সুফি সুন্নীরা ইসলামের শরিয়ত সম্পর্কে এমন এমন সব আকিদা পোষণ করে যা কখনোই ইসলাম স্বীকৃত নয়। এইসব ভ্রান্ত আকিদা সমূহ এমন যে, তা একজন ঈমানদারকে মুশরিকে পরিনত করে ঈমান হারা করে দেয়। এখন আমরা কুরআন এবং সহীহ্ হাদিসের আলোকে সুফি সুন্নীদের পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ সম্পর্কিত আকিদার জবাব পাওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণঃ
ইসলাম পৃথিবীতে এসেছিল অন্ধকার দূর করার জন্য। সমগ্র দুনিয়াবাসী যখন জাহেলিয়াতের অন্ধকারে অন্ধকারাচ্ছন্ন। ঠিক তখনই সত্যের আলো নিয়ে মক্কার জমিনে আবির্ভূত হয় ইসলাম। যে মক্কার মানুষ যুগ যুগ ধরে পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণে শির্ক কুফর লিপ্ত ছিলো। সেইসব মানুষসহ সমগ্র দুনিয়াবাসীর জন্য ইসলাম আসে পূর্বপুরুষদের ভুল ত্রুটি শুধরিয়ে নতুন করে আলোর পথ দেখাতে।
শুধু মক্কার মানুষ নয় পৃথিবীতে যত নবী রাসুল এসেছিলেন, সবাই তাদের উম্মতদের একটা বার্তাই দিয়েছিলেন। আর সেটা হলো পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ নয়। অনুসরণ করো একমাত্র সত্যের। যে সত্য চিরঞ্জীব এবং চিরস্থায়ী। আর তাহলো মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্। যিনি আমাদের রব এবং একমাত্র ইলাহ।
কিন্তু দূর্ভাগ্য এটাই যে, পৃথিবীর খুব কম সংখ্যক লোকই নবী রাসুলদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল। প্রতিটি নবী রাসুলদের কওমই পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। যেমন পারছে না সুফিবাদীরা। এই সুফিরা কখনোই কোনো দলিলের ভিত্তিতে আমল করে না। সুফিরা তাদের সৃষ্টির শুরু থেকেই অন্ধ অনুসরণকেই তাদের আকিদা মেনে আসছে।
তাদেরকে যতই কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণ দেওয়া হোক না কেন, তারা তাদেরটা নিয়েই গোয়ারতুমি করে। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন,
" যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং রসূলের দিকে এস, তখন তারা বলে, আমাদের জন্যে তাই যথেষ্ট, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে পেয়েছি। যদি তাদের বাপ দাদারা কোন জ্ঞান না রাখে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত না হয় তবুও কি তারা তাই করবে? " [ সুরা মায়েদা ৫:১০৪ ]
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে, বাপ দাদার দোহাই দিয়ে পথভ্রষ্ট সুফিরা কুরআন সুন্নাহ নির্ধারিত সঠিক পথে তারা আসবে না। তারা তাদের পূর্বপুরুষদেরই অনুসরণই করে যাবে। যদিও তাদের পূর্বপুরুষরা কোনো জ্ঞান না রাখে কিংবা হিদায়াত না পেলেও। ইসলাম কখনোই বাপ দাদার রীতিনীতি এবং অন্ধ অনুকরণ মেনে নিবে না। তাই আল্লাহ্ বলেন,
" অতএব, তারা যেসবের উপাসনা করে তুমি সে ব্যাপারে কোনরূপ ধোঁকায় পড়বে না। তাদের পূর্ববর্তী বাপ-দাদারা যেমন পূজা উপাসনা করত, এরাও তেমন করছে। আর নিশ্চয় আমি তাদেরকে আযাবের ভাগ কিছু মাত্রও কম না করেই পুরোপুরি দান করবো। "[ সুরা হুদ ১১:১০৯ ]
অতএব যারা বাপ দাদার অনুসরণে চলবে তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে এবং তা কোনরূপ কম দেওয়া হবেনা। সুফিরা তাদের পীর আউলিয়াদের দোহাই দিয়ে ইসলামের নামে নানান নতুন নতুন আমল আকিদার সৃষ্টি করেছে। যার দলিল কুরআন সুন্নাহর কোথাও নেই। তারপরও তারা তাদেরটা নিয়ে পড়ে আছে। আর দাবি করে তারাও মুসলিম। অথচ মুসলিম হতে হলে অবশ্যই আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের অনুসরণ আবশ্যক। আল্লাহ্ বলেন,
" তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং তাঁর রসূলের আনুগত্য কর।"(সূরা তাগাবুন : ১২)
সুতরাং যেখানে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট করে ঘোষণা দিচ্ছেন যে, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের আনুগত্য করতে। সেখানে বাপ দাদার অনুসরণ কীভাবে গ্রহণযোগ্য? অতএব সুফিরা যে অন্ধ অনুসরণে মত্ত আছে, তার দায়িত্ব তাদের এবং তাদের অনুসারীদের। কিয়ামতে তাদের উভয়ের পরিস্থিতি কী হবে তা আল্লাহ্ আগেই কুরআনে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ্ বলেন,
"(যারা পূর্বপুরুষ ও তাদের নেতাদের কথায় চলেছিল) তারা আরও বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।" [ সুরা আহযাব ৩৩:৬৭ ]
অর্থাৎ, এরা হচ্ছে সুফিদের অনুসারীরা। যারা তাদের পীর অলি আউলিয়াদের নেতা মেনে তাদের অন্ধ অনুসরণ করে দুনিয়ায় জীবনযাপন করেছিল। আজ কিয়ামতের দিন তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনা করবে। আল্লাহ্ অন্য আয়াতে তাদের নেতারা কী বলবে সেটাও স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেন,
" যারা ক্ষমতাদর্পী (নেতা, পীর, অলি, আউলিয়া) তারা যাদের দুর্বল মনে করা হতো তাদের (অর্থাৎ তাদের অনুসারীদের) বলবে, তোমাদের কাছে সৎপথের দিশা (কুরআন সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান) আসার পর আমরা কি তোমাদের তা থেকে নিবৃত করেছিলাম? বস্তুত তোমরাই তো ছিলে অপরাধী।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৩২)
উপরোক্ত আয়াতে এটা সুস্পষ্ট যে, যারা সত্য জানানোর পরও দুনিয়ায় পীর আউলিয়াদের অন্ধ অনুসরণের মাধ্যমে সঠিক কুরআন সুন্নাহ থেকে দূরে আছে। কিয়ামতের দিন তাদেরকে তাদেরই পীর আউলিয়ারা উল্টো দোষারোপ করবে। কেন তারা সত্যের অনুসরণ না করে পীরদের অনুসরণ করলো? তাদের মতে তাদের অনুসারীরাই হচ্ছে আসল অপরাধী!
আল্লাহ্ সুস্পষ্টভাবে ভবিষ্যতের কথা বলে দেওয়ার পরও সুফিবাদীরা অন্ধ অনুসরণের পথ বেছে নিয়েছে। তারা যদিও এখন বুঝতে পারছে না তারা নিজেদের কত ক্ষতি করছে। তবুও তারা কিয়ামতের দিন ঠিকই বুঝতে পারবে তারা আসলেই নিজেদের কত ক্ষতি করে ফেলেছে! আল্লাহ্ সেইদিনের কথাই কুরআনে স্পষ্ট করে আগেই উল্লেখ করে রেখেছেন। যাতে তারা সত্য অনুধাবন করতে পারে। আল্লাহ্ বলেন,
“ (যারা পূর্বপুরুষ ও তাদের নেতাদের কথায় চলেছিল) তারা আরও বলবে- যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম! তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।” (সূরা মুলক: ১০)
অর্থাৎ সুফিরা এখন বুঝতে না পারলেও পরকালে ঠিকই তাদের অনুশোচনা হবে। কেন তারা সত্য শুনলো না। কেন তারা নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে সত্যটা বুঝার চেষ্টা করলো না। শুধু তাইনয়, তারা তাদের ইমাম পীরদেরও দোষারোপ করবে। এই বিষয়ে আল্লাহ্ বলেন,
" তারা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আমাদের নেতা (পীর) ও বড়দের (অলি আউলিয়াদের) আনুগত্য করতাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।" (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬৭)
অতএব এটাই সত্য যে, সুফি অনুসারীরা দুনিয়ায় পীর আউলিয়াদের মান্য করলেও কিয়ামতে তাদের ছেড়ে কথা বলবে না। শুধু তাইনয়, দুনিয়ায় তাদের পূজা করে সিজদা করলেও, কিয়ামতে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে শাস্তি কামনা করবে। এই ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন,
" হে আমাদের প্রতিপালক, তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদের দাও মহা অভিশাপ।" (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬৮)
অর্থাৎ প্রতিটি কথিত পীর আউলিয়ার অনুসারীরা যাদের দুনিয়ায় ভুলের উপর পথ চলেছিল। তারা তাদের পীরদের জন্য আল্লাহর কাছে দ্বিগুণ শাস্তি কামনা করবে।
উপরোক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এটা প্রমাণিত হয় যে, সঠিক দলিল প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র পূর্বপুরুষদের অনুসরণ কখনোই ন্যায়সংগত নয়। আল্লাহ্ দলিল প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র পূর্বপুরুষদের অনুসরণকে কখনোই মেনে নিবেন না। সুতরাং পূর্বপুরুষদের অনুসরণে প্রতিষ্ঠিত সুফিবাদ একটি ভ্রান্ত মতবাদ। পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণের কারণে সুফিদের প্রতিটি ঈমান আকিদা সরাসরি প্রকৃত ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২২ জানুয়ারি, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।