সুফি সুন্নীরা ইসলামের শরিয়ত সম্পর্কে এমন এমন সব আকিদা পোষণ করে যা কখনোই ইসলাম স্বীকৃত নয়। এইসব ভ্রান্ত আকিদা সমূহ এমন যে, তা একজন ঈমানদারকে মুশরিকে পরিনত করে ঈমান হারা করে দেয়। এখন আমরা কুরআন এবং সহীহ্ হাদিসের আলোক সুফি সুন্নীদের শরিয়তের ঈমান সম্পর্কিত আকিদার জবাব পাওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
ঈমানের হ্রাস বৃদ্ধি ও নষ্ট হওয়াঃ
সুফিদের ঈমানের সংজ্ঞায় আল্লাহ্কে মুখে স্বীকৃতি এবং অন্তরে বিশ্বাস করলেই ঈমানদার হওয়া যায়। যেকেউ মুখে ও অন্তরে আল্লাহ্কে মেনে নেয় তার আমল করা না করা নিয়ে ঈমানের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ সুফিদের আকিদা অনুযায়ী কোনো মুসলমান একবার ঈমান আনলেই বা জন্মগতভাবে মুসলমান হলেই তার ঈমান আর বাড়ে কমে না। ঈমান আনার পর ঐ ব্যক্তি যতই পাপ করুক না কেন তার ঈমান ধ্বংস হবেনা। বরং সে পাপী হবে কিন্তু ঈমানের তারতম্য হবেনা। সুফিদের আকিদাতে আমল গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুফি অনুসারীরা যতই শিরক শিরক বিদআতসহ হাজারো পাপ করুক না কেন তাদের ঈমানের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হয়না।
অথচ আল্লাহ্ বলেন,
" মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে।" আল আনফাল[৮:২]
অনুরূপভাবে সূরা আত তওবা ১২৪ নং এবং আল ফাতহ ৪ নং আয়াতেও মুমিনের ঈমান বৃদ্ধির বিষয়টি এসেছে।
উপরোক্ত আয়াত গুলোতে আল্লাহ্ বিভিন্ন কারণে মুমিনের ঈমান যে বাড়ে সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অতএব ঈমান কখনোই স্থির কোনো বিষয় নয় যে একবার আনলেই তা একই থাকবে। ঈমান যেহেতু বৃদ্ধি হয় সেহেতু অবশ্যই ঈমান কমে বা নষ্ট হয়। যার কথা কুরআনে আছে।
আল্লাহ্ বলেন,
" অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে কিন্তু সাথে শিরিকও করে।" (সূরা ইউসুফ- ১০৬)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ স্পষ্ট করে বলেছেন,অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার সাথে সাথে শির্কও করে। অর্থাৎ তারা দাবি করে তারা ঈমানদার। কিন্তু তাদের কাজে কর্মে আকিদা বিশ্বাসে শির্ক বিদ্যমান। তাহলে ঈমান এনে কি শির্ক করা যাবে? বা শির্কযুক্ত ঈমান কি ঐ ব্যক্তির কোনো কাজে আসবে?
যদি কেউ ঈমান এনে শির্ক করে, তাহলে কি তার ঈমান আর গ্রহণযোগ্য হবে? বা ঈমান থাকার কারণে আল্লাহর কাছ থেকে যে সুবিধা পাওয়া যেতো সেই সুবিধা কি শির্ক করলে আর পাওয়া যাবে ? আমরা যদি কুরআনে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজি তাহলে আমরা দেখতে পায়- আল্লাহ্ বলেন,
" নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে।( আন নিসা ৪:৪৮)
উপরের আয়াতে আল্লাহ্ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলেন যে, যেকেউ ঈমান আনার পরে যেকোনো পাপ করলে আল্লাহ্ চাইলেই তার সেইসব পাপসমূহ ক্ষমা করে দিতে পারেন (দুনিয়ায় তওবা করতে না পারলেও) । কিন্তু তিনি কখনোই আল্লাহর সাথে শির্ক করার পাপ ক্ষমা করবেন না (যদি না দুনিয়ায় তওবা করে ক্ষমা না চায়)।
সুতরাং এর থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, ঈমান আনলেই যে আল্লাহর কাছে পার পাওয়া যাবে। বা ঈমান থাকার বা আনার কারণে যেসব সুবিধা আল্লাহর কাছ থেকে আখিরাতে পাওয়া যাবে বলে সুফিরা ধারণা করছে, তা কিন্তু সঠিক নয়। কেননা অধিকাংশ মুসলমান ঈমান আনার পরও শির্কে লিপ্ত হচ্ছে। আর যারাই শির্কে লিপ্ত হয় তাদেরকে আখিরাতে ক্ষমা করা হবেনা। শুধু তাইনয় শির্ক করার সাথে সাথে সে শুধু অন্যায় নয় বরং মহা অন্যায় করলো। যে অন্যায়ের শাস্তি হলো চিরস্থায়ী জাহান্নাম। আল্লাহ্ বলেন,
" নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই। (আল মায়িদাহ ৫:৭২)
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, শির্ক করলেই তার জন্য জান্নাত হারাম। অর্থাৎ সে কখনোই জান্নাতের সুগন্ধ পাবে না। অর্থাৎ তার চিরস্থায়ী জায়গা হবে জাহান্নাম।
অতএব, সুফিদের যে আকিদা ঈমান থাকলেই যে সে একদিন না একদিন জান্নাতে চলে যাবে। তা কখনোই সঠিক আকিদা নয়। কেননা বিভিন্ন আমল আকিদায় মুমিনের ঈমান বাড়ে কমে এবং নষ্ট হয়। সুতরাং সুফিবাদী ঈমানের আকিদা একটি ধ্বংসাত্মকমূলক আকিদা। সেইসাথে সুফিবাদ একটি ঈমান বিধ্বংসী মতবাদ।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
৯ মার্চ, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।