সুফি সুন্নীরা ইসলামের শরিয়ত সম্পর্কে এমন এমন সব আকিদা পোষণ করে যা কখনোই ইসলাম স্বীকৃত নয়। এইসব ভ্রান্ত আকিদা সমূহ এমন যে, তা একজন ঈমানদারকে মুশরিকে পরিনত করে ঈমান হারা করে দেয়। এখন আমরা কুরআন এবং সহীহ্ হাদিসের আলোকে সুফি সুন্নীদের জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কিত আকিদার জবাব পাওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
কুসংস্কারে বিশ্বাসীঃ
সুফিদের আকিদা হলো কুসংস্কারে বিশ্বাস করা। যদিও তারা নিজেদের মুসলিম দাবি করে। কিন্তু তাদের দৈনন্দিন সামাজিক ও ব্যাক্তিগত জীবনে অসংখ্য কুসংস্কার লালন করে। যা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। মক্কার আরবে যখন ইসলামের আগমন হয়েছিল, তখন মক্কার চারদিক ছিলো কুসংস্কারে ভরা। সেইসময়ই আল্লাহ্ স্পষ্ট ভাষায় পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন,
" হে মোমিনরা! মদ, জুয়া ও মূর্তিপূজার বেদি এবং ভাগ্য নির্ণয়কারী শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা এগুলো বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।" (সুরা মায়িদা : ৯০)।
অর্থাৎ মক্কার মানুষেরা যেসব কুসংস্কার বিশ্বাস করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভাগ্যগণনা করতো। সেইসব সকল কুসংস্কার এবং পদ্ধতিকে আল্লাহ্ বাতিল করে দিলেন। এছাড়াও অসংখ্য অসংখ্য কুসংস্কার তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিলো। আল্লাহ্ বলেন,
" তোমরা যে গৃহের পেছন দিক দিয়ে প্রবেশ কর, তাতে কোন পুণ্য নেই, বরং পুণ্য আছে কেউ তাকওয়া অবলম্বন করলে, কাজেই তোমরা (সদর) দরজাগুলো দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর এবং আল্লাহ্কে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। "(সূরা বাকারা -১৮৯)
মক্কার মুশরিকরা যখন হজ্জ্ব পালন করতো তখন আনসার এবং অন্যান্য আরবরা জাহেলী যুগে হজ্জের ইহরাম বেঁধে নেওয়ার পর যদি পুনরায় কোন বিশেষ প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে আসার দরকার হত, তাহলে তারা বাড়ির দরজা দিয়ে আসার পরিবর্তে পিছন দিক দিয়ে দেওয়াল টপকে ভিতরে আসত এবং এটাকে তারা নেকী বা পুণ্যের কাজ মনে করত। মহান আল্লাহ বললেন, এটা নেকী বা পুণ্যের কাজ নয়। এটা ছিলো তাদের একটি কুসংস্কার। যা রাসুলুল্লাহ সাঃ ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে আনেন।
আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীনভাবে ইরশাদ করেছেন-
" রোগ লেগে যাওয়া, কুলক্ষণ, পেঁচা ও সফর-সবের কোনো বাস্তবতা নেই।"-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৭৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৭৪৩
কুসংস্কারের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। রাসুল (সা.) বিদায় হজের ভাষণে কুসংস্কারের মূলে কুঠারাঘাত করে বলেছেন,
‘জাহিলি যুগের সব কুপ্রথা আমার পায়ের নিচে নিক্ষেপ করা হলো। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০৭৪)
রাসুল (সা.) আরও ইরশাদ করেন,
"‘কোনো কিছুকে অপয়া ও অশুভ মনে করা শিরক। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯১০)
উপরের উল্লিখিত অসংখ্য হাদিস থেকে এটা প্রমাণিত যে, ইসলামে কুসংস্কারকে কখনোই মেনে নেওয়া হয়নি। শুধু তাইনয় কুসংস্কার একটি শির্কি পর্যায়ের আমল। যারা কুসংস্কারে বিশ্বাসী তারা আল্লাহর পরিবর্তে কুসংস্কারকে ইলাহ স্বীকার করে নিয়েছে। অথচ আল্লাহ্ পবিত্র কুরআন মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে আলোতে মুক্ত হওয়ার জন্য। আল্লাহ্ বলেন,
" এটি সেই কিতাব যা আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি, যেন তুমি মানুষকে বের করে আন (অনেক) অন্ধকার থেকে এক আলোর দিকে।" ( সুরা ইবরাহিম : ০১)
অর্থাৎ আল্লাহ্ কুরআনের মাধ্যমে আমাদের ইসলামের সেই শিক্ষা দিচ্ছেন যে শিক্ষা দ্বারা আমরা অন্ধকার যুগের জাহেলিয়াত থেকে আলোর পথে নিজেদের পরিচালিত করতে পারি। সুতরাং সুফিদের কুসংস্কারের অনুসরণ অবশ্যই ইসলামের মূলনীতির বিরোধী।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২২ জানুয়ারি, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।