উপমহাদেশে সুফিবাদ ও ননীর পুতুল আল্লাহ্! (নাঊজুবিল্লাহ)
"আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান" কথাটি ইসলামে আল্লাহ্র ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও সুফি সুন্নীদের সুফিবাদে প্রযোজ্য নয়। উপমহাদেশে সুফিবাদী মুসলমানদের ধর্মীয় আকিদা হলো অদৃশ্যের সকল ক্ষমতা তাদের অলি আউলিয়াদের। এখানে "আল্লাহ্ " নামক সত্যিকারের কোনো রব বা ইলাহ নেই। তাদের মতে এখানকার আল্লাহ্ হচ্ছে সম্পূর্ণ জ্ঞানহীন বোধহীন ক্ষমতাহীন শুধুমাত্র একজন সৃষ্টিকর্তা! (নাঊজুবিল্লাহ)। এদের ঈমান আকিদা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী। আজ আমরা উপমহাদেশে সুফিবাদ এবং তাদের আকিদায় আল্লাহ্ ননীর পুতুল কিনা তা তথ্য উপাত্ত দ্বারা যাচাই করবো ইনশাআল্লাহ।
আকিদা কী
আকীদা (আরবি: عقيدة, বহুবচন: আরবি: عقائد, আকা'ইদ, কখনো কখনো উচ্চারণ করা হয় আকীইদাহ, আক্বিদাহ) এটি একটি ইসলামী পরিভাষা যার অর্থ 'কিছু মূল ভিত্তির উপর বিশ্বাস'। ইসলামে আকিদা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যার সম্পর্ক সরাসরি ঈমানের সাথে।
সঠিক আকিদা না থাকলে ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। আর ঈমান না থাকলে কোনো আমলই আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য নয়।আল্লাহ বলেন, "যারা কাফের (যাদের ঈমান নেই) তাদের আমলসমূহ মরুভূমির মরিচিকার ন্যায়।' (সুরা নূর : আয়াত ৩৯)
অর্থাৎ কোনো কাফির যত ভালো আমলই করুক না কেন, ঈমান না থাকার কারণে তার সেইসব ভালো কাজের কোনো মূল্যই কিয়ামতের মাঠে পাবে না। অতএব মুখে মুসলমান দাবিদার ব্যক্তিও যদি পরিপূর্ণ ঈমানদার না হয় তবে তার আমলেরও কোনো মূল্য থাকবে না।
উপমহাদেশে মুসলিম আকিদা
এই উপমহাদেশে যারা জন্মগত মুসলমান, তারা ঈমানের ক্ষেত্রে পূর্বপুরুষদের অনুসরণকেই ইসলামের মানদণ্ড হিসাবে বিবেচনা করে এবং সেইমতো ধর্ম পালন করে। অর্থাৎ তারা সুফিবাদী ইসলাম পালন করে। তাদেরকে কুরআন এবং সুন্নাহর দিকে আহবান করলে, তারা বলে বাপ দাদারা এভাবেই ইবাদত করে এসেছে এবং এই সুফিবাদী আকিদাই পোষণ করে এসেছে। সুতরাং আমরা নতুন কিছু গ্রহণ করবো না। অথচ ইসলামে পূর্বপুরুষদের অনুসরণকে গোমরাহী হিসাবে অবহিত করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন, "আর যখন তাদেরকে কেউ বলে যে, সে হুকুমেরই আনুগত্য কর যা আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেছেন, তখন তারা বলে কখনো না, আমরা তো সে বিষয়েরই অনুসরণ করব। যাতে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কে দেখেছি। যদি ও তাদের বাপ দাদারা কিছুই জানতো না, জানতো না সরল পথও"। [ সুরা বাকারা ২:১৭০ ]
সুফিবাদী আকিদার পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণের ফলে উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে কুরআন এবং সুন্নাহর সঠিক চর্চা এখানে নেই। কুরআন সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে আল্লাহ্ সম্পর্কেও এখানে সঠিক জ্ঞান নেই। যারফলে আল্লাহ্ সম্পর্কে কল্পনাপ্রসূত কল্পকাহিনীর ধারণার বশবর্তী হয়ে সুফিরা ধর্ম পালন করে আসছে যুগে যুগে।
আরও পড়ুন মাজারে দান সদকা করার ইসলামী বিধান
আল্লাহর পরিবর্তে অলির প্রভাব
সঠিক ইতিহাস মতে উপমহাদেশে মুসলিম বণিক ও শাসক দ্বারাই সর্বপ্রথম ইসলাম প্রচার শুরু হয়। পরবর্তীতে মুসলিম সাধু সন্ন্যাসী দরবেশদের দ্বারা সুফিবাদী ইসলামের প্রচারের প্রসার হয়। যারা ধর্মীয় শিক্ষা নয় বরং সুফিবাদী দাওআতকেই বড় করে দেখেছেন। ফলে ব্যাপকহারে মানুষ দলে দলে সুফিবাদী ইসলামে প্রবেশ করে। যেহেতু দুনিয়াবিমুখী সাধু দরবেশদের চারিত্রিক শুভ্রতার দ্বারা সুফিবাদের প্রচার প্রসার হয়, সেহেতু উপমহাদেশের ইসলামে অলি আউলিয়াদের প্রভাব দৃশ্যমান।
গোমরাহী ও তার পরিনতি
প্রকৃত ইসলাম এসেছে আরব দেশে আরবী ভাষায়। এই উপমহাদেশে আরবী শিক্ষা চর্চা ছিলো না। সেইসাথে সনাতন ধর্মসহ বিভিন্ন অগ্নি উপাসক ধর্ম থেকে মানুষ মুসলমান হওয়ায় উপমহাদেশের ইসলামে গোমরাহীর মূর্খতা এবং সুফিবাদের কারণে ব্যাক্তি অনুসরণের ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
শুধু তাইনয়, সুফিবাদের প্রচার, পূর্বপুরুষদের অন্ধ অনুসরণ, শিয়া শাসকদের (শিয়া ধর্মের) প্রচার, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে ধর্মীয় শিক্ষা বিমুখীতা, পরবর্তীতে খ্রিস্টান নিয়ন্ত্রিত মাদ্রাসায় ভুল শিক্ষানীতি ইত্যাদি কুরআন সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান চর্চার পথকে বাধাগ্রস্ত করে।
এইসব বহু কারণে তাওহীদ, শির্ক, বিদআত ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ আকিদা সম্পর্কে জানতে তারা ব্যর্থ হয়। সেইসাথে আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলী সম্পর্কেও মুসলমাদগণ সঠিক জ্ঞান লাভ করতে পারে না। মোটকথা সঠিক ইসলামে কী আছে কী নেই তা কুরআন এবং সুন্নাহ থেকে জানতে উপমহাদেশের মুসলমানরা অপারগ হয়।
যারফলে উপমহাদেশের মুসলমানগণ আল্লাহর সঠিক পরিচয় পেতে ব্যর্থ হয়। এবং আল্লাহ্ সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে ধর্ম পালন করে আসছে। হিন্দুদের যেমন এক ভগবানের সকল ক্ষমতা ৩৩ কোটি দেবতাদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, ঠিক তেমনি উপমহাদেশের মুসলমানগণ মনে করে আল্লাহও তাঁর সকল ক্ষমতা শুধুমাত্র উপমহাদেশের সকল অলি আউলিয়াদের ভাগ করে দিয়েছেন।
অর্থাৎ বান্দার যেকোনো বিপদে আপদে যদি কোনো কিছু চাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে আল্লাহর কাছে নয় বরং অলি আউলিয়াদের দরবারে, কবরে, খানকা ইত্যাদি জায়গায় যাও। অথচ সকল ক্ষমতার মালিক হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ্। তিনি বলেন, "আল্লাহর সান্নিধ্যেই তোমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।" [ সুরা হুদ ১১:৪ ]
"তুমি কি জানো না যে, আল্লাহর সব কিছুর উপরে ক্ষমতা রয়েছে" (আল-বাক্বারাহ ১০৬)
আর উপমহাদেশের সুফিবাদী মুসলমানদের আকিদা হলো আল্লাহ্ শুধুই আমাদের রব। তিনি কিছুই শোনেন না জানেন না। (তাকে ডাকলেই যে সাড়া দিবেন) তিনি (এমন) ক্ষমতাবানও নন। (নাঊজুবিল্লাহ) তাঁর সকল ক্ষমতার মালিক হচ্ছে অলি আউলিয়া। সুতরাং তাদের কাছেই চাইতে হবে। তাদের আকিদা সুস্পষ্ট ভাবে তারা প্রকাশ করে এভাবে, "আল্লাহর ধন রাসুল কে দিয়ে আল্লাহ গেলেন গায়েব হয়ে। রাসুলের ধন অলিদের দিয়ে তিনিও গেলেন খুশি হয়ে "।
অর্থাৎ আল্লাহ তার সকল ক্ষমতা রাসুলের মাধ্যমে অলি আউলিয়াদের দিয়ে তিনি ক্ষমতাহীন, কর্মহীন এবং অকর্মণ্য হয়ে পড়েছেন(নাউজুবিল্লাহ)। সুতরাং তাকে ডেকে লাভ নেই। যেকোনো প্রয়োজনে ডাকতে হবে অলি আউলিয়াদের। যা সরাসরি কুফরি এবং মুশরিকি আকিদা।
আরও পড়ুন কবর পাকা করার দলিল খন্ডন
আল্লাহর ক্ষমতা ও ভুল ধারণা
আল্লাহ পবিত্র কুরআনের শতশত আয়াত এবং রাসুলের (সাঃ) জীবনের শিক্ষা দ্বারা একথা সুস্পষ্ট করেছেন যে, সকল ক্ষমতা তাঁরই হাতে। তিনি ই একেশ্বর অধিপতি। পবিত্র কুরআন এবং সুন্নাহর সুস্পষ্ট নির্দেশের পরও যে ভুল গুলো সুফিবাদীরা করে চলেছে তা হচ্ছে,
আল্লাহ্ শোনেন না এবং জানেন না: ইসলাম শিক্ষা দেয় যেকোনো সময় যেকোনো প্রয়োজনে কোনো কিছু চাইতে হলে আল্লাহর কাছেই চাইতে হয়। কেননা তিনি বান্দার সবই জানেন এবং শোনেন। আল্লাহ্ বলেন, "(হে রাসুল!) আপনি বলে দিন, যদি তোমরা তোমাদের মনের কথা গোপন করে রাখ অথবা প্রকাশ করে দাও, আল্লাহ সে সবই জানতে পারেন। আর আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সেসবও তিনি জানেন। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্ব শক্তিমান।" (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ২৯)
অর্থাৎ বান্দার অন্তরে যাকিছু আছে তা সবই আল্লাহ্ জানেন। সুতরাং যা চাওয়ার তা আল্লাহ্ র কাছেই চাওয়া উচিত। অথচ উপমহাদেশের মুসলমানরা যেকোনো প্রয়োজনে অলি আউলিয়াদের ডেকে সরাসরি আল্লাহর সাথে শির্কে লিপ্ত হচ্ছে। সেইসাথে আল্লাহকে বানিয়ে দিচ্ছে অথর্ব (নাউজুবিল্লাহ)। অর্থাৎ তাঁর কোনো জানার এবং শোনার ক্ষমতা নেই। এইসব আকিদা সুস্পষ্ট শিরক। যা যেকোনো মুসলমানের ঈমান ভঙ্গের কারণ।
পীরেরা জন্ম, মৃত্যু,সন্তান করেন দান : উপমহাদেশের সুফিবাদী মুসলমানদের আকিদা হচ্ছে- পীর, অলি আউলিয়ারা জীবিত বা মৃত যেকোনো অবস্থায় মানুষের জন্ম মৃত্যু ঘটাতে পারে। এবং সেইসাথে সন্তান দেওয়ারও ক্ষমতা রাখে। অথচ মৃত্যু প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন, "আমি (আল্লাহ্) জীবন দান করি, মৃত্যু ঘটাই এবং আমারই দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন।" [ সুরা ক্বাফ ৫০:৪৩ ]
অন্য আয়াতে বলেন, "আল্লাহ মানুষের প্রাণ হরণ করেন তার মৃত্যুর সময়, আর যে মরে না, তার নিদ্রাকালে। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত করেন, তার প্রাণ ছাড়েন না এবং অন্যান্যদের ছেড়ে দেন এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে। " [ সুরা যুমার ৩৯:৪২ ]
সন্তান দানের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ বলেন, ‘‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা ছেলে-মেয়ে উভয়ই দান করেন। আবার যাকে ইচ্ছে বন্ধ্যা করেন।” [সূরা আশ্শূরা ৪২:৫০]
সুতরাং সুস্পষ্টভাবে আল্লাহ্ ঘোষণা দিচ্ছেন যে, তিনি-ই যেকোনো জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সেইসাথে তিনিই মানুষকে সন্তান দান করেন ছেলে অথবা মেয়ে অথবা উভয়ই। অথবা কাউকে কিছুই দেন না।
সুতরাং এই বিষয়সহ সকল বিষয়েই তিনিই সর্বময় ক্ষমতার মালিক। অতএব যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো সময়ে তাঁর কাছেই চাইতে হবে। আর আমরা তা না করে ছুটে যায় পীর আউলিয়াদের কাছে। আর সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ বানিয়ে দিচ্ছি ননীর পুতুল! (নাউজুবিল্লাহ)
আরও পড়ুন সুফি সুন্নিদের পীর আউলিয়া সম্পর্কিত আকিদার জবাব
রিজিকের মালিক পীর আউলিয়া: সুফিবাদী মুসলমানগণ মুখে আল্লাহকে স্বীকার করে বলে, রিজিকের মালিক আল্লাহ। আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করে ধন, দৌলত, চাকরি-বাকরি, রিজিক ইত্যাদির সত্যিকারের ক্ষমতা অলি আউলিয়াদের হাতে। অর্থাৎ অলি আউলিয়াদের দরবারে কবরে যত মানত তোফা দেওয়া যাবে ততোই রিজিক বৃদ্ধি পাবে।
তাই তারা যেকোনো প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে নয় বরং নিয়মিত অলি আউলিয়াদের দরবারে মান্নতের নিয়তে যাওয়া আসা করে। আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেন, "(হে রাসুল সাঃ আপনি) বলুন, আমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন এবং পরিমিত দেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বোঝে না।" [ সুরা সা’বা ৩৪:৩৬ ]
আল্লাহর ই হাতে সমস্ত রিজিকের চাবিকাঠি। তিনি যাকে ইচ্ছা তাকেই সমৃদ্ধ করবেন অন্যথায় হ্রাস করবেন। এখানে কোনো বান্দার হাত নেই। সুতরাং যার যা-ই প্রয়োজন তা-ই দেন একমাত্র আল্লাহ্। অতএব চাইতে হলে তাঁর কাছেই চাইতে হবে। অথচ আমরা তা না করে কথিত পীর আউলিয়ার কাছে চাইছি। আর আল্লাহ্কে মনে করছি অকর্মণ্য! (নাউজুবিল্লাহ)।
বিপদের উদ্ধারকারী গাউসুল আযম: উপমহাদেশের সিংহভাগ মুসলমানই যেকোনো বিপদে পড়ার সাথে সাথে আল্লাহর পরিবর্তে অলি আউলিয়াদের নাম ধরে (ইয়া গাউস, ইয়া খাজা, ইত্যাদি) সাহায্য প্রার্থনা করে। বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়ার জন্য মান্নত করে। আর আল্লাহ্ বলেন, "এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। "[ সুরা বাকারা ২:১৫৫ ]
এই আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা দিচ্ছেন, যেকোনো বিপদাপদসহ বিভিন্ন অতর্কিত পরীক্ষা আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে। সুতরাং তিনিই সেই বিপদাপদ থেকে রক্ষা করার মালিক। সুতরাং আমাদের তাঁর কাছেই চাইতে হবে। কোনো অলি আউলিয়ার কাছে নয়।
কেন অন্যদের নিকট চাইবো না সেটাও কুরআনে আল্লাহ বলেছেন। সূরা ইউনুসের ১০৬ ও ১০৭ নং আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, ‘‘আল্লাহ ছাড়া এমন মাবুদকে ডেকোনা, যে তোমার উপকার করতে পারবেনা এবং ক্ষতিও করতে পারবেনা। তুমি যদিএমন কর, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চান, তাহলে কেউ তাঁর অনুগ্রহকে প্রতিহত করতে পারেনা। স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান, তাকেই তিনি স্বীয় অনুগ্রহ দান করেন; তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু’’।
এতো স্পষ্ট করে আল্লাহ্ ঘোষণা দেওয়ার পরও আমরা কখনোই আল্লাহ্ কে ডাকার মতো ডাকি না। এই না ডাকার কারণই হচ্ছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ উদ্ধারকারী নন (নাউজুবিল্লাহ)। এভাবেই উপমহাদেশে আল্লাহ্কে আমরা ননীর পুতুল মনে করে আছি (নাউজুবিল্লাহ)।
আরও পড়ুন প্রবৃত্তির অনুসরণ ও তার পরিনতি
পীর আউলিয়ারা সুপারিশকারী: উপমহাদেশের সুফিবাদী মুসলমানগণ পীর মুরিদী মেনে চলে। কারণ তাদের সুস্পষ্ট ধারণা হচ্ছে - তারা দুনিয়ায় যা -ই করুক না কেন তাদের পীর তাদেরকে সুপারিশের মাধ্যমে জান্নাতে নিয়ে যাবেন। আল্লাহর (প্রকৃত) অলিরা সুপারিশ করতে পারবেন এটা সত্য। তবে তা কখন এবং কীভাবে? আল্লাহ্ বলেন, "বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন, আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য।" [ সুরা যুমার ৩৯:৪৪ ]
"আর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল হবে না; কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না। [সুরা বাকারা ২:৪৮]"
অন্য আয়াতে বলেন, "কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া?" [ সুরা বাকারা ২:২৫৫ ]
"দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোন উপকারে আসবে না।" [ সুরা ত্বা-হা ২০:১০৯ ]"
"তারা (পবিত্র ফেরেশতাগণ) শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করে, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত।" [ সুরা আম্বিয়া ২১:২৮ ]
এখানে সুপারিশ সংক্রান্ত সকল বিষয় স্পষ্ট। সুপারিশ করা যাবে আল্লাহর অনুমতিক্রমে। অর্থাৎ আল্লাহ্ যেই বান্দার জন্য যাকে অনুমতি দিবেন শুধুমাত্র তিনিই সুপারিশ করতে পারবেন।
সুতরাং আল্লাহর পছন্দের বান্দা না হয়ে কখনোই কারো সুপারিশ পাওয়া যাবে না। যদি এমন হতো তাহলে আল্লাহর বান্দারা আল্লাহ্ কে বাদ দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি পূজায় লিপ্ত হতো। যা সুফিবাদী মুসলমানরা করে আসছে।
কে আল্লাহর সামনে সুপারিশ করতে পারবে আর কে পারবে না তা কিয়ামতের ময়দানে নির্ধারিত হবে। দুনিয়াতে কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না যে, তিনি সুপারিশ করতে পারবেন। কেননা কে আল্লাহর অলি আর কে অলি নন তার সার্টিফিকেট দুনিয়ায় আল্লাহ কাউকেই দেননি। আমরা যা করছি তা শুধুমাত্র অনুমান।
আরও পড়ুন বর্তমান সমাজের মুনাফিকের পরিচয় ও পরিনতি
সুতরাং আল্লাহর বিধান মেনে চালাই হচ্ছে প্রকৃত ঈমানদারের কাজ। যে আল্লাহর বিধান সত্যিকারভাবে মেনে চলবে সে যদি কোনো না কোনো পাপ করেও ফেলেও তার উদ্ধার করার মালিকও একমাত্র আল্লাহ্। কিয়ামতের কঠিন ময়দানে ঐ ব্যক্তি অবশ্যই সুপারিশ পাওয়ার যোগ্যতা রাখবে। কেননা তার অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ্। আল্লাহ্ বলেন, "তারা কি তাঁকে (অর্থাৎ আল্লাহ্ কে) বাদ দিয়ে বহু অভিভাবক গ্রহণ করেছে? কিন্তু আল্লাহ, তিনিই হলেন প্রকৃত অভিভাবক; তিনিই মৃতকে জীবিত করেন আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বক্ষমতাবান।( ৪২: ৯)"
"তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী নেই। এরপরও কি তোমরা বুঝবে না?"(৩২ : ৪)
"যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের অভিভাবক, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন। আর যারা কুফরী করে, তাদের অভিভাবক হল তাগূত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারে নিয়ে যায়। তারা আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। (২ : ২৫৭) "
অতএব আল্লাহর বিধানের ধারে কাছে না থেকে শুধুমাত্র ব্যক্তি পূজা করে কখনোই সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া যাবে না। আর সুফিবাদের আকিদায় আল্লাহর বিধানের তোয়াক্কাই তারা করে না। কেননা ইসলামের যিনি বিধানদাতা তিনি কখনোই রাগ করেন না। তিনি বান্দার প্রতি এতো বেশী দয়ালু যে তাঁকে আজ আমরা মানার প্রয়োজনই বোধ করছি না। এটাই সুফি সুন্নীদের মানসিকতা। আল্লাহর প্রতি সুফি সুন্নীদের এতো গাফিলতি চলে এসেছে যে, আল্লাহর কোনো কিছুই আজ তারা মানতে চেষ্টা করে না।
সুফিদের আকিদায় অসংখ্য শির্ক বিদআতের উপস্থিতি থাকলেও তারা এইসব গ্রাহ্যই করে না। এমনকি তারা শির্ক কী বিদআত কী? সেটাই ভালো করে জানে না। এদের একটাই চিন্তা কীভাবে পীর আউলিয়াদের সন্তুষ্ট করে দুনিয়া এবং আখিরাত পাওয়া যায়। তাদের চিন্তা চেতনা ধারণা সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত এবং পূর্বপুরুষদের অনুসরণে ধর্মকর্ম পালন করা। তাই অধিকাংশের অনুসরণে পূর্বপুরুষদের আকিদায় সুফিবাদী মতাদর্শীরা আল্লাহর চাইতে সর্বাবস্থায় তাদের পীর আউলিয়াদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে। যারফলে তাদের ঈমান আকিদায় আল্লাহর কোনো গুরুত্বই প্রকাশ পায় না। আল্লাহ্কে তারা অকর্মণ্য ননীর পুতুলই মনে করে (নাঊজুবিল্লাহ)।
আরও পড়ুন বিদআত কী এবং এর পরিনাম
হিদায়াতের মালিক পীর আউলিয়া: সুফিবাদী মুসলমানদের আকিদা হচ্ছে পীর আউলিয়াদের দরবার, কবরে গেলে হিদায়াতপ্রাপ্ত হওয়া যাবে। তাই তারা ইসলামের জ্ঞান চর্চা না করে বিভিন্ন অলি আউলিয়াদের দরবার, কবর ও খানকায় পড়ে থাকে। অথচ আল্লাহ্ হযরত মুহাম্মদ সাঃ কে উদ্দেশ্য করে কুরআনে বলেন, "(হে রাসুল) আপনি যাকে ইচ্ছা তাকে হিদায়াত দান করতে পারবেন না। বরং, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিদায়াত করে থাকেন”(আল কুরআন-২৮:৫৬)
এখানে সুস্পষ্ট যে হিদায়াত দেওয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ্। তাহলে আল্লাহ্ কাকে হিদায়াত করবেন? সেই কথাও কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, "মূলত যার অন্তরে সত্য গ্রহণের আগ্রহ থাকে আল্লাহ তা’আলা তাকেই হিদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সরলপথে পরিচালিত করেন।” (আল কুরআন-১২:২৫)
অর্থাৎ যে কুরআনের এবং হাদিসের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে এবং সেইমতো চলতে চেষ্টা করবে, একমাত্র তাকেই আল্লাহ্ একমাত্র হিদায়াতের সাহায্য করবেন এবং সরল পথে পরিচালিত করবেন।
আরও পড়ুন সুফিবাদ কী? কীভাবে উৎপত্তি এবং বর্তমান অবস্থা
সুতরাং মৃত কবরবাসী কখনোই কারো হিদায়েতের মালিক হতে পারেন না। শুধু জীবিত নেককার পীর আউলিয়ারা, যারা সঠিক কুরআন সুন্নায় পরিচালিত তাদের অনুসরণ করা যাবে। এইসব নেককার বান্দারা সাধারণ মানুষের পথপ্রদর্শক। তারা মানুষদের আল্লাহর সঠিক পথ দেখাতে সাহায্য করেন। কিন্তু সঠিক পথে ঐ বান্দাকে পরিচালিত করার মালিক এবং হিদায়েতের মালিক একমাত্র আল্লাহ্।
এই চরম সত্য সুফিবাদী সুন্নীরা অস্বীকার করে দাবি করে, হিদায়েতের মালিক আল্লাহ্ হলেও তা পীরের মাধ্যমে আল্লাহ্ হিদায়াত দান করেন। অথচ যেকোনো পীর, উস্তাদ, শায়খ, আলেম উলামারা যেকোনো মানুষকে সঠিক রাস্তা দেখাতে পারেন। কিন্তু কাউকে সঠিক রাস্তায় পরিচালিত করতে পারেন না।
কেননা সঠিক রাস্তায় পরিচালিত করার মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্। আল্লাহ্ বান্দার বিবেকের সাথে রয়েছেন। আল্লাহ্ বান্দাকে কুরআন সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান দ্বারা হিদায়েতের রাস্তায় চলতে সাহায্য করেন। সেইসাথে শয়তানের নানান প্রতারণা থেকে বান্দাকে রক্ষা করেন। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেন। এভাবেই একমাত্র আল্লাহ্ বান্দাকে হিদায়াত প্রদান করেন।
এতদসত্ত্বেও সুফি সুন্নীরা দাবি করে জীবিত মৃত পীর অলি আউলিয়ারাই তাদের ভক্ত মুরিদদের হিদায়াত দান করেন। যেখানে রাসুল সাঃকেও হিদায়াত দানের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। এভাবে সুফি সুন্নীরা আল্লাহর ক্ষমতাকে নিচু করে পীর আউলিয়াদের উচুঁ করে দেখার কারণে মূলত আল্লাহ্কেই অথর্ব বানিয়ে দেয় (নাঊজুবিল্লাহ)!
মান্নতের মাধ্যমে শিরক: সুফি সুন্নীদের আকিদাগত চিন্তা ধারণা এটা যে, যেকোনো বিপদ আপদে প্রয়োজনে পীর আউলিয়াদের নাম ধরে ডেকে তাদের নামে মান্নত করা হলেই আল্লাহ্ তা পূরণ করেন। অর্থাৎ মানত করলেই বিপদে উদ্ধারের মালিক ঐ পীর অলি আউলিয়া। অথচ আমরা আগেই জেনেছি বিপদ দেওয়া এবং উদ্ধারের মালিক আল্লাহ্। সুফিরা পীর অলিদের ডেকে আল্লাহর সাথে শিরক করে অংশীদার স্থাপন করে আল্লাহ্কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায় (নাঊজুবিল্লাহ)। যেন মানতের দানের মাধ্যমে পীর আউলিয়াদের সন্তুষ্টি করলেই আল্লাহ্ নিজেই সন্তুষ্ট হয়! অথচ আল্লাহ্ বলেন, "তারা আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে আল্লাহর অংশ স্থির করেছে। বাস্তবিক মানুষ স্পষ্ট অকৃতজ্ঞ"। [ সুরা যূখরুফ ৪৩:১৫ ]
অন্য আয়াতে আল্লাহ্ আরও বলেন, "আল্লাহ কি তাঁর বান্দার পক্ষে যথেষ্ট নন"? [ সুরা যুমার ৩৯:৩৬ ]
"আল্লাহ ছাড়া এমন মাবুদকে ডেকোনা, যে তোমার উপকার করতে পারবেনা এবং ক্ষতিও করতে পারবেনা। যদিএমন কর, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।" (১০:১০৬)
অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থাপন করে অন্য কারো নিকট চাওয়া যাবেনা। যেখানে আল্লাহ্ ই যদি বিপদ দিয়ে থাকেন সেখানে তিনি ছাড়া উদ্ধারকারী কেউ নেই। এতো সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সুফি সুন্নীরা আল্লাহ্কে অপমানিত করে তাঁকে না ডেকে তাঁর কাছে সাহায্য না চেয়ে, তাঁরই বান্দাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে!
আরও পড়ুন সুফি সুন্নীদের সাহাবী সম্পর্কিত আকিদার জবাব
এসব ছাড়াও মান্নত করা সুস্পষ্ট গোমরাহী। রাসুলুল্লাহ সাঃ জীবনী থেকে আমরা জানতে পারি, তিনি সরাসরি মান্নত করতে নিষেধ করেছেন। এই বিষয়ে হাদীসে এসেছে, "আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদের মানত করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন: মানত কোনো কিছুকে ফেরাতে পারে না। তবে মানতের মাধ্যমে কৃপণ ব্যক্তির সম্পদ বের করা হয়।' (সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩২৫)"
এই হাদীসসহ আরও অসংখ্য হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, কখনোই মানত করা যাবে না। তাছাড়া কবরবাসীর নামে মানত করলে কয়েকটি কবিরা গুনাহ সংঘটিত হয়। যা একজন মানুষের ঈমানকে পর্যন্ত ধ্বংস করে দেয়।
প্রথমত আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে মানত করার কারণে শির্ক করা হয়। দ্বিতীয়ত দানের উদ্দেশ্যে মানত করা হলেও, মাজারে দানের শর্ত পূরণ না হওয়ার কারণে অপচয় হয়। তৃতীয়ত এই জাতীয় দানে রাসুলের সম্মতি না থাকার কারণে তা বিদআত। আর এভাবেই সুফি সুন্নীরা আল্লাহর সাথে শিরক করে আল্লাহ্কে অথর্ব মনে করে।
আল্লাহর কেবিনেট: সুফিদের মতে আল্লাহর পাশাপাশি ওলী-আওলিয়ারাও দুনিয়া পরিচালনার কাজে সম্পৃক্ত রয়েছেন। সুফিরা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ যেহেতু একা, সেহেতু একা তাঁর পক্ষে পুরো বিশ্বজগত পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ফলে তিনি তাঁর বিশ্ব পরিচালনার সুবিধার্থে আরশে মু‘আল্লায় একটি পার্লামেন্ট কায়েম করেছেন।
সেই পার্লামেন্টের সদস্য সংখ্যা মোট ৪৪১ জন। আল্লাহ তাদের স্ব স্ব কাজ বুঝিয়ে দিয়েছেন। তারা আল্লাহ তা ‘আলার মধ্যস্থতায় পৃথিবীবাসীর বিপদাপদ দূরীভূত করে থাকেন।
তারা অলীগণের দ্বারা সৃষ্টজীবের হায়াত, রুযী, সন্তান, ছেলে অথবা মেয়ে দান, বৃষ্টি, বৃক্ষ জন্মানো ও মুছীবত বিদূরণের কাজ সম্পাদন করেন। তাদের এই বিশ্বাসের মাধ্যমে সুফি সুন্নীরা আল্লাহর ক্ষমতাকে কটাক্ষ করে। তারা পীর অলিদের তোষামোদ করতে গিয়ে সৃষ্টি জাহানের মহান অধিপতিকেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। যা আল্লাহর ইজ্জতের সাথে সাংঘর্ষিক।
সুফিদের এই আকিদার পক্ষে কুরআন ও সহীহ্ হাদিসের কোনো দলিল নেই। বিশ্বজগত পরিচালনার জন্য আল্লাহর কারো নিকট থেকে সাহায্য নিতে হয় না।তিনি বলেন, "তিনি (আল্লাহ্) আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন।" (সূরা সাজদা: ৫)
মহান আল্লাহ আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কাজ নিজেই পরিচালনা করেন। তিনিই সকলের একমাত্র ত্রানকর্তা। অথচ সুফিগণ আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ)কে মহা ত্রাণকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করেন। তার নাম রেখেছেন গাউছুল আযম যার অর্থ হচ্ছে মহান ত্রাণকর্তা বা উদ্ধারকারী। এভাবে খাজা গরীবে নেওয়াজ যিনি গরীবের ত্রাণকর্তা ইত্যাদি। এভাবে সুফিদের বিভিন্ন অলি আউলিয়ারা বান্দার বিভিন্ন কাজের দায়িত্বে আছেন বলে সুফিরা বিশ্বাস করে।
আরও পড়ুন কুরআন ই হিদায়াত প্রকৃত মাধ্যম
অথচ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মক্কার মুশরিকরাও বিশ্বাস করত দুনিয়া পরিচালনার কাজে আল্লাহ্ ছাড়া কেউ সম্পৃক্ত নেই। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, "তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, “কে তোমাদের আকাশ ও পৃথিবী থেকে রিযিক দেয়? এই শুনার ও দেখার শক্তি কার কর্তৃত্বে আছে ? কে প্রাণহীন থেকে সজীবকে এবং সজীব থেকে প্রাণহীনকে বের করে? কে চালাচ্ছে এই বিশ্ব ব্যবস্থাপনা”? তারা নিশ্চয়ই বলবে, আল্লাহ ৷ বলো, তবুও কি তোমরা বিরোধী পথে চলার ব্যাপারে সতর্ক হচ্ছোনা? (সুরা ইউনুস ৩১)।
এখানে সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর কোনো কেবিনেট নয় বরং আল্লাহ্ নিজেই সমস্ত কিছু পরিচালনা করছেন। সেখানে সুফিদের কল্পিত কেবিনেটের কোনো দৃষ্টান্ত কুরআনের কোথাও নেই।
শুধু তাইনয় সুফিরা যাদের কেবিনেটের সদস্য দাবি করে তারা নিজেরাই আল্লাহর কাছে নৈকট্যলাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, "এরা যাদেরকে (অলি আউলিয়া) ডাকে তারা তো নিজেরাই নিজেদের রবের নৈকট্যলাভের উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে যে, কে তাঁর নিকটতর হয়ে যাবে এবং এরা তাঁর রহমতের প্রত্যাশী এবং তাঁর শাস্তির ভয়ে ভীত। আসলে তোমার রবের শাস্তি ভয় করার মতো৷" (সুরা বনী ইসরাঈল ১৭:৫৭)।
অর্থাৎ সুফিরা যাদের পীর অলি আউলিয়া দাবি করে, তারা নিজেরাই আল্লাহর কাছে কে কত প্রিয়ভাজন হবেন সেই উপায় উছিলা তালাশ করে। সুতরাং দুনিয়া পরিচালনার জন্য অলি আউলিয়াদের নিয়ে আল্লাহর কোনো গোপন কেবিনেট নেই। আল্লাহ্ এতই ক্ষমতাবান যে তিনি একাই পুরো বিশ্বজাহান পরিচালনার জন্য যথেষ্ট।
আরও পড়ুন ইবাদত কবুল হওয়ার শর্তসমূহ
গায়েবের খবর জানা: সুফিদের আকিদা হলো আল্লাহর মতই পীর, অলী আউলিয়া সকলেই অদৃশ্যর জ্ঞান তথা ইলমে গায়েব রাখেন। তাদের এই বিশ্বাসের কারণ, আল্লাহ্ যেহেতু সরাসরি বান্দার উপকার করতে পারেন না (নাঊজুবিল্লাহ)। সেহেতু এইসব পীর আউলিয়ারা গায়েবের খবর জেনে তাদের ভক্ত মুরিদদের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকেন।এটা সুস্পষ্ট কুরআন হাদীস বিরোধী কথা। আল্লাহ তাআলা বলেন, "আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।" [সুরা আরাফ ৭:১৮৮]
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাঁর রসূল সাঃকে পরিস্কার ভাবে ঘোষণা দিতে বললেন যে, আমি গায়েবের খবর জানলে, নিজের অনেক কল্যান করতাম এবং কখনো কোনো ক্ষতি আমাকে স্পর্শ করতনা।
একমাত্র শুধুমাত্র আল্লাহ্ই হলেন অদৃশ্যের জ্ঞানের অধিকারী। এই সম্পর্কিত আরো আয়াতের রেফারেন্স উল্লেখ করা হল: [মায়েদা- ৫: ১০৯ ১১৬; আনাম- ৬ :৫০ ৫৯ ৭৩; তওবা -৯ : ৪৩,৭৮,৯৫,১০১, ১০৫; নাহল- ১৬:৭৭; ত্বহা -২০:১৫ ১১০; জুকরুক -৪৩:৮৫; তাহরিম -৬৬ : ১; জিন- ৭২ : ২৫ ]
সুতরাং যেখানে রাসুল সাঃ গায়েবের খবর জানেন না (যতটুকু আল্লাহ্ জানান) বলে কুরআনের দ্বারা প্রমাণিত সেখানে পীর অলি আউলিয়ারা কীভাবে গায়েবের খবর জানেন বা বলতে পারেন। অথচ সুফি সুন্নীরা গায়েব জোরে তাদের পীর আউলিয়াদের গায়েবের মালিক মনে করে। আর আল্লাহ্কে বানিয়ে দেন খেলার পুতুল (নাঊজুবিল্লাহ)
আরও পড়ুন কুরআনের আলোকে মানুষ সৃষ্টির কারণ
পীর আউলিয়ারা হাজির নাজির:
সুফিদের বিশ্বাস সকল অলি আউলিয়ারা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় হাজির এবং নাজির। অর্থাৎ তাঁরা পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় যেকোনো মূহুর্তে যেতে পারেন এবং দেখতে পারেন। তাদের এই ক্ষমতার কারণ, আল্লাহ্ চাইলেও সরাসরি বান্দার কাছে যেতে পারেন না (নাঊজুবিল্লাহ)। তাই পীর অলি আউলিয়ারা চোখের পলকে দুনিয়ার যেকোনো জায়গায় গিয়ে তাদের ভক্ত মুরিদদের উপকার করে আসে।
অথচ, সর্বত্র হাজির ও নাজির গুণটি একমাত্র আল্লাহর। শুধুমাত্র আল্লাহ্ই পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের যেকোনো সময়ের যেকোনো ঘটনা অবলোকন করতে পারেন এবং তিনি তাঁর সর্বময় ক্ষমতা দ্বারা উপস্থিতও থাকেন। সুতরাং আল্লাহর নিজস্ব কোনো গুণকে তাঁর কোনো সৃষ্টির সাথে তুলনা করলে তা হবে সরাসরি শির্ক।
কোনো পীর আউলিয়া নয়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে হিজরতের প্রয়োজন ছিল না। কারন মূহুর্তেই মক্কা থেকে মদিনা আবার মদিনা থেকে মক্কা যাওয়া আসা করতে পারতেন। অথবা শত্রু পক্ষের যেকোনো গোপন সংবাদ বা যেকোনো বিপদের আশংকা তিনি আগেই জেনে নিতে পারতেন সেখানে উপস্থিত হয়ে। আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, "তোমরা যদি নবীকে সাহায্য না কর, তাহলে কোন পরোয়া নেই৷ আল্লাহ তাকে এমন সময় সাহায্য করেছেন যখন কাফেররা তাকে বের করে দিয়েছিল, যখন সে ছিল মাত্র দু’জনের মধ্যে দ্বিতীয় জন, যখন তারা দু’জন গুহার মধ্যে ছিল, তখন সে তার সাথীকে বলেছিল, চিন্তিত হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন৷ সে সময় আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তার ওপর মানসিক প্রশান্তি নাযিল করেন এবং এমন সেনাদল পাঠিয়ে তাকে সাহায্য করেন, যা তোমরা দেখনি এবং তিনি কাফেরদের বক্তব্যকে নীচু করে দেন৷ আর আল্লাহর কথা তো সমুন্নত আছেই৷ আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়৷ "(তাওবা ৯:৪০)
উপরোক্ত আয়াতটি রাসুলুল্লাহ সাঃএর হিজরতের সাথে সম্পর্কিত। তিনি যদি সবখানেই যেতে পারতেন তাহলে হিজরতের প্রয়োজন ছিলো কেন?
আরও পড়ুন তাওহিদ কী কীভাবে আল্লাহর তাওহিদ ক্ষুন্ন হয়
কুরায়শরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তার মিরাজের ঘটনা কেন্দ্র করে বায়তুল মুকাদ্দাসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল যা তিনি দেখেন নি। ফলে তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাজির নাযিরের ক্ষমতা থাকলে তিনি চিন্তিত হতেন না। কেননা মূহুর্তেই তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়ে সব দেখে আসতে পারতেন। এই সম্পর্কিত হাদীসে এসেছে, যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ আমি হাজরে আসোয়াদের কাছে ছিলাম। এ সময় কুরায়শরা আমাকে আমার মিরাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করতে শুরু করে। তারা আমাকে বায়তুল মুকাদ্দাসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে লাগল, তা আমি ভালভাবে দেখিনি। ফলে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ তারপর আল্লাহ তাআলা আমার সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন এবং আমি তা দেখছিলাম। তারা আমাকে যে প্রশ্ন করছিল, তার জবাব দিতে লাগলাম।" (সংক্ষেপিত, সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান, হাদিস ৩২৮)
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, আল্লাহর রাসুল সাঃ যেকোনো স্থানে হাজির নাজির নন। যেখানে আল্লাহ্ ঘোষিত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ আল্লাহর বন্ধু মুহাম্মদ সাঃ পৃথিবীর যেকোনো স্থানে হাজির নাজির নয়। সেখানে অঘোষিত একজন পীর বা অলী কি করে পৃথিবীর যে কোন স্থানে হাজির নাজির থাকতে পারেন? সুফিদের এ ধরনের বিশ্বাস মূলত আল্লাহ্কে অস্বীকার করা। তারা তাদের আল্লাহ্কে ইায়ার দোস্ত মনে করে। আল্লাহর যে নিজস্ব কিছু ক্ষমতা আছে, তা সুফি সুন্নীরা স্বীকার করে না। যারফলে তাদের কাছে মহান আল্লাহ্ একজন ননীর পুতুল (নাঊজুবিল্লাহ)।
আরও পড়ুন বিশ্বকাপ ফুটবল এবং আমাদের ঈমান আকিদা
পীরের দ্বারা গুনাহ ক্ষমা: আল্লাহ্ অবশ্যই তাঁর বান্দাদের গুনাহ ক্ষমা করেন। তিনি এটাই পছন্দ করেন যে, তাঁর বান্দারা গুনাহ করলে যেন তাঁর কাছেই ক্ষমা চায়। এবং তিনি অবশ্যই তাদের ক্ষমা করে দিবেন। কারণ তিনি ক্ষমাশীল।
আর সুফিদের আকিদা হলো বান্দা যখন পাপ করতে করতে চরম পাপী বনে যায়, তখন আল্লাহ্ তার গুনাহ ক্ষমা করেন না (নাঊজুবিল্লাহ)।তাই ঐ গুনাহগার ব্যক্তিকে পীর ধরে অথবা মৃত অলি আউলিয়াদের কবরে গিয়ে সেই পীরের মধ্যস্থতায় বা কবরবাসীর উছিলায় তাদের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। তাহলে আল্লাহ্ ঐ পীর বা মৃত অলি আউলিয়ার দিকে তাকিয়ে সেই পাপী বান্দাকে ক্ষমা করে দিবেন। অথচ আল্লাহ্ বলেন, "(হে নবী,) বলে দাও, হে আমার বান্দারা যারা নিজের আত্মার ওপর জুলুম করেছো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না৷ নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেন৷ তিনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু৷ ফিরে এসো তোমারে রবের দিকে এবং তাঁর অনুগত হয়ে যাও তোমাদের ওপর আযাব আসার পূর্বেই৷ তখন কোন দিক থেকেই আর সাহায্য পাওয়া যাবে না৷ (সুরা জুমার ৩৯:৫৩-৫৪)
আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট করে ঘোষণা দিচ্ছেন যে, যেকেউ যতই পাপ করুন না কেন, সে যেন আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়। যত পাপই মানুষ করুক না কেন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি অবশ্যই তা ক্ষমা করে দিবেন।
সুতরাং আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া কুফরি কাজ। কেননা একমাত্র কাফিররাই আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়। শুধু তাইনয় আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো কাছে ক্ষমা চাওয়া বা মধ্যস্ততা করা সরাসরি শির্ক। তাই সুফিদের এই বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভুল যে পাপ করলে সেই পাপ ক্ষমা পাওয়ার জন্য মাধ্যম বা পীরের প্রয়োজন হবে। এই বিশ্বাসের মাধ্যমে সুফি সুন্নীরা আল্লাহর কোনো ক্ষমতাকেই স্বীকার করলো না। তাদের এইসব বিশ্বাস আল্লাহ্কে না মেনে তাদের পীর অলিদের পূজা করার জন্য ই। এভাবে তারা আল্লাহ্কে অথর্ব হিসাবে সাধারণ মানুষদের সামনে উপস্থাপন করে (নাঊজুবিল্লাহ)।
আরও পড়ুন ঈমান কী? পরিপূর্ণ ঈমানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা
ফিরে আসুন: আল্লাহ্ বলেন তাঁর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় আমল হচ্ছে কোনো বান্দা পাপ করলে, তওবা করে তাঁর দিকে ফিরে আসা। পবিত্র হাদীসে এই বিষয়ে চমৎকার ঘটনা দ্বারা আল্লাহর রাসুল আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। "তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়, আল্লাহ তায়ালা বান্দার তওবায় তার চেয়েও অনেক বেশি খুশি হন। (বোখারি : ৬৩০৯) সুবহানাল্লাহ!"
আল্লাহ্ বলেন, "তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মনে কী আছে তা ভালোই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল।" (বনি ঈসরাইল ২৫)
আসুন সংশোধিত হয়ে ইসলামের সঠিক আকিদার ঈমান নিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ করি। আল্লাহ্ বলেন, "অতঃপর যে তওবা করে স্বীয় অত্যাচারের পর এবং সংশোধিত, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর তওবা কবুল করেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।" (সূরা আল মায়িদাহ ৩৯)
সুতরাং আমাদের উচিত হবে আল্লাহ্ কে সঠিক রব হিসাবে মেনে তাঁর দিকে ফিরে যাওয়া। অবশ্যই আল্লাহর অলিরা সত্য। তবে তা ততটুকু যতটুকু আল্লাহ্ দিয়ে থাকেন। জীবিত আল্লাহর অলিদের থেকে আমি আপনি সবাই দোয়ার মাধ্যমে দুনিয়াবী যেকোনো প্রয়োজন হাসিল করতে পারি। এতে কোনো বাঁধা বিপত্তি নেই। কিন্তু মৃত্যুর পরও তাদের দিকে যাওয়া, চাওয়া এবং পাওয়া মনে করা সুস্পষ্ট গোমরাহী। আল্লাহ্ বলেন, "আর যে ব্যক্তি আল্লাহর স্বরন থেকে মুখ ফিরে নেয়, আমি তার জন্য নিয়োজিত করি এক শয়তান, অতঃপর সে হয় তার (সর্বক্ষণের) সাথী।" ( সূরা যুখরুফ- ৩৬)
যে আল্লাহকে ডাকে না তার জন্য আল্লাহ্ নিজেই একজন শয়তান নিয়োগ করে দেন। পরিশেষে শয়তানই হয় তার নিত্যদিনের সঙ্গী। অতএব আমাদের উচিত হবে শুধুমাত্র আল্লাহর দিকে যাওয়া এবং চাওয়া।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
১০ অক্টোবর, ২০২১
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।