কুরআনের আয়াতে পীরের দলিল খন্ডন-৫( পর্ব -৯)
১৬) " হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফেরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জেহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। [ সুরা মায়েদা ৫:৫৪
তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ- যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র। [ সুরা মায়েদা ৫:৫৫ ]
আর যারা আল্লাহ তাঁর রসূল এবং বিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী। [ সুরা মায়েদা ৫:৫৬ ]
এখানে তিনটি আয়াত রয়েছে। তবে পীরবাদীরা ৫৪ নং বলে না। এর ব্যাখ্যা পরে করছি। এখানে বলা হচ্ছে সাধারণ মুসলমানদের বন্ধু বা অলি হলো আল্লাহ্, তাঁর রাসুল (সাঃ) এবং মুমিনগণ। যদি এদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করা যায় তাহলে তারা বিজয়ী। এখানে বিজয়ী কথা কেন এসেছে? এটার দুটি ব্যাখ্যা এই বিজয় প্রথমত দুনিয়ায়। দ্বিতীয়ত আখিরাতে। দুনিয়ার বিজয় কী? এই দুনিয়ার বিজয় জানতে হলে ৫৪ নং আয়াতে যেতে হবে। সেখানে আল্লাহর বন্ধুদের গুণাবলী বলা হচ্ছে - তারা আল্লাহ্ কে ভালোবাসবেন আল্লাহও তাঁদের ভালোবাসবেন। তাঁরা মুসলমানদের প্রতি নম্র হবেন এবং কাফেরদের (যারা ইসলাম বিদ্বেষী) তাদের প্রতি হবেন খুবই কঠোর জিহাদের মাধ্যমে।
অর্থাৎ এরা হচ্ছেন আল্লাহর সেইসব অলি বা বন্ধু যারা ইসলামের জন্য সর্বাবস্থায় কঠোর এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্য দয়ালু। এখন যদি বলা এইসব বন্ধু মানে পীরেরা। তাহলে বাস্তবতা একটু মিলিয়ে দেখুন। এক পীর আরেক পীরের বদনাম ছাড়া সুনাম কখনোই করতে পারে না। অতএব তারা (পীরেরা) সাধারণ মুসলমানরের জন্য দয়ালু বা নম্র নন।
দ্বিতীয়ত কথা হচ্ছে পীরেরা ইসলামী শত্রুদের প্রতি হবেন খুবই কঠোর (জিহাদ বাদই দিলাম)। এখন বাস্তবতা হচ্ছে আজ পর্যন্ত কোনো দরবার থেকে ইসলামী শত্রু বিভিন্ন নাস্তিক মুরতাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন তো দূরের কথা, কোনো বক্তব্য প্রতিবাদও হয়নি। শুধু তাইনয়, বিরুদ্ধে কথা বলা তো দূরের থাক। এইসব ইসলাম বিদ্বেষী ব্যক্তি এবং দলের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ইসলামী বিরোধী আইন প্রনয়ণে সার্বিক সহযোগিতা করে। এটা করেই শেষ নয়। যারা ইসলাম বিরোধী শক্তির সাথে লড়াই করে তাদের বিরুদ্ধে এইসব দরবার মাজার লেগে থাকে। বাস্তবতা নিজ দায়িত্ব বিবেচনা করুন।
অতএব এইসব আয়াত দ্বারা যাদের ইসলামের জ্ঞান নেই তাদের বুঝানো সহজ হবে। কিন্তু যাদের আল্লাহ্ নিজ দায়িত্ব ইসলামের জ্ঞান দিয়েছেন তাদের ভোলানো যাবে না।
১৭) "নিশ্চয় যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, ছাবেয়ী বা খ্রীষ্টান, তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর প্রতি, কিয়ামতের প্রতি এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না। [ সুরা মায়েদা ৫:৬৯ ]
এই আয়াত দিয়েও ভ্রান্তবাদীরা পীরের দলিল দেয়। অথচ এখানে স্পষ্ট বলা হচ্ছে - মুসলিম, ইহুদি, সাবেয়ী বা খ্রিস্টানের মধ্য থেকে যারাই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন এবং সৎ কর্ম করে তাদের কোনো ভয় নেই এবং তাঁরা নিরাশ বা দুঃখিত হবেন না। এখানে পীরের কথা বলা হয়েছে তা কোন পাগলে বলবে?
১৮) "সেদিন দয়াময়ের কাছে পরহেযগারদেরকে অতিথিরূপে সমবেত করব, [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৮৫ ]
এবং অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৮৬
যে দয়াময় আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ব্যতীত আর কেউ সুপারিশ করার অধিকারী হবে না। [ সুরা মারঈয়াম ১৯:৮৭ ]
এখানে ৮৭ নং আয়াত থেকে "যে দয়াময় আল্লাহ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে "এই বাক্য দ্বারা পীর সাব্যস্ত করেন। অর্থাৎ শুধুমাত্র পীরেরা আল্লাহ্ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন সুপারিশ করার। আমরা যদি ৮৫ নং আয়াতের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, পরহেজগার মুত্তাকী অর্থাৎ যারা আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলে সমস্ত পাপ থেকে দূরে থেকে দুনিয়ার জীবন পরিচালিত করেছেন তাঁদের আল্লাহ্ তাআলা মেহমান রূপে কিয়ামতের ময়দানে হাজির করবেন (ইবনে কাছীর)। এটা তাঁদের জন্য একটি পুরুষ্কার স্বরূপ।
পরবর্তী ৮৭ নং আয়াতে বলা হচ্ছে যারা আল্লাহ্ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে সে ব্যতীত আর কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। এরদ্বারা নবী (আঃ) রাসুল (সাঃ) এবং সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। সৎকর্মশীল বলতে প্রকৃত মুমিন যারা তাঁরা। যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের পরিচালিত করেছেন (বিস্তারিত আগে দেওয়া হয়েছিল)।
সাধারণ মুমিন মুত্তাকীগণ সুপারিশ করতে পারবেন এটা ঠিক আছে। কিন্তু তাঁরা কাদের জন্য সুপারিশ করতে পারবেন সেটারও একটা সীমা আছে। কুরআনের অন্যান্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত যে, যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর সাথে শির্ক করেনি। আল্লাহ্ কিয়ামতের ময়দানে চাইলেই (তাঁর ক্ষমাশীল গুণের কারণে) যেকোনো কাউকে ক্ষমা করতে পারেন। কিন্তু একশ্রেণির ব্যক্তি ছাড়া। তারা হলো মুশরিক অর্থাৎ শির্ককারী। আল্লাহর সাথে যারা অন্যান্যদের অংশীদার স্থাপন করেছে।
এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে ব্যক্তি মুমিন মুত্তাকী সে যেই হোক না কেন তিনি সুপারিশ করতে পারেন যাদের জন্য সুপারিশ প্রযোজ্য। আমাদের দেশের বিভিন্ন দরবারে ও মাযারে কী চলছে তা আগেই বর্ণনা করেছি। অতএব তারা এই আয়াতের অধিকারী নয়।
আর তাদের মুরিদরা পীর মাজারে স্পষ্ট শির্ক করার কারণে তারাও কারো কাছ থেকে সুপারিশ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
১৯) "আল্লাহর সামনে তারা আপনার কোন উপকারে আসবে না। যালেমরা একে অপরের বন্ধু। আর আল্লাহ পরহেযগারদের বন্ধু। [ সুরা যাসিয়া ৪৫:১৯ ]
সেই একই কথা। এখানেও পরহেযগারদের কথা বলা হয়েছে। আর পরহেযগার কারা আগেই আলোচনা হয়েছে। সুতরাং এই পরহেযগার মানে শুধুমাত্র পীর নয়। এটা সকল ঈমানদার মুমিন, মুত্তাকী যারা পরহেজগারী তাদের জন্য উন্মুক্ত।
সুতরাং এইসব আয়াতের ব্যাখ্যা দ্বারা এটাই প্রমাণিত - যেসব আয়াত দিয়ে পীর জায়েজ করা হয়েছে তা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়। আমরা যারা সত্যিকার ভাবে কুরআনকে জানি না বুঝি না তাদেরকে বোকা বানিয়ে একশ্রেণির স্বার্থবাদী মহল সাধারণ মুসলমানদের ঈমান ধ্বংসের কাজে নিয়োজিত। এই ধ্বংসাত্মক কাজে সাধারণ মুসলমানের ঈমান ধ্বংস হলেও ঐ শ্রেণীর মতলববাজদের দুনিয়ার ফায়দা ঠিকই হচ্ছে। সুতরাং আমাদের উচিত হবে এই ফাঁদে পা দেওয়ার আগে সব কিছু যাচাই বাছাই করে নেওয়া। যাতে আমাদের ইহকাল পরকাল দুটোই ঠিক থাকে।
বাকি পর্ব গুলো এখানেঃ
পীর (উপমহাদেশে পীরের বাস্তবতা)
দলিল ছাড়া পীরতন্ত্রের ভিত্তি ১
দলিল ছাড়া পীরতন্ত্রের ভিত্তি ২
দলিল ছাড়া পীরতন্ত্রের ভিত্তি ৩
কুরআনের আয়াত দ্বারা পীরের দলিল খন্ডন ১
কুরআনের আয়াত দ্বারা পীরের দলিল খন্ডন ২
কুরআনের আয়াত দ্বারা পীরের দলিল খন্ডন ৩
কুরআনের আয়াত দ্বারা পীরের দলিল খন্ডন ৪
কুরআনের আয়াত দ্বারা পীরের দলিল খন্ডন ৫
বাইয়াত দ্বারা পীরের দলিল
সুপারিশকারী পীর
পীরের দরবারে মানত