কুরআন কেন নাযিল হয়েছিল |
পবিত্র কুরআন একটি ঐশী গ্রন্থ। যা সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে মুহাম্মদ সাঃ এর মাধ্যমে বিশ্ববাসীর জন্য প্রেরিত হয়েছে। আজ আমরা আল্লাহ্ কেন কুরআন নাযিল করলেন? কুরআন থেকে কী পাওয়া যাবে? কুরআন কাদের জন্য রহমত? কুরআন থেকে কারা হিদায়াত পাবে? কুরআনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী? ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
কুরআন এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে
পবিত্র কুরআনের বাণী নাযিল হয়েছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে। আল্লাহ্ বলেন,
"এটি জগতসমুহের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।" (সূরা হাক্কাহ- ৪৩)
‘‘নিশ্চয় এ কুরআন বিশ্ব জাহানের রবের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ করা হয়েছে’’ [সূরা আশ-শু‘আরা-১৯২]।
সুতরাং পবিত্র কুরআন সরাসরি আল্লাহ্র কাছ থেকেই এসেছে। এটা নিয়ে কারো কোনো সংশয় থাকা উচিত নয়।
আরও পড়ুন উছিলা কী? উছিলার বিস্তারিত ব্যাখ্যা
পৃথিবীকে আলোকিত করতে
কুরআন আসার পূর্বে পৃথিবীর মানুষ অন্ধকার তথা জাহেলি কর্মকান্ডে আল্লাহ বিমুখীতায় নিমজ্জিত ছিলো। মানুষের মনুষ্যত্ববোধ লোপ পেয়েছিল। সেইসাথে মানুষ এক আল্লাহ্কে ছেড়ে লক্ষ হাজার দেবদেবীর মূর্তি পূজায় লিপ্ত ছিলো। সেই অন্ধকার থেকে মানুষকে আলোর দিকে আনার জন্যই আল্লাহ্ নাযিল করলেন কুরআন। আল্লাহ্ বলেন,
"এই কিতাব আমি (হে মুহাম্মদ) তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকে আনতে পারো। বের করে আনতে পারো তাঁর পথে, যিনি পরাক্রমশালী, প্রশংসিত "। [সুরা : ইবরাহিম, আয়াত :১]
উপরোক্ত আয়াতসহ আরও অনেক আয়াত থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, পবিত্র কুরআন প্রেরণের উদ্দেশ্যই হলো মানুষকে কুসংস্কারহীন, মানবিক, সাম্যবাদী একক সৃষ্টিকর্তার আলো দেখানো। যাতে তারা কুসংস্কার, অমানবিক, পাশবিক ও জাহেলি অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
হিদায়াত হিসাবে
পবিত্র কুরআনের প্রধান কাজ হলো যারা হিদায়াত চায় বা যাদের হিদায়াত লেখা আছে তাদেরকে হিদায়াত প্রাপ্ত করা। অর্থাৎ মানুষের হিদায়াতের প্রধান উৎসই হলো কুরআন। আল্লাহ্ বলেন,
‘আর আমি (হে মুহাম্মদ) তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি প্রতিটি বিষয়ের স্পষ্ট বর্ণনা, হিদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদস্বরূপ।’ (সূরা আন-নাহল- ৮৯)
"এবং নিশ্চিতই এটা (কুরআন) মুমিনদের জন্যে হেদায়েত ও রহমত"। (সূরাঃ নমল, আয়াতঃ ৭৭)
উপরোক্ত আয়াতসহ আরো অসংখ্য আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ এটা জানিয়ে দিয়েছেন যে, এই পবিত্র কুরআন হচ্ছে হিদায়াতের অন্যতম মাধ্যম এবং আল্লাহ্ যাকে চান তাকে এর দ্বারা হিদায়াত দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন কুরআন ই হিদায়াত প্রকৃত মাধ্যম
তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্য
আল্লাহ্র একত্ববাদের সাক্ষ্য দিতে, তথা তাওহীদ প্রতিষ্ঠার জন্যই কুরআন নাযিল হয়েছে। তাওহীদ হচ্ছে আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো উপাস্য বা ইলাহ নেই এমন সাক্ষ্য দেওয়া। আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এই ঘোষণাই দিচ্ছেন দৃঢ় ভাবে। "তোমাদের উপাস্য হচ্ছেন এক আল্লাহ,
তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন উপাস্য নেই। তিনি পরম করুনাময়, অতি দয়ালু"। (সূরা বাকারা : ১৬৩)
"আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত ধারক"। ( সূরা আলে ইমরান ৩ :২)
উপরোক্ত আয়াতসহ আরো অসংখ্য আয়াত দ্বারা আল্লাহ তাঁর একক তাওহীদের ঘোষণা দিয়েছেন কুরআনে। এই পবিত্র কুরআন আল্লাহর তাওহীদেরই প্রচারের জন্যই নাযিল হয়েছে।
আরও পড়ুন ইবাদত কবুল হওয়ার শর্তসমূহ
শির্কের মূলোৎপাটন করতে
পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে আল্লাহ্ শির্কের মূলোৎপাটন করেছেন। আল্লাহর তাওহীদ প্রতিষ্ঠার বড় বাঁধা হচ্ছে শির্ক। শির্ক ও তাওহীদ কখনোই পাশাপাশি চলতে পারে না। তাই শির্কের বিরুদ্ধে আল্লাহর অবস্থান খুবই কঠোর। আল্লাহ বলেন,
"‘আল্লাহর সঙ্গে শরীক (স্থাপন) করো না। নিশ্চিত জেনে রেখো শিরক (আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরীক করা) হচ্ছে অতি বড় জুলুম।" (লুকমান ১৩)
"নিশ্চয় জেনো, আল্লাহর সঙ্গে শরীক বানানোর যে পাপ তা তিনি ক্ষমা করেন না"। (নিসা ৪৮)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ খুবই কঠিন হস্তে শির্কের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহর সাথে যারাই শরীক স্থাপন করবে তারাই আল্লাহর আযাবে পতিত হবে। যে পাপের শাস্তি ক্ষমা যোগ্য নয়।
জ্ঞানীদের চিন্তার খোরাক
পবিত্র কুরআন আল্লাহ্ প্রেরণ করেছেন চিন্তাশীল ব্যক্তিদের জন্য। যাতে তারা এই কুরআনের দ্বারা চিন্তা চেতনা গবেষণা ইত্যাদি করতে পারে। এই কুরআন হচ্ছে জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের ধারক।
এই কুরআন দ্বারা যারা আল্লাহ্ অবিশ্বাসী এবং সংশয়বাদী তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ্ কে নিয়ে গবেষণা করা উপকরণ। আর যারা আল্লাহ্ বিশ্বাসী তাদের জন্য রয়েছে সুস্পষ্ট দলিল। যা দ্বারা মুমিমনগণ তাদের সংশয়যুক্ত যেকোনো বিষয়াদির পক্ষে বিপক্ষে দলিল অন্বেষণ করতে পারে। আল্লাহ বলেন,
"তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা বদ্ধ রয়েছে?” (সূরা মুহাম্মদ-২৪)
"আমি একে এক নিদর্শনরূপে রেখে দিয়েছি। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি?" (সূরাঃ আল ক্বামার, আয়াতঃ ১৫)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ কাফিরদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন আল্লাহ্কে নিয়ে চিন্তা করার। যাতে তারা সৎ পথ লাভ করতে পারে। আল্লাহ আরও বলেন,
"অতএব তারা কি এই কালাম (কুরআন) সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে না? না তাদের কাছে এমন কিছু এসেছে, যা তাদের পিতৃপুরুষদের কাছে আসেনি? "(সূরাঃ আল মু'মিনূন, আয়াতঃ ৬৮)
এই আয়াত দ্বারা আল্লাহ মুশরিকদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। যাতে তারা কুরআন নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে সত্যেকে তথা আল্লাহ্ কে গ্রহণ করতে পারে। আল্লাহ্ আরও বলেন,
"তারা তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলে দাও, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্যে উপকারিতাও রয়েছে, তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়। আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, কি তারা ব্যয় করবে? বলে দাও, নিজেদের প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর যা বাঁচে তাই খরচ করবে। এভাবেই আল্লাহ তোমাদের জন্যে নির্দেশ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা চিন্তা করতে পার"। (সূরাঃ আল বাকারা, আয়াতঃ ২১৯)
"আমি কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি বোঝার জন্যে। অতএব, কোন চিন্তাশীল আছে কি? " (সূরাঃ আল ক্বামার, আয়াতঃ ১৭)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা মুমিনদের বলা হচ্ছে তাঁরা যেন আল্লাহর নির্দেশ সমূহ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে। মুমিনদের যেকোনো বিষয় জানার জন্য কুরআনকে সহজ করে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তাঁরা যেন কুরআন নিয়ে চিন্তা করে।
আরও পড়ুন কুরআনের আলোকে মানুষ সৃষ্টির কারণ
সকল দ্বীনের উপর বিজয়ী
আল্লাহ্ রাসুলুল্লাহ সাঃকে কুরআন দান করেছেন যাতে ইসলাম অন্য সকল ভ্রান্ত ধর্মের উপর বিজয়ী হতে পারে। আল্লাহ্ বলেন,
"তিনিই তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্যদ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে তিনি সকল দ্বীনের উপর তা বিজয়ী করে দেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।" (সূরা আস-সফ-৯)
"তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসূলকে হেদায়েত ও সত্য দ্বীন সহকারে, যেন এ দ্বীনকে অপরাপর দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।" (সূরাঃ আত তাওবাহ, আয়াতঃ ৩৩)
অতএব পবিত্র কুরআন হচ্ছে সত্য দ্বীনের সাক্ষী। এই কুরআন হচ্ছে অন্যান্য সকল ভ্রান্ত ধর্ম বাতিল হওয়ার নির্দশন।
সুবিচার প্রতিষ্ঠা করা
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআন প্রেরণ করেছেন যাতে এই বিশ্বে সুবিচার প্রতিষ্ঠা হয়। যখন জাহেলি যুগে পৃথিবী ছিলো পাশবিক ও অমানবিকায় অন্ধকারে পরিপূর্ণ, তখনই আল্লাহ পৃথিবীতে নাযিল করেন পবিত্র কুরআন। যাতে অমানবিক পৃথিবীতে মানবিক সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
"নিশ্চয় আমি আমার রাসূলদেরকে স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সঙ্গে কিতাব ও (ন্যায়ের) মানদন্ড - নাযিল করেছি, যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে।" (সূরা হাদীদ-২৫)
আরও পড়ুন তাওহিদ কী কীভাবে আল্লাহর তাওহিদ ক্ষুন্ন হয়
পূর্বের কিতাবের সত্যায়নকারী
পবিত্র কুরআন হচ্ছে আল্লাহ্ প্রেরিত পূর্ববর্তী সকল কিতাবের সত্যায়নকারী। অর্থাৎ কুরআন এসেছে ইহুদি খ্রিস্টানদের যে কিতাব তাওরাত ইঞ্জিল তথা বাইবেলসহ যে ১০৪ টি কিতাব আল্লাহ দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন তার সত্যতা হিসাবে। আগে যে ১০৪টি গ্রন্থ আল্লাহ ই পাঠিয়েছেন এবং এই কুরআনও আল্লাহ্ পাঠিয়েছেন তার স্বীকৃতি এবং প্রমাণ হচ্ছে কুরআন। আল্লাহ্ বলেন,
"আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ (কুরআন), যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।" (সূরাঃ আল মায়িদাহ, আয়াতঃ ৪৮)
কুরআন এসেছে প্রচারের জন্য
পবিত্র কুরআন এসেছে কুরআনে কী আছে তা প্রচার করার উদ্দেশ্যে। অর্থাৎ আল্লাহ কুরআন দ্বারা তাঁর তাওহীদ প্রতিষ্ঠা এবং শির্কের বিনাশ চান। সেইসাথে পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়ন, পৃথিবীতে শান্তি এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা। এইসব প্রচার প্রসার করার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ্ কুরআন নাযিল করেছেন। আল্লাহ বলেন,
"হে রাসূল, তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও" [সূরা মায়িদাহ : ৬৭]।
"আমার প্রতি এ কোরআন অবর্তীর্ণ হয়েছে-যাতে আমি তোমাদেরকে এবং যাদের কাছে এ কোরআন পৌঁছে সবাইকে ভীতি প্রদর্শন করি। " (সূরাঃ আল আনআম, আয়াতঃ ১৯)
আরও পড়ুন শিরক কী? মানুষ কীভাবে শিরক করে
কুরআন হচ্ছে উপদেশ
পবিত্র কুরআন এসেছে বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ হিসাবে। যাতে পৃথিবীর মানুষেরা এই উপদেশ গ্রন্থ থেকে আল্লাহ্ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারে। সেইসাথে এর থেকে কল্যাণ গ্রহণ করে নিজেদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাতে পারে। আল্লাহ্ বলেন,
"আমি তোমাদের প্রতি একটি কিতাব অবর্তীর্ণ করেছি; এতে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে। তোমরা কি বোঝ না? " (সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ১০)
"হে মানবকুল, তোমাদের কাছে উপদেশবানী এসেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের পক্ষ থেকে এবং অন্তরের রোগের নিরাময়, হেদায়েত ও রহমত মুসলমানদের জন্য। " (সূরাঃ ইউনুস, আয়াতঃ ৫৭)
উপরোক্ত আয়াত গুলো দ্বারা আল্লাহ্ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন যে পবিত্র কুরআন হচ্ছে একটি উপদেশ সম্বলিত গ্রন্থ। অতএব বিশ্ববাসীর উচিত এই উপদেশ গ্রহণ করা।
রাসুলুল্লাহর স্বীকৃতি হচ্ছে কুরআন
পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে হযরত মুহাম্মদ সাঃকে রাসুল হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। আল্লাহ্ কুরআনে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন যে, মুহাম্মদ সাঃ হচ্ছেন আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ্ বলেন,
"মুহাম্মদ সাঃ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।" (সূরাঃ আল আহযাব, আয়াতঃ ৪০)
উপরোক্ত আয়াতসহ আরও অসংখ্য আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের রিসালাতের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি যে সত্য নবী ও রাসুল এবং তাঁর অনুসরণেই বিশ্ববাসীর মুক্তি সেটাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন সুফিবাদী সুন্নীদের আকিদা সমূহ
কুরআন এসেছে সতর্কবাণী হয়ে
পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে বিশ্ববাসীর জন্য সতর্কবার্তা হয়ে। যাতে মানুষ আল্লাহ্ বিরোধী হয়ে তাঁর ক্রোধে নিমজ্জিত না হয়। মানুষ যেন আল্লাহ্ কে চিনে তাঁর দেখানো পথে চলতে পারে সেই কারণে কুরআন নাযিল হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন
, "এমনিভাবে আমি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি এবং এতে নানাভাবে সতর্কবাণী ব্যক্ত করেছি, যাতে তারা আল্লাহভীরু হয় অথবা তাদের অন্তরে চিন্তার খোরাক যোগায়। " (সূরাঃ ত্বোয়া-হা, আয়াতঃ ১১৩)
"বলুনঃ আমি তো কেবল ওহীর মাধ্যমেই তোমাদেরকে সতর্ক করি, কিন্তু বধিরদেরকে যখন সতর্ক করা হয়, তখন তারা সে সতর্কবাণী শোনে না। " (সূরাঃ আম্বিয়া, আয়াতঃ ৪৫)
কুরআন এসেছে সুসংবাদ দিতে
আল্লাহ্ কুরআন প্রেরণ করেছেন বিশ্ববাসীর জন্য সুসংবাদ দিয়ে। অর্থাৎ যারা আল্লাহকে চিনে জেনে মেনে নিয়ে তাঁর মনোনীত দ্বীনের উপর শেষ পর্যন্ত অবিচল থাকে তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ। আল্লাহ্ বলেন,
"তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন তাদের পরওয়ারদেগার স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের, সেখানে আছে তাদের জন্য স্থায়ী শান্তি।" (সূরাঃ আত তাওবাহ, আয়াতঃ ২১)
আরও পড়ুন সুফি সুন্নীদের বিভিন্ন আকিদা সম্পর্কিত জবাব
অন্যান্য উপাস্যকে ভূলুন্টিত করতে
পবিত্র কুরআনের দ্বারা আল্লাহ্ অন্যান্য সকল কথিত ভ্রান্ত উপাস্যকে বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন। সমগ্র সৃষ্টি জগতের মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্। তিনি ই একমাত্র উপাস্য। আল্লাহ্ বলেন,
"যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার সনদ নেই, তার হিসাব তার পালণকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না। "(সূরাঃ আল মু'মিনূন, আয়াতঃ ১১৭)
"আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহবান করবেন না। তিনি ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই। আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সবকিছু ধবংস হবে। বিধান তাঁরই এবং তোমরা তাঁরই কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরাঃ আল কাসাস, আয়াতঃ ৮৮)
উপরোক্ত আয়াতসহ আরো অসংখ্য দ্বারা আল্লাহ্ এই ঘোষণা দৃঢ় ভাবে দিয়েছেন যে, একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া আর কোনো ইলাহ বা উপাস্য নেই।
কুরআন সত্য মিথ্যার প্রভেদকারী
পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে মিথ্যাকে ধ্বংস করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে। পৃথিবীতে এযাবৎ যত ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে তাদের নিশ্চিহ্ন করতেই কুরআনের আগমন। এজন্যই কুরআন হচ্ছে সত্য -মিথ্যার পার্থক্যকারী। কুরআন সুস্পষ্ট নির্দশনের সাথে দলীল সহকারে নাযিল হয়েছে। যাতে কুরআন দ্বারা মানুষ বুঝতে পারে সত্য এবং প্রকৃত উপাস্য কে এবং প্রকৃত ধর্ম কী। আল্লাহ্ বলেন,
"রমযান (হলো সে) মাস যে মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে, (কুরআন) মানব জাতির জন্য পথনির্দেশিকা এবং স্পষ্ট তথ্য-ধারণকারী পথনির্দেশিকা ও সত্য-মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী। " (সূরা বাকারা ২:১৮৫)
"নিশ্চয় কোরআন সত্য-মিথ্যার ফয়সালা। "(সূরাঃ আত্ব-তারিক্ব, আয়াতঃ ১৩)
আরও পড়ুন শুধু অলি আউলিয়ারাই আল্লাহর অলি নয়
কুরআন হচ্ছে শরীয়তের দলিল
ঈমান এনে যারা নিজেদের মুসলিম দাবি করে, তাদের জন্য এই কুরআন হচ্ছে শরীয়তের দলিল। যা থেকে মুসলমারা যাবতীয় আইন বিধিবিধান বিচার ফয়সালা ইত্যাদি মেনে চলবে। আল্লাহ্ বলেন,
"এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরীয়তের উপর। অতএব, আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞানদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না। " (সূরাঃ আল জাসিয়া, আয়াতঃ ১৮)
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা কুরআনের দলিল থেকে বুঝতে পারলাম যে, কেন এবং কী কারণে আল্লাহ্ পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন। পৃথিবীতে আল্লাহ্ কোনো কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করেননি। সেই হিসাবে পবিত্র কুরআনও আল্লাহ্ নিরর্থক কারণে পৃথিবীতে পাঠাননি। যেসব কারণে আল্লাহ্ পবিত্র কুরআন এই দুনিয়ায় মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন, আমাদের প্রত্যেকের উচিত সেইসব কাজ গুলো ভালোমতো পালন করা। তাহলেই আমরা আল্লাহর কাছে তাঁর প্রিয় বান্দা হতে পারবো। আসুন আমরা কুরআন শিখে এবং বুঝে মেনে চলার চেষ্টা করি।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২৫ অক্টোবর ২০২১ ইংরেজী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।