সুফি সুন্নীরা ইসলামের শরিয়ত সম্পর্কে এমন এমন সব আকিদা পোষণ করে যা কখনোই ইসলাম স্বীকৃত নয়। এইসব ভ্রান্ত আকিদা সমূহ এমন যে, তা একজন ঈমানদারকে মুশরিকে পরিনত করে ঈমান হারা করে দেয়। এখন আমরা কুরআন এবং সহীহ্ হাদিসের আলোকে সুফি সুন্নীদের বিভিন্ন আকিদা যেমনঃ জান্নাত, জাহান্নাম, কুসংস্কার, পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ, বিদআতী আমল, তাবিজের আমল, ইত্যাদির জবাব পাওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
জান্নাত জাহান্নামের জন্য ইবাদত নয়ঃ
সুফিদের আরেকটি ভ্রান্ত আকিদা হচ্ছে জান্নাতের আশায় এবং জাহান্নামের ভয়ে ইবাদত করা যাবে না। যদি কেউ এই দুটির জন্য ইবাদত করে তাহলে তা হবে শিরক! কিন্তু দাবিটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আমরা এই বিষয়ে একটি উদাহরণের সাহায্যে বুঝার চেষ্টা করি।
দুনিয়ায় আমরা কম বেশী সবাই কারো না কারো অধীনে কাজ করি বা করতে হয়। ধরে নিলাম আমরা একজন ক্ষমতাবান বসের নিয়ন্ত্রণে কাজ করি। দুনিয়ার রীতি অনুসারে বসকে সবাই ভয় পাওয়ার কথা। কীসের ভয়? চাকরি চলে যাওয়া প্রমোশন, ডিমোশন, বিভিন্ন সুযোগসুবিধা পাওয়া না পাওয়ার ভয়।
সুতরাং এখন যেকেউ চাইবে বসকে কাজ দিয়ে হোক, কথা দিয়ে হোক তোষামোদি করে হোক, যেকোনো উপায়ে সন্তুষ্ট করতে। এর কারণ কী? এর কারণ হলো একজন ক্ষমতাশালী বসের কাছে প্রিয় হতে পারলে অবশ্যই সেই বস ঐ কর্মচারীকে প্রোমোশনসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দিবেন।
সুতরাং প্রতিটি ব্যক্তিই চাইবে বসকে খুশি করতে। যাতে করে প্রোমোশনসহ অন্যান্য সুবিধা পেতে পারে। এই খুশি করা হতে পারে বসের আদিষ্ট কাজ যথাযথভাবে বুঝিয়ে দেওয়া। সময়ের কাজ সময়ে করা। সেইসাথে নিজের দায়িত্বের বাইরের কাজও করে দেওয়া। যাতে বসের সুনজর পাওয়া যায়।
কেউ যদি বসকে খুশিও করতে নাও চায় তবুও তাকে চটাতে চাইবে না। কেন চটাতে চাইবে না? কারণ, বস যদি কোনো কারণে কারোর উপর অসন্তুষ্ট হয়, তাহলে তার ডিমোশন বা চাকরি চলে যাওয়াসহ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিতও করতে পারে। অতএব চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে হলেও তাকে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
এই যে আমরা দুনিয়ার একজন মানুষকে এতো ভয় করছি কেন? বা তাকে আপন করার চেষ্টাও করছি কেন? এই বস কিন্তু কোনো বাঘ ভাল্লুক নয় যে তাকে এতো ভয় পেতে হবে। অথবা তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও নেই যে তাকে সেই কারণে ভালোবাসব।
অতএব তাকে ভয় ও ভালোবাসার মূল কারণ আমরা আগেই জেনেছি। আর তা হচ্ছে প্রোমোশন এবং ডিমোশন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা। যদি এই দুটোর ভয় বা আশা না থাকতো, তাহলে আমরা কেউ ই তাকে ক্ষমতাশালী মনে করতাম না এবং তাকে ভয় পাওয়া বা সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতাম না।
সুতরাং এই উদাহরণের দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, ক্ষমতাশালী কাউকে ভয় বা সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্য হলো, তার থেকে ক্ষতি আশংকা বা লাভের আশা করা। অর্থাৎ ক্ষমতাশালী ব্যক্তির নিজস্বতা কিছু নয়। বরং তার দ্বারা ক্ষতি ও লাভের কারণে তাকে ভয় বা ভালোবাসছি।
উপরোক্ত উদাহরণের মতে আমরা আল্লাহর ইবাদতও ঠিক একই কারণে করছি। আমরা আল্লাহ্কে ভালোবাসছি এবং ভয়ও করছি। ভালোবাসার কারণে তাঁর সন্তুষ্টির আশা করছি দুনিয়া এবং আখিরাতে। ঠিক একইভাবে তাকে ভয় করছি দুনিয়া এবং আখিরাতের জন্য। অর্থাৎ তাকে সন্তুষ্ট করে দুনিয়ার শান্তি এবং আখিরাতে জান্নাত পাওয়া। আর জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো আল্লাহর দর্শন বা তাকে কাছ থেকে দেখা।
এইভাবে তাঁকে ভয় পাওয়ার কারণ হলো দুনিয়ার শাস্তি তথা বিভিন্ন বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া। সেইসাথে আখিরাতের শাস্তি তথা জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া।
এখন সুফিদের যে আকিদা জান্নাত জাহান্নামের চিন্তা করা যাবে না তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? ধরে নিলাম আমাদের জান্নাতেরও চিন্তা নাই জাহান্নামেরও চিন্তা নাই। তাহলে আমরা আল্লাহর ইবাদত করবো কেন? এর উত্তরে সুফিরা বলে, আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্য অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য।
ধরে নিলাম আমরা আল্লাহর ভালোবাসা পেলাম। এখন আল্লাহ্ আমাদের কী দিবেন? সুফিদের দাবি তিনি তাঁর দেখা দিবেন। খুবই চমৎকার কথা। এখন আমাদের প্রশ্ন তিনি তাঁর দেখা কোথায় দিবেন? দুনিয়ায় নাকি আখিরাতে? এখনই সুফিদের থলের বিড়াল বের হয়ে বলবে যে, আল্লাহর ভালোবাসা পেলে আল্লাহ্ দুনিয়াই তাঁর দেখা বান্দাকে দিবে! অর্থাৎ কুরআন সুন্নাহ বিরোধী যে আকিদা, দুনিয়ায় বসে আল্লাহ্কে দেখা। এটা প্রমাণ করার জন্যই তাদের এই প্রতারণামূলক অসাড় দাবি।
কথাটা এইজন্যই প্রতারণামূলক, কারণ দুনিয়ায় বসে কখনোই আল্লাহ্কে দেখা সম্ভব নয়। যা কুরআন সুন্নাহ দ্বারা আগেই প্রমাণিত হয়েছে। এখন এই কথার মাধ্যমে সেটাকে আরো জোরালো করার ব্যর্থ চেষ্টা সুফিরা করে। যদি তাদের উদ্দেশ্য সৎ হতো তাহলে তাদের দাবির পক্ষে কেউ কোনো আপত্তি করতো না। কারণ, যদি ধরেই নিই যে আল্লাহকে পাওয়া বা দেখার জন্য ইবাদত করতে হবে। তাহলেও কথাটা ভুল নয়।
কেননা বান্দা আল্লাহর ইবাদত করছে তাঁকে দেখার জন্য। আর তাঁর দেখা শুধুমাত্র জান্নাতিরাই পাবেন। তাও আবার শুধুমাত্র জান্নাতে। কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত যে, জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত হচ্ছে আল্লাহ্কে দেখা। সাধারণ মানুষেরা মনে করে জান্নাত শুধু ভালো খাওয়া পড়ার জায়গায়। এটা একটা ভ্রান্তি। কেননা দুনিয়াতেও যথেষ্ট খাওয়া পড়ার ব্যবস্থা ছিলো। শুধু ছিলো না আল্লাহর দর্শন।
সুতরাং সুফিরা যদি এই হিসাবে তাদের দাবি উত্থাপন করে তাহলে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তাদের নিয়ত খারাপ। তারা তাদের এই আকিদা দ্বারা এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, তারা তাদের মতো আল্লাহর ইবাদত করে তাঁকে দুনিয়াতে বসেই তারা দেখতে পাচ্ছে। সুতরাং তাদের জান্নাত হাসিল হয়ে গেছে। তাইতো তাদের বিখ্যাত উক্তি হলো, "হে আল্লাহ্ তোমাকে ভালোবাসর জন্য যদি দোজখের আগুনেও জ্বলতে হয় তাহলেও আমি খুশি " এই উক্তিটি একটি স্ববিরোধী কথা। কেননা আল্লাহ্কে ভালবাসলে কখনোই তাকে দোজখে যেতে হবেনা।
মোটকথা সুফিরা তাদের ভ্রান্ত আকিদা দুনিয়ায় বসে আল্লাহ্কে দেখা জায়েজ করতেই এমন প্রশ্নের অবতারণা করেছে। আল্লাহর বান্দারা তাঁকে এইজন্যই ভয় এবং ভালোবাসছে যে, তিনি বান্দাকে শাস্তি তথা জাহান্নাম এবং শান্তি তথা জান্নাত দিবেন। এটাই কুরআন সুন্নাহর শিক্ষা। একজন বান্দা অবশ্যই ভয় এবং আশা নিয়ে ইবাদত করবে। আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন,
" তাঁকে (আল্লাহ্কে) ডাকো ভয় ও আশা নিয়ে। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী। " (আল আরাফ ৭:৫৬)
পবিত্র হাদীসে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
" তোমরা আল্লাহ্র কাছে চাইলে ফেরদাউস চাইবে। কেননা এটাই হলো সবচেয়ে উত্তম ও সর্বোচ্চ জান্নাত। " (সংক্ষেপিত, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৭৯০)
পবিত্র কুরআন থেকে এটা সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে আল্লাহর ইবাদত করতে হবে অবশ্যই ভয় এবং আশা নিয়ে। সেইসাথে হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে অবশ্যই আল্লাহর কাছে জান্নাত চাইতে হবে। তাও আবার সবচেয়ে উত্তম জান্নাতই আল্লাহর কাছে চাওয়া হচ্ছে সুন্নাত। সুতরাং জাহান্নামের শাস্তির ভয় এবং জান্নাতে আল্লাহর দিদারের আশায় ইবাদত করতে হবে।
এই বিষয়ে বিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ বলেন,
ইবাদত দুইটি মহান বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত: ভালবাসা ও সম্মান। আর এ দুইয়ের সমষ্টি হচ্ছে ইবাদত।
আল্লাহ্ বলেন,
“তারা সৎকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ত, আর তারা আগ্রহ ও ভীতির সাথে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে ভীত-অবনত।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০]
সুতরাং ভালবাসার মাধ্যমে আগ্রহ তৈরী হয় এবং সম্মানের মাধ্যমে ভয়-ভীতি তৈরী হয়। এ কারণেই তো ইবাদত হচ্ছে- কতগুলো আদেশ ও নিষেধ। নির্দেশগুলোর ভিত্তি হচ্ছে- আগ্রহের উপর এবং নির্দেশকারীর কাছে পৌঁছার অভিপ্রায়ের উপর। আর নিষেধগুলোর ভিত্তি হচ্ছে- সম্মান করা ও সম্মানিত সত্তাকে ভয় করার উপর।
যদি আপনি আল্লাহকে ভালবাসেন তাহলে তাঁর কাছে যা আছে সেটা পাওয়ার জন্য ও তাঁর কাছে পৌঁছার জন্য আপনি আগ্রাহী হবেন, তাঁর কাছে পৌঁছার রাস্তা সন্ধান করবেন এবং পরিপূর্ণভাবে তাঁর আনুগত্য পালন করবেন।
আর যদি আপনি আল্লাহকে সম্মান করেন, তাহলে আপনি তাঁকে ভয় করবেন, যখনই কোন গুনাহ করার আকাঙ্ক্ষা মনে জাগবে আপনি স্রষ্টার মহত্ত্ব অনুভব করে সে গুনাহ থেকে বিরত থাকবেন। যেমন আল্লাহ্ বলেন,
“নিশ্চয় মহিলা তাকে আকাঙ্ক্ষা করেছিল এবং তিনিও মহিলাকে আকাঙ্ক্ষা করতেন; যদি না তিনিও স্বীয় রবের নিদর্শন দেখতে পেতেন।”[সূরা ইউসূফ, আয়াত: ২৪]
সুতরাং আপনি যদি কোন পাপকাজ করার মনস্থ করেন এবং আল্লাহকে আপনার সামনে ভেবে ভয় পেয়ে যান, ভীত হয়ে পড়েন ও পাপ থেকে দূরে সরে আসেন তাহলে এটি আপনার প্রতি আল্লাহর নেয়ামত। যেহেতু আপনি আগ্রহ ও ভয় দুটোর মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করতে পারলেন। [শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (৮/১৭, ১৮)]
সুফিদের দাবি তারা আল্লাহ্কে ভালোবাসার জন্য ইবাদত করছে। অর্থাৎ তারা আল্লাহ্কে ভালোবেসে আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চায়। এখন আমরা দেখবো আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আল্লাহ্ নিজেই কী শর্ত দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেন,
" (হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।" (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ এটা স্পষ্ট করে বলে দিলেন যে, আল্লাহর ভালোবাসা এবং ক্ষমা পাওয়া একমাত্র শর্ত হলো রাসুলের অনুসরণ। অর্থাৎ যেকেউ আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাইলে তাকে অবশ্যই রাসুলের পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে।
আল্লাহ্ অন্য আয়াতে বলেন,
" তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে। "(আল আহযাব :২১)
এই আয়াতে আল্লাহ্ স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রতিটি বান্দার জন্য রাসুলুল্লাহ হচ্ছেন উত্তম আদর্শ। সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাঃ যে পদ্ধতিতে আল্লাহ্কে ভালোবাসতে বলেছেন বা যে নিয়তে যে ইবাদত যেকারণে করতে বলেছেন, ঠিক একইভাবে তা তা করতে পারলেই আল্লাহ্ তাঁর ঐ বান্দার উপর খুশি হবেন এবং ভালোবাসবেন। এখন আমরা দেখার চেষ্টা করবো রাসুলুল্লাহ কীভাবে ইবাদত করতে বলেছেন। এবং তিনি তাঁর দোয়াতে কী কী আল্লাহর কাছে চাইতেন।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই আল্লাহর কাছে জান্নাত চাইতেন এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তাঁর সাহাবীবর্গকে জান্নাত চাওয়া ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা শিক্ষা দিতেন। এটি সুস্পষ্ট প্রমাণিত সুন্নাহ।এর মধ্যে তাঁরা আল্লাহর মহব্বতের কোন কমতি দেখেননি কিংবা তাদের ইবাদতের মর্যাদাতেও কোন ঘাটতি দেখেননি।
" আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে বেশি দুআ করতেন “হে আল্লাহ! আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচান।” [সহিহ বুখারী (৬০২৬)]
" আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলেন: আপনি নামাযে কি বলেন? তিনি বলেন: আমি তাশাহুদ পড়ি, এরপর আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। তবে আমি আপনার চুপিচুপি পাঠ কিংবা মুয়ায (অর্থাৎ ইবনে জাবাল) এর চুপিচুপি পাঠের কিছুই বুঝি না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমরাও একই রকম কিছু চুপিসারে পাঠ করি।”[সুনানে আবু দাউদ (৭৯২), সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৮৪৭) এবং আলবানি সহিহ ইবনে মাজাহ গ্রন্থ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
উপরোক্ত হাদীস ছাড়াও আরো অসংখ্য হাদীসে এসেছে যে, প্রতিটি মুমিন যেন সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর কাছ থেকে জান্নাত প্রার্থনা করে এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চায়। সুতরাং সুফিরা যদি রাসুলুল্লাহর অনুসরণ করতো তাহলে তারাও সকাল সন্ধ্যা জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চাইত। অথচ তারা তা না করে রাসুলুল্লাহর সুন্নাহর বিরোধীতা করছে। যদি তারা রাসুলুল্লাহর বিরোধীতা করে তাঁর অনুসরণ না করে, তাহলে তারা কীভাবে আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার দাবি করে?
কুসংস্কারে বিশ্বাসীঃ
সুফিদের আকিদা হলো কুসংস্কারে বিশ্বাস করা। যদিও তারা নিজেদের মুসলিম দাবি করে। কিন্তু তাদের দৈনন্দিন সামাজিক ও ব্যাক্তিগত জীবনে অসংখ্য কুসংস্কার লালন করে। যা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। মক্কার আরবে যখন ইসলামের আগমন হয়েছিল, তখন মক্কার চারদিক ছিলো কুসংস্কারে ভরা। সেইসময়ই আল্লাহ্ স্পষ্ট ভাষায় পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন,
" হে মোমিনরা! মদ, জুয়া ও মূর্তিপূজার বেদি এবং ভাগ্য নির্ণয়কারী শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা এগুলো বর্জন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।" (সুরা মায়িদা : ৯০)।
অর্থাৎ মক্কার মানুষেরা যেসব কুসংস্কার বিশ্বাস করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ভাগ্যগণনা করতো। সেইসব সকল কুসংস্কার এবং পদ্ধতিকে আল্লাহ্ বাতিল করে দিলেন। এছাড়াও অসংখ্য অসংখ্য কুসংস্কার তাদের মধ্যে প্রচলিত ছিলো। আল্লাহ্ বলেন,
" তোমরা যে গৃহের পেছন দিক দিয়ে প্রবেশ কর, তাতে কোন পুণ্য নেই, বরং পুণ্য আছে কেউ তাকওয়া অবলম্বন করলে, কাজেই তোমরা (সদর) দরজাগুলো দিয়ে গৃহে প্রবেশ কর এবং আল্লাহ্কে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। "(সূরা বাকারা -১৮৯)
মক্কার মুশরিকরা যখন হজ্জ্ব পালন করতো তখন আনসার এবং অন্যান্য আরবরা জাহেলী যুগে হজ্জের ইহরাম বেঁধে নেওয়ার পর যদি পুনরায় কোন বিশেষ প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে আসার দরকার হত, তাহলে তারা বাড়ির দরজা দিয়ে আসার পরিবর্তে পিছন দিক দিয়ে দেওয়াল টপকে ভিতরে আসত এবং এটাকে তারা নেকী বা পুণ্যের কাজ মনে করত। মহান আল্লাহ বললেন, এটা নেকী বা পুণ্যের কাজ নয়। এটা ছিলো তাদের একটি কুসংস্কার। যা রাসুলুল্লাহ সাঃ ধীরে ধীরে পরিবর্তন করে আনেন।
আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুসংস্কারের বিরুদ্ধে দ্ব্যর্থহীনভাবে ইরশাদ করেছেন-
" রোগ লেগে যাওয়া, কুলক্ষণ, পেঁচা ও সফর-সবের কোনো বাস্তবতা নেই।"-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৭৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৫৭৪৩
কুসংস্কারের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। রাসুল (সা.) বিদায় হজের ভাষণে কুসংস্কারের মূলে কুঠারাঘাত করে বলেছেন,
‘জাহিলি যুগের সব কুপ্রথা আমার পায়ের নিচে নিক্ষেপ করা হলো। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০৭৪)
রাসুল (সা.) আরও ইরশাদ করেন,
"‘কোনো কিছুকে অপয়া ও অশুভ মনে করা শিরক। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯১০)
উপরের উল্লিখিত অসংখ্য হাদিস থেকে এটা প্রমাণিত যে, ইসলামে কুসংস্কারকে কখনোই মেনে নেওয়া হয়নি। শুধু তাইনয় কুসংস্কার একটি শির্কি পর্যায়ের আমল। যারা কুসংস্কারে বিশ্বাসী তারা আল্লাহর পরিবর্তে কুসংস্কারকে ইলাহ স্বীকার করে নিয়েছে। অথচ আল্লাহ্ পবিত্র কুরআন মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন কুসংস্কারের অন্ধকার থেকে আলোতে মুক্ত হওয়ার জন্য। আল্লাহ্ বলেন,
" এটি সেই কিতাব যা আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি, যেন তুমি মানুষকে বের করে আন (অনেক) অন্ধকার থেকে এক আলোর দিকে।" ( সুরা ইবরাহিম : ০১)
অর্থাৎ আল্লাহ্ কুরআনের মাধ্যমে আমাদের ইসলামের সেই শিক্ষা দিচ্ছেন যে শিক্ষা দ্বারা আমরা অন্ধকার যুগের জাহেলিয়াত থেকে আলোর পথে নিজেদের পরিচালিত করতে পারি। সুতরাং সুফিদের কুসংস্কারের অনুসরণ অবশ্যই ইসলামের মূলনীতির বিরোধী।
পূর্বপুরুষদের অনুসরণঃ
সুফি অনুসারীরা মূলত পূর্বপুরুষদের অনুসারী। তারা সনাতন ধর্মের মতো বাপ দাদারা যা করে এসেছে তাই করতেই বেশী পছন্দ করে। তাদের হাজারবার সত্যের দিকে ডাকা হলেও তারা সেই সত্যকে মানতে নারাজ। এইকারণে যারা সুফিবাদে বিশ্বাস করে তাদের কখনোই সঠিক ইসলামের হিদায়াত পায় না।
তাদের যাবতীয় ঈমান আকিদা আমল শুরু হয়েছে তাদের পীর অলি আউলিয়াদের দেখানো পথে। যখন তারা জানতো না তখনও ঐসব আমল করতো। এখন জানানোর পরও সেইসব পূর্বপুরুষদের আমলই করে যাচ্ছে। কুরআন সুন্নাহর কোনো প্রমাণই তাদের কাছে গ্রাহ্য নয়।
পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণঃ
ইসলাম পৃথিবীতে এসেছিল অন্ধকার দূর করার জন্য। সমগ্র দুনিয়াবাসী যখন জাহেলিয়াতের অন্ধকারে অন্ধকারাচ্ছন্ন। ঠিক তখনই সত্যের আলো নিয়ে মক্কার জমিনে আবির্ভূত হয় ইসলাম। যে মক্কার মানুষ যুগ যুগ ধরে পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণে শির্ক কুফর লিপ্ত ছিলো। সেইসব মানুষসহ সমগ্র দুনিয়াবাসীর জন্য ইসলাম আসে পূর্বপুরুষদের ভুল ত্রুটি শুধরিয়ে নতুন করে আলোর পথ দেখাতে।
শুধু মক্কার মানুষ নয় পৃথিবীতে যত নবী রাসুল এসেছিলেন, সবাই তাদের উম্মতদের একটা বার্তাই দিয়েছিলেন। আর সেটা হলো পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ নয়। অনুসরণ করো একমাত্র সত্যের। যে সত্য চিরঞ্জীব এবং চিরস্থায়ী। আর তাহলো মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্। যিনি আমাদের রব এবং একমাত্র ইলাহ।
কিন্তু দূর্ভাগ্য এটাই যে, পৃথিবীর খুব কম সংখ্যক লোকই নবী রাসুলদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল। প্রতিটি নবী রাসুলদের কওমই পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। যেমন পারছে সুফিবাদীরা। এই সুফিরা কখনোই কোনো দলিলের ভিত্তিতে আমল করে না। সুফিরা তাদের সৃষ্টির শুরু থেকেই অন্ধ অনুসরণই করে আসছে।
তাদেরকে যতই কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণ দেওয়া হোক না কেন, তারা তাদেরটা নিয়েই গোয়ারতুমি করে। অথচ পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন,
" যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং রসূলের দিকে এস, তখন তারা বলে, আমাদের জন্যে তাই যথেষ্ট, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে পেয়েছি। যদি তাদের বাপ দাদারা কোন জ্ঞান না রাখে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত না হয় তবুও কি তারা তাই করবে? " [ সুরা মায়েদা ৫:১০৪ ]
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে, বাপ দাদার দোহাই দিয়ে পথভ্রষ্ট সুফিরা কুরআন সুন্নাহ নির্ধারিত সঠিক পথে তারা আসবে না। তারা তাদের পূর্বপুরুষদেরই অনুসরণ করবে। যদিও তারা কোনো জ্ঞান না রাখে কিংবা হিদায়াত না পেলেও। ইসলাম কখনোই বাপ দাদার রীতিনীতি এবং অন্ধ অনুকরণ মেনে নিবে না। তাই আল্লাহ্ বলেন,
" অতএব, তারা যেসবের উপাসনা করে তুমি সে ব্যাপারে কোনরূপ ধোঁকায় পড়বে না। তাদের পূর্ববর্তী বাপ-দাদারা যেমন পূজা উপাসনা করত, এরাও তেমন করছে। আর নিশ্চয় আমি তাদেরকে আযাবের ভাগ কিছু মাত্রও কম না করেই পুরোপুরি দান করবো। "[ সুরা হুদ ১১:১০৯ ]
অতএব যারা বাপ দাদার অনুসরণে চলবে তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে এবং তা কোনরূপ কম দেওয়া হবেনা। সুফিরা তাদের পীর আউলিয়াদের দোহাই দিয়ে ইসলামের নামে নানান নতুন নতুন আমল আকিদার সৃষ্টি করেছে। যার দলিল কুরআন সুন্নাহয় নেই। তারপরও তারা তাদেরটা নিয়ে পড়ে আছে। আর দাবি করে তারাও মুসলিম। অথচ মুসলিম হতে হলে অবশ্যই আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের অনুসরণ আবশ্যক। আল্লাহ্ বলেন,
" তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং তাঁর রসূলের আনুগত্য কর।"(সূরা তাগাবুন : ১২)
সুতরাং যেখানে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট করে ঘোষণা দিচ্ছেন যে, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের আনুগত্য করতে। সেখানে বাপ দাদার অনুসরণ কীভাবে গ্রহণযোগ্য? অতএব সুফিরা যে অন্ধ অনুসরণে মত্ত আছে, তার দায়িত্ব তাদের এবং তাদের অনুসারীদের। কিয়ামতে তাদের উভয়ের পরিস্থিতি কী হবে তা আল্লাহ্ আগেই কুরআনে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ্ বলেন,
" তারা আরও বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা আমাদের নেতা ও বড়দের কথা মেনেছিলাম, অতঃপর তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।" [ সুরা আহযাব ৩৩:৬৭ ]
অর্থাৎ, এরা হচ্ছে সুফিদের অনুসারীরা। যারা তাদের পীর অলি আউলিয়াদের নেতা মেনে তাদের অন্ধ অনুসরণ করে দুনিয়ায় জীবনযাপন করেছিল। আজ কিয়ামতের দিন তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনা করছে। আল্লাহ্ অন্য আয়াতে তাদের নেতারা কী বলবে সেটাও স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ বলেন,
" যারা ক্ষমতাদর্পী (নেতা, পীর, অলি, আউলিয়া) তারা যাদের দুর্বল মনে করা হতো তাদের (অর্থাৎ তাদের অনুসারীদের) বলবে, তোমাদের কাছে সৎপথের দিশা (কুরআন সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান) আসার পর আমরা কি তোমাদের তা থেকে নিবৃত করেছিলাম? বস্তুত তোমরাই তো ছিলে অপরাধী।’ (সুরা : সাবা, আয়াত : ৩২)
উপরোক্ত আয়াতে এটা সুস্পষ্ট যে, যারা দুনিয়ায় পীর আউলিয়াদের অন্ধ অনুসরণের মাধ্যমে সঠিক কুরআন সুন্নাহ থেকে দূরে আছে সত্য জানানোর পরও। কিয়ামতের দিন তাদেরকে তাদেরই পীর আউলিয়ারা উল্টো দোষারোপ করবে। কেন তারা সত্যের অনুসরণ না করে পীরদের অনুসরণ করলো? তাদের মতে তাদের অনুসারীরাই হচ্ছে আসল অপরাধী!
আল্লাহ্ সুস্পষ্টভাবে ভবিষ্যতের কথা বলে দেওয়ার পরও সুফিবাদীরা অন্ধ অনুসরণের পথ বেছে নিয়েছে। তারা যদিও এখন বুঝতে পারছে না তারা নিজেদের কত ক্ষতি করছে। তবুও তারা কিয়ামতের দিন ঠিকই বুঝতে পারবে তারা আসলেই নিজেদের কত ক্ষতি করে ফেলেছে! আল্লাহ্ সেইদিনের কথাই কুরআনে স্পষ্ট করে আগেই উল্লেখ করে রেখেছেন। যাতে তারা সত্য অমলনুধাবন করতে পারে। আল্লাহ্ বলেন,
“তারা আরও বলবে- যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম! তবে আমরা জাহান্নামবাসীদের মধ্যে থাকতাম না।” (সূরা মুলক: ১০)
অর্থাৎ সুফিরা এখন বুঝতে না পারলেও পরকালে ঠিকই তাদের অনুশোচনা হবে। কেন তারা সত্য শুনলো না। কেন তারা নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে সত্যটা বুঝার চেষ্টা করলো না। শুধু তাইনয়, তারা তাদের ইমাম পীরদেরও দোষারোপ করবে। এই বিষয়ে আল্লাহ্ বলেন,
" তারা আরো বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক, আমরা আমাদের নেতা (পীর) ও বড়দের (অলি আউলিয়াদের) আনুগত্য করতাম এবং তারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিল।" (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬৭)
অতএব এটাই সত্য যে, সুফি অনুসারীরা দুনিয়ায় পীর আউলিয়াদের মান্য করলেও কিয়ামতে তাদের ছেড়ে কথা বলবে না। শুধু তাইনয়, দুনিয়ায় তাদের পূজা করে সিজদা করলেও, কিয়ামতে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে শাস্তি কামনা করবে। এই ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন,
" হে আমাদের প্রতিপালক, তাদের দ্বিগুণ শাস্তি দাও এবং তাদের দাও মহা অভিশাপ।" (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৬৮)
অর্থাৎ প্রতিটি পীর আউলিয়ার অনুসারীরা যাদের দুনিয়ায় ভুলের উপর পথ চলেছিল। তারা তাদের পীরদের জন্য আল্লাহর কাছে দ্বিগুণ শাস্তি কামনা করবে। সুতরাং সুফিবাদ যে একটি ভ্রান্ত মতবাদ তা এইসব আয়াত থেকেই স্পষ্ট প্রমাণিত। সুফিদের প্রতিটি ঈমান আকিদা সরাসরি প্রকৃত ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।
সুফিদের বিদআতী আমলঃ
সুফিদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আকিদা হলো বিদআতী আমল করা। যেহেতু তাদের দৃষ্টিতে শরীয়তের নতুন নতুন উৎস থেকে ঈমান আমল বৃদ্ধি বা যোগ করা যায়। সেহেতু তারা বিদআতের মাধ্যমে নতুন নতুন ইবাদতও জায়েজ মনে করে। যদিও ইসলামের দৃষ্টিতে বিদআত নাজায়েজ একটি কাজ।
বিদআত হচ্ছে ঈমান আকিদার মাধ্যমে নতুন কোনো ধারণা এবং ইবাদতের মাধ্যমে নতুন কোনো আমল সৃষ্টি। অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ যে দ্বীন ইসলাম দিয়ে গেছেন এবং আল্লাহ্ যে ইসলামকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। সেই ইসলামে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুলের অসম্মতিতে নতুন নতুন ধারণা এবং ইবাদত বা আমল সৃষ্টিকে বলা হচ্ছে বিদআত।
অথচ একথা সুপ্রতিষ্ঠিত যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। সেখানে নতুন করে কোনো কিছু যোগ বিয়োগ করা যাবেনা। তারপরও সুফিরা তাদের আকিদায় পীর অলি আউলিয়াদের মাধ্যমে নতুন নতুন ঈমান আকিদা ইবাদত আমল সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা চালিয়ে বিভিন্ন ইবাদত ইসলামের নামে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। যা সম্পূর্ণ কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কাজ।
আমরা পবিত্র কুরআন থেকে সুস্পষ্ট শিক্ষা পায় যে, যে নিজেকে মুসলিম বলে ইসলামে প্রবেশ করবে। তাকে অবশ্যই কুরআন এবং সুন্নাহ মেনে একমাত্র রাসুলের অনুসরণে রাসুলের আদর্শে নিজেকে মুমিন দাবি করতে পারবে। যে রাসুলের আদর্শ অনুসরণ করলো, আল্লাহ্ একমাত্র তাকেই তাঁর সন্তুষ্টির ছায়া প্রদান করবেন। আল্লাহ্ বলেন,
‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, যারাই আল্লাহর ভালোবাসা তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায়। তাদের অবশ্যই রাসুলুল্লাহ সাঃএর অনুসরণ করতে হবে। আর আমরা এখন দেখবো রাসুলুল্লাহ এই বিদআত নিয়ে কী বলেছেন।
পবিত্র হাদীসে বিদআত সম্পর্কিত অসংখ্য হাদিস এসেছে।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০)।
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশনা নেই, তা পরিত্যাজ্য’ (মুসলিম হা/১৭১৮)।
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও ছালাতের পর বলেন, ‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হ’ল দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হ’ল ভ্রষ্টতা’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)। আর নাসাঈতে রয়েছে, ‘প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম’ (নাসাঈ হা/১৫৭৮)।
ইরবায বিন সারিয়াহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন আমাদের নিয়ে ছালাত আদায় করলেন। আমার পরে তোমাদের মধ্যে যারা বেঁচে থাকবে, তারা সত্বর বহু মতভেদ দেখতে পাবে। তখন তোমরা আমার সুন্নাতকে এবং সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে। তাকে কঠিনভাবে ধরবে এবং মাড়ির দাঁত সমূহ দিয়ে কামড়ে ধরে থাকবে। সাবধান! দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি হতে দূরে থাকবে। কেননা (দ্বীনের ব্যাপারে) যেকোন নতুন সৃষ্টি হল বিদ‘আত এবং প্রত্যেক বিদ‘আত হল পথভ্রষ্টতা’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১৬৫)।(সংক্ষেপিত)
উপরোক্ত হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, ইসলামে এমন আমল (সওয়াবের উদ্দেশ্যে ইবাদত) করা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় যা রাসুল (সাঃ)এবং তাঁর খোলাফায়ে রাশেদ্বীন (রাঃ) করেননি। সুতরাং এমন ইবাদত(বা নেকীর উদ্দেশ্যে আমল) করা যা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর খোলাফায়ে রাশেদ্বীন করেননি তা স্পষ্টত বিদআত। আর বিদআত মানেই পথভ্রষ্টতা। আর পথভ্রষ্টতা মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যায়।
সুতরাং সুফিরা পীর আউলিয়াদের দোহাই দিয়ে যেসব নতুন নতুন ইবাদত আমল সৃষ্টি করছে, তা কখনোই ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। সুফিরা জেনেশুনে এইসব বিদআতে নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছে দুনিয়াবী স্বার্থের আশায়। তারা জানে না তাদের জন্য আল্লাহ্ কী প্রস্তুত করে রেখেছেন। আসুন জেনে নিই বিদআতের পরিনাম কী।
নাসাঈ শরীফে এসেছে সকল পথভ্রষ্টতাই জাহান্নামী। অর্থাৎ যারা বিদআতে লিপ্ত হয়ে ইসলামের সঠিক পথ থেকে দূরে সরে যাবে তারা প্রকারান্তে জাহান্নামী। তাছাড়া যারা বিদআতে লিপ্ত তারা কখনোই রাসুলের (সাঃ) শাফায়াত প্রাপ্ত হবে না।
আবু হাসেম(রাঃ) হতে বর্ণিত-
"তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, “আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে, আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন: তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো: দূর হয়ে যা, দূর হয়ে যা। " (সহীহ মুসলিম-৪২৪৩)
সুস্পষ্ট এই হাদীসে এসেছে, যারা রাসুল (সাঃ) এর দ্বীন ছেড়ে ইবাদতের উদ্দেশ্যে নতুন আমল শুরু করবে তাদের তিঁনি দূর দূর করে তাড়িয়ে দিবেন। সুতরাং বিদআত নিয়ে কোনপ্রকার বিতর্কে জড়িয়ে লাভ নেই। ভালো বিদআত খারাপ বিদআত বলে নতুন কোনো আমল করার কোনো সুযোগ ইসলামে নেই। কেননা ইসলাম পরিপূর্ণ। আল্লাহ বলেন -
" আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম। " (সূরা মায়েদা :৩ এর অংশবিশেষ)
অর্থাৎ ইসলাম সম্পূর্ণ। ইসলামে এমন কিছু নেই যা রাসুল (সাঃ) বলেননি বা করেননি বা তাঁর উম্মতকে শিক্ষা দেননি। হাদীসে এসেছে -
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন ‘আমার সকল উম্মত জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবল ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যে অসম্মত। জিজ্ঞেস করা হ’ল, কে অসম্মত? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করবে, সে (জান্নাতে যেতে) অসম্মত’ (বুখারী, মিশকাত হা/১৪৩)।
স্পষ্ট কথা হচ্ছে রাসুল (সাঃ) যে বিষয়ে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে চুল পরিমাণ কমানো বা বাড়ানো যাবেনা। যদি কেউ এমন করেন তবে তা সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য। যে রাসুল (সাঃ)কে পরিত্যাগ করলো সে কখনোই সফলকাম নয়। সুতরাং সুফিরা রাসুল সাঃকে বাদ দিয়ে তাদের পীর আউলিয়াদের অনুসরণ করে কীভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করে?
সুফিদের তাবিজের আকিদাঃ
ইসলাম একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করতে শিক্ষা দেয়। কিন্তু তাবিজ বা তামীমা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর উপর ভরসা করতে বাধ্য করে। আর সুফিদের আকিদা হচ্ছে ব্যবসায়ী আকিদা। তারা তাদের স্বার্থের জন্য তাদের অনুসারীদের বিভিন্ন রোগে শোকে বিপদে আপদে তাবিজের ব্যবহার করতে উৎসাহিত করে। এই উৎসাহের কারণে সুফি অনুসারীদের মাঝে ব্যাপকভাবে তাবিজের ব্যবহার প্রচলিত হয়।
যখন মানুষের আল্লাহর উপর বিশ্বাস হারিয়ে যায়, তখনই শয়তান তাকে প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন আল্লাহ্ বিরোধী কাজ করতে। তাবিজ হচ্ছে তেমনই একটি হারাম কাজ। যা সুফিদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। অথচ হাদীস থেকে প্রমাণিত সকল প্রকার তাবিজ তামীমা নিষিদ্ধ নাজায়েজ। এই সম্পর্কিত হাদীস গুলো হলো,
অবশ্যই ঝাড়ফুঁক, তাবীজ ও জাদু শিরক। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৮৬}
ঈসা ইবনু আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লাইলা (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু উকাইম আবূ মা’বাদ আল-জুহানীর অসুস্থ অবস্থায় তাকে দেখতে গেলাম। তিনি বিষাক্তি ফোঁড়ায় আক্রান্ত ছিলেন। আমি বললাম, কিছু তাবিজ-তুমার ঝুলিয়ে রাখছেন কেন? তিনি বললেন, মৃত্যু তো এর চেয়েও নিকটে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক কোনকিছু ঝুলিয়ে রাখে (তাবিজ-তুমার) তাকে তাঁর উপরই সোপর্দ করা হয়। (সহীহ, গাইয়াতুল মারাম -২৯৭)। (জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২০৭২)
‘যে ব্যক্তি কোন জিনিষ লটকায় সে উক্ত জিনিষের দিকেই সমর্পিত হয়’’। অর্থাৎ এর কুফল তার উপরই বর্তায়। (তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কোন কিছু ঝুলানোর ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে। দেখুনঃ সহীহ সুনানে তিরমিযী, হাদীছ নং- ১৬৯১)
" হে রুআইফি! তোমার হায়াত সম্ভবত দীর্ঘ হবে। তুমি লোকজনকে এই কথা জানিয়ে দিয়ো, যে ব্যক্তি দাড়িতে গিরা লাগাবে, অথবা গলায় তাবিজ-কবজ লটকাবে অথবা পশুর গোবর কিংবা হাড় দ্বারা এস্তেঞ্জা করবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত’’। (আবু দাউদ, নাসাঈ। হাদীছের সনদ সহীহ। দেখুনঃ সহীহুল জামে, হাদীছ নং- ৭৭৮৭)
আবূ বাসীর আনসারী আব্বাদ ইবনু তামীমকে থেকে বর্ণিতঃ
তিনি (আবূ বাসীর) রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে কোনও একা সফরে ছিলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে কাজে পাঠালেন, আবদুল্লাহ্ ইব্নু আবূ বাকর (রা) বলেন, আমার বিশ্বাস যে, তখন সমস্ত লোক ঘুমিয়েছিল। কাজটি ছিল কোন উটের গলায় কোন হার, তাবীয কিংবা ঘন্টা যেন না থাকে। থাকলে কেটে ফেলতে বলেন। (বুখারী ৩০০৫, মুসলিম ২১১৫) মালিক (র) বলেন, আমার মনে হয় চোখ লাগবে এই ভয়ে তা লটকানো হয়েছিল।
" ইমাম মালিক (র) বলেন, সেই তাবীয কিংবা হার ইত্যাদি যা বদ নজর হতে রক্ষার জন্য ব্যবহার করা হত। তাতে ঘন্টা বেঁধে দেয়া হত। ফলে উটের অসুবিধা হত এবং ঘন্টার শব্দে শত্রুরাও সাবধান হয়ে যেত। " (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং ১৬৮৭)
উপরোক্ত হাদীস সমূহ আলোচনা পর্যালোচনা করলে এটা সুস্পষ্ট হয় যে, কোনো উপকারের আশায় এবং বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়ার আশায় কোনো প্রকার তাবিজ বা অন্য যেকোনো কিছু ঝুলানো বা লাটকানো সরাসরি নাজায়েজ এবং ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ।
তারপরও সুফিরা একটি হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে যাবতীয় তাবিজকে জায়েজ বলার অপচেষ্টা করছে। হাদিসটি হলো,
" আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা ও তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে,রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন,তোমাদের কেউ যখন ঘুম অবস্থায় ঘাবড়িয়ে উঠে,সে যেন أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ দো’আটি পাঠ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর উপযুক্ত সন্তানদের তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন।{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৯৫}
উপরোক্ত হাদীসে একটি দোয়া বড়দের শিক্ষা দেওয়া এবং ছোটদের গলায় লটকানোর কথা এসেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বড়দের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তাহলে কি ছোটদের শিক্ষা দেওয়ার দরকার নেই? এর উত্তর হবে অবশ্যই আছে। তাহলে ঐ দোয়া কী হিসাবে গলায় লটকানো হয়েছে? এর যুক্তিযুক্ত উত্তর হচ্ছে ঐ দোয়া ছোটদের গলায় শেখানোর জন্য লিখে লটকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কেননা এখানে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই যে এই দোয়া তাবিজের মতো করে লটকানো হয়েছে। তাছাড়া সুফি সুন্নীরা ছোটদের চাইতে বড়রাই তাবিজ বেশী ব্যবহার করে। আমাদের সমাজে সুফিরা তাবিজ তুমার বেশী করে। দুনিয়াবী যত সমস্যা আছে, যা আল্লাহর হুকুম ছাড়া সমাধান করা সম্ভব নয়। সেইসব সমস্যার সমাধান সুফি অনুসারীরা বিভিন্ন কাফেরদের দিয়ে কুফরি তান্ত্রিক দ্বারা সমাধান করার চেষ্টা করে। যেখানে আল্লাহ্ শিক্ষা দিচ্ছেন আল্লাহর উপর ভরসা করতে। সেখানে সুফিরা তাবিজ জায়েজ করে মুসলমানদের কাফেরে পরিনত করে দিচ্ছে।
উপরোক্ত হাদিসের আলোকে তাবিজ জায়েজ হলে, বড়রা কেন তাবিজ লটকালো না? সুতরাং আমরা আগের হাদীস গুলোতে সুস্পষ্ট পেয়েছি যে তাবিজ লটকানো যাবেনা। এই কথা আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাঃও অবশ্যই জানতেন। তাই তিনি ছোটদের শেখানোর উদ্দেশ্যে লটকিয়ে দিয়েছেন। যাতে তারা দেখে দেখে তা শিখতে পারে। অতএব তাদের এই দলিল যুক্তিকতায় টিকে না।
তারপরও কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবীজ তৈরী করে ঝুলানো হলে তিন কারণে তা নিষিদ্ধ।
(১) সকল প্রকার তাবীজ ঝুলাতে নিষেধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা থেকে কোন কিছুই বাদ পড়েনি। কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবীজ বানিয়ে ঝুলানো হলে তা জায়েয হবে এমন কোন কথা বলা হয়নি।
(২) কুরআন দিয়ে তাবীজ লটকানো জায়েয বলা হলে লোকেরা কুরআন ছাড়া অন্য বস্তু দিয়েও তাবীজ লটকানোর সুযোগ পেয়ে যাবে। ফলে তাদের প্রতিবাদ করা কঠিন হবে। যেমনটা বর্তমানে হচ্ছে।
(৩) কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবীজ লটকালে কুরআনের মর্যাদা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা তাবীজ পরিধানকারী টয়লেটে এবং অন্যান্য অপবিত্র জায়গায় প্রবেশ করলে অবশ্যই কুরআনের অবমাননা হবে।
সুফিরা কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবিজ জায়েজ করলেও, তাদের মধ্যে কুফরি কালামের তাবিজ ব্যবহার বেশী। সুফিরা নিজেদের লাভ হওয়ার জন্য তাবিজের প্রচলন করলেও, ধীরে ধীরে সুফি হুজুরের তাবিজের গুণ কমে গেছে। আগে মানুষ অন্ধভাবে তাবিজ নিতো। এখন সুফি অনুসারীরা টাকা পয়সা খরচ করে হলেও দুনিয়াবী লাভের আশায় সবরকম কুফরি কালামের চর্চা করে।
সুফি অনুসারীরা কুরআনের তাবিজ ছেড়ে অন্যান্য কুফুরি ধর্মের বিভিন্ন কুফুরি কালামের চর্চা করছে। যা তাদের ঈমান আকিদা আমল সবই ধ্বংস করে দিচ্ছে। পবিত্র কুরআন হাদিসের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সুফিরা তাবিজ জায়েজ মনে করে, তাদের অনুসারীদের ঈমান ধ্বংসের পথ খুলে দিয়েছে।
কৃতজ্ঞতাঃ
মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
১০ মার্চ, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।