ইহুদীরা বলে ওযাইর আল্লাহর পুত্র এবং নাসারারা বলে `মসীহ(ইসা আঃ) আল্লাহর পুত্র'। [ সুরা তাওবা ৯:৩০ ]
তারা কাফের, যারা বলে যে, মরিময়-তনয় মসীহ(ইসা আঃ)-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ(ইসা আঃ) বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, যিনি আমার পালন কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই। [ সুরা মায়েদা ৫:৭২ ]
উপরোক্ত আয়াত দুটি দ্বারা আল্লাহ স্পষ্ট করে দিলেন, যারা ইসা এবং ওযাইর (আঃ) কে আল্লাহর পুত্র বলবে তারা কাফের। অর্থাৎ আল্লাহর কোনো পুত্র বা সন্তানসন্ততি নেই। তিনি একক। যদি কেউ তাঁর এইসব বান্দাদের আল্লাহর পুত্র বলে তাদেরকেও আল্লাহর অংশ মনে করেন তাহলে তারা কাফের।
আল্লাহ বলেন -
তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি [ সুরা ইখলাস ১১২:৩ ]
এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। [ সুরা ইখলাস ১১২:৪ ]
সুতরাং এটা খুবই স্পষ্ট যে তাঁর সন্তান হওয়া বা তাঁর মতো করে অন্য কেউ হতে পারা বা তাঁর অংশ দ্বারা অন্য কেউ সৃষ্টি হয়েছে এমন মনে করা সুস্পষ্ট কুফুরি। কেউ যদি এটা মনে করে আল্লাহর নিজস্ব কোনো অংশ থেকে কাউকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। তাহলে সেই অংশটিও তো আল্লাহর ই। সেই অংশটি কি আল্লাহর সমতুল্য নয়? যেহেতু আল্লাহর নিজস্ব অংশ থেকেই তার সৃষ্টি।
খ্রিস্টানরা ইসা (আঃ) আল্লাহর পুত্র বলে। কেননা তিনি মা মরিয়ম (আঃ) গর্ভে পিতা ছাড়াই জন্ম লাভ করেছেন। এখানে সন্তান জন্মদানের দুনিয়াবী একটি পর্যায়ের মধ্য দিয়েই ইসা (আঃ) পৃথিবীতে আসেন। তারপরও খ্রিস্টানরা তাঁকে আল্লাহর পুত্র বলছে। আর এই কারণে তারা কাফের। যদি সরাসরি আল্লাহর নিজস্ব জাতী অস্তিত্ব থেকে কেউ সৃষ্টি হন। তাহলে কি সেই সৃষ্টি আল্লাহর অংশ হবেনা?
শুধু পিতা নেই এই অজুহাতে যদি ইসা (আঃ) আল্লাহর পুত্র হতে পারে। আর এই কারণে খ্রিস্টানরা কাফের। তাহলে আমাদের রাসুল (সাঃ) আল্লাহর নিজস্ব জাতী নূর থেকে সৃষ্টি হয়েছেন এমন দাবিকারী(তথাকথিত) সুন্নীরা কীভাবে ঈমানদার? অথচ বর্তমান পৃথিবীতে পিতা ছাড়া সন্তান জন্মদান খুবই সহজ এবং সম্ভব (ক্লোন এবং টেস্টটিউব বেবী)। যেটা দুনিয়ায় সহজ সেই বিষয়ের কারণে যদি খ্রিস্টানরা কাফের হয়। যেটা কোনভাবেই সম্ভব নয় সেই কারণে কীভাবে (তথাকথিত)সুন্নীরা মুসলিম?
যেখানে আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন আমার সন্তান নেই, আমার সমতুল্যও কেউ নেই । আমি কারো কাছ থেকে জন্ম হয়নি এবং আমার থেকেও কেউ জন্ম নেয়নি। সেখানে কীভাবে আল্লাহ নিজের জাতী নূর থেকে একজন রাসুল সৃষ্টি করলেন? তাও স্পষ্ট করে জানালেনও না। যদি তাঁর নূর থেকে কেউ সৃষ্টি হয়েছেন বা হতে পারেন এটা মেনে নিতে হয়। তাহলে খ্রিস্টানরা কী দোষ করল ইসাকে আল্লাহর পুত্র বলে। কারো সন্তান পুরোপুরি বাপের মতোই শতভাগ হয়না। কিন্তু নিজের থেকে নিজস্ব জাত থেকে যা তৈরি হবে সেটাতো শতভাগই একই হবে।
সুতরাং আল্লাহর নিজস্ব জাতী নূর থেকে কেউ সৃষ্টি হলে সে আল্লাহর মতোই আল্লাহ হবে (নাউজুবিল্লাহ)। এটা দুনিয়ায়ও সম্ভব। বর্তমান ক্লোনিং প্রযুক্তি দ্বারা একজন মানুষ থেকে হুবহু শতভাগ একই মানুষ তৈরি করা যায় (যা বিশ্বে বর্তমানে নিষিদ্ধ)। অতএব রাসুল (সাঃ)কে আল্লাহর নিজের জাতী নূরের সৃষ্টি বলে(তথাকথিত) সুন্নীরা কীভাবে ঈমানের দাবিদার ?
ইসা (আঃ) যে আল্লাহর পুত্র নন, তার স্বপক্ষে আল্লাহ যুক্তি দিয়ে বলছেন
"অথচ মসীহ বলেন, হে বণী-ইসরাঈল, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, যিনি আমার পালন কর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা।"
ঠিক একইভাবে আল্লাহ তাঁর রাসুল (সাঃ)কে বলতে বলেন-
বলুনঃ আমি ও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার এবাদতে কাউকে শরীক না করে। [ সুরা কা’হফ ১৮:১১০ ]
যে কথা ইসা(আঃ) বলত, সেই একই কথা রাসুল (সাঃ)ও বলেছেন। সহিহ বুখারী আম্বিয়া কিরাম ('আঃ) ৩৪৪৫ নং হাদিস। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি ‘উমর (রাঃ)-কে মিম্বারের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন যে, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমন ‘ঈসা মারইয়াম (‘আঃ) সম্পর্কে নাছারা (খ্রিস্টানরা) বাড়াবাড়ি করেছিল। আমি তাঁর বান্দা, তাই তোমরা বলবে, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।
সুতরাং রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা কখনোই সুন্নতী কাজ নয়। নিজেদের সুন্নী দাবি করে কীভাবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের (সাঃ) এর শিক্ষা বিরোধী কাজ করা যায়। যেখানে আল্লাহ বলেন নবী রাসুল (সাঃ) রা হচ্ছেন মানুষ। আর নবী রাসুল (সাঃ) গণ মানুষ হওয়ার কারণেই কাফের সম্প্রদায় আল্লাহ এবং নবী রাসুলদের (সাঃ) প্রতি ঈমান আনেনি। সেখানে রাসুল (সাঃ)কে আল্লাহর নূর বলে নিজেদের কীভাবে মুসলিম দাবি করছে(তথাকথিত) সুন্নীরা?
অতএব আসুন বাড়াবাড়ি না করে যা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন সেই শিক্ষা অনুসরণ করি। যে অর্থে পবিত্র কুরআনে রাসুল (সাঃ) কে আল্লাহ নূর বলেছেন, সেই গভীর সত্য আমরা উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। আমাদের রাসুল (সাঃ) অবশ্যই নূর। তিনি নূর হিসাবেই এই পৃথিবীতে আগমন করেছেন। কিন্তু সেটা কী জানতে হলে এখানে দেখুনঃ
রাসুল (সাঃ) হচ্ছেন নূর
https://shakawatarticle.blogspot.com/2020/04/blog-post_75.html?m=1
আমাদের রাসুল (সাঃ) হচ্ছেন আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্বের পরই আমাদের রাসুলের (সাঃ) এর শ্রেষ্ঠত্ব। সুতরাং এখানে কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। তবে আমরা যেন বাড়াবাড়ি না করি। অতি আবেগে আজ একশ্রেণির মুসলমানগণ রাসুলের (সাঃ) এর প্রতি লৌকিক ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে আল্লাহর সাথে শির্ক করছে নিজেদের অজান্তে।
আমার রাসুলের (সাঃ) শ্রেষ্ঠত্ব কী সেটা জানতে এখানে দেখুনঃ
রাসুল (সাঃ) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি
আরও পড়ুনঃ