সুফি সুন্নীদের গান বাজনা সম্পর্কিত আকিদার জবাব |
সুফি সুন্নীদের গান বাজনা সম্পর্কিত আকিদার জবাব
সুফি সুন্নীরা ইসলামের শরিয়ত সম্পর্কে এমন এমন সব আকিদা পোষণ করে যা কখনোই ইসলাম স্বীকৃত নয়। এইসব ভ্রান্ত আকিদা সমূহ এমন যে, তা একজন ঈমানদারকে মুশরিকে পরিনত করে ঈমান হারা করে দেয়। এখন আমরা কুরআন এবং সহীহ্ হাদিসের আলোকে সুফি সুন্নীদের গান বাজনা সম্পর্কিত আকিদার জবাব পাওয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
আরও পড়ুন কুরআন কেন নাযিল হয়েছে?
গান বাজনা
ইসলামী শরীয়তে নাচগান বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে সঙ্গীত ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু সুফিদের শরীয়তে নাচগান নিষিদ্ধ নয়। বরং তা কতক ক্ষেত্রে ফরজ। সুফি সুন্নীদের দাবি তাদের পূর্বপুরুষ সুফিরা এই উপমহাদেশে গান বাদ্য বাজনা দিয়েই মানুষের কাছে ইসলামকে পরিচিত করেছে।
যেহেতু উপমহাদেশের তৎকালীন সকল মানুষই ছিলো মূর্তি পূজারী সনাতন বৌদ্ধ ইত্যাদি ধর্মের অনুসারী। সেহেতু তাদের নিকট আগে থেকেই বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে নাচগান আনন্দ উল্লাসের চর্চা ছিলো। নাচগানে মত্ত সেইসব মূর্তি পূজারী জাতিকে ইসলামের আলোতে আনার জন্য বিখ্যাত বিভিন্ন অলি আউলিয়া নাচগানের আয়োজন করে তাদের সুফিবাদী ইসলামের দাওআত দেয়। নাচগানের মাধ্যমে উপমহাদেশের মানুষ ইসলামমুখী হওয়ার কারণে, নাচগানের প্রভাব সুফিবাদী ইসলামে রয়ে যায়।
সেই থেকে আজ পর্যন্ত উপমহাদেশে বিভিন্ন ত্বরিকায় নাচগান বাদ্য বাজনা নিষিদ্ধ নয়। বরং অসংখ্য ত্বরিকায় নারী পুরুষের সম্মিলিত নাচগানের মাধ্যমে আল্লাহর আরাধনা করা ফরজের কাছাকাছি। অর্থাৎ সুফিবাদের অসংখ্য ত্বরিকায় নারী পুরুষ একত্রে নাচগান অত্যাবশ্যকীয়। নাচ গান ছাড়া কখনোই তাদের ইবাদত পরিপূর্ণ হয়না।
এইসব সুফিরা নাচগানকেই একমাত্র আল্লাহ্ পাওয়ার মাধ্যম হিসাবে বিবেচনা করে। নাচ গানে প্রসিদ্ধ হচ্ছে সুফি বাউল সম্প্রদায়। তাদের শরীয়তের কোনো ইবাদত আইনকানুন কিছু নেই। তাদের মূল ইবাদতই হলো নাচগানের ভজন করা। নাচ গানকেই তারা আল্লাহর ইবাদত মনে করে। যাদের মধ্যে বিখ্যাত ছিলেন লালন ফকির, হাসন রাজা, আববাস উদ্দিন, ফিরোজ শাহ ইত্যাদি।
আরও পড়ুন কুরআন না জানার পরিনতি
ভারতের খাজা মঈন উদ্দিন ছিলেন নাচ গানের জন্য বিখ্যাত। তার সুফিবাদ প্রচারের ধরণ ছিলো নাচগান বাদ্য বাজনা। খাজা মঈনুদ্দীনকে নিয়েও চমৎকার চমৎকার গান প্রচলিত আছে। যেমনঃ
"আকাশটা কাঁপছিল কেন,
জমিনটা নাচছিল কেন,
বড়পীর ঘামছিল কেন সেইদিন সেইদিন ?
গান গেয়েছিল খাজা যেইদিন। "
সুফিদের এইসব গান থেকেই তাদের আকিদা স্পষ্ট যে, তারা নিজেদের প্রচার প্রসারের জন্য খুব সহজেই ইসলামী শরিয়ত বর্হিভূত যেকোনো কাজে পিছপা হয়না। এর প্রমাণ তাদের নাচগান সমৃদ্ধ বিভিন্ন ত্বরিকা। অথচ নাচগানকে আল্লাহ্ সরাসরি নিষিদ্ধ করেছেন সূরা লোকমানের ৬ নং আয়াতে। আল্লাহ্ বলেন, "আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব।" (সূরা লোকমান : ৬)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা সকল প্রকার বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে নাচগান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও সুফিদের দাবি তাদের নাচ গান দুনিয়াবী নাচগান নয়। তারা আল্লাহ্ রাসুল অলি আউলিয়াদের সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের শানে নাচগান করেন।
আরও পড়ুন পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ
তাদের এই দাবি বিভিন্ন পর্যায় থেকে অগ্রহণযোগ্য। বিশেষকরে তারা সেইসব বাদ্যযন্ত্রই ব্যবহার করে যা অন্যান্য অশ্লীল নাচগানের জন্য ব্যবহৃত হয়। শুধু তাইনয় তাদের এইসব গানে যেসব কথা থাকে তার অধিকাংশই শিরকি বিদআতী কুফরি সমৃদ্ধ। যা সরাসরি ইসলামী শরীয়তের বহির্ভূত। যেমনঃ তাদের কিছু গানের কথা হচ্ছে এমন, "মুহাম্মদের মীমের পর্দা তুলে দেরে মন
দেখবি সেথায় রয়েছে আহাদ নিরঞ্জন "
"আল্লাহর ধন রাসুলকে দিয়ে
আল্লাহ্ গেলেন গায়েব হয়ে,
রাসুলের ধন খাজা পেয়ে
দুহাতে তিনি দেন বিলিয়ে "
"আদমের ভিতর ঢুকে আমার খোদা সিজদা লয়,
আদমকে সিজদা করলে কাফেররা শিরক কয় "
এই জাতীয় হাজার হাজার গান আছে যা সরাসরি শির্ক কুফরির শিক্ষা দেয়। মোটকথা সুফিদের অধিকাংশ অনুসারী নাচগানকেই আল্লাহর ইবাদতের মাধ্যম মনে করে দুনিয়া যাপন করে। সুফিদের নাচ গানের খারাপ দিক হলো নারী পুরুষের সম্মিলিত অংশগ্রহণ। যা খারাপের মধ্যে জঘন্য খারাপ। শুধু তাইনয় প্রতিটি কথিত অলি আল্লাহ্র ওরসে কম বয়সী মহিলা দিয়ে নাচগানের তুমুল আসর বসে। যেখানে নারী পুরুষ নির্বিচারে নাচগান করে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে।যা কখনোই ইসলাম সমর্থিত নয়। অবাধ নাচগানের কারণে তাদের অনুসারীরা নাচগান নিয়ে শরিয়তের যে বিধিনিষেধ রয়েছে তা অস্বীকার করে। অতএব, সুফিদের এই আকিদাও কখনো আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং সুফি সুন্নীদের সুফিবাদ একটি ঈমান বিধ্বংসী মতবাদ।
কৃতজ্ঞতাঃ
মোহাম্মাদ ইস্রাফিল হোসাইন। (বিএ ইন আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষা)
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
১০ মার্চ, ২০২২
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।