আল্লাহর কাছে যারা সফল
আল্লাহ জ্বীন এবং মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। এই ইবাদতের দ্বারা তিনি দেখতে চান কারা কারা সত্যিকারের আল্লাহ ভীরু মুত্তাকী। যারা আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে তাদের দুনিয়াবী জীবন অতিবাহিত করতে পেরেছে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পুরস্কার তথা জান্নাত। আর যারাই কাল কিয়ামতের ময়দানে নিজেদের আমলনামা ডান হাতে নিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন পারবে। তাঁরাই হচ্ছে আল্লাহর কাছে সফল ব্যক্তি। আসুন দেখি আল্লাহর দৃষ্টিতে দুনিয়ার কোন কোন শ্রেণীর মানুষ সফল।
যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে
পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ। এই হাজার কোটি মানুষের মধ্যে তাঁরাই সফল যারা আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ঈমান এনেছে। সফলতার প্রথম ধাপ হচ্ছে ঈমান নসিব হওয়া। আল্লাহ বলেন,
"অতএব, যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে এবং তাতে দৃঢ়তা অবলম্বন করেছে তিনি (আল্লাহ) তাদেরকে স্বীয় রহমত ও অনুগ্রহের আওতায় স্থান দেবেন এবং নিজের দিকে আসার মত সরল পথে তুলে দেবেন। [ সুরা নিসা ৪:১৭৫ ] "
সুতরাং যারা আল্লাহর উপর সত্যিকারের ঈমান আনেন তারাই প্রথম পর্যায়ের সফল ব্যক্তি। তাদের আল্লাহ অনুগ্রহ করবেন এবং সরল পথে চলার তৌফিক দিবেন।
রাসুলুল্লাহ অনুসরণ ও আনুগত্য যারা করে
ঈমান আনার পর ঐ ব্যক্তিই সফল, যিনি রাসুল সাঃ অনুসরণে জীবনযাপন করে। অর্থাৎ তার জীবনের যাবতীয় কার্যাদি রাসুল সাঃ সুন্নাহ মোতাবেক পরিচালিত করে।আল্লাহ বলেন,
"মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম। [ সুরা নুর ২৪:৫১ ]
অতএব ঈমান আনার পর যাবতীয় বিষয়াদি নিয়ে যারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সাঃ আনুগত্য করে তথা তাঁর নির্দেশিত পথে চলে তাঁরাই হচ্ছেন সফলকাম। আল্লাহ আরো স্পষ্ট করে বলেন,
"সেসমস্ত লোক, যারা আনুগত্য অবলম্বন করে এ রসূলের, যিনি উম্মী নবী, যাঁর সম্পর্কে তারা নিজেদের কাছে রক্ষিত তওরাত ও ইঞ্জিলে লেখা দেখতে পায়, তিনি তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকর্মের, বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে; তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ এবং তাদের উপর থেকে সে বোঝা নামিয়ে দেন এবং বন্দীত্ব অপসারণ করেন যা তাদের উপর বিদ্যমান ছিল। সুতরাং যেসব লোক তাঁর উপর ঈমান এনেছে, তাঁর সাহচর্য অবলম্বন করেছে, তাঁকে সাহায্য করেছে এবং সে নূরের অনুসরণ করেছে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, শুধুমাত্র তারাই নিজেদের উদ্দেশ্য সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। [ সুরা আরাফ ৭:১৫৭ ] "
যারা আল্লাহর বন্দেগী করেঃ
যারা শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করে। অর্থাৎ প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামকে মান্য করে এবং গাইরুল্লাহর ইবাদত করে না তাঁরাই সফলকাম।আল্লাহ বলেন,
"হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার এবাদত কর এবং সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। "[ সুরা হাজ্জ্ব ২২:৭৭ ]
অর্থাৎ যারা সৎকর্মের সাথে আল্লাহর পরিপূর্ণ ইবাদত করে তারা সফলকাম।
যারা সর্বদা আল্লাহর উপর নির্ভর করে
ঈমানদার ব্যক্তি সর্বদা আল্লাহর উপর ই ভরসা করবে। আল্লাহ্ ছাড়া অন্যান্য পীর আউলিয়া দরবেশ ইত্যাদির উপর ভরসা না করে যারাই শুধুমাত্র আল্লাহর উপর সত্যিকারের ভরসা করতে পেরেছে তাঁরাই আল্লাহর কাছে সফলকাম।আল্লাহ বলেন,
"এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন। [ সুরা তালাক ৬৫:৩ ] "
যারা আল্লাহর অনুগ্রহের মুখাপেক্ষীঃ
যারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর অনুগ্রহ এবং দয়া তালাশ করে। তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের জন্য উন্মুখ হয়ে অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্বরণ করে তাঁরাই হচ্ছে সফলকাম।আল্লাহ বলেন,
" অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [ সুরা জুম’য়া ৬২:১০ ] "
যারা তওবা করেঃ
আল্লাহ জানেন যে তাঁর বান্দারা গুনাহ করবে। আর যারা গুনাহ করে এবং স্বীকার করে আল্লাহর কাছে নতজানু হয়ে তওবা করে তাঁরাই আল্লাহর কাছে সফলকাম। আল্লাহ বলেন,
"মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [ সুরা নুর ২৪:৩১ ] "
তিনি আরও বলেন,
"অবশ্য যারা তওবা করে নিয়েছে, নিজেদের অবস্থার সংস্কার করেছে এবং আল্লাহর পথকে সুদৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে আল্লাহর ফরমাবরদার হয়েছে, তারা থাকবে মুসলমানদেরই সাথে। বস্তুতঃ আল্লাহ শীঘ্রই ঈমানদারগণকে মহাপূণ্য দান করবেন। [ সুরা নিসা ৪:১৪৬ ] "
আরও পড়ুন মাজারে দান সদকা করার ইসলামী বিধান
যারা জিহাদ করে
জিহাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। যে ইবাদত সবার নসিবে হয় না। আর যারা নিজেদের জান মাল দিয়ে জিহাদ করতে পারে তাঁরাই হচ্ছে আল্লাহর কাছে সফল। আল্লাহ বলেন,
"কিন্তু রসূল এবং সেসব লোক যারা ঈমান এনেছে, তাঁর সাথে তারা যুদ্ধ করেছে নিজেদের জান ও মালের দ্বারা। তাদেরই জন্য নির্ধারিত রয়েছে কল্যাণসমূহ এবং তারাই মুক্তির লক্ষ্যে উপনীত হয়েছে। [ সুরা তাওবা ৯:৮৮ ] "
আল্লাহ আরও সুস্পষ্ট করে বলেন,
"হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য অন্বেষন কর এবং তাঁর পথে জেহাদ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও। [ সুরা মায়েদা ৫:৩৫ ] "
যারা সালাতের পরিপূর্ণ পাবন্দিঃ
যারা ঈমান এনে নিয়মিত খুশু খুজুর সহিত পরিপূর্ণ সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে তারা সফল। আল্লাহ বলেন,
"মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়-নম্র; "[ সুরা মু’মিনুন ২৩: ১, ২ ]
"এবং যারা তাদের নামাযে যত্নবান, "[ সুরা মা’য়ারিজ ৭০:৩৪ ]
সুতরাং খুবই মনোযোগ সহকারে নিয়মিত সালাত আদায়কারী আল্লাহর কাছে সফল ব্যক্তি।
আরও পড়ুন কবর পাকা করার দলিল খন্ডন
অধিক নেক আমলকারী
ঈমান আনার পরবর্তী কাজই হচ্ছে নেক আমল করা। যার যতবেশী নেক আমল তার ততবেশী সফলতা দুনিয়া এবং আখিরাতে। আল্লাহ বলেন,
"নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন। [ সুরা হুজুরাত ৪৯:১৩ ] "
আল্লাহ আরও বলেন,
"আর সেদিন যথার্থই ওজন হবে। অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে, তারাই সফলকাম হবে। [ সুরা আরাফ ৭:৮ ] "
সুতরাং পরহেজগারীতা হলো সফলতার একটি সিঁড়ি। কিয়ামতের মাঠে মিজানের পাল্লায় পরহেজগার ব্যক্তির নেকীর আমল দ্বারা ভারী হবে। যার পাল্লা যতবেশী ভারী সে ততবেশী সফলকাম।
যে কৃপণতা করে না
কৃপণতা একটি খারাপ গুণ। যারা কৃপণ তারা দুনিয়া এবং আখিরাতে কোথাও সফলতা পায় না। যারা কৃপণতা করে না, যাদের মন সংকীর্ণ নয় তাঁরাই আল্লাহর কাছে প্রকৃত সফল। আল্লাহ বলেন,
"অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শুনো, আনুগত্য কর এবং ব্যয় কর। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পন্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। [ সুরা তাগাবুন ৬৪:১৬ ]
আরও পড়ুন সুফি সুন্নিদের পীর আউলিয়া সম্পর্কিত আকিদার জবাব
সৎকাজের আদেশ অসৎ কাজের নিষেধ
আল্লাহর বিধানে সে ই সর্বাধিক সফল, যে সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে বাঁধা দেয়। আল্লাহর দুনিয়ায় মানুষদের সৎ কাজের আদেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজে নিষেধ করা দিনদিন কঠিন হয়ে পড়বে। এই অবস্থায় সেই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে সফল, যে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে। আল্লাহ বলেন,
" আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম। [ সুরা ইমরান ৩:১০৪ ]"
আল্লাহ আরও বলেন,
"তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। [ সুরা ইমরান ৩:১১০ ]
যারা আমানত এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে
আমানত এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা ঈমানের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা নিজের কাছে থাকা আমানত রক্ষা করে এবং অন্যদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলে তাঁরাই আল্লাহর কাছে সফল। আল্লাহ বলেন,
"মুমিনগণ সফলকাম হয়ে গেছে,"[ সুরা মু’মিনুন ২৩:১ ]
"এবং যারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে।" [ সুরা মু’মিনুন ২৩:৮ ]
"এবং যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে [ সুরা মা’য়ারিজ ৭০:৩২ ]
"এবং যারা তাদের সাক্ষ্যদানে সরল-নিষ্ঠাবান" [ সুরা মা’য়ারিজ ৭০:৩৩ ]
"তারাই জান্নাতে সম্মানিত হবে"। [ সুরা মা’য়ারিজ ৭০:৩৫ ]
আরও পড়ুন প্রবৃত্তির অনুসরণ ও তার পরিনতি
যারা নিজেদের পরিশুদ্ধ করে
আল্লাহর উপর ঈমান এনে শির্ক বিদআত সহ নিজেকে সকল পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে পারাটাই হচ্ছে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা। যে নিজেকে সমস্ত পাপমুক্ত করে পারে সে ই হচ্ছে শুদ্ধ ব্যক্তি। আল্লাহ বলেন,
"যে নিজেকে শুদ্ধ করে, সেই সফলকাম হয়। [ সুরা শামস ৯১:৯ ] "
সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ঈমান আনার পর যাবতীয় পাপ থেকে পরহেজ বা বিরত থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, সে ই হচ্ছেন আল্লাহর কাছে সফল ব্যক্তি।
যারা নির্দিধায় আল্লাহকে মানে
আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলসাঃকে বিনা বাক্যে বিনা শর্তে নির্দিধায় মানার নামই হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহর কাছে তাঁরাই সফল যারা নির্দিধায় আল্লাহকে মেনে চলে। আল্লাহ বলেন,
"মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম। [ সুরা নুর ২৪:৫১ ] "
কল্যাণের দিকে আহবানকারী
ইসলাম হচ্ছে বিশ্বের যাবতীয় কল্যাণের মূল। যারা ইসলামে প্রবেশ করেছে তারা কল্যাণের পথেই প্রবেশ করেছে। সুতরাং যারা এই শাশ্বত ইসলামের দিকে তথা কল্যাণের দিকে মানুষকে আহবান করে তাঁরাই দুনিয়া এবং আখিরাতে সফল। আল্লাহ বলেন,
"নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের।" [ সুরা আসর ১০৩: ২, ৩ ] "
অর্থাৎ এই দুনিয়ায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। তবে তারা নয় যারা, ঈমান আনে, সৎ আমল করে এবং সত্যের অর্থাৎ ইসলামের দাওআত দেয়। সেই সাথে ইসলামের দাওআত দিতে গিয়ে যখন ঝড় ঝাপটা বিদপ আসে তখন তারা পরস্পরকে সবর করার জন্য তাকীদ দেয় তাঁরাই হচ্ছে সফলকাম।
যারা শয়তানী কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকে
যারা নিজেদেরকে শয়তানের বিভিন্ন কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখতে পেরেছে তাঁরাই আল্লাহর দৃষ্টিতে সফল। আল্লাহ বলেন,
"হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। [ সুরা মায়েদা ৫:৯০ ]
অর্থাৎ যারা নিজেদের যাবতীয় শয়তানী কার্যকলাপ থেকে দূরে রাখতে পারবে ততই তাদের কল্যাণ হবে। যার কল্যাণ আল্লাহ করবে সে ই হবে সফল।
আমাদের বর্তমান সমাজে বিভিন্ন প্রকার মাদক এবং হরেকরকমের জুয়ার ছড়াছড়ি। যা মানুষের অকল্যাণ বয়ে আনছে। যারফলে মানুষ দুনিয়ার জীবনে সফল হতে পারছে না। সেইসাথে আখিরাতের সফলতাও বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। সুতরাং শয়তানী কর্মকান্ড থেকে যারা নিজেদের দূরে রাখতে পেরেছে তাঁরাই দুনিয়া এবং আখিরাতে সফল।
যারা সর্বাবস্থায় দান করে
আল্লাহর কাছে তাঁরাই সফল যারা জীবনের সর্বাবস্থায় অর্থাৎ যখন অর্থ সম্পদ থাকুক আর না থাকুক সবসময়ই দান সদকা করে। অর্থাৎ জীবনের সর্বাবস্থায় যেকোনো পরিস্থিতিতে কখনোই এরা দান সদকা থেকে বিরত হন না। এরাই সফল। আল্লাহ বলেন,
"যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। [ সুরা ইমরান ৩:১৩৪ ]
অন্য আয়াতে বলেন,
"যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান কর, তিনি তোমাদের জন্যে তা দ্বিগুণ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, সহনশীল।" [ সুরা তাগাবুন ৬৪:১৭ ]
যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে
এই মায়াবী দুনিয়ার পরবর্তীতে আরও একটি জগৎ রয়েছে। সেই জগতের নাম আখিরাত। সুতরাং যারা ঈমান আনে আল্লাহর সকল বিধি বিধানের উপর এবং বিশ্বাস করে আখিরাতে আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার। তাঁরাই হচ্ছে সফলকাম। আল্লাহ বলেন,
"এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে। [ সুরা বাকারা ২:৪ ] "
"তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম।" [ সুরা বাকারা ২:৫ ]
আরও পড়ুন কুরআন ই হিদায়াত প্রকৃত মাধ্যম
যারা অন্য মুমিনদের প্রাধান্য দেয়
যারা নিজেদের উপর অন্য মুমিনদের প্রাধান্য দেয় তাঁরাই আল্লাহর কাছে সফল। অর্থাৎ নিজেদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য অর্থ সম্পদ ইত্যাদির চেয়ে তার অন্য মুমিন ভাইয়ের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিতো। এরাই হচ্ছে আল্লাহর কাছে সফল। আল্লাহ বলেন,
"আর মুহাজিরদের আগমনের আগে যারা মদিনায় নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদের ভালোবাসে। আর মুহাজিরদের যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না। এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদের অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৯) "
আল্লাহর অধিক স্বরণকারী
একজন প্রকৃত মুমিনের জিহ্বা সর্বদা আল্লাহর স্বরণে নিয়োজিত থাকে। যারা প্রতিনিয়ত এবং প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহকে বেশী বেশী স্বরণ করে তাঁরাই হচ্ছে আল্লাহর কাছে সফল। আল্লাহ বলেন,
"আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [ সুরা জুম’য়া ৬২:১০ ] "
সত্যবাদী
যারা সর্বদা সত্য বলে তাঁরাই হচ্ছে সফল। সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। যারা সত্যবাদী আল্লাহর কাছে তারা সফল।আল্লাহ্ বলেন,
আল্লাহ বললেনঃ আজকের দিনে সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের উপকারে আসবে। তাদের জন্যে উদ্যান রয়েছে, যার তলদেশে নির্ঝরিনী প্রবাহিত হবে; তারা তাতেই চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। এটিই মহান সফলতা। [ সুরা মায়েদা ৫:১১৯ ]
সুতরাং যারা সত্যবাদী তাদের জন্য রয়েছে মহা সফলতা তথা জান্নাত।
আল্লাহ ভীরুতা
ঈমান আনার পর আল্লাহ ভীরুতাই হলো প্রকৃত মুমিনের ঈমানের অঙ্গ। যারা আল্লাহকে সত্যিকারের ভয় করে তাঁরাই মুমিন মুত্তাকী। আর তাঁরাই হচ্ছে আল্লাহর কাছে সফল ব্যক্তি। আল্লাহ্ বলেন,
"বলে দিনঃ অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের প্রাচুর্য তোমাকে বিস্মিত করে। অতএব, হে বুদ্ধিমানগণ, আল্লাহকে ভয় কর-যাতে তোমরা মুক্তি পাও"। [ সুরা মায়েদা ৫:১০০ ] "
তিনি আরও বলেন,
"অবশ্য নেকী হল আল্লাহকে ভয় করার মধ্যে। আর তোমরা ঘরে প্রবেশ কর দরজা দিয়ে এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক যাতে তোমরা নিজেদের বাসনায় কৃতকার্য হতে পার "। [ সুরা বাকারা ২:১৮৯ ]
শুকরিয়া আদায়কারী
আল্লাহর বিধানে যেসব মুমিন যতবেশী শুকর গুজারী হবে আল্লাহ্ তাকে ততবেশী দুনিয়া এবং আখিরাতে প্রাচুর্য দান করেন। অর্থাৎ যারা বেশী বেশী আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তারা বেশী আল্লাহর নিয়ামত লাভ করে। আল্লাহ্ বলেন,
" তোমরা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ স্মরণ কর-যাতে তোমাদের মঙ্গল হয়"। [ সুরা আরাফ ৭:৬৯ ]
সুতরাং যারাই আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করবে তারাই হবেন মঙ্গলের অধিকারী এবং তারাই হচ্ছেন সফল।
আরও পড়ুন উছিলা কী? উছিলার বিস্তারিত ব্যাখ্যা
আত্মীয়তার বন্ধনকারী
নশ্বর এই পৃথিবীতে আল্লাহর কাছে তারাই সফল যারা তাদের আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করে। যারা তাদের শত দুঃখকষ্টেও আত্মীয়দের ছেড়ে দেয়নি। কিংবা দুনিয়াবী লোভের তাড়নায় পড়ে আত্মীয়দের সম্পদ হরণ করেনি। তারাই হচ্ছেন আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় এবং তারাই হবেন সফল দুনিয়া এবং আখিরাতে। আল্লাহ্ বলেন,
"আত্নীয়-স্ব জনকে তাদের প্রাপ্য দিন এবং মিসকীন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্যে উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। তারাই সফলকাম। [ সুরা রূম ৩০:৩৮ ] "
সুতরাং যারা আত্মীয়তার সম্পর্ককে দৃঢ় করে, তাদের ন্যায্য পাওয়া বুঝিয়ে দেয়, আত্মীয়স্বজনের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখে তাঁরাই আল্লাহর কাছে সফল।
অদেখা বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপনকারী
যারা দুনিয়ায় বসে আল্লাহ এবং তাঁর যাবতীয় অদৃশ্যের বিষয়াদির উপর না দেখে বিশ্বাস স্থাপন করে তারা হচ্ছে সফল। আল্লাহ্ বলেন,
"যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে "। [ সুরা বাকারা ২:৩ ]
"তারাই নিজেদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে সুপথ প্রাপ্ত, আর তারাই যথার্থ সফলকাম। [ সুরা বাকারা ২:৫ ] "
যারা সংকীর্ণমনা নয়
যাদের অন্তরে কোনো প্রকার কার্পণ্য নেই এবং যাদের অন্তর সম্পূর্ণ কালিমামুক্ত তাঁরাই হচ্ছে সফল। সেইসাথে যাদের অন্তরে সংকীর্ণতা নেই এবং বিশাল মনের অধিকারী তারাই আল্লাহর কাছে সফল। আল্লাহ্ বলেন,
"যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষাপোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম। [ সুরা হাশর ৫৯:৯ ] "
আরও পড়ুন সুফিবাদ কী? কীভাবে উৎপত্তি এবং বর্তমান অবস্থা
যারা আল্লাহর উপর সবর করে
যারা হাজার দুঃখকষ্টেও আল্লাহ্কে ছেড়ে দেয়না এবং শত দুর্দশাতেও আল্লাহর উপর ভরসা রাখে। সেইসাথে জীবনের চরম ক্রান্তিকালেও আল্লাহর সাহায্যের আশায় সবর করে। তারাই হচ্ছেন সফলকাম ব্যক্তি। আল্লাহ্ বলেন,
আজ আমি তাদেরকে তাদের সবরের কারণে এমন প্রতিদান দিয়েছি যে, তারাই সফলকাম। [ সুরা মু’মিনুন ২৩:১১১ ]
সুতরাং তারাই সফল যারা আল্লাহ্কে বিশ্বাস করে বন্ধুর এই পৃথিবীতে সবর ধরে দুনিয়ার জীবন পার করে দিয়েছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা যা জানলাম তা হচ্ছে, প্রথমত এই দুনিয়ায় পরিপূর্ণ অর্থাৎ শির্ক বিদআত মুক্ত ঈমান আনতে পারাটাই মহা সফলতা। সেইসাথে ঈমান আনার পর কুরআন এবং রাসুলুল্লাহর সাঃ সুন্নাহ মোতাবাক জীবনযাপন করাটা এক বিরাট সাফল্য।
সুতরাং প্রতিটি মুমিনকে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহর অনুসরণে যাবতীয় সৎ গুণাবলী অর্জন করার চেষ্টা করতে হবে। যে যতবেশী রাসুলুল্লাহর আনুগত্য করতে পারবে সে ততবেশী আল্লাহর কাছে সফল হবেন ইনশা আল্লাহ্।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
১৩ ডিসেম্বর ২০২১,
অলংকার, চট্টগ্রাম।