সুফি সুন্নীরা ইসলামের শরিয়ত সম্পর্কে এমন এমন সব আকিদা পোষণ করে যা কখনোই ইসলাম স্বীকৃত নয়। এইসব ভ্রান্ত আকিদা সমূহ এমন যে, তা একজন ঈমানদারকে মুশরিকে পরিনত করে ঈমান হারা করে দেয়। এখন আমরা কুরআন এবং সহীহ্ হাদিসের আলোকে সুফি সুন্নীদের অন্যান্য আকিদা সম্পর্কিত জবাব পাওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
বৈরাগ্যবাদঃ
সুফিদের মূল আকিদা ছিলো বৈরাগ্যবাদ। অর্থাৎ সুফিদের উৎপত্তির প্রাথমিক পর্যায় ছিলো বৈরাগ্যবাদ বা সন্ন্যাসীবাদ। আমরা জানি যে বৈরাগ্য মানে সংসারত্যাগী। অর্থাৎ যারা জৈবিক ও সামাজিক চাহিদা পূরণ না করার জন্য বিয়ে শাদী করে না। বা বিয়ে শাদী করলেও তা ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে জীবনযাপন করা। তাদেরকে বলা বৈরাগী। আর এই জীবনযাপন করাকে বলা হয় বৈরাগ্যবাদ। যা শুরু করেছিল খ্রীস্টান পাদ্রীরা। এখন কথা হচ্ছে, এই বৈরাগ্যবাদ কি ইসলাম সমর্থন করে? পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন,
" কিন্তু সন্ন্যাসবাদ এটা তো তারা নিজেরা প্রবর্তন করেছিল, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের বিধান ছাড়া আমি তাদেরকে এ (সন্ন্যাসবাদে)র বিধান দেইনি; অথচ এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি।" (আল হাদীদ : ২৭)
উপরোক্ত আয়াতটি খ্রিস্টানদের জন্য অবতীর্ণ হয়েছিল। যেখানে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট করে তাদের উদ্ভাবিত সন্ন্যাসবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। অর্থাৎ সংসারত্যাগী বৈরাগ্য জীবনযাপন। কেননা আল্লাহ্ এই বিধান তাদের দেননি। সুতরাং যাদেরকে সন্ন্যাসী হতে নিষেধ করা হয়েছিল।কিন্তু তারা নিজ দায়িত্বে সন্ন্যাসী হয়েছিল। ঠিক একইভাবে ইসলামেও আল্লাহ্ সন্ন্যাসবাদের অনুমতি দেননি। তারপরও সুফিরা বৈরাগী হয়ে সুফিবাদের এখনও প্রচার প্রসার চালিয়ে যাচ্ছে।
যদি আল্লাহ্ সন্ন্যাসবাদের অনুমতি দিতেন।তাহলে কুরআনে খ্রিস্টানদের সন্ন্যাসবাদ নিয়ে আল্লাহ্ তাদেরকে নিরুৎসাহিত এবং তাদের উপর রাগান্বিতও হতেন না। এই আয়াতে সুস্পষ্টবভাবে সন্ন্যাসবাদকে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা এটা আল্লাহর বিধান নয়। শুধু খ্রিস্টানরা নয় অতীতের সকল ধর্মাবলম্বীরা বৈরাগ্যবাদ বা সন্ন্যাসবাদের চর্চা করতো এবং করে।
অতএব যেখানে খ্রিস্টানদের বৈরাগ্যবাদের জন্য তাদেরকে কুরআনে তিরস্কার করা হচ্ছে। সেখানে ইসলামে অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে সুফিবাদের বৈরাগ্যকে ইসলাম বলা যায়?
কেননা এই বৈরাগ্যবাদ আল্লাহর রাসুল প্রতিষ্ঠিত করে যাননি। এই সন্ন্যাসবাদ রাসুল পরবর্তীতে অনেক শত বছর পরে প্রতিষ্ঠিত। অথচ আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন,
" আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম (ইসলাম) পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম। "( সূরা মায়িদাহ : ৩)
অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত। এই দ্বীন ইসলামে রাসুল পরবর্তী নতুন কোনো কিছুই সংযুক্ত করা যাবে না। সুতরাং সুফিদের নব্য মতবাদ সংসার বিমুখী বৈরাগীবাদ কখনোই ইসলামের অন্তর্ভূক্ত নয়।
শয়তানের দ্বারা উপকৃতঃ
সুফীদের বিভিন্ন দলের লেখনী থেকে জানা যায় যে, তারা শয়তানের কাছ থেকেও বিভিন্ন বিষয়ে দিক নির্দেশনা পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ তাদের আকিদা হলো শয়তানের দ্বারাও মানুষের লাভ হয় এবং শয়তানও মানুষের উপকার করে।
তাবলিগী নিসাব ফাযায়েলে আমাল বইয়ে হজরত জুনাইদ (রঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি একবার শয়তানকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞাসা করলেন,
" মানুষের সামনে উলঙ্গ হয়ে থাকতে তোর কি লজ্জা হয় না? শয়তান তখন বলল, এরা কি মানুষ? মানুষ তো তারা, যারা শোনিযিয়ার মসজিদে বসে আছেন। যারা আমার শরীরকে দুর্বল করেছে, আমার কলিজাকে পুড়িয়ে কাবাব করে দিয়েছে। হজরত জুনাইদ (রহঃ) বলেন, আমি শোনিজিয়ার মসজিদে গিয়া দেখি কয়েকজন বুযুর্গ হাঁটুর উপর মাথা রাখিয়া মোরাকাবায় মশগুল রয়েছেন। তাঁরা আমাকে দেখে বলতে লাগলেন, খবীস শয়তানের কথায় কখনও ধোকায় পড়ো না।
মাসূহী (রহঃ) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি শয়তানকে উলঙ্গ দেখে জিজ্ঞাসা করলেন,
"মানুষের মধ্যে এইভাবে উলঙ্গ হয়ে চলাফেরা করতে তোর লজ্জা হয় না? সে বলতে লাগলো, খোদার কসম, এরা তো মানুষ নয়। যদি মানুষ হতো তবে এদের সাথে আমি এমনভাবে খেলা করতাম না, যেমন বাচ্চারা ফুটবল নিয়ে খেলা করে। মানুষ ঐ সমস্ত লোক, যারা আমাকে অসুস্থ করে দিয়াছে। এই কথা বলে সে সুফিয়ায়ে কেরামের জামাতের দিকে ইশারা করল।" (ফাযায়েলে আমাল, দ্বিতীয় খন্ড, ৩৭৬-৩৭৭ পৃষ্ঠা, দারুল কিতাব, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০ থেকে ২০০১ সালে প্রথম প্রকাশিত)
আল্লাহ্ কতৃক চিরন্তন সত্য যে, শয়তান হচ্ছে মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু। সে সর্বদা মানুষকে ঈমান থেকে বিচ্যুত করে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে । সে আল্লাহর সাথে এ ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করেছে। তার কথা আল্লাহ্ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
" সে বললঃ আপনি আমাকে যেমন উদ্ভ্রান্ত করেছেন, আমিও অবশ্য তাদের জন্যে আপনার সরল পথে বসে থাকবো। এরপর তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, পেছন দিক থেকে, ডান দিক থেকে এবং বামদিক থেকে। আপনি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবেন না।" (সূরা আরাফঃ ১৬-১৭)
এতে সহজেই বুঝা যায় একজন মানুষ কতটুকু গোমরাহী হলে ইবলীসকে সঠিক দিক নির্দেশক ও পরামর্শ দাতা হিসেবে বিশ্বাস করতে পারে। আর সুফিবাদীরা আল্লাহ্ দ্রোহী পাপিষ্ঠ ইবলীস শয়তানকেই তাদের গুরু মনে করে থাকেন। এইসব কথিত বানোয়াট কাহিনীর উপর ভিত্তি করে আজও উপমহাদেশে সুফিবাদ প্রতিষ্ঠিত।
গান বাজনাঃ
ইসলামী শরীয়তে নাচগান বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে সঙ্গীত ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সুফিদের শরীয়তে নাচগান নিষিদ্ধ নয়। বরং তা কতক ক্ষেত্রে ফরজ। সুফিদের দাবি এই উপমহাদেশে সুফিরা গান বাদ্য বাজনা দিয়েই মানুষের কাছে ইসলামকে পরিচিত করেছে।
যেহেতু উপমহাদেশের সকল মানুষই ছিলো মূর্তি পূজারী সনাতন বৌদ্ধ ইত্যাদি ধর্মের অনুসারী। সেহেতু তাদের নিকট আগে থেকেই নাচগান বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে আনন্দ উল্লাসের চর্চা ছিলো। নাচগানে মত্ত সেইসব মূর্তি পূজারী জাতিকে ইসলামের আলোতে আনার জন্য বিখ্যাত বিভিন্ন অলি আউলিয়া নাচগানের আয়োজন করে তাদের সুফিবাদী ইসলামের দাওআত দেয়। নাচগানের মাধ্যমে উপমহাদেশের মানুষ ইসলামমুখী হওয়ার কারণে, নাচগানের প্রভাব সুফিবাদী ইসলামে রয়ে যায়।
সেই থেকে আজ পর্যন্ত উপমহাদেশে বিভিন্ন ত্বরিকায় নাচগান বাদ্য বাজনা নিষিদ্ধ নয়। বরং অসংখ্য ত্বরিকায় নারী পুরুষের সম্মিলিত নাচগানের মাধ্যমে আল্লাহর আরাধনা করা ফরজের কাছাকাছি। অর্থাৎ সুফিবাদের অসংখ্য ত্বরিকায় নারী পুরুষ একত্রে নাচগান অত্যাবশ্যকীয়। নাচ গান ছাড়া কখনোই তাদের ইবাদত পরিপূর্ণ হয়না।
এইসব সুফিরা নাচগানকেই একমাত্র আল্লাহ্ পাওয়ার মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করে। নাচ গানে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সুফি বাউল সম্প্রদায়। তাদের শরীয়তের কোনো ইবাদত আইনকানুন কিছু নেই। তাদের মূল ইবাদতই হলো নাচগানের ভজন করা। নাচ গানকেই তারা আল্লাহর ইবাদত মনে করে।যাদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন লালন ফকির, হাসন রাজা, আববাস উদ্দিন, ফিরোজ শাহ ইত্যাদি।
ভারতের খাজা মঈন উদ্দিন ছিলেন নাচ গানের জন্য বিখ্যাত। তার সুফিবাদ প্রচারের ধরণ ছিলো নাচগান বাদ্য বাজনা। সুফিদের আকিদা থেকে এটা স্পষ্ট যে, তারা নিজেদের প্রচার প্রসারের জন্য খুব সহজেই ইসলামী শরিয়ত বর্হিভূত যেকোনো কাজে পিছপা হয়না। এর প্রমাণ তাদের নাচগান সমৃদ্ধ বিভিন্ন ত্বরিকা। অথচ নাচগানকে আল্লাহ্ সরাসরি নিষিদ্ধ করেছেন সূরা লোকমানের ৬ নং আয়াতে।
আল্লাহ্ বলেন,
" আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।" (সূরা লোকমান : ৬)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে নাচগান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও সুফিদের দাবি তাদের নাচ গান দুনিয়াবী নাচগান নয়। তারা আল্লাহ্ রাসুল অলি আউলিয়াদের সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের শানে নাচগান করেন।
তাদের এই দাবি বিভিন্ন পর্যায় থেকে অগ্রহণযোগ্য। বিশেষকরে তারা সেইসব বাদ্যযন্ত্রই ব্যবহার করে যা অন্যান্য অশ্লীল নাচগানের জন্য ব্যবহৃত হয়। শুধু তাইনয় তাদের এইসব গানে যেসব কথা থাকে তার অধিকাংশই শির্কি বিদআতী কুফরি সমৃদ্ধ। যা সরাসরি ইসলামী শরীয়তের বহির্ভূত। যেমনঃ তাদের কিছু গানের কথা হচ্ছে এমন,
" মুহাম্মদের মীমের পর্দা তুলে দেরে মন, দেখবি সেথায় রয়েছে আহাদ নিরঞ্জন "
" আল্লাহর ধন রাসুলকে দিয়ে,আল্লাহ্ গেলেন গায়েব হয়ে,
রাসুলের ধন খাজা পেয়ে দুহাতে তিনি দেন বিলিয়ে "
"আদমের ভিতর ঢুকে আমার খোদা সিজদা লয়,
আদমকে সিজদা করলে কাফেররা শিরক কয় "
এই জাতীয় হাজার হাজার গান আছে যা সরাসরি শির্ক কুফরির শিক্ষা দেয়। মোটকথা সুফিদের অধিকাংশ অনুসারী নাচগানকেই আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যম মনে করে দুনিয়া যাপন করে। সুফিদের নাচ গানের খারাপ দিক হলো নারী পুরুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণ। যা খারাপের মধ্যে জঘন্য খারাপ। শুধু তাইনয় প্রতিটি কথিত অলি আল্লাহ্র ওরসে কম বয়সী মহিলা দিয়ে নাচগানের তুমুল আসর বসে। যেখানে নারী পুরুষ নির্বিচারে নাচগান করে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে।যা কখনোই ইসলাম সমর্থিত নয়। অবাধ নাচগানের কারণে তাদের অনুসারীরা নাচগান নিয়ে শরিয়তের যে বিধিনিষেধ রয়েছে তা অস্বীকার করে। অতএব, সুফিদের এই আকিদাও কখনো আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
সাহাবী বিদ্বেসীঃ
সুফিরা দাবি করে তাদের গুরু হচ্ছেন হযরত মুহাম্মদ সাঃ। তাঁর থেকে পীরগিরি পেয়েছেন হযরত আলী রাঃ। তাঁর থেকে পেয়েছেন হাসান হোসাইন রাঃ এভাবে তাদের বিভিন্ন পীর অলি আউলিয়াদের সিলসিলা পর্যন্ত এসেছে ।
তাদের দাবি অনুযায়ী রাসুলের পরবর্তীতে পীর হওয়ার কথা হযরত আবু বকর রাঃ। এরপরে উমর ওসমান রাঃ। তারপরেই আসার কথা হযরত আলী রাঃর পালা। কিন্তু তা না হয়ে ইসলামী প্রথম তিন খলিফা পীর না হয়ে কেন চতুর্থ খলিফা আলীঃ তাদের পীর হলেন?
এই প্রশ্নের জবাবে তাদের দাবি রাসুলুল্লাহ সাঃ আলী রাঃকেই খিলাফত দিয়েছিলেন। কিন্তু আবুবকর ওমর ওসমান রাঃ প্রতারণা করে আলী রাঃকে খিলাফত দেয়নি। কতবড় জঘন্য কথা সাহাবীদের নিয়ে! এই প্রশ্নের সামনে তাদের আসল চেহারা ফুটে উঠে।
সুফিরা দাবি করে বড় বড় সাহাবীগণ মিলে আলী রাঃকে ক্ষমতা দেয়নি। এইক্ষেত্রে তারা শিয়াদের আকিদা অনুসরণ করে। তবে যারা সুফিবাদকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতে রূপান্তরিত করেছে, তারা এইসব সাহাবী বিদ্বেস থেকে দূরে থাকে।
এই প্রাতিষ্ঠানিক সুফিবাদীরা দাবি করে আবুবকর ওমর ওসমান রাষ্ট্রীয় খিলাফতের অধিকারী। আর আলী হলেন বেলায়েতের খিলাফাতের অধিকারী। দেখুন তাদের ভন্ডামীর নমুনা! সুফিরা পীর মুরিদী জায়েজ করে বাইয়াত খিলাফত ইত্যাদির দাবি করে। অথচ তারা নিজেরাই খিলাফত এবং বাইয়াতকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে।
তারা হযরত হাসান হোসাইন রাঃকে বেলায়েতের অধিকারী মানে। অথচ তারা জীবন দিয়েছেন রাষ্ট্রীয় সত্য খিলাফত তথা রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের পদমর্যাদার জন্য। আর সুফিরা যে বাইয়াত খিলাফত প্রদান করেন তা হচ্ছে পীর মুরিদী করার জন্য। এই বিষয়ে ব্যাপকভাবে জানা সবার জন্য আবশ্যক।
কেননা অতীতে কুরআন হাদীস না জানার কারণে মানুষ সুফিবাদে গোমরাহী হয়েছিল। আর বর্তমানের মুসলমানগণ কুরআন হাদীস জানার পরও বড় বড় বুজুর্গ হুজুরের কথায় সত্যকে মাটি দিয়ে দুনিয়াবী শয়তানীকে আঁকড়ে ধরেছে।
সকল ধর্ম সত্যঃ
সুফিদের আকিদা হচ্ছে মানবতাবাদী আকিদা। তারা সাম্যবাদী আকিদায় বিশ্বাসী। যাকে সোজা সাপ্টায় বলা হয় কম্যুনিস্ট। তাদের বিশ্বাস যেকোনো ধর্মের মানুষই আল্লাহর কাছে নাজাত পাবে, যদি তারা সত্যিকার ভাবে সৃষ্টিকর্তাকে সন্তুষ্ট করতে পারে। তারা মনে করে রব তো একজনই। সুতরাং তাকে যে যেভাবে ডেকে সন্তুষ্ট করতে পারে সে ই হবে সার্থক। অর্থাৎ কমিউনিস্টরা যেমনঃ ধর্মকে বড় করে দেখে না। যে যেই ধর্মই পালন করুক না কেন, দেশ এবং কর্মকে ভালোবাসলেই হবে।
ঠিক তেমনি সুফি সুন্নীরা মনে করে, যে যেই ধর্ম পালন করুক না কেন, ভালো কাজ করলেই জান্নাতে চলে যাবে। অর্থাৎ সৃষ্টিকর্তা তথা কোনো একটি ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। যেকোনো ধর্মের যেকোনো পদ্ধতিতে তাঁকে সন্তুষ্টি করতে পারলেই যেকোনো ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে নাজাত পেয়ে যাবে। সুতরাং শুধু যে মুসলমানরাই জান্নাতে যাবে তা নয়। যেকোনো ব্যক্তিই জীবনে সৎ জীবনযাপন করে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন করলেই সে জীবনে সফল।
এইজন্যই সুফিদের পীর অলি আউলিয়াদের কবর মাজার ওরসে ব্যাপকভাবে বিধর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়। উপমহাদেশের প্রতিটি অলি আউলিয়াদের দরবারে বিধর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়। শুধু তাইনয় অনেক দরবারের বিধর্মী খাদেমদের কবরও মাজারে রূপান্তরিত হয়েছে। বিভিন্ন বিধর্মী গায়ক গায়িকাও বিভিন্ন দরবারের গুরুত্বপূর্ণ মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করে। সেইসাথে বিভিন্ন দরবার মানব কল্যাণে কাজ করার জন্য বিধর্মীদের বিভিন্ন পুরুস্কারে ভূষিত করে।
কিন্তু সুফিদের এই সাম্যবাদী আকিদা কখনোই ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা আল্লাহ্ দ্বীন বা ধর্ম হিসাবে শুধুমাত্র এবং একমাত্র ইসলামকেই স্বীকৃতি দিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহর কাছে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মই গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লাহ্ বলেন,
" নিশ্চয় আল্লাহর নিকট (গ্রহণযোগ্য) দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। " (আল ইমরান ৩:১৯)
" আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম (ইসলাম) পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম। " (আল মায়িদাহ :৩)
" যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম অন্বেষণ করবে, তার পক্ষ হতে তা কখনও গ্রহণ করা হবে না। আর সে হবে পরলোকে ক্ষতিগ্রস্তদের দলভুক্ত। "(আল ইমরান : ৮৫)
উপরোক্ত আয়াত গুলো থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর মনোনীত ধর্ম হচ্ছে একমাত্র "ইসলাম"। যদি কেউ এটা মনে করে অন্যান্য ধর্মের অনুসরণও আল্লাহ্ মেনে নিবেন। তাহলে এটা হবে তাদের চরম ভুল। কেননা আল্লাহ্ বলেই দিয়েছেন ইসলাম ছাড়া কোনো ধর্মের অনুসারীদের আল্লাহ্ মেনে নিবেন না।
সুতরাং সুফিদের দাবি এবং আকিদা সমূহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই কুরআন এবং সুন্নাহ বিরোধী। সুফি অনুসারীদের অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুফিরা এই ভারত উপমহাদেশে সুফিবাদের ব্যাপক প্রচার প্রসার লাভ করেছে। যা প্রকৃত ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।
শিয়া মতবাদে বিশ্বাসীঃ
সুফিদের যাবতীয় আকিদা বিচার বিশ্লেষণ করলে যা পাওয়া যায় তা হলো, তাদের অধিকাংশ বিশ্বাসই শিয়া মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। শিয়ারা যেখানে তাদের ইমামদের নবী রাসুল পরবর্তীতে তাঁদের জায়গায় স্থান দেয়। ঠিক তেমনি সুফিরা তাদের পীর আউলিয়াদের নবী রাসুলদের জায়গায় স্থান দেয়।
শিয়াদের দাবি যেমন ত্রিশপারা কুরআনের বাইরে আরও ৬০পারা কুরআন তাদের ইমামদের কাছে মজুদ আছে। ঠিক একইভাবে সুফিরাও দাবি করে তাদের পীর আউলিয়াদের সীনায়ও ত্রিশপারা কুরআনের বাইরে আরো আল্লাহর জ্ঞান লুকায়িত আছে। যা তারা সরাসরি লৌহে মাহফুজের সাথে সম্পৃক্ত থেকে জানতে পারে। এবং সেই জ্ঞান ভক্ত মুরিদদের দান করে।
শিয়ারা যেমন সাহাবী বিদ্বেষী ঠিক তেমনি এরাও গোপনে সাহাবী বিদ্বেষী। অর্থাৎ শিয়ারা সরাসরি ইসলামের প্রথম তিন খলিফাকে অস্বীকার। তেমনি সুফিরাও কৌশলে তাঁদের অস্বীকার করে। যা তারা প্রকাশ করে না সুন্নি লেবাস লাগানোর কারণে।
শিয়ারা ইসলামের নামে যত দিবস চালু করেছে, তার প্রতিটি দিবসই সুফিরা অনুসরণ করেছে একই নামে বা ভিন্ন নামে।
শিয়ারা তাদের মতবাদের পক্ষে যেসব বংশ পারস্পরিক সিলসিলা ব্যবহার করে, ঠিক একই সিলসিলা সুফিরাও ব্যবহার করে। মোটকথা সুফিরা শিয়াদেরই একটি গোষ্ঠী, যা তারা সুন্নি নামে ইসলামে প্রবেশ করেছে। বর্তমান ইসলামে শিয়া সুন্নি দুটি বৃহৎ মতবাদ রয়েছে। সেই মতবাদে সুন্নি নাম দিয়ে সুফিরা শিয়াইজম প্রতিষ্ঠা করছে গোপনে।
আমাদের উপমহাদেশে ইসলামের যাবতীয় পরিভাষা গুলো হলো সব ফার্সি। যা সরাসরি শিয়াদের ব্যবহৃত শব্দ। শুধু তাইনয় উপমহাদেশে আলোচিত সমালোচিত যত ইসলামী দিবস রয়েছে তার সবই শিয়াদের থেকে অনুগম ঘটেছে। এই ব্যপারে বিশদ জানার অবকাশ রয়েছে।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ
মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২২ জানুয়ারি, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।