রিসালাত কী? রাসুলের রিসালাতের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব
আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। কিন্তু মানুষ আল্লাহকে না চেনার কারণে তাঁর পরিচয় জানতে পারে না। সেইসাথে তাঁর ইবাদত বন্দেগিও করতে পারে না। তাই আল্লাহ যুগে যুগে বিভিন্ন সময়ে নবি রাসুল পাঠিয়েছেন তাঁর পরিচয় দিতে এবং পৃথিবীতে মানুষের কী দায়িত্ব তা জানাতে। মানুষকে আল্লাহর পরিচয় পৌঁছে দিতে নবি রাসুলরা যে দায়িত্ব পালন করে, তাকেই বলা হয় রিসালাত। ইসলামি শরিয়তে রিসালাত একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আজ আমরা জানার চেষ্টা করব রিসালাত কী, রাসুলের সা. রিসালাতের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব।
রিসালাত কী?
ইসলামি পরিভাষায় রিসালাত অর্থ হলো আল্লাহ তাআলার বার্তা, ঘোষণা, আদেশ, নির্দেশ, নিষেধ সমূহ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। সৃষ্টির পরবর্তী থেকে মানুষকে সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহ যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে নবি রাসুল (আ.) পাঠিয়েছেন। এইসব নবি রাসুল (আ.) গণ মানুষকে আল্লাহর পরিচয় দিতো। তাওহিদের বাণী প্রচার করতো। এই তাওহিদের বাণী প্রচারের কাজই হচ্ছে রিসালাত।
আরও পড়ুন কুরআনের আলোকে মানুষ সৃষ্টির কারণ
রিসালাতের প্রয়োজনীয়তা
পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ এক আল্লাহর ইবাদত করতো। পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে মানুষ আল্লাহকে ভুলে যেতে থাকে। সেইসাথে আল্লাহর পরিবর্তে বিভিন্ন উপাস্য তৈরি করে শিরকে লিপ্ত হলো এবং পৃথিবীতে অরাজকতা সৃষ্টি করতে লাগলো। যা আল্লাহর তাওহিদের বিপরীত।
মানুষ যাতে আল্লাহকে ভুলে না যায় এবং তাঁর পরিবর্তে অন্য কাউকে উপাস্য গ্রহণ বা তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরিক না করে; তারজন্য যুগে যুগে আল্লাহর বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে নবি রাসুলদের পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে।
যদি আল্লাহ নবি রাসুল প্রেরণ না করতেন তাহলে পৃথিবীতে কেউ আল্লাহকে চিনতে এবং জানতে পারতো না। সেইসাথে আল্লাহর কোনো বান্দা তাঁর ইবাদত বন্দেগিও করতো না। সুতরাং আল্লাহকে চেনার জন্য জানার জন্য এবং ইবাদত করার জন্য নবি রাসুলগণের রিসালাতের গুরুত্ব অপরিসীম। নবি রাসুলগণ রিসালাতের দায়িত্ব পালন করেছিলেন বলেই আমরা আজ আল্লাহকে চিনতে এবং জানতে পেরেছি।
রিসালাত ধারাবাহিক একটি প্রক্রিয়া
রিসালাতের দায়িত্ব একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। আল্লাহ যুগে যুগে প্রতিটি জাতি, গোষ্ঠীর কাছে তাঁর প্রতিনিধি প্রেরণ করেছিলেন। যখনই কোনো জাতি বা গোষ্ঠী আল্লাহর স্বরণ বিমুখ হয়, তখনই আল্লাহ সেই জাতি গোষ্ঠীর জন্য নবি রাসুল প্রেরণ করে তাদের সতর্ক করে দেয় এবং অমান্যকারীদের আযাবে নিমজ্জিত করেন। আল্লাহ বলেন,
"আর এমন কোনো জাতি নেই যাদের কাছে সতর্ককারী বা ভীতি প্রদর্শক (নবি রাসুল) প্রেরিত হয় নি।’’ (সুরা ফাতির , আয়াত: ২৪)
অন্যত্রে এসেছে: "
আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একেকজন রসূল রয়েছে।" (সূরাঃ ইউনুস, আয়াতঃ ৪৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
"আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি।" (সূরাঃ নাহল, আয়াতঃ ৩৬)
অর্থাৎ পৃথিবীতে এমন কোনো জাতি বা গোষ্ঠী নেই যাদের কাছে আল্লাহ নবি রাসুল সতর্ককারী পাঠাননি।
আরও পড়ুন তাওহিদ কী কীভাবে আল্লাহর তাওহিদ ক্ষুন্ন হয়
রিসালাত অর্জনের বিষয় নয়
রিসালাতের দায়িত্ব পালনের জন্য যেসকল গুণাবলী থাকা প্রয়োজন তা কখনোই কেউ নিজের জ্ঞান চর্চা বা তপস্যা সাধনা করে অর্জন করতে পারে না। রিসালাত অর্জনের বিষয় নয়। রিসালাত সরাসরি আল্লাহ কতৃক মনোনীত। আল্লাহ যাকে তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব দিতে চান তিনিই কেবল সেই দায়িত্ব পেয়ে থাকেন। পৃথিবীতে যত নবি রাসুল (আ.) এসেছিলেন, সবাইকে আল্লাহ নিজেই মনোনীত করেছিলেন। আল্লাহ বলেন,
"আর আল্লাহ তাঁর রিসালাতের ভার কার ওপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভালো জানেন।’’ (সুরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২৪)
রাসুল (সা.) এর রিসালাতের বৈশিষ্ঠ্য
হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও একজন রিসালাতের দায়িত্ব প্রাপ্ত রাসুল। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী অন্যান্য নবি রাসুলদের ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে তাওহিদের দাওআত দিতে এসেছিলেন। তাঁর রিসালাতের ধরণ এবং গঠন অন্যান্য নবি রাসুলদের থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। আমরা নিম্নে তাঁর রিসালাতের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।
সার্বজনীন
আল্লাহ যুগে যুগে বিভিন্ন জনপদে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর জন্য আলাদা আলাদা বিষয়বস্তু এবং শরিয়ত দিয়ে নবি রাসুল পাঠিয়েছিলেন। অতীতের সকল নবি রাসুল (আ.) গণ ছিলেন নির্দিষ্ট দেশ, জাতি এবং গোষ্ঠীর জন্য।
কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর রিসালাত হচ্ছে সার্বজনীন। অর্থাৎ মুহাম্মদ (সা.) পৃথিবীর সমগ্র জ্বীন এবং ইনসান জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। তিনি কোনো নির্দিষ্ট জাতি গোষ্ঠী এলাকা বা সময়ের জন্য নির্ধারিত হয়ে প্রেরিত হননি। আল্লাহ বলেন,
"(হে রাসুল আপনি) বলুন হে মানবজাতি! আমি তোমাদের (বর্তমান এবং ভবিষ্যতের) সবার প্রতিই আল্লাহর রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” (সুরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৭৫)
আরও পড়ুন বিশ্বকাপ ফুটবল এবং আমাদের ঈমান আকিদা
সুসংবাদদাতা
হযরত মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন সমগ্র পৃথিবীর জ্বীন এবং মানুষের জন্য সুসংবাদ দাতা। অর্থাৎ তিনি আল্লাহ থেকে পৃথিবীর মানুষের জন্য সুসংবাদ এনেছেন যে, যারাই আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর নির্দেশ, আদেশ মেনে চলবে এবং শির্ক কুফর করবেনা তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।
জান্নাত এমন একটি জায়গায় যেখানে দুঃখের কোনো স্থান নেই। পৃথিবীর মানুষ আল্লাহকে মানতে গিয়ে দুনিয়ায় দুঃখ দূর্দশায় পতিত হবে। সেই দুঃখ দূর্দশার পুরুষ্কার হলো জান্নাত। যেখানে রয়েছে পৃথিবীর নেয়ামতের চাইতে হাজার কোটি গুণ বেশী নেয়ামত। সেখানেই সুসংবাদ প্রাপ্তরা পৃথিবীর মানুষেরা অনন্ত কাল থাকবে। আল্লাহ বলেন,
"আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্যে সুসংবাদাতা ও সতর্ককারী রূপে পাঠিয়েছি; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।" (সুরা: সাবা, আয়াত: ২৮)
সতর্ককারী
হযরত মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন একজন সতর্ককারী। তাঁর দায়িত্ব ছিলো তাঁর সময়ের এবং তাঁর পরবর্তীতে আগত সকল জাতি গোষ্ঠীকে সতর্ক করা। অর্থাৎ বর্তমানে এবং ভবিষ্যতেও যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উপাস্য করবে তাদের জন্য আল্লাহর শাস্তির বিষয়ে সতর্ক করাই হচ্ছে রাসুল (সা.) এর রিসালাতের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য।
অন্যান্য নবি রাসুলরা যেখানে নির্দিষ্ট জাতি গোষ্ঠী সময়ের জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন, সেখানে রাসুল (সা.) হচ্ছেন কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল জাতি গোষ্ঠীর জন্য সতর্ককারী। তাঁর আনীত দিনের ইসলামকেই সকলকে মেনে নিতে হবে।
যারা রাসুল (সা.)এর আনীত দিনের ইসলাম মেনে নিবে না তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর সীমাহীন আযাব। আল্লাহ বলেন,
"হে নবি! আপনি উঠুন এবং সতর্ক করুন।’’ (সুরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ২)
আরও পড়ুন ঈমান কী? পরিপূর্ণ ঈমানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা
আলোকবর্তিকা
হযরত মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য আলোকবর্তিকা। তিনি আল্লাহ থেকে যে সত্য দিনের ইসলাম নিয়ে এসেছেন তার সংস্পর্শে যে-ই আসবে তাঁর জীবনই আল্লাহর নূরে আলোকিত হয়ে উঠবে। আল্লাহ বলেন,
‘‘হে নবি! আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি সাক্ষ্যদাতা, সুসংবাদ দাতা, ভীতি প্রদর্শক ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’’ (সুরা আল-আহযাব, আয়াত: ৪৫-৪৬)
অর্থাৎ যেকেউ আল্লাহর দিনেরের সঠিক স্পর্শে আসলেই তার জীবন হবে পরিপূর্ণ। সে দুনিয়া এবং আখিরাতে হবে লাভবান।
আরও পড়ুন শিরক কী? মানুষ কীভাবে শিরক করে
সর্বোত্তম আদর্শ ও অনুসরণ
রাসুল (সা.) হচ্ছেন সর্বকালের সর্বযুগের সকল মানব গোষ্ঠীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শের মাপকাঠি। আল্লাহ তাঁকে এমন আদর্শ দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করেছেন যে তাঁর আদর্শই হচ্ছে আল্লাহর আদর্শ।
যারাই রাসুল (সা.) এর আদর্শে আদর্শিক হবে তারাই আল্লাহর কাছে কৃতকার্য হবে। কোনো বান্দা আল্লাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে রাসুল (সা.) এর আদর্শ ধারণ করা। কেননা আল্লাহর রাসুলের মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। আল্লাহ বলেন,
"নিশ্চয় তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ।” (সুরা আল-আহযাব, আয়াত: ২১)
অর্থাৎ প্রতিটি মুমিনের জন্য রাসুলুল্লাহ সা. ই হচ্ছেন আদর্শিক ব্যক্তি। যাকে অনুসরণ ও অনুকরণ করলে তবেই আল্লাহ আমাদের ভালোবাসবেন এবং ক্ষমা করে দিবেন। তাই আল্লাহ বলেন,
"(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।" (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)
অর্থাৎ যেকেউ আল্লাহর ভালোবাসা এবং ক্ষমা চাইলে তাকে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে রাসুলের।
আল্লাহ একথা সুস্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন সমগ্র মানব জাতির জন্য যে, যদি আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, পেতে চাও, কল্যাণ চাও, দুনিয়া এবং আখিরাতের সফলতা চাও, তাহলে অনুসরণ করো শুধুমাত্র একমাত্র রাসুল (সা.)এর। তাহলেই তিনি তোমাদের ভালবাসবেন এবং ক্ষমা করে দিবেন। অতএব আল্লাহর কাছে একমাত্র অনুসরণীয় ব্যক্তি হলো রাসুল (সা.)। আমাদের প্রত্যেককে একমাত্র রাসুলের আদর্শকেই অনুসরণ করতে হবে। যে বা যারা রাসুল (সা.) কে পরিপূর্ণ অনুসরণ করবে তারাই আল্লাহর কাছে বেশী গ্রহণযোগ্য হবে।
আরও পড়ুন সুফিবাদী সুন্নীদের আকিদা সমূহ
দিনের মানদণ্ড
রাসুলুল্লাহ (সা.) কে সত্য ধর্ম ইসলামসহ প্রেরণের মাধ্যমে আল্লাহ পৃথিবীতে দিনের ভীত রচনা করেছেন। ইসলামই হচ্ছে একমাত্র দিন, যা দিয়ে পৃথিবীর সবাইকে বিচার এবং বিশ্লেষণ করা হবে। এই ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ধর্ম এবং জীবনবিধান। ইসলামে অতীতেও কোনো কিছু অপূর্ণ ছিলো না, বর্তমানেও নেই ভবিষ্যতেও থাকবে না।
এই পরিপূর্ণ দিনকে সর্বেসর্বাভাবে সম্পূর্ণ করেছেন রাসুল (সা.)। অর্থাৎ তিনি ইসলামের কোনো কিছুই তিনি বাকি রেখে যাননি। রাসুলুল্লাহ রিসালাতের এটাই হচ্ছে অন্যতম একটি বৈশিষ্ঠ্য।
ইসলামে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কথাই হচ্ছে দিন। তিনি যা যা হালাল করেছেন তাই-ই হালাল আর যা হারাম করেছেন তা-ই হারাম। তিনি যে পদ্ধতিতে দিন পালন করেছেন, বলেছেন এবং অনুমতি দিয়েছেন। সেটাই হচ্ছে পরিপূর্ণ দিন ইসলাম। রাসুল-ই হচ্ছে দিনের ইসলামের প্রকৃত মানদন্ড। আল্লাহ বলেন,
"রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।" (সুরা: আল হাশর, আয়াত: ৭)
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.) এর রিসালাতের প্রধান দায়িত্বই ছিলো দিন ইসলামকে সম্পূর্ণ করে যাওয়া। যাতে ভবিষ্যতে ইসলামের (ইবাদত এবং আইনে) মধ্যে নতুন কোনো কিছু সংযুক্ত না হয় বা কেউ করতে না পারে।
অন্যান্য নবি রাসুলগণের উম্মতেরা ধ্বংস হয়েছিল দিনের মধ্যে নতুন নতুন আমল সৃষ্টির কারণে। যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পর আর কোনো নবি রাসুল আসবে না, সেহেতু রসুলুল্লাহ (সা.) কে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। যা তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আল্লাহ বলেন,
"(আজ) আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য একমাত্র দীন হিসাবে ইসলামকে মনোনীত করলাম।’’ (সুরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩)
পবিত্র হাদিসে এসেছে, জাবের (রা:) থেকে বর্ণিত: "রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও ছালাতের পর বলেন,
‘নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ বাণী হ’ল আল্লাহর কিতাব এবং শ্রেষ্ঠ হেদায়াত হ’ল মুহাম্মাদের হেদায়াত। আর নিকৃষ্টতম কাজ হ’ল দিনেরের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হ’ল ভ্রষ্টতা "(মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)। আর নাসাঈতে রয়েছে, "প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম" (নাসাঈ হা/১৫৭৮)
অর্থাৎ দিন ইসলামের ইবাদত বন্দেগির মধ্যে নতুন কোনো কিছু (বিদআত) আবিষ্কার করা হলো নিকৃষ্টতম কাজ। যার শেষ ঠিকানা হলো জাহান্নাম। আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত: "রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
যে ব্যক্তি এমন আমল করল যাতে আমার কোন নির্দেশনা নেই, তা পরিত্যাজ্য " (মুসলিম হা/১৭১৮)।
অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশিত ব্যতীত কোনো আমল কেউ করলে তা আল্লাহর কাছে সরাসরি পরিত্যাজ্য। সুতরাং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর রিসালাতের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য হলো তিনি যে দিন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তা কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকা। সেখানে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর পরিবর্তে অন্য কেউ যেন দিন ইসলামে কম বেশী করতে না পারে। তাই একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা.) ই হচ্ছেন ইসলামের মানদন্ড।
আরও পড়ুন সুফি সুন্নীদের বিভিন্ন আকিদা সম্পর্কিত জবাব
পূর্নাঙ্গ রিসালাত
রাসুল (সা.) এর রিসালাত হচ্ছে পূর্নাঙ্গ। অর্থাৎ তাঁর আনীত দিনই শেষ এবং পরিপূর্ণ ইসলাম। তিনি দিন ইসলামে যা সংযোজন বিয়োজন করেছেন তা-ই সম্পূর্ণ। আল্লাহ কিয়ামতের আগ পর্যন্ত সকল বিষয়াদি দিয়ে পূর্নাঙ্গ ইসলাম সহকারে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে প্রেরণ করেছেন। অন্যান্য নবি রাসুলদের রিসালাত ছিলো বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী বা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। একমাত্র রাসুলুল্লাহ (সা.)এর রিসালাতই হচ্ছে পূর্নাঙ্গ রিসালাত যা সমগ্র জাতির জন্য এবং তা কিয়ামত পর্যন্ত সকলের জন্য প্রযোজ্য।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর উপর দায়িত্ব প্রাপ্ত রিসালাতের সকল বার্তা তাঁর উম্মতদের পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি কোনো কিছুই গোপন বা বাকি রেখে দেননি। পবিত্র হাদীসে এসেছে, আয়েশা (রা:) বলেন,
"যে ব্যক্তি এই ধারণা পোষণ করে যে, নবি (সা.) কিছু জিনিস গোপন রেখেছেন, (প্রকাশ বা প্রচার করেননি), সে ব্যক্তি নি:সন্দেহে মিথ্যাবাদী।" (বুখারী ৪৮৫৫নং)
একদা আলী (রা:)-কে প্রশ্ন করা হল যে,
আপনাদের নিকট কুরআন ব্যতীত অহীর মাধ্যমে অবতীর্ণকৃত কোন জিনিস আছে কি? উত্তরে তিনি কসম করে বললেন, না। তবে কুরআন উপলব্ধি করার জ্ঞান, আল্লাহ যাকে দান করেন। (বুখারী)
বিদায় হজ্জের সময় এক লক্ষ অথবা এক লক্ষ চল্লিশ হাজার সাহাবার সামনে মহানবি (সা.) বলেছিলেন, "
তোমরা আমার ব্যাপারে কি বলবে?" তাঁরা সকলেই বলেছিলেন যে, 'আমরা সাক্ষ্য দেব যে, (আপনার উপর যে গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল তা) পৌঁছে দিয়েছেন, (আমানত) আদায় করে দিয়েছেন এবং (উম্মতের জন্য) হিতাকাঙ্ক্ষা ও নসিহত করেছেন।' মহানবি (সা.) আসমানের দিকে আঙ্গুল তুলে ইঙ্গিত করে তিনবার বললেন, "হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিয়েছি?" অথবা তিনি তিনবার বললেন, "আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাকো।" (মুসলিম) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার বাণী পৌঁছে দিয়েছি। তুমি সাক্ষী থাকো, তুমি সাক্ষী থাকো, তুমি সাক্ষী থাকো।
উপরোক্ত বিষয় দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে রাসুলুল্লাহ তাঁর উপর আরোপিত সকল দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করে গেছেন।
আরও পড়ুন শুধু অলি আউলিয়ারাই আল্লাহর অলি নয়
শেষ নবি
হযরত মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন শেষ নবি। অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর তাওহিদ প্রতিষ্ঠায় হাজার হাজার যেসব নবি রাসুল পাঠিয়েছেন তাদের সমাপ্তি হচ্ছে রাসুল (সা.)। অন্যান্য নবি রাসুল গণ খন্ডকালীনভাবে দিনের যে কাজ করে গেছেন তাদের স্বীকৃতি দিয়ে দিনকে পূর্নাঙ্গভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রাসুলুল্লাহ (সা.)।
রাসুলের প্রতিষ্ঠিত দিনেরের পর আর কোনো নতুন দিনের বা প্রতিষ্ঠিত দিনেরে আর হ্রাসবৃদ্ধি হবেনা। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.)ই হচ্ছেন আল্লাহর শেষ মনোনীত রাসুল। আল্লাহ বলেন,
"মুহাম্মদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবি। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।" (সুরা: আল আহযাব, আয়াত: ৪০)
পরিশেষে বলা যায়, রাসুলুল্লাহর রিসালাত হচ্ছে পূর্নাঙ্গ রিসালাত এবং রিসালাতের সমাপ্তি। তিনি ইসলামকে পরিপূর্ণ দিন হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর আনীত দিনে নতুন করে কোনো কিছু সংযোজন বিয়োজন করা যাবেনা। তিনিই হচ্ছেন আল্লাহর শেষ নবি ও রাসুল। তাঁর পরবর্তীতে আর কোনো নবি বা রাসুলের আগমন হবেনা। প্রতিটি মুসলমানকে অবশ্যই রাসুলের আদর্শে আদর্শিক হয়ে জীবনযাপন এবং ধর্মপালন করতে হবে। তাহলেই ঐ ব্যক্তি দুনিয়া এবং আখিরাতের কল্যাণ লাভ করবে।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।
ট্যাগ