সুফি সুন্নীরা ইসলামের শরিয়ত সম্পর্কে এমন এমন সব আকিদা পোষণ করে যা কখনোই ইসলাম স্বীকৃত নয়। এইসব ভ্রান্ত আকিদা সমূহ এমন যে, তা একজন ঈমানদারকে মুশরিকে পরিনত করে ঈমান হারা করে দেয়। এখন আমরা কুরআন এবং সহীহ্ হাদিসের আলোকে সুফি সুন্নীদের তাবিজ সম্পর্কিত আকিদার জবাব পাওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
সুফিদের তাবিজের আকিদাঃ
ইসলাম একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু তাবিজ বা তামীমা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর উপর ভরসা করতে বাধ্য করে। আর সুফিদের আকিদা হচ্ছে ব্যবসায়ী আকিদা। তারা তাদের স্বার্থের জন্য তাদের অনুসারীদের বিভিন্ন রোগে শোকে বিপদে আপদে তাবিজের ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে। এই উৎসাহের কারণে সুফি অনুসারীদের মাঝে ব্যাপকভাবে তাবিজের ব্যবহার প্রচলিত হয়।
যখন মানুষের আল্লাহর উপর বিশ্বাস হারিয়ে যায়, তখনই শয়তান তাকে প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন আল্লাহ্ বিরোধী কাজ করতে। তাবিজ হচ্ছে তেমনই একটি হারাম কাজ। যা সুফিদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। অথচ হাদীস থেকে প্রমাণিত সকল প্রকার তাবিজ তামীমা নিষিদ্ধ নাজায়েজ। এই সম্পর্কিত হাদীস গুলো হলো,
অবশ্যই ঝাড়ফুঁক, তাবীজ ও জাদু শিরক। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৮৬}
ঈসা ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লাইলা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উকাইম আবূ মা’বাদ আল-জুহানীর অসুস্থ অবস্থায় তাকে দেখতে গেলাম। তিনি বিষাক্তি ফোঁড়ায় আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললাম, কিছু তাবিজ-তুমার ঝুলিয়ে রাখছেন কেন? তিনি বললেন, মৃত্যু তো এর চেয়েও নিকটে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক কোনকিছু ঝুলিয়ে রাখে (তাবিজ-তুমার) তাকে তাঁর উপরই সোপর্দ করা হয়। (সহীহ, গাইয়াতুল মারাম -২৯৭)। (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২০৭২)
‘যে ব্যক্তি কোন জিনিস লটকায় সে উক্ত জিনিসের দিকেই সমর্পিত হয়’’। অর্থাৎ এর কুফল তার উপরই বর্তায়। (তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কোন কিছু ঝুলানোর ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে। দেখুনঃ সহীহ সুনানে তিরমিযী, হাদীছ নং- ১৬৯১)
" হে রুআইফি! তোমার হায়াত সম্ভবত দীর্ঘ হবে। তুমি লোকজনকে এই কথা জানিয়ে দিয়ো, যে ব্যক্তি দাড়িতে গিরা লাগাবে, অথবা গলায় তাবিজ-কবজ লটকাবে অথবা পশুর গোবর কিংবা হাড় দ্বারা এস্তেঞ্জা করবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত’’। (আবু দাউদ, নাসাঈ। হাদীছের সনদ সহীহ। দেখুনঃ সহীহুল জামে, হাদীছ নং- ৭৭৮৭)
আবূ বাসীর আনসারী আব্বাদ ইবনু তামীমকে থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (আবূ বাসীর) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কোনও একা সফরে ছিলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে কাজে পাঠালেন, আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবূ বাকর (রা) বলেন, আমার বিশ্বাস যে, তখন সমস্ত লোক ঘুমিয়েছিল। কাজটি ছিল কোন উটের গলায় কোন হার, তাবীয কিংবা ঘন্টা যেন না থাকে। থাকলে কেটে ফেলতে বলেন। (বুখারী ৩০০৫, মুসলিম ২১১৫) মালিক (র) বলেন, আমার মনে হয় চোখ লাগবে এই ভয়ে তা লটকানো হয়েছিল।
" ইমাম মালিক (র) বলেন, সেই তাবীয কিংবা হার ইত্যাদি যা বদ নজর হতে রক্ষার জন্য ব্যবহার করা হত। তাতে ঘন্টা বেঁধে দেয়া হত। ফলে উটের অসুবিধা হত এবং ঘন্টার শব্দে শত্রুরাও সাবধান হয়ে যেত। " (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১৬৮৭)
উপরোক্ত হাদীস সমূহ আলোচনা পর্যালোচনা করলে এটা সুস্পষ্ট হয় যে, কোনো উপকারের আশায় এবং বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় কোনো প্রকার তাবিজ বা অন্য যেকোনো কিছু ঝুলানো বা লাটকানো সরাসরি নাজায়েজ এবং ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ।
তারপরও সুফিরা একটি হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে যাবতীয় তাবিজকে জায়েজ বলার অপচেষ্টা করছে। হাদিসটি হলো,
" আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা ও তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে,রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন,তোমাদের কেউ যখন ঘুম অবস্থায় ঘাবড়িয়ে উঠে,সে যেন أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ দো’আটি পাঠ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর উপযুক্ত সন্তানদের তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন।{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৯৫}
উপরোক্ত হাদীসে একটি দোয়া বড়দের শিক্ষা দেওয়া এবং ছোটদের গলায় লটকানোর কথা এসেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বড়দের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তাহলে কি ছোটদের শিক্ষা দেওয়ার দরকার নেই? এর উত্তর হবে অবশ্যই আছে। তাহলে ঐ দোয়া কী হিসাবে গলায় লটকানো হয়েছে? এর যুক্তিযুক্ত উত্তর হচ্ছে ঐ দোয়া ছোটদের গলায় শেখানোর জন্য লিখে লটকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কেননা এখানে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই যে এই দোয়া তাবিজের মতো করে লটকানো হয়েছে। তাছাড়া সুফি সুন্নীরা ছোটদের চাইতে বড়রাই তাবিজ বেশী ব্যবহার করে। আমাদের সমাজে সুফিরা তাবিজ তুমার বেশী করে। দুনিয়াবী যত সমস্যা আছে, যা আল্লাহর হুকুম ছাড়া সমাধান করা সম্ভব নয়। সেইসব সমস্যার সমাধান সুফি অনুসারীরা বিভিন্ন কাফের মুশরিকদের দিয়ে কুফরি তান্ত্রিক দ্বারা সমাধান করার চেষ্টা করে। যেখানে আল্লাহ্ শিক্ষা দিচ্ছেন আল্লাহর উপর ভরসা করতে। সেখানে সুফিরা তাবিজ জায়েজ করে মুসলমানদের কাফেরে পরিনত করে দিচ্ছে।
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে তাবিজ জায়েজ হলে, বড়রা কেন তাবিজ লটকালো না? সুতরাং আমরা আগের হাদীস গুলোতে সুস্পষ্ট পেয়েছি যে তাবিজ লটকানো যাবেনা। এই কথা আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাঃও অবশ্যই জানতেন। তাই তিনি ছোটদের শেখানোর উদ্দেশ্যে লটকিয়ে দিয়েছেন। যাতে তারা দেখে দেখে তা শিখতে পারে। অতএব তাদের এই দলিল যুক্তিকতায় টিকে না।
তারপরও কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবিজ তৈরী করে ঝুলানো হলে তিন কারণে তা নিষিদ্ধ।
(১) সকল প্রকার তাবিজ ঝুলাতে নিষেধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা থেকে কোনো কিছুই বাদ পড়েনি। কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবিজ বানিয়ে ঝুলানো হলে তা জায়েয হবে এমন কোন কথা উল্লেখ নেই।
(২) কুরআন দিয়ে তাবিজ লটকানো জায়েয বলা হলে লোকেরা কুরআন ছাড়া অন্য বস্তু দিয়েও তাবীজ লটকানোর সুযোগ পেয়ে যাবে। ফলে তাদের প্রতিবাদ করা কঠিন হবে। যেমনটা বর্তমানে হচ্ছে।
(৩) কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবিজ লটকালে কুরআনের মর্যাদা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা তাবিজ পরিধানকারী টয়লেটে এবং অন্যান্য অপবিত্র জায়গায় প্রবেশ করলে অবশ্যই কুরআনের অবমাননা হবে।
সুফিরা কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবিজ জায়েজ করলেও, তাদের মধ্যে কুফরি কালামের তাবিজ ব্যবহার বেশী। সুফিরা নিজেদের লাভের জন্য তাবিজের প্রচলন করলেও, ধীরে ধীরে সুফি হুজুরের তাবিজের গুণ কমে গেছে। আগে মানুষ অন্ধভাবে তাবিজ নিতো। এখন সুফি অনুসারীরা দুনিয়াবী লাভের আশায় অন্যান্য কুফুরি ধর্মের বিভিন্ন কুফুরি কালামের চর্চা করছে। যা তাদের ঈমান আকিদা আমল সবই ধ্বংস করে দিচ্ছে। পবিত্র কুরআন হাদিসের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুফিরা তাবিজকে জায়েজ করে দেওয়ার কারণে তাদের অনুসারীদের ঈমান আমল আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। সুতরাং সুফি সুন্নীদের তাবিজের আকিদা একটি ইসলাম বিরোধী আকিদা।
কৃতজ্ঞতাঃ
মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
১০ মার্চ, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।