সুফি সুন্নীদের বিদআতী আমল সম্পর্কিত আকিদার জবাব
সুফি সুন্নীরা ইসলামের শরিয়ত সম্পর্কে এমন এমন সব আকিদা পোষণ করে যা কখনোই ইসলাম স্বীকৃত নয়। এইসব ভ্রান্ত আকিদা সমূহ এমন যে, তা একজন ঈমানদারকে মুশরিকে পরিনত করে ঈমান হারা করে দেয়। এখন আমরা কুরআন এবং সহীহ্ হাদিসের আলোকে সুফি সুন্নীদের বিদআতী আমল সম্পর্কিত আকিদার জবাব পাওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
সুফিদের বিদআতী আমল
সুফিদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আকিদা হলো বিদআতী আমল করা। যেহেতু তাদের দৃষ্টিতে শরীয়তের নতুন নতুন উৎস থেকে ঈমান আমল বৃদ্ধি বা যোগ করা যায়। সেহেতু তারা বিদআতের মাধ্যমে নতুন নতুন ইবাদত ও আমল জায়েজ মনে করে। যদিও ইসলামের দৃষ্টিতে বিদআত নাজায়েজ একটি কাজ।
বিদআত হচ্ছে ঈমান আকিদার মাধ্যমে নতুন কোনো ধারণা এবং ইবাদতের মাধ্যমে নতুন কোনো আমল সৃষ্টি করা। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ যে দ্বীন ইসলাম দিয়ে গেছেন এবং আল্লাহ্ যে ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। সেই ইসলামে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের অসম্মতিতে নতুন নতুন ধারণা এবং ইবাদত বা আমল সৃষ্টিকে বলা হচ্ছে বিদআত।
আরও পড়ুন সুফিবাদ কী, কীভাবে উৎপত্তি এবং বর্তমান অবস্থা
অথচ একথা সুপ্রতিষ্ঠিত যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। সেখানে নতুন করে কোনো কিছু যোগ বিয়োগ করা যাবেনা। তারপরও সুফিরা তাদের আকিদায় পীর অলি আউলিয়াদের মাধ্যমে নতুন নতুন ঈমান আকিদা ইবাদত আমল সৃষ্টি করে। যা ধীরে ধীরে ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। যা সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহ বিরোধী একটি কাজ।
আমরা পবিত্র কুরআন থেকে সুস্পষ্ট শিক্ষা পায়, যে নিজেকে মুসলিম বলে ইসলামে প্রবেশ করবে। তাকে অবশ্যই কুরআন, সুন্নাহ এবং রাসুলের আদর্শের অনুসরণকেই একমাত্র ইসলাম বলে মনে করতে হবে। যে রাসুলের আদর্শ অনুসরণ করবে, আল্লাহ্ একমাত্র তাকেই তাঁর সন্তুষ্টির ছায়া প্রদান করবেন। আল্লাহ্ বলেন,
‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, যারাই আল্লাহর ভালোবাসা তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায়। তাদের অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাঃএর অনুসরণ করতে হবে। আর আমরা এখন দেখবো রাসুলুল্লাহ এই বিদআত নিয়ে কী বলেছেন। পবিত্র হাদীসে বিদআত সম্পর্কিত অসংখ্য হাদিস এসেছে। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোনো নির্দেশনা নেই, তা পরিত্যাজ্য’ (মুসলিম হা/১৭১৮)।
আরও পড়ুন বিদআত মানে সুন্নাত বিদায়
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও ছালাতের পর বলেন,
‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হ’ল দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হ’ল ভ্রষ্টতা’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)। আর নাসাঈতে রয়েছে, ‘প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম’ (নাসাঈ হা/১৫৭৮)।
ইরবায বিন সারিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন আমাদের নিয়ে ছালাত আদায় করলেন। আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি হতে দূরে থাকবে। কেননা (দ্বীনের ব্যাপারে) যেকোন নতুন সৃষ্টি হল বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আত হল পথভ্রষ্টতা’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫)।(সংক্ষেপিত)
উপরোক্ত হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ইসলামে এমন আমল (সওয়াবের উদ্দেশ্যে ইবাদত) করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় যা রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর খোলাফায়ে রাশেদ্বীন (রাঃ) করেননি। সুতরাং এমন ইবাদত (বা নেকীর উদ্দেশ্যে আমল) করা যা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর খোলাফায়ে রাশেদ্বীন করেননি তা স্পষ্টত বিদআত। আর বিদআত মানেই পথভ্রষ্টতা। আর পথভ্রষ্টতা মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়।
আরও পড়ুন সুফিবাদের শরীয়তের উৎস ও যৌক্তিকতা
সুতরাং সুফিরা পীর আউলিয়াদের দোহাই দিয়ে যেসব নতুন নতুন ইবাদত আমল সৃষ্টি করছে, তা কখনোই ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। সুফিরা জেনেশুনে এইসব বিদআতে নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছে দুনিয়াবী স্বার্থের আশায়। তারা জানে না তাদের জন্য আল্লাহ্ কী প্রস্তুত করে রেখেছেন। আসুন জেনে নিই বিদআতের পরিনাম কী।
আরও পড়ুন ওয়াসীলাহ্ নিয়ে ভ্রান্তি
নাসাঈ শরীফে এসেছে সকল পথভ্রষ্টতাই জাহান্নামী। অর্থাৎ যারা বিদআতে লিপ্ত হয়ে ইসলামের সঠিক পথ থেকে দূরে সরে যাবে তারা প্রকারান্তে জাহান্নামী। তাছাড়া যারা বিদআতে লিপ্ত হয়ে বিদআতী আমল করবে তারা কখনোই রাসুলের (সাঃ) শাফায়াত প্রাপ্ত হবে না। আবু হাসেম (রাঃ) হতে বর্ণিত-
"তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, “আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে, আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন: তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো: দূর হয়ে যা, দূর হয়ে যা। " (সহীহ মুসলিম-৪২৪৩)
আরও পড়ুন আহলে বিদআত ওয়াল জামাত
সুস্পষ্ট এই হাদীসে এসেছে, যারা রাসুল (সাঃ) এর দ্বীন ছেড়ে ইবাদতের উদ্দেশ্যে নতুন নতুন আমল শুরু করবে তাদের তিঁনি দূর দূর করে তাড়িয়ে দিবেন। সুতরাং বিদআত নিয়ে কোনপ্রকার বিতর্কে জড়িয়ে লাভ নেই। ভালো বিদআত খারাপ বিদআত বলে নতুন কোনো আমল করার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। কেননা ইসলাম পরিপূর্ণ। আল্লাহ বলেন -
"আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম। " (সূরা মায়েদা :৩ এর অংশবিশেষ)
অর্থাৎ ইসলাম সম্পূর্ণ। ইসলামে এমন কিছু নেই যা রাসুল (সাঃ) বলেননি বা করেননি বা তাঁর উম্মতকে শিক্ষা দেননি। হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন
‘আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবল ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে অসম্মত। জিজ্ঞেস করা হ’ল, কে অসম্মত? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করবে, সে (জান্নাতে যেতে) অসম্মত’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৪৩)।
স্পষ্ট কথা হচ্ছে রাসুল (সাঃ) যে বিষয়ে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে চুল পরিমাণ কমানো বা বাড়ানো যাবেনা। যদি কেউ এমন করেন তবে তা সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য। যে রাসুল (সাঃ)কে পরিত্যাগ করলো সে কখনোই সফলকাম নয়। সুতরাং সুফিরা রাসুল সাঃকে বাদ দিয়ে তাদের পীর আউলিয়াদের অনুসরণ করে কীভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করে?
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২২ জানুয়ারি, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।