আবু জাহেলঃ
আবু জাহেল ছিলো আরবের অন্ধকার যুগে মক্কার মুশরিকদের বড় নেতা বা ইমাম। যার তীব্র বিরোধিতায় ইসলাম প্রচার শুরু থেকেই বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। আবু জাহেলের শত্রুতার কারণে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর সঙ্গী সাথী নিয়ে মদীনায় হিজরত করতে বাধ্য হন।
তার নামে "জাহেল "অর্থাৎ মূর্খ যোগ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো - সে ইসলামের সবকিছু জেনে বুঝে বিরোধিতা করেছিল। অথচ সে ছিলো ইব্রাহিমী ধর্মের অনুসারী। তার দাবি ছিলো সে এবং তার অনুসারীরা হচ্ছে আল্লাহর সত্যিকারের ইবাদতকারী। অর্থাৎ আল্লাহর একনিষ্ঠ আনুগত্যকারী।
কী ছিলো আবু জাহেলের ধর্মীয় বিশ্বাসঃ
তৎকালীন আরবের মুশরিকরা ছিলো পবিত্র কাবার রক্ষনাবেক্ষনকারী। তারা যুগ যুগ ধরে ইব্রাহিম (আঃ) এর আনিত ধর্মের অনুসরণ করছিল। তারা এক আল্লাহর উপর ঈমান রাখতো। সবকিছুর মালিক হিসাবে আল্লাহ্ কেই মানতো।
পবিত্র আল কুরআনে আল্লাহ তাঁর রাসুল। (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর মাধ্যমে তাদের জিজ্ঞাসা করেছেন -
"তুমি যদি তাদের জিজ্ঞাসা করো, আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? তবে তারা অবশ্যই জবাব দেবে - সেই সর্বশক্তিমান ; মহাজ্ঞানী (আল্লাহ্)। " সূরা যুখরুফ ৪৩:৯।
অন্য একটি আয়াতে আল্লাহ্ বলেন -
"তুমি যদি তাদের প্রশ্ন করো আসমান ও জমিন কে সৃষ্টি করেছেন এবং কে সূর্য ও চন্দ্রকে তাদের (কর্তব্য কাজে) নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণ করছেন, তবে তারা নিশ্চয়ই জবাব দেবে আল্লাহ্। "লোকমান - ৩১:২৫।
সূরা আনকাবুতের ৬৩ নং আয়াতে আল্লাহ্ তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলেন -
"হে নবী তুমি যদি তাদের জিজ্ঞাসা করো, আসমান থেকে কে পানি বর্ষন করেছেন, অতপর কে জমিন একবার মরে যাওয়ার পর সে (পানি) দ্বারা তাতে জীবন সঞ্চার করেছেন? অবশ্যই এরা বলবে, একমাত্র আল্লাহ তাআলাই "
সূরা মুমিনুনে ৮৪, ৮৫ নং আয়াতে আল্লাহ্ তাদের জিজ্ঞাসা করেন -
"এই পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে তারা কার? যদি তোমরা জানো তবে বলো। তারা বলবে, সবই আল্লাহর। "
উপরের উল্লিখিত এইসব আয়াতে প্রশ্ন করা এবং তাদের থেকে উত্তর নেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের যে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন তাহলো - তৎকালীন সমগ্র মক্কার আবু জাহেলের অনুসারী মুশরিকরা ছিলো আল্লাহ্ বিশ্বাসী। তারা মনে প্রাণে আল্লাহ্কে বিশ্বাস করতো যেমন আমরা করি। তারা রব হিসাবে আল্লাহ্ কে স্বীকার করতো। অর্থাৎ আল্লাহ্ সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, আল্লাহ্ রিজিক দাতা, মৃত্যুদাতা ইত্যাদি।
এই পর্যন্ত কুরআনের আলোকে যা পেলাম তাতে মক্কার মুশরিকরা সত্যিকার অর্থে আল্লাহ্ বিশ্বাসী ছিলো। এখন আমরা দেখি তারা আল্লাহর বিধিবিধান বা শরীয়ত কী মানতো।
মুশরিকদের ইসলামী অনুসরণঃ
আমরা যারা বর্তমানে নিজেদের মুসলিম দাবি করি, তাদের যদি জিজ্ঞাসা করা হয় ইসলামের মূল ভিত্তি কী? আমরা খুব সহজেই বলবো ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি। এগুলো হলো ১) কলেমা বা আল্লাহর স্বীকৃতি। ২) সালাত ৩)যাকাত ৪) সিয়াম ৫) হজ্জ্ব।
কালেমাঃ
মুসলিমরা যেমন আল্লাহ কে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা, বলে মেনে নেয়, এবং হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে তাঁর রাসুল বলে স্বীকৃতি দেই। ঠিক তেমনি মক্কার আবু জাহেলের অনুসারীরাও ইব্রাহিম (আঃ) কে সহ সকল নবী রাসুলগণ (আঃ)কে মানতো। তারা আল্লাহ্ কে রব হিসাবে মানতো যা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা প্রমাণিত।
সালাতঃ
মুসলিমরা যেমন প্রতিদিন পাঁচ বেলা সালাত আদায় করে। ঠিক তেমনি মক্কার মুশরিকরাও সালাত আদায় করতো। তবে তা আমাদের শরীয়াত মোতাবাক নয়। যেমন আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন -
"তাদের (জাহেলি যুগের) সালাত তো কিছু শিস দেয়া ও তালি বাজানো ছাড়া কিছুই ছিলো না "। সূরা আনফাল ৮: ৩৫।
এই আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে তারা তাদের মতো করে পূর্ববর্তী নবীদের অনুসরণে বা সামান্য পরিবর্তিত করে কাবা ঘরে সালাত আদায় করতো। মোট কথা তারা সালাত আদায়কারী ছিলো।
যাকাতঃ
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জন্য যাকাত কত এবং কীভাবে আদায় করতে হবে তার মাপকাটি নির্ধারণ করে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। আমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অনুসরণে যাকাত আদায় করি। তৎকালীন আরবের মুশরিকরাও বর্তমান নির্ধারিত নিয়মে যাকাত না দিলেও তারা গরীব দুঃখীদের জন্য সবসময় দুহাতে খরচ করতো। তারা হজ্জ্ব পালনকারীদের জন্য সবকিছুর ব্যবস্থা করতো। তাদের আপ্যায়ন করতো। সৎ পথের উপার্জন ধর্মীয় কাজে লাগাতো।
ইতিহাস সাক্ষী কাবা ঘর পূনঃনির্মাণ এর সময় সৎ টাকার অভাবে কাবার দেয়াল অর্ধেক রেখেই তৈরি করা হয়। অথচ তাদের অর্থের অভাব ছিলো না। কিন্তু সেই অর্থ সৎ পথের না হওয়ার কারনে তারা তা কাবার মতো পবিত্র জায়গায় খরচ করলো না। অথচ বর্তমানে আমরা মসজিদ মাদ্রাসায় কত দান করছি। কেউ কিন্তু খবর নেয় না এই অর্থ সত্যিই সৎ পথের কিনা! এ থেকে বুঝা গেলো আমাদের চেয়ে তারা কত বেশি আল্লাহ্ বিশ্বাসী এবং ভীরু ছিলো। এটাই ছিলো তাদের দানের স্তর।
হজ্জ্ব এবং কুরবানীঃ
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) থেকে হজ্জ্বের এবং কুরবানীর প্রচলন শুরু। মক্কার মুশরিকরা দাবি করতো তারা মিল্লাতে ইব্রাহিমের অনুসারী। সেই মতে তারা প্রতিবছরই বর্তমান সময়ের মতো হজ্জ্ব এবং কুরবানী দিতো। তখনকার মুশরিকদের কিছু গোত্র কাবা ঘরের রক্ষনাবেক্ষন করতো কিছু গোত্র হজ্জ্ব পালনকারীদের আপ্যায়ন করাতো। তারা তাদের হজ্জ্বের নতুন নিয়মে উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করে হজ্জ্ব পালন করতো। তাদের যুক্তি ছিলো আমরা গুনাহগার হয়ে গেছি তাই যেভাবে আল্লাহ্ পাঠিয়েছেন সেই ভাবেই হজ্জ্বের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে।
শুধু তাই নয় তারা কুরবানী ও করতো। তাদের কুরবানীর কিছু ভাগ আল্লাহর জন্য, কিছু ভাগ তাদের পূর্ববর্তী অলি আউলিয়ার মূর্তির জন্য দিতো। আল্লাহর ভাগ থেকে তারাও নিতো। সূরা হজ্জ্ব এর ৩৭ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন -
"আল্লাহ্ তাআলার কাছে কখনো (কুরবানীর) গোস্ত ও রক্ত পৌঁছায় না। বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়াটুকুই পৌঁছায়। "
এই আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট ছিলো মুশরিকদের কুরবানীকে ইংগিত করেই। তাদের কুরবানী এবং মুসলিমদের কুরবানীর পার্থক্য বুঝাতে এই আয়াত নাযিল হয়। (ইবনে কাছীর)
সিয়ামঃ
মক্কার মুশরিকরা জাহেলি যুগে মহররম মাসের ১০ তারিখ সিয়াম পালন করতো। ইহুদিরা আশুরার দিন সিয়াম পালন করত। তাদের যুক্তি ছিলো তারা মিল্লাতে ইব্রাহিমের অনুসারী ।হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মহররমের ১০ তারিখ সিয়াম পালন করতেন। তাই তারাও সিয়াম পালন করত। ইহুদীদের আশুরার দিন সিয়াম পালন দেখে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় যে এই দিনে আল্লাহ্ মুসা (আঃ)কে দিয়ে তাদের ফেরাউনের হাত থেকে রক্ষা করেন। তাই তারা সিয়াম পালন করে। যা দেখে রাসুল (সাঃ) তাঁর সাহাবীদেরও সিয়াম পালন করতে বলেন। (বুখারী মুসলিমে বিস্তারিত) । মোটকথা তারা আল্লাহ্ ও তাঁর পূর্ববর্তী নবীদের বিশ্বাস করতো।
উপরোক্ত বিষয় থেকে স্পষ্ট যে, মক্কার মুশরিকরা আল্লাহ বিশ্বাসী ছিলো। শুধু তাই নয় আমরা বর্তমানে যেসব ইবাদত করছি ঠিক সেইরকম ই তারা তাদের মতো ইবাদত করতো। শুধু নয় কোনো কাজ শুরুর আগে তারা আল্লাহর নামে অর্থাৎ "বিসমিকা আল্লাহুম্মা "তথা শুরু করছি আল্লাহর নামে। তারা তাদের সন্তানদের নাম রাখতো আব্দুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর দাস। তারা বিপদে আপদে দোয়া চাইতো আল্লাহর কাছে -
"যখন (সমুদ্রের) তরঙ্গমালা চাঁদোয়ার মতো হয়ে তাদের আচ্ছাদিত করে ফেলে, তখন তারা আল্লাহ্ তাআলাকে ডাকে " সূরা লোকমান- ৩১:৩২।
একই ভাবে ১৭ নম্বর সূরার ৬৭ নং আয়াতে, ২৯ নম্বর সূরার ৬৫ নং আয়াতেও তারা যে আল্লাহ্ কে ডাকতো তা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। মোটকথা মক্কার মুশরিকরা প্রায় সবকিছুই মানতো এবং পালন করতো।
যে কারণে তারা মুশরিকঃ
জাহেলি যুগের আরববাসীরা শুধুমাত্র শির্ক করার কারণে কাফির ঘোষিত হয়েছিল। "শির্ক " অর্থাৎ তারা আল্লাহ্ কেও মানতো আবার আল্লাহর বিভিন্ন বান্দাকেও পূজা করতো। মোটকথা তারা আল্লাহর পাশাপাশি আল্লাহর প্রেরিত বিভিন্ন নবী রাসুল অলি আউলিয়াদেরও মান্য করতো। তারা যেকোন কিছুর প্রয়োজনে মানত করতো নবী রাসুল অলি আউলিয়ার মূর্তির কাছে। তাদের বিশ্বাস ছিলো যেহেতু তারা (আরববাসী) গুনাহগার, সেহেতু তাদের কথা আল্লাহ্ সরাসরি শুনবেন না। তাই তাঁর প্রিয় বান্দা নবী রাসুল এবং বিভিন্ন যুগের অলি আউলিয়াগণের কাছে প্রার্থনা করতো। অর্থাৎ তাদের পূজা করতো। তাদের কাছে সবকিছু উৎসর্গ করতো।
বিপদে আল্লাহ্ কে ডাকতো। বিপদ থেকে উদ্ধার হলে মূর্তির কাছে গিয়ে শুকরিয়া প্রকাশ করতো বিভিন্ন উপটৌকন দিয়ে। যেহেতু আল্লাহ্ কাছে নেই, তাই তাঁর প্রিয় বান্দাদের কাছে হাদিয়া তৌফা প্রসাদ দিলে তারা (আল্লাহর অলিরা) আল্লাহর কাছে তাদের (মক্কার মুশরিকদের) জন্য সুপারিশ করবে। এবং তাদেরকে আল্লাহর আরও নিকটবর্তী করে দিবে।
পবিত্র কুরআনে সূরা ইউনুছের ১৮নং আয়াতে আছে
"তারা বলে এ গুলো হচ্ছে আল্লাহ্ তাআলার কাছে আমাদের সুপারিশকারী "।
অপরদিকে সূরা যুমারের ৩ নং আয়াতে আছে -
"যারা আল্লাহ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের এবাদত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। "
অর্থাৎ এইসব অলি আউলিয়ার মূর্তিরা আমাদেরকে (মুশরিকদের) আল্লাহর কাছাকাছি করে দেয়। তারা বলে, আমরা জনি এরা( অলি আউলিয়ার মূর্তি) আমাদের কোন উপকার করার ক্ষমতা রাখে না। তবে তাঁরা (অলি আউলিয়ারা) আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য সাফাই বা সুপারিশ করে আমাদের প্রয়োজন মেটাবে। শুধুমাত্র শির্ক তথা আল্লাহর ইবাদতের সাথে অন্যকেও তাঁর অংশীদার করার জন্য পুরো আরববাসী তথা মক্কার আবু জাহেল আবু লাহাব, উতবা, শায়বা প্রমুখ বিখ্যাত মক্কার নেতারা মুশরিক তথা কাফির বলে আল্লাহর কাছে বিবেচিত ছিলো।
তাদের চিন্তা চেতনার সাথে ইসলামের পার্থক্য ছিলো শুধু একজায়গায়। তাহলো, তারা আল্লাহর সাথে সাথে অলি আউলিয়ার মূর্তির ইবাদত করতো। তাদের বিশ্বাস ছিলো সবকিছুই আল্লাহর তাই অলি আউলিয়াদের ইবাদত করলেই আল্লাহর ইবাদত করা হয়। কেননা এই অলি আউলিয়ারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা। তাই যখনই রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক আল্লাহর ইবাদতের ডাক দিলেন তখনই তারা আশ্চর্য হয়ে গেল। তারা বললো-
"সে (মুহাম্মদ সাঃ) কি অনেক মাবুদ (ইলাহ) কে একজন মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে? এটা তো এক আশ্চর্যজনক ব্যপার ছাড়া কিছুই নয়! " সূরা সোয়াদ ৫ নং আয়াত।
এই আয়াত থেকে স্পষ্ট যে তারা (মক্কার মুশরিকরা) আল্লাহর এবং আরো অনেকেরসহ উপাসনা তথা ইবাদত করতে পছন্দ করতো। এই একটি মাত্র কারণে তারা মুশরিক তথা কাফির।
দ্বিতীয় যে কারণে তারা কাফির তাহলো, আল্লাহর আইন মেনে নিতে না পারা। আবু জাহেলরা ইসলামের আইন মানতে পারেনি। তারা তাদের আইন অনুযায়ী চলার জন্য বদ্ধপরিকর ছিলো । কেননা যদি তারা ইসলামকে মেনে নিতো তাহলে তাদের হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)কে নেতা হিসাবে মেনে নিতে হতো। যা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। তারা তাদের সুবিধার্থে বিভিন্ন আইন কানুন তৈরি করে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার অবিচার চালাত। যদি তারা ইসলাম কবুল করতো তাহলে তাদের আল্লাহর আইন মেনে অন্য সকল মানবসৃষ্ট আইনকে প্রত্যাহার করতে হতো। কিন্তু দুনিয়ার স্বার্থের কারণে তারা তা করেনি। এই একটি বৃহৎ কারণে তৎকালীন মক্কার কাফিররা ইসলাম গ্রহণ করেনি।
তৎকালীন মুশরিক এবং আমরাঃ
এখন যদি আমাদের উপমহাদেশের মুসলমানদের দিকে নজর দেই তাহলে আমরা কী দেখতে পাই? আজ এই উপমহাদেশের মুসলমানও মুশরিকদের সেই পুরোনো বিশ্বাসে ফিরে গেছে। আজ আমরা মনে করি যে, আল্লাহর অলির দরবারে গিয়ে তাদের কাছে চাইলেই আল্লাহ্ সব দিয়ে দেন। আমরা যদি তাদের মাজারে গিয়ে সিজদা দেই তাহলে আল্লাহ্ খুশি। আমরা অলির কবরে গিয়ে তার থেকে সন্তান সহ দুনিয়াবী সকল কিছুসহ বিপদ আপদ থেকেও উদ্ধার হতে চাই। অথচ সবকিছুর মালিক আল্লাহ্। এবং আমরা তা জানি এবং মানি সেই মক্কার মুশরিকদের মতো। এখন আমাদের বিশ্বাস এবং মক্কার মুশরিকদের বিশ্বাস একই হলে আমরা কি মুসলিম দাবি করতে পারি?
বর্তমানে বিশ্বে খুব কম দেশেই ইসলামী শাসন আছে। আমাদের দেশও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশ। অথচ আমাদের দেশেও আল্লাহর আইন নেই। আমরা দুনিয়াবী সুবিধার জন্য গনতন্ত্রকে সমর্থন করছি। ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য বানাচ্ছি। যারা সংসদে গিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে আইন তৈরি করে।
সুতরাং গনতন্ত্র সমর্থন করার সাথে সাথে আমরা আল্লাহর বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছি। যদি সম্ভব হয় আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যদি সম্ভব না হয় তবে এইসব মানব সৃষ্ট বিধানের প্রতি সমর্থনও করা যাবে না। কিন্তু আমরা তা করি না। তৎকালীন মক্কার কাফিররা যে কারণে ইসলামের আইন মেনে নিতে পারিনি, ঠিক একই কারণে আমরাও ইসলামের বিধানে নেই। তাহলে তাদের সাথে আমাদের পার্থক্য কই? কোনো পার্থক্যই নেই। সুতরাং তারা যদি কাফির হয় তাহলে আমরা কী কারণে মুসলিম হবো?
আরও জানতে পড়ুনঃ
ভুল কিছু থাকলে জানাতে অনুরোধ ইমেইল : shakawat971097@gmail.com