জন্মাষ্টমী
বুদ্ধপূর্ণিমা
ক্রিসমাস ডে
ঈদে মিলাদুন্নবী
এই চারটি উৎসবের ধরণ একই। প্রতিটি উৎসবই হয় ধর্মের প্রবর্তকদের জন্মদিনে জন্মবার্ষিকী পালন করা নিয়ে। বৌদ্ধদের গৌতম বুদ্ধের জন্মদিনকে "বুদ্ধপূর্ণিমা "। হিন্দু ধর্মের প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনকে " জন্মাষ্টমী "। খ্রীষ্টানদের যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিনকে "ক্রিসমাস ডে "বা বড়দিন। ঠিক একইভাবে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর জন্মদিনের উপলক্ষ্যে কিছু মুসলমান "ঈদে মিলাদুন্নবী " নামে উৎসব তথা ইবাদত হিসাবে পালন করছে।
এই চারটি জন্মদিন পালন শুরু কখনোই কোনো ধর্মীয় প্রবর্তকেরা শুরু করেননি। এইসব উৎসব শুরু হয়েছে তাঁদের মৃত্যুর শত শত বছর পরে। ইতিহাস ভালো করে চর্চা করলে আমরা এমনই তথ্য পায়। যেহেতু হাজার হাজার বছর আগে কোনো ক্যালেন্ডারই সৃষ্টি যখন হয়নি তখন তাদের জন্মদিন বা জন্মবার্ষিকীই বা কীভাবে নির্নয় করা যায়?
সুতরাং এই চারটি ধর্মীয় উৎসব মূলত পালন করা হয় অনুমানের ভিত্তিতে এবং তাদের অনুসারীদের ইচ্ছার প্রতিফলনে। কোনো ধর্মীয় গ্রন্থেই জন্মদিন নিয়ে কোনো কিছু পাওয়া যায় না। সেখানে ধর্মীয় প্রবর্তকদের জন্মদিন পালন করার কথা প্রশ্নই আসে না।
যদিও ওল্ড বাইবেলে ফেরাউনের জন্মদিনের উৎসবের কথা এসেছে অস্পষ্ট ভাবে। যেখানে তার জন্মদিনে দরবারের সবাইকে মদ পানীয় ইত্যাদি দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে এমন কথা উল্লেখ হয়েছে।
“তৃতীয় দিনটি ছিল ফারাউনের জন্মদিন। ফেরাউন তার সব কর্মকর্তাদের জন্য ভোজের আয়োজন করেন। ফেরাউন তার মদ-পরিবেশক ও রুটি প্রস্তুতকারককে ক্ষমা করে দিলেন”। [ওল্ড টেস্টামেন্ট, জেনেসিসঃ ৪০-২০]
অতএব এই চারটি উৎসবেরই কোনো সুনির্দিষ্ট ভিত্তি নেই। এমনকি যীশু খ্রীষ্টের যে জন্মদিন পালন হচ্ছে, সেটা তার মৃত্যুর ৪৫০ বছর পরে সীমিতভাবে তৎকালীন পোপ স্বীকার করেছিলেন। পরবর্তীতে অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসবের বিপরীতে এই উৎসবটি সামগ্রিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে।
যেমন ইসলাম ধর্মে দুটি ঈদ রয়েছে। যা জাহেলি যুগের দুটি উৎসবের পরিবর্তে মুসলমানদের দেওয়া হয়েছে। এটা হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃত যে ইসলামে ঈদ দুটি। অর্থাৎ উৎসব হচ্ছে দুটি।
সূত্র
এখন আমরা যারা নব্য একটি উৎসব সৃষ্টি করছি বা পালন করছি তাদের জন্য কয়েকটি বিষয় দৃষ্টিগোচর করতে চায়। তাহলো, এই যে উৎসব আমরা পালন করবো তা কীসের ভিত্তিতে পালন করবো? তার কি সুস্পষ্ট নির্দেশনা কুরআন এবং হাদীসে আছে? সেইসাথে এই আমলটি সরাসরি এবং সুস্পষ্ট রূপে রাসুলসাঃ, সাহাবী, তাবেয়ী তবে তাবেয়ী এবং সালাফে সালেহীনদের থেকে প্রমাণিত ?
কেন এই নব্য উৎসব পালন করা বৈধ নয়? তার অনেক গুলো কারণ রয়েছে। প্রথমতঃ হচ্ছে এই জাতীয় উৎসব কারা পালন করছে তা আমাদের দেখতে হবে। অর্থাৎ অন্য কোনো ধর্মে এই জাতীয় উৎসব আছে কিনা? যদি থাকে তাহলে কি আমরা অনুরূপ কিছু পালন করতে পারবো কিনা?
যদি এই উৎসব অন্য ধর্মের লোকেরা পালন করে তাহলে আমরা কি একই উৎসব পালন করতে পারি? অথবা আমরা এমন কিছু কি পালন করছি কিনা যা অন্যান্য ধর্মালম্বিদের রয়েছে?
উপরোক্ত বিষয় জানার জন্য আমরা সরাসরি প্রশ্ন করবো কুরআনকে। যে আমরা অন্য ধর্মের অনুসরণ অনুকরণ করতে পারি কিনা? বা আমরা বিধর্মীদের অনুসরণ করতে পারি কিনা? আল্লাহ আমাদের ইসলামে এমন কিছু পালন করার অনুমতি দিয়েছেন কিনা?
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে রাসুলসাঃকে লক্ষ্য করে একটি আয়াত নাযিল করেছেন। তা হলো,
"আর ইয়াহূদী ও নাসারারা আপনার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের মিল্লাতের অনুসরণ করেন”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১২০] "
অর্থাৎ তৎকালীন ইহুদী এবং খ্রিস্টানরা রাসুলসাঃকে পছন্দ করতেন না এবং রাসুলসাঃ প্রতি সন্তুষ্ট হতেন না। কারণ রাসুলসাঃ তাদেরকে অনুসরণ এবং অনুকরণ করেননি। এবং তাদের ধর্মেরও অনুসরণ করেননি। এবং তারা যা চাইতো তা করার তো দূরের কথা বরং তার বিপরীত করার আদেশ নির্দেশ দিতেন।
যার প্রেক্ষিতে তারা রাসুলসাঃ এর প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আর এই কথাই আল্লাহ উপরোক্ত আয়াতের দ্বারা আমাদের বিশ্ববাসীদের জানিয়ে দিলেন। আর তা এইজন্যই যে আমরাও যেন ভবিষ্যতে কখনো এই ইহুদী খ্রিস্টানদের অনুসরণ না করি। যাতে তারাও আমাদের উপর সন্তুষ্ট না হয়।
পবিত্র কুরআনে বিধর্মীদের অনুসরণ সম্পর্কে মুসলিমদের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন,
“হে মুমিন মুসলমানগণ! তোমরা কাফিরদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না”। ( আন নিসা : ১৪৪)
“তোমরা (মুসলমানগণ) কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ-অনুকরণ করো না।” ( আহযাব : ৪৮)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে, কখনোই বিধর্মীদের বন্ধুত্ব, অনুকরণ, অনুসরণ ইত্যাদি করা যাবে না। যদি আমরা তাদের অনুসরণ অনুকরণ করি তাহলে আমরা কুরআনের বিরুদ্ধে চলে গেলাম।
আসুন এবার দেখা যাক যাঁকে নিয়ে এবং যাঁর জন্মদিন পালন করাকে আমরা বড় ইবাদত তথা সকল ঈদের সেরা ঈদ বলে উল্লাসিত হচ্ছি, সেই তিনি হযরত মুহাম্মদ সাঃ এই ব্যাপারে কী বলেছেন।
পবিত্র হাদীসে এসেছে,
"যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ, অনুসরণ ও সামঞ্জস্য বিধান করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে”।
( ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২/৫০; আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছে উৎকৃষ্ট সনদে, হাদীস নং- ৪০৩১; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, ‘সহীহ আল-জামে‘ আস-সাগীর’, হাদীস নং- ৬০২৫।)
অর্থাৎ মুসলমানদের কেউ যদি অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের অনুসরণ করে তাহলে তাকে সেই ধর্মের অনুসারী হিসাবেই গণ্য করা হবে। অতএব হাাাদিসে আলোকেও আমরা বিধর্মীদের অনুসরণ করতে পারি না।
শুধু তাইনয়। বিধর্মীদের সামান্যতম অনুকরণও রাসুলসাঃ মেনে নেননি। আরেকটি হাদীসে এসেছে,
" যখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর গায়ে হলুদ বর্ণ বিশিষ্ট কাপড় দেখতে পেলেন, তখন তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন: “নিশ্চয় এগুলো কাফিরদের পোষাক-পরিচ্ছদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তুমি তা পরিধান করো না।” (মুসলিম, হাদীস নং ২০৭৭)
অতএব দেখা যাচ্ছে যে, অন্যান্য ধর্মালম্বিদের অনুসরণ রাসুলসাঃ কত কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। আর আমরা গত ৫০ বছরে যেভাবে বিধর্মীদের অনুকরণে ঈদে মিলাদুন্নবীর উৎসবের নামে মিছিল মিটিং জসনে জুলুস খাওয়া দাওয়া ইত্যাদির যে আহামরি আয়োজন করছি তা কতটুকু সমর্থনযুক্ত?
দ্বিতীয়ত যে বিষয়টা আমাদের লক্ষ্য করতে হবে, সেটা হচ্ছে এই উৎসব করার অনুমোদন ইসলাম দিচ্ছে কিনা। কেননা যেকোনো ইবাদত যা নেকীর উদ্দেশ্যে করা হয় তার একটি নির্দিষ্ট মানদন্ড ইসলামে রয়েছে।
ইসলামে যেকোনো ইবাদত অবশ্যই রাসুলসাঃ থেকে অনুমোদিত হতে হবে। এখন এই উৎসব যা অধিকাংশ লোকই পালন করছে তা কি রাসুলসাঃ পালন করেছেন কিনা? সাহাবীগণ, তাবেয়ী তবে তাবেয়ী সালাফে সালেহীনগণ ইত্যাদি পালন করেছেন কিনা?
যদি তাঁরা পালন না করে থাকেন এবং পালন করার নির্দেশ আদেশ অনুমোদন কিছুই করে না থাকেন। তাহলে তা আমরা কীভাবে পালন করতে পারি? ইতিহাস সাক্ষী এই মিলাদুন্নবী পালন শুরু হয়েছে হিজরি ৩০০ বছরেরও পরে। তাও একজন শাসকের তত্বাবধানে। কোনো আলেম, বুজুর্গ বা কোনো আল্লাহর নিয়ামত প্রাপ্ত বান্দাদের দ্বারা নয়।
সুতরাং যা অতীতে ছিলো না এখন তা যতই জৌলুস নিয়ে উদযাপন করা হোক না কেন, তা কখনোই ইসলাম সমর্থিত হতে পারে না।
কেননা ইসলামে নতুন কোনো আমল চালু করাই হচ্ছে "বিদআত "। যে আল্লাহর রাসুলসাঃ এর জন্মদিন পালন করার জন্য এই উৎসব চালু করা হয়েছে। সেই রাসুলসাঃই বলছেন,
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছুর উদ্ভব ঘটাল, যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১৪০)।
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও ছালাতের পর বলেন, ‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হ’ল দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হ’ল ভ্রষ্টতা’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)। আর নাসাঈতে রয়েছে, ‘প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম’ (নাসাঈ হা/১৫৭৮)।
উপরোক্ত হাদীস গুলো যদি আমরা ব্যাখ্যা করি তাহলে এটা খুবই সুস্পষ্ট যে, যেসব আমল ইবাদত রাসুলসাঃ এবং সাহাবী তাবেয়ী, তবেতাবেয়ীরা করেননি তা কখনোই করা যাবে না। এবং কেউ করলে তা পরিত্যাজ্য বলে গণ্য হবে।
শুধু তাইনয়, ইসলামে আমলের নামে নেকীর উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত তৈরী করা খুবই নিকৃষ্টতম কাজ। নতুন সকল ইবাদতই পথভ্রষ্টতা। আর সকল পথভ্রষ্টতাই হচ্ছে জাহান্নামের ইন্ধন।
সুতরাং যেখানে রাসুলসাঃ নতুন ইবাদত সৃষ্টিকে নিষিদ্ধ করেছেন সেখানে আজ আমরা নিত্যনতুন রঙে ঢঙে নিত্যনতুন চাকচিক্যে নিত্যনতুন বাহারে যে জসনে জুলুসে ইদে মিলাদুন্নবী পালন করছি তা কতটুকু ইসলাম সম্মত হতে পারে?
সুতরাং যারা জোড়াতালি দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করাকে বৈধ মনে করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে আমার জিজ্ঞাসা হচ্ছে, আপনারা বা আপনাদের পূর্ববর্তীরা যে কুরআনের আয়াত এবং হাদীস দ্বারা মিলাদুন্নবী জায়েজ সাব্যস্ত করছেন। তা কি রাসুলসাঃ সাহাবীগণ তাবেয়ী এবং তবেতাবেয়ীগণ বুঝতে পারেননি? ইসলাম প্রতিষ্ঠার ৩০০ বছর পর্যন্ত যা কেউ করেনি বুঝেনি তা কি এখন আপনারা নতুন করে বুঝতে পেরেছেন?
যে কুরআন রাসুলসাঃ নিয়ে এসেছেন তিনি বুঝতে পারেননি (নাউজুবিল্লাহ)। যে কুরআন যাদের সরাসরি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তাঁরা বুঝতে পারেননি (নাউজুবিল্লাহ) । এখন আমরা শত হাজার বছর পর এসে বুঝতে পারলাম যে বিধর্মীদের মতো আমাদেরও একটি উৎসব করা দরকার (নাউজুবিল্লাহ) ।
ঈদে মিলাদুন্নবী হচ্ছে জন্মবার্ষিকী পালন। অন্যান্য ধর্মালম্বিরা যেভাবে যে আশায় পালন করছে আমরাও তাদের মতোই করছি। অথচ ইসলামে জন্মদিন বা জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী কিছুই পালন করার কোনো অনুমোদন বা পালন করার কোনো নজির নেই।
যদি এমন কিছু থাকতো তাহলে রাসুলসাঃ তাঁর সন্তানদের, সাহাবীগণ তাদের খলিফাদের জন্মদিন বা জন্মবার্ষিকী বা মাত্যুবার্ষিকী পালন অবশ্যই করতেন। লক্ষাধিক সাহাবী ছিলেন যারা প্রাণের চেয়ে বেশী রাসুলসাঃকে ভালোবাসতেন। অথচ তারা কখনোই করলেন, তাদের পরবর্তীতে কেউ কিছু করলো না। আর আমরা লক্ষ কোটি হাজার গুনাহগারেরা নতুন করে আবিষ্কার করলাম সকল ঈদের সেরা ঈদ ঈদে মিলাদুন্নবী!
ইসলামে সর্বপ্রথমে ভালোবাসতে হবে আল্লাহকে। আর আল্লাহর ভালোবাসা পেতে শর্ত হচ্ছে রাসুলসাঃকে ভালোবাসা এবং অনুসরণ করা।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন,
‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
এই আয়াতে কত সুন্দর করে আল্লাহ বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিচ্ছেন যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং ভালোবাসা অর্জন করতে হলে অবশ্যই রাসুলসাঃ এর অনুসরণ করতে হবে। তবে কখনোই তোষামোদ করে নয়। আল্লাহ যেখানে সরাসরি বলছেন রাসুলসাঃ কে অনুসরণ করতে। সেখানে আমরা মেতে আছি রাসুলসাঃএর তোষামোদিতে। রাসুলসাঃ এর অনুসরণে কষ্ট ত্যাগ করতে হয় তোষামোদিতে কষ্ট লাগে না বরং লাভই হয় বেশী।
আজ আমরা যারা মিলাদুন্নবী পালন করছি, তাদের সিংহভাগই বেনামাজী। সিংহভাগ লোকই ইসলামের নূন্যতম জ্ঞান রাখে না। তারা না করে কুরআনের চর্চা, না করে হাদিসের অধ্যায়ন। আমাদের অধিকাংশ মুসলিমই শুধু শুনে শুনে মুসলমান হওয়ার চেষ্টা করি। কষ্ট করে কখনোই কিছু পাওয়ার চেষ্টা করি না।
যেখানে রাসুলসাঃ এসেছেন কুরআনকে মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য। সেখানে সেই কুরআনের আশেপাশে ধারেকাছেও কেউ নেই। আছে শুধু রাসুলসাঃ কে তোষামোদ করে কীভাবে আশেকে রাসুলসাঃ দাবি করা যায় সেই কাজে ব্যস্ত।
অথচ যারা অন্যান্য ধর্মালম্বিদের অনুসরণে রাসুলসাঃ এর তোষামোদি করছেন। সেইসাথে ইসলামে নতুন নতুন আমলের সৃষ্টি করছেন। তাদের জন্য হাদীসে রয়েছে রাসুলসাঃ এর সুস্পষ্ট হুশিয়ারি।
হাদীসে এসেছে,
আবু হাসেম(রাঃ) হতে বর্ণিত-
তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, “আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে, আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন: তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো: দূর হয়ে যা, দূর হয়ে যা” (সহীহ মুসলিম-৪২৪৩)
উপরোক্ত হাদীসে এটা সুস্পষ্ট যে ইসলামে নতুন কোনো কিছু যারা তৈরি করবে তাদেরকে রাসুলসাঃ কিয়ামতের মাঠে হাউজে কাউসার থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিবেন।
অথচ এই হাউজে কাউসারের পানির জন্য এবং রাসুলসাঃ এর সুপারিশের জন্য আমরা এই নব্য বিদআত ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করছি।
শুধু তাইনয় রাসুলসাঃ জানতেন যে তাঁর উম্মতেরা বিধর্মীদের অনুসরণ অনুকরণ করবে। তাই তিনি আগেই এই ব্যাপারে সাবধান করে গেছেন।
হাদিসে এসেছে,
"তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তীদের রীতিনীতি পুরোপুরি অনুসরণ করবে, প্রতি বিঘতে বিঘতে এবং প্রতি গজে গজে। এমনকি তারা যদি ষাণ্ডার গর্তেও প্রবেশ করে থাকে, তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি ইয়াহূদী ও নাসারাদের কথা বলেছেন? জবাবে তিনি বললেন: তবে আর কার কথা বলছি”?
হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. বর্ণনা করেছেন; ‘ফতহুল বারী’: ১৩/৩০০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ২৬৬৯।
অতএব রাসুলসাঃ এর কথাই আজ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আজ আমরা যা করছি তা তাঁর কথার সত্যতা দেওয়ার জন্যই। যারা বিধর্মীদের অনুসরণে অনুকরণে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করছে তারা হচ্ছে এরা।
আল্লাহ আমাদের সর্বদা বিধর্মীদের অনুসরণ এবং আনুগত্য করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
“হে মুমিনগণ! যদি তোমরা কাফেরদের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে বিপরীত দিকে ফিরিয়ে দেবে; ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪৯] "
"তোমরা যদি তাদের দল বিশেষের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর আবার কাফের বানিয়ে ছাড়বে”। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০০] "
অর্থাৎ যারা আল্লাহর কুরআন এবং হাদীসের বিপরীতে গিয়ে বিধর্মীদের অনুসরণ আনুগত্য করবে, তারা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর একজন মুসলমানের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো ঈামনহারা হওয়া। কেউ যদি ঈমানহারা হয় তাহলে তার দুনিয়া এবং আখিরাত দুইটাই ধ্বংস।সুতরাং এমন কাজ করা থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত যে কাজের কারণে আমরা জাহান্নামের অধিবাসী হই।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
১২ ডিসেম্বর, ২০২১
অলংকার, চট্টগ্রাম।