দলিল ছাড়া পীরতন্ত্রের ভিত্তি- ২(পর্ব -৩)
নারী - পুরুষের অবাধ মেলামেশাঃ
ইসলামে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা বৈধ নয়। ইসলাম সমর্থন করে না বিনা কারণে ঘর থেকে কোথাও গমন করা যেখানে লক্ষ হাজার পরপুরুষের অবাধ চলাচল। এখন আমরা বিবেকের জানালা খুলে যদি পীরের দরবারের দিকে তাকাই তবে কী দেখবো? সেখানে নারী পুরুষের ঠাসাঠাসি ঠেলাঠেলি (বিশেষ করে মাজারের ওরসের সময়)। প্রয়োজনে নারী জ্ঞান অর্জনের জন্য বাইরে অবশ্যই যেতে পারে। তবে তা পর্দা করে এবং ঘরের পুরুষদের সাথে।
এখন আমরা পীরের আস্তানায় যা দেখি - মহিলা মুরিদরা পীরের কোলে বসে মুরিদ হন, ফয়েজ নেন (কিছু দরবার ব্যতীত)। শুধু তাই নয় এমন হাজার হাজার ঘটনা পত্রপত্রিকায় আসে আসছে এসেছে যে পীর মুরিদকে ধর্ষণ করেছে, টাকা পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে, ধর্ষণ করে ব্ল্যাকমেইলও করে যাচ্ছে দিনের পর দিন।
তাহলে কী দাঁড়ালো? জান্নাতের আশায় যারা পীরের দরবারে যাচ্ছে তারা জান্নাত পাবে তো দূরের কথা দুনিয়াটাই তো জাহান্নামে ভরে যাচ্ছে। এটা স্পষ্ট যে ইসলামের আইন (পর্দা) অমান্য করে কোথাও যাওয়াটা সম্পূর্ণ হারাম। সেটা কেন হারাম করেছেন আল্লাহ্? কারণ তিনি জানেন এভাবে অনুমতি দিলে সেখানে এই (ধর্ষণের) ঘটনা গুলিই ঘটবে। ইসলামে এমন কোন বিধিবিধান নেই যার দ্বারা কেউ অবৈধ ফায়দা নিতে পারবে। ইসলাম এমন কোনো কিছুকে সমর্থন করে না যার কেউ অন্যায় করতে পারবে।
যদি ইসলাম এই পীরতন্ত্রকে সমর্থন করতো তাহলে এইসব কুকীর্তি গুলো কখনোই ঘটতো না। নারীদেরও জ্ঞান অর্জনের অধিকার আছে। তবে সীমার আওতায়। নারীরা অবশ্যই জ্ঞানের উদ্দেশ্যে ঘরের পুরুষদের সাথে নিয়ে যেকোনো জায়গায় যেতে পারে যেখানে আল্লাহর বিধানে আছে। কিন্তু আমরা যদি এইসব তথাকথিত পীরের দরবার গুলোর দিকে তাকাই তবে দেখতে পাবো সেখানে জ্ঞানার্জন নয় বরং ভোজন কীর্তন, নাচন কুদন ইত্যাদি-ই হয়। যা ইসলাম সমর্থন করে না। যা ইসলাম অনুমতি দেয়নি সেখানে গিয়ে কীভাবে আপনারা আল্লাহর জান্নাতের আশা করছেন?
বিধর্মীদের অবাধ যাতায়াতঃ
এই উপমহাদেশে এমন এমন পীরের দরবার রয়েছে যেখানকার মুরিদ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা। অর্থাৎ পীর মুসলিম হলেও তার মুরিদ অন্য ধর্মের। এইসব দরবার বা পীরের মতবাদ হচ্ছে মানুষ যেই ধর্মের হোক না কেন তাদের কাছে এসে মুরিদ হলেই আল্লাহ্ নাজাত দিবেন (না'উবিল্লাহ)। যেকারণে উপমহাদেশে হাজার হাজার মাজারে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ভীড় লেগেই থাকে। তারা কখনোই ইসলামকে পছন্দ করে না। কিন্তু পীরকে বা সেই আল্লাহ্ অলিকে ভালোবাসে। অথচ কুরআনে বলা হচ্ছে মুশরিকরা নাপাক। এই নাপাক ব্যক্তিরা কত অনায়াসেই পীরের মাজারে দরবারে অবাধ মেলামেশা করছে। যা সম্পূর্ণ কুরআন বিরোধী।
তবে হ্যাঁ, তারাও দরবার বা মাজারে যাওয়ার অনুমতি অবশ্যই আছে। তবে তা ইসলাম বুঝার জন্য জানার জন্য। ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার জন্য। যাতে তারা ইসলাম কবুল করতে পারে। ইসলামের সৌন্দর্য দেখতে, ভাতৃত্ববোধ দেখতে অবশ্যই তাদের স্বাগতম জানানো হবে। কিন্তু যারাই সেখানে যায় তারা কখনোই ইসলাম গ্রহণের নিয়তে এইসব দরবার বা মাজারে যান না। এই বিষয় থেকে কী বুঝা যাচ্ছে? যেসব মুশরিক মাজার বা দরবারে যাচ্ছে তারা দুনিয়াবী কারণে যাচ্ছে। তাদের আখিরাতের চিন্তা নেই। কেননা তারা মুশরিক তাদের ঈমান নেই।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কেন দরবার বা মাজার অলারা এদের আসতে সুযোগ দিচ্ছে? দরবার বা পীরের কাজ হচ্ছে ইসলাম প্রচার এবং প্রসার করা। তাহলে তাদের তো দায়িত্ব হচ্ছে এইসব মুশরিকদের কাছে ইসলাম প্রচার করা। কিন্তু তারা তা করে না। কারণ যদি তারা ইসলাম প্রচারের কাজ করে তবে এইসব মুশরিক, বিধর্মীরা আর দরবার বা মাজারে আসবে না। আর যদি তারা না আসে তাহলে দরবার বা মাজারের ইনকামও হবেনা।
এটা দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে পীর নিয়ে যে ধারণা এই উপমহাদেশে প্রচারিত হচ্ছে তা কখনোই সঠিক নয়। যদি সঠিক হতো তাহলে এইসব দরবার হতে দলে দলে ইসলাম প্রচার এবং প্রসারের কাজ হতো। কেউ কোনো দৃষ্টান্ত বর্তমানে দেখাতে পারবে না যেখানে তারা বিধর্মী মুশরিকদের ইসলামে ধর্মান্তরিত করেছে। অথচ যে সময় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার করেন তৎকালীন আল্লাহর অলিরা যারা সত্যিকারের জ্ঞানী (বা পীর) ছিলেন তাঁরা তাদের দরবার প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ইসলাম প্রচারের জন্য। কোনো প্রকার হাদিয়া তোফা পাওয়ার জন্য নয়। তাদের দুনিয়াবী কোন স্বার্থ ছিলো না। তাদের জীবনীর দিকে তাকালে দেখা যাবে যে তাঁরা কত সাধারণ জীবনযাপন করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন।
অথচ বর্তমানে এমন কোন পীর বা দরবার বা মাজার নেই যেখানে তাদের কোটি টাকার কম সম্পত্তি আছে। এতেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে উপমহাদেশে যে পীরতন্ত্র আল্লাহর অলিদের নাম দিয়ে শুরু করা হয়েছে তার বাস্তব এবং ইসলামী কোনো ভিত্তি এবং যৌক্তিকতা নেই। একটু বিবেক দিয়ে চিন্তা করলেই আমরা তা বুঝতে পারবো।
পীর এবং কবরকে সিজদাঃ
একসময় গোপনে হলেও বর্তমানে খুবই স্পষ্ট এবং খোলামেলা ভাবেই সাধারণ মানুষ পীরকে এবং মাজারে কবরকে সিজদা করছে। অথচ ইসলাম একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করার স্বীকৃতি দেয় না। আল্লাহ্ ছাড়া কাউকে সিজদা করার স্পষ্ট অর্থে শির্ক। অর্থাৎ সিজদা একমাত্র আল্লাহ্ পাওয়ার যোগ্য। সেখানে অন্য কাউকে সিজদা করে মানুষ সিজদায় আল্লাহর সাথে অন্যকে তাঁর শরিকদার বা অংশীদার করলো। যা কখনোই ইসলাম সমর্থন করে না। বান্দাদের সকল গুনাহ কিয়ামতে চাইলেই আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিতে পারেন। কিন্তু একটিমাত্র পাপ যা সবচাইতে বড় গুনাহ তাহলো "শির্ক " বা অংশীদার করা, এটি কখনোই ক্ষমা করা হবেনা। আর এই সবচাইতে বড় গুনাহটি প্রতিনিয়তই হচ্ছে সকল মাজারে পীরের (গুটিকয়েক বাদে) দরবারে।
ইসলাম এসেছে শির্ক মুক্ত করতে। অথচ এই শির্ক ই মহা ধুমধামের সাথে ১৮০ মাইল বেগে আমাদের উপমহাদেশে চলছে। এতো সর্বনিকৃষ্ট পাপ করার উন্মুক্ত জায়গায় পীরের দরবার আর মাজার হলেও কেন তা ইসলাম বিরোধী নয় তার কোনো ব্যাখ্যা কি আছে?
কুরআনের স্পষ্ট আয়াত দ্বারা প্রমাণিত নিকৃষ্ট কাজকে যারা জায়েজ করতে চান, তারা যুক্তি দেখান যে - হযরত ইউছুফ (আঃ) কে তাঁর পিতামাতাসহ ভাইয়েরা সম্মান সূচক (তাজিমী) সিজদা করেছিল। সেই খাতিরে তারাও পীরকে মাজারের কবরকে সম্মান সূচক সিজদা করছে। অথচ এটা খুবই স্পষ্ট যে প্রতিটি নবী রাসুল (আঃ) এসেছিলেন প্রত্যেকের নির্দিষ্ট জাতি বা গোত্রের কাছে। প্রতিটি নবী রাসুলের (আঃ) এর তৎকালীন ইসলামী শরিয়ত ছিলো আলাদা আলাদা। প্রতিটি নবী রাসুলদের (আঃ) আইনকানুন শুধুমাত্র সেইসব নবী রাসুলদের জাতি বা গোত্রের জন্য ই নির্দিষ্ট ছিলো। তাই আগের নবী রাসুলদের (আঃ) কোনো শরিয়তই এখন কার্যকর নয়।
সহীহ্ বুখারী শরীফে এসেছে -একবার হযরত উমর (রাঃ) ইহুদীদের তাওরাতের একটি অংশ রাসুল (সাঃ) কে পড়ে শোনাচ্ছিলেন। সেইসময় রাসুলুল্লাহর (সাঃ) চেহারা মোবারক রক্তিম হয়ে উঠে। এবং বলেন যে - আজ মুছা (আঃ) নবীও বেঁচে থাকলে তাঁর (মুহাম্মদ সাঃ) আনুগত্য করতে হতে। এটি দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায় যে আগের সকল নবী রাসুলদের কিতাব এবং শরিয়ত সবই আখেরি জামানায় বাতিল হয়ে গেছে। সুতরাং তাদের কোন (ইবাদত ই) এখন দলিল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
পীর বা কবরকে সিজদা না করার শত শত সহীহ্ হাদীস রয়েছে। কিছু সাহাবী ইচ্ছা পোষণ করেছেন যে তাঁরা রাসুল (সাঃ) সিজদা করবেন। কিন্তু রাসুল (সাঃ) স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন - আল্লাহ্ ছাড়া কাউকে সিজদা করা যাবে না। যদি যেত তাহলে তিনি বলতেন প্রতিটি স্ত্রীকে তাদের স্বামীকে সিজদা করার জন্য। এখানেও স্পষ্ট যে কোনো মানুষকে সিজদা করা যাবে না। সেখানে পীর বা কবরকে সিজদা কীভাবে জায়েজ হবে?
বুখারী শরিফে আরও স্পষ্ট হাদীসে এসেছে - তোমরা কবরকে সিজদার জায়গা বানিয়ো না। ইহুদি নাসারাদের উপর আল্লাহর লানত যে, তাদের তাদের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। এতো এতো স্পষ্ট সহীহ হাদিসের পরও কীভাবে পীর এবং কবরকে সিজদা করা জায়েজ হবে?
বাকি পর্ব গুলো এখানেঃ
পীর (উপমহাদেশে পীরের বাস্তবতা)
দলিল ছাড়া পীরতন্ত্রের ভিত্তি ১
দলিল ছাড়া পীরতন্ত্রের ভিত্তি ২
দলিল ছাড়া পীরতন্ত্রের ভিত্তি ৩
কুরআনের আয়াত দ্বারা পীরের দলিল খন্ডন ১
কুরআনের আয়াত দ্বারা পীরের দলিল খন্ডন ২
কুরআনের আয়াত দ্বারা পীরের দলিল খন্ডন ৩
কুরআনের আয়াত দ্বারা পীরের দলিল খন্ডন ৪
কুরআনের আয়াত দ্বারা পীরের দলিল খন্ডন ৫
বাইয়াত দ্বারা পীরের দলিল
সুপারিশকারী পীর
পীরের দরবারে মানত