সবাই মনে করে এবং দাবি করে সুন্নীরাই সবচেয়ে বেশী রাসুল সাঃ কে ভালোবাসেন। কিন্তু বিষয়টা গভীরে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, এইসব তথাকথিত সুন্নীরাই একসময় রাসুলের (সাঃ) এর দুশমনে পরিনত হবে। এটা সহজে কেউ মেনে নিবেন না আমি জানি। তাই এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেই আমি বলছি।
সুন্নীরা বলে তারা নবীকে (সাঃ) খুবই ভালোবাসেন। এখন আমরা যদি বলি ভালোবাসা জিনিসটা কী? ভালোবাসা হলো একজনের প্রতি মহব্বতের সহিত দিওয়ানা হওয়া। এটা এমন একটা আল্লাহর নিয়ামত যে যার প্রতি দিওয়ানা হবে সে শয়নে স্বপনে শুধু তার কথাই মনে পড়বে। ধরলাম একটি ছেলে একটি মেয়ের প্রতি দিওয়ানা হলো (যদিও জায়েজ নয় তবু বুঝার সুবিধার্থে বলা)। এখন ছেলেটি মেয়েটির অনেক অনেক প্রসংশা করলো এবং প্রেমের প্রস্তাব দিল। মেয়েটি কিছুই বললো না। এই ছেলের মতো মেয়েটিকে আরো বেশ কিছু ছেলে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে। সবাই শুধু তার রূপের প্রসংশা করে, বংশের প্রসংশা করে। মোটকথা এই মেয়ের মন পাওয়ার জন্য সবাই উদগ্রীব।
এখন সব ছেলেই মনে করছে সে ই মেয়েটির প্রেমিক। কিন্তু মেয়েটি সবাইকে শর্ত দিলো যে, সে ই তাকে পাবে যে সত্যিকারে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তার সামনে আসতে পারবে। যে তাকে এবং তার মা বাবা পরিবার পরিজনকে ভালোবাসবে এবং সৎ হবে নিষ্ঠাবান হবে কর্মিক হবে এবং ধার্মিক হবে। সেই ছেলেকেই এই মেয়ে স্বীকৃতি দিবে যে এইসব গুণ ধারণ করবে। এই কথা শোনার পরও কিছু কিছু ছেলে তাকে তোষামোদ করেই চলল। আর কেউ কেউ চেষ্টা করল তার নির্দেশিত কথা গুলো মেনে চলার। তার কথা মানতে গিয়ে যথেষ্ট কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে একটি ছেলে সেইসব শর্ত পূরণ করে মেয়েটির মন জয় করল। যদিও ছেলেটি সুদর্শন নয়। ছেলেটির মুখে তোষামোদী কোনো কথা নেই। যা সত্য তা ই বলে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই প্রসংশা করে। কিন্তু মেয়েটির সব শর্ত সে ই পূরণ করতে পেরেছে।
যেসব ছেলেরা মেয়েটিকে ভালোবাসে বলে দাবি করেছিল। তারা খুবই সুদর্শন ছিলো। তাদের তোষামোদে মেয়েটির মন গদগদ হয়ে যেত। কিন্তু যখনই মেয়েটি শর্ত জুড়ে দিল তখনই এইসব তোষামোদি ভালোবাসা পালিয়ে গেল। শেষপর্যন্ত সে ই টিকল যে সত্যিকারে মেয়েটিকে ভালোবেসে অনেক কষ্ট করে সব শর্ত পূরণ করল। তাহলে সত্যিকারের ভালোবাসা হচ্ছে সেটাই যে ভালোবাসা দিতে হলে এবং পেতে কষ্ট এবং ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। (এতে কি কারো দ্বিমত থাকতে পারে?)
এই যদি হয় দুনিয়ার ভালোবাসার নমুনা। তাহলে আখিরাতের ভালোবাসা কি আরও কঠিন হবেনা? অর্থাৎ যে ভালোবাসা দিলে আখিরাত পাওয়া যাবে সেটা অর্জন করতে কি কষ্ট বেশী হবেনা?
আরও একটু সহজ করে আরেকটি উদাহরণ দেই।
কোনো একজন বড় ব্যক্তিত্ব আপনার ঘরে অতিথি হয়ে আসল। আপনি উনার আগমনে চারদিকে অসম্ভব সুন্দর ফুলসজ্জ্বা, তোরণ, লাল গালিচা সংবর্ধনা ইত্যাদির আয়োজন করলেন। যখন উনি আসলেন আপনি মহাসমারোহে তাকে বরণ করলেন। যখন উনি বললেন আমি তো খুবই খুশী আপনি চমৎকার আয়োজন করেছেন। এখন আমার জন্য পানি দেন আমি একটু পরিষ্কার হই। কিন্তু আপনি পানির ব্যবস্থা করলেন না। বললেন আপনি এসেছেন আমি খুবই খুশি কিন্তু পানি তো দিতে পারবো না। এখন উনি বললেন ঠিক আছে তাহলে কিছু খেতে দিন। আপনি বললেন খাবার তো নেই কিন্তু আপনি এসেছেন আমরা খুবই খুশি। উনি বললেন আচ্ছা ঠিক আছে আমার বিশ্রামের ব্যবস্থা করুন। আপনি বললেন এটাও তো ব্যবস্থা করিনি। কিন্তু আপনি এসেছেন আমরা খুবই খুশি। এবার আপনারাই বলুন এই মহান ব্যক্তি কি ঐ লোকের উপর খুশী হবেন না বেজার হবেন?
উপরের ঘটনার মতোই হচ্ছে বর্তমান সুন্নীদের অবস্থা। শুনতে খারাপ লাগলেও আপনি প্রমাণ নিয়ে যান। সুন্নীরা দাবি করছে তারা রাসুলকে (সাঃ) ভালোবাসেন। ঐ মেয়েটির মতো। অর্থাৎ তোষামোদি করে। সুন্নীদের ভালোবাসার নমুনা হচ্ছেঃ নবী (সাঃ) হচ্ছেন নূরের তৈরি, তিনি গায়েব জানেন, তিনি হাজির নাজির, যিনি নবী তিনি খোদা ইত্যাদি বিশ্বাস। এই বিশ্বাস যারা করে তারা নবী (সাঃ) প্রেমিক। যারা করে না তারা নবীর (সাঃ) দুশমন। এখন কথা হচ্ছে এইসব বিশ্বাসের জন্য কি কোনো কষ্ট করতে হয়? ঐ মেয়েটিকেও সবাই এইরূপ তোষামোদি কথা বলেছিল। কিন্তু এইসব কথায় কি ভালোবাসার নমুনা? সত্যিকার ভালোবাসা হচ্ছে ত্যাগে। সবাই প্রেমিক দাবি করতে পারবে কিন্তু প্রেমিক হতে হলে সব শর্ত পূরণ করতে হবে।
অর্থাৎ রাসুল (সাঃ) এর প্রতি ভালোবাসার প্রকৃত নমুনা হচ্ছে তাঁর জীবনের আদর্শ। তিনি কেন পৃথিবীতে এসেছেন? কী তাঁর উদ্দেশ্য? তাঁর জীবনে কেন এতগুলো যুদ্ধ করতে হয়েছে? কেন তাঁকে মক্কা থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে? কেন তাঁর রক্ত ঝরেছে? তিনি সবাই কি প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দেশ দিয়ে গেছেন? যদি এইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই। তাহলেই আমরা বলতে পারব তাঁর জীবনের লক্ষ্য কী ছিলো এবং কেন তাঁকে আল্লাহ প্রেরণ করেছিলেন।
এখন যদি তাঁর আদর্শের তোয়াক্কা না করে শুধু ব্যক্তি রাসুলের (সাঃ) মনগড়া তোষামোদি ধারণা পোষণ করলেই কি নবী (সাঃ) প্রেমিক হওয়া যাবে? যাদের কাজে কর্মে আদর্শে ইসলামের ছিটেফোঁটা নেই তারা কীভাবে রাসুলের (সাঃ) প্রেমিক হতে পারে। বরং তারা দশজনের মতো প্রেমিক দাবি করতে পারবে। কিন্তু রাসুলের (সাঃ) সত্যিকারের প্রেমিক স্বীকৃতি তারাই পাবে যারা তাঁর শর্ত সমূহ মেনে নিয়ে তাঁকে ভালোবাসবে।
শতভাগ নিশ্চিতের সহিত বলতে পারি, যারা নিজেদের রাসুল প্রেমিক দাবি করে নতুন নতুন ধারণা আবিষ্কার করে রাসুলের (সাঃ) প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে তারা কখনোই সত্যিকারের প্রেমিক নয়। কেননা প্রকৃত প্রেমিক হতে হলে কষ্ট করতে হবে। মক্কায় যেমন রাসুল (সাঃ) মার খেয়েছিলেন। তেমনি সত্যিকারের ইসলামের কথা বললে এখনো মার খেতে হবে। মক্কার শাসকশ্রেণী যেমন ইসলাম মেনে নেয়নি। এখনো যদি শাসকশ্রেণী ইসলাম মেনে নেয় তাহলে সেটা সঠিক ইসলাম নয়।
কারণ জ্বর হলেই যেমন শরীর গরম হবে। ঠিক তেমনি সত্যিকারের ইসলাম পালন করলে রাসুলের (সাঃ) মতো মার খেতে হবে। আর এখন যারা সুন্নী দাবি করে নিজেদের মুসলিম বলে প্রচার করছে। তাদের সাথে শাসকশ্রেণীর দহরম মহরম। এইসব তথাকথিত সুন্নীরা পীর মাজার সাজিয়ে কত সুন্দর ব্যবসা বানিজ্য করছে। কেউ তাদের কোনো সমস্যা করছে না। তাহলে তারা কীভাবে সঠিক ইসলামের দাবিদার হতে পারে?
যেখানে সারাবিশ্বে মুসলিমদের অবস্থা খারাপ। সেখানে এইসব মাজার পূজারী মুসলিমদের আরও সরকারি ভাবে সাহায্য করা হয়। প্রশাসন তাদের নিরাপত্তা দেয়। তাহলে এটা কি রাসুলের (সাঃ) রক্ত ঝরা ইসলাম? এই সুবিধাবাদী ইসলামের জন্যই কি হাজার হাজার সাহাবী যুদ্ধের ময়দানে প্রাণ দিয়েছিলেন? এই ইসলামের কথাই কুরআন এবং হাদীসে বলা আছে? এই আদর্শের জন্য ই কি রাসুল (সাঃ) দুনিয়ায় এসেছিলেন?
এই যদি ইসলাম হয় তবে বিশ্বে কেন মুসলিম নিধন হচ্ছে? পীর মাজার নিয়ে পড়ে থাকলে তো কারো কিছু বলার নেই। যেমন আবু জাহেলের বিশ্বাস ছিলো এখন সুন্নীদের সেই বিশ্বাস। আমার কথা ভুল প্রমাণ করতে এখন থেকে ঘুরে আসুনঃ
আবু জাহেলের ইসলাম এবং আমরা
মোটকথা ইসলাম যখন এসেছিল তখন দুনিয়ায় আল্লাহর আইন ছিলো না। আল্লাহ রাসুল পাঠিয়েছেন আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এখনও দুনিয়ায় আল্লাহর আইন নেই। আর যারা রাসুলের (সাঃ) প্রেমিক দাবি করে নিজেদের মুসলিম বলবে তাদের প্রথম কাজ হলো যে কাজে রাসুল (সাঃ) দুনিয়ায় এসেছেন সেই কাজ আগে করা। কিন্তু এখন সুন্নীরা রাসুলের (সাঃ) নামে সুবিধাবাদী তোষামোদি করেই নিজেদের রাসুল (সাঃ) প্রেমিক দাবি করে। যা কখনোই রাসুল (সাঃ) কতৃক স্বীকৃত নয়। আল্লাহ যেজন্য ইসলাম দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন সেই কাজ আজ সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
শুধু তাইনয়, তোষামোদি ভালোবাসার নামে আল্লাহ তাওহীদের সাথে শির্কে লিপ্ত তারা। সুন্নীরা নব্য ঈদ চালু করে রাসুলের (সাঃ) জন্মদিন পালন করছে খ্রিস্টানদের মতো। তারা রাসুলের (সাঃ) ভালোবাসা দেখাচ্ছে বার্থডে পালন করে। অথচ সহীহ্ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত মুসলমানদের ঈদ হচ্ছে দুটি। ইসলামে বিধর্মীদের অনুসরণে কোনো ইবাদত পালন করা যাবে না। তারপরও সুন্নীরা ভালোবাসার ঠেলায় এইসব পালন করছে।
রাসুলের (সাঃ) আদর্শ নেই আবার দাবি করে নবী (সাঃ) প্রেমিক। কেউ সত্য কথা বললে হয়ে যায় নবীর (সাঃ) দুশমন। বাংলাদের পীর মুরিদ মাজার পূজাই যদি ইসলাম হয় -তবে রাসুল (সাঃ) আসার দরকার কী ছিলো? এইসব ই যদি ইসলাম হয় তাহলে বিশ্বের মুসলমাগণ মার খাচ্ছে কেন?
এটা খুবই সুস্পষ্ট যে শুধু রাসুলের (সাঃ) প্রতি মুখে ও অন্তরের বিশ্বাস দিয়েই কখনোই প্রেমিক সাব্যস্ত হবে না। যতক্ষণ না রাসুলের (সাঃ) সত্যিকার আদর্শ জীবনে ধারণ করা না যাবে। আসুন আমরা নামে নয় সত্যিকারের রাসুলের (সাঃ) এর প্রেমিক হওয়ার চেষ্টা করি। যদি এখনো এইসব ভ্রান্ত বিশ্বাস মনে ধারণ করি তাহলে রাসুলের এই হাদিস তাদের জন্য-
আবু হাসেম হতে বর্ণিত , তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন, “আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে, আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন: তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো: দূর হয়ে যা, দূর হয়ে যা” (সহীহ মুসলিম-৪২৪৩)
অর্থাৎ আল্লাহর দ্বীনে যারা বিভিন্ন ধারণা দিয়ে নতুনত্ব সৃষ্টি করলো তাদের রাসুল (সাঃ) কিয়ামতে তাড়িয়ে দিবেন। এবং তাদের সাথে রাসুল (সাঃ) এর মাঝে পর্দা পরে যাবে। তাহলে আপনারাই চিন্তা করুন রাসুলের (সাঃ) এর আদর্শ ছেড়ে নব্য সুবিধাবাদী আদর্শ নিয়ে ইসলাম পালন করলে তাদের কি রাসুল (সাঃ) ভালোবাসবেন নাকি তাঁর দুশমনে পরিনত হবে।
আরও জানতে পড়ুনঃ
ইলমে গায়েব
রাসুল (সাঃ) আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি
রাসুল (সাঃ) হচ্ছেন নূর
রাষ্ট্রীয় শির্ক
পীর (উপমহাদেশে পীরের বাস্তবতা)