এবং মানের সম্পূর্ণ বিপরীত। যেসব বিশ্বাস ও আকিদা অধিকাংশে ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শির্কে নামান্তর। প্রকৃত ঈমানদারেরা জেনে বুঝে যাচাই করে তবেই আকিদা ও বিশ্বাস স্থাপন করে। আমাদেরও উচিত হবে সঠিক তথ্য যাচাই বাছাই করে তবেই যেকোনো বিশ্বাস স্থাপন করা।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২৫ জানুয়ারি, ২০২২
অলংকার, চট্টগ্রাম।