কুরআন বিমুখীতার পরিনতি
আমাদের উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে একধরনের কুরআন ভীতি রয়েছে। অর্থাৎ এরা কুরআনকে ভয় পায় এমন নয়। বরং কুরআনকে জানার চেষ্টা করে না এইজন্য যে, নিজেরা কুরআন জানার চেষ্টা করলে গোমরাহ হয়ে যাবে এই ভয়ে।
সোজাকথা হচ্ছে, আমাদের সমাজে কুরআন নিজে পড়ে কেউ জানতে চাইলে বা জানার চেষ্টা করলে সে গোমরাহ হয়ে যাবে এমন বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে। যে কারণে সাধারণ মানুষ কুরআন জানার চেষ্টা করে না। বরং মানুষের মুখে ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় কথা শুনতে অভ্যস্ত। যারফলে মুসলমানদের অধিকাংশই কুরআন বিমুখ।
এরফলে সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে সত্যিকারের ইসলাম প্রবেশ করার সুযোগ হয়নি। যেকারণে আমাদের উপমহাদেশে যে ইসলাম চালু হয়েছে তা সম্পূর্ণ কুরআন এবং সুন্নাহ বিরোধী। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের সমাজে ধর্মীয় ব্যাপক নিম্নোক্ত ক্ষতি সাধন হয়েছে।
আরও পড়ুন কুরআনের আলোকে মানুষ সৃষ্টির কারণ
ঈমান হারাঃ
কুরআনের সঠিক শিক্ষা তথা কুরআন না জানার কারণে আমাদের ঈমান সঠিক স্থানে নেই। আমরা মনে করি জন্মগত মুসলমান হলেই বুঝি আমরা ঈমানদার। কিন্তু কুরআনের শিক্ষা হলো ঈমান আনার বিষয়। ঈমান জন্মগত পাওয়া কোনো বিষয় নয়। শুধু তাইনয় ঈমানের হ্রাস বৃদ্ধিও ঘটে। আল্লাহ্ বলেন,
" মরুবাসীরা বলেঃ আমরা ঈমান এনেছি। (হে রাসুল) বলুনঃ তোমরা ঈমান আনোনি ; বরং বল, আমরা বশ্যতা স্বীকার করেছি। এখনও তোমাদের অন্তরে ঈমান জন্মেনি। যদি তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য কর, তবে তোমাদের কর্ম বিন্দুমাত্রও নিস্ফল করা হবে না। নিশ্চয়, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান। (সূরাঃ আল হুজরাত, আয়াতঃ ১৪)
অর্থাৎ মুখে কালেমা পড়লেই মুসলিম হওয়া যায় না। বরং তা অন্তরে স্বীকার এবং কাজে তথা আমল দ্বারা প্রমাণিত করার নামই হলো প্রকৃত ঈমান। কুরআন না জানার কারণে অধিকাংশ মুসলমান মনে করেন, ঈমান যেহেতু আছে অবশ্যই একদিন না একদিন জান্নাতে চলে যাবো। আমল করছি না তো কী হয়েছে! আল্লাহ্ বলেন,
" যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন (তাদের সামনে) আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন তাদের অন্তর ভীত হয়ে পড়ে । আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কুরআন , তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে। "(আল-আনফাল, আয়াতঃ ২)
অর্থাৎ সত্যিকারের মুমিনের সামনে যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। ঠিক তদ্রুপভাবে যখন আমরা কুরআন বিরোধী কাজে যখন জড়িয়ে পড়বো তখন আমাদের ঈমানও ঠিক থাকবে না।
কুরআনে এমন এমন বিধানের কথা আল্লাহ্ উল্লেখ করেছেন, যেগুলো আমরা না জেনেই বিরোধিতা করছি। অর্থাৎ আমাদের জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে আমরা জানতে পারিনা যে, যেসব কাজ করছি আসলে তা কুরআন এবং আল্লাহ্ বিরোধী। এইসব কুরআন বিরোধী কাজ আমাদের ঈমানহারা করে দিচ্ছে সেটা আমরা বুঝতে পারছি এখনো।
তাওহীদ সম্পর্কে না জানাঃ
কুরআন এসেছে আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠার নিদর্শন হিসাবে। তাওহীদ হচ্ছে আল্লাহর একত্ববাদ। অর্থাৎ আল্লাহ্ এক ও অদ্বিতীয় এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।আল্লাহ্ রাসুল সাঃকে পাঠিয়েছেন তাওহীদের বাণী প্রচার করার জন্য। এই তাওহীদের বাণী রয়েছে পবিত্র কুরআনে। অথচ আমরা কুরআন জেনে না পড়ার কারণে এখনো অধিকাংশ মানুষ জানেই না "তাওহীদ " বিষয়টা কী?
তাওহীদ না জানার কারণে আমরা অধিকাংশ মুসলমানই তাওহীদ বিরোধী কাজ করে চলেছি প্রতিনিয়ত। অথচ আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে তাওহীদের বাণী প্রচার করছেন। সেই কুরআন আমরা জানি না বিধায় তাওহীদও জানতে পারছি না। আল্লাহ্ বলেন,
"(হে রাসুল) বলুন আল্লাহ্ এক এবং তিনি অমুখাপেক্ষী।" (সূরা ইখলাস আয়াত ১,২)
" আর তোমাদের ইলাহ এক এবং একমাত্র ইলাহ আল্লাহ্। তিনি ছাড়া মহা করুণাময় দয়ালু কেউ নেই "।(সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৬৩)
সুতরাং আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো মাবুদ, ইলাহ, উপাস্য, পালনকর্তা, সৃষ্টিকর্তা, আইনদাতা ইত্যাদি কেউ নেই।
শির্কে লিপ্তঃ
আল্লাহর বিধানে সবচেয়ে বড় পাপ হলো শির্ক করা। শির্কের অর্থ হলো আল্লাহর সাথে অংশীদার করা। অর্থাৎ আল্লাহর প্রভুত্ব, ইবাদত, গুণাবলী এবং বিধিবিধানের সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করা।
(বিস্তারিত)
আল্লাহ্ বলেন,
"আর ইবাদত কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে"। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৩৬)
সুতরাং আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডাকা সাহায্য কামনা করা বা তাঁর সমকক্ষ মনে করে অংশীদার করা যাবে না। আল্লাহ্ বলেন,
" নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। " (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ৪৮)
এখানে সুস্পষ্ট যে, শির্কের পাপ আল্লাহ্ কখনোই ক্ষমা করবেন না তওবা ছাড়া। অন্যান্য যেকোনো পাপ আল্লাহ্ চাইলেই ক্ষমা করে দিতে পারেন। কুরআনের শিক্ষা না জানার কারণে আমাদের অধিকাংশ মুসলমানই জানে না "শির্ক "কী। কী করলে শির্ক হয়? কীভাবে শির্ক হয়ে যায় ইত্যাদি
অথচ আল্লাহ্ যুগে যুগে হাজার হাজার নবী রাসুল পাঠিয়েছেন শুধুমাত্র শির্কের বিনাশ করে তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য। শির্কের বিরুদ্ধে আল্লাহর হুশিয়ারি,
" (হে রাসুল) আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের পতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরীক স্থির করেন, তবে আপনার কর্ম নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের একজন হবেন। "(সূরাঃ আল-যুমার, আয়াতঃ ৬৫)
উপরোক্ত আয়াতে রাসুল সাঃসহ সকল নবী রাসুলদের প্রতি আল্লাহ্ শির্কের ব্যাপারে হুশিয়ারি দিয়েছেন। যেখানে শিক্ষার জন্য রাসুলদের আল্লাহ্ সাবধানতা দিচ্ছেন, সেখানে আমরা আল্লাহর নগন্য বান্দা হয়ে কীভাবে আল্লাহর সাথে শির্ক করতে পারি?
অতএব কুরআন পড়ে জেনে তবেই আমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবো। নতুবা নিজেদের অজান্তেই শির্কে জড়িয়ে নিজেদের ঈমান আমল ধ্বংস করে দিবো।
বিদআতে লিপ্তঃ
পবিত্র কুরআন না জানার কারণে আমরা প্রতিনিয়তই বিদআতে লিপ্ত হচ্ছি। আমাদের অধিকাংশ মুসলমানই জানে না বিদআত কী? কী এবং কীভাবে ইবাদত করলে বিদআত হবে। বিদআত করলে আমাদের কী ক্ষতি? যদি বিদআত করি তাহলে আমাদের পরিনতি কী হবে ইত্যাদি।
বিদআত হচ্ছে এমন ইবাদত যা রাসুল সাঃ সাহাবী, তাবেয়ী, তবেতাবেয়ী রাঃগণ করেননি। এখন আমরা কুরআনের শিক্ষা না পাওয়ার কারণে জানি না যে এইসব নতুন নতুন ইবাদত তথা বিদআত ইসলামে নিষিদ্ধ। আল্লাহ্ বলেন,
"রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।" (সূরাঃ আল হাশর, আয়াতঃ ৭)
অতএব রাসুল সাঃ যা শিক্ষা দিয়ে গেছেন তা ই আমাদের গ্রহণ করতে হবে পালন করতে হবে। যা তিনি নিষেধ করেছেন তা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।
পবিত্র হাদীসে এসেছে, আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশনা নেই, তা পরিত্যাজ্য’ (মুসলিম হা/১৭১৮)।
জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও ছালাতের পর বলেন, ‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হ’ল দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হ’ল ভ্রষ্টতা’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)। আর নাসাঈতে রয়েছে, ‘প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম’ (নাসাঈ হা/১৫৭৮)।
উপরোক্ত হাদিসে খুবই কঠোরভাবে রাসুল সাঃ দ্বীনের মধ্যে ইবাদতের ক্ষেত্রে নতুন এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন। শুধু তাই নয় যদি এমন কিছু করা হয় তবে তা বাতিল এবং তার পরিনতি জাহান্নাম।
আরও পড়ুন শিরক কী? মানুষ কীভাবে শিরক করে
সুন্নাহর বিরুদ্ধাচরণঃ
পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে যে রসুলুল্লাহ সাঃএর অনুসরণ করাই প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব। একমাত্র রাসুলুল্লাহরই আদর্শে আদর্শিক হয়ে ইসলামে জীবনযাপন করতে হবে। তাহলে আল্লাহ্ আমাদের সকল ইবাদত বন্দেগী এবং পাপের ক্ষমা করবেন।
আমাদের কুরআনের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে সুন্নাহর অনুসরণ তো দূরের কথা, নিজেদের অজান্তেই রাসুলুল্লাহ সুন্নাহর বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত। যে কর্মকাণ্ডের জন্য আমরা কখনোই রাসুলুল্লাহ সুপারিশ পাবো না। আল্লাহ্ বলেন,
" নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহর জীবনের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ; যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে"। (সুরা আহযাব : আয়াত ২১)
সুতরাং অনুসরণ হবে রাসুলুল্লাহ সাঃএর যদি আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ঈমান রাখি।
আরও পড়ুন বিশ্বকাপ ফুটবল এবং আমাদের ঈমান আকিদা
রাসুল সাঃ হচ্ছে সর্বোত্তম জীবনাদর্শ বিস্তারিত
রাসুল সম্পর্কে ভ্রান্ত আকিদাঃ
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাইলে রাসুলুল্লাহ সাঃএর অনুসরণ করতে হবে। অথচ আমরা জানিই না কীভাবে আল্লাহর ভালোবাস পাওয়া যায় বা কারা আল্লাহর ভালোবাসা পায়। আল্লাহ্ বলেন,
"(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু"। (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
উপরোক্ত আয়াতে যেখানে বলা হচ্ছে আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে রাসুল সাঃএর অনুসরণ প্রয়োজন। এখন আমরা কুরআন না জানার কারণে রাসুলুল্লাহ সাঃএর অনুসরণ তো দূরের কথা, তাঁর কথা কাজ আকিদা ইত্যাদি সবকিছুর সুস্পষ্ট বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছি।
আল্লাহ্ মুহাম্মাদ সাঃকে পাঠিয়েছেন যথেষ্ট শান শওকত এবং সম্মান দিয়ে। আল্লাহ্ রাসুল সাঃএর স্বপক্ষে অসংখ্য কুরআনের আয়াত নাযিল করেছেন। আমরা কুরআন না জানার কারণে সেইসব আয়াত সম্পর্কে অবগত নই।
যারফলে রাসুল সাঃ সম্পর্কে আমাদের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত আকিদার সৃষ্টি হয়েছে। যারা এইসব আকিদা আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, তারা তাদের নিজেদের স্বার্থেই এইসব করেছেন। কিন্তু আমরা কুরআন না জানার কারণে সেইসব ভ্রান্ত আকিদা এখনো পোষণ করছি।
এইসব আকিদা গুলো এতই মারাত্মক যে তা আল্লাহর সাথে রাসুল সাঃকে সমকক্ষ বানিয়ে দেয়। যা সম্পূর্ণ তাওহীদ, কুরআন এবং ইসলাম বিরোধী।
আল্লাহ্ সম্পর্কে অজ্ঞতাঃ
আমাদের উপমহাদেশে সূফিদের দ্বারা ইসলাম প্রচার হওয়ার কারণে, এখানে কুরআন এবং হাদিসের জ্ঞানের চর্চা হয়ে উঠেনি। সাধারণ মানুষ মৌলানা এবং হুজুরদেরই প্রাধান্য দিয়ে ধর্ম কর্ম পালন করে।
যারফলে আমরা ধর্মীয় ধারণা নিই শুধুমাত্র মৌলানা বা হুজুরদের থেকে। তারা যে যা বলেন তা ই আমরা বিশ্বাস করি। এই অন্ধ বিশ্বাসের ফলে বিভিন্নজন বিভিন্ন মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে প্রকৃত ইসলাম সম্পর্কে অবগত হতে পারে না।
সঠিক ইসলাম সম্পর্কে জানতে হলে ইসলামের যে মূল কিতাব তথা "কুরআন " জানতে হবে। কিন্তু ধর্মীয় বক্তাদের ভয়ভীতির কারণে সাধারণ মানুষ কুরআন জানার চেষ্টা করে না।
যারফলে আল্লাহ্ সম্পর্কেও আমাদের সঠিক জ্ঞান এখনো অর্জন হয়নি। আমাদের সমাজে অধিকাংশ মানুষের ধারণা আল্লাহ্ সর্বত্র বিরাজমান! যা সম্পূর্ণ হিন্দুদের আকিদা। অথচ কুরআনে আছে আল্লাহ্ সপ্তম আসমানে এবং আল্লাহ্ জ্ঞান রয়েছে সর্বত্র।
আল্লাহ্ বলেন,
" নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি তৈরী করেছেন আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি কার্য পরিচালনা করেন। " (সূরাঃ ইউনুস, আয়াতঃ ৩)
" তিনি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের অন্তর্বর্তী সবকিছু ছয়দিনে সৃস্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। " (সূরাঃ আল-ফুরকান, আয়াতঃ ৫৯)
" আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি মহা আরশের মালিক। " (সূরাঃ নমল, আয়াতঃ ২৬)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ নিজেই বলছেন তিনি আরশে অধিষ্ঠিত এবং তিনিই আরশের মালিক।
আল্লাহ্ বলেন,
" তিনিই উপাস্য নভোমন্ডলে এবং তিনিই উপাস্য ভুমন্ডলে। তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ "।(সূরাঃ যুখরুফ, আয়াতঃ ৮৪)
" তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন। " (সূরাঃ আল হাদীদ, আয়াতঃ ৪)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ জানিয়ে দিলেন যে, তিনি আসমান জমিন সবকিছুরই আল্লাহ্ এবং উপাস্য এবং তিনিই সর্বজ্ঞ। অর্থাৎ তিনি সবকিছু সম্পর্কে অবগত। আমরা যা ই করি না কেন তিনি তা দেখেন এবং জানেন।
কুরআনের সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে আমরা আজ সঠিক ইসলাম থেকে দূরে আছি। যা সরাসরি ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক।
দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতাঃ
আমরা মানুষের মুখে রূপকথার গল্পের মতো ওয়াজ মাহফিলে ইসলামের নামে গল্পকাহিনী শুনতে অভ্যস্ত। অধিকাংশ ওয়াজ মাহফিলই হয় বিভিন্ন কল্পকাহিনীর উপর ভিত্তি করে। যেখানে ঈমান আকিদার উপদেশ থাকে না। যারফলে ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে জানতে পারে না। আল্লাহ্ বলেন,
‘"তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা (গবেষণা) করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা বদ্ধ রয়েছে?” (সূরা মুহাম্মদ-২৪)
অন্য আয়াতে বলেন,
"আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? " (সূরাঃ আল ক্বামার, আয়াতঃ ১৭)
যেখানে আল্লাহ্ বলেন জানার জন্য কুরআন সম্পর্কে তোমরা গভীর গবেষণা করো। সেইসাথে বলা হচ্ছে বুঝার জন্য আল্লাহ্ কুরআনকে সহজ করে দিয়েছেন। সেখানে আমরা কুরআন জানার জন্য বুঝার জন্য কোনো চেষ্টাই করি না। কুরআনের জ্ঞান না থাকার কারণে আমরা অধিকাংশ মুসলমানই দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ।
এই অজ্ঞতার কারণে আমাদের ঈমান আকিদা আমল সবকিছু আজ ভূলুন্ঠিত। আজ কুরআনের জ্ঞানের চর্চা না থাকার কারণে আমরা নিজেরাই জানি না যে ঈমান কী আকিদা কী আমল কী ইত্যাদি। অথচ আল্লাহ্ বলেন,
"যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতেও সে ক্ষতিগ্রস্ত।"(সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ৮৫)
যেখানে ইসলাম ছাড়া আল্লাহ্ কিছুই গ্রহণ করবেন না। সেখানে ইসলাম জানাটা প্রতিটি মুসলিমের জন্য ফরজ। আর তা কুরআন ছাড়া কখনোই পরিপূর্ণভাবে লাভ করা সম্ভব নয়। আল্লাহ্ বলেন,
" এই কোরআন এমন পথ প্রদর্শন করে, যা সর্বাধিক সরল এবং সৎকর্ম পরায়ণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে মহা পুরস্কার রয়েছে। " ( সূরাঃ বানি-ইস্রাইল, আয়াতঃ ৯)
পূর্ববর্তী জাতি ধ্বংস সম্পর্কে অজ্ঞতাঃ
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে অসংখ্য জাতির অসংখ্য ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। যেখানে তাদেরকে দেওয়া আল্লাহর নিয়ামতের কথা আজাবের কথা ইত্যাদি রয়েছে। এইসব ইতিহাস আল্লাহ্ এইজন্যই বলেছেন যাতে তাদের কথা শুনে আমরা নিজেদের সংশোধন করি।
অথচ আমরা কুরআন না জানার কারণে সেইসব ইতিহাসও জানার সুযোগ হয়না। যারফলে আমরাও অতীতের বিভিন্ন বর্বর জাতির মতো অসংখ্য পাপে লিপ্ত হচ্ছি। যার শাস্তি আল্লাহ আমাদের জন্য অবধারিত করে রেখেছেন।
আমাদের ওয়াজ মাহফিলে সেইসব কুরআনের ইতিহাসে পরিবর্তে অন্যান্য লোককাহিনী বেশী শোনা যায়। যেসব কাহিনীতে ঈমান আমলের কোনো সুযোগ থাকে না। শুধু শ্রুতিমধুর কাহিনী শুনে রাত পার করা ছাড়া।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বর্ণনা করেন,
" আপনার কাছে তাদের ইতিবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বর্ণনা করছি। তারা ছিল কয়েকজন যুবক। তারা তাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল এবং আমি তাদের সৎপথে চলার শক্তি বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। " (সূরাঃ কাহফ, আয়াতঃ ১৩)
" এ ছিল আদ জাতি, যারা তাদের পালনকর্তার আয়াতকে অমান্য করেছে, আর তদীয় রসূলগণের অবাধ্যতা করেছে এবং প্রত্যেক উদ্ধত বিরোধীদের আদেশ পালন করেছে। " (সূরাঃ হুদ, আয়াতঃ ৫৯)
" যেন তাঁরা কোনদিনই সেখানে ছিল না। জেনে রাখ, নিশ্চয় সামুদ জাতি তাদের পালনকর্তার প্রতি অস্বীকার করেছিল। আরো শুনে রাখ, সামুদ জাতির জন্য অভিশাপ রয়েছে। "(সূরাঃ হুদ, আয়াতঃ ৬৮)
" এমনিভাবে আমি পূর্বে যা ঘটেছে, তার সংবাদ আপনার কাছে বর্ণনা করি। আমি আমার কাছ থেকে আপনাকে দান করেছি পড়ার গ্রন্থ। " (সূরাঃ ত্বোয়া-হা, আয়াতঃ ৯৯)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ বিভিন্ন জাতি সম্পর্কে কুরআনে তাদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। যাতে তাদের পাপের পরিনতি দেখে আমরা শিক্ষা নিতে পারি।
আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণঃ
পবিত্র কুরআনের বিধি নিষেধ না জানার কারণে আমরা অনেক কাজই করছি সরাসরি আল্লাহ বিরোধী। যেসব কাজ আল্লাহ্ নিষেধ করেছেন সেইসব কাজ আমরা করছি নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণে অথবা বাপ দাদার অনুসরণে। আর যেসব কাজ আল্লাহ্ বলেছেন আমাদের করতে সেইসব কাজ থেকে আমরা হয়ে পড়ছি গাফেল। এরফলে আমরা প্রতিনিয়তই আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত হচ্ছি। আল্লাহ্ বলেন,
" যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান এবং রসূলের দিকে এস, তখন তারা বলে, আমাদের জন্যে তাই যথেষ্ট, যার উপর আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে পেয়েছি। যদি তাদের বাপ দাদারা কোন জ্ঞান না রাখে এবং হেদায়েত প্রাপ্ত না হয় তবুও কি তারা তাই করবে? " (সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ১০৪)
নৈতিকতা বিসর্জনঃ
কুরআন বিমুখীতার কারণে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান আমাদের অর্জন সম্ভব হয় না। যারফলে আমাদের মুসলমানদের মধ্যে দিনদিন নীতি নৈতিকতা শুভবুদ্ধির বিপর্যয় হচ্ছে। ইসলাম একটি মানবিক জীবনবিধান।
আমরা কুরআন সম্পর্কে না জানার কারণে কুরআনের এইসব নৈতিক এবং মানবিক দিক গুলো সম্পর্কে জানতে পারি না। যারফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশ হয়েও আমাদের দেশে চলছে চরম অনৈতিক এবং অমানবিক পরিস্থিতি। আল্লাহ্ বলেন,
" তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। "(সূরাঃ আল ইমরান, আয়াতঃ ১১০)
আল্লাহ্ বলেছেন আমরাই হচ্ছি সর্বোত্তম উম্মত। যাদের পাঠানো হয়েছে মানবতার কল্যাণের জন্য। প্রতিটি মুসলিমেরই দায়িত্ব হচ্ছে সৎ কাজের আদেশ করা অসৎ কাজের নিষেধ করা। অথচ কুরআন না জানার কারণে আমরা আল্লাহর সেইসব আদেশ সম্পর্কে অবগত নই।
বিবিধ পাপে নিমজ্জিতঃ
আল্লাহর বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে আমরা হাজারো পাপে লিপ্ত। মদ, জুয়া, সুদ, ঘুষ, জেনা, ব্যবিচার, হত্যা, প্রতারণা, ইত্যাদি পাপে আমরা জড়িত। যদিও আমরা জানি এইসব পাপ। তবুও এইসব করছি কারণ এইসব পাপ সম্পর্কে আমরা সবিশেষ অবগত নই।
আমরা শুধু শুনি যে এইসব পাপ এবং পাপের শাস্তির কথা। কিন্তু তা আমাদের অন্তরে আঘাত আনে না। কেননা কোনো কিছু শুনলে তা কখনোই অন্তরের গভীরে দাগ কাটে না। যদি আমরা আল্লাহর কালাম পবিত্র কুরআন পড়তাম। যেখানে প্রতিটি পাপের কথা এবং এর শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। তাহলে সেই পবিত্র কালামের বরকতে এবং প্রতিনিয়ত কুরআন পড়ার কারণে অবশ্যই আমরা আল্লাহর হিদায়াত প্রাপ্ত হতে পারতাম।আল্লাহ্ বলেন,
" শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শুত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামায থেকে তোমাদেরকে বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন ও কি নিবৃত্ত হবে? " (সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ৯১)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ মুসলমানদের শয়তানের প্ররোচনা থেকে বেঁচে থাকতে বলেছেন। কেননা শয়তান মদ জুয়া দ্বারা আমাদের মধ্যে বিদ্বেষ এবং শত্রুতা বাড়িয়ে দেয়। যা আমাদের নৈতিক বিপর্যয় এবং পাপে নিমজ্জিত হওয়ার কারণ। আল্লাহ্ বলেন,
" এ সকল উদাহরণ আমি মানুষের জন্যে দেই; কিন্তু জ্ঞানীরাই তা বোঝে। " (সূরাঃ আল আনকাবুত, আয়াতঃ ৪৩)
" অনুরূপ ভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, জন্তু, চতুস্পদ প্রাণী রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই কেবল তাঁকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময়। "(সূরাঃ ফাতির, আয়াতঃ ২৮)
আল্লাহ্ কুরআনে বিভিন্ন উদাহরণের দ্বারা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যাতে আমরা সৎ পথে চলতে পারি। অথচ কুরআন না জানার কারণে সেইসব বিষয়ে কিছুই জানি না।
আল্লাহ্ তাই বলেন যারা জ্ঞানী তাঁরাই আল্লাহকে ভয় করে। কেননা জ্ঞানীরাই আল্লাহ্ সম্পর্কে সবিশেষ অবগত। কুরআন ছাড়া কখনোই আল্লাহ্ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়।
পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণঃ
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে প্রতিটি জাতিকে শতশত আয়াতে পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ্ বলেন, না জেনে শুনে, যাচাই বাছাই না করে, কোনো প্রকার দলীল প্রমাণাদি ছাড়া সরাসরি পূর্বপুরুষদের অনুসরণ করো না অথচ কুরআন না জানার কারণে আমরা আমাদের ধর্মীয় সকল বিধি বিধান পালন করছি পূর্বপুরুষদের অনুসরণে।
অর্থাৎ ইসলামের নামে আমরা যা ই পালন করছি তার অধিকাংশই হচ্ছে বড় বড় বুজুর্গদের দেখানো এবং বানানো ইবাদত। অথচ ধর্মীয় আচার ভেবে যা পালন করছি তার সাথে কুরআন এবং সুন্নাহর মিল নেই। বরং প্রতিটা ক্ষেত্রই কুরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক।
কেউ আমাদের ভুল ধরিয়ে দিলেও কুরআন সুন্নাহর জ্ঞান না থাকার কারণে তা আমরা গ্রাহ্য করি না। অথচ আল্লাহ্ বলেন,
" তাদেরকে যখন বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তোমরা তার অনুসরণ কর, তখন তারা বলে, বরং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে যে বিষয়ের উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব। শয়তান যদি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে দাওয়াত দেয়, তবুও কি? " (সূরাঃ লোকমান, আয়াতঃ ২১)
" আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা’আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদেরকে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও। " (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ১৭০)
আল্লাহ্ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন বাপ দাদার অনুসরণ না করে কুরআন এবং সুন্নাহর অনুসরণ করো। অথচ আমরা যাচাই বাছাই না করে শক্তিশালী দলিল উপেক্ষা করে শুধুমাত্র বাপ দাদারা করেছেন বলেই সেটাকে ধর্মীয় বিধি বিধান মনে করছি। যারা এমন করেন তাদের জন্য বলেন,
" এগুলো কতগুলো নাম বৈ নয়, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদের রেখেছ। এর সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল নাযিল করেননি। তারা অনুমান এবং প্রবৃত্তিরই অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে পথ নির্দেশ এসেছে। " (সূরাঃ আন-নাজম, আয়াতঃ ২৩)
অধিকাংশের ভ্রান্ত অনুসরণঃ
পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট দলিলের বিপরীতে অধিকাংশ মানুষের মতামতকে অগ্রাহ্য করার জন্য বলা হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ্ যা দিয়েছেন সেটাই গ্রহণ করতে বলা হয়েছে যদিও তা হয় অধিকাংশ মানুষের মতামতের বিপরীত। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ অধিকাংশ মানুষকে অজ্ঞ, গোমরাহ, নাফরমান, মূর্খ, অকৃতজ্ঞ, জানে না বোঝে না, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী, গাফেল ইত্যাদি বলে নিন্দা করেছেন। শুধু তাইনয় অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনার পরও শির্ক করে এমন আয়াতও রয়েছে (সূরা ইউছুফ ১০৬)।
আল্লাহ্ বলেন,
" বস্তুত তারা অধিকাংশই অনুমানের উপর চলে। (১০:৩৬)"
" আমি তোমাদের কাছে সত্যধর্ম পৌঁছিয়েছি; কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই সত্যধর্মে নিস্পৃহ! (৪৩/সূরা যুখরুফ, ৭৮) "
অতএব কুরআন না জানার কারণে আমরা আল্লাহর বিধি বিধানের বিপরীতে অধিকাংশ মানুষের অনুসরণ অনুমানকে নিজের দ্বীন সাব্যস্ত করছি। যা কখনোই সঠিক নয়।
পথভ্রষ্ট হওয়াঃ
একজন মানুষ কুরআন না জানার কারণে ঈমান থেকে বঞ্চিত হয়। সেইসাথে ঈমান আনার পরও অধিকাংশ মুসলমান শয়তানের প্ররোচনায় নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে আল্লাহ্ বিমুখ হয়ে যায়। যারাই আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুলের শিক্ষা বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে আল্লাহ্ বিমুখ হয়ে যায় তারাই প্রকৃতভাবে পথভ্রষ্ট। আল্লাহ্ বলেন,
"আপনি অন্ধদেরকে তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরিয়ে সৎপথে আনতে পারবেন না। আপনি কেবল তাদেরকে শোনাতে পারবেন, যারা আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস করে। অতএব, তারাই আজ্ঞাবহ"। (সূরাঃ নমল, আয়াতঃ ৮১)
অর্থাৎ যারা আল্লাহর কুরআনকে বিশ্বাস করে এবং মানে কেবল তারাই সৎপথে চলে। সুতরাং সৎপথে চলতে হলে অবশ্যই আল্লাহর কুরআন জানতে হবে এবং মানতে হবে। যদি আমরা কুরআন এবং কুরআনের শিক্ষা সম্পর্কে না জানি তাহলে আমরা আল্লাহর পথ থেকে সরে গিয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবো। আল্লাহ্ সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন কুরআনে,
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে আহবানকারীর কথা মানবে না, সে পৃথিবীতে আল্লাহকে অপারক করতে পারবে না এবং আল্লাহ ব্যতীত তার কোন সাহায্যকারী থাকবে না। এ ধরনের লোকই প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত"। (সূরাঃ আল আহক্বাফ, আয়াতঃ ৩২)
অতএব কুরআন না জানা এবং না মানাই হচ্ছে পথভ্রষ্টতার লক্ষণ।
আরও পড়ুন শুধু অলি আউলিয়ারাই আল্লাহর অলি নয়
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারলাম যে, কুরআন না জানার কারণে একজন মুসলিম কতভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে। কুরআন সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে প্রতিটি মুসলমান আজ পথভ্রষ্ট। তারা সঠিক দ্বীন ইসলাম থেকে যোজন যোজন দূরে অবস্থান করছে। আজ উপমহাদেশের মুসলমানগণ কুরআন থেকে শিক্ষা না নেওয়ার কারণে পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণে সুফিবাদী ইসলামে দীক্ষিত। যা কখনোই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আসুন কুরআন জানার চেষ্টা করি এবং সেইমতো ইসলাম পালনে উদ্বুদ্ধ হই।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
১৩ অক্টোবর, ২০২১ ইংরেজী
অলংকার, চট্টগ্রাম।