হেদায়েত কী, হেদায়েতের মাধ্যম কয়টি? কুরআনই কেন হেদায়েতের প্রকৃত মাধ্যম
পবিত্র কুরআন হচ্ছে বিশ্ববাসীর জন্য আল্লাহ প্রদত্ত অশেষ নিয়ামত। যার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর পরিচয় এবং বিশ্বজাহান সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছেন। যেখানে তিনি মানুষের জন্য করণীয় এবং বর্জনীয় বিষয়াদি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আর তাই প্রতিটি মানুষকে ইমান এনে সৎপথে চলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। এই সৎপথের নাম হচ্ছে হেদায়েত। আর পবিত্র কুরআন হচ্ছে সৎপথ পাওয়া তথা হেদায়েত পাওয়ার প্রকৃত মাধ্যম। আজ আমরা জানার চেষ্টা করব হেদায়েত কী এবং হেদায়েতের মাধম কয়টি। কুরআনই কেন হেদায়েতের প্রকৃত মাধ্যম।
হেদায়েত কী
হেদায়েতের অর্থ হলো পথপ্রদর্শন। অর্থাৎ কাউকে সৎপথ দেখানোর নামই হলো হেদায়েত। যা একমাত্র আল্লাহ নিজেই সরাসরি বান্দাকে করে থাকেন। হেদায়েত আল্লাহর একটি নিয়ামত। যার অপর নাম হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। একজন মুমিন যে পথে ও মতে চললে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে সেই সৎপথই হচ্ছে হেদায়েত।
আরও পড়ুন সুফিবাদী সুন্নীদের আকিদা সমূহ
হেদায়েত কার হাতে
হেদায়েত মূলত দুই স্তরের। প্রথম স্তর হচ্ছে ইমান আনা। অপরটি হচ্ছে ইমান এনে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো তথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহ বলেন,
"আর কারো ঈমান আনা হতে পারে না, যতক্ষণ না আল্লাহর হুকুম হয়। পক্ষান্তরে তিনি অপবিত্রতা আরোপ করেন যারা বুদ্ধি প্রয়োগ করে না তাদের উপর।" (সূরাঃ ইউনুস, আয়াতঃ ১০০)
অর্থাৎ আল্লাহ যাকে ইমান দিতে চান কেবল সে ছাড়া আর কেউ ইমান আনতে পারে না। তাহলে কারা ইমান আনতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ বলছেন, তারাই ইমান আনতে পারে, যারা আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে সত্য মিথ্যা যাচাই বাছাই করে। অর্থাৎ কোনো মানুষ নিজের জ্ঞান দ্বারা যাচাই বাছাই করলে আল্লাহ তাকে সঠিক জ্ঞানের দ্বারা ইমান আনতে সাহায্য করবেন।
হেদায়েতের দ্বিতীয় স্তর হলো ইমান এনে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিয়ে ইমান আমল আকিদার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাত অর্জন করা। আল্লাহ বলেন,
"অবশ্য যেসব লোক ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদেরকে হেদায়েত দান করবেন তাদের পালনকর্তা, তাদের ঈমানের মাধ্যমে।" (সূরাঃ ইউনুস, আয়াতঃ ৯)
অর্থাৎ আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন কেবলমাত্র সে ব্যক্তিই ইমান আমল তথা সৎকাজ করতে পারে। তাই তো আল্লাহ বলেন,
"আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, সেই তো সঠিক পথ প্রাপ্ত (হয়)। " (সুরা: বনী ইসরাঈল, আয়াত: ৯৭)
অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ যাকে নিজ হাতে সঠিক রাস্তা দেখিয়ে জান্নাতের পথে নিয়ে যাবেন কেবলমাত্র সে-ই হচ্ছে সঠিক হেদায়েত বা সৎপথ প্রাপ্ত। সুতরাং এই হেদায়েত সরাসরি আল্লাহর হাতে।
আরও পড়ুন ঈমান কী? পরিপূর্ণ ঈমানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা
হেদায়েতের মাধ্যম গুলো কী
আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে হেদায়েত তিনিই দিয়ে থাকেন। তবে তিনি স্বশরীরে কাউকে হেদায়েত দান করেন না। বরং তিনি বিভিন্ন মাধ্যমের দ্বারা মানুষকে হেদায়েত তথা পথপ্রদর্শন করে থাকেন। যেমন: নবি রাসুল, কুরআন, হাদিস, আলেম, ওলামা এবং ইসলামের দাঈ ইত্যাদি দ্বারা। অর্থাৎ যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর কাছে নবি রাসুল গিয়ে হেদায়েতের বাণী পৌঁছে দিয়েছে। সেই বাণী শ্রবণ করে যাদের অন্তরে আল্লাহ নিজেই হেদায়েত দিয়েছিলেন কেবল তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েছিল।
বর্তমান সময়ে যেহেতু নবি রাসুল নেই সেহেতু অন্যান্য মাধ্যম যেমন: কুরআন, হাদিস, আলেম, ওলামা এবং ইসলামের দাঈদের দ্বারা আল্লাহ হিদায়েতের কাজ জারি রেখেছেন। এই মাধ্যম গুলো থেকে সেই ব্যক্তিই প্রকৃত হেদায়েত পাবেন, যাকে আল্লাহ নিজে সঠিক জ্ঞান দ্বারা হেদায়েতের পথে নিয়ে আসবেন। এখন আমরা উপর্যুক্ত মাধ্যম গুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবো।
আরও পড়ুন সুফি সুন্নীদের বিভিন্ন আকিদা সম্পর্কিত জবাব
আলেম ওলামা এবং দাঈ ইলাল্লাহ
বর্তমান যুগে যেহেতু নবি রাসুল নেই সেহেতু নবি রাসুল আ: থেকে সরাসরি হেদায়েতের রাস্তা পাওয়া অসম্ভব। তবে কুরআন হাদিসের অধ্যায়নের মাধ্যমে অসংখ্য আলেম ওমামা এবং দাঈ ইলাল্লাহ তৈরী হচ্ছে। যারা রাসুলের প্রদর্শিত পথে কুরআন সুন্নাহর আলোকে মানুষকে সঠিক পথে আহবান করেন। এবং এদের দ্বারা আল্লাহ মানুষকে হেদায়েত দান করেন।
আরও পড়ুন কুরআনের আলোকে মানুষ সৃষ্টির কারণ
কুরআন ও হাদিসের জ্ঞান
আল্লাহ কুরআনকে নাযিল করেছেন একমাত্র মানুষের হেদায়েতের জন্য। আল্লাহ বলেন,
"আর আমি (হে মুহাম্মদ) আপনার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।" (সুরা আন-নাহল- ৮৯)
সুতরাং আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী কুরআন হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম, যা দ্বারা আল্লাহ মানুষকে পথপদর্শন করে থাকেন। সেইসাথে আল্লাহ আরও বলেন,
"তিনিই (আল্লাহ) তাঁর রাসুলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন " (সুরা: আল ফাতহ, আয়াত: ২৮)
অর্থাৎ আল্লাহ রাসুলুল্লাহ সা: কে আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন সত্য ধর্ম তথা ইসলামের পথে হেদায়েতের জন্য। একইসাথে আল্লাহ আরও বলেন,
"রাসুল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। "(সুরা: আল হাশর, আয়াত: ৭)অন্য আয়াতে বলেন,
"নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুল সা: এর জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” (সুরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১)
উপর্যুক্ত আয়াত গুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে হেদায়েত পাওয়ার জন্য একমাত্র পথ হলো, রাসুলুল্লাহ সা: কেই আদর্শরূপে গ্রহণ করা। রাসুলের আদর্শ হলো তাঁর অনুসরণ এবং অনুকরণ করা। আর রাসুলুল্লাহ সা: কে অনুসরণ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে তাঁর হাদিস এবং সুন্নাহ। সুতরাং যারা হাদিসের জ্ঞানার্জন করার চেষ্টা করবে তাদেরকে আল্লাহ নিজে হেদায়েতের রাস্তা দেখাবেন।
আরও পড়ুন শুধু অলি আউলিয়ারাই আল্লাহর অলি নয়
কোন মাধ্যমটি সর্বোচ্চ সঠিক
আমরা বুঝতে পারলাম যে, কুরআন, হাদিস, আলেম, ওলামা এবং ইসলামের দাঈদের দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের হেদায়েত দিয়ে থাকেন। এখন এইসব মাধ্যম গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সঠিক মাধ্যম কোনটি? যা আঁকড়ে ধরলে একজন ব্যক্তি সঠিক হেদায়েতের রাস্তা পাবে।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য আয়াতে ঘোষণা করেছেন, হেদায়েতের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তার পাশাপাশি এও ঘোষণা করেছেন, তিনি রাসুল এবং কুরআন পাঠিয়েছেন মানুষের হেদায়েতের জন্য। সুতরাং আল্লাহর অনুমতিতে রাসুল এবং কুরআন হলো মানুষের সরাসরি হেদায়েতের উপায় বা মাধ্যম।
যেহেতু রাসুল আমাদের মাঝে দৃশ্যমান নেই, সেহেতু তাঁর হাদিসই হচ্ছে তাঁর পক্ষে হেদায়েতের উপায়। সুতরাং কুরআন এবং হাদিসই হচ্ছে বর্তমান সময়ের হেদায়েতের প্রকৃত মাধ্যম। অর্থাৎ যে ব্যক্তি কুরআন এবং হাদিসের জ্ঞান অনুধাবন করবে আল্লাহ চাইলে সেই ব্যক্তিই প্রকৃতভাবে হেদায়েত প্রাপ্ত হবে।
কেন কুরআনই হেদায়েতের প্রকৃত মাধ্যম
পবিত্র কুরআনের ঘোষণা অনুযায়ী কুরআন এবং রাসুল হচ্ছেন হেদায়েত মাধ্যম। আল্লাহ বলেন,
"এবং নিশ্চিতই এটা (কুরআন) মুমিনদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত"। (সুরা: নমল, আয়াত: ৭৭)
অন্য আয়াতে বলেন,
"এমনিভাবে আমি সুস্পষ্ট আয়াত রূপে কোরআন নাযিল করেছি এবং আল্লাহ-ই যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করেন।" (সুরা: হাজ্জ্ব, আয়াত: ১৬) "
অর্থাৎ, কুরআন হচ্ছে মানব জাতির জন্য হেদায়েত স্বরূপ। যারাই কুরআন অনুধাবনের চেষ্টা করবে এবং যাদের তাকদিরে হেদায়েত থাকবে আল্লাহ তাদেরকে হেদায়েত দান করবেন। আর কুরআন বুঝতে হলে হাদিসের জ্ঞান প্রয়োজন। তাই যারাই হেদায়েত পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরআন হাদিসের চর্চা করবেন আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করবেন ইনশা-আল্লাহ।
কুরআনই হেদায়েতের প্রকৃত মাধ্যম |
আরও পড়ুন বিশ্বকাপ ফুটবল এবং আমাদের ঈমান আকিদা
ব্যক্তি কেন নয়
আমরা আগেই জেনেছি আলেম-ওলামা এবং ইসলামের দাঈরাও হেদায়েতের একটি মাধ্যম। তাহলে তারা কেন হেদায়েত প্রকৃত মাধ্যম নয়? এই প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ বলেন,
"হে ইমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসুলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক (নেতা, পীর -আউলিয়া, আলেম-ওলামা, উস্তাদ, দাঈ ইত্যাদি) তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক।" (সুরা: আন নিসা, আয়াত: ৫৯)
উপর্যুক্ত আয়াতে আল্লাহ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলেন যে, নির্দেশ মানতে হবে আল্লাহর তথা কুরআনের, আর মানতে হবে রাসুলকে তথা সহিহ হাদিসকে। সেইসাথে মানতে হবে নেতৃত্বদানকারীদের তথা নেতা, পীর-আউলিয়া, আলেম-ওলামা, উস্তাদ, বুজুর্গ, দিনের দাঈ ইত্যাদির। যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়, অর্থাৎ দিনের হুকুম আহকাম ও দুনিয়ার যেকোনো বিষয়ে পরস্পরে মতপার্থক্য হলে, তা আল্লাহ ও রাসুলের দিকে তথা কুরআন ও সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে দাও।
অর্থাৎ দুনিয়ার সকল আলেম, ওলামা, পীর, বুজুর্গসহ সকল নেতৃত্বদানকারীদের ততক্ষণ পর্যন্ত মানা যাবে, যতক্ষণ তারা কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক চলবে। তারমানে শুধুমাত্র আলেম-ওলামাদের নিঃশর্তভাবে মানা যাবে না। শুধু আলেম বা দাঈদের অনুসরণ করলেই আল্লাহ প্রকৃত হেদায়েত দিবেন না। কেননা আল্লাহ ও রাসুল বলে দিয়েছেন ইসলামে অসংখ্য পথ ও মতের সৃষ্টি হবে। যার সবগুলোই সঠিক নয়। তাই কোন ধারা সঠিক ও নির্ভুল তা জানতে হলে অবশ্যই কুরআন হাদিসের সাহায্য যাচাই বাছাই করতে হবে।
অতএব কোনো মানুষ যখন হেদায়েতের অন্যান্য মাধ্যম (আলেম-ওলামা, দাঈ ইত্যাদি) দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে সঠিক পথ পাওয়ার চেষ্টা করে, তখন তাকে কুরআনের দিকে ফিরে আসতে হবে। আর আল্লাহ তাকে তখনই প্রকৃত হেদায়েত দিবেন যখন সে কুরআনের দ্বারা প্রকৃত হেদায়েত তথা সঠিক পথ পাওয়ার চেষ্টা করবে। আর তাই আল্লাহ কুরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে বলেন,
"আমি কোরআনকে বোঝার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?" (সুরা ক্বামার ৫৪:৩২ )
অর্থাৎ পৃথিবীতে অসংখ্য পথ থাকলেও সঠিক পথ কোনটা তা বোঝার জন্য কুরআনকে সহজ করে নাযিল করা হয়েছে। যাতে যেকেউ যেকোনো কিছু বুঝতে চাইলে আল্লাহ অবশ্যই তাঁর প্রকৃত হেদায়েত দ্বারা তাকে সঠিক জ্ঞান দিবেন। একইসাথে কুরআন চর্চার মাধ্যমে একজন সাধারণ মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারবে, কোন আলেম ওলামা সঠিক এবং কোন আলেম ওলামা ভুল।
যেমন কুরআনে অসংখ্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে সকল নবি রাসুলরা (আ:) হচ্ছেন মানুষ। তিনি মানুষের জন্য মানুষকে নবি রাসুল করে পাঠিয়েছেন। তাই আমাদের রাসুলুল্লাহ সা: ও একজন মানুষ। অথচ অধিকাংশ আলেম ওলামা প্রচার করেন রাসুল আল্লাহর নিজস্ব নূরে তৈরী। এখন যে ব্যক্তি সঠিক হেদায়েত চায় তাকে অবশ্যই কুরআনের দিকে ফিরে আসতে হবে। এবং যাচাই করতে হবে আসলেই কুরআনে কী লেখা আছে?
যখন সে হেদায়েতের উদ্দেশ্যে কুরআনের কাছে আসবে, তখন আল্লাহ তাঁর প্রকৃত হেদায়েত দ্বারা তার জন্য কুরআনকে সহজ করে দিবেন। এবং সে যখন চেষ্টা করে কোথাও রাসুল আল্লাহর নূরের তৈরি লেখা পাবে না। তখন আল্লাহই তাকে হেদায়েত দিবেন যদি তাকদিরে থাকে। এবং সে সত্য মেনে নিতে পারবে যে, রাসুল একজন মানুষ।
এখন তার তাকদিরে হেদায়েত না থাকলে, তাকে যতই বোঝানো হোক না কেন সে কখনোই কুরআনের কাছে ফিরে এসে সত্য যাচাই করবে না। ফলে সে রাসুলকে আল্লাহর নিজস্ব নূর ভেবে শিরক করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে। তার ইমান থাকার পরও শিরক করার কারণে কিয়ামতে সে ক্ষমা পাবে না। কেননা আল্লাহ বলেন,
"নি:সন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে।" (সুরা: আন নিসা, আয়াত: ৪৮)
সুতরাং যে বা যারা শিরক করে তার কোনো ক্ষমা নেই দুনিয়ায় তাওবা করা ছাড়া। যারা যাচাই বাছাই ছাড়া শুধুমাত্র এক পক্ষ আলেম ওলামাদের কথা শুনে ধর্ম পালন করে। তারা কখনোই প্রকৃত হেদায়েত পাবে না যদি ঐ আলেম ওলামারা গোমরাহী হয়।
অতএব ব্যক্তি কখনোই ইসলামের প্রকৃত মানদন্ড নয়। ইসলামের প্রকৃত মানদন্ড হলো কুরআন ও হাদিস। এছাড়াও ব্যক্তি আলেম ওলামারা যেকোনো সময় শয়তানের প্ররোচনায় ইমান আকিদা নষ্ট করে ফেলতে পারে। সেই সময় তাদের কথা অন্ধভাবে মেনে নেওয়া যাবে না। যখনই কোনো আলেম ওলামার কথায় সন্দেহ পাওয়া যাবে তখনই সঠিকটা জানার জন্য প্রকৃত হেদায়েত তথা কুরআন হাদিসের দিকে ফিরে যেতে হবে। তখনই আল্লাহ তার প্রকৃত হেদায়েত দ্বারা তাকে উদ্ধার করবেন।
ব্যক্তি, পীর, অলি, আউলিয়ারা কখনোই হেদায়েতের মালিক নয় |
আরও পড়ুন শিরক কী? মানুষ কীভাবে শিরক করে
বিবেক বুদ্ধিই আসল হেদায়েত
প্রতিটি বান্দাকে আল্লাহ জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি ইত্যাদি সরাসরি দিয়ে থাকেন। সেই বিবেক বুদ্ধিই তার জন্য বড় হেদায়েতের উপায়। আল্লাহ বলেন,
"অত:পর আল্লাহ যাকে পথ-প্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন।" (সুরা: আল আনআম, আয়াত: ১২৫)
অর্থাৎ যাকে আল্লাহ পছন্দ করেন তার অন্তরকে ইসলামের জন্য উপযুক্ত করে দেন। তখন সে সত্য মিথ্যা যাচাই করে সঠিক পথে নিজেকে পরিচালিত করতে পারে। আর যাকে আল্লাহ পরিপূর্ণ হেদায়েত দেন না তার অন্তর তথা বিবেক বুদ্ধিকে সংকীর্ণ করেন। ফলে সে যা শুনে বা বুঝে বা দেখে তাকেই সত্য মনে করে। কেউ তার ভুল ধরিয়ে দিলেও সে তা অগ্রাহ্য করে। ফলে সে আল্লাহর প্রকৃত হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হয়।
আরও পড়ুন তাওহিদ কী কীভাবে আল্লাহর তাওহিদ ক্ষুন্ন হয়
একটি ভ্রান্তির অবসান
সুফি সুন্নিরা দাবি করেন হেদায়েতের মালিক আল্লাহ হলেও প্রকৃত হেদায়েতকারী হচ্ছেন তাদের পীর, অলি-আউলিয়ারা। তারা দলিল হিসাবে কুরআনের একটি আয়াত দেয়। যেখানে আল্লাহ বলেন,
"আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না।" (সুরা: কাহফ, আয়াত: ১৭)
এই আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে সুফিরা দাবি করে, আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন তার জন্য পীর ধরার ব্যবস্থা করেন। অথচ এই আয়াতের কোথাও আকার ইঙ্গিতেও এমন কথা বলা হয়নি।
এখানে আল্লাহ এটাই স্পষ্ট করতে চেয়েছেন যে, হেদায়েত একমাত্র আল্লাহর হাতে। যাকে তিনি হেদায়েত দেন নাই সে যতই পীর আউলিয়া ধরুক না কেন, যদি আল্লাহ তার বিবেক বুদ্ধি ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে না দেন; তাহলে সেই পীর আউলিয়ারাও তাকে হিদায়াত দিতে পারবে না।
সুফি সুন্নিদের দাবি সত্য মেনে নিলেও তাদের দাবি ভুল। কেননা সুফি সুন্নিদের মধ্যেই রয়েছে লক্ষ হাজার পীর আউলিয়া। যারা একে অপরের বিপরীত। সুতরাং তাদের হেদায়েতের মাধ্যম মনে করা অনর্থক। এছাড়াও তাদের পীরতন্ত্রের বিষয়টি কুরআন হাদিসের বিরোধী। শুধু তাইনয় তাদের ইমান আকিদাও কুরআন এবং সুন্নাহর সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা আগেই জেনেছি ব্যক্তি কেন হিদায়েতের মাধ্যম নয়। আর এটা তখনই একজন মানুষ জানতে পারবে যখন আল্লাহর প্রকৃত হেদায়েতের মাধ্যমে কুরআন দ্বারা পীর আউলিয়াদের পরীক্ষা করা হবে।
উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারলাম আল্লাহর পক্ষ থেকে হেদায়েতের অসংখ্য মাধ্যম থাকলেও প্রকৃত হেদায়েতকারী হচ্ছেন আল্লাহ। একমাত্র তিনি-ই যাকে হেদায়েত দিবেন কেবলমাত্র সে-ই সঠিক হেদায়েত তথা সৎপথ প্রাপ্ত হবে। আর দুনিয়ায় আল্লাহর হেদায়েত পাওয়ার সবচেয়ে প্রকৃত মাধ্যম হলো কুরআন। সুতরাং যারা কুরআনের জ্ঞান সঠিকভাবে অর্জন করতে পারবে (তাকদির থাকলে) কেবল তারাই আল্লাহর হেদায়েত পাবে।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
৩ এপ্রিল, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।
ট্যাগ সমূহ
আল্লাহর হেদায়েত পাওয়ার উপায়
আল্লাহ কীভাবে হেদায়েত দান করেন
কুরআনই হেদায়েতের প্রকৃত মাধ্যম